#ডেন্জারাস_ভিলেন_হাজবেন্ড
#লেখিকা_তামান্না
#পর্ব_০৫
—“মামা থামেন থামেন শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবেন নাকি?
জারার কথায় সিএনজির ভাইয়া ব্রেক মারে। কিন্তু ব্রেকটা জোরে ছিল বলে জারা কিছুটা ঝুঁকে পড়ে এতে তার মাথা গরম হয়ে যায়।
সে সিএনজির ভেতর থেকে বের হয়ে কোমরে হাত রেখে বলে উঠে—“ঐ মামা এভাবে কেউ ব্রেক মারে? আজ ত আমারে কবরে যাবার রাস্তা কইরা ফেলাইছিলেন।
—“আফা আই কিওাম? ওনে গাড়ি থামাইতে হোন ইয়াল্লাই থামাই!
—“হ আপনে এভাবে থামাইয়া আমারে শেষ করে দিতেন! আচ্ছা মামা এবার বলেন কত নিবেন?
—“আফা ওনে হত দিয়েত পারিবান হোন চাই?
—“আমার কাছে একহাজার টাকা আছে।
—“আচ্ছা আফা মোরে পাঁচশত টাহা দোন চাই।
—“ওরে আল্লাহ আপনারে পাঁচশত টাকা দিয়ে দিলে আমার কি হবে? আমার ঘর-পরিবার,একজন চাচা-দজ্জাল চাচি-শাকচুন্নী চাচাত বোন,,তার উপর ঐ এক্সিডেন্ট ওয়ালা বলডোজার থেকে বাঁচতেও ত হবে।
জারা নিজের মন মত বলেই যাচ্ছে। সিএনজির ভাইয়া বুঝছে এই মেয়ে ভারি চাপা। কিন্তু তার এসব ভালা লাগতেছে না। সে না পেরে হাত জোর করে বলে।
—“আফা আপনে যতো দিবেন ওতোই লইবো! এবার দেন।
—“এবার হলো কাজের উপর কাজের কথা।
জারা মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে চারশত পঞ্চাশ টাকা দিল। ধন্যবাদ জানিয়ে তারা কেটে পড়ে।
জারা বাসায় ঢুকে ধপ করে ফ্যানের নিচে সোফায় বসে পড়ে। চোখবন্ধ করে ক্লান্তি দূর করছে।
কিন্তু এই চোখ বন্ধ হতেই তার মনে এক্সিডেন্ট হওয়া দৃশ্যটা ভেসে উঠে। সেখানে দেখা হওয়া ছেলেটার কথা মনে পড়ে যায়।
ছেলেটা যখন জারার দিকে ঝুঁকে ছিল তখন তার বুকের ভেতর ধরফড়ানি যেনো তেজ হয়ে গিয়েছিল। এমন কখনো তার স্বাভাবিকত হয় নি। এই প্রথম কোনো ছেলের এতটা কাছে সে ছিল। ভাবতেই সে জট করে চোখ খুলে কুঁচলাতে থাকে।
—“ছিঃ এই আমি কি ভাবছি? ঐ এক্সিডেন্ট ওয়ালা পোলার কথা কেন মাথায় আসতেছে হুদ্দায় হয়ত! ভাবারও কিছু মাথায় আসতেছে না শালি ভাবতে জানিস না।
জারা নিজের সাথে নিজে কথা বলছে সাথে মাঝমধ্যে নিজেকেই কুঁচতেছে।
কিছুক্ষণ রেস্ট করে জারা কাজ শেষ করে নিজের ঘরে চলে আসে। যখন চাচা-চাচির কেউ একজন আসবে তখন তাদের মেইন ঘরের চাবিটা দিবে। আপাত সে চাবিটা নিজের সাথে করে কুড়েঘরে চলে আসে।
বেডে শুয়ে ভাবে আজ ভার্সিটিতে কি হয়ছিল কে জানে? আমাদের ক্লাসের নতুন টিচারটা কেমন? সব কিছু জানতে মন চাচ্ছে? কিন্তু চাচির জন্যে আজ যাওয়াটা হলো না।
—“বাট যাই হোক আজ একবার আসুক বাসায় । দেইখো তোমাদের জন্যে কি ব্যবস্থা করে রেখেছি?
জারা নিজের ফোন নিয়ে টিপাটিপি করতে লাগে।
তার ফোনে কল চলে আসে প্রিয়ার। সে কল ধরতেই অপরপাশ থেকে প্রিয়ার চিল্লাচিল্লি শুরু হয়ে যায়।
জারা চোখজোড়া গোল গোল করে থাকে।
—“ঐ শাকচুন্নী-পেত্নী-গোবরের গাভি। আসছস নাই কেন বল?
—“আব…….জারা বলতে গিয়েও পারল না। প্রিয়াই আবার বলে।
—“বুঝছি তুই চাস আমিই একজন পড়ালেখা করি আর তুই এক্সামের সময় আমার থেকে দেখে দেখে লেখার জন্যে?
—“এ্যাহ…..??? জারা কথাটা শুনে অবাক হয়ে মাথা চুলকাতে লাগে।
—“হ্যা বাবু আমি সব বুঝি তুই নিজে ত আছস নাই আমাকেও ফোন করে বলস নাই। একবার ত বলে দিতি আমিও তাহলে আসতাম না। (উদাস মুখ করে ক্যান্টিনে বসে থাকে)
—“হয়ছে তোর চিল্লানি এখন আমি কিছু বলি?
—“আমি কি না বলতে বলছি?
—“তুই ই ত……
—“হ হ বুঝি বুঝি এখন আমার দোষ সব তুই বল শুনুম।
না জানার ভান করে প্রিয়া বলল।
—“এক নম্বরের শালি হালি এক ডজন গোবরের গু।
—“হাহাহাহা
—“(উওরে হাসল )
—“শুন আমি আসি নি কারণ…..প্রিয়াকে বলতে পারব না এসব কথা আর ব্যথার কথা ত মুটেও বলা যাবে না। নাহলে বাসায় এসে আঙ্গামা করে দেবে। মনে ভেবে নিল।
—“ওই শাকচুন্নী কই গেলি কল রাইখা?
—“হুম আব না আছি ওই ত আমি আজ আসি নি কারণ…..
—“কি রে ব্যাপার কি তোঁতলাছিস কেন? তোর মহান চাচিজান ডাইনি কিছু করছে?
—“ন…..না নাআআ একদম না। আমি আসি নি কারণ যাইতে ইচ্ছে করছিল না। ঘুম হয় নি তাই। কালকে আসব অবশ্যই।
—“হুম আচ্ছা মানলাম মিসস ইউ দোস্ত কালকে অবশ্যই আসবি। ওয়েট করমু আর যদি না আইছিস তখন তোর বাসায় আসমু।
—” আরে নাহ দোস্ত আমি আসমু। ওকে এখন বল ক্যানভাসে কি কি হলো?
—“উফ ইয়ার তোকে বলে বুঝাতে পারব না যে হ্যান্ডসাম পোলা আমাদের ক্লাস টিচার যাস্ট ওয়াও!
—“আয় রে খোদা গুরুজনের উপরও কুনজর ! বদলাবি কবে রে তুই?
—“যখন আমারে বিয়ে দিবো তখন । আর শুন কালকে একটু সুন্দর হয়েছিস!
—“ওয়াই?
—“আরে বুঝিস না নতুন ক্লাস টিচার সব মাইয়ারা ত আজকে উনারে দেইখা সাজুগুজু করতে ছিল।
—“তাতে কি?
—“বাল রাখ তুই কাল কথা কমু নে।
—“বাল টু টাটা টুট টুট টুট।
জারা কল রেখে হালকা রেস্ট নেয়ার জন্যে মাথা বালিশে নেতিয়ে দিবে তখনই চাচির চিল্লানি শুরু হয়। সে শুনে বলে
—“এই জীবনে মনে হয় শান্তি নেই।
___________________
—“স্যার এই নেন ফাইল আপনি যা যা বলে ছিলেন সব নিয়ে এসেছি। রাহুল ফায়যানের হাতে ফাইল দিয়ে বলে।
ফায়যান ফাইলটা নিয়ে সাইন করতে করতে বলে।
—“আমার নতুন মেহমানের খবর কি? সুন্দর ভাবে খাবার দাবার দিছস কি?
—“স্যা…..স্যার আসলে গতকাল…….রাহুল বলতে কিছুটা ভয় পাচ্ছে। কারণ কিডনাপ করার পর থেকে সেই মেহমান মানে ওয়ালেদকে খাবার দেয়া হয় নি। এ কথা ফায়যান জানতে পারলে তার উপর গর্জনের বর্ষণ চালাবে।
—“বল তোরে কিছু জিগাইছি? ফাইল টা সাইডে রেখে বুকের উপর দুইহাত গুজে ঘোর নজরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল।
—“স্যার আসলে দুইদিন ধরে তারে খাবার দেয়া হয় নি……রাহুল কথাটা বলার সাথে সাথেই ফায়যান রেগে তার কলার চেপে ধরে।
রাহুল এর ভয়ে শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠে। ফায়যান রেগে বলে।
—“কি বলছস? তোদের দিয়ে কি একটা কাজও ঠিকভাবে হবে না?
রাহুলের পাশে সব গার্ডস স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ফায়যানের রাগ দেখে তাদের হাতে থাকা গার্নসহ রীতিমত কাঁপছে।
—“এখনই ওকে নিয়ে আয় আমার কিলার রুমে। রাইট নাউ!
রাহুল নিজের মাথা নাড়িয়ে দুইজন গার্ডস নিয়ে আরহামের লাশটাকে নিয়ে ফায়যানের বাংলোতে থাকা সুইমিং পুলে ফেলে দে। সেই সুইমিং পুলটা ফায়যানের সুইম এর না সেটা হচ্ছে ফায়যানের কোবরা ওয়াল্ডের সুইমিং পুল।
কোবরা ফায়যানের পালিত এক পুরুষ সার্ক। সে শুধু তার মালিক আর মালিকের সদস্যদের কথা শুনে। সার্ককে ফায়যান নিজের ডার্ক ওয়াল্ডে উপহার হিসেবে পায়। তাই সে এর নাম দে কোবরা।
রাহুল কে দেখতেই সার্ক পানিতে ঝাপিং করতে লাগে। কারণ সে বুঝে গেছে তার খাবার আনা হয়ছে তাও সুস্বাদু রক্তের খাবার। রাহুল মুচকি আরহামকে পানিতে ছুঁড়ে মারে। ছুঁড়ে মারার সাথে সাথে কোবরা তাকে চাবিয়ে খেতে থাকে। পানি রক্তাক্ত হতে শুরু করলে রাহুল যাওয়ার আগে সেখানে পাহারা দেয়া গার্ডসদের বলে।
—“গাইস পানি ব্লাডফুল হয়ে যাচ্ছে। কোবরা তার খাবার খেয়ে ফেললে ওয়াটার ক্লিয়ার বল্লাম ওয়েট অন করে দিস।
ওয়াটার ক্লিয়ার বল্লাম ওয়েট হলো সুইমিং এর পানি পরিষ্কার করার এক ধরনের মেশিন।
গার্ডস তার কথায় সায় দিল।
রাহুল আর দুইজন গার্ডস ওয়ালেদকে ধরে নিয়ে আসে ফায়যানের দ্যা কিলার রুমে। সেখানে লাইট অফ ছিল। ফায়যান একটা টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। ওয়ালেদকে এনে সেখানে একটা লাইট অন করে সেটার নিচে চেয়ারে বেঁধে দিল।
ওয়ালেদ বেহুঁশ ছিল এতোক্ষণ তাকে সে দিন ধরে এনে ছিল রাহুল। ফায়যান মিটিং রুমেই রাহুলকে মেসেজ করে বলে ছিল ওয়ালেদ কে কিডনাপ করতে।
ধীরে ধীরে ওয়ালেদ এর হুঁশ আসতে লাগে। সে নিভু নিভু চোখ খুলে তাকাতেই একজন ডক্টর কে তার সামনে পেল। সেই ডক্টরটা মুখে মাস্ক,,হাতে প্লাস্টিকের গ্লাভস,, মাথায় প্লাস্টিক টুপি আর গায়ে ডক্টরের ইউনিফর্ম পড়া দেখতে পেল।
ওয়ালেদ আমতা আমতা করে বলে—“আ……আপনি কে? আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে?
—“আমি আপনার শুভকাঙক্ষী…..
—“মানে?
—“পাঁচ মিনিটের মধ্যে বুঝতে পারবেন।
ফায়যান ডক্টরের ছন্দবেশি লাইটের সামনে আসল। তাকে দেখে ওয়ালেদ চিনতে পারছে না। কে এই ব্যক্তি? মুখ ও ডেকে রাখল! আমি ত রাতে ওয়াশরুমে ছিল তাহলে? ওয়ালেদের মনে পড়ল রাতের কথা।
সে জিগ্গেস এর নয়নে ফায়যানের দিকে তাকায়।
সে ওয়ালেদ এর কাছে এসে গাল চেপে ধরে।
আবরার নিজের কেবিনের ডোর লক করে 2019-2020 সালের একটা ফাইল পেয়ে যায়। সেটা নিয়ে তাড়াতাড়ি কেবিনে চলে আসে।
—“এই ফাইলেই থাকতে পারে। একবছর আগে যে মেয়ে টারে খুঁজতে খুঁজতে শেষ হয়ে ছিলাম। তাকে পাওয়ার পন্থা এখানেই পাব।
—“কই কই……আবরার ফাইলটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে কিন্তু সেই ফাইলে বিগত বছরের সব মেয়েদের ডুকমেন্টস পাই। তবে যে মেয়েটার খুঁজ সে চাই তার কোনো ডুকমেন্টসই পাই না।
—“ছেহ্ এবারও টাইম ওয়েস্ট করলাম। ভাবছিলাম জ্যাকের খবর সঠিক হবে। কিন্তু এখানে এসে ত এই এই (ফাইলটা ধরে উঠিয়ে) ফাইলের মধ্যে সেই মেয়ের কোনো খবরই নেই ছেহ্। বলেই সে ফাইলটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে।
ফাইলটা নিচে পড়ে সব কাগজ ভেতর থেকে পড়ে এলোমেলো হয়ে যায়। আবরার রাগে মাথা চেপে ধরে। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে দীর্ঘশ্বাস নিল। নিয়ে নিজেকে নিজেই বলে।
—“ত কি হয়ছে একবারই ত হারলাম এর মানে এই না বার বার হারাব। কবি বলেছেন, “একবার না পারিলে দেখো শত বার”।
সেভাবেই তোর খুঁজ নেয়া আমি ছাড়ব না “Meri Jaan”। ডেভিল স্মাইল দিল।
সে বসা থেকে উঠে কাগজগুলো ঠিক করতে লাগে।
তখন হঠাৎ করে তার চোখ পড়ে……..
………চলবে…….