ডেন্জারাস_ভিলেন_হাজবেন্ড পর্ব ৪

#ডেন্জারাস_ভিলেন_হাজবেন্ড

#লেখিকা_তামান্না

#পর্ব_০৪

মিসেস রাহেলা জারার মুখের উপর ঠান্ডা পানি ঢেলে দে। জারা তড়ফড়িয়ে উঠে কাঁপতে থেকে সে হাত দিতে নিজের বাহুডোরা চেপে ধরে।

তার চোখ-মুখ-গাল সাদা ফর্সা হয়ে গেল। কারণ মেহরাবের আম্মু ওয়ালটন বরফ রাখার বড় ফ্রিজ থেকে বড় পাতিলে ঠান্ডা বরফ পানি ঢেলে জারার রুমে এসে তার ঘুমরত অবস্থায় মুখের উপর ঢেলে দে।

—“কেমন লাগছে রে এখন? বলছিলাম না! আমার কথা অমান্য করার শাস্তি আমি হঠাৎ করেই দেবো।

—“চা……চা…চাচি আ….আমি কি ক…কর…করি ছি টা ? (ঠান্ডায় জারার গলা বসে যায়। কোনো ভাবে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল)

—“ঐ ছেমড়ি ভালো সাজছিস? আমার ঘরের জিনিসপএ ভেঙ্গে চুরমার করার সাহস তোকে কে দিছে?
কথার চলে তিনি জারার চুলের মুঠি জোরে চেপে ধরে টান দে।
জারা ব্যথায় কুকড়ে উঠে। কিন্তু একটা কথা আছে না “ঠান্ডা মানুষের মস্তিষ্কের নাড়া দে”।

ঠিক তেমনিই আজ জারার বিবেকে এই ঠান্ডা পানি গরম হয়ে নাড়া দিসে। জারার চুলের মুঠি ধরে মিসেস রাহেলা কথা শুনিয়ে যাচ্ছিল। আর সে কান পেতে শোনছিলো। কিন্তু এখন সে তার চাচির কথার পাল্টা জবাব দিল।

জারা তার চাচির দিকে নিজের অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে।
—“আমি কি করেছি শুধু তার জবাব দিন? এভাবে কথা শুনিয়ে ঠাট্টা করার কোনো মানে হয় না !

—“বাহ! এখন চাচির মুখে মুখে কথা বলতে শিখেছিস?

—” কি হয়েছে বলেন?

মিসেস রাহেলা জারার চুল ছেড়ে তার হাত ধরে উঠায়। জারা কোনোভাবে কেঁপে কেঁপে উঠে দাঁড়াল। তার উঠতেইই মিসেস রাহেলা জারাকে টেনে কিচেনের এনে ফ্লোরে দিকে ছুঁড়ে মারে। জারা হিচকে ফ্লোরের মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু তার হাত ফ্লোরে পড়া ময়দার সাথে লেগে হাত পিছলা হয়ে যায়। এতে তার মাথা চুলার সিলিন্ডারের ফাঁকা কোণায় গিয়ে লাগে।
হালকা কেটে ব্লাড বের হতে থাকে।

মেহরাব জারার অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে। জারা ব্যথায় ঠান্ডায় তার জ্বর এসে গেছে। সে মাথায় হাত চেপে ধরে মুখ উপরে তুলে। তার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সে দেখল ফ্লোরে ময়দা ছিটানো,,টেবিলের উপর আচার বয়মের তেল ছড়ানো,,ফ্রিজের জিনিস সব অগোছালো।

সব দেখে হতবাক হয়ে মুখ ফুসকে বলে—“চা…চাচি বিশ্বাস করো এগুলো আমি করি নি!
—“মিথুক বেডি সব গুলো নিজে করে এখন বলছিস করিস নি। আমাকে কি পাগল মনে হয়? আমি কি কিছু বুঝি নাহ?

—“না চাচি সত্যি বিশ্বাস করো ডিনারের আগে সব কিছু গুছিয়ে রেখে ছিলাম কিন্তু এখন এসব যা হলো……
জারা সবকিছু দেখে আড়চোখে মেহরাবের দিকে তাকাল।

মেহরাব মিসেস রাহেলার পিছে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে। তার হাসার কারণটা জারার বুঝতে বাকি রইলো না। সে হাত দেখিয়ে তার চাচিকে বলে।
—“চাচি এসব কিছু মেহরাব করেছে! আমি সত্যি এগুলো করিনি। আমি এসব করতেই পারি নাহ।

—“ঐ ঐ কুফা শয়তানখোড় মেয়ে কোথাকার! আমার মেয়ের উপর নিজের দোষ চাপিস? আমার মেয়ে তোর চেয়ে বাড়ো শতগুণে ভালো আর তুই তোকে ত নষ্টা বললেও কম হবে। কার না কার নাজায়েজ মেয়ে আল্লাহই ভালো জানে।

জারা শেষের কথাগুলো শুনে কান্নায় তার চোখ ভরে গেল।
মিসেস রাহেলার তাও মায়া হলো না। তিনি জারার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে—“আজ তোর ভার্সিটি যেতে হবে না। আজকে তুই পুরো কিচেন পরিষ্কার করবি। তাও ঠান্ডা পানি দিয়ে। আর হ্যাঁ……(যেতে গিয়ে থেমে পিছে তাকাল) ডেটল ইউজ করবি যাতে করোনা মুক্ত হয় বাসার কিচেনটা।

মিসেস রাহেলা মেহরাবের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। মেহরাব ত ভারি খুশি আজ জারা ভার্সিটিতে যাবে না।
জারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোনোভাবে মাথা চেপে ধরে উঠে পড়ে। উনারা বের হতেই কিচেনে মিসেস সিমা তড়িঘড়ি এসে জারার গায়ে কাঁথা মুড়ে জড়িয়ে ধরে।

জারা পাথরের মত হয়ে আছে। মিসেস সিমা তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে বের করে আনে।
তিনি কফি বানিয়ে জারাকে দে। সে মুচকি হেসে কফি খেয়ে নিল।

মিসেস সিমা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে—“কিছু হবে না মা ধর্য্য রাখ একসময় এসব দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবা। অবশ্যই তোকে এসব থেকে রক্ষা করতে একজন ফেরেশ্তা স্বরুপ আসবে। সে এসে আমাদের পরীটাকে নিয়ে যাবে।

মিসেস সিমার কথাগুলো শুনে জারা মুচকি হাসল। খানিক পর মিসেস সিমার কাজ এসে পড়ায় তিনি বাহিরে যান। জারা শাড়ির আঁচল নিজের কোমরের দিকে বেঁধে কাজ শুরু করে দে।

—“আজ আমার উপর ঠাডা ফেলছেন চাচিজান। তাই আপনাদের উপরও ঠাডা ফেলব😤। দেখেন কি করি? বাঁকা হেসে জারা কাজে লেগে পড়ে।
চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে বেঁধে কোঁপা করে নিল।

____________________

ভার্সিটির গেইটের সামনে সব টিচারস স্টুডেন্টস এসে ভীড় জমিয়ে আছে। আজ নতুন স্যার তাদের ভার্সিটিতে আসবে এই খুশিতে সবাই ওয়েলকাম জানানোর জন্যে রেডি হয়ে আছে।

তখন কাছেই হর্ন বাজল। গাড়ি গেইটের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাইফাই লালচে রঙের গাড়ি গেইটের মধ্যে দাঁড়াল। সবাই তাকিয়ে আছে ভেতরে কে দেখার জন্যে।
সেই লালচে রঙের গাড়ির পিছে আরো একটা জিপের গাড়ি আছে। সেখান থেকে সবুজ সুট পরা কিছু লোক বের হয়ে লালচে গাড়ির সামনে আছে। হয়ত গার্ডসই হবে।

এক গার্ডস দরজা খুলে দিল। সেখান থেকে বের হলো মিস্টার আবরার হোসেন। সে বের হতেই সবাই হা করে ভূত দেখার মত তাকায় থাকল। জিম করা বডি,,দেখতে ফর্সা,, চুলগুলো পিছের দিকে বাঁকা করে ছড়ানো,, চোখে সানগ্লাস,,ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি।

গেইটের কাছে এসে টিচারদের সাথে কথাবার্তা বলতে লাগে। মেয়েরা ত আড়ালে মেকআপ বের করে নিজের মুখকে আটার মত করে ফেলতেছে যেনো তাদের মধ্যে কোনো একজনের উপর আবরার ক্রাশ খেয়ে যাক।

আবরার ক্যানভাসে ডুকে সবার সামনে পরিচয় দিল।
—“হ্যালো মাই ডেয়ার স্টুডেন্টস। আইম দ্যা প্রফেসর অফ কেমিস্ট্রি। এন্ড অলসো এ বিজনেসম্যান। আমি সরকারি ভাবে ট্রান্সফার হয়ে তোমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানভাস এতো সুন্দর আগে জানা ছিল না। আই হোপ এখান কার স্টুডেন্টসও খুব ভালো হবে। আমি ট্রান্সফারের কারণে এসেছি তাই ট্রান্সফার চেঞ্জ হলে আমি ফিরে যাবো। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত যাব না।

সবাই আবরার এর সব কথা বুঝলেও শেষের কথাটা শুনে একেঅপরের দিকে তাকাতাকি করে।

আবরার বাঁকা হেসে বলে—“মানে শিক্ষা দিয়ে যাব না।
—“ওহহহহ আচ্ছা।(সবাই একসাথে)

পরক্ষণে যে যার ক্লাসে চলে যায়। আবরার কেবিন থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা। কাউকে না দেখতে পেয়ে সে চলে আসে স্টোর রুমে।

স্টোরের ডুবলিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ডুকে দরজা বন্ধ করে দে। সে সব সেল্ফের মধ্যে 2020 সাল লেখা সেল্ফ খুঁজতে লাগে। ভাগ্যক্রমে পেয়েও যায়। সে দেখল 2020 সাল লেখা সেল্ফে শুধু 2020 সাল নয় 2015-2020 সালের সেল্ফের সব ডুকুমেন্টস একসাথে।

আবরার ফোন বের করে লাইট অন করে খুঁজতে থাকে।

_____________________

—“স্যার আপনি কবে বের হলেন? কিছু বলেও যান নি!
—“বের হওয়ার জন্যে তোমার পারমিশন লাগবে?
রাগী সুরে বলল।
—“আ….আব….ন….নো স্যার আ…আমি ত জিগ্গেস করছিলাম আপনার…..?
—“দরকার নেই আর শুন তোর ব্যাংকে নানীর জন্যে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। সেগুলো তুলে নিস আর সেলাই কারখানায় গিয়ে কিছু উপহার দিয়ে আছিস।
—” অবশ্যই স্যার। মুচকি হেসে রাহুল বলল।

ফায়যান কল কেটে ফোন পাশের সিডে রাখে। আর গাড়ি চালায় মনযোগ দে।

জারা সবজির দোকানে এসে কিছু বাজার করে নিয়ে রাস্তা পাড় হতে আশপাশ ভালো করে পা বাড়িয়ে সামনে আগাতে লাগে। তখনই এক গাড়ি জোরে তেড়ে আসে।

জারা ভয়ে দৌড়ে সাইড হয়ে যায়। গাড়িটা ব্রেক খেয়ে গাছের সাথে বারি খাই।

—-“হে খোদা গাড়িটার কি হলো? যেয়ে দেখা লাগবে!

জারা গাড়ির কাছে এসে গ্লাস দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু বাহিরের গ্লাসে কালো টেপ লাগার কারণে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
—“হ্যালো মিস্টার আপনি ঠিক আছেন?
জারা গাড়ির গ্লাসে নক করতে করতে বলে।

ফায়যান নিজের মাথা চেপে ধরে ধীরে মাথা ঝাকুনি দে। সে চোখ কুঁচলে গাড়ির গ্লাসে নক করার সাউন্ড পেয়ে সে দিকে ঘুরে তাকায়।

—“হ্যালো মিস্টার জিন্দা আছেন নাকি মরছেন? কিছু ত বলেন!

ফায়যানের মাথা ব্যথা করছিল তাই সে অসাবধানতার মত গাড়ি চালিয়ে এক্সিডেন্ট করল। কিন্তু ভাগ্যবশত বেঁচে গেছে।
তার মাথা ব্যথা জারাকে দেখতেই যেনো উধাও হয়ে গেল। সে এক নিমিত্তে চেয়ে আছে জারার দিকে।

জারা বুঝছে বলাতে কাজ হবে না। সে গাছের ধারে গিয়ে একটা ডাল ভেঙ্গে আনে। তার হাতে ডাল দেখে ফায়যান বুঝে গেল মেয়েটা কি করতে যাচ্ছে।

ফায়যান নিজের মাথা নাড়িয়ে হাত নাড়াতে থাকে। কিন্তু কে দেখে কারে? জারা না শুনতে পারছে ফায়যানের কথা আর না ফায়যান থামাতে পারল জারাকে।

—“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার ” ডালটা উঠিয়ে গাড়ির দরজার গ্লাসের উপর দিল এক বারি।

ফায়যান হুট হাট অপর সিডে বসে পড়ে। জারা গ্লাস ভাঙ্গতে পেরে খুশিতে নেচে উঠে।
ফায়যান জারার নাচানি দেখে গাড়ি থেকে বের হয়ে তার হাত ধরে থামায়।

—“এই মেয়ে সাহস ত কম না আমার গাড়ির গ্লাস ভাঙ্গছিস!
—“ভেঙ্গেছি ত বেশ করেছি।
—“আবার আমার মুখের উপর কথা বলেন? রাগের কণ্ঠে বলে।
—“বলব হাজার বলব আপনি কে হুমম? দেশের প্রধানমন্ত্রী যে কথা বললেই আমারে জেলে পাঠাবেন! ভাব নিয়ে জারা কথাটা বলে।
—“লিমিট এর মধ্যে থাকো ক্রস করলে রাস্তা ভাঙ্গতে ঘড়ি দেখব না। জারার দিকে ফায়যান কিছুটা ঝুঁকে কথাটা বলে।

এবার জারা ভয় পেয়ে যায়।

—“নাউজুবিল্লাহি মিন জালেক” এক ঢোক গিলে মনের মধ্যে দোয়া টা পড়ে নিল।

—“নাম কি? শান্ত কণ্ঠে ফায়যান জারার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।

—“দেরি। (ভয়ে বলে দে)

—“দেরি এটা কেমন নাম? ভ্রু কুঁচকে আশ্চর্য হয়ে যায়।

—“হুমম দেরি।

ফায়যান রেগে ধমকি দিতে গেলে তার আগেই কল চলে আসে। সে জারার দিকে একবার তাকিয়ে কল উঠিয়ে কথা বলতে লেগে যায়।

—” আলহামদুলিল্লাহ সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগায় ফেল জারা। ভাগ লে ইয়া ছে জালদি😖।

জারাকে আর পাই কে? সে সাথে সাথে একটা সিএনজি ভাড়া করে ফায়যানের কল কাটার আগেই বেরিয়ে যায় সেখান থেকে।

ফায়যান কলে রাহুল কে বলে চট্টগ্রামে আসতে আসলেই পুরো ঘটনা বলবে বলে কল কেটে দিল।

—“সো আমি কি…….পিছে ঘুরে দেখে কেউ নেই মেয়েটা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে বাতাসের বয়ে যাচ্ছে,,গাছ নাড়াচাড়া করছে,, মানুষ যাওয়া আসা করছে।

—“যাহ ভেগে গেল।
বাই দ্যা ওয়ে কিউট ছিল মেয়েটা। ফায়যান ঠোঁট উল্টিয়ে বলে।

সে কল করে তার নতুন বাসার ড্রাইভারকে

—“চাচা দশ মিনিটের মধ্যে আমার গাড়ি নিয়ে চিটাগং এর হেলগাড় রোডে আসেন। লেইট যাতে না হয়। গম্ভীর গলায় বলে।

—“জ…জ্বী স্যার আসছি।

ফায়যান বলেই কল কেটে গাড়ির মধ্যে হেলান দিল। সে আশেপাশের মানুষদের কান্ড কাজ দেখছে। সবাই কোনো না কোনো কাজে পড়ে আছে। ব্যস্ততা যেনো শহরের মানুষদের জীবনে প্রভাবিত। সে বেখেয়ালি হয়ে ভাবছে হঠাৎ তার চোখ পড়ল গাড়ির নিচে পড়া ডালের উপর। যে ডাল দিয়ে জারা গাড়ির উপর আক্রমণ করেছিল।

ডালের মধ্যে লেগে আছে জারার অনামিকা আঙুলের রিং। রিংটা পেয়ে সে আনমনে বাঁকা হেসে বলে—“মিস দেরি তোমাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবই। যাস্ট ওয়েট ফোর মি😏।

………………..চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here