তার শহরের মায়া ২ পর্ব ৯+১০

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_৯
#Writer_Liza_moni

জানালার কাঁচ ভেদ করে সূর্যের আলো পড়েছে ঘুমন্ত তূর্যর মুখে। সকাল আটটা বাজে। ফজরের নামাজ পড়ে যে ঘুমিয়েছে এখনো ঘুম ভাঙ্গিনি তার। কাক গুলো কর্কশ গলায় কা কা করতে লাগলো।
মোবাইলের এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তূর্যর।
পিট পিট করে চোখ মেলে তাকালো।

রাত জেগে অফিসের জমে থাকা কাজ করে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ছিল তূর্য। সাড়ে নয়টার দিকে আবার অফিসে যেতে হবে। বিরক্ত হয়ে আড়মোরা ভেঙ্গে শোয়া থেকে উঠে বসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো আটটা দশ বাজে।

তূর্য হাই তুলতে তুলতে কাভার্ড থেকে ট্রাউজার আর টি শার্ট, তোয়ালে নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।
.
.
সকাল আর দুপুরের জন্য রান্না করে নিয়েছে অনু।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল গোসল করার জন্য।এই ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে থাকতে খুব অসস্থি বোধ করছিলো সে।

গোসল করে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে থাকে। মোবাইলের রিং টোনের শব্দ পেয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো তনু কল করেছে।অনু ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে কল রিসিভ করে বলতে লাগলো,,

জামাই পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিস? একবার ও মনে পড়ে না তাই না আমার কথা? স্বার্থপর মেয়ে। তোর যে একটা ছোট বোন আছে সেটা তোর মনে আছে?

অনুর এত গুলো প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো তনু। সেই ছোট বেলার মতই তার বোনটা একসাথে এতগুলো প্রশ্ন করে বসলো।

আস্তে আস্তে,,এক সাথে এত গুলো প্রশ্ন করলে আমি কয়টার উত্তর দিবো?

সব গুলোর দে।

তনু মুচকি হেসে বললো
আমার একটা মাত্র ছোট বোনকে আমি কখনো ভুলে যেতে পারি?

ঢং করিস না তো। তুই ভুলে গেছিস।

আরে না বনু।

আচ্ছা বাদ দে। কেমন আছিস?

ভালো তুই?

ভালো। আচ্ছা আমার দুলাভাইয়ের কোনো খবর নেই কেন? ওনার এক মাত্র শালি কোথায় ফোন করে খোঁজ খবর নিবে তা না।আমার কথা ভুলেই বসে আছে।

তনু হেসে বললো,, অফিসে গেছে। রাতে আসলে আমি বলবো তোকে কল করতে। তুই ইচ্ছে মতন বকে দিস।
.
.
অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিজের বাইক নিয়ে অফিসে যাওয়ার সময় রিকশায় অনু কে দেখতে পায় তূর্য।তূর্যর দিকে তাকালেও চিনতে পারে নি অনু।কারন তূর্যর মাথায় হেলমেট।
রিফাকে ওয়েট করাবে বলে নিজেই আগে আগে ভার্সিটিতে চলে গেল অনু।

তূর্য অফিসটা অনুদের ভার্সিটি থেকে কিছুটা সামনেই।
.
ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকতেই অনু কে জড়িয়ে ধরলো রিফা। অনেক দিন পর প্রানের বেস্টুরে পেয়ে আনন্দ যেন উপচে পড়ছে।

অনু রিফার পিঠে একটা কিল মেরে ফকিন্নি,,
তুই নাকি দশটা বাজে এসে আমার জন্য অপেক্ষা করবি? এখন তো দেখছি ৯:৪৫ এ এসে বসে আছিস।

কিছু নোটস নেওয়ার দরকার ছিল। আমাদের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট মিস্টার হাবা গোবার কাছ থেকেই এত সময় ধরে লিখ ছিলাম। আমার লেখা শেষ। তুই তো এখন লিখতে পারবি না।

লিখতে পারবো না কেন এখন? চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো অনু।

রিফা হেসে বললো আমাকে তনু আপুর বিয়ের কাহিনী বলবি তাই।

বয়েই গেছে আমার।কমু না কিছু।

বইনা ভালো না আমার। আমি তোরে নোটস গুলোর ছবি তুলে what’s app এ পাঠিয়ে দিবো।

পাক্কা?

একদম পাক্কা।

ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো অনু আর রিফা। এমন সময় কোথা থেকে আরকটা মেয়ে এসে অনুর চুল টেনে দিয়ে বললো,,
রিফাই তোর বেস্ট ফ্রেন্ড শুধু। আমি কেউ না।

অনু মুচকি হেসে মেয়েটার হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো,,
তুই ছিলি না কেয়া।এই মাত্র আসলি তুই।আর এসেই ঠিক আমাদের খুঁজে বের করে নিয়েছিস।

কেয়া একটু ভাব নিয়ে বললো,,
ঈগলের চোখ আমার। তোদের কে খুঁজে বের করা কোনো ব্যাপার না।

পাশ থেকে রিফা বলে উঠলো,,
ঈগলের চোখ না। তোর হলো শকুনের চোখ।যাকে দেখবি তার দিকেই শকুনের দৃষ্টিতে তাকাবি।

ভাই চুপ কর তোরা। মানুষের চোখে তোদের। শকুনের ও না। ঈগলের ও না।হুদাই ঝগড়া করার কোনো মানে হয় না।

আচ্ছা বাদ দে এই সব। এখন বলতো তনু আপুর বিয়েতে কী হয়েছে?

অনু হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করলো তনুর বিয়েতে ঘটে যাওয়া সম্পুর্ন ঘটনা।
.
.
তূর্য ভাই তোকে বস ডেকে পাঠিয়েছে।এনি কে ও দেখলাম বসের রুমে।

তূর্য হাতের ফাইলটার দিকে তাকিয়ে বললো,,
এই অফিসের চাকরি টা আমি খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিবো। তার পর তোদের সবাই কে ট্রিট দিয়ে এই উটকো ঝামেলা থেকে মুক্তি নিয়ে ট্রাভেলিং করে
বেড়াবো।আর না হয়, একটা মেয়ে কে বিয়ে করে আগুনে ঝাঁপ দিবো।বুঝলি রনি।

তুই ভাই আসলেই পাগল। এনি দেখতে কত সুন্দর।বড় লোকের মেয়ে। তোর জন্য এতো পাগলামি করে। শুধু মাত্র তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য।আর তুই ওকে বিরক্তকর মনে করে এড়িয়ে চলিস।
আমার জন্য এমন পাগলামি করলে আমি তো সেই কবেই বিয়ে করে ফেলতাম।

শুধু গায়ের রং ফর্সা হলেই তাকে সুন্দরী বলে না।এক গাদা মেকআপ করে এসে আমাকে বলে ও নাকি ন্যাচারাল সুন্দরী।
আমাকে ও ন্যাচারাল সুন্দর,আর কৃত্রিম সুন্দরের পার্থক্য শিখাতে আসে।

তোকে বস কেন ডাকছে সেটা শুনে আয় আগে। বেশি দেরি করলে আবার রেগে বোম হয়ে যাবে।

তূর্য ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,,
রেগে গেলেও আমার কী?কয়েক দিনের মধ্যে চাকরি টা আমি এমনিতেই ছেড়ে দিবো। আমার কোনো পিছুটান নেই।

তূর্য বসের কেবিনের দিকে চলে গেল।রনি হাসলো। ছেলেটা আসলেই অনেক মেয়ের মন চুরি করার মতো যোগ্যতা নিয়ে বসে আছে।
.
.
মে আই কাম ইন স্যার?

মিস্টার জুয়েল চৌধুরী তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো,,
আসো, ইয়াং ম্যান আসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

তূর্য ভেতরে এসে বললো,, আসসালামুয়ালাইকুম স্যার। কেমন আছেন?

বস সালামের উত্তর দিয়ে বললেন,, ভালো আছেন।

তূর্য কে দেখে সোফায় বসে লজ্জা পাওয়ার ভান করছে এনি।যেনো সে এই প্রথম কোনো ছেলের সামনে এসেছে।

তূর্য এক বারের জন্য ও ভুল করে এনির দিকে তাকায়নি। এতটাই অপছন্দ করে সে এনিকে।

শুনেছি,,
তুমি নাকি গতকাল আমার মেয়েকে ছেড়ে অন্য একটা মেয়ের পেছনে ঘুরেছো?

তূর্য স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো,,
জ্বি ঘুরেছি। মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয়েছে বলেই তার পেছনে ঘুরছি।

আমার মেয়ে কোন দিক থেকে অযোগ্য তোমার?যে আমার মেয়ের দিকে ফিরে ও তাকাতে ইচ্ছা হয় না।

তূর্য খুব স্বাভাবিক থেকেই মুচকি হেসে বললো,,
আসলে ব্যাপারটা কি জানেন স্যার?
যার তার প্রতি ফিলিংস আসে না।এনিকে আমি সব সময় আপনার মেয়ে আর আমার বোন হিসাবে দেখতাম। এখনো দেখি।ওর প্রতি আমার কোনো ফিলিংস আসে না।ওর এই সব পাগলামি আমার ভালো লাগে না।

জুয়েল সাহেব বসা থেকে উঠে এনির দিকে এগিয়ে গেলেন। গতকাল তূর্য তাকে ইগনোর করায় সে রেগে বেলেট দিয়ে হাত কেটে বসে।

জুয়েল সাহেব মেয়ের হাত ধরে তূর্যর সামনে নিয়ে গিয়ে বললো,,
এই দেখো,,
আমার মেয়েটা তোমাকে কতটা ভালোবাসে, পছন্দ করে বলে গতকাল তুমি ওকে ইগনোর করেছো বলে ও হাত কেটে কী করেছে।

তূর্য ভ্রু কুঁচকে এনির ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,,
আপনার মেয়েকে সময় থাকতে এই সব পাগলামি করতে বারন করুন প্লিজ।ওরে আমার ভাল্লাগে না।ও নিজের হাত কেন?গলা ও যদি কেটে ফেলে তবুও আমি ওরে কোনো দিন ভালোবাসতে পারবো না।

একটা কথা বোঝার চেষ্টা করুন,,যাকে আমার ভালোই লাগে না তাকে আমি কী করে ভালোবাসবো বলুন তো?

তূর্যর সোজা সাপ্টা উত্তর শুনে রেগে গেলেন জুয়েল চৌধুরী। তিনি রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলেন,,
আগামীকাল থেকে তোমাকে আর অফিসে আসতে হবে না। রেজিগনেশন লেটার জমা দিয়ে আজকেই বিদায় হও আমার অফিস থেকে।

জুয়েল সাহেবের কথা শুনে তূর্য যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।এতটা খুশি হয়েছে সে।গাধার মত খাঁটিয়ে মাস শেষে বেতন দেয় অল্প। তার উপর এই এনি নামক উটকো ঝামেলা লেগেই থাকে কাঁঠালের আঠার মত।

ধন্যবাদ স্যার। আমি নিজেই বলতাম চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা। সেখানে আপনি নিজেই বলে দিলেন। আমি এত কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে।আরাবু স্যার।আসি,,,

তূর্যর এমন খুশি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে পারলেন না, জুয়েল চৌধুরী এবং তার আটা ময়দা মাখা ন্যাচারাল সুন্দরী কন্যা।
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১০
#Writer_Liza_moni

টিট ফর ট্যাট,,
যেমন কর্ম তেমন ফল।তনু আপুকে আমার পক্ষ থেকে এত্ত গুলো উম্মাহ। আমি তো চাই ঐ চিটিং বাজটা সারা জীবন সিঙ্গেল থাকুক।মেয়ে না জুটুক ওর কপালে।আমিন,,,

রিফার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে অনু।বলে কী এই মেয়ে? মাহির ভাই সারা জীবন সিঙ্গেল থাকবে।এটাও সম্ভব?

এমন দোয়া করিস না রিফা।মনে হয় না কবুল হবে।

হতেও তো পারে কেয়া।

ধুর,কিযে বলিস তোরা।দেখবি একদিন মাহির ভাইয়ার জীবনে ও কেউ একজন আসবে। মাহির ভাই এখন আর আগের মতো নেই। ভুল থেকেই তো মানুষ শিখে।
তাই না?

হইছে আপনাকে আর মানব দরদী হতে হবে না।

অনু মুচকি হাসে। আমাকে নোটস গুলো দিস তো।লিখে নিতে হবে।

আমি তোর what’s app এ ছবি দিয়ে দিয়েছি।রাতে বসে বসে লিখে নিস।

অনু,রিফা চল ফুচকা খাই আসি।শফিক চাচা রাস্তার পাশে ছোট করে একটা দোকান খুলে বসছে।সেখান থেকে।

কেয়ার কথা শুনে নাক ছিটকে রিফা বললো,,
রাস্তার ধারে আমরা যাবো ফুচকা খেতে? পাগল নাকি?

বড় লোকি দেখাবি না একদম। এমন ভাব করছিস যেনো কোনো দিন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাস নাই?

চুপ কর তো তোরা। ফুচকা খাইতে যেতে বলছিস শুধু। কিন্তু কে টাকা দিবে সেটা বললি না কেন?

সেটা আবার বলতে হবে নাকি অনু? আমাদের বড় লোক্স উল্টা প্রো মেক্স রিফা ম্যাডাম আছে না?তিনিই দিবেন।ধরে নে ওর পক্ষ থেকে ট্রিট।

দিলি তো ফাঁসিয়ে আমায়? তুই এমন বড় লোক, বড় লোক করিস,,যেনো আমি টাকার গাছ লাইছি।

অনু বসা থেকে উঠে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,,
দুই শাকচুন্নীর ঝগড়া শেষ হলে ফুচকা খেতে আয়।টাকা আমি দিবো।
.
.
তূর্য তার ডেক্সে বসে হাসতে হাসতে শেষ। তূর্য কে এমন হাসতে দেখে অফিসের সবাই ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

রনি তূর্যর কাঁধে হাত রেখে বললো,,
কিরে ভাই এমন করে হাসিস কেন তুই? পাগল হয়ে গেলি নাকি?

তূর্য হাসি থামিয়ে বললো,,
ভাই আমি কখনো ভাবি নাই জুয়েল স্যার উনার মেয়ের জন্য আমার কাছে সেপাই গাইবে।

ওহ এই ব্যাপার।এক কাজ কর তুই স্যার কে গিয়ে বলে দে,,এনিরে আমার ভাল্লাগে।

তূর্য চোখ ছোট ছোট করে রনির দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস কন্ঠে বললো,,
রিয়া কে?ও জানলে তোর হান্ডি গুড্ডি সব ভেঙ্গে ফেলবে।

মজা করছি ভাই।তোর চাকরি আছে এখন ও?

তূর্য ভেংচি কেটে বললো,,
আগামীকালই রেজিগনেশন লেটার জমা দিয়ে এই অফিস থেকে বিদায় নিচ্ছি।

তূর্যর বলা কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল তারই কলিগ সিনথিয়ার।
বসা থেকে উঠে তূর্যর কাছে এসে বললো,,
সেকি তূর্য,,
তুমি চলে যাবা এই অফিস থেকে? চাকরি কেন ছেড়ে দিচ্ছো?

তূর্য বা ভ্রু উঁচু করে সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,, আমার ইচ্ছা তাই।এই অফিসে কাজ করার শখ নাই আমার। যদিও শখের বশে এই অফিসে জয়েন করে ছিলাম। এখন আর আমার সেই শখ নেই।

তাহলে চাকরি ছেড়ে কী করবি ভাবছিস তুই?

ঘুরে বেড়াবো। আমার জন্মভূমি কে এখনো ভালো করে দেখা বাকি।

বিয়ে করে ফেল।বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াইস।

ধুর শালা।বউ টউ হলো উটকো ঝামেলা।বুঝে কম চিল্লায় বেশি। আমার বড় ভাই এখনো বিয়ে করে নাই। সেখানে আমি বিয়ে করবো? অসম্ভব।

তোমার সাথে আমাকে ও ঘুরতে নিয়া যাই ও।

তূর্য সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো,,
নিজের নাই ঠিক,, আবার উটকো ঝামেলা ঘাড়ে চাপানোর ইচ্ছে নেই আমার। বিয়ের পর জামাইকে নিয়ে ঘুরে বেড়ি ও।

আমি গেলাম। আগামীকাল এসে সবার সাথে শেষ বার দেখা করে যাবো। আল্লাহ হাফেজ।

এই তূর্যর এত ভাব কিসের কে জানে?এত করে ওরে বুঝাতে চাই ওরে আমার পছন্দ। সেটা যেনো বুঝিয়ে ও না বুঝার ভান করে।
বিড় বিড় করে বললো সিনথিয়া।

লাভ নাই,লাভ নাই,, সিনথিয়া আফা।যেখানে তূর্য এনি কে পাত্তা দেয় না। সেখানে আপনাকে পাত্তা দিবে বলে আমার মনে হয় না।

রনির দিকে চোখ গরম করে তাকালো সিনথিয়া।বিয়ে তো আমি তূর্য কেই করবো।

জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন।হইলে ও হইতে পারে স্বপ্ন পূরণ।
.
.
তূর্য বাইক নিয়ে যাবার সময় রাস্তার পাশে অনু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাইক সাইড করে দাঁড় করিয়ে মাথায় হেলমেট পরেই অনুর দিকে এগিয়ে গেল।অনু তখন আপন মনে ফুচকা খাচ্ছে।
সাথে কেয়া আর রিফা ও আছে।ঝালে হা হু করছে কেয়া আর রিফা।অনু একটার পর একটা সাবার করে যাচ্ছে। পছন্দের খাবার বলে কথা।

তূর্য অবাক চোখে তাকিয়ে আছে অনুর মুখের দিকে। ঝালে মেয়েটার চোখে পানি চিকচিক করছে।এখনি টপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। অথচ মেয়েটা কেমন শান্ত হয়ে ফুচকা খেয়ে যাচ্ছে।

বোন ৩০ টা হয়ে গেছে।আর খাইস না। তুই বাজিতে জিতে গেছোস।আর খাইতে হবে না।আর খাইলে তোর ঘরে বাইরের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
মিনমিনে গলায় বললো কেয়া।

চাচা অনুরে আর ফুচকা দিয়েন না। আজকে যদি ওর পেট খারাপ না হইছে দেইখেন।

অনু মুখের ভেতর ফুচকা চিবাতে চিবাতে বললো,,আরো দশ বারো টা ফুচকা দাও চাচা।
অনেক দিন পর খাচ্ছি।কী টেস্ট,আহা,,,

তূর্য বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। বুকের মাঝে দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে অনুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,,

এই যে মিস,,
আর একটা ফুচকা ও খাইয়েন না। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি এখনি ঢলে পড়ে যাবেন।

অনু টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে তূর্যর দিকে ভালো করে তাকালো। ভয়েস টা কেমন চেনা চেনা লাগছে।

অনু শফিক চাচার দিকে তাকিয়ে বললো,,আর বানাইয়েন না চাচা।আর খামু না। আজকে নির্ঘাত আমার পেট খারাপ করবে।

অনু যে তূর্যর কথা শুনেছে এইটা ভেবে কেন যেনো খুব ভালো লাগলো তূর্যর।

অনু তূর্যর দিকে এগিয়ে এসে বললো,কে আপনি? চিনেন আমাকে?

তূর্য মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বললো হুম অল্প কিছুটা চিনি।

তূর্য কে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো অনু।
ওহ আচ্ছা আপনি। বলেই অনু চলে যাবার সময় তূর্য অনুর হাত ধরে ফেললো।

অনুর গায়ে যেনো ১২০ বোল্টের ঝটকা লাগলো। পেছনে ফিরে ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,,

হাত ধরলেন কেন আপনি?এত সাহস কে দিয়েছে
আপনাকে?

তূর্য ভাব নিয়ে বললো,,
আমি জানি, আমি সাহসী।

কেয়া আর রিফা ও এগিয়ে আসলো। তূর্য কে দেখে কেয়া বলেই দিলো,

উরিম্মা কী জোস ছেলে,,,,

চোখ গরম করে কেয়ার দিকে তাকালো অনু। ইচ্ছে করছে ঠাঁটিয়ে এক চড় মারতে কেয়ার গালে।

পাশ থেকে রিফা কেয়ার কোমরে চিমটি কেটে বললো,,
কোথায় কী বলতে হয় জানিস না?

তূর্য মুচকি হেসে ওদের তিন জনের দিকে তাকিয়ে আছে।

অনু চোখ পাকিয়ে তূর্যর দিকে তাকিয়ে রিফা আর কেয়ার হাত ধরে টান মেরে বললো,,
চল এখান থেকে।

আমার টাকা গুলো দিয়া যান‌ আফা।

শফিক মিয়ার কথা শুনে অনুর মেজাজ গেল আরো খারাপ হয়ে।
এই লোকটা রে আমি চাচা ডাকি।আর এই ব্যাটা আমারে আফা ডাকে? সিরিয়াসলি?

কী হইলো আফা,,টাকা দেন,,,

দিমু না টাকা। আপনাকে আমি চাচা ডাকি,, আর আপনি আমাকে আফা ডাকলেন? আমি আপনার মেয়ের বয়সী চাচা।

আচ্ছা আফা,,,

আবার আফা?অনু এখন রাগে যেনো কান্না করে দিবে। বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে তূর্য।

অনু ঠোঁট উল্টে ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো।

কেয়া আর রিফা ও দৌড় দিল অনুর পিছনে।
শফিক মিয়া গামছা কাঁধে দিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে বললো,,
আরে আমার টাকা দিয়া যান।

কেয়া গলা উঁচু করে বললো,,
আফা বলে রাগাই দিছেন।মা বললে বোনাস ও পাইতেন। এখন আর টাকা পাওয়ার চিন্তা করে লাভ নাই।বসে বসে ঝাল দিয়ে ফুচকা খান।

আরে আমার টাকা দিয়া যান।ও আফা,,,আফা,,,

তূর্য হাসতে হাসতে শেষ। পকেট থেকে মানি ব্যাগ বের করে শফিক মিয়ার কাছে গিয়ে বললো,,
কত টাকা চাচা,,?

শফিক মিয়া তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো,,
আমনে টাকা দিবেন কা?

তূর্য মুচকি হেসে বললো,,
এমনিতেই। বলুন কত টাকা?

শফিক মিয়া ক্যাবলা হেসে বললো,,
পাঁচশ আশি টাকা।

তুর্য পাঁচশ টাকার একটা নোট আর একশো টাকার একটা নোট শফিক মিয়ার হাতে দিয়ে বললো,, ওদের থেকে আর টাকা নিবেন না আশা করি।আর বিশ টাকা দিতে হবে না।রেখে দিন। আসছি চাচা,,,,

চলবে,,,, 🍁

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here