#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৯
সন্ধ্যা ছয়টা,
কলিং বেল বাজতেই রমা বেগম দরজা খুলে দিতেই সালাম করে উঠে দাঁড়ায় সাগর। রমা বেগম সাগরের কান ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে যায়।
সাগরঃ আহ! আম্মা ছারো লাগছে তো! কি করছোটা কি। তোমার ছেলেমেয়েদের সামনে আমার প্রেস্টিজটাকে তো একেবারে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছো।আরে বর্ষণ, তুই অন্তত কিছু বল আম্মাকে যেন আমার কানটা ছেড়ে দেয়।
বর্ষণঃ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে, না ভাই আমি কিছু বলতে পারবোনা। আমার কান দুটো যে ঠিকঠাক আছে এই ঢেরবেশি।যেচে কানমলা খাওয়ার ইচ্ছে আমার কোনো কালেই ছিলোনা, আজও নেই।
রমাঃ ছেড়ে তো দিবোই, তার আগে বল এই বাসা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই আম্মাকে ভুলেই যাস তাইনা?
সাগরঃ তোমার বর মানে আমার স্যার, সে তো আমার মাথায় পৃথিবী চাপিয়ে দিয়েছে। সেটা ফেলে আমি আসি কি করে বলো!
রায়হানঃ আমার নামে কি বলছো সবাই।
সাগরঃ না না আঙ্কেল আমি বলছিলাম তুমি খুব ভালো। তোমার মতো মানুষ পৃথিবীতে আর একটাও নেই। তুমি আমাকে কিছুই করতে দাওনা।
রমাঃ সাগরের কান ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলে ওরে দুষ্টু তাই বুঝি? তোরা বোস আড্ডা দে আমি তোদের খাওয়ার ব্যাবস্থা করি।
হাসি আড্ডা খাওয়া দাওয়ায় কেটে গেলো দুই ঘন্টা। এখন বর্ষণের বের হওয়ার পালা।দশটায় ফ্লাইট। এখন বের হতে না পারলে লেট হয়ে যাবে।
সবার থেকে বিদায় নিয়ে বর্ষণ গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ফিরে তাকালো। দেখলো বর্ষা গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।বর্ষণ ফিরে এসে বললো—
শোন বর্ষা আমি এক সপ্তাহ থাকবোনা সাবধানে থাকবি। একা বাইরে বের হবিনা,সাগর তোকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসবে আর নিয়ে আসবে চুপচাপ শান্ত হয়ে থাকবি একদম দুষ্টুমি নয় ঠিক আছে? আর….
বর্ষাঃ আর কি?
বর্ষণঃ যখন ভার্সিটি যাবি যাওয়ার আগে আমায় ভিডিও কল করবি।
বর্ষাঃ 😲 কেন!!
বর্ষণঃ আমি বলেছি তাই। আমার কথার যেনো কোনো নড়চড় না হয় mind it.বলেই একটুও দেরি না করে গাড়িতে উঠে পরে।
রাত ১ঃ৩৫ মিনিটে কুয়ালামাপুরে পৌঁছেছে বর্ষণ। পৌঁছে রায়হান খানকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে সে।
আগে থেকেই বর্ষণের জন্য গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছিলো সবুজ। বর্ষণ যে কুয়ালালামপুর এসেছে সেটা সবুজ ছাড়া আর কেউ জানে না। সবুজ হলো বর্ষণের খুব বিশ্বস্ত।তাই বর্ষণ শুধু সবুজকেই বলেছে আসার কথা।
সবুজঃস্যার, আপনি এভাবে কাউকে কিছু না বলে চলে আসলেন?
বর্ষণঃ দুদিন পরেই সেটা বুঝতে পারবে। Just wait and watch.
নিজের এপার্টমেন্টে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরে বর্ষণ।
সবুজ আগে থেকেই সব রেডি করে রেখেছিলো।
সকাল….
বর্ষা রেডি হচ্ছে, প্রায় শেষ। একটা হিজাপ পিন আটকানো হলেই কমপ্লিট। তখনই ফোনটা বেজে ওঠে বর্ষার। পিনআপ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে বর্ষণ কল করেছে। ভিডিও কল।
ফোন তুলতেই বর্ষণ ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে ঘুম জারানো কন্ঠে বলে ঐ ফোন দিসনি কেনো?
বর্ষাঃ তুমি ফোন করবে তাই।
বর্ষণঃ ঠিক আছে ঠিক আছে, আর পাকামি করতে হবে না। সাগর এসেছে?
বর্ষাঃ হুম। নিচে ওয়েট করছে।
বর্ষণঃ ঠিক আছে সাবধানে থাকবি। সারাদিন হয়তো ফোন করার টাইম পাবোনা। রাতে কথা হবে বাই বলে ফোন রেখে দেয় বর্ষণ।
বর্ষাও ভার্সিটিতে চলে যায়।
রিহার্সাল নিয়ে সবাই খুব ব্যাস্ত। বর্ষা সবাইকে দেখিয়ে দিচ্ছে ঠিকঠাক মতো।এই কয়েকদিনের মধ্যে সব পার্টিসিপ্যান্টদের সম্পুর্ন ভাবে গড়ে তুলতে হবে।
বর্ষা কখনো নাচ দেখাচ্ছে, কখনো গান গাইছে, কখনো অভিনয় করছে তো আবার কখনো আবৃত্তি করে যাচ্ছে।তাও আবার খুব নিপুণ ভাবে। যারা রিহার্সাল করছে তারা মুগ্ধ হয়ে দেখছে বর্ষার এমন নিপুণ নৃত্য, এমন সুরেলা কন্ঠের গান আর এতো সুন্দর আবৃত্তি আর অভিনয়।
রিহার্সাল এর পাশাপাশি নবীনবরণ এর কাজ চলছিল জোরদার ভাবে। সবকিছু সুন্দর ভাবে চলছে।
এদিকে
বর্ষণ অফিসে গিয়ে নিজের কেবিনে বসে।সেটা দেখে তো অফিসের সকলের চোখ কপালে। কাউকে কিছু না বলে স্যার হঠাৎ কেনো চলে আসলো।
বর্ষণঃ আশরাফ সাহেব আপনি এই মুহুর্তে আমার কেবিনে এসে দেখা করুন ফার্স্ট! বলেই ফোন রেখে দেয়।
আশরাফ সাহেব হলেন বর্ষণের কোম্পানির সকল দায়িত্বে আছেন। সকল কনফিডেনসিয়াল বিষয় তিনি জানেন।
সকল দায়িত্ব তার উপর ই ন্যাস্ত।
আশরাফ সাহেব তো ফোন পেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বর্ষণের কেবিনে এসে নক করে। May I come in sir?
বর্ষণঃ Come in..
আশরাফঃ স্ স স্যার আপনি! কিছু না বলে হঠাৎ!
বর্ষণঃ আমি আসাতে আপনার বড় প্রবলেম হয়ে গেলো? নাকি আপনার প্ল্যান ভেস্তে গেলো।
আশরাফঃ কি বলছেন স্যার!
বর্ষণঃ আমাদের অফিসের কনফিডেনসিয়াল ফাইলগুলো কোথায়? ওগুলো দুই মিনিটের মধ্যে আমার হাতে এনে দেবেন। এক্ষুনি যান।
আশরাফ সাহেব বর্ষণের দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ মুখ লাল বর্ণ হয়ে আছে বর্ষণের।
আশরাফ সাহেব কিছু না বলে চলে যায়। আর ফাইগুলো সব বর্ষণের হাতে তুলে দেয়।
অফিসের ফাইলগুলো সব খতিয়ে দেখছে বর্ষণ। তাকে সহযোগিতা করছে সবুজ।
অফিস মিটিং এসব ব্যাস্ততায় কেটে যাচ্ছে বর্ষণের সময়।
বর্ষার ও ব্যাস্ত সময় কাটছে নবীনবরণের সকল আয়োজন করতে করতে সময়টাও পার হয়ে গেছে। খুব ব্যাস্ততার মধ্যে সময় কেটে গেছে বর্ষার।
আজ বুধবার..
বর্ষা রেডি হয়েছে ভার্সিটি যাবে। বর্ষণ ফোন করে কথা বলছে। কথা শেষ করে বর্ষা ভার্সিটি চলে যায়।
বর্ষাঃ গাড়িতে বসে ভাবছে বর্ষণ ফোন করে ঠিকই।
শুধু জিজ্ঞেস করে এখনি বের হবো নাকি। সাগর এসেছে নাকি। আমি কেমন আছি। এটুকু জানতে কি বর্ষণ ভাইয়া রোজ সকালে ফোন করে?এসব ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির গেটে চলে আসে বর্ষা।
ঐদিকে..
বর্ষণের সকল প্রায় শেষের দিকে। তবে যেটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো সেটা হয়ে গেছে। আশরাফ সাহেবকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আশরাফ সাহেবের জায়গায় সবুজকে বসানো হয়েছে।
আশরাফ সাহেব সকল কনফিডেনসিয়াল ফাইলগুলো অন্য কোম্পানিকে দিয়ে দিচ্ছিলো কিছু টাকার বিনিময়ে। সে খবর পেয়েই বর্ষণ মালয়েশিয়ায় এসেছিলো।
মঙ্গলবারের মিটিং ও সাকসেসফুল হয়েছে বর্ষণের। যেখানে অন্য একটা কোম্পানির সাথে ডিল ফাইনাল হলো। যেটা ছিলো নব্বই কোটি টাকার।
——-
বর্ষা গাড়ি থেকে নেমে ক্যাম্পাস দিয়ে হাটছে। হঠাৎ পেছন থেকে নদী এসে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে।
বর্ষাঃ কিরে শাঁকচুন্নি এভাবে আচমকা এসে ঘাড়ে চাপলি কেনো।
নদীঃ তোকে একটা খবর দেওয়ার আছে সেটা জানাতেই তোর ঘাড়ে চেপেছি।
বর্ষাঃ তা খবরটা কি জানতে পারি?
নদীঃ হুমমমমমম! অবশ্যই শাঁকচুন্নির কলিজা 😇
শোন..
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#বোনাস_পার্ট (সারপ্রাইজ পর্ব)
নদীঃ শোন শাফিন ভাইয়া বলেছে আজ সরাসরি রিহার্সাল রুমে না গিয়ে ক্লাসে বসতে।ভাইয়ারা নাকি কিছু কথা বলবে আগামীকালের ব্যাপারে তারপর রিহার্সাল রুমে গিয়ে একবার করে রিহার্সাল দিয়েই আজকের মতো ছুটি।
বর্ষাঃ ওহ্ আচ্ছা এই কথা। তা তোকে এ খবরটা কে দিলো শুনি?
নদীঃ আসতে শাফিন ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল তখন বলেছে।
নদী আর বর্ষা কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে শাফিন ভাইয়া আর তার বন্ধুরা আসে ক্লাসরুমে।
শাফিনঃ তোমরা তো জানোই আগামীকাল নবীনদের মানে তোমাদের বরণ ।সবাইকেই থাকতে হবে এটাও নিশ্চয়ই জানো।তবে আমি তোমাদের যেটা বলতে চাই সেটা হলো যেহেতু আয়োজন টা আমরা সবাই মিলে করেছি। অনেক পরিশ্রম করেছি আমরা।
তাই আমরা কেউ ই চাইবোনা একটু ত্রুটির জন্য কিংবা অবহেলার জন্য আমাদের আয়োজনের সৌন্দর্য্য নষ্ট হোক। তোমরা হয়তো জানোনা ভার্সিটির প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে মনে মনে একটা প্রতিযোগিতা চলে যেখানে সবাই চায় তাদের ডিপার্টমেন্ট টপে থাকুক তাই আমরাও এটাই চাইবো।
তোমাদের সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য। ফার্স্ট ইয়ারের সকল মেয়েরা আগামীকাল লাল পেড়ে সাদা শাড়ি আর ছেলেরা খয়েরী পাঞ্জাবী আর সাদা পাজামা পরে আসবে। আর সকাল নয়টার মধ্যে সবাই ক্যাম্পাসে এটেন্ড থাকবে।
আর অন্য সিনিয়র ব্যাচে, মেয়েরা আকাশি কালার শাড়ি পরে আসবে আর ছেলেরা ব্লু পাঞ্জাবী আর সাদা পাজামা পরবে। যেন সহজেই নতুন আর পুরাতনদের চেনা যায়।
শাফিনের কথায় সবাই সায় দিলো। আর বললো আমরাও চাই আমাদের ডিপার্টমেন্ট টপে থাকুক। তাই আমরাও সুন্দর পারফর্ম করে দেখিয়ে দিতে চাই।
শাফিনঃ তোমাদের কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে। অল দ্যা বেস্ট। আর নদী বর্ষা তোমরা কিন্তু লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরতে পারবেনা কারণ তোমরা ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করছো। এখন বলো তোমরা কি শাড়ি পরতে চাও।
বর্ষাঃ চুপ থেকে ভাবছে কি কালার টা সিলেক্ট করবে। হঠাৎ বর্ষার মনে পরে গেলো বর্ষণ ওকে একটা বাসন্তী কালার শাড়ি গিফট করেছিলো অনেক আগে। তাই বর্ষার মুখ থেকেও বাসন্তী নামটা বের হয়ে গেলো।
শাফিনঃ ওকে তাহলে তোমাদের জন্য বাসন্তী শাড়িই ফাইনাল হলো।সবাই একবার রিহার্সাল রুমে এসো স্যাররাও ওখানে আছেন। যেহেতু আজ শেষ রিহার্সাল। তাই স্যাররা দেখতে চায় তোমাদের প্রস্তুতি টা কেমন। বলে শাফিন ওর বন্ধুদের নিয়ে চলে যায়।
সবাই রিহার্সাল রুমে নিজের নিজের পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যাস্ত সবার পারফরম্যান্স দেখে স্যারেরা তো খুব খুশি। খুব প্রশংসা করছিলেন তারা। রিংকু স্যার ( যে স্যার বর্ষাকে ভলেন্টিয়ার হিসেবে সিলেক্ট করেছিলেন) সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের এতো সুন্দর পারফরম্যান্সে সহোযোগিতা করেছে কে?
তখন সবাই মাথা ঘুরিয়ে বর্ষার দিকে তাকায়।বর্ষা মাথা নিচু করে বসে ছিলো বলে কিছু দেখতে পায়নি।নদী তখন বর্ষাকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়াতে বলে।নদীর কথায় বর্ষা উঠে দাঁড়ায়।তখন স্যারেরা সহ বাকি সবাই করোতালি দিয়ে অভিনন্দনঅভিনন্দন জানায় বর্ষাকে।
এসবের মাঝ থেকে একটা সেকেন্ড ইয়ারের একটা স্টুডেন্ট (মেয়ে) বলে ওঠে। স্যার সবার তরফ থেকে আমার একটা রিকুয়েষ্ট আছে। যদি আপনি অনুমতি দেন তাহলে বলতে পারি।
স্যারঃ ওকে বলো কি বলতে চাও।
তখন বললো আমাদের সবাইকে এই বর্ষা গাইড করেছে আমাদের একটা রিকুয়েষ্ট আছে সেটা হলো বর্ষাকে একটা গানে ড্যান্স করতে হবে। ওর কথাতেে সবাই খুশি হয়ে করতালি দিতে শুরু করলো।
বর্ষা উঠে দাঁড়িয়ে বলে স্যার আমি ড্যান্স করিনা।
স্যারঃ আরে আরে বর্ষা। কিছু হবেনা এতোগুলো মানুষের রিকুয়েষ্ট অগ্রাহ্য করবে তুমি?
স্যারের কথা শুনে বর্ষা আর কিছু বলতে পারলোনা। চুপচাপ স্টেজে উঠে গেলো।
শাফিন মিউজিকের ওখানে ছিলো। বর্ষা গান সিলেক্ট করে দিলো
🎶 এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়
একি বন্ধনে জরালে গো বন্ধু (২)
কোন রক্তিম পলাশের স্বপ্ন
মোর অন্তরে ছড়ালে গো বন্ধু
এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়
একি বন্ধনে জরালে গো বন্ধু……
বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নেবেন 🥰
গান বেজে যাচ্ছে আর তার তালে তালে নৃত্য করছে বর্ষা। এতো নিখুঁত নৃত্য করতে পারে বর্ষা সেটা দেখে সবাই হতবাক হয়ে গেছে। শাফিন তো মুগ্ধ হয়ে শুধু বর্ষাকে দেখেই যাচ্ছে।
স্যার সহ উপস্থিত সবাই বাহবা না দিয়ে পারলো না। সবাই তো বর্ষার পারফরম্যান্স এ মুগ্ধ। নৃত্য শেষে সবাই বর্ষার অনেক প্রশংসা করছে বর্ষা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।শাফিন তো বর্ষাতে হারিয়ে গেছে।শুধু মুখ দিয়ে একটা কথাই বললো Wonderful performance.
বর্ষা আর নদী বাসায় ক্যাম্পাসের রাস্তা দিয়ে হাটছে মেইন গেটের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ শাফিন দৌড়ে এসে বললো এই নদী বর্ষা তোমরা কিন্তু কাল আটটার মধ্যে চলে আসবে তোমাদের যে কাজগুলো আছে সেগুলো বুঝিয়ে দিতে হবে তো।
নদীঃ ঠিক আছে ভাইয়া। আমরা চলে আসবো।
——
বাসায় এসে সাওয়ার নিয়ে লাঞ্চ করে বর্ষা একটা লম্বা ঘুম দিলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছে আর কফি খাচ্ছে বর্ষা।
তখন ফোন বেজে ওঠে বর্ষার , তাকিয়ে দেখে নদী ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে..
নদীঃ এই বর্ষা তুই শাড়ির সাথে কি ব্লাউজ পরবি? কিভাবে চুল বাঁধবি? নাকি চুল খোলা রাখবি? ঠোঁটে কেমন লিপস্টিক দিবি? কপালে টিপ পরবি?চোখে কি কাজল দিবি?
বর্ষাঃ আরে পেতনী থামবি এবার? আমি শাড়ি চুরি গহনা কাজল টিপ কিছুই পরবোনা। তুই পর আমার জন্য ও পর ডাবল করে পর। স্টুপিড কোথাকার।
নদীঃ এই যাহ্! কি বললাম যে রেগে ফোনটাই কেটে দিলো!
রমাঃ কিরে শাড়ি পরে যেতে বলেছে তোদের?
বর্ষাঃ হুম বলে সবকথা বলতে শুরু করে।
রমা বেগমঃ সব শুনে বর্ষাকে শাড়ি পড়তে বলে।আর বর্ষাকে বলে বর্ষণের ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দে। আমি সামলে নেবো।
সকালে——
বর্ষার খাবার রুমে নিয়ে খাইয়ে দিয়ে তারপর শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে রমা বেগম। চুল খোপা করে সুন্দর করে চুলে কাটা দিয়ে খোপায় ফুল গুঁজে দেয়। মাথায় টিকলি গোল্ড প্লেটের উপর স্টোনোর জুয়েলারি সেট। হাত ভরা চুড়ির হালকা মেকআপে আর বাসন্তী শাড়িতে বর্ষাকে যেন স্বর্গের অপ্সরী লাগছে। রমা বেগম বর্ষার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে, যেনো নজর না লাগে আমার মেয়েটার।
রমা বেগম আর নিপু রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শাড়ি সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে পরে বর্ষা। একদম অভ্যাস নেই শাড়ি পরার।
যেটা সামলাতে পারিসনা সেটা পরতে যাস কেনো?
কথাটা শুনেই বর্ষা ঘুরে তাকায়। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বর্ষা।
বর্ষাঃ তুমি!! তুমি কখন এলে।
বর্ষণঃ রাতের ফ্লাইটে……
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_১০
বর্ষাঃ ভাইয়া তুমিতো বলেছিলে শুক্রবারে আসবে! হঠাৎ কোনো খবর না দিয়ে আগেই চলে এলে?
বর্ষণঃ কেনো? আমি আসাতে তোর প্রবলেম হয়ে গেলো নাকি? বলেই গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বর্ষাঃ না না ভাইয়া তা কেনো হবে! একচুয়েলি তুমি হুট করে চলে এসেছো তাই বললাম।
বর্ষা বুঝতে পারছে না আজ তার কপালে কি পরিমাণ দুঃখ আছে।
বর্ষা ভয়ে শাড়ির আঁচল এক হাতের মুঠোয় নিয়ে অন্য হাতের আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে মাথা নিচু করে বললো ভাইয়া মামনী আমাকে শাড়ি পরতে…
বর্ষণ গম্ভীর হয়েই ডান হাত উঠিয়ে ✋ বর্ষাকে থামিয়ে দিলো আর কিছু বলতে দিলোনা।
বর্ষা এবার আরও ভয় পেয়ে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাথা উঁচু করে বর্ষণের মুখোমুখি দাড়াবার সাহস তার নেই। কারণ বর্ষা খুব ভালো করে জানে বর্ষণ এমন খোলামেলা সাজুগুজু পছন্দ করে না। আর শাড়ি পরে তো নয়ই।
বর্ষণ পলকহীন চোখে বর্ষাকে দেখছে। তার পরীটা যে আজ সত্যি সত্যি পরী হয়ে হয়ে উঠেছে।বর্ষণ বর্ষাকে খাটে বসিয়ে দেয়।
বর্ষা ভয় পেয়ে বর্ষণের দিকে তাকায়। বর্ষণ কিছু না বলে এক হাটু মুড়ে বর্ষার সামনে বসে পরে। তারপর বর্ষার এক পা তুলে বর্ষণের হাটুর উপর রেখে পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে পরিয়ে দেয়।তারপর বর্ষাকে ওখানেই বসিয়ে রেখে বর্ষণ ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে একটা টিপ নিয়ে বর্ষাকে পরিয়ে দেয়। আর অস্পষ্ট স্বরে বলে,এইতো আমার পার্ফেক্ট পরী। কিন্তু এ কথাটা বর্ষার কান অব্দি পৌঁছালোনা।
বর্ষা তো অবাক চোখে শুধু বর্ষণের কান্ড কারখানা দেখছে আর ভাবছে এ কাকে দেখছে সে।এই কি সেই বর্ষণ ভাইয়া? যার কথার একটু অবাধ্য হলে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিতো! বর্ষণ ভাইয়ার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?নাকি আমায় শাস্তি দেবে বলে আমাকে এভাবে সাজাচ্ছে। ইয়া আল্লাহ! রক্ষা করো আমায়।
বর্ষণঃ তুই নিচে গিয়ে বোস বর্ষা আমি এক্ষুনি আসছি বলেই বর্ষণ বেরিয়ে গেলো।
বর্ষা বেচারী যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বর্ষা নিচে নেমে আসে। বর্ষাকে দেখে রমা বেগম জিজ্ঞেস করলো বর্ষণ কিছু বলেছে নাকি।
বর্ষা এপাশ ওপাশ মাথা ঝাকিয়ে না জবাব দিলো।
রমাঃ তাহলে!!
বর্ষা এক আঙুল দিয়ে কপালে ইশারা করে টিপ দেখালো। আর শাড়ি একটু উঁচিয়ে পায়ের ঐ পায়েলটা দেখালো।
রমাঃ 😱 এই না হলে আমার ছেলে😘
বর্ষাঃ হুমমমম ভয়টা তো ওখানেই, ওটা তোমার ছেলে। যাকে আমি খুব ভালো করে চিনি।
রমাঃ থামতো তুই। এবার মন খারাপ করে না থেকে হাসিখুশি মন নিয়ে বের হ তো।
নিপু বর্ষার সামনে এসে বললো আপু তোমাকে যা আজ লাগছে না! পুরোই হিরোইন। তোমার উপর আজ পুরো ভার্সিটি ক্রাশ খা… বলেই হা করেই সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে।
বর্ষা নিপুর চোখ অনুসরণ করে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই বর্ষার চোখ আটকে যায়। এ কি দেখছে বর্ষা!
এটা কি বাস্তব নাকি স্বপ্ন? সিঁড়ি দিয়ে বর্ষণ নামছে। বাসন্তী পান্জাবী আর সাদা চুরিদার হাতে ব্র্যান্ডের কালো ঘড়ি।গোলাপি ঠোঁট, ব্রাউন চোখ, ঘনো কালো ভ্রু যুগল ব্রাউন কালারের চুল একদম চলকেট বয় যে দেখবে সে ই প্রেমে পরে যাবে।
বর্ষার পাশে এসে বর্ষণ বললো চল আমি গাড়িতে বসছি তুই আয়।বলে হন হন করে বেরিয়ে গেলো।
বর্ষা ও পিছে পিছে গেলো।
এদিকে প্রায় নয়টা বাজতে চললো দেখে নদী বর্ষাকে ফোন করে ।
বর্ষাঃ হ্যা নদী বল.
নদীঃ বর্ষা কোথায় তুই? সবাই তোকে খুঁজছে আর তুই এখনো আসিসনি?
বর্ষাঃ এই তো গাড়িতে আছি আসছি।
নদীঃ জলদি আয় রাখছি এখন।
বলে ফোন রেখে পেছনে ঘুরতেই শাফিন বললো কি ব্যাপার নদী, বর্ষা আসেনি এখনো?
নদী বললো এক্ষুনি চলে আসবে ভাইয়া। বর্ষা গাড়িতে আসবে।
শাফিনঃ ওকে তুমি স্টেজে গিয়ে দেখো সব ঠিকঠাক আছে নাকি। আমি একটু আসছি বাহিরে যাবো একটা কাজ পরে গেছে।
নদী ওকে বলে চলে যায়।
………
বর্ষা গাড়িতে বসে ভাবছে বর্ষণ কিছু বললোনা কেনো। কি এমন হলো যে বর্ষণ এখনো এতো নিশ্চুপ।
কি আপনারাও এটাই ভাবছেন তো? তাহলে শুনুন..
বর্ষণ যখন এয়ারপোর্টে নামে তখন রাত ১১ঃ২০ মিনিট। বর্ষণ দেশে ফিরে আসছে সেটা কাউকে জানায়নি। শুধু সাগরকে বলেছে। সাগর বর্ষণকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেছে।
বাসার কলিং বেল বাজতেই সার্ভেন্ট দরজা খুলে বর্ষণকে দেখে তো অবাক হয়ে যায়। বর্ষণ উপরে উঠে যেতেই সার্ভেন্ট দৌড়ে গিয়ে রমা বেগম আর রায়হান সাহেব কে খবর দেয়।
রমা বেগম তো বিশ্বাস ই হচ্ছেনা তার ছেলে না বলে এভাবে হুট করে চলে আসতে পারে। রমা বেগম উঠে বর্ষণের রুমে যায়।
বর্ষণ ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই দেখে রমা বেগম এসে বসে আছে। বর্ষণ একটুও অবাক হলোনা কারণ বর্ষণ জানতো তার মম আসবে।
রমাঃ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে বর্ষণ। ইম্পর্ট্যান্ট কথা যেটা এক্ষুনি বলাটা দরকার। আর আমার কথা শেষ না হওয়া অবদি তুই কিছু বলতে পারবি না।
বর্ষণঃ হুম মম বলো আমি শুনছি।
রমাঃ আগামীকাল বর্ষার ভার্সিটিতে নবীনবরণ। স্যার ওকে ভলেন্টিয়ারের দায়িত্ব দিয়েছে সাথে নদী ও আছে। শাড়ি পরে যেতে হবে, আমি ওকে শাড়ি পরার অনুমতি দিয়েছি। বর্ষা পরতে চায়নি।তাই আমি চাই, তুই এ বিষয় নিয়ে বর্ষাকে কিছু না বলিস।বর্ষাকে কিছু বলা মানে আমাকে বলা কথাটা মাথায় রাখিস।
বর্ষণঃ আমি যদি বর্ষাকে কিছু না বলি তবে তুমি খুশি তো মম?
রমা বেগম মিষ্টি করে হেসে বর্ষণের মাথায় হাত দিয়ে চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে হুমমমম খু….ববববব খুশি।
বর্ষণঃ রমা বেগমকে জরিয়ে ধরে বলে আমার কিছু বলার আছে,এটাকে আবদার ও বলতে পারো।
রমাঃ ঠিক আছে বল।
বর্ষণঃ একটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে এগুলো ওকে পরিয়ে দিও কাল সকালে। আমি এটা দিয়েছি সেটা বলতে পারবে না।
রমাঃ ওকে ঠিক আছে।
…….
ক্যাম্পাসে এসে বর্ষণের গাড়ি থামে। গাড়ি থেকে বর্ষণ নেমে বর্ষার জন্য দরজা খুলে দেয় বর্ষা শাড়ি ধরে সাবধানে ধিরে ধিরে গাড়ি থেকে নামে।বর্ষা আর বর্ষণ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছে তখন গেট দিয়ে শাফিন ঢোকে। বর্ষাকে দেখে যেনো শাফিন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।
শাফিন ভাবছে এটা মানবি নাকি পরী?অপরুপ সুন্দরী। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ শাফিনের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় বর্ষার পাশে অন্য কাউকে দেখে। শাফিন অনুভব করে তার বুকের বাম পাশটায় ব্যাথা অনুভব করছে। মনে হচ্ছে কলিজায় হাত দিয়েছে কেউ। শাফিন আর কিছু না বলে সেজা স্টেজে চলে যায়।
বর্ষা আর বর্ষণ ও হেঁটে যাচ্ছে স্টেজের দিকে।আর পুরো ক্যাম্পাসের সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দুজনের দিকে যেন ওদের গিলে খাচ্ছে সবাই।
স্টেজের কাছে যেতেই নদী এসে বর্ষাকে জরিয়ে ধরে। নদী আর বর্ষা সমানের ভি আই পি একটা সিটে বর্ষণের বসার ব্যাবস্থা করে দেয়। বর্ষণ বসে আছে। নদী বর্ষা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যাস্ত।যথারীতি অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলো। একে একে কোরআন তিলাওয়াত, শিক্ষকদের প্রাথমিক বক্তৃতা এবং শিক্ষকদের শিক্ষকদের শিক্ষামুলক কিছু কথার মাধ্যমে ই শুরু হলো অনুষ্ঠান।
একে একে সবার পারফরম্যান্স ও শুরু হয়ে গেলো।অনুষ্ঠান বেশ জমজমাট।
বর্ষা আর নদী দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ শাফিন এসে বর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে বলে। বর্ষা তোমায় আজ দারুণ লাগছে। তুমি খুব সুন্দর।
বর্ষাঃ একটু মুচকি হেসে জবাবে বললো ধন্যবাদ ভাইয়া।
শাফিনঃ বাই দ্যা ওয়ে, তোমার সাথে যে ছেলেটা এসেছে সেটা কে? আগে তো কখনো দেখিনি?
বর্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নদী বলে ভাইয়া উনি বর্ষার গেস্ট। বর্ষার ভাইয়া।
শাফিনঃ ওহ্ আচ্ছা ।
নদীঃ হুমম ভাইয়া। একটু খেয়াল রাখবেন, তার যেন প্রবলেম না হয়। যাই হোক, প্রথম বর্ষার ভার্সিটিতে এসেছে। বর্ষার তো একটা প্রেস্টিজ আছে না কি বলেন।
শাফিনঃ তা তো অবশ্যই । ঠিক আছে আমি খেয়াল রাখবো।বলেই শাফিন চলে যায়।
গান, কবিতা,আবৃত্তি, অভিনয় শেষে এখন ড্যান্সের এনাউন্সমেন্ট করা হয়েছে।বর্ষা, নদী আর শাফিন স্টেজের একপাশে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ বর্ষা গাইড করছিলো তাই ওর কোনো হেল্পের প্রয়োজন হতে পারে।
বর্ষা, শাফিনকে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বর্ষণ ও উঠে গিয়ে স্টেজের পাশে দাঁড়ায়।
চলবে…..
(আজরিডিং 🥰