তার শহরের মায়া ২ পর্ব ৫+৬

#তার_শহরের_মায়া ২💜
#পার্ট_৫
#Writer_Liza_moni

তনুর কথা শুনে স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাহির। তনুর বলা,,
আমি আপনাকে কোনো দিন ও ভালোবাসিনি মাহির ভাই।কথাটা তার কানে যেনো এখনো বাজছে।

কমিউনিটি সেন্টারে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তনুর মুখের দিকে।

মাহির অনুর সাথে ও রিলেশনে ছিল?
বলে উঠলো মাহিরের আব্বু।

তনু মাহিরের আব্বুর কাছে গিয়ে বললো,,
হুম বড় মামা।তনু তার বড় মামার হাত ধরে বললো,,
আমাকে ক্ষমা করে দিও। মাহির ভাই যেটা করেছে সেটা একদম ঠিক করেনি।

আমার বোনের ভালোবাসা নিয়ে খেলার জন্যই তাকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। আমি তাকে বুঝাতে চেয়েছি যে ভালোবাসার মানুষটা ঠকালে ঠিক কেমন লাগে?

ভালোবাসা,
খুব সুন্দর একটা শব্দ।এই ছোট্ট শব্দটার অনেক বড় একটা অর্থ আছে। ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই তো মানুষের এত ব্যাকুলতা। আমাদের পরিবার আমাদের ভালোবাসে। আমাদের বন্ধু বান্ধব আমাদের ভালোবাসে। মানুষের মাঝে যেমন মায়া, ভালোবাসা আছে। তেমন তো পশু পাখিদের ও ভালোবাসা,মায়া আছে।একে অপরের প্রতি।

তনু মাহিরের কাছে গিয়ে বললো,,
আচ্ছা তুমি সেই সব মানুষের আত্ম চিৎকার শুনতে পাও না?
যারা প্রার্থনায় কেঁদে ও ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পায় না।

মাহিরের মুখ থেকে কথা হারিয়ে গেছে। একটা টু শব্দ ও বের হচ্ছে না তার মুখ থেকে।

অনু তাজ্জব বনে গেছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভাবতেই পারেনি সে। তার এখন ঠিক কেমন রিয়েকশন করা উচিত বুঝতে পারছে না সে।
নিরব দর্শকের মতো চোখ গোল গোল করে সব কিছু দেখে যাচ্ছে।
.
আব্বু আম্মু,বড় মামা,বড় মামি, মাহির ভাই সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমি মাহির ভাই কে কখনো ভালোবাসিনি। আমি আরাফাত কে ভালোবাসি। আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে জীবনে ও করতাম না।

অনুর বড় মামি প্রচন্ড রেগে আছে তনুর উপর।

বিয়ে যদি নাই করতি তাহলে এত নাটকের কী দরকার ছিল?এত আয়োজন করে এত গুলো টাকা নষ্ট করে কী এখানে নাটক করতে এত আয়োজন করেছিস?

তনু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। তার পর শক্ত কন্ঠে বললো,,
তোমাদের একটা টাকা ও খরচ হয়নি বড় মামি।

বড় মামি একটু থমকালো।
আমি আমার ইনকামের টাকা খরচ করেই এত সব করেছি। সেটাকে নাটক বলো আর যাই বলো সেটা তোমার ইচ্ছে।

তুই একদম ঠিক করেছিস তনু। চিটিং বাজদের সাথে চিটিং বাজি করাটাই উচিত। এদের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত কারো মন নিয়ে খেললে কেমন লাগে?
বললেন তনুর বড় খালামনি।

বর্তমান সময়ে ডেয়ার নিয়ে মানুষের মাতামাতি টা অতিরিক্ত বেশি হয়ে গেছে।
সত্যিকারের প্রেমিক প্রেমিকা খুঁজে পাওয়া দায়।
তোর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। তুই একদম ঠিক কাজ করেছিস। মাহির আমার ছেলে বলে আমি এই সবে ওকে সাপোর্ট করবো তা না। আমি নিজেও বুঝি, ভালোবাসা হারালে কেমন লাগে।

বড় মামার কথায় মুচকি হাসে অনু।
.
.
তনুর রুমটা খুব সুন্দর করে সাজাচ্ছে অনু, মনিষা, তানিশা,আর রুবেল।

তনু আপাতত বড়দের মাঝে বসে আছে।রাত প্রায় নয়টা বাজে। আরাফাত সোফায় বসে তনুর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

তনু আরাফাতের হাসি দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে।
.
.
আচ্ছা অনু তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

অনু বিছানায় ফুল ছিটিয়ে দিতে দিতে বললেন,,
হুম বলো মনিষা আপু।

তোর আর মাহিরের রিলেশন হইছিলো কবে?

অনু মনিষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,
ঐ সব কিশোরী বয়সের আবেগ। হুদাই কানছি আমি।

সেটা বুঝলাম। কিন্তু তোরা রিলেশনে কখন ছিলি?

আমি যখন ইন্টার প্রথম বর্ষে ছিলাম তখন। মাহির ভাইয়ার প্রতি কেমন একটা ফিলিংস কাজ করতো।উনার সব কিছুই ভাল্লাগতো।
একদিন উনি আমাকে হঠাৎ প্রোপজ করে বসে। আমি ও তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে উনার প্রেমে উল্টাইয়া পড়ি।

তাহলে ব্রেক আপ হইলো কেন?

উনি নিজেই ডেয়ার ছিল বলে ব্রেকাপ করে ফেলেছিলেন। আমি ও পাগলের মত কত দিন কান্না করছি।বলেই হাসলো অনু।

টিট ফর ট্যাট।তনু আপু ও একদম ঠিক কাজ করছে। অনেক ভাব না মাহির কা বাচ্চার।আমারে একটু ও পাত্তা দিতো না।বললো তানিশা।

তানিশার কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।
.
.
রাত প্রায় ১১টার দিকে তনু কে রুমে নিয়ে গিয়ে
বিছানায় বসিয়ে দিয়ে যায় অনুরা।
তনু কে রুমে বসিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অনুরা সবাই। আরাফাত কে ডুকতে দিবে না।যতক্ষন না তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা দিচ্ছে।

আরাফাত ভাই থুক্কু দুলাভাই,,
এত দিন তলে তলে অনেক কিছু করে ফেলছেন। অথচ আমি কিচ্ছু বুঝতে ও পারি নাই। এখন আপনার একমাত্র শালির আবদার পূরণ করে তার পর ভেতরে যেতে পারবেন।আর তা না হলে আজ সারা রাতে এক মিনিটের জন্যও এই জায়গা থেকে নড়ছি না আমরা।

গনে গনে দশটা ৫০০ টাকার নোট অনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে অনুর মাথায় হাত রেখে দোয়া করার ভঙ্গি নিয়ে বললো,,,
তারা তারি বিয়ে করে নাও শালিকা।যেনো আমার পকেট থেকে আর টাকা না যায়।

আরাফাতের কথা শুনে সবাই হেসে বললো কিপ্টা দুলাভাই।
.
.
বেলকনিতে আরাম কেদারায় বসে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মাহির।
মনটা বড্ড খারাপ তার। সামান্য একটা ডেয়ার তার জীবন থেকে সুন্দর মূহূর্ত গুলো কেড়ে নিবে ভুলে ও ভাবেনি সে।

আজ সে উপলব্ধি করতে পারছে। ভালোবাসা নিয়ে গেমস খেললে আসলে কেমন কষ্ট লাগে।
তনু আজ তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ভালোবাসার মানুষ ঠকালে বেঁচে থাকতে ও ইচ্ছে করে না।

আজ খুব আফসোস হচ্ছে তার। সেদিন সেই কিশোরী অনুর মন টা নিয়ে না খেললেই হতো।

Revenge of nurture
বলে একটা কথা আছে। আজ বুঝি সেটাই ঘটলো আমার সাথে?
.
.
বাইরের পরিবেশ নাতিশীতোষ্ণ হলেও ভারি গয়না পরে থাকায় তনুর অবস্থা খারাপ।মুখে ভারি মেকআপের আস্তোরন।চোখে আলগা পাপড়ি গুলো সমস্যা করছে।

তনু কে উশখুশ করতে দেখে আরাফাত বললো,,
আর এই সব ভারি গয়না,শাড়ি, মেকআপ নিয়ে থাকতে হবে না।যলদি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

তনু মুচকি হেসে কাভার্ড থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।দম বন্ধ হয়ে আসছে তার এত ভারি জিনিস পড়ে থাকতে।
.
.
বিছানায় শুয়ে শুয়ে পরির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অনু। পিচ্চি টা বায়না ধরেছে সে আজ অনুর কাছে ঘুমাবে।পরি ঘুমিয়ে পড়েছে কিছুক্ষণ আগেই।অনুর ও ঘুম পাচ্ছে খুব।সারা দিনের এত কাজের ধকল সহ্য করতে হয়েছে।শরিরের এখন একটু আরাম চাই।পরিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো অনু।

তনু ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
আরাফাত তনুর কাছে এসে বসে তনুর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,,
নামাজের ওযু করে আসতে একবারে।
অনেক ক্লান্ত লাগছে না?

তনু মুচকি হেসে আরাফাতের দিকে তাকিয়ে বললো,,
ক্লান্ত লাগছে বটে।তবে এর চেয়ে ও বেশি শান্তি লাগছে। তোমাকে পেলাম সারা জীবনের জন্য নিজের করে। তুমি আবার মাহির ভাইয়ার মতো হবা না ভুলে ও।তাহলে একদম খুন করে ফেলবো।

আরাফাত মুচকি হেসে তনু কে জড়িয়ে ধরে বললো,,নারে পাগলী। তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো।তোমাকে ছাড়া তো আমি নিজেই থাকতে পারবো না।

যাও অযু করে আসো। আমরা এক সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নতুন জীবন শুরু করবো।
.
.
তনুর ঘুম পাচ্ছে খুব।শরিরটা ব্যাথা করছে খুব। আরাফাত পাঞ্জাবির পকেট থেকে এক জোড়া নুপুর বেড় করে তনুর পায়ে পড়িয়ে দিলো।

এটা তোমার জন্য। অনেক আগে বানিয়ে রেখিছিলাম। আজকের দিনে দিবো বলে।আজ নিজের হাতে পড়িয়ে দিয়ে এত দিনের ইচ্ছা পূরণ করলাম।
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_৬
#Writer_Liza_moni

গায়ে হলুদের রাতের মতো এখন আর বাড়িতে মানুষের ভীড় নেই।বড় খালামনি আজ সকালেই চলে গেছেন।বাড়িতে তার কাজ আছে।

অনু বিছানার মাঝে গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। আগামী কাল আবার ঢাকা চলে যেতে হবে।সবাই কে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না তার।আজ আবার তনু কে ও বিদায় দেওয়া হবে।বউ ভাতের আয়োজন করা হয়নি।এত ভেজালের মধ্যে। আরাফাতের মা আগে থেকেই তনু কে পছন্দ করতেন।তাই এই বিয়েতে তার কোনো অসম্মতি প্রকাশ করেন নি।হাসি মুখে তনুকে ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিয়েছেন।

কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পড়ে সারা বাড়িতে ঘুর ঘুর করছে তনু।মন খারাপ লাগছে খুব।আজ এই বাড়ি থেকে চলে যাবে। ছোট থেকেই এই বাড়িতে বেড়ে উঠা।এই বাড়ির আনাচে কানাচে কতো সুন্দর সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
ভাবতেই মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল।

এই দিকে আরাফাতের আব্বু আম্মু তাড়া দিচ্ছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। তাদের বড় মেয়ে আরিয়া তার হাসবেন্ড নিয়ে চিটাগাং আসবে।রওনা দিয়ে দিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।আর খাগড়াছড়ি থেকে চিটাগাং যেতে ও অনেক সময়ের প্রয়োজন।

প্রায় সকাল নয়টার দিকে তনুকে বিদায় দিয়ে আহাজারি করছেন তনুর মা।বড় মেয়েটাকে ছাড়া বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

আগামীকাল তো অনু ও চলে যাবে। তখন বাড়িটা আরো বেশি খালি খালি লাগবে।
.
.
বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনু। ভেজা চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।আলসেমি করে গোসলের পর চুল না মুছে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।ভাল্লাগছে না তার।তনু কে খুব মিস করছে।

মনের মাঝে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সেই তনুর বিয়ের দিন থেকে।সেটা হলো,,
তনু কী করে জানলো মাহির আর তার রিলেশনের
কথা?অনু কখনো বলেনি এই বিষয়ে তনু কে।

এই অনু কয়টা বাজে দেখেছিস? দুপুরের খাবার কী রাতে খাবি?এখনো খাবার খেতে আসলি না কেন?

আসছি আম্মু।

ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন অনুর আব্বু, ছোট খালামনি, ছোট ফুফু, তানিশা, মনিষা, আর ছোট্ট পরি। ছোট খালামনির মেয়ে এই পরি।

অনু কে দেখেই হাসলো পরি।অনু চেয়ার টেনে বসলো বাবার পাশে।

বাবা এক পলক অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাত মাখতে মাখতে বললো,,
তুমি ও তো চলে যাবা আগামীকাল সকালে।

অনু প্লেটে ভাত নিতে নিতে ছোট্ট করে বললো হুম।

আমি রাতে তোমার জন্য টিকেট কেটে রাখবো। সকাল ৭টায় বাস স্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে থেকো।

আচ্ছা আব্বু।

পড়ালেখা হচ্ছে তো ঢাকায়?নাকি অন্য কিছু তে মেতে আছো? তুমি আমার ছোট মেয়ে। তোমাকে আর তনু কে দুই জনকেই সমান ভালোবাসি আমি। তুমি ঢাকায় থেকে পড়ছো তাতে আমার সমস্যা নাই। কিন্তু সব সময় একটা কথা মাথায় রাখবা।এই সমাজে আমার একটা সম্মান আছে।সেটা যেনো নষ্ট না হয়। আমি যেনো সবাইকে গর্ব করে বলতে পারি,,
আমার দুই মেয়ে হিরের টুকরো।এরা আমার বেস্ট সন্তান।

বাবার বলা কথা গুলো গিলছে অনু। চুপ করে কথা গুলো গিলা ছাড়া এখন আর তার কোনো কাজ নেই।
.
.
বিকেলের দিকে ছোট খালামনি ও চলে যান অনুর নানু বাড়িতে। তানিশা, মনিষা আর ছোট ফুফুকে যেতে দেয়নি অনু।
তারা চলে গেলে বাড়ি একদম খালি হয়ে যাবে।
অনু চলে গেলে তারাও চলে যাবে।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে অনুর রুমের বিছানায় বসে আড্ডা দিচ্ছে তানিশা, মনিষা আর অনু।
তাদের আড্ডার টপিক হলো,,মনিষার বয় ফ্রেন্ড।

তানিশা আর অনু মিলে মনিষার প্রেমের গল্পই শুনছে।আর মাঝে মাঝে খিল খিল করে হেসে উঠছে।

তোদেরই কপাল বোন। ইন্টারে পড়ে ও প্রেম করিস।আর আমি অর্নাস তৃতীয় বর্ষে পড়ে ও এখনো সিঙ্গেল রয়ে গেলাম।

তুই ও কিন্তু ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে মাহির ভাইয়ার সাথে প্রেম করতি হুঁ।

অনু মুচকি হেসে তানিশার পিঠে একটা কিল মেরে বললো,,
হুসসস মাইয়া।ওটাকে প্রেম বলে নাকি? আবেগ,সবই আবেগ। আবেগের বসে মানুষ কিনা করে?

সত্যি বলতে মাহির ভাইয়ার প্রতি এখন আর আমার তেমন কোনো অনুভূতি কাজ করে না। এই বার ঢাকা থেকে এসে উনাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে আমি কান্না ও করে ফেলে ছিলাম।আর এখন বর্তমানে সেই সব কিছু মনে পড়লে আমার এমন হাসি পায় কী বলবো। এত্ত টা বোকা ছিলাম আমি?

বলেই হাসতে লাগলো অনু।
.
.
মাহিরের সাথে তার মা ছাড়া আর কেউ তেমন কথা বলছে না।এই দিকটা খুব খারাপ লাগছে তার নিজের কাছেই।সবাই তাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে ভুল করেছে। অনেক বড় ভুল করেছে।

নিজের রুমের বিছানায় কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে মাহির।রাত প্রায় ১১টার কাছাকাছি।রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়েছে।

তনুর কথা খুব করে মনে পড়ছে। কিন্তু তনু তার দিকে ফিরে ও চাইবে না।তা সে খুব ভালো করেই জানে।আর তার চেয়ে ও বড় কথা হলো,,তনু এখন অন্য কারো বিয়ে করা বউ।এক রাশ বিষন্নতা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো সে।
.
.
মোবাইলের ভাইব্রেশনের কারনে পুরো বিছানা কেঁপে উঠায় অনু দরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে চিল্লাতে লাগলো,,
আম্মু, ভূমিকম্প হচ্ছে,,

হঠাৎ চুপ করে,
চোখ কচলে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো সিম কোম্পানি থেকে কল করেছে। মেজাজ চটে গেছে তার।এত শান্তির ঘুম টা এত সকালে নষ্ট করে দেওয়ার কোনো মানে হয়?

এই সিম কোম্পানির মালিকরে পাইলে এক বালতি পানিতে চুবিয়ে মারবো। অসহ্য যন্ত্রণা।যখন তখন কল করবে।

মোবাইল রেখে আবার ও ঘুমানোর জন্য বালিশে মাথা রাখতেই এলার্ম বেজে উঠলো।

অগত্যা অনু বিরক্ত হয়ে ঘুমের চিন্তা বাদ দিয়ে ওয়াস রুমের দিকে চললো ফ্রেশ হতে।

ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইলে টাইম দেখে নিলো। সকাল ছয়টা ১২ বাজছে।
জলদি তৈরি হয়ে নাস্তা করে বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে।
এক পাহাড় মন খারাপ এসে ভীড় করলো তার মনে।এত দিন এখানে থাকার ফলে এখন আর যেতে ইচ্ছে করছে না ঢাকায়।
.
.
বাবা বাসে বসিয়ে দিয়ে নেমে গেলেন বাস থেকে।বাস ছেড়ে দিলে অনু জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাবাকে বিদায় জানালো।

আবারো একা একা এত বড় শহরে তাকে থাকতে হবে।
তবে নিজের জেদের জন্যই সেখানে একা থাকতে হবে তাকে।

বাস চলছে নিজের গতিতে।অনু চোখ বন্ধ করে বাসের সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। মাথা ব্যথা করছে হঠাৎ করেই।
.
.
সাড়ে ১২টার দিকে বাস এসে থামে বনানীতে।অনু সুইট কেস নিয়ে বাস থেকে নেমে আসে। অসহ্য মাথা ব্যথা করছে।ম্যাসে যেতে এখান থেকে ২০ মিনিট লাগবে।

একটা সিএনজিতে উঠে বসলো অনু। পেসেঞ্জার চার জন না হলে সিএনজি চালাবেন না বলে দিলো সিএনজি চালক।
অনুর বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেলো আরো কয়েক ধাপ।

কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে লম্বা চওড়া সুন্দর একটা চাপ দাঁড়ি ওয়ালা সুদর্শন এসে সিএনজি চালক কে জিজ্ঞেস করলেন,,
মামা যাবেন?

হ যামু।

ছেলে টা সিএনজির ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখলো একটা মেয়ে সেখানের এক পাশে বসে আছে। ছেলে টা কিছু না বলে ডোন্ট কেয়ার ভাব করে অনুর পাশে গিয়ে বসলো।

আরো দুজন পেসেঞ্জার চলে আসায় সিএনজি স্টার্ট দিল সিএনজি চালক।

ছেলেটা গুন গুন করে গান গাইতে থাকে।
এক মুরুব্বি বলে উঠলো,,
গুন গুন করে না গেয়ে একটু জোরে গাও আমরা ও শুনি।

ছেলেটা মুচকি হেসে গাইতে লাগলো,,

চলে যাই দুচোখের পথে,,
বলে যাই কথা তোরি যে,,
মন আমার ভবঘুরে,যাবে দূরে তোকে না পেলে।
কেন তুই দূরে দূরে বল
আকাশে উড়ে উড়ে চল

মিশে যাই এই আকাশে
তোর বাতাসে
পাখনা মেলে।
দিন শুরু তোর কথায়
তুই ছাড়া নামে না রাত
চাঁদ থেকে।
আকাশের বৃষ্টি তোর
বৃষ্টি তোর
মনে মেঘ জমে।
জানালার হাওয়াতে চাওয়াতে
মনের রোদ কমে।

ছেলেটার গাওয়া এইটুকু গান শুনে মন ছুঁয়ে যায় অনু্র।

বাহ বাহ তুমি তো খুব সুন্দর গান গাও।

ধন্যবাদ আঙ্কেল।
মুচকি হেসে বললো ছেলেটা।

তা বাবা তোমার নাম কী?

তূর্য,,,,
তাওহীদ তূর্য।

চলবে,,,, 🍁

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here