তুমি যে আমার পর্ব -০২

#গল্পের_নাম_তুমি_যে_আমার
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:২

সকালে হেমন্তির ঘুম ভাঙ্গলো তার ফুপি রুমকি বেগমের ডাকে চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে অতি প্রিয় একজন মানুষকে দেখে হেমন্তির মুখে হাসি ফুটে উঠলে।সে উঠে বসলো আর ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললো,

~ফুপি,আমার কথা তো তুমি ভুলেই গেছো।

রুমকি বেগম আলতো হেসে হেমন্তির খোলা চুলে হাত দিয়ে বললেন,

~তোর চুলের এ অবস্থা কেন?নিজের যত্ন নিতে কবে শিখবি বল তো?

হেমন্তি রুমকি বেগমকে ছে/ড়ে দিয়ে বললো,

~তুমি তো আছোই আমার যত্ন নেওয়ার জন্য।

রুমকি বেগম বললেন,

~বয়স হয়েছে আমার কবে চলে যাই বলা যায়?

হেমন্তির মুখটা কালো হয়ে গেলো সে যে তার মায়ের পর এই ফুপিকেই চিনে।হেমন্তি রুমকি বেগমের কোলে মাথা রেখে বললো,

~এভাবে বলো না ফুপি আমার অনেক কষ্ট হয় মা চলে যাওয়ার পর তুমিই তো আমাকে সামলিয়েছো।

রুমকি বেগম আলতো হেসে হেমন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন তারপর বললেন,

~আজ তোকে দেখতে আসবে আমি নিজ হাতে তোকে শাড়ি পরিয়ে দিবো কেমন?তোর মায়ের গোলাপী রঙ্গের শাড়িটা আমি নিয়ে এসেছি।

হেমন্তি কোল থেকে মাথা তুলে বললো,

~আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি বসো।

রুমকি বেগম আর কথা বললেন না হেমন্তি ওয়াশরুম চলে গেলো কল ছে/ড়ে সে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো দরজার সাথে হেলান দিয়ে।তার মন বলছে আজ কিছু একটা ঘটবে যা তার জীবনকে পুরো বদলিয়ে দিবে।রুমকি বেগম হেমন্তির রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো হাসান সাহেবের রুমে বোনকে দেখে হাসান সাহেব বললেন,

~আজ তুমি নিজে হাতে সব রান্না করবে ঠিক আছে?

রুমকি বেগম মাথা নাড়ালেন তারপর আমতা আমতা করে বললেন,

~ভাইজান, যা কিছু হচ্ছে তা থেকে হয়তো হেমন্তি খুশি না।

বোনের কথায় হাসান সাহেব মৃদু হেসে বললেন,

~রুমকি,এতো চিন্তা তোমার করতে হবে না মেয়ে আমার আমি ভেবে নিবো তুমি যাও কাজে।

রুমকি বেগম “আমার মেয়ে” শব্দটা শুনে কষ্ট পেলো সে ছলছল নয়নে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

~ভাইজান,মেয়েটা আমারও সেই ছোটবেলা থেকে আমি ওকে আদর দিয়েছি আর এখন সে শুধু আপনার মেয়ে।আপনার জন্য হেমন্তি আগেই অনেক কষ্ট পেয়েছে এখন আবার ওসবই করছেন।

রুমকি বেগম শেষের কথা গুলো রা/গ নিয়েই বললেন হাসান সাহেব বললেন,

~তুমি কী ইলহামের কথায় এসব বলছো?

রুমকি বেগম অবাক হয়ে গেলেন যে ছেলের সাথে তার একবার দেখা হয়েছে তার কথায় কীভাবে এসব বলবে?হাসান সাহেব বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

~যাও হেমন্তির কাছে তোমার এখানে কাজ নেই।

রুমকি বেগম রুম থেকে বের হয়ে আসলেন শাড়ির আচঁল দিয়ে চোখ মুছে হেমন্তির কাছে চলে গেলেন।

ইলহাম ফাইলের সবকিছু চেক করে সামনে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে বললো,

~কাগজ গুলো সব ঠিক আছে আমার মনে হয় সবাই বিশ্বাস করে নিবে আর ছবিগুলো তো একদম পার্ফেক্ট।

ইলহাম লোকটির দিকে একটি খাম এগিয়ে দিলো লোকটি খাম হাতে নিয়ে ইলহামের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।ইলহাম ফোন বের করে সাইফুলকে কল করলো সাইফুল ফোন রিসিভ করতেই ইলহাম বললো,

~গাড়িটা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখো ইলহামের বউ আসছে।

বলেই সে ফোন রেখে দিলো ইলহাম হেসে ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে তাকালো যেখানে হেমন্তি শাড়ি পরে দাড়িয়ে আছে।ইলহাম ছবিটিতে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,

~খুব তাড়াতাড়ি আসছি আমি।

হেমন্তি আজ বাসা থেকে আর বের হয়নি এখন বিকেল ৪টা বাজে রুমিকা বেগম হেমন্তির রুমে এসে শাড়িরটা বিছানায় রেখে হেমন্তির কাছে এসে বললেন,

~তৈরি হয়ে নে পাত্রপক্ষ চলে আসবে।

হেমন্তি রুমকি বেগমের কথায় নিজ ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলো।রুমকি বেগম আবার বললেন,

~কী হলো তৈরি হয়ে নে।

হেমন্তি শাড়িটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে ধরলো তার মনে হচ্ছে এতে তার মায়ের শরীরের ঘ্রাণ রয়েছে যা সে খোজার চেষ্টা করছে।রুমকি বেগম হেমন্তির অবস্থা দেখে মনে মনে বললেন,

~আল্লাহ যদি ভাবীর বদলে আমায় নিয়ে যেতো আমি তো নিসন্তান আমার তো কোনো পিছুটান নেই আজ আমার চোখের সামনে আমার ক/লি/জা/র টু/ক/রো/টা একটু ভালোবাসার জন্য হাহাকার করতো না।

পরক্ষনেই রুমকি বেগম মনে মনে বললেন,

~হয়তো আমাকে একটা সন্তান দেওয়ার জন্যই ভাবী চলে গেছেন তাই তো হেমন্তিকে এতোটা ভালোবাসতে পারলাম।

রুমকি বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজ কাজে মনোযোগ দিলেন হেমন্তি শাড়ি পরে রেডি হয়ে গেলো চুলগুলো আজ বাধলো না কেন জানি নিজেকে আজ খোলা চুলে দেখতে মন চাইছে।হেমন্তি আয়নার সামনে দাড়িয়ে বললো,

~বাবা বলে যে আমি মায়ের মতো হয়েছি এই শাড়িতে কী আমায় মায়ের মতো দেখাচ্ছে?

বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো তার যে এই চোখের পানি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে।

পাত্রপক্ষ চলে এসেছে রুমকি বেগম তাদের মেহমানদারী করতে ব্যস্ত।পাত্রের মা হঠাৎ বলে উঠলেন,

~আপা,মেয়েটাকে যদি নিয়ে আসতেন।

রুমকি বেগম ভাইয়ের দিকে তাকালো হাসান সাহেব চোখ দিয়ে সম্মতি জানালেন।আবির ছেলের সাথে কথায় ব্যস্ত তার কাজ সম্পর্কে জানার অনেক আগ্রহ আবিরের।রুমকি বেগম হেমন্তির রুমে গিয়ে দেখলেন হেমন্তি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রুমকি বেগম হেমন্তির পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বললেন,

~তোকে ডেকেছে।

হেমন্তি রুমকি বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,

~চলো।

হেমন্তি পা বাড়াতেই রুমকি বেগম তার হাত ধরে বললেন,

~তুই কী ইলহামকে ভালোবাসিস?

হেমন্তি অবাক নয়নে ফুপির দিকে তাকালো আর বললো,

~যার পরিবারের জন্য আমার বাবা আর ভাই কষ্ট পেয়েছে তাকে কেমন করে ভালোবাসি আমি?

রুমকি বেগম বললেন,

~তাহলে মুখ এতো মলিন কেন?তুই তো ইলহামের সাথে বিয়ে করতেও রাজি ছিলি যদি ওর বাবা

রুমকি বেগমের পুরো কথা বলার আগেই আবির চলে আসলো আর হেমন্তিকে বললো,

~চল বোন তোকে ডেকেছে।

হেমন্তি মাথা দুলিয়ে আবিরের পিছে হাঁটা ধরলো রুমকি বেগমও তাদের সাথে চললো।হেমন্তি বসে আছে পাত্রপক্ষের সামনে ছেলের মা হেমন্তিকে বললেন,

~তোমার নাম টা ভারী মিষ্টি তোমার মা রেখেছে নিশ্চয়ই।

হেমন্তি বললো,

~জ্বী।

ছেলের বাবা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

~তোমার কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করো।

ছেলেটা হেমন্তির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো হেমন্তির এ চাহনিটা যেন বি/ষা/ক্ত মনে হলো ইলহাম তো কোনোদিন এমন ভাবে দেখেনি তাকে।ছেলে বললো,

~ওনার সাথে একা কথা বলা যাবে?

হেমন্তি এবার ক/ঠো/র দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো আবির বোনের ক্রো/ধ বুঝতে পেরে হালকা হাসি দিয়ে বললো,

~হেমন্তি এসব পছন্দ করে না আপনি প্লিজ এখানেই যা জিজ্ঞেস করার করে নিন।

ছেলের মুখটা বেলুনের মতো ফুস হয়ে গেলো সে থমথমে গলায় বললো,

~আমার ওনাকে পছন্দ হয়েছে।

সবাই খুশি হলো ছেলের কথা শুনে হেমন্তির মনটা আকুল হয়ে উঠলো তার শুধু ইলহামের কথা মনে পরছে এতো কষ্ট কেন হচ্ছে তার? সবাই যখন কথায় মশগুল হয়ে গেলো তখনই কলিংবেলের আওয়াজ আসলো রুমকি বেগম গিয়ে দরজা খুলতেই তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো এ সে কাকে দেখছে এতো স্বয়ং বি/প/দ তার দরজায় দাড়িয়ে রয়েছে।কারণ দরজায় আর কেউ নয়

চলবে

(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার
অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here