তার শহরের মায়া ২ পর্ব ৭+৮

#তার_শহরের_মায়া ২💜
#পার্ট_৭
#Writer_Liza_moni

মামা এইখানে থামান।
চিএনজি থামলে অনু নেমে ভাড়া মিটিয়ে চলে গেল ম্যাসের ভেতরে।
তূর্য মাথা কিছুটা বের করে অনু কে এক পলক দেখে নিলো।

সিএনজি আরো কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে তূর্য ও সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।

প্রায় এক সপ্তাহ পর নিজের ছোট ছেলে তূর্য কে দেখে জড়িয়ে ধরেন তূর্যর আম্মু মিসেস তৃনা আহমেদ।
তূর্য ও মাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,,
মাত্র এক সপ্তাহতেই এই অবস্থা?

আমার তো মনে হয় টেনশন হয় না তোকে নিয়ে? ছন্নছাড়া হয়ে গেছিস তুই তূর্য।
বিয়ে দিয়ে তোকে সাংসারিক করতে হবে। বুঝতে পারছি আমি।

উফফ আম্মু। বাড়িতে আসতে না আসতেই বিয়ের কথা শুরু হয়ে গেছে?এই জিনিস টা একদম ভাল্লাগে না আমার।

ভাইয়া তুই বরং বড় ভাইয়ার মতোই দেবদাস হয়ে থেকে যা সারা জীবন।

তূর্য কাঁধের ব্যাগটা সোফার উপর রেখে জুঁই এর চুল টেনে দিয়ে বললো,,
জুঁই ফুল জুঁই ফুলের মতো থাকবি।এত বক বক করিস কেন?

তোর কী মনে হয় আমি ছ্যাকা খাইছি তিয়াশ ভাইয়ার মতো?

খাস নাই।তবে খাবি।

খাইলে বলিস।আর আম্মু তুমি আমার বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে তোমার বড় ছেলের বিয়ের কথা ভাবো।
দেখছো না দেবদাস হয়ে গেছে।

তিয়াশ সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বললো,
হ্যাঁ ভাবছি এবার বিয়েটা করে ফেলবো। দেবদাস হয়ে থাকবো না আর।

তূর্য চোখ ছোট ছোট করে তিয়াশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিলো।
তিয়াশের মাথায় কোঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো।গাল ভর্তি দাঁড়ি। লম্বায় ৫.৯ হবে। তূর্য থেকে দুই ইঞ্চি কম। তূর্যর ৬.১।

এই ভাইয়া শুন,,
তুই আগে তোর এই দেবদাস লুকিং টা চেঞ্জ করে।তার পর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যা।আর না হলে কোনো জরিনা,ছকিনার মাও তাদের মেয়ে দিবে না।

তূর্যর কথা শুনে উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো জুঁই।মুখে হাত চেপে ধরে হাসতে হাসতে সোফায় গিয়ে বসল সে।

মা মুচকি হেসে বললো,,
তূর্য যা।আগে ফ্রেশ হয়ে আয়। চিটাগাং থেকে জার্নি করে এসেছিস।ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রেস্ট নিবি যা।

জুঁই চট করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তূর্যর সামনে গিয়ে হাত পেতে দিয়ে বললো,,
এই আমার পায়েল কোথায়?তোকে না বলেছি আসার সময় আমার জন্য পায়েল নিয়ে আসবি।

এই ফকিন্নি যা তো। নিজের জন্য কিছু কিনতে পারি নাই। আবার তোর জন্য কিনমু পায়েল।ঠেকা পড়ছে নাকি আমার?

জুঁই ধুম ধুম করে তূর্যর পিঠে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিয়ে গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

আম্মু তোমার এই হাতি মাইয়ারে কম করে খাইতে দিবা।কী জোরে মারলো। কাঁধে হাত বুলাতে বুলাতে বললো তূর্য।
.
.
বিছানায় চোখ বন্ধ করে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে অনু।এত সময়ের জার্নিতে শরীর ব্যথা হয়ে গেছে।

মন খারাপ করছে খুব। আবারো রুটিন মাফিক চলতে হবে।

অনু একলা জীবন অনেক সুখের হয়। নিজেকে নিজে শান্তনা দিলো সে।

গোসল করতে হবে।শরীর সায় দিচ্ছে না। আজকাল যা গরম পড়েছে।ম্যাসে তার রুম মেট রিয়ানা এখন নেই।সে নাকি আজ সকালে গ্রামে চলে গেছে। না হলে মেয়েটা রান্না করে রাখতো। এখন আবার রান্না করতে হবে।ধূর পারবো না। পাশের হোটেল থেকে বিরিয়ানি কিনে আনবো নি।

মিনিট পাঁচেক চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকার পর অনু এক সমুদ্র বিরক্ত নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল গোসল করার জন্য।
.
.
তুই যা করছিস করে ফেলেছিস।এর জন্য আমার মান সম্মান বাড়েনি বরং কমেছে। আমার ছোট বোনের কাছে আমি ছোট হয়েছি।
এখন এমন রুমের দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকলে চলবে না।
তোর পুরো লাইফ পড়ে আছে। এখন এমন নাটক করে কোনো লাভ হবে না।তনু আর ফিরে আসবে না।আর না আসবে অনু।
তুই যেটা করেছিস, সেটা অন্যায়।

মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে বাবার কথা শুনছে মাহির। সেদিনের পর থেকে নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
বাইরে ও বের হয় না। অফিসে ও যায় না। বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা ও দেয় না।

আগামীকাল থেকে অফিসে যাবা। ভুলে যেও না তুমি একজন ইঞ্জিনিয়ার। তোমাকে আমি ঠিক মতো মানুষ করতে পারলাম না। আমার সারা জীবনের আফসোস রয়ে যাবে।

বাবার কথার প্রতি উত্তরে কিছুই বললো না মাহির।আসলে সে কী বলবে?বাবা যা বলেছেন সব ঠিকি বলেছেন।

.
.
গোসল করে বের হয়ে কোনো রকম চুল মুছে মাথায় ওড়না দিয়ে মোবাইল আর টাকা নিয়ে বিরিয়ানি কেনার উদ্দেশ্যে বের হলো অনু।ক্ষিদা ও লেগেছে ভীষণ।

খাবার টেবিলে বসে আছে তূর্য। একটার পর একটা তরকারি তার প্লেটে দিয়ে যাচ্ছেন মিসেস তৃনা।

কতো শুকিয়ে গেছে এই কয়েক দিনে আমার ছেলেটা।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস নাই নিশ্চয়।

জুঁই ছোট এক টুকরো মাংস মুখে পুরে চিবাতে চিবাতে বললো,,
হুম আম্মু। আসলেই ভাইয়া অনেক চিকন হয়ে গেছে।কয়েক দিন পর বেলুনের মতো ফুলে আকাশে উড়ে যাবে।

সব কিছুতেই তোর ফাজলামি করতেই হবে তাই না জুঁই?বাপ যেমন, বাপের আদরের মেয়ে ও তেমন।

তূর্য খাবার খেতে খেতে নিরব দর্শকের মতো মা আর বোনের খোঁচা খুচি উপভোগ করছে।তিয়াশ তো খেয়েই যাচ্ছে। তার এই দিকে কোনো মন নেই।
.
.
অনু বিরিয়ানি কিনে নিয়ে ম্যাসে ফিরে প্লেটে বেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।আর কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকলে তাকে আর খুঁজে ও পাওয়া যেতো না।

খেয়ে দেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সব গুছিয়ে বাড়িতে কল করে মা বাবার সাথে কথা বলে একটা ভাত ঘুম দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো অনু। শরীর টা সত্যিই খুব ক্লান্ত লাগছে। ঘুম দিলে সতেজ হয়ে যাবে।
.
.
বন্ধুদের সাথে একটা টং এর দোকানে বসে চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে তূর্য।
হাঁসি মজার এক পর্যায়ে তূর্যর বন্ধু রাশেদ বলে উঠলো,,
তূর্য ভাই তোর লুতু পুতু আসছে।

রাশেদের কথা শুনে তূর্য ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার বর্তমান প্রেমিকা তার দিকে এগিয়ে আসছে।
প্রেমিকা বললে অবশ্য ভুল হবে। তূর্য মেয়েটাকে একদমই পছন্দ করে না।মেয়েটাই কাঁঠালের আঠার মতো তার পেছনে লেগে আছে।যা তূর্যর একদম অসহ্য লাগে।
তূর্য প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে বললো,,
চলে আসছে মেন্টাল বড় লোকের মাইয়া।ন্যাকামি শুরু হয়ে যাবে এখন। অসহ্য।এর জ্বালায় চিটাগাং চলে গিয়েছিলাম। আবার আসছে জ্বালাইতে।

ব্রেকাপ করে দিতে পারছিস না।এত বিরক্ত লাগলে।

অফিসের বসের মেয়ে বলে কিছু বলতে পারছি না।না হলে এই মেয়েরে আমি কোন দিন উষ্টা দিয়ে ফেলে দিতাম।

পেন্সিল হিল পরে হেলে দুলে তূর্যর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো এনি।
তূর্যর কাছে এসে তূর্যর কাঁধে হাত রেখে ন্যাকা কন্ঠে ঢং করে বলতে লাগলো,,
বেবি,,
কতো দিন পর তোমাকে দেখলাম। আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেছিলা তুমি?কত কল করেছি। রিসিভ করোনি কেন?

তূর্য এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,,
সুন্দর করে কথা বলো।এত ন্যাকামি আসে কই থেকে বুঝি না।আর বেবি কী হুম?
আমাকে দেখে কী বাচ্চার মতো মনে হয়?

এনি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
সরি বাবু,,

আবার বাবু।হুররর মাইয়া।এই সব বাবু,বেবি বললে উষ্টা দিমু।

এমন করে বলতে পারলা তুমি আমাকে? আমি না তোমার গার্লফ্রেন্ড। আমাকে তুমি একটু ও ভালোবাসো না।

তূর্যর এনি কে এই মূহুর্তে জাস্ট অসহ্য লাগছে। বন্ধুরা সবাই ওর আর এনির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

তূর্য কোমরে দুহাত রেখে আশেপাশে তাকিয়ে এনির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো আমি আসলেই তোমাকে ভালোবাসি না। কেন শুধু শুধু আমার পেছনে পরে আছো বলো তো?
কতো ছেলে তোমাকে পছন্দ করে। তাদের কাছে যাও না।

এনি হঠাৎ কান্না করতে শুরু করলো।এনির এমন কান্ডে ঘাবড়ে গেল তূর্য। পাবলিক প্লেসে কী এই মেয়ে এখন পাবলিকের হাতে তাকে কেরানি খাওয়াবে নাকি?

তূর্য এনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,
কাঁদিস না বইন।তোরে দশ টাকা দামের একটা ডেরি মিল্ক খাওয়ামু।
#তার_শহরের_মায়া_২
#পার্ট_৮
#Writer_Liza_moni

হাসির শব্দে কেঁপে উঠছে টং এর দোকান। তূর্যর বন্ধুরা হাসিতে ফেটে পড়েছে তূর্যর কথা শুনে।
তূর্য ঘাড় বাঁকিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বললো,,
মজা লাগে তোদের?হাসির কথা কিছু বলছি আমি?

রাশেদ হাসতে হাসতে বললো,,
ভাই তোর এই লুতু পুতুর জন্য আমি দশ টাকা দামের একটা ডেরি মিল্ক কিনে আনবো?

ধুরর পোলা।

এনি ড্যাব ড্যাব করে তূর্য আর ওর বন্ধুদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

তূর্য এক হাত কোমরে রেখে আরেক হাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরেছে।ভ্রু জোড়া কুঁচকানো।
কপালে ভাঁজ পড়ে আছু। আশেপাশে তাকাচ্ছে শুধু। এমন সময় চোখ পড়লো অনুর দিকে।

কিছুক্ষণ আগেই অনু ঘুম থেকে উঠে রাতের জন্যে বাজার করতে বাজারের দিকে হাঁটা ধরলো।

ম্যাস থেকে বাজারে হেঁটে যেতে মাত্র দশ মিনিট লাগে। বাজারে হেঁটে হেঁটে গেলে শরীর টা ঠিক থাকবে।আজ সারা দিন হাঁটা হয়নি তার।

অনু রাস্তার পাশের টং দোকানের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় তূর্যর সাথে। তূর্য ও তার দিকে তাকিয়ে ছিল।

তূর্য বেবি শুনো,,
তূর্য এক পলক এনির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,
সময় নাই।

তূর্য দ্রুত হেঁটে অনুর পিছু নিলো।

এই যে মিস শুনেন,,,

অনু পেছনে ফিরে তাকিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলো। পাত্তা দিলো না তূর্য কে।

তূর্য আবারো ডাকলো কিন্তু অনু হাঁটা না থামিয়ে হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।
এই সব ছেলেকে এক দম পাত্তা দিবি না অনু। আসার সময় বাবা কী বলেছে মনে নেই? একদম দাঁড়াবি না।

এই যে এই মেয়ে শুনেন?
আমার গাছের ফুল চুড়ি করে নিয়ে যাচ্ছেন আবার এত দেমাগ?

তূর্যর কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে অনু।সে এবার হাটা থামিয়ে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো,,
বড্ড অসভ্য লোক তো আপনি।দেমাগ দেখালাম কখন?আর ফুল কে চুরি করেছে?

তূর্য দৌড়ে এসে অনুর সামনে দাঁড়িয়ে গাল ফুলিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।তারপর বললো,,
এটাতো আপনাকে দাড় করানোর নিনজা টেকনিক।

তূর্যর কথা শুনে ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে গেছে অনু। লোকটা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এ খুব চালাক।

আর শুনেন আপনি দেমাগ দেখাচ্ছিলেন।এত বার ডাকলাম শুনে ও না শুনার ভাব করছিলেন।

তূর্য আর অনুর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে এনি। তূর্য তাকে ইগনোর করে অনুর পিছনে ছুটে যাঝয়াটা একদমই মেনে নিতে পারছে না এনি। রাগে পা থেকে হিল গুলো খুলে রাস্তার পাশে ছুঁড়ে মেরে খালি পায়ে হেঁটে গাড়িতে উঠে ড্রাইভার কে বললো,,
বাড়িতে চলুন।

তূর্য আর অনুর সামনে দিয়ে চলে গেল এনির গাড়ি। তূর্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর অনুর মুখের দিকে ভালো করে তাকাতেই থমকে যায়।

উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মেয়ে অনু। ধবধবে ফর্সা না।দুধে আলতা গায়ের রং না তার। চোখের পাপড়ি গুলো ঘন কালো হওয়ায় চোখ গুলো বেশ ভালো লাগলো তূর্যর।বা চোখের ভ্রুর উপর একটা তিল আছে অনুর। পাতলা হালকা গোলাপি ঠোঁট জোড়া।

তূর্য অনুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,,

I am very sorry.
শুধু শুধু আপনার সময় নষ্ট করেছি। again sorry.
ফুল চোর বলার জন্য। কিছু মনে কইরেন না। আজাইরা ঝামেলা থেকে বাজতে আপনাকে বিরক্ত করলাম।সরি ফর দিছ।

তূর্যর উপর ভীষণ বিরক্ত হলো অনু। আজাইরা ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ও মানুষ এখন তাকে ফুল চোর ও বলছে।তাও রাস্তায় মানুষের সামনে।

অনু তূর্য কে কিচ্ছু না বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তূর্য সেখানে দাঁড়িয়েই অনুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

মেয়েটা কিছুই বললো না? বেশি বিরক্ত করে ফেলেছি মনে হয়।এই এনির ন্যাকামি থেকে বাঁচতেই এইসব করলাম।মাইয়াডা কোন দিন যে আমাকে মুক্তি দিবে?
.
.
রান্না সেরে সেলিং ফ্যান ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো অনু।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।

নিজের রুমের বারান্দায় বসে গিটারে টুং টাং সুর তুলছে তূর্য।রাত নয়টা বাজছে। আকাশ একদম পরিষ্কার।লক্ষ লক্ষ তাঁরা মিটি মিটি করে জ্বলছে। তাঁরারা ঘিরে রেখেছে থালার মত চাঁদ টাকে। উজ্জ্বল চাঁদের গায়ে ও দাগ আছে। চাঁদের ও খুঁত আছে। তাহলে একটা মানুষ কী করে নিখুঁত হবে? বুঝতে পারে না তূর্য।

চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তূর্য গেয়ে উঠলো,,

পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তোমার রজনী গন্ধায়,,
রূপ সাগরের পাড়ের পানে
উদাসী মন ধায়।
তোমার প্রজাতির পাখা
আমার আকাশ চাওয়া মুগ্ধ চোখে রঙিন স্বপন মাখা।
তোমার চাঁদের আলোয়
মেলায় আমার দুঃখ সুখের সকল অবসান।
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান।

জুঁই তূর্যর বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে তূর্যর গাওয়া গান শুনছে।তার ভাই এত সুন্দর করে গান গাইতে পারে বলে মাঝে মাঝে খুব হিংসা হয় তূর্যর গান শুনে।
সে কেন এমন সুন্দর করে গান গাইতে পারে না?

এহ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ,,,
কাকের গলায় কোকিলের সুর।

তূর্য ভ্রু কুঁচকে জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,,
এই তোর সমস্যা কি?
আমাকে অপমান করে কী শান্তি লাগে?বলতো আমার জল্লাদ বোন।

এত সুন্দর করে গান গাইবি না প্লিজ ভাইয়া। কোন দিন দেখবি তোর গানের সুরের টানে আমাদের বাড়ির গেটের সামনে মেয়েদের সিরিয়াল পড়ে যাবে। শুধু তোর জীবন সঙ্গী হয়ে এই মিষ্টি কন্ঠের গান শোনার জন্য।

জুঁই এর কথায় হাসতে হাসতে শেষ তূর্য।
তূর্যর পাশে মোড়া টেনে বসে হাসিতে যোগ দিলো জুঁই ও। তূর্য হাসলে নজর কাড়া সেই টোল টা কে ও হিংসা করে জুঁই। তার ভাইয়াটা একদম কিউটের ডিব্বা।

জিম করে না তূর্য। সাধারণ মানুষের মতো বডিই পছন্দ তার।সিক্স প্যাক ওয়ালা বডি বানানোর চিন্তা তার মাথায় আসেনি কোনো দিন।

হলদে ফর্সা গায়ের রং টা খুব মানিয়েছে তূর্য কে।

ওহ শিট। আম্মু তোকে ডিনার করার জন্য ডাকতে বললো আমাকে।আর আমি তোর সাথে বক বক করে যাচ্ছি।

খেতে আয়। আব্বু ও বসে গেছে খাবার খাওয়ার জন্য। জলদি আয় বলে জুঁই চলে গেল।
তূর্য মুচকি হাসলো।
.
.
রেস্ট নেওয়ার জন্য বিছানায় শুয়ে ছিল অনু। কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল বুঝতেই পারেনি। হাত দিয়ে চোখ কচলে শোয়া থেকে উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল চোখে মুখে পানি দেওয়ার জন্য।

মুখ ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে খাবার বেড়ে খেয়ে নিল।সব কিছু গুছিয়ে মোবাইল নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে কল করলো তার বেস্ট ফ্রেন্ড রিফাকে।

দুই বার রিং হতেই কল রিসিভ করে রিফা বলতে শুরু করলো,,
এত দিনে আমার কথা মনে পড়েছে বড় লোক্স উল্টা প্রো মেক্স আফার। ভুলেই গেছেন এই নব জাতক বাচ্চা কে।

বইন চুপ কর। তুই নব জাতক বাচ্চা তাই না?শালি আজ বিয়ে দিলে আগামীকাল তুই নিজেই বাচ্চার মা হবি। সেখানে নিজেকে নব জাতক বাচ্চা বলতে লজ্জা করে না?

আচ্ছা দোস্ত সরি।আর কমু না।এই বার বল তো,,
তনু আপুর বিয়েতে কেমন আনন্দ করলি?বেয়াই টেয়াই আছে নাকি?না মানে আমরা সিঙ্গেল রা মিঙ্গেল হতাম আর কি।

আপুর বিয়েতে যা হইছে তা তুই কেন আমি নিজেই কোনো দিন ভাবি নাই।

রিফা কৌতুহল নিয়ে বললো,,
কী হয়েছে তাড়াতাড়ি বল।যতক্ষন না শুনমু ততক্ষণ আমার পেটের ভাত হজম হবে না।আর রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।

এখন কিছু কইতে পারতাম না। আগামী কাল কখন আসবি ভার্সিটিতে?

ধুর তুই না বললে আমি ও কমু না। কখন যামু ভার্সিটিতে।

অনু মুচকি হেসে বললো,, আচ্ছা ঠিক আছে।বলতে হবে না।রাখছি,,

এই কুত্তি শোন,,
আমার ঘুম তো আর রাতে হবে না।মাথার মধ্যে শুধু ঘুরপাক খাবে তনু আপুর বিয়েতে কী এমন হয়েছে যে তুই নিজেও তা ভাবিস নাই। তুই যখন বলে দিয়েছিস এখন বলতে পারবি না,, তাহলে বোম মেরে ও তোর মুখ থেকে সেই কথা আর বের করতে পারবো না।এটা আমি খুব ভালো করেই জানি।

বুঝতে পারার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

হুঁ ঢং। আমি দশটার দিকে ক্যাম্পাসের ওখানের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে অপেক্ষা করবো।লেট লতিফার মতো যদি লেট করিস তো তাইলে উষ্টা দিয়ে তোর হবু জামাইয়ের কাছে পাঠাই দিমু।

রিফার কথা শুনে অনু হেসে দিলো।
আচ্ছা ঠিক আছে তোকে গোনে গোনে ২০ মিনিট অপেক্ষা করিয়ে তার পর আমি তোর কাছে যামু।

চলবে,,,, 🍁

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here