#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৭
ঈশিতার রুমে সবাই বসে আছে আর ঈশিতা, রাফসান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।এটা অবশ্য ঋতুর প্ল্যান ছিলো।রোহিত মাঝেমধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে। কিন্তু ঋতু গিয়ে টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে আসছে।
ঈশিতাদের বাসা থেকে সন্ধ্যার পরে রওনা হয় সবাই।
রাতে রাফসানদের বাসায় সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিতে ব্যাস্ত। টপিক রাফসানের বিয়ে। ২২ তারিখ শুক্রবার বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়েছে।
বড়দের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে বিয়ের ডেকোরেশন নিয়ে। আর ছোটদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে সাজুগুজু, হলুদ সন্ধ্যা মেহেদী পার্টি, ড্রেসআপ এগুলো নিয়ে।
………
বর্ষণ কিচেনে রান্নার আয়োজন করছে আর বর্ষা তাকে সাহায্য করছে।সাহায্য বলতে বর্ষণের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা।বর্ষণ কোনো কিছুতে হাত দিতে দিচ্ছেনা বর্ষাকে।
বর্ষণঃ বিরিয়ানি রান্না করবে। চিকেন কেটে ধুয়ে রেখে দিয়েছে নিজেই।বর্ষাকে ছুঁতেও দেয়নি।
বর্ষা অনেকবার এটা ওটা করতে চেয়েছে কিন্তু বর্ষণ ধমক দিয়ে চুপচাপ দাঁড় করিয়ে রেখেছে।
বর্ষণঃ ভাইয়া! তুমি আগে কখনো বিরিয়ানি রান্না করেছো? নাকি আজই প্রথম?
বর্ষণঃ তোর কি মনে হয় হু..
আমি বিরিয়ানি রান্না করতে পারিনা? আমি এর আগেও অনেকবার বিরিয়ানি রান্না করেছি বুঝতে পেরেছিস?
বর্ষাঃ না মানে এর আগে কখনো রান্না করতে দেখিনি তো তাই বললাম আর কি।
বর্ষণঃ তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে রান্না করতে হবে নাকি? এবার কথা বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু দেখে যা।
বর্ষণ পিঁয়াজ কাটতে যাবে তখন সেলফোন টা বেজে ওঠে।রাফসান ফোন করেছে। বর্ষণ ফোনে কথা বলতে বলতে কিচেনের বাইরে চলে আসে।
বর্ষাও কাজ করার সুযোগ পেয়ে যায়। পিঁয়াজ কাটতে শুরু করে দেয়।
রাফসানঃ আমার সাথে যা করলি সেটা কিন্তু একদমি ঠিক করলিনা। নিজে তো আসলি না সাথে তোর পাখিটাকেও খাঁচায় বন্দী করে রাখলি?
আমি ভেবেছিলাম তুই আর বর্ষা অবশ্যই আসবি।কিন্তু….
বর্ষণঃ আরে ইয়ার, মন খারাপ করছিস কেনো। বেশি কিছু পেতে হলে অল্প কিছু ত্যাগ করতে হয়।
রাফসানঃ What do u mean by, বেশি কিছু পেতে হলে অল্প কিছু ত্যাগ করতে হয় হুমমম!
বর্ষণঃ শোন তাহলে আজ গেলে বিয়েতে থাকতে পারতাম না। তাই আজ না গিয়ে তোর বিয়েতে যাওয়ার প্ল্যান করেছি। আর পুরো এক সপ্তাহ ধরে তোর বিয়েতে মজা করবো সবাই।
রাফসানঃ ঠিক বলছিস তো? তাহলে আমার বিয়ের কেনাকাটা কিন্তু বর্ষা আর তোকে সাথে নিয়েই করবো। তোরা ১৯ তারিখ মঙ্গলবার ভোরে চলে আসবি। লাঞ্চ করে সবাই বেরিয়ে পরবো শপিংয়ে।
বর্ষণঃ ওকে।তাই হবে।
হঠাৎ কিচেন থেকে আহ্!! করে আর্তনাদ করে ওঠে বর্ষা।
বর্ষণের কানে পৌঁছোতেই ফোন ফেলেই দৌড়ে কিচেনে চলে যায়।গিয়ে দেখে বর্ষার আঙ্গুল কেটে রক্ত ঝরছে ।বর্ষণ দ্রুত গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসে।
বর্ষার আঙুলে বাম লাগিয়ে দিতেই উহ্!করে ওঠে। বর্ষণ ফু দিতে দিতে বলে হাতে কি খুব বেশি জ্বালা করছে?
বর্ষাঃ নাহ্ ঐ আর কি একটু একটু জ্বালা করছে।
বর্ষণঃ হয়েছে! এবার শান্তি হয়েছে তো! তুই কি এটাই ঠিক করেছিস, আমার একটা কথাও শুনবিনা? বার বার বারণ করা সত্বেও কেনো পিঁয়াজ কাঁটতে গেলি? আমি কি তোকে বলেছিলাম পাকামি করতে? বলিনি তো! তাহলে কেনো করতে গেলি।
বর্ষণ এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে আঙুল টা বর্ষার নয় বর্ষণের কেটেছে।
বর্ষাঃ বকছো কেনো ভাইয়া 🥺?
বর্ষণঃ নাহ্ বকবোনা! তুই আমার কথার অবাধ্য হবি আর আমি বকবোনা? তুই যদি আমার কথা শুনতি তাহলে কি এই কষ্ট টা তোকে পেতে হতো বল? নিজে তো শান্তিতে থাকবিনা সাথে আমাকেও জ্বালিয়ে মারবি।
বর্ষাঃ বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে বসে বর্ষণের বকা হজম করছে।
বর্ষণঃ বর্ষার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলে এখন যা উপরে যা। অনেক হেল্প করেছিস আর করতে হবে না। এখন রেস্ট কর গিয়ে। খাবার রেডি হলে তোকে ডেকে নিবো।
বর্ষাঃ আমি এখানে থাকি ভাইয়া? কিছু করবোনা কোনো হেল্প নয় শুধু দাঁড়িয়ে থাকবো।
বর্ষণঃ নাহ্ তোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।দাঁড়িয়ে থেকে কাজ নেই উপরে যা।
বর্ষাঃ ভাইয়া…..!
বর্ষণঃ আর একটা কথা বলবি তো কোলে করে নিয়ে উপরে রেখে আসবো।
বর্ষা আর কিছু না বলে উপরে চলে যায়।
বর্ষণ এবার রান্না করতে শুরু করে দেয়। রান্না শেষ করে কিচেনে রেখে রুমে চলে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নেয়।
বর্ষার রুমে গিয়ে দেখে বর্ষা শুয়ে আছে।
বর্ষণঃ কিরে পাগলি ঘুমিয়ে পরেছিস?
বর্ষা বর্ষণের কথা শুনে উঠে বসে বলে না ভাইয়া ঘুমাইনি এসো ভেতরে এসো।
বর্ষণঃ চল খাবি চল।খাবার খেয়ে একটা পেইন কিলার খেতে হবে তা না হলে তো কাল ক্লাসে আবার লিখতে পারবিনা।
দুজনেই নিচে নেমে আসে।
সার্ভেন্ট খাবার সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে আগে থেকেই।
বর্ষা প্লেট নিতে যাবে তখন বর্ষণ বর্ষার হাত ধরে ফেলে।
বর্ষণঃ R u mad! কি করছিস টা কি। তোর কি বোধ বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে?
বর্ষাঃ কিছু না বুঝে হা করে চেয়ে আছে।
বর্ষণঃ একে তো হাত কেটে বসে আছিস, আবার ঐ হাত দিয়ে এখন খাবার খাওয়ার প্ল্যান করছিস? কি বুদ্ধির বহর!
প্লেট রেখে দে।বলেই নিজের প্লেট থেকে খাবার নিয়ে বর্ষার মুখে তুলে দেয় বর্ষণ। খাবার টা রেস্টুরেন্টের মতো না হলেও খারাপ খেতে হয়নি।
খাওয়া শেষ করে বর্ষাকে পেইনকিলার খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাঁথা টেনে দেয়।
বর্ষা ঘুমিয়ে গেলে বর্ষণ রুমে চলে যায়। কিন্তু বর্ষণের চোখে ঘুম নেই। বর্ষণ বসে পরে তার ডায়েরি টা নিয়ে। যতোটুকু না লেখে তার থেকে দ্বিগুণ সময়টা সে ভাবনায় ডুবে থেকে কাটায়।
রাত ১ টা বর্ষণ হাঁটতে হাঁটতে বর্ষার রুমের সামনে গিয়ে দেখে বর্ষা এলোমেলো হয়ে টেডিবিয়ার টা জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। বর্ষাকে এমন করে ঘুমোতে দেখে মুচকি মুচকি হাসে বর্ষণ। সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বর্ষণ ও ঘুমিয়ে পরে।
সকালে….
বর্ষা রেডি হয়ে নিচে এসে দেখে বর্ষণ খাবার টেবিলে ওয়েট করছে।বর্ষা এসে বর্ণের পাশে বসে। বর্ষাকে দেখে বর্ষণ জিজ্ঞেস করে হাতে ব্যাথা আছে নাকি।
বর্ষাঃ ব্যাথা আছে কিন্তু খুব একটা না। সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে। এখন আমি নিজেই খেয়ে নিতে পারবো ভাইয়া।
বর্ষণঃখাবার তুলে দিয়ে বলে, তুই খেতে পারবি সেটা আমি ও জানি কিন্তু তোর হাতে যেহেতু এখনো ব্যাথা আছে সেহেতু আমিই খাইয়ে দিচ্ছি।
খাওয়া শেষ করে বর্ষার হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে বাম লাগিয়ে আবার নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয় বর্ষণ। খুব বেশি কাটেনি তবে আঙুলের মাথা কেটেছে বলে একটু বেশি রক্ত ঝরেছে। আর ব্যাথাটাও একটু আছে।
বর্ষাঃ ভাইয়া? এতো অল্পতে তুমি এতো সিরিয়াস আর এতোটা অস্থির হয়ে যাও কেনো বলোতো?
বর্ষণ কিছুক্ষণ বর্ষার দিকে চেয়ে থেকে বলে সেটা তুই বুঝবি না। তুই আয় আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি বলে বর্ষণ বাইরে চলে যায়।
বর্ষাও বর্ষণের পিছে পিছে গিয়ে গাড়িতে বসে।বর্ষার ভার্সিটির সামনে বর্ষাকে নামিয়ে দিয়ে যায় বর্ষণ।
ক্লাসে বসে আছে নদী আর বর্ষা। হাজারটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে নদী কিন্তু বর্ষা কোনো কথাই বলছে না চুপটি করে বসে আছে।
নদীঃ রেগে গিয়ে বললো কিরে আমি তো তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি চুপ করে আছিস কেনো?
বর্ষাঃ হুম চুপ করে আছি কারণ তুই যতোগুলো প্রশ্ন করেছিস তার উত্তর দিতে গেলে স্যার চলে আসবে। তুই ঠিকঠাক উত্তর পাবিনা। তার থেকে ভালো দুদিন ক্লাস ছুটি নিলে কেমন হয় বল?
নদীঃ ক্লাস ছুটি নিবি? কিন্তু কেনো!
বর্ষাঃ কেনো আবার! এই দুদিন ধরে তোর প্রশ্নের আনসার দিবো।
নদীঃ 😤
বর্ষা কিছু না বলে শুধু একটু মিষ্টি করে হাসলো।
#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৮
ক্লাস শেষ করে নদী, বর্ষা ক্যাম্পাসে হাঁটছে আর কথা বলছে। কিভাবে হাত কেটেছে এ দুইদিনে কি করেছে সে সব গল্প করছে দুজন। অবশ্য এসব কথা বর্ষা বলতে চায়নি। নদী বার বার করে জিজ্ঞেস করায় বর্ষা বলতে বাধ্য হয়েছে।
বর্ষাঃ আচ্ছা নদী! আমরা যে ঘুরতে গিয়েছিলাম মানে আমি আর বর্ষণ ভাইয়া সেটা তোকে কে বললো? আমি যে বিরিয়ানি রান্নার সময় আঙুল কেটে ফেলেছি সেটা তুই জানলি কি করে?
নদীঃ কেমন করে আর জানবো বল! তুই তো আমার কলিজার দোস্ত তাই আমি তোর ব্যাপারে সব জানি। কিন্তু আমি তো তোর কেউ না, তাই তুই আমার কোনো খোঁজ রাখিসনা।
বর্ষাঃ ঐ ড্রামা কুইন! থাম এবার অনেক হয়েছে। কিছু জানতে চাইলে কিভাবে প্রসঙ্গ চেঞ্জ করবি সেই চিন্তায় থাকিস যত্তসব।
দুজন কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে কোনো দিকে খেয়াল নেই তাদের তারা তো ঝগড়া নিয়ে ব্যাস্ত। আচমকা শাফিন এসে ওদের সামনে দাঁড়াতেই নদী আর বর্ষা থেমে যায়।
শাফিনঃ আরে নদী, বর্ষা কেমন আছো তোমরা?
কি নিয়ে ঝগড়া করছো দুজন জানতে পারি কি?
বর্ষাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। কিন্তু আমরা যে ঝগড়া করছি সেটা আপনাকে কে বললো?
শাফিনঃ কেউ বলেনি তো! আমি নিজেই তো শুনতে পেলাম।
বর্ষাঃ আড়িপেতে শুনেছেন আমাদের কথা?
শাফিনঃ নাহ্ একদমি নাহ্। একচুয়েলি আমি তোমাদের পেছনেই ছিলাম তাই একটু একটু শুনতে পেলাম তোমাদের কথা, কিন্তু পুরো কথাটা বুঝতে পারিনি।
বর্ষাঃ ওহ্ তাহলে পিছু নিয়েছেন? ফলো করছেন আমাদের?
শাফিনঃ হু সেটা বলতে পারো। তোমাদের ফলো করছিলাম বটে।
বর্ষাঃ কেনো? ফলো করছিলেন কেনো?
শাফিনঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
বর্ষাঃ বাট, আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না?
বর্ষা রেগে গিয়ে আঙুল উঁচিয়ে কথাগুলো বলতেই শাফিন বর্ষার হাত চেপে ধরে। বর্ষা তো অবাক হয়ে যায় শাফিন ওর হাত ধরাতে।
শাফিনঃ বর্ষা! তোমার হাতে কি হয়েছে ব্যান্ডেজ কেনো! কি হয়েছে বলো! কিভাবে হলো! প্লিজ কথা বলো!অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো শাফিন।
নদী তো হা হয়ে শুধু দেখছে।ক্লাস শেষে সকল স্টুডেন্ট ক্যাম্পাসে , সবার সামনে এভাবে শাফিন হাত ধরাতে নদী যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।
বর্ষণ গাড়ি নিয়ে গেটে ঢুকতেই এমন কান্ড দেখে তো মাথায় রক্ত চেপে যায়। শাফিন বর্ষার হাত ধরে আছে আর বর্ষা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
এক মুহুর্তের জন্য বর্ষণের মনে হচ্ছে তার কলিজা ধরে কেউ টানাটানি করছে।
বর্ষণ দ্রুত গিয়ে এক ঝটকায় বর্ষার হাত শাফিনের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আর শুধু তাই নয়, বর্ষাকে এক হাতে জড়িয়ে বুকের সাথে রেখে অন্য হাতে শাফিনকে কষে এক থাপ্পড় মারে।
শাফিন গালে হাত দিয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে দেখে বর্ষণের চোখ লাল হয়ে আছে। শাফিন বললো ভাইয়া আপনি?
বর্ষণঃ সাট আপ! জাস্ট সাট আপ! হাউ ডেয়ার ইউ টাচ হার।
রেগে বললো বর্ষার দিকে কেউ তাকানোর সাহস পয়না কথা বলা তো দুরের কথা আর তুমি হাত ধরে টানাটানি করছো?
শাফিনঃ ভাইয়া বর্ষাকে আমার ভালো লাগে, ও আর পাঁচটা মেয়ের মতো উশৃংখল নয়। আমি ওকে ভালো…
বর্ষণঃ ব্যাস! অনেক বলে ফেলেছো।কিন্তু তুমি কি জানো! বর্ষা অন্য কারও বাগদত্তা।
ভবিষ্যতে এমন ভুল আর কখনো করবেনা।
বর্ষা যে বাগদত্তা এটা শুনে বর্ষা ভ্রু কুচকে বর্ষণের দিকে তাকায়।
বর্ষণ সেটা তোয়াক্কা না করে বর্ষাকে নিয়ে গাড়ির কাছে যায়। গাড়ির গেট খুলে বর্ষাকে বসতে বলে। বর্ষা কিছু না বলে গাড়িতে বসে পরে।
বর্ষণ ড্রাইভ করছে কোনো কথা বলছে না। বর্ষা বার বার বর্ষণের দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। বলবে কিভাবে বর্ষণ তো মুখ গম্ভীর করে আছে।
বাসায় পৌঁছে বর্ষণ কিছু না বলেই উপরে চলে যায়।
বর্ষার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে বর্ষণ তাকে বাগদত্তা বললো কেনো।
বর্ষা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবে তখন রমা বেগম ডেকে ওঠে বর্ষাকে। রমা বেগম বললো ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। বর্ষা ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে উপরে চলে যায়।
দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই নিচে বসে আছে। বর্ষণ, বর্ষা, নিপু রমা বেগম। বর্ষণ আজ আর অফিসে যায়নি। সবাই বসে কথা বলছে।
নিপু উঠে কিচেনে চলে যায়। রমা বেগমের ফোন বেজে ওঠে রায়হান খান ফোন করেছে। রমা বেগম কথা বলতে বলতে রুমে চলে যায়।
বর্ষণ আর বর্ষা বসে আছে।বর্ষা বর্ষণের দিকে তাকিয়ে বলে ভাইয়া..
বর্ষণঃ বর্ষাকে কিছু বলতে না দিয়ে আগেই বলে বসে ” তুই কি শাফিনকে পছন্দ করিস? ভালোবাসিস ওকে!”
বর্ষাঃ কি বলছো ভাইয়া আমি শাফিন ভাইয়াকে কেনো ভালোবাসতে যাবো! নবীনবরণ এর পর থেকে ওর সাথে আমি কথা পর্যন্ত বলিনি।সবসময় ওকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি, আর তুমি কি না বলছো আমি ওকে….
তোমার এটা কেনো মনে হলো ভাইয়া
বর্ষণঃ নাহ্ এমনি জানতে চাইলাম।
বর্ষাঃ কিন্তু আমি আমার প্রশ্নের আনসার পাইনি।
বর্ষণঃ সময় হলে ঠিক জানতে পারবি আর খুব শিঘ্রই জানতে পারবি।বলেই বর্ষণ চলে যায় উপরে।
………….
এক সপ্তাহের বেশি কেটে গেছে। বর্ষা ক্লাসে যায় ক্লাস করে বাসায় আসে নদী ছাড়া কারও সাথে কোনো কথা হয়না তার।
এমনকি শাফিনের সাথে ও না।
সেদিনের পর থেকে শাফিন নিজে থেকেই দুরে সরে গিয়েছে। মন থেকে বর্ষাকে হয়তো সরাতে পারেনি তাই দুর থেকেই বর্ষাকে দেখে সে।
আগামীকাল সবাই রাফসানদের বাসায় যাবে। এর মধ্যে অনেকবার ফোন করেছে রাফসানদের বাসা থেকে। তাদের আত্নীয় স্বজনরা সবাই আসতে শুরু করেছে।বর্ষণরাও যেনো তারাতারি চলে যায়।
ভোরে নাস্তা করে সবাই বেরিয়ে পরেছে রাফসানের বাসার উদ্দেশ্যে।
রাফসানের বাসায় পৌঁছাতেই সবাই এসে ঘিরে ধরেছে বর্ষাকে আর বর্ষণকে।অনেকদিন পরে দেখা হলো তাদের। সবাই তো মহা খুশি। ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সবাই গল্পে মেতে ওঠে।
দুপুরে লাঞ্চ করে সবাই বের হবে শপিংয়ের জন্যে। কি কি শপিং করবে তার লিস্টে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে বর্ষণ একবার।
বর্ষণঃ কিরে রায়ফসান বিয়ে করতে এই এতো কিছু কিনতে হয় নাকি! চোখ বড় বড় করে করে বলে রাফসান।
রোহিতঃ আরে শালা বাবু এতো কিছু কি বলছো এগুলো তো কিছুই না। না মানে বলছিলাম এগুলো তো একদিনের জন্য কেনা হচ্ছে। এবার বুঝো সারাজীবন ধরে কতো কি কিনতে হবে।
বর্ষাঃ দুলাভাই! আপনি কি বলতে চাইছেন টা কি হু…! আমরা মেয়েরা সবসময় মার্কেটেই বসে থাকি? দিস ইজ নট ফেয়ার দুলাভাই।
রোহিতঃ ঐ দেখো ছোট গিন্নি তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? আমি সেকথা কখন বললাম। আমি তো জাস্ট বলেছি..
ঋতুঃ থাক অনেক বলাবলি হয়েছে এবার থামোতো।শপিংমলে চলো তারপর তোমায় বোঝাবো কি কি কিনতে হয়।
দুপুরে লাঞ্চ করে সবাই বেরিয়ে পরেছে।ঈশিতার ফ্যামেলি আসবে ওখান থেকে একসাথে কেনাকাটা করবে ।
শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা শুরু করে। হলুদে ম্যাচিং শাড়ি পান্জাবি। মেহেদীতে লেহেঙ্গা। বিয়ের জন্য একটা ড্রেস বৌভাতের একটা ড্রেস প্রতিটা ড্রেসের সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্টস।
তবে বর্ষার সবগুলো ড্রেস পছন্দ করে দিয়েছে বর্ষণ। অবশ্য সেটা বর্ষার ইচ্ছেতেই।
শপিংমল থেকে বেরিয়ে রেস্টুরেন্টে যায় সবাই। কেনাকাটা করতে করতে সবাই ক্লান্ত একটু কিছু খেতে হবে এখন। রাত ও হয়েছে অনেকটা।তাই রেস্টুরেন্টে ডিনার টা সেরে সবাই গাড়িতে উঠে বসে।
বাসায় এসে সবাই যে যার মতো রুমে চলে যায়। বর্ষাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরে।
চলবে…..