তুমি হাতটা শুধু ধরো ২ পর্ব -২৭+২৮

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৭
#Jhorna_Islam
“সোহা”
এই মেয়ে কথা বলছো না কেনো তুমি?
আমি ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না?
কথা বলো প্লিজ! অন্য সময় তো কতো কথা বলো।এখন চুপ করে কেনো আছো?

সোহা।

দায়ানের মা দায়ানের ডাক শুনে দৌড়ে আসে।

কি হয়েছে দায়ান?

আম্মু ও আম্মু দেখোনা এই মেয়ে টা আমার সাথে কথা বলছে না আম্মু। কথা বলতে বলো ওরে আম্মু।

দায়ানের মা তারাতাড়ি নিচে বসে সোহাকে ডাকে।
“সোহা এই সোহা।কি হয়েছে তোমার মা?

ততক্ষণে বাড়ির সকলে উপস্থিত হয় সোহার রুমে। দায়ানের চিৎকার সকলেই শুনতে পায়। তাই কি হয়েছে দেখার জন্য ছুটে আসে।

সকলেই সোহাকে এমন ভাবে পড়ে থাকতে দেখে থমকায়।মেয়েটার,কি হলো হঠাৎ?

নোহা ও তারাতাড়ি নিচে সোহার পাশে বসে হাত ধরে বোনকে ঝাকাতে থাকে উঠার জন্য।

কাঁদতে কাঁদতে দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, ভাইয়া আমার বোনের কি হয়েছে? কথা বলছে না কেনো ও?

দায়ান কি বলবে? সে নিজেই তো সোহাকে এমন ভাবে পড়ে থাকতে দেখে সব ভুলে বসে আছে।

নোহা পানি নিয়ে এসো বলেই দায়ানের মা দায়ানের কাছ থেকে সোহার মাথাটা নিজের কাছে নেওয়ার জন্য বলে উঠে,, দে বাবা ওকে আমার কোলে শুইয়ে দে।

নোহা ততক্ষণে পানি আনার জন্য বেরিয়ে গেছে। কথায় বলে বিপদের সময় কিছুই হাতের কাছে পাওয়ার যায় না। এক ফোটা পানি ও নেই সোহার রুমে। কাল তো মেয়েটা খায় ও নি। এসে থেকে দরজা বন্ধ করে ছিলো। তাই নোহা আর এসে বিরক্ত করে নি।দেখা ও হয়নি সোহার রুমে পানি আছে কি না।

দায়ান তার মায়ের কোলে সোহাকে দেয় না। নিজের সাথে আরেকটু ভালো করে আকড়ে ধরে রাখে।

দায়ানের মা অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকায়।

না না আম্মু ওকে আমার কাছেই থাকতে দাও। নিও না। আমার কাছে থাকবে ও আম্মু। তুমি শুধু ওরে ঠিক করে দাও আম্মু। আমার আর কিছু চাই না।

এইবার ওর কিছু হয়ে গেলে তোমাদের ছেলেও আর থাকবে না আম্মু। শেষ হয়ে যাবো আমি এইবার।

কি বলছিস কি এসব তুই দায়ান?
কি হবে ওর? সামান্য জ্ঞান হারিয়েছে। এখনই ঠিক হয়ে যাবে তেমন কিছুই হয়নি তুই যে এসব বলছিস।

তোমরা কেউ বুঝতে পারছো না। ও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্ল্যান করছে।আমি দিবো না যেতে। নিজের কাছে আটকে রাখবো।

ততক্ষণে নোহা পানি নিয়ে আসে। দায়ান সোহাকে কিছুতেই ছাড়ছে না।তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে সোহাকে দায়ানের কোলে রাখা অবস্থাতেই মুখে পানির ঝাপটা দেয়।

কিন্তু পানির ঝাপটাতে কোনোই লাভ,হয় না।

দেখেছো আম্মু ও উঠছে না। উঠবে না ও আমাকে শাস্তি দিচ্ছে।

দায়ান পা/গলামো৷ কম কর। ওকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। তুই না ডাক্তার? তুই ওকে একটু চে’ক করতে পারিস না?

আমি ডাক্তার আম্মু? হ্যা তাই তো আমিতো ডাক্তারই।কিন্তু আম্মু আমি সব ভুলে গেছি মনে হচ্ছে। আমার মাথায় কাজ করছে না। সব গুলিয়ে যাচ্ছে।

সকলেই বুঝতে পারলো সোহার এই অবস্থা দেখে দায়ান নিজের মাঝে নেই।

তাই কেউ আর দায়ানকে ঘাটায় নি।

আর দেরি করা যাবে না। সোহা মা কে নিয়ে এখনই হাসপাতালে যেতে হবে। বাড়িতে ফেলে এভাবে অযথা সময় নষ্ট করা ঠিক না।

দায়ানের বাবার কথা শুনে দায়ানের হুঁশ আসে।

হ্যা হ্যা সোহাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। তারাতাড়ি যেতে হবে। ও আমার সাথে কথা বলছে না। কথা না বললে আমি থাকবো কিভাবে?

রুশ বলে উঠে তোমরা সবাই সরো।দায়ান তুই ওকে কোলে নে।

দায়ানের বাবা বলে,,, রুশ তুই ওদের সহায়তা কর।আমি গিয়ে ড্রাইভার কে বলছি গাড়ি বের করতে।

— ঠিক আছে বড় আব্বু।

দায়ানের বাবা ছুটে যায় নিচে গাড়ি বের করার জন্য।

দায়ান উঠ তুই।সোহাকে কোলে নে চল তারাতাড়ি আর দেরি করিস না ভাই।

দায়ান রুশের কথামতো মাথা নাড়িয়ে সোহাকে কোলে নিয়ে উঠতে যায়।কিন্তু পারে না। ওর হাত কাঁপছে। সোহাকে নিয়ে উঠার যেনো ওর ক্ষমতা নেই। সব শক্তি যেন কেউ শুষে নিয়েছে। একটুও শক্তি পাচ্ছে না হাতে। কয়েক বার চেষ্টা করে ও যখন পারে না। তখন করুন চোখে সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,,,আমি পারছি না। হাত পা কাপছে। একটুও বল নেই হাতে।

এরকম বলিষ্ঠ একটা পুরুষ সোহার মতো ওজনের একটা মেয়েকে তুলতে পারছে না। দায়ানকে সকলে যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে।

রুশ বলে,,ঠিক আছে বুঝতে পারছি।আমার কাছে দে আমি নিজে নিয়ে যাচ্ছি।

দায়ান কিছু একটা ভেবে সোহাকে রুশের কোলে দেয়।

আস্তে ধরবি। ওর শরীরে যেনো ব্যাথা না পায়। আর সাবধানে সিরি দিয়ে নাম।

ভাই ও আমার বোন হয়। তুই চিন্তা করিস না আয়।

তারপর সোহাকে গাড়িতে তুলে সকলেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছোটে।

————
হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে দায়ানের স্যার সোহাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। সোহার শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়।

সকলেই বাইরে অপেক্ষা করছে। দায়ান ভিতরে এক কোণে দাড়িয়ে সোহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ডাক্তার ঘাড় ঘুরিয়ে দায়ানের দিকে তাকায়। কেমন বি’দ্ধ’স্ত দেখাচ্ছে ছেলেটা কে।

দায়ান?

উনার ডাকে কোনো সারা দেয় না দায়ান। এখনো সে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে।

আবার ডাকে,,,,, “দায়ান”

জ্বি,,, জ্বি স্যার।

কাম উইথ মি। বলেই উনি ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যান।

দায়ান আরেক বার সোহার দিকে তাকিয়ে ডাক্তারের সাথে বেরিয়ে যায়।

ডাক্তার ক্যাবিনে এসে নিজের চেয়ারে বসে। তারপর দায়ানকে চোখের ইশারায় বসতে বলে,,।

দায়ান চেয়ার টেনে বসে পরে।

উনি এক গ্লাস পানি দায়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,, এটা খাও তারপর বলছি।

দায়ান এক ঢুকে সবটুকু পানি শেষ করে। এটার খুব দরকার ছিলো তার। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে ছিলো।

ডাক্তার নিজের ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল এগিয়ে দেয় দায়ানের দিকে।

দেখো এটা ভালো করে।তোমার ওয়াইফের রিপোর্ট। যেটা কাল করিয়েছিলে আর না নিয়েই চলে গেছো। কাল থেকে তোমায় আমি কম করে হলেও ১৫ বারের উপরে কল দিয়েছি।কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ পেয়েছি।

স’রি স্যার। মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো।একটু প্রবলেম ছিলো।তাই মোবাইল চার্জ দেওয়ার কথা মাথাতে ছিলো না।

বুঝতে পারছি।এবার রিপোর্ট টা দেখো।

দায়ান রিপোর্ট টা ভালো করে দেখে। একবার দেখে দুইবার দেখে এমন করে আরো কয়েকবার দেখে। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।

রিপোর্ট থেকে চোখ সরিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকায়।

রিপোর্টে তুমি যা দেখছো তাই সঠিক। আমিও প্রথমে একটু চমকে ছিলাম। বাট এটাই সঠিক তোমার ওয়াইফের হার্টে ছিদ্র আছে।

আর যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে।আই মিন অপারেশন। এতে থার্টি ফাইভ পার্সেনট রিস্ক রয়েছে। সব নিশ্চয়ই তোমাকে ভেঙে বলতে হবে না। এজ এ ডক্টর তোমার খুব ভালো করেই জানা আছে। রি’স্ক থাকলেও অপারেশন টা করাতে হবে।

আর ওর শরীরের যা কন্ডিশন দেখলাম। এমন হলে তো আরো সমস্যা হয়ে যাবে। একেই শরীর অনেক দূর্বল। তার উপর এই যে স্যালাইনের সাথে মেডিসিন দিয়ে আসলাম তা কিন্তু শরীর ভালো করে নিচ্ছে না।

মূলত তোমার ওয়াইফ রেসপন্স করতে চাইছে না।

আমি জানি না হয়তো কোনো কারণে ওর মনের উপরে কিছু একটার প্রভাব পরেছে। মনের মাঝে হয়তো কিছু একটা কষ্ট পেয়েছে। যার জন্য সে রেসপন্স করতে চাইছে না।

এমন করলেতো হবে না। যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন টা করতে হবে। তার জন্য ওকে মানসিক আর শারীরিক ভাবে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এখন তোমাকেই কিছু একটা করতে হবে। যেনো সে রেসপন্স করে।

আরেক টা কথা অপারেশন টা কি তুমি করবে?

“আই কা’ন্ট স্যার। আমি পারবো না। আপনি করুন স্যার। আমার সোহাকে আমার কাছে সুস্থ করে যেনো পাই স্যার।

বলেই দায়ান ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়। যে করেই হোক সোহাকে তার কাছে সুস্থ হয়ে ফিরতেই হবে।

দায়ানের যাওয়ার দিকে তার স্যার এক ধ্যানে তাইকি রয়।এই ছেলে টা নিজে ডাক্তার হয়ে আপন জনের অসুস্থতায় কতোটা ভেঙে পরেছে। খুব কম ডাক্তার ই আছে যারা নিজেদের আপনজনের অসুস্থতায় নিজেকে ঠিক রাখতে পারে।
#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো_২
#পর্বঃ২৮
#Jhorna_Islam

দায়ান তার স্যারের ক্যাবিন থেকে কাঁপা কাঁপা পায়ে বেরিয়ে আসে। পা গুলো যেমন কয়েকশো গুণ ভা’রি হয়ে আছে। দৃষ্টি তার এলোমেলো।

দায়ান কে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে আসতে দেখে পরিবারের সকলেই দৌড়ে দায়ানের কাছে এগিয়ে আসে। জানতে চায় কি হয়েছে। সোহার কি অবস্থা?

সামান্য জ্ঞান হারিয়েছে তাতে কেন তাদের পরিবারের কাউকে এলাউ করছে না। আর সোহার কেনো এখনো জ্ঞান ফিরছে না।সকলেই বেশ চিন্তিত।

প্র’শ্না’ত্ত’ক দৃষ্টি দায়ানের দিকে আ’ব’দ্ধ।

দায়ান মাথা তুলে সকলের দিকে তাকায়।

সকলেই দায়ানের চেহারা দেখে আঁতকে উঠে। কেমন বি’দ্ধ’স্ত দেখাচ্ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। চোখের কোণে পানি। শুকনো ঢুক গিলে দায়ান সকলকে সোহার কন্ডিশন জানায়। সকলের মুখে এবার আধার নেমে আসে। তাদের চঞ্চল হাসি খুশি মেয়েটার একি হলো?

এই মেয়ে টা নিজের ভিতরে একটা অসুখ নিয়ে ঘুরছে আর কেউ একটু টে’র ও পেলো না।

নোহা বোনের অবস্থা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারে না। শব্দ করে কেঁদে দেয়। ফ্লোরে বসে পরে। সোহার নাম ধরে ডাকছে আর কাঁদছে। রুশ দৌড়ে নোহার কাছে যায়।

টেনে নিচ থেকে তুলে পাশের বেঞ্চে বসায়। শান্তনা দিতে থাকে। নোহা কিছুই মানছে না।তার পিচ্চি বোনের কিছু হতে পারে না।

নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে নোহার।সারাক্ষণ বোনের পাশে থেকে ও একটু টের ও পেলো না। তার বোনটার সাথে কেনো এমন হতে হলো?

সকলেরই মন খারাপ হয়ে গেলো। সোহাকে তারা খুব ভালোবাসে।এই পরিবারের সবার ছোটো সদস্য হচ্ছে সোহা। ওর পরিবারের ও ছোটো সদস্য ছিলো তাই ভালোবাসা আদর স্নেহ সব কিছু বেশি পেতো।

নোহা নিজের কান্না কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এতোদিন ধরে এতো কাছে থেকেও সে জানতে পারলো না তার কলিজার বোনটা ভালো নেই।ভিতরে ভিতরে একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এতো ব্যাথা একা একাই সহ্য করে গেছে। আজ নিজেকে বড় বোন হিসেবে ব্যর্থ মনে হচ্ছে।

সোহার বাবা মা কে ও আসতে বলা হয়েছে। উনাদের এখনো সোহার অসুস্থতার কথা যদিও জানানো হয়নি। বলা হয়েছে দরকার আছে উনারা যেনো আসে।

আসার কথা বলায় নানান ধরনের প্রশ্ন করেছে উনারা।সব ঠিক আছে কি না। কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। নোহা আর সোহা ঠিক আছে কিনা।

ওদের ইনিয়ে বিনিয়ে বলা হয়েছে উনারা যেনো আসে সব ঠিক আছে। জরুরি কাজের জন্য ডাকা হয়েছে।

উনাদের সোহার কথা কিছু বলা হয়নি কারণ,, এতদূরের পথ আসবে। যদি সোহার অবস্থা যানে তাহলে আরো ভেঙে পরবে।তাই যা জানানোর আসলেই জানানো যাবে।

উনারা ও বেরিয়ে পরেছে। স্টেশনে পৌঁছে ফোন দিবে। তারপর রুশ গিয়ে নিয়ে আসবে।

সোহার এখনো জ্ঞান ফিরার কোনো লক্ষন নেই মূলত সে চাইছে না। ভালো হতে চাইছে না।

দায়ান গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় সোহাকে রাখা ক্যাবিনের দিকে।

সোহার চোখ মুখ শুকিয়ে আছে। কেমন করে শুয়ে আছে মেয়েটা।

খুবই সাবধানে গিয়ে একটা টুল টেনে বসে পরে দায়ান সোহার পাশে। তারপর সোহার হাতে ক্যানুলা লাগানো হাতটা খুবই সাবধানে নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।খুব আলতো করে যেনো দায়ানের হাতের একটু ছোয়ায় ও ব্যাথা পাবে মেয়েটা।

চোখের সামনে সোহার দুষ্টুমি গুলো ভাসছে।গ্রামে এক সাথে ঘুরে বেড়ানো সব মনে পরছে।

হাতটা একটু কাছে এনে মাথাটা নিচু করে আলতো করে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খায়। একবার খেয়ে মন ভরে না আরো কয়েকবার খায়।

চোখ তুলে সোহার দিকে তাকিয়ে আলতো স্বরে সোহাকে ডাকে। পর পর কয়েকবার ডাক দেয়।

সোহা চোখ খুলো জা’ন আমি জানি তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো। এমন ভাবে কষ্ট দিওনা প্লিজ আমায়।

তুমি কেনো এভাবে পরে আছো? দেখো বাইরে বাড়ির সকলে কতো কষ্ট পাচ্ছে সকলে তোমার জন্য। সকলকে কষ্ট দিয়ে তোমার কি এভাবে হা’ল ছেড়ে দেওয়া উচিৎ? ওদের কথা টা একবার ভাববে না?

জানো নোহা সেই কখন থেকে কেঁদে চলেছে। সে নাকি বোন হিসেবে ব্যর্থ। তুমি উঠে ওকে বলে দাওতো। উঠে পরো আমাদের তো বাড়িতে যেতে হবে তাই না? এইবার তোমায় একটা সুন্দর জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবো ঠিক আছে?

তোমার মনে অনেক প্রশ্ন ছিলো আমাকে নিয়ে তাই না? আমি সব দূর করে দেবো।যা যা জানতে চাও সব কিছুর উত্তর দিবো আমি।

তোমাকে একদম এমন ভাবে শুয়ে থাকা মানায় না।

” আমার পাখি তো মুক্ত আকাশে ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াবে।
সারক্ষন কিচিরমিচির শব্দ তুলে চারিপাশ মুখরিত করেবে।”

সে কেনো চুপচাপ এমন করে শুয়ে থাকবে? সব পাখিকে কি বন্দি খাঁচায় মানায় নাকি? কিছু পাখি কে খোলা আকাশে উড়তে দেখতেই মনে শান্তি লাগে।তুমিতো আমার সেই উড়ন্ত পাখি।তোমাকে এভাবে মানায় না একদম মানায় না।

তুমি বলেছিলে না? আমি পরিবারের চাপে পরে তোমাকে বিয়ে করেছি? কথাটা তুমি একদম ঠিক বলোনি। আমি না চাইলে এমন কোনো মানুষ নেই যে আমাকে দিয়ে কিছু জোর করে করাতে পারবে। তাও আবার বিয়ের মতো এতো বড় একটা ব্যাপার। আমার পরিবার ও আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করাতে পারবে না আমাকে দিয়ে।

আমি জানি কাল আমি তোমাকে একা ছেড়ে অনেক বড় ভুল করেছি। তিশাকে হঠাৎ করে চোখের সামনে দেখে খেই হাড়িয়ে ফেলেছিলাম। ও কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলো না শুধু। কাজিন ও ছিলো।

ওর জন্য রাখা ভালোবাসা বুকের মাঝে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলাম ঐ দিনই যেই দিন তোমার সাথে বিয়ের জন্য হ্যা বলেছিলাম।

যদি আমি জানতাম তিশা ফিরে আসবে বেঁচে আছে তাহলে আমি কখনোই নিজের সাথে জড়াতামনা। মৃত মানুষ তো ফিরে আসে না।যদি তিশার ফিরার এক পার্সেনট ও চান্স থাকতো তাও তোমায় জড়াতাম না। কিন্তু এখন তিশা ফিরে এসেছে বলে ওর প্রতি আমার ভালোবাসা জেগে উঠবে এটা কিন্তু ভুল।

তিশা আমাকে ঠকিয়েছে বলে যে এখন তোমার প্রতি দরদ দেখাচ্ছি তা কিন্তু একদম ভুল ধারণা। এসব আমার আগে থেকেই ছিলো তোমার প্রতি শুধু দেখাইনি। দেখাতে চাই নি সঠিক সময়ের জন্য রেখে দিয়েছিলাম।

তিশা যদি আমায় না ও ঠকাতো আমি তাকে আমার লাইফে আনতাম না। তিশা আমার অতীত। আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ তুমি। তিশা হতে পারে আমার প্রথম ভালোবাসা। ঐ ভালোবাসা আমি আমার মনের এক কোণেই দাফন করে রেখেছিলাম। এখন ওকে দেখে আর তা জেগে উঠবে না।

তুমি আমার প্রয়োজন বলেছিলে তাই না? হ্যা তুমি আমার প্রয়োজন।আমার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন তুমি।
শুধু প্রয়োজন না তুমি আমার সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে আপন জন। আমার প্রিয়জন ।

আমি তোমার জন্য কতো কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। তোমাকে নিজের মনের কথা জানানোর জন্য সব ঠিক করে রেখেছিলাম। কথা গুলো বলে দায়ান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

সোহার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেকেন্ড গড়িয়ে মিনিটে যায়।কয়েক মিনির হয়ে যায়। সোহা এখনো একই ভাবে শুয়ে আছে। কোনো নড়াচড়া নেই।

দায়ান আলগোছে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সোহার বেডের উপর গিয়ে বলে। সোহার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বলে,,,,,,,,,

“আই লাভ ইউ সোহা।”
“আমি আমার এই চঞ্চল তোতা পাখি টা কে খুব ভালোবাসি।

এই তোতাপাখিটাকে ভালোবেসে তারপর ই বিয়ে করেছি।আমার নামে করেছি।তাকে আমি ঠাকাই নি।

“ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি” আমার মিষ্টি তোতাপাখি।

#চলবে,,,,,,,,,,,,

ছোটো বলে কেউ লজ্জা দিবেন না। আমি জানি ছোটো হয়ে গেছে। খুবই বি’জি আছি আমি।আশা করি বুঝবেন। কেমন হলো জানাবেন।
#চলবে,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here