#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_৫
Tahrim Muntahana
ঘরে বসে হবু বরের সাথে কথা বলছে আলো তার পাশেই আনহা ফোন স্ক্রল করছে। তখনি একটি পুরুষালী হাত আলোর চোখটা আটকে দিলো। আলো চমকে উঠলো চিনতে পারছে না কে। আনহা তো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কথায় বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। হাতটি সরিয়ে যখন আলো পিছনে ঘুরলো আলো ও হা করে তাকিয়ে আছে ঘরে পিনপতন নিরবতা। আনহার যখনি খেয়াল এলো ভাইয়া বলে এক চিৎকারে দৌড়ে গিয়ে মানুষটার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। আনহাকে তো হৃদান প্রথম সামনাসামনি দেখলো। সে আসার আগেই এব্রোড চলে গিয়েছিলো আলো তখন ছিলো ৩ বছরের। হৃদান পরম যত্নে আদরের দুই বোনকে জড়িয়ে ধরল। আনহার চিৎকার শুনেই রিদিমা চৌধুরী ঘরে এসে দেখে তার তিন ছেলেমেয়ের ভালোবাসা। কতবছর পর ছেলেকে সামনাসামনি দেখছে। আবেগে হু হু করে কেঁদে দিলো। সেই কখন থেকে হৃদান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলছে থামার কোনো নাম ই নেই। কান্নার জন্য ভুলেই গেছে যে আরো মানুষ এসেছে। যখন খেয়াল হলো তখন তাড়াতাড়ি উঠে ওদের সাথে কথা বলা শুরু করলো।
সরি সরি বাচ্চারা তোমাদের খেয়ালই করি নি বসো বসো
সমস্যা নেই আন্টি -সাগর
তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি
না আন্টি আমরা খেয়ে এসেছি হৃদিতাদের বাসা থেকে -পিয়াস
তাই নাকি। বাহ বাহ দেশে এসেই সর্বপ্রথম আমার মেয়ের ওইখানে ছুটে গেছে আমার ছেলে। মা পর হয়ে গেল তাইনা
রিদিমা চৌধুরীর কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসছে পিয়ানি ছাড়া। হৃদান মুচকি হেসে এগিয়ে গেল
মা তুমিও না। ওসব কিছু না
জানি জানি ওসব কিছুনা। মা বোনদের কাছে না এসে তুমি তোমার হৃদপরীর ওইখানে গেছ আগে বুঝি না ভাবছো -আলো
মম তোমার ছেলে বিয়ের আগেই আমাদের পর করে দিচ্ছে । এই জিবন নিয়ে আমরা কি করবো। চলো রান্না ঘরে যাই -আনহা কান্না কান্না ভাব করে
আমার পিছে লাগা হচ্ছে বুড়ি। তবে রে
বলেই হৃদান আনহা কে দৌড়ানি দিলো আনহা তো হাওয়া সবাই আরেকদফা হাসাহাসি করে নিলো।
এখন তোমরা ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও। অনেক দখল গিয়েছে। আবার বিয়ের কাজ শুরু করতে হবে। তোমাদেরই কিন্তু করতে হবে -রিদিমা চৌধুরী
নো টেনশন আন্টি আমরা আছি তো -অরনি
আন্টি আমি এখন আসি। আব্বু আম্মু অপেক্ষা করছে -পিয়াস
আজকে দিনটা দেখে যা পিয়াস -রিদিমা চৌধুরী
না আন্টি কালকে তো আসবই। একবারে বিয়ে শেষ হলে যাবো। আজ আসি -পিয়াস
সবার কাছে বিদায় নিয়ে পিয়াস বেরিয়ে গেল। আর সবাই যে যার ঘরে গেল। পিয়ানি অরনি সোহা একঘরে সাগর সোহান এক ঘরে থাকবে। হৃদান ঘরে গিয়ে দেখলো ঘরটা ঠিক আগের মতোই আছে। যেমন রেখে গিয়েছিলো। দেখেই মনে হচ্ছে প্রায়ই পরিষ্কার করা হয়। রুমটা ভরা দুই পিচ্চির ছবিতে। একটা ছবি খুব বড়। মেয়েটি চকলেট খেয়ে সারা মুখ মাখিয়ে ফেলছে আর ছেলেটি তা পরিষ্কার করছে মুচকি হেসে। ছবিটা জাস্ট অসাধারণ। ঘুরে ঘুরে কিছুক্ষন দেখে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল। আর চলছে না শরীর। সন্ধ্যা বেলায় সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।
অন্যদিকে হৃদিতা অধির আগ্রহে বসে আছে কালকের সকালের জন্য। কালকে ওর ছোট আব্বুর পরিবার আসবে। ওর রিয়ু আসবে। আজকে শুধু হৃদিতার খুশির দিন। এর আগে কেউ হৃদিতাকে এতটা হাসিখুশি দেখেনি। হয়ত আজ অপ্রত্যাশিত সব পাচ্ছে তাই বেশী খুশি। যত খুশিই থাকুক না কেন পড়াশনায় কোনো হেলাফেলা নেই। কালকে থেকে তো কয়েকদিন বিয়ের ঝামেলাই পড়তে পারবে না তাই আজকে ভালো করে পড়ে নিতে হবে। পড়তে বসল হৃদিতা। একটু ওর ফোনে ফোন আসল। দেখলো ওর বন্ধুরা ভিড়িও কল দিচ্ছে। ধরল।
কিরে হৃদি আজকে তো খুশির ঠেলায় ঘুমই আসবে না তোর -রোহানী
ওকে বলছিস তোরও তো এরকম অবস্থা। বয়ফ্রেন্ড কে প্রথম সামনা সামনি দেখলি -রাহী
যাহ -রোহানী
ও হ আমাদের রোহানী লজ্জা ও পায় -রাইসা
ওই তোদের পেঁচাল রাখ তো হৃদি তুই হৃদান ভাইয়া কে না চেনার ভান করলি কেন -আধির
আমি ওকে চিনি নাকি -হৃদিতা
এই আমাদের সামনে ভান ধরবি না -রাইসা
আমি আগে দেখবো না কতটা ভালোবাসে আর কথা খেলাপের কথাটা আমি ভুলিনি একটু কষ্ট তো পেতেই হবে -হৃদানি
আচ্ছা শুন না আমার না আমার না -রাহী
কি আমার না আমার না করছিস -সাহিল
সোহান কে দেখে ক্রাশ খাইছি -রাহী
লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল। আর সবাই তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
কিহহহহ -সবাই
আরে এত জোরে চিল্লাস কেন তোরা -রাহী
সত্যি বলছিস তুই -হৃদিতা
হুমম। একটা চান্স নেওয়াই যায় -রাহী
ওরে ওরে বান্ধুপী প্রেমে পড়ছে দেখছি -সাহিল
তুই তো এখনো পরশ ভাইয়াকে বলতেই পারলি না -রোহানী
বলব নি -রাইসা
আচ্ছা শুন কালকে সকাল ৮ আগে বাসায় আসিস। কালকে রিয়ুরা আসছে নিতে যেতে হবে -হৃদিতা
আচ্ছা। চলে আসব -রাহী
এখন বাই পড়তে বসছি -হৃদিতা
বলেই কেটে দিলো না কাটলে ওদের কথা শেষ ই হতো না। অনেকক্ষন পড়াশুনা করে খেয়ে ঘুমিয়ে গেল হৃদিতা। অন্যদিকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমানের জন্য হৃদানরা এখনো আড্ডা দিয়েই যাচ্ছে সাথে যোগ দিয়ে আলো আনহা।
ভাইয়া কালকে তো রিয়া নাশিন ভাইয়া আসবে যাবি না ইয়ারপোর্ট -আলো
হৃদপরী যাবে -হৃদান
যাবে না মানে ওর তো মনে হয় আজকে ঘুমই আসবে না। তুই তো জানিস ভাইয়া ওর কাছে ওর রিয়ু কি। একটা বছর ও কেমন ছিলো তুই তো সামনাসামনি দেখিস নি তাই জানিস না -আলো
আমিও যাবো -আনহা
আলো আনহার দিকে তাকালো ওর চোখ ছলছল করছে। আলোকে আনহা না বললেও নিজের বোনের মনের কথা ঠিক বুঝতে পারে। নাশিনের জন্য আনহার মনে যে কিছু আছে সেটি সেদিনই আলো টের পেয়েছিলো যেদিন নাশিনরা বিদেশ চলে গিয়েছিলো। কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞানই হয়ে গিয়েছিলো।
আমরাও যাবো -সাগর
আচ্ছা সকাল ৯ টাই ফ্লাইট ল্যান্ড করবে রেড়ি থেকো এখান থেকে ৭:৩০ বের হবো -আলো
সবাই মাথা দুলিয়ে ঘুমোতে চলে যায়। আলো বুঝতে পারলো তার বোনটার মন ভালো নেই ঘরে গিয়ে কান্না করবে তাই আজকের রাতটা আনহার সাথে থাকলো। বোনকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ও টের পাচ্ছে কিছুক্ষন পর পর আনহার শরীর মৃদ কাঁপছে। আলো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এর ভবিষ্যত কি ও জানে না। একতরফা ভালোবাসা তো মিল হয় না। ও নাশিনের মনের কথা তো জানে না। যদি ওর বোনকে না মানে ভেবেই বুকটা ধক করে উঠলো। কিছুক্ষন ভেবে আলোও ঘুমিয়ে পরল বোনকে জড়িয়ে ধরে কালকে সকাল সকাল উঠতে হবে।
ভোর সকালে হৃদান ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে কিছুক্ষন এক্সারসাইজ করল। অন্যদিকে হৃদিতা রাহী রোহানী রাইসা আধির সাহিল ওদের প্লে গ্রাউন্ডে এসেছে। নিজেদের মতো করে কিছুক্ষন এক্সারসাইজ করে বাস্কেট বল নিয়ে কতক্ষন প্রেকটিস করল। নিজেদের স্কিল আর বডি ঠিক রাখার জন্য এগুলো খুব জরুরী। সময় হতেই ওরা একসাথে হৃদিতার বাড়ি চলে আসলো। এখান থেকেই এয়ারপোর্ট যাবে। হৃদানরা রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল প্রথম হৃদিতাদের বাড়ি যাবে। আধাঘন্টার মধ্যে ওদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছালো। সেখানে গিয়ে যা দেখলো ওদের চোখ আপনা আপনি বড় বড় হয়ে গেল
রাহী রোহানী রাইসা হৃদিতা সাহিল আধির এই ছয় জন ড্রয়িং রুমটাকে একটা গোয়াল ঘর বানিয়ে ফেলছে। খাবার কাপড় তুলো এসব দিয়ে। এখনো মারামারি করেই যাচ্ছে। পরশী চৌধুরীও খুব উপভোগ করছে বিষয়টা। কারণ এটি নতুন না এরা ছয় জন যেখানে মিলিত হবে সেখানেই এরকম হবে। শেষে হৃদিতা বালিশ ঢিল মারল রাইসার দিকে রাইসা সরে যেতেই পায়ের সাথে পা লেগে পড়ে যেতে নিলেই কেউ একজন এসে ধরে নেই। হৃদিতা রা আরাম করে সোফায় বসে পড়ে গালে হাত দিয়ে। হৃদান রা বোঝার চেষ্টা করছে কি করছে এরা। রাইসা আর পরশ তো চেয়েই আছে এক ধ্যানে। রাইসা এখনো এক্সারসাইজ জ্যাকেট জিন্স পড়ে আছে। চুল অবশ্যই বাঁধা ছিল। মারামারি করার সময় রোহানী চুল ধরে দিয়েছে টান খুলে গেছে। যখন পরশের ধ্যান হলো তখন দেখলো শয়তানের নানানানিরা মিটমিটিয়ে হাসছে ওদের দেখে। তাড়াতাড়ি রাইসা ছেড়ে দিতেই ধপাস করে নিচে পড়ে গেল।
ওমমমমমমমমা গো মরে গেলাম গো মরে গেলাম। ও শাশুড়ি মম তোমার বজ্জাত পোলা আমারে ফেলে দিছে গো। এখন আমি আর দাড়াতে পারমু না গো। তোমার পোলা আমারে রাইখা অন্য মেয়ের পিছে ঘুরবে গো। আমি এটা সহ্য করতে পারমু গো শাশুড়ি মম কই তুমি। রান্না পরে করবা গো আগে ছেলের বউরে বাঁচাও। ওই পরশ রাক্ষসটা তোমার ছেলের বউরে মেরে ফেলল গো। হৃদি রে তুই আর আমার মতো একটা কিউটের ডিব্বা গুলুমুলু ভাবি পাবি না গো
সবাই তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। পরশ তো হা করে রাইসার দিকে চেয়ে আছে। হৃদিতারা এ ওর মুখচাওয়াচাওয়ি করছে একটু পর সবগুলো হো হো করে হেসে দিলো। হাসির শব্দে পরশের ধ্যান হলো আর রাইসা তো চোখ মুখ খিচে বসে আছে। একটা থাপ্পড় পড়বে শিয়র ভাবছে রাইসা। তখনি পরশী চৌধুরী কপট রাগ দেখিয়ে
আমার ছেলে রাক্ষস বজ্জাত
আববব আরে আন্টি কি যে বলোনা তোমার ছেলে রাক্ষস হবে কেন রাক্ষস তো আমার জামাই হবে বজ্জাত ও আমার জামাই। তোমার ছেলে কত ভালো সহজ সরল বাচ্চা পিচ্চি নাদূসনদূস গুলুমুলু। তাই না। হিহিহি
whattttt আমি বাচ্চা পিচ্চি? লাইক সিরিয়াসলি। আর তুই আমার মম কে শাশুড়ি মম বলছিস কেন
কাকে বলছি কি বলছি কখন বলছি
হৃদিতাদের তো ওদের কথা শুনে হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।
তাইতো বলি তোর মতো পাগল মেয়েকে কে বিয়ে করবে আমার বউ কত সুন্দর হবে জানিস। দেখবি আমার বউকে
রাইসার তো রাগ উঠে গেল। বলে কি পোলা আমারে রাইখা অন্য মেয়ের কথা বলছে।
শাশুড়ি মম এদিকে আসো। তোমার ওই বজ্জাত পোলারে বইলা দেও সবসময় যেন ওনার মুখে এই রাইসা নামটাই আসে। অন্য মেয়ের নাম নিলে মুখে টেপ লাগিয়ে পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো। আমার জামাই শুধু আমি দেখবো।
সবাই চোখ বড় বড় করে রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদিতারা তো রীতিমতো শকড প্লেন ছিলো একটু এই রাইসা তো তার থেকে ডাবল করে ফেলছে। অবশ্য ভালোই হয়ছে। রাইসা তো রাগে কি সব বলছে খেয়াল ই নেই। যখন ও দেখলো সবাই ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে তা দেখে মনে পড়লো কি বলছে। পরশী চৌধুরী তো রান্না ঘরে চলে গেল। ছোটদের মাঝে থাকাটা বেমানান। পিছে থেকে হৃদানরা একসাথে সবাই হেসে উঠে। পিছে ঘুরে দেখে হৃদানরা এসেছে। রাইসা এই সুযোগে পালাতে যাবে তখনি খপ করে পরশ রাইসাকে ধরে ফেলে। রাইসা তো ভয়ে জমে গেছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে পরশ বলল
এরপর যদি কোনো ছেলের সাথে ঢলাঢলি করতে দেখি তাহলে তোর হাতপা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো। সেদিন কার সাথে যেন কথা বলছিলি হেসে হেসে আর যদি দেখি সেদিন তোর কি অবস্থা হবে তুই ভাবতেও পারবি না। বউকে কিভাবে কন্ট্রল করতে হয় পরশ চৌধুরী ভালো করেই জানে
বলেই উপরে চলে গেল সবাই তো হা হয়ে গেছে বিশেষ করে রাইসা আর হৃদিতা। রাইসা ভাবছে ও কি শুনলো পরশ ওকে বউ বলছে মানে পরশ ও ওকে ভালোবাসে। আর হৃদিতা ভাবছে তার ভাইতো প্রেমিক নাম্বার ওয়ান প্রপোজ না করে সরাসরি থ্রেট। রাইসা তো খুশি তে বাকুম বাকুম। নাচতে নাচতে বলে উঠল
এএএ ধিনাক ধিনাক আমাকে বউ বলছে মানে পরশ ভাইয়া আমাকে তার বউ বলছে বুঝতে পারছিস তোরা। হায় ভে মারজাবে। আমার তো খুশিতে মাতাল মাতাল লাগছে। হৃদি ননদিনি আমার তো সেট হইয়া খেল। ইশশশ আলো আপুর পরে মনে হয় বিয়ের সানাইটা আমারি বাজবে। কি মজা বিয়ে খাবো
হোয়াটটট তুই আজকে মাত্র রিলেশনে গিয়ে কয়েকদিন পরেই বিয়ে করতে চাইছিস আর আমি ৪ বছর ধরে প্রেম করি আগে আমার বিয়ের সানাই বাজবে বলে রাখলাম -রোহানী
ওই আমি তো কালকে ক্রাশ খাইলাম তাইলে কি আমার টা সবার পরে -রাহি
হায়রে বিয়ে পাগলা মেয়েরা তোদের আর কোনো কাম নাই বজ্জাত মেয়ে গুলা পারেও বটে -সাহিল
ঠিক বলছস এদের সাথে থাকতে থাকতে পাগল হয়ে যাবো -আধির
দাড়া তোরে পাগল বানাইতাছি -হৃদিতা
বলেই ওদের দুইজনকে চারজনে মারতে শুরু করল। উপর থেকে রাইসার পাগলামী দেখে পরশ মুচকি হাসছে। ও জানে রাইসা ওকে ছোট থেকেই ভালোবাসে ও যে বাসে না এমন না। ওদের বিয়ে ছোট থেকে ঠিক করে রাখছে। তাই বলে না। একবারে বিয়ের পর বলার কথা ছিলো কিন্তু আজকে রাইসার পাগলামি দেখে বলে দিলো।আজকে হৃদিতার মনটাও খুব ভালো। ওদের এইখানে এসে সাগর সোহান অরনী সোহা পিয়ানি ও খুব মজা পেয়েছে। পিয়ানির যা মন খারাপ ছিল তা কেটে গেছে।ওদের থামার কোনো নাম ই নেই। সময় চলে যাচ্ছে। এয়ারপোর্ট যেতে হবে।
চুপপপপপপপ। থাম তোরা। কয়টা বাজে জানিস। তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে নি। এয়ারপোর্ট কি তোদের রেখেই চলে যাবো -হৃদান
এই না না পাঁচ মিনিটে সময় দিন বিশ মিনিটে আসছি -হৃদিতা
বলেই সবাই মিলে দৌড়। পরশ ও রেডি হয়ে চলে এসেছে। বড় রা যাবে না। একটু পর রিদিমা চৌধুরীও এসে যাবে। পরশী চৌধুরী তো সকাল থেকে রান্নায় লেগে আছে। ঘর পূর্ণ হবে সেই আগের মতো খুশিতে তার চোখে পানি চলে আসছে বার বার। একটু পর হৃদিতারা রেডি হয়ে নিচে নামলে একসাথে বেরিয়ে পড়লো। পরশের গাড়িতে যাচ্ছে পরশ রাইসা। পিয়াসের গাড়িতে রোহানি। হৃদানের গাড়িতে হৃদিতা যাচ্ছে ও অবশ্যই যাবে না বলছিলো। হৃদান রেগে তাকালেই সুরসুর করে গাড়িতে বসে পড়ে। আরেক দিকে সাগর সোহান অরনী সোহা পিয়ানি। আরেকটিতে আধির সাহিল রাহি আলো আনহা। গার্ড নেইনি আজকে। পাঁচটি গাড়ি কম কিসে। ওরা এয়ারপোর্টে কিছুক্ষন পর এসে পৌঁছালো। এখনো আসেনি রিয়া ওরা। সবাই অধির আগ্রহে বসে আছে বিশেষ করে হৃদিতা। ওর তো সময় কাটছেই না। পাইচারি করছে শুধু। একটু পর
হৃদি -রাহি
হুম -হৃদিতা
আরে সামনে দেখ -রোহানি
সামনে তাকালেই দেখলো একজন ছেলে একটি মেয়েকে হাত ধরে নিয়ে আসছে তার পিছেই লোক আসছে। তাদের দেখেই হৃদিতার চোখে পানি চলে আসলো আর ওয়েট না করেই মেয়েটিকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছে মেয়েটিও কাঁদছে। কতদিন পর দুই বোন একে অপরকে ছুঁতে পারছে। রিয়া হৃদিতার মুখ হাত দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছে। দেখতে তো আর পারবেনা তাই ছুয়ে দিচ্ছে। হ্যাঁ রিয়া চোখে দেখতে পায়না।অনেকক্ষন কান্না করল ওরা । কেউ থামালো না। হৃদানের খুব কষ্ট হচ্ছে হৃদিতার চোখে পানি দেখে তাই অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
আমি কারো কাছে কিছুই না। আমাকে চোখেই দেখছে না -নাশিন
হৃদিতা নাশিনের অভিমানি কথা শুনে ওকেও জড়িয়ে ধরল। নাশিন ও পরম যত্নে বোনকে আগলে নিলো। ওর কাছে রিয়া আর হৃদিতা এক তেমনি পরশের কাছেও ওরা এক। পরশ গিয়ে রিয়ুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দেই। তার নাশিনের সাথে কুশলাদি করে। এর মধ্যে রাইসা আলো ওরাও সবাই গিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আনহা দূরে দাড়িয়ে আছে। হৃদান ওদের না দেখলেও কথা বলেছে ফোনে। হৃদান ও গিয়ে কথা বলল।
বারে কেউ আমাদের চোখেই দেখে না। ছেলে মেয়েদের নিয়েই মেতে আছে -নিশি চৌধুরী
ছোট্ট আম্মু ছোট আব্বু তোমাদের আমরা ভুলতে পারি বলো। অবশেষে আমাদের পরিবারটা পূর্ণ হলো -পরশ
হ্যাঁ তোমাদের ছাড়া ভালো লাগে না বাসায় -হৃদিতা ছলছল চোখে বলল
আমার মা টার বুঝি খুব কষ্ট হয়েছে। আই এম সরি আম্মু এই যে এসে গেছি আর যাবো না -রিয়ান চৌধুরী
হ্যাঁ এখন চলো তোমরা বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য -হৃদান
আনহা তুই দূরে দাড়িয়ে আছিস কেন -আলো
সবাই ওর দিকে তাকালো। আনহা নামটা শুনে নাশিন তাড়াতাড়ি মুখটা তুলল। দেখলো একটু দূরেই দাড়িয়ে আছে। নাশিনের দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে পানি পড়বে পড়বে ভাব জোর করে আটকে রেখেছে। নাশিনের বুকটা ধক করে উঠল। আনহাও স্বাভাবিক হয়ে এগিয়ে গিয়ে কথা বলে সবার সাথেই শুধু নাশিন বাদে। সবাই গাড়িতে উঠে বসে চলল বাড়ির উদ্দেশ্যে।
চলবে….?