তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব -০৯

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৯

সাফাত শাওয়ার নিয়ে সবে মাত্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছ। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে। তখনি সাফাতের ফোনটা বেঁজে ওঠে। সাফাত ফোনটা হাতে নেয়। থানা থেকে ফোন আসছে
সাফাত তড়িঘড়ি করে ফোনটা রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করার পর এমন একটা খবর শুনতে হবে সেটা হয়তো সাফাত কল্পনাতেও ভাবেনি। সাফাত থমকে গেছে। সাফাতের হাত ফসকে ফোনটা ফ্লোরে পড়ে যায়। সাফাত নড়তে চড়তে পারছে। তার পা দুটো কেউ যেনো আটা দিয়ে ফ্লোরের সাথে লাগিয়ে দিয়েছে।

তবে কী সে তার বাবা বোনকে হারিয়ে ফেললো? তার বাবা বোন তার থেকে দুরে সরে গেলো নাকি তাকে ছেড়ে চলে গেলো। সাফাতের কানে বার বার বাঁজছে ঐ কথাগুলো।

কিছুক্ষণ আগে,

হ্যালো মিস্টার সাফাত বলছেন?

জ্বী।

আমি থানা থেকে বলছি। আজকে বনশ্রীর কাছাকাছি একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল। এক্সিডেন্ট নিহিত হয়েছিল চার জন। চার জনের চেহেরায় বিকৃত হয়ে গেছে দুই জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও আর দুই জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আমরা আশাঙ্কা করছি যে ঐ দুইজন আপনার বাবা আর বোন। কারণ উনাদের কাছে আপনার বাবা আর বোনের আইডি কার্ড পেয়েছি। আপনি এসে লাশ আইডেন্টিফাই করে নিয়ে যান।

কথাগুলো শুনেই সাফাত থমকে যায়। তার কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। সাফাতের মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছে। সাফাত গাড়ির চাবিটা নিয়ে এলোমেলো পায়ে দৌড়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যায়।

১৮

চারদিকে ভীষণ অন্ধকার। ছিটে ফোটা আলোও নেই। শো শো করে বাতাস বইছে। জায়গাটা নদীর পাড়ে। আকাশে ভীষণ মেঘ। অন্ধকার আকাশে আধাঁর করা বিষণ্ণতা। কান দুটো তালা লেগে যাচ্ছে নিশাচরদের ঝিমঝিম শব্দে। কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রু ক্ষেপ নেই সাফাতের। সাফাত আনমনে তাকিয়ে আছে নদীর টলমল কালো ঝলের দিকে। সাফাত বিষণ্ণ মন নিয়ে বসে আছে নদীর পাড়ে। ঐ আকাশের মতো যে সাফাতের মনেও কালো মেঘেরা ভীড় জমিয়েছে।

ক্ষণে ক্ষণেই আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। জুড়ে জুড়ে বাতাস বইছে। হয়তো কিছুক্ষণের মাঝেই ঝড় আসবে। তীক্ষ্ণ শব্দে সাফাতের ফোনটা বেঁজে ওঠে। এক বার, দুই বার এভাবে পর পর কয়েকবার ফোনটা বাঁজতে বাঁজতে কেটে যাচ্ছে। কিন্তু সাফাত ধরছে না। এমন না যে শুনতে পাচ্ছে না। তার এখন ফোন ধরতে ইচ্ছে করছে না। সাফাত পকেট থেকে ফোনটা বের করে কে কল করেছে সেটা না দেখেই ফোনটা কেটে দিয়ে। ফোন বন্ধ করে ফেলে।

ফোন টোন সবকিছু সাফাতের কাছে বিরক্ত লাগছে। হঠাৎ দমকা হাওয়ার সাথে গুঁড়ি গুড়ি
বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। কিন্তু সাফাত আগের মতোই স্থির হয়ে বসে আছে। তার ওঠার তাড়া নেই। সে বৃষ্টিতে ভিজে ভয়ঙ্কর জ্বর বাধাঁতে চায়ছে। সাফাত সেই সন্ধ্যা ৭ টা থেকে এখানে বসে আছে আর এখন বাঁজে ১১ টা। কিন্তু সাফাত এক চুলও নড়েনি। হাসপাতালে গিয়েছিল লাশ শনাক্ত করতে। কিন্তু ঐ দুইজন তাহসিন আহম্মেদ আর কণা ছিল না অন্য কেউ। এটা জানার পর সাফাতের মনে আশার আলো জ্বলে ওঠে। স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে। তার বাবা আর বোনের কিছু হয়নি।

হাসপাতালে থেকে এসে সোজা এই নদীর পাড়ে চলে আসে সাফাত। হঠাৎ করেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সাফাত ভিজে একাকার হয়ে গেছে। সাফাত বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। হাঁটতে শুরু করে গাড়িতে না ওঠে বৃষ্টিতে ভিজেই রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করে। ঝুম বৃষ্টির মাঝেই সাফাত একা একা হাঁটছে।

১৯

যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈয় আধার

ব্যথার সমাধিতে বসে এ মন
ফোটায় আশার ফুল রাশি রাশি
যখন দেখি ঐ মুখের হাসি
স্বপ্ন থেকে আসে নয়নেতে
নয়ন থেকে তুমি স্বপ্নে হারাও
জাগরণে হেসে কাছে দাঁড়াও

যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈয় আধার

বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। মেয়েটি বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে দিতে গুনগুনিয়ে গান গাইছে। দমকা হাওয়ায় মেয়েটির খোলা চুলগুলো উড়ছে। কিছু চুল চোখে মুখেও আঁচড়ে পড়ছে। মেয়েটির শরীরে একটা স্কাই ব্লু রঙের শাড়ি। শাড়ীর আঁচল কার্পেটের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। চুলের সাথে শাড়ির আঁচলও উড়ছে।

অহি।

কোনো এক মেয়েলি কন্ঠে নিজের নাম শুনে পিছনে তাকায় মেয়েটি। পরিচিত মুখ দেখে খুশিতে চকচক করতে থাকে অহির চোখ জোড়া। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে অহি।

কেমন আছো আপুই?

আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস সেটা বল?

আমি অনেক অনেক ভালো আছি।

সত্যিই কী তুই ভালো আছিস?

তোমার আমাকে দেখে মনে হচ্ছে যে আমি খারাপ আছি? আমি একদম ফাস্ট ক্লাস আছি।

সেটা তোর লেপ্টানো কাজল আর চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু কণায় বলে দিচ্ছে তুই কেমন আছিস।

উফ আপু এসব বাদ দাও তো। এখন বলো সিলেট থেকে কখন আসলা?

এই তো ঘন্টা খানিক হয়েছি। বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থা কাহিল। কতক্ষণ কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলাম তারপর এক কাপ চা খেলাম। এখন তোর রুমে আসলাম।

জিজুর কী খবর?

তোর জিজুর খবর আমি জানবো কী করে?

তোমার জামাইয়ের খবর তুমি রাখবা না তো পাড়া প্রতিবেশী রাখবে?

তুই আমার জামাই পেলি কীভাবে? আমি তো এখনো বিয়েই করি নাই।

আহা সাধু সাজা হচ্ছে আমার সামনে। তুমি যে জিয়ান ভাইয়ার সাথে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো। সেটা আমি কী খুব ভালো করেই জানি। তোমার সব খবরই আমি রাখি আর এসব খবর তো হাওয়ায় ভাসে।

জিয়ানের নামটা শুনতেই লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলে নওমি। হার্ট জুড়ে জুড়ে বিট করছে। নওমির গাল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তিম আভা। ঠিক তখনি নওমির ফোনটা বেঁজে ওঠে। ফোনের স্কিনে জিয়ান নামটা ঝলঝল করছে। ফোনের স্কিনের নামটা দেখে অহি নওমির দিকে ভ্রু নাচিয়ে তাকায়। নওমি লজ্জায় ফোন নিয়ে দৌড়ে অহির রুম থেকে বের হয়ে যায়। নওমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ওঠে অহি।

নওমি অহির মামাতো বোন। নওমির সাথে জিয়ানের এক বছরের রিলেশন। নওমির বাসা সিলেট আর জিয়ানের বাসা ঢাকা। জিয়ান হচ্ছে অহির বান্ধবীর ভাই। অহির বান্ধবীর বিয়েতেই নওমির সাথে জিয়ানের প্রথম দেখা হয়। তারপর চোখে চোখে মনে মনে ভাব বিনিময়ের মাঝেই তাদের প্রণয়ের শুরু হয়।

হাসতে হাসতেই অহি আনমনে ভাবে জিয়ানের ফোন পেয়ে নওমির চোখে যে খুশির ঝলক দেখেছিল তার ভালোবাসার মানুষ যদি তাকে কল দিতো তাহলে কী সেও এমন খুশি হতো? কিন্তু এটা তো হওয়ার না। তার ভালোবাসার মানুষ তো অন্য কারো। তার প্রিয়তমের মনে যে অন্যকারো বসবাস।

তোমার সাথে আমার একসাথে বৃষ্টিতে ভেঁজা হলো না। হাতে হাত রেখে হাজার মাইল পাড়ি দেওয়া হলো না। তোমার সাথে আমার একশো বছর সংসার করার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেলো।

২০

সাফাত আর বন্যা একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। বন্যা এতো এতো কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু সাফাত নির্বাক। এখানে এসে একটা কথাও বলেনি বন্যার সাথে। তার কথা বলতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না। ওয়েটার এসে আইসক্রিম দিয়ে যায়। আইসক্রিম দেখে সাফাতের চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে।

কণাও তো আইসক্রিম ভীষণ ভালোবাসতো। সাফাতের মন খারাপের কারণটা বন্যার মাথায় ঢুকছে না। তখনি তার মনে পড়ে যায় কণা আইসক্রিম খেতে ভীষণ ভালোবাসে। সে সাফাতকে এখানে নিয়ে এসেছিল সাফাতের মন ভালো করার জন্য। কিন্তু তার জন্য সাফাতের মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।

সাফাত বন্যাকে কিছু না বলেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা ভার্সিটি চলে আসে। সাফাত ভার্সিটিতে প্রবেশ করেই দেখে কণা ঐশির সাথে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। সাফাত দৌড়ে গিয়ে কণাকে জড়িয়ে ধরে। কণা তৎক্ষণাত সাফাতকে নিজের থেকে ঠেলে দুরে সরিয়ে দেয়। সাফাত অবাক হয়ে কণার দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে…………

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here