#তবুও তুমি
~পর্বঃ০৮+০৯ (অন্তিম পর্ব)~
~লেখায়ঃ ফাহমিদা মুশাররাত
গাড়ি থেকে নেমে দাড়াবে এমন সময় কালকের মেয়েটি আবারো সিগ্ধের দিকে এগিয়ে আসে। মেয়েটিকে এভাবে আসতে দেখে ইশা রেগে লাল হয়ে যায়। আর সেখান থেকে সিগ্ধকে কিছু না বলেই ক্লাসের দিকে চলে যায়।
ইশা ক্লাসে ডোকার পর পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো সিগ্ধ কালকের মতোই মেয়েটির সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। ইশাকে সিগ্ধের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফিয়া খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে, এভাবে স্যারের দিকে কি দেখছিস? বাসায় কি কম দেখিস নাকি যে এখানেও দেখা লাগে?” (রাফিয়া)
“চুপ কর তো আমি মরি নিজের জ্বালায় সে আছে খোঁচা মারার তালে!” (ইশা)
” খোঁচা কোথায় মারলাম শুধু জিজ্ঞেসই তো করলাম কম হয় কিনা!”(রাফিয়া)
“হ্যা রে রাফিয়া এই মেয়েটা কে রে? ওকে তো আগে কখনো দেখি নি কলেজে, নতুন নাকি?” (ইশা)
“হ্যা, কিন্তু উনি কোনো স্টুডেন্ট নয় বরং উনি আমাদের ম্যাম, আরশি ম্যাম। যদিও উনি অন্য ডিপার্টমেন্টের। ” (রাফিয়া)
“ওহ্!” (ইশা)
“তো এতো হেঁসে হেঁসে কথা কেন বলছেন উনি, এতো কথা কিসের। হুহ ডং দেখলে বাঁচিয়া! ” (ইশা)
“বুঝেছিস রিয়া আমাদের ইশা বোধহয় স্যারের প্রেমে পড়েছে!” (রাফিয়া)
“মোটেই না আমি এই হিটলারের প্রেমে কখনো পড়বো না হুহ।” (ইশা)
“দেখা যাবে!” (রাফিয়া)
★★
আজকাল ইশা খেয়াল করে সিগ্ধ আরশির সাথেই বেশি চলাফেরা করে। ইশা আর তার বন্ধুরা মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিল এমন সময় সিগ্ধ সেখানে আসে। ইশাকে বলে গেল ছুটির পর যেন সে একাই চলে যায়। কথাটি বলে সিগ্ধ একবারের জন্যেও পিছনে ফিরে ইশার দিকে তাকায় নি। ইদানীং সিগ্ধের এমন আচরণ ইশা কেন যেন মেনে নিতে পারছে না।
ইশা বাসায় এসে ভাবতে লাগলো, “এমন কি করেছি যার জন্য উনি আমাকে এভাবে অবহেলা করছেন?” (ইশা)
★★
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পথে। কিন্তু সিগ্ধ এখনো বাসায় আসছে না। বাহিরে অন্ধকার। সারা বাড়িতে ইশা একাই। এবার ইশা ভয় পেতে শুরু করে। হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। কলিং বেলের শব্দে ইশা দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজার ওপাশে সিগ্ধকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইশা! দরজা খুলে দিতেই সিগ্ধ ভেতরে প্রবেশ করে আর ইশাকে রুমে কফি এনে দিতে বলে।
ইশা কফি নিয়ে রুমে যেতেই দেখতে পায় সিগ্ধ ফোনে কারোর সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। ইশার বুঝতে বাকি রইল না কার সাথে সিগ্ধ এভাবে কথা বলছে।
“বাহিরে তার সাথে সারাদিন ঘুরেও শখ মিটে নি তাই এখন ঘরে এসেও। হুহ, ডং কত!” ইশা কথাটি বলে যেই না রুম থেকে বেরোতে যাবে, তখনি সিগ্ধ এসে ইশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বলে,
“আজকাল আমার বউটা মনে হয় আমাকে বেশ মিস করছে!” (সিগ্ধ)
“ছাড়ুন, যান আপনি আপনার ঐ আরশির কাছে আমার কাছে কি আপনার। সারাদিন ধরে যে আমি একা ছিলাম সে খবর কি আপনার আছে নাকি!” (ইশা)
“এজন্যই তো চলে এলাম তাড়াতাড়ি! ” (সিগ্ধ)
“হ্যাঁ এটা তাড়াতাড়ি দেখুন বাহিরে অন্ধকার হয়ে গেছে! ” (ইশা)
“হুম তা ঠিক। আচ্ছা সরি!এবার ঠিক আছে তো?” (সিগ্ধ)
“তো থেকে গেলেই পারতেন আর আসার কি দরকার ছিল! ” (ইশা)
“ইশা এবার কিন্তু আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। আর একবার যদি তুমি ঐ একই কথা বল তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে বলে দিলাম! ” (সিগ্ধ ইশাকে ছেড়ে দিয়ে শক্ত গলায় বলে)
” বাহ্ রে নিজে ঘরে বউ রেখে বাহিরে অন্য মেয়ের সাথে ঘুরবেন আর আমি কিছু বললেই আমার দোষ?”(ইশা)
“না জেনে কথা বলা একদম ঠিক নয় আর তাছাড়া ও আমার কলেজ লাইফের বান্ধবী। আজ বন্ধুরা মিলে সবাই গেট টুগেদার পার্টি রেখেছে সে জন্যই সেখানে যাওয়া। আর তুমি না বুঝেই কত কথা বলে দিলে!” (সিগ্ধ রেগে বলে)
ইশা আসল কাহিনী বুঝতে পেরে আর সিগ্ধকে এভাবে রেগে যেতে দেখে ইশার রাগ সব উবে গেল। ইশা ভিজে বেড়ালের মতো বললো,
“এটা আগে বললেই পারতেন। ” (ইশা)
“সে সুযোগ তুমি দিলেই তো বলবো!” (সিগ্ধ)
★★
নিজের ভুল বুঝতে পেরে ইশা পরেরদিন কলেজে গিয়ে সবার আগে আরশির সাথে দেখা করে। আরশিও ইশার কথায় ইশার সাথে হেঁসে কথা বলে। অবশ্য আরশি আগে থেকেই জানতো ইশার সম্পর্কে। ইশার সম্পর্কে শুরু থেকে শেষ অব্দি সবটাই আরশির সাথে সিগ্ধ শেয়ার করেছে। ইশা কথা শেষ করে যেনই না অফিস কক্ষ থেকে বেরোতে যাবে তখনি সে অনুভব করে কেউ শক্ত করে তার মুখ চেপে ধরে আর………………….
চলবে…………..!
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]
#তবুও তুমি
~পর্বঃ০৯ (অন্তিম পর্ব)
~লেখায়ঃ ফাহমিদা মুশাররাত~
ইশা অফিস কক্ষ থেকে বেরোতে যাবে, এমন সময় সে অনুভব করল কেউ তার মুখটা জোরে চেপে ধরেছে,যাতে করে সে চেঁচাতে না পারে। ফলে সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। যার জন্যে তার গাঁ ও থরথর করে কাঁপতে থাকে। জোরে চেপে ধরার জন্যে শুধু তার মুখ দিয়ে “উমম উমম” শব্দই শোনা যাচ্ছিল।
অন্য একটা রুমে এনে তার মুখটা ছেড়ে দেয়া হয়। এতোক্ষণ সে পিছনে ফিরে থাকার কারণে কিছুই দেখতে পায়নি এবার যখন সে পিছন থেকে সামনে তাকায় তখন অবাক করে কেউ একজন রুম কাঁপিয়ে হেসে দেয়। সে আর কেউ নয় সয়ং তার স্বামী।
আপনি! উফফ আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। (ইশা)
কেন? আমি তো জানি তুমি খুব সাহসী মেয়ে! এটুকুতেই এতো ভয় পেয়ে গেলে যে গাঁ ও তোমার থরথর করে কাঁপছে। (সিগ্ধ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে কথা বলছে)
এখন তো এসবই বলবেন। আমার জায়গায় হলে তখন বুঝতেন,হুহ!(ইশা)
ইশা মুখ ভেংচিয়ে পাশ কেঁটে চলে যেতে নিলে সিগ্ধ ইশাকে যেতে দেয় না। ইশার কোমরে চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে।
এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়বে ইশা কল্পনাও করে নি। ইশা লজ্জায় রাঙা হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইশাকে এভাবে রাঙাতে দেখে সিগ্ধ ইশাকে আগের চাইতে আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে আর ইশার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটোর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
ইশা সিগ্ধকে ধাক্কা মেরে লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে যায়। সিগ্ধ হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ার ফলে ইশাকে না চাইতেও ছেড়ে দেয়। সিগ্ধও পেছন থেকে বলে,
“এর শোধ কিন্তু আমি তুলেই ছাড়বো দেখে নিও!”(সিগ্ধ জোরে ইশাকে উদ্দেশ্য করে বলে)
“দেখা যাবে!” বলে ইশাও সেখান থেকে চলে আসে ক্লাসে দিকে। দৌড়ানোর কারণে ক্লাসের সামনে আসতেই রিয়ার সাথে সে ধাক্কা খায়। আর রিয়া,” আউচচ” বলে শব্দ করে উঠে।
“অন্ধ হয়ে গিয়েছিস নাকি আজব, এতো জোরে……….. ” কথাটি বলে ইশার মুখের দিকে তাকায় আর দেখে ইশা কিছু একটা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছে।
“সেকিরে ওমন করে হাসছিস কেন, অন্ধের সাথে সাথে কি পাগলও হয়ে গেলি নাকি?” (রিয়া)
“হুম!” (ইশা মুচকি হেঁসে)
“হুম মানে তাহলে তো স্যারের কপালে নিশ্চিত দুঃখ আছে। শেষে কিনা এতো মেয়ে থাকতে স্যার কিনা একটা পাগলকে বিয়ে করতে গেল?” (চিন্তিত স্বরে বলে রিয়া)
“কি বলতে চাইছিস তুই, আমি পাগল?”(ইশা রাগী কন্ঠে)
” যাহ্বাবা আমি কখন বললাম, তুই নিজেই তো বললি!”(রিয়া)
“চুপ কর শয়তান চেরি! যত্তসব আজেবাজে কথা!” (ইশা)
ইশা কথাটি বলে হনহন করতে করতে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাস শেষ হতেই রিয়া, রাফিয়া, রাফি আর আবিদকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“চল আজ আমার তরফ থেকে আমি তোদের সবাইকে ট্রিট দেবো।”(ইশা)
ইশার মুখে এমন কথা শুনে সবাই ভুত দেখার মতো চমকে উঠে।
“কে রে তুই ভাই! এতোদিন এক সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও তো ট্রিটের কথা বললে এড়িয়ে যেতিস! আর আজ হঠাৎ করে কি এমন ঘটল বলতো?”( জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রাফিয়া বলে)
“দোস্ত আই এম ইন লাভ উইত মাই হিটলার !” (ইশা লজ্জা পেয়ে বলে)
“সত্যি! ” (সবাই এক সঙ্গে)
“হুম!” (ইশা)
“আগেই বলেছিলাম, তখন তো বলেছিলি না এমনটা হবে না আর এখন কিনা !” (আবিদ)
“আরে দূর লাভ তো আমি আগে থেকেই করতাম। সেই কলেজ লাইফের শুরু থেকে!” (ইশা)
“কিহ্! আরো আগে থেকে আর আমরা কিছুই জানি না!” (রাফি)
“হুম!” (ইশা)
” এই শুরু থেকে বল না কি হয়েছে! “(রিয়া)
” এখানে না! চল খেতে খেতে বলবো!”(ইশা)
“বেশ তাই হোক!” (রাফিয়া)
তারপর ইশা সবাইকে ট্রিট দেওয়ার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল আর যাওয়ার আগে সিগ্ধকে বলে দিল যেন সে একাই চলে যায়।
সবার সাথে রেস্টুরেন্টে কিছু সময় কাটানোর পর ইশা বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে নিজের রুমে এসে দেখলো সিগ্ধ রুমে নেই। ইশা যেই না ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াবে তখনি তার চোখ যায় টেবিলে রাখা একটি চিরকুটের দিকে। চিরকুটটা যে সিগ্ধ রেখেছে সেটা আর তার বুঝতে বাকি রইল না। চিরকুটটা হাতে নিয়ে ইশা পড়তে শুরু করলো।
“আলমারিতে একটা প্যাকেট রাখা আছে। চট করে তৈরি হয়ে চিরকুটে লেখা ঠিকানায় চলে এসো!”
~সিগ্ধ~
ইশা সিগ্ধের চিরকুটে বলা মতো আলমারিতে রাখা প্যাকেটটি হাতে নিল। প্যাকেটটি খুলে দেখলো সেখানে একটা কালো রঙের শাড়ি রাখা আছে। সেটি পরিধান করে নেয়। আর সেদিনের মতো করে তৈরি হয়ে নিল।
প্রায় বিশ মিনিটের মাথায় সে সেখানে পৌঁছে গেল। রিকশা ভাড়া চুকিয়ে এদিক ওদিকে দেখতে লাগলো সিগ্ধকে। কিন্তু কোথাও তার হদিস মিলল না। এবার সে খুব ভয় পেয়ে যায়। সিগ্ধ কি তাকে আবারো আগের মতো ছেড়ে চলে গেছে নাকি। সিগ্ধকে কোথাও না পেয়ে ইশা এবার
প্রায় কেঁদেই দেয়।
সিগ্ধ আড়ালে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ সব কিছু দেখছিল। ইশাকে কাঁদতে দেখে সে এবার বেরিয়ে ইশার সামনে আসে আর ইশাকে জড়িয়ে ধরে।
“আরে কাঁদছো কেন? আমি কি তোমায় একা ফেলে চলে যাচ্ছি নাকি!” (সিগ্ধ)
“আপনি খুব খারাপ সব সময় আমার দূর্বলতার সুযোগ নেন আমাকে কষ্ট দিন। আমি আর এখানে থাকবো না!” (বলে ইশা সিগ্ধকে ছেড়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করে দেয়)
” ইশা শোন! ” (সিগ্ধ)
“না আমি আর আপনার কোনো কথা শুনবো না আমি চললাম! ” (ইশা)
ইশা এবার চোখ মুছতে মুছতে চলে যায় আর সামনে খোলা আকাশে কিছু একটা দেখে চমকে উঠে। পেছনে ফিরে সিগ্ধের দিকে তাকিয়ে দেখে সিগ্ধ পকেটে হাত রেখে সামনে দেখতে ইশারা করছে।
ইশা আকাশে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যার পুরো আকাশে ফানুস উড়ছে। ইশা এখানে এসে এমনটা দেখবে তা সে কখনো ভাবে নি।
পেছন থেকে সিগ্ধ বলে উঠল,”কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?”(সিগ্ধ)
ইশা দৌড়ে এসে সিগ্ধকে জড়িয়ে ধরে আর কেঁদে দেয়।
“এই দেখ মেয়েদের এই একটা স্বভাব কথায় কথায় খালি কেঁদে দেয়। বলি এতো কাঁদতে থাকলে যে সাজুগুজু সব নষ্ট হয়ে যাবে তখন যে পেত্নীর মতো দেখতে লাগবে সে খেয়াল কি আছে তোমার? কিন্তু যাই বল না কেন পেত্নী হও আর যাই হও #তবুও তুমি সেই আমারই!” (সিগ্ধ)
সিগ্ধের কথায় ইশা হেঁসে দেয়। আর সিগ্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সিগ্ধও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আজ শেষ হয় সিগ্ধের প্রতি ইশার জমে থাকা সব রাগ,অভিমান। সব কিছুর অবকাশ ঘটিয়ে পূর্ণতা পায় ইশা আর সিগ্ধের ভালোবাসা। এভাবেই পূর্ণতা পাক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা।
______________সমাপ্ত _______________