#তুমি_নামক_প্রশান্তি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_পনেরো
“দেখ বাবা, তুই যদি একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করিস তাহলে, সমাজের মানুষ তোর, আমার, আমাদের পরিবারের মুখে থুতু দিবে। বেলী যতই সুন্দরী হোক, ‘ও একটা ডিভোর্সি ‘। বিয়ের তিনমাস না যেতেই যে, নিজের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাপের বাড়ি এসে উঠে, সে মেয়ে কি ভালো মেয়ে হতে পারে বলে তোর মনে হয়?”
নীলাভ্র সবে মাত্র বাইরে থেকে ফিরেছে। রাত এখন দশটা বেজে দশ মিনিট। আজ তিনদিন যাবৎ অনেক বেশি ব্যস্ততার মাঝে সময় কা’টাতে হচ্ছে। ক্লান্তিতে সারা শরীর ভেঙে আসছে, চোখের পাতায় রাজ্যের ঘুম। সীমা সবেই ছেলের জন্য খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। খাবারটা রেখেই ছেলের পাশে আয়েশ করে বসে কথাগুলো বলে উঠলো। কথাগুলো কানে আসতেই নীলাভ্রর রাগে শরীর শিরশির করে উঠলো। যথাসম্ভব চেষ্টা করলো নিজেকে শান্ত রাখার। এখন কোনো চিৎকার, চেঁচামেচি করা ঠিক হবে না। শান্ত স্বরেই মা’কে বললো,
“মা, আমি এখন খুব বেশি ক্লান্ত। এইসব বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিনা।”
সীমা শুনলো না। আজ যাই হয়ে যাক না কেনো? ছেলেকে সে বুঝিয়েই ছাড়বে। নাছোড়বান্দার মতো বলে উঠলো,
“কেনো বলবি না? কয়েকদিন ধরেই বেলীর সাথে তোর মেলামেশা আমার ভালো লাগছে না। সবাই খারাপ নজরে দেখছে বাবা। এইসব আমার ভালো লাগছে না।”
বিরক্তিতে নীলাভ্রর মুখটা তেতো হয়ে আসলো। তবুও বেশ শান্ত থাকার চেষ্টা করলো। দাঁত খিটে উত্তর দিলো,
“মা সবাই কোন নজরে, কি দেখছে? এটা নিয়ে ভেবে অযথা সময় নষ্ট করতে চাইনা। যে যা খুশি ভাবুক, এতে আমার কি? আমি প্রাপ্তবয়স্ক একটা ছেলে। কি করব? কাকে বিয়ে করব? কাকে ভালোবাসব? কার সাথে মিশব? কোনটায় আমার ভালো হবে আর কোনটায় আমার খারাপ হবে? আমি বুঝি। তাই সবার আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে।”
সীমার এবার রাগ হলো। ভিষণ রাগ৷ ছেলে বড় না হলে হয়তো দুই একটা থা* প্পড় বসিয়ে দিতেন। রাগী স্বরেই এইবার বেশ চেঁচিয়ে বললো,
“নীল, আমি তোমার মা। আমি আর তোমার বাবা যতদিন বেঁচে আছি। ততদিন অব্দি তোমার ভালো, মন্দ সব কিছু ভাবার অধিকার আমাদের আছে। তুমি যদি ভুল পথে যাও, সে পথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমাদের। একটা ডিভোর্সি মেয়ে আমি কোনোদিন নিজের ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিব না। যতই হোক আমরা এই সমাজের মানুষ তো, যেই সমাজের মানুষের সাথে বসবাস করি, সেই সমাজের কথাও তো আমাদের ভাবতে হবে।”
নীলাভ্র আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না। গর্জে উঠলো। রাগে খাবার গুলো ছু’ড়ে ফেলে দিলো। নীলাভ্র কখনো রাগ হলে জিনিসপত্র ভাঙ্গচূর করেনা। কিন্তু, আজ কিছুতেই নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,
“সমাজ! সমাজ! সমাজ! সমাজ মাই ফুট। তুমি কি সমাজের কথায় উঠবে, বসবে? নাকি সমাজ তোমাকে এক বেলা খাবার দিয়ে যায় মা? নাকি সমাজের মানুষ তোমার ভালো, মন্দ সব কিছু দেখেশুনে রাখে? মা, সমাজের মানুষের কাজেই শুধু অন্যের ভালো দেখলে নিন্দা-মন্দ করা। কেউ তোমার ভালো দেখতে পারেনা। আজকাল কারোর ভালো কারোর, সহ্য হয়না। তুমি উন্নতি করতে চাইলে কি করে, তোমাকে টেনে নিচে নামানো যায় সমাজের মানুষ সেই চিন্তায় মশগুল থাকে। আর তুমি পড়ে আছো, সমাজের মানুষ কি বলবে তা নিয়ে? সিরিয়াসলি মা! সমাজের মানুষের জন্য চিন্তা করছো আর নিজের ছেলের ভালো থাকার কথা চিন্তা করছো না? নিজের ছেলের থেকে তোমার কাছে সমাজ ও সমাজের মানুষের কথা বেশি বড় হয়ে গেলো মা?”
বলে থামলো নীলাভ্র। সীমা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাভ্রর রাগে শরীর কাঁপছে। সীমা কি বলবে নিজেও খুঁজে পাচ্ছে না। ভাবছে, ছেলের ভালো চাইতে গিয়ে খারাপ করে ফেলছে না তো? সত্যিই তো নিজের ছেলের ভালোর কথা না ভেবে স্বার্থপরের মতো সমাজের মানুষের কটুকথা নিয়ে ভাবছে? নীলাভ্র পুনরায় জোরালো কন্ঠেই বলে উঠলো,
“মা, ডিভোর্সি’রা কি মানুষ না? ওদের কি নতুন করে জীবন সাজানোর অধিকার নেই? ওদের কি দ্বিতীয় বার ভালোবাসার অধিকার নেই? ওরা ডিভোর্সি এটা ওদের দোষ নয়। ওদের অপরাধও নয়। যেকোনো কারনে একটা মেয়ের সংসার ভাঙতে পারে। কিন্তু আমরা কি করি একটা মেয়ের সংসার ভা-ঙলে, মেয়েটার ডিভোর্স হলে সব দোষ মেয়েটাকে দেই। একবারও ভাবিনা মেয়েটার কি এতে আদৌ দোষ আছে, নাকি নেই? ভাববো কি করে? আমাদের সমাজ তো আমাদের কাছে অনেক বড়। নিজেদের সন্তানের থেকেও সমাজ বড়। সমাজের মানুষের কথা বড়। হায় সমাজ! যে সমাজ একটা কালো মেয়ে, একজন ডিভোর্সি মেয়েকে, একজন ধ-র্ষিতা মেয়েকে ডানা ঝা-পটানো পা-খির মতো খোলা আকাশে উড়তে দেয় না। জোর করে খাঁচায় বন্দি করে রাখে, আ*ত্মহ*ত্যা করতে বাধ্য করে, সে সমাজকে আমি ধি-ক্কার জানাই। চাইনা এমন সমাজকে। সমাজ ধুয়ে আমি পানি খাব না। বরং, সমাজের মানুষের কথায় কান না দিয়ে মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই উত্তম। যেদিন একজন ডিভোর্সি, কালো, ও ধ-র্ষিতা মেয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে সেদিন আমি মেনে নিব আমাদের যুগ পাল্টেছে। আমাদের সমাজের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। আর সেদিনে আমিও সমাজের মানুষের কথা ভাববো, তার আগে না। কথাগুলো মনে রেখো মা। আজকের পরেও যদি তুমি বুঝতে না পারো তাহলে সত্যিই আমার আর কিছু করার নেই।”
বলে বেলকনির দিকে চলে গেলো। এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো আরো বেশি খারাপ আচরণ করতে বাধ্য হবে। কিন্তু, মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে চাচ্ছে না বিধায় স্থান ত্যাগ করলো। সীমা নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ সে নির্বাক, শব্দহীন ব্যাক্তি। কথা বলার মতো ভাষা নেই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
—
বেলী দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকলো। দরজাটা কোনরকম আটকে, ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। পানির ট্যাপ ছেড়ে দিলো, শব্দকরে পানি গড়গড় করে পড়ছে। আর বেলী ওয়াশরুমের দরজায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো। মুখে ওড়না চা’পা দিয়ে কান্না করে উঠলো। বোবা কান্না, বাঁধ ভাঙা কান্না। কিছুতেই থামতে চাচ্ছে না অশ্রু। এতো বে*হায়া কেনো এই অশ্রুগুলো? কি হয় চোখের সব অশ্রু শুকিয়ে গেলে? অশ্রু শুকিয়ে গেলে কেউ কাঁদতে পারবে না, চাইলেও চোখের পানি ফেলতে পারবে না। সেটাই ভালো হবে, খুব ভালো। এতক্ষণ নীলাভ্র আর ওর মায়ের সব কথা বেলী দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছিলো। নীলাভ্র ফিরেছে কিনা তা জানতেই ওর রুমের দিকে গিয়েছিলো, আর সেখানে গিয়ে এমন কিছু কানে আসবে তা কল্পণাও করেনি বেলী। সেদিনের পর তিনটে দিন কে-টে গেছে। সময় তো দ্রুত চলে যায়। নীলাভ্র আর বেলীর সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে। এই তিনদিন নীলাভ্র বেশ ব্যস্ত থাকায় কথাবার্তা কম হয়েছে ঠিকি, কিন্তু শত ব্যস্ততায়ও নিয়ম করে বেলীর খোঁজ নিতে ওর কেয়ার করতে ভুলেনি। সীমা এই তিনদিন ওদের প্রত্যেকটা গতিপথ খেয়াল করলেও টু-শব্দ করেনি। বেলী জানতো, আবার একটা ঝড় আসবে, আর সেই ঝড়ের নাম সীমা। সত্যিই তো কোন মায়েই কি চাইবে তার ছেলে বিবাহিত, ডিভোর্সি একটা মেয়েকে বিয়ে করুক, ভালোবাসুক। নাহ! কোনো মায়েই চাইবে না। আমাদের সমাজে তো ডিভোর্সিরা খারাপ, কেউ কেউ তো বলেও ফেলে চরিত্রহীন। ঠিক এমন কাউকে শুধু নীলাভ্রর মা কেনো কেউই মেনে নিতে চাইবে না। ভাগ্য এত খারাপ কেনো? নিয়তির কি নিষ্ঠুর খেলা! কান্নাগুলো কিছুতেই থামছে না। যদি কেউ শুনে ফেলে সেই ভয়ে বেলী পানির ট্যাপ ছেড়ে, মুখে ওড়না গুঁজে কাঁদছে। এই যন্ত্রণা ভয়ংকর, ভীষন ভয়ংকর! কি হতো যদি সবটা গুছালো থাকতো? বেলী হঠাৎ করেই চা’পা আর্তনাদ করে বলে উঠলো,
“কেনো এমন হলো ভাগ্যটা? কি দোষ করেছিলাম? কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি? জীবনটা তো অন্যরকম হলেও পারতো? নাটকের থেকেও নাটকীয় হয়ে যাচ্ছে জীবন। কেনো?”
বলে আবারো কান্না করে উঠলো। হাঁটুর ভাঁজে মুখ লুকালো।
—
মিষ্টি সকালে পাখির কিচিরমিচির কানে আসতেই বেলীর ঘুম ভেঙে যায়। মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে। রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি। কোনো অলসতা ছাড়াই উঠে পড়লো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে, নামাজ পড়ে নিলো। এলোমেলো চুলগুলো আঁচড়ে, কাঠি দিয়ে খোঁপা করে নিলো। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নিলো। এখনো বাড়ির কেউ উঠেনি হয়তো, তাই একটু সকাল সকাল হাঁটতে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। সকালের মিষ্টি বাতাসে মনটা ফুড়ফুড়ে হয়ে যাবে। হঠাৎ, করে ফোনটা বেজে উঠলো। এত সকালে কে ফোন দিলো?ভেবে ফোনটা তুলতেই চোখ চড়কগাছ, ‘তানিশা’ এত সকালে ফোন দিয়েছে? ভাবতে পারছেনা বেলী। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই, ওপাশ থেকে তানিশা বেশ শান্ত স্বরে বললো,
“একটু বাইরে আয় তো বেলী। দরকার আছে খুব।আমি দাঁড়িয়ে আছি।”
বলে কে-টে দিলো। আর বেলী অবাকের শেষ সীমানায়। সাথে কিছু দুশ্চিন্তা হা’না দিলো। আজকে তানিশার গলাটা এত শান্ত লাগলো কেনো? কিছু কি হয়েছে? আর এত সকালে কি দরকার থাকতে পারে? ভাবতে ভাবতে বেলী তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। গেটের বাইরে আসতেই দেখলো তানিশা দাঁড়িয়ে আছে। তানিশার মুখে রাজ্যের বিষন্নতা। হাসি, খুশি, চঞ্চল মেয়েটাকে এত শান্ত লাগছে কেনো? বেলীকে দেখেই তানিশা মুখে হাসি টানার চেষ্টা করলো। বেলী চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলো,
“কিরে, কি হয়েছে? কোনো সমস্যা? বাসার সবাই ভালো আছে তো? রাকিবের সাথে সব ঠিক আছে? এত সকালে? ”
বেলীর একাধারে প্রশ্নগুলো শুনে তানিশা বেলীর মাথায় গা’ট্টা মে*রে বলে উঠলো,
“একলগে কেউ এত প্রশ্ন করে বল*দ। কোনডা রাইখা, কোনডার উত্তর দিমু।”
তানিশার কথা শুনেও বেলীর চিন্তা কমলো না। শান্ত স্বরেই বললো,
“আগে বল, কি হয়েছে?”
এইবার তানিশার মুখটা চুপসে গেলো। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মুখে যথাসাধ্য হাসি রাখার চেষ্টা করলো। সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। বেলীও ওর সাথে হাঁটা শুরু করলো। তানিশা বললো,
“আম্মা, আজকের মধ্যে বাড়ি যাইতে কইছে।”
“হঠাৎ, বাড়ি যেতে বলছে কেনো?” বেলীর পাল্টা প্রশ্ন শুনে, তানিশা হাসলো। তাচ্ছিল্যের হাসি। বললো,
“কেনো, আবার? বিয়া দিব তাই।”
কথাটা শুনেই বেলীর পা থেমে গেলো। বললো,
“কি আবোল-তাবোল বলছিস? বিয়ে দিবে কেনো তোকে?”
কথাটা শুনেই তানিশার কন্ঠস্বর রোধ পেলো। কান্না গুলো আসতে চাইলেও, মেয়েটা তা দমিয়ে রাখলো। বলতে শুরু করলো,
” আব্বায় অনেক ঋণে ডুইবা গেছে। আমার তো ভাই নাই। আমি বড় মাইয়া। তাই, আমারে বিয়া দিতে চায়। বিদেশী পোলা, টাকা পয়সা আছে বহুত। আমারে ওই পোলার কাছে বিয়া দিলে, ওই পোলা আব্বারে সব ঋণ থেকে বাঁচাইবো। ধরতে গেলে আমারে টাকার কাছে বেইচা দিতে চাইতাছে আব্বায়।”
বলে হাসলো তানিশা। চোখের কোনে পানি টলমল করছে। বেলী স্তব্ধ হয়ে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। তানিশা আবার বলে উঠলো,
“আমি আব্বা-আম্মারে অনেক বুঝাইছি বেলী। কইছি, আমি তাগো সব ঋণ শোধ করুম। তুই জানোস না বেলী, আমি একটা চাকরি জোগাড় করছি, মাসে দশ হাজার টাকা বেতন দিব কইছে। আমি আম্মারে কইছি দরকার পড়লে, আমি পড়ালেখা ছাইড়া দিমু, তাও যেনো আমারে বিয়া না দেয়। কিন্তু আম্মায় বুঝতাছে না। আব্বায় নাকি প্রতিদিন আম্মার লগে ঝগড়া করে, তাই আম্মা আমারে আজকে বাড়িতে যাইতে কইছে। আমি যদি না যাই, তাইলে আব্বায় নাকি আম্মারে বাড়ির থেইকা বাইর কইরা দিব। ”
বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তানিশার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। বেলী শান্ত স্বরেই প্রশ্ন করলো,
“তুই বাড়ি যাবি?”
“না, গিয়া কিয়ারমু?” তানিশার শান্ত স্বীকারোক্তি।
“তুই বিয়ে করবি?” বেলীর প্রশ্নে তানিশা ওর দিকে কেমন অসহায় চোখে তাকালো। সাথে সাথে মোটা করে দুই ফোটা পানি, দুই চোখ দিয়ে বেয়ে পড়লো। বললো,
“আমি বাড়ি যাইয়া আম্মা-আব্বার পায়ে ধরুম। যেমনেই হোক বুঝামু। কিন্তু, বিয়া করুম না। আমি রাকিবেরে অনেক ভালোবাসি বেলী। রাকিব রে ঠকাইতে পারুম না। তোরে সব কইয়া গেলাম। তুই রাকিবেরে কিছু কইয়া বুঝাইয়া রাখিস। ওয় এইসব জানলে তুলকালাম বাধাইবো। ”
বলে মেয়েটা নিঃশব্দে কান্না করে উঠলো। বেলী তানিশাকে পরম যত্নে জড়িয়ে ধরলো। বেলীর চোখেও পানি টলমল করছে। তানিশা ভরসার কাঁধ পেয়ে কান্নায় ভে’ঙে পড়লো। কিছুসময় পর বলে উঠলো,
“সাতটায় আমার বাস। এখন যাইতে হইব আমার।”
বেলী কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। তবুও শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
“সব ঠিক হয়ে যাবে। একদম চিন্তা করিস না। তাড়াতাড়ি এসে পড়বি। আন্টি, আংকেল যদি না বুঝে তাইলে আমারে ফোন দিস। আমি বুঝাবো। সাবধানে যাবি।”
তানিশা মাথা নাড়ালো। মিষ্টি করে হাসলো। বেলীর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আর বেলী ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। মনের ভেতর কেনো জানি কু গাইছে। কোন ঝড় আসতে চলেছে কে জানে? তানিশাকে একদম ছাড়তে ইচ্ছে করছিলো না, কেনো জানি বার বার মনে হচ্ছে, এইযে তানিশা গেলো আর কখনো ফিরে আসবে না। কি আশ্চর্য! চারদিকের কেউ ভালো নেই, বাতাসের শব্দে বিষাদের গন্ধ ভেসে আসছে। হাসলেই সবাই ভালো থাকেনা, তার জলজ্যা*ন্ত প্রমাণ তানিশা। মেয়েটা নিজের হাসির মাঝে এত কষ্ট লুকিয়ে রেখেছিলো…
#চলবে