গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী(সিজন-২)
লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)
part:05
ক্লাস শেষ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু মাত্রই বের হয়েছে আফরিনরা। লাইব্রেরীতে বসে তিনজন নোট করছে আর গল্প কখন যে এত সময় পেরিয়ে গেছে টেরও পায়নি । আফরিন বেচারি বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে আর হাটছে। ভার্সিটির বাইরে আসতেই দেখা হয় কিছু বখাটে ছেলেদের সাথে। আফরিনদের দেখে বলে
” কি গো সুন্দরী? মুহূর্তেই আফরিন রেগে যায়। কিন্তু কিছু বলে না। কি দরকার এই ভেজালের?! চুপচাপ নিজেদের মতো যাচ্ছে। একটু আগাতেই আবার সেই ছেলেরা বাইক নিয়ে তাদের পিছু নেয়। আফরিন বিরক্ত হয়ে বলে
” সমস্যা কি তোদের? মাঝ রাস্তায় মেয়েদর না জ্বালালে ভালো লাগে না?
একটা ছেলে বলে
“হায় কি তেজ!!
আর সব গুলো একসাথে হাসতে লাগে। আফরিন দাঁড়িয়ে যায়। তা দেখে ছেলেরাও বাইক থেকে নেমে আসে। অন্যা বলে
” দোস্ত আসে পাশে কেউ নেই। এখন?? অহনা তো ভয়ে একরকম কেঁদেই দিয়েছে। একটা ছেলে বলে
” অওওওও বেইবি তুমি কান্না কেন করছ? তোমাকে আমরা মেরেছি বলো? আফরিন এবার রেগে ছেলেটাকে চড় মারতে গেলে ছেলেটা আফরিনের হাত ধরে ফেলে। আর
তখনই পরপর ১২টা বাইক একসাথে ওদের ক্রশ করে। আফরিন দেখে এইগুলোও তাদের ভার্সিটিরই ছেলে। আদিত্যর গেং। আফরিন আদিত্য বলে ডাকলেও তারা শুনে না, কারণ ততক্ষণে তারা অনেক দূরে চলে গিয়েছে। আর আফরিন মনে করে ভার্সিটিতো সেই কখন শেষ হয়েছে এখন ওরা এখানে কিভাবে আসবে?
আফরিন ঠোঁট চেপে ধরে বলে
” হাত ছাড়।
একটা ছেলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সব গুলো বাইক আবার ফিরে আসে। আফরিনদের সামনে এসে দাড়ায়। আর সেখান থেকে নেমে আসে আদিত্য, আহান, কৌশাল আরো অনেকে।
আদিত্য বলে
” কি সমস্যা??? আফরিন বলে
” ওরা আমাদের ডিস্টার্ব করছে। আহান অহনাকে কাঁদতে দেখে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় একটা ছেলেকে। একটা ছেলে বলে
” দেখ আহান ভাই তোমাদের সাথে আমাদের কোনো ঝামেলা নেই তোমরা তোমাদের মতো কাজে যাও। আমরা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিত্য নাক বরাবর ঘুষি মারে ছেলেটার। ইচ্ছে মতো ওদের মারে। আহান অহনাকে জড়িয়ে ধরে বলে
” এই কাঁদে না আমি আছি না চোখ তুলে ফেলব যে তোমার দিকে তাকবে। কৌশাল অন্যা কে বলে
” ঠিক আছ তুমি? কে কি বলেছে? অন্যা বলে ঐ
“রেড কালার টিশার্ট পড়া ছেলেটা আমাকে না কিন্তু আফরিনের হাত ধরেছে আবার অনেক কিছু বলেছে।
আদিত্য ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আফরিনকে বলে
” ভার্সিটি শেষ হয়েছে আরো ২ ঘন্টা আগে তাহলে এখন এখানে কি? আফরিন মাথা নিচু করে বলে
” সামনেই পরীক্ষা তাই নোট। আদিত্য ধমক দিয়ে বলে
” নোট নোট!! পড়া লেখা করে একদম বিদ্যাসাগর হয়ে যাবে?? আর বাসায় নোট করা যায় না??! মাথায় কি কেনো বুদ্ধি নেই!? আজ যদি কিছু হয়ে যেত। আফরিন বলে
” আমি বুঝতে পারিনি! আদিত্য বলে
” তা বুঝতে যাবে কেন? পারো তো শুধু টিংটিং করে কথা বলতে। বাসায় গিয়ে ভাবিকে বলছি। আফরিন বলে
” এখানে আমার কি দোষ? আর হলে হতো আপনার কি। আদিত্য রেগে আফরিনের দুই গাল চেপে ধরে বলে
” আমার কি মানে? তোকে জানে মেরে ফেলব, আমার রাগ সম্পর্কে তোর বিন্দু মাত্র ধারণা নেই। আহান কৌশাল আদিত্য কে ছাড়াতে আসলে। আদিত্য বলে
” যে আমাদের মাঝে কথা বলবি খবর আছে।
সবাই চুপ। আফরিনও ভয় পেয়ে গিয়েছে। এতটা রাগতে কখনোই দেখেনি। সেদিনের চেয়ে আজ বেশি ভয়ংকর লাগছে আদিত্যকে। আদিত্য বলে
” নেক্সট টাইম আমার সাথে এভাবে কথা বললে খবর আছে। আর টাইমে ভার্সিটিতে আসা আর টাইমে যাওয়া যেন দেখতে পাই। মনে থাকবে??? আফরিন চুপ। আদিত্য এবার আরো জোড়ে বলে
” মনে থাকবে? আফরিন বলে
“হুমমম। কৌশাল বলে
” আহ আদিত্য বাদ দে না। আদিত্য কিছু না বলেই বাইক নিয়ে চলে যায়। শেষে কৌশাল আফরিন আর অন্যাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।
_____________
রাতে সবাই আদিত্যদের বাসার ছাঁদে বসে আছে। আহান বলে
” আদিত্য তুই আজ আফরিনকে বেশি বকে ফেলেছিস। আর কি মারটাই না মারলি ওদের। আচ্ছা ওর কিছু হলে তোর কি? আদিত্য বলে
” আমার কি মানে? আমারই তো সব কজ আই লাভ। কৌশাল বলে
“কজ আই লাভ কি? আদিত্য বলে
” না কিছু না। কৌশাল বলে
” দেখ ইয়ার এবার এট লিস্ট আমাদের সত্যিটা তো বল। আদিত্য বলে
” আমি জানি না আমি ওকে লাভ করি কিনা। কিন্তু ওর দিকে অন্য কেউ তাকাক সেটা আমি সহ্য করতে পারিনা। আজ তোদের নিয়ে ভার্সিটিতে এতখন আড্ডা দিলাম কারণটা আফরিন ছিল। দেখেছিলাম তিনজন মিলে নোট করছে। ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোলাগে। ঝগড়া করুক যাই করুক ওর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। যেই আদিত্যর সামনে কারো চলে না সেই আদিত্যর আফিরনের সামনে চলে না। যদি এইসব ভালোবাসার কারণ হয় ওকে দেন আই লাভ হার। আমি এতো কিছু জানিনা শুধু জানি আফরিন আমার।
কৌশাল বলে
” বেটা তুমি গেছ আগেই, এতোদিন মুখে বলো নাই আজ ফাইনালি। আহান বলে
“ট্রিট দে। আদিত্য একটা হাসি দিয়ে বলে
” বিয়ের সময় পেট ভরে খাস কেমন। আর আমাকে তো দেখতেই পারে না। কৌশাল বলে
” বাবা জল কত দূর চলে গিয়েছে। আচ্ছা এতো রাগী মুডে থাকিস কেন? একটু রোমান্টিক হলেই তো পারিস। ভালোভাবে কথা বললে কি হয়?
তখনই আহান বলে
” আচ্ছা হয়েছে এখন আমরা যাই কালকে ভার্সিটিতে দেখা হবে। তারপর সবাই চলে যায় আদিত্য ভাবতে থাকে আফরিনের কথা।
_________________
বৃষ্টির প্রলপ পরেছে চারদিকে ঝুম বৃষ্টি। আজ অন্যা আসতে পারেনি এই অহনাও চলে গিয়েছে আফরিন সেই কখন থেকে একটা বিল্ডিং এর নিচে দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টি কমার নামও গন্ধও নেই। বিরক্ত হচ্ছে আফরিন, চুলগুলোও ভিজে গিয়েছে বৃষ্টিতে । হঠাৎ করেই সেখানে দৌড়ে আসে আদিত্য। চুলগুলো ভিজা। শার্টের হাতা গুটানো। আফরিন আদিত্য কে দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কালকের পর রাগ যেমন তার চেয়ে ভয় হচ্ছে বেশি । আদিত্য ফোনটা বের করে ফোন চালাতে লাগে।
আফরিন শেষে ভয় কাটিয়ে আদিত্য কে বলে
” আপনি এখানে কি করেন? আদিত্য আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলে
” বউকে পাহারা দিতে আসছি। আফরিন বলে
” হুয়াট? আদিত্য বলে
” কানে কম শুনো? ভাবির বোনকে পাহারা দিতে আসছি। কেন তুমি কি শুনেছ? আফরিন একটু থতমত খেয়ে বলে
” আপনাকে কে বললো আমি এখানে? আদিত্য বলে
” আহান কিছুক্ষণ আগে এখান থেকে বাইক নিয়ে গিয়েছে। আমি কিন্তু আমার উত্তরটা পেলাম না।
আফরিন বলে
” দিব না উত্তর।
আর এই বৃষ্টি মাথায় করেই আফরিন সেখান থেকে বেড়িয়ে যায়।
তা দেখে আদিত্য দৌড়ে গিয়ে আফরিনের হাত ধরে আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসে। আফরিন বলে
” এই এই হাত ছাড়ুন। আদিত্য আফরিনের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে
“শুশশশশশশশ, চুপ। আফরিন মুহূর্তেই চুপ করে যায়। আদিত্য তা দেখে আফরিনের সামনের কাটা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলে
” গুড গার্ল। তুমি এভাবে আমার সব কথা শুনতে পারো না?? তাহলেই তো আর ঝাড়ি খেতে হয় না। আমার কথা শুনবা কেমন।
আফরিনের মনে হচ্ছে এটা অন্য কোন আদিত্য। আফরিন বলে
” আপনার কি কিছু হয়েছে? আদিত্য আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলে
“সত্যি কিছু হয়েছে? হয়তো। আহান আর কৌশালও বলে। কালকে সারারাত ভাবলাম আর বুঝতে পারলাম হুম কিছু তো একটা হয়েছে।
আদিত্যের সব কথা আফরিনের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আফরিন বলে
” আপনি পাগল হয়েগিয়েছেন। আদিত্য চোখ মেরে বলে
” আমারও না তাই মনে হয়। আফরিন বলে
“ধূর বাজে বকেন নাতো, মনে হয় উল্টো পাল্টা কিছু খেয়েছেন।
আদিত্য বলে
” না খায়নি কিন্তু এখন খাবো৷ আফরিন বলে
” কি?? আদিত্য আফরিনকে এক ঝটকায় নিজের কাছে নিয়ে আসে আর কপালে একটা ডীপলি কিস করে বলে
” হয়েগিয়েছে। আদিত্যর এই কাজটায় আফরিন অবাক হয়ে যায়। আফরিন বলে
” আপনি এটা কি করলেন? আমি সবাইকে বলে দিব। আপুকেও বলে দিব।
আদিত্য আফরিনের হাত ধরে বলে
” বলো বলো তোমার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে। বৃষ্টি কমতেই আফরিন দৌড়।
আদিত্য বলে
” এই মেয়ে কোথায় যাও। দাড়াও। আফরিনকে আর পায়কে। আদিত্য আফরিনের কান্ড দেখে মুচকি হাসে। হয়তো একটু বেশিই করে ফেলেছে। বেচারি আফরিন।
অপর দিকে আফরিন বলছে
“ফাজিলটার মাথা সম্পূর্ণ গিয়েছে। ছিঃ ছিঃ কাউকে যে বলবো সেই রাস্তাটা অব্দি নেই। হারামি । আল্লাহ এটার সামনে আর পরা যাবে না।
চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে। রিচেক করতে পারিনি।🥴 আদিত্যর নতুন রূপ কেমন লাগলে সবাই জানে ভুলো না।