তুমিময় অনুভূতি পর্ব -০৪+৫

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ৪+৫

এককাপ ধোয়া ওঠা কফি হাতে নিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।দৃষ্টি দুরের আকাশের দিকে।শরতের নীল আকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেরোচ্ছে।দুরের শিউলি গাছ সাদা ফুলে ভরে আছে।ছাদের বেলি ফুলের গাছ থেকেও অসম্ভব সুন্দর সুবাস ভেসে আসছে।এককথায় প্রকৃতি শরতের রুপে একদম পুরোপুরি সেজে উঠেছে।প্রকৃতির এমন রুপ দেখে আমার সকল রিক্ততা সিক্ততা দূর হয়ে গেছে।মনের মাঝে এক অসাধারণ ভালোলাগা বয়ে যাচ্ছে।একসপ্তাহ থেকে কলেজ যাচ্ছি না।সেদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।জ্বর, মাথা ব্যাথায় বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছিলাম না।তবে বাসার সবাইকে বলে দিয়েছিলাম আমার অসুস্থতার কথা যেনো কারো কানে না যায়।আর কেউ যদি জানতে পারে তাহলে আমি বাসা থেকে চলে যাবো।যার দরুন মা কাউকে জানায় নি আমার কথা।ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছি।প্রকৃতি নিয়ে মনে মনে গবেষনা করতে করতে অনুভব করলাম আমার পাশে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি শুভ্র ভাই।

“শুভ্র ভাই কেমন আছো?কখন এলে?”

“এইতো।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।কিন্তু আজ তুই আর ভালো থাকবি না বোন।আজ তোর ২৫ টা বাজাবে অভ্র।”

শুভ্র ভাইয়ের কথার মানে না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম তার দিকে। কি বলতে চাইছে উনি?অভ্র ভাইয়ের নামটা শুনতেই আবার সেদিনের করা অপমানের কথা মনে এলো।আমি চোয়াল শক্ত করে কিছু একটা বলতে যাবো আর আগেই অভ্র ভাইয়ের আওয়াজ কর্ণপাত হলো,

“শুভ্র তুই এখানে কি করিস।নিচে গিয়ে দেখ ফুপি তোর পছন্দের পাটিসাপটা পিঠা বানিয়েছে।তোকে খেতে ডাকছে ”

পাটিসাপটা পিঠার নামটা শুনেই শুভ্র ভাই লাফিয়ে উঠলেন।এই পিঠা ওনার মারাত্মক পছন্দের।উনি তাড়াতাড়ি করে ছাদ থেকে নেমে গেলেন পিঠা খাওয়ার জন্যে।এখন ছাদের আমি আর অভ্র ভাই।ওনার দিকে একপলক তাকালাম।কিন্তু ওনার দৃষ্টি সেই শিউলি গাছের দিকে।ওনার দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কাপ হাতে নিয়ে ছাদ থেকে নামার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

“মেঘ।”

অভ্র ভাইয়ের ডাক শুনে থমকে দাড়ালাম।ওনার কন্ঠস্বর বেশ গম্ভীর।আমি পিছন ফিরে ওনার দিকে তাকালাম।কিন্তু উনি আগের মতোই নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে শিউলি গাছ পর্যবেক্ষণ করছেন।আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি সেখানে।উনি বেশ কিছু সেকেন্ড পর ঘুরে তাকালেন আমার দিকে।

“কারো উপর রাগ করে নিজের ক্ষতি করাটা বোকামি এটা কি তুই জানিস মেঘ?আমার উপর রাগ করে তুই এতোবড় একটা কান্ড ঘটালি।সিরিয়াসলি তুই কি অবুঝ শিশু যে এটা বুঝিস না।কিভাবে তুই জ্বর বাধালি একটু বলবি আমাকে?না মানে আমিও ট্রিকসটা শিখে রাখতাম।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।তার কণ্ঠে রাগ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি।কিন্তু তিনি যথেষ্ট কন্ট্রোল করে আমাকে কথাগুলো বলছেন।তার এমন কথা শুনে আমার যে কি হলো আমি জানি না আমি এমন একটা কথা বলে উঠলাম যা শুনে অভ্র ভাই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

“আমি আপনাকে ভালোবাসি অভ্র ভাই।”

“মেঘ তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?কি বলছিস এসব তোর কোনো ধারণা আছে।আমি তোকে সবসময় আমার ছোট বোন ভাবতাম মেঘ।এসব পাগলামি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়াশোনায় মনোযোগ দে।প্রেম ভালোবাসার আরো সময় আছে আগে নিজের ক্যারিয়ার গড় এরপর দেখবি আমার থেকেও ভালো কাউকে পেয়ে যাবি।এসব আর মাথায় আনবি না ঠিক আছে? ”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমার হুশ এলো আমি কি বলেছি তাকে।আমি যে তার উপরে রাগ হয়ে ছিলাম এটা আমার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।আর আমি তাকে আমার মনের কথা বলে দিয়েছি।এখন চাইলেও আমি তাকে আর রাগ দেখাতে পারছি না।তবে ভিতরে ভিতরে আমি রাগে ফুসছি।অবশেষে রাগ,লজ্জা,ভয়,সব কিন্তু একসাথে কান্না হয়ে ঝড়ে পড়লো দুই আঁখি হতে।তবে একটা বিষয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম।অন্য কেউ যদি এখানে থাকতো অভ্র ভাই তাকে কষিয়ে একটা থাপ্পর লাগাতো।কিন্তু আমাকে উনি শান্ত ভাবে বুঝাচ্ছেন। তবে এসবে তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম না।আমি তাড়াতাড়ি অভ্র ভাইকে সরি বলে ছাদ থেকে দৌড়ে নেমে গেলাম।

রাতে ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি ওরা ৪ জন আজও আড্ডা দিচ্ছে।আমি ভেবেছিলাম শুভ্র ভাই আর অভ্র ভাই চলে গিয়েছেন।কিন্তু এখনো আছে দেখে চলে যেতে নিলেই ভাইয়া আমাকে ডাক দিলেন,

“পিচ্চি কি হয়েছে।এসেই চলে যাচ্ছিস কেনো?আয় বস।সবাই মিলে আড্ডা দেই কিছুক্ষন।”ভাইয়ার কথা শুনে পিছন ফিরলাম।ভাইয়া পিছিয়ে গিয়ে বিছানায় আমার জন্যে জায়গা করে দিলেন।আমি বসতেই ভাইয়া আমাকে বললেন,

” কিছু বলবি তুই?”

আমি ইতস্তত করে মাথা নিচু করে ভাইয়াকে বললাম
“ভাইয়া আমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে যাবে?ওখানে অনেক সুন্দর কাশফুল হয়েছে।ফেসবুকে সবাই কাশফুলের সাথে পিক দিচ্ছে।আমি তো যেতেই পারলাম না।তাই পিক ও দিতে পারলাম না।প্লিজ ভাইয়া নিয়ে যাবে।”

আমার কথা শুনে ভাইয়া আর শুভ্র ভাইয়া হাসলো।কিন্তু অভ্র ভাই রেগে গেলেন।উনি রেগে আমাকে বললেন,

“তোর কিসের এতো ফেসবুকে পিক আপলোড দেয়া লাগবে?হ্যাঁ। পড়াশোনা নেই সারাদিন ফেসবুক দাড়া ফুপিকে আজ বলবো যে তোর ফোন নিয়ে নিতে।পড়াশোনার নাম নেই।ক্লাস থেকে বের করে দেয় ওনাকে স্যার আর উনি পড়ে আছেন কাশফুল নিয়ে।”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আপুও তার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

“ঠিকই তো মেঘা। এতো ট্রেন্ড মেনে চলতে হবে না তোকে।আগে পড়াশোনা কর মনোযোগ দিয়ে।”

আপুর কথা শুনে আমি মন খারাপ করে ফেললাম।মুখ কালো করে উঠে বেরিয়ে এলাম ভাইয়ার রুম থেকে।পিছন থেকে ভাইয়া ডেকেছিলো কিন্তু আমি আর সেদিকে যাই ফিরেও তাকাই নি।কিন্তু রুমের বাহির থেকে শুনলাম ভাইয়া আপু আর অভ্র ভাইকে বকছে।

শুক্রবার নামাজ শেষে খাওয়ার পর ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলা।এমন সময় ভাইয়া আমার রুমে এসে তাড়া দিয়ে রেডি হতে বললো।আমি কেনো জিজ্ঞেস করলে বললেন কি নাকি দরকার আছে আমাকে যেতে হবে তাই রেডি হতে বলছে।ভাইয়া আর আপুর মাঝে আমি ভাইয়াকেই বেশি ভালোবাসি।কারন আপু বজ্জাত একটা মেয়ে।সবসময় সে আমার সাথে রাগ দেখায়।কিছু একটা বললে এমন চোখ রাঙানি দিবে যে দ্বিতীয় বার আমি আর সেদিকে তাকাই না।মাঝে মাঝে ভাবি রিয়াদ ভাইয়া কিভাবে আপুকে বিয়ে করার জন্যে রাজি হলো।বিয়ের পর ভাইয়ার জীবনটা যে তেজপাতা হবে এটা আমি শিওর।ভাইয়ার কথামতো ভদ্র মানুষের মতো রেডি হয়ে নিলাম।ভাইয়ার সাথে বাইকে উঠে চললাম গন্তব্যে।

ভাইয়া আমাকে আমার বলা সেই নদীর পাড়ে নিয়ে এসেছে।যা দেখে আমার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক উপচে পড়ছে। ভাইয়া ও আমার খুশি দেখে খুব খুশি।

“পিচ্চি মন ভালো হয়েছে?এইবার খুশি তো?ইশশ অভ্র আর বৃষ্টি মিলে আমার পিচ্চির মনটাই খারাপ করে দিয়েছিলো।আজ ফ্রি আছি তাই ভাবলাম তোর আবদারটা পুরন করে ফেলি।তো বল কেমন লাগলো সারপ্রাইজ।”

“এত্তোগুলা থ্যাংকস ভাইয়া।খুব খুশি হয়েছি জানো।আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি এখানে এসেছি।লাভ ইউ ভাইয়া।”

বলে আমি দৌড়ে কাশফুল গুলোর কাছে গেলাম।ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলে নিয়ে দেখি ভাইয়া আমার ছবি তুলছে তাই আমার ফোন রেখে ভাইয়ার ফোনে পিক তুলতে শুরু করলাম।ছবি তুলছি এমন সময় দেখি আমার কাজিন গ্রুপ দলবেঁধে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।সবাইকে দেখে আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম।নিরা আপু দৌড়ে এসে আমাকে বললো,

“মেঘা একা ছবি তুলছিস?আমাকেও নে।”

“না আমি আর ছবি তুলবো না।তোমরা একা তোলো।বলে আমি সেখান থেকে সরে ভাইয়ার কাছে এসে বললাম,

” ভাইয়া অনেক ছবি তুলেছি।এখন চলো বাসায় যাই।”

“এতো তাড়া কিসের।সবাই এসেছে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে তারপর যাই।”

ভাইয়ার কথার বিপরীতে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভাইয়া কাজিনদের সাথে মিলিত হলো।আমি তাই ভাইয়ার বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে ছবি গুলো দেখতে লাগলাম আর ঠিক করলাম কোন কোন ছবি ফেসবুকে দিবো।ওদের কাছে আমি যাবো না।তার কারন সেখানে অভ্র ভাই আর আপু আছে।

“মেঘ এখানে কি করছিস?সবাই ওদিকে আড্ডা দিচ্ছে আর তুই একা দাঁড়িয়ে আছিস।চল ওদিকে।”

অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে আমি সেদিকে তাকালাম।উনি আজ পাঞ্জাবি পড়েছে।হলুদ রঙের পাঞ্জাবি। হলুদ রংটাতে অভ্র ভাইকে বেশ লাগে দেখতে। ব্যক্তিগত ভাবে হলুদ রংটা আমার পছন্দ না।কিন্তু অভ্র ভাই পড়লে সেটা অন্য বিষয়।খেয়াল করলাম অভ্র ভাইয়ের হাতে ক্যামেরা।দেখেই বুঝলাম এটা ওনার।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র ভাই বললেন,

“মেঘ ছবি উঠাবি?”

অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে আমার তো মেঘ না চাইতেই জলের মতো কাহিনী।খুশি হলেও একটু ভাব নিয়ে ওনাকে বললাম,

“না আমি ছবি তুলবো না।আমি অনেক ছবি তুলেছি ভাইয়ার ফোনে।আমার ফোনে।আপনার ক্যামেরায় ছবি আমি তুলতে একদম ইন্টারেস্টেড নই।এখন ছবি তুলে দিয়ে পরে খোটা দিবেন।আমি তো আর সেলিব্রিটি নই।আপনারা সেলিব্রিটি আপনারাই ক্যামেরায় ছবি তুলুন। ”

বলে আমি কাশফুল গুলোর দিকে হেটে গেলাম।অভ্র ভাইকে জবাব দিয়ে এখন মনে শান্তি লাগছে। পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে দেখি অভ্র ভাই ছবি তুলছেন আমার।আমি সেদিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার এসব কর্মকাণ্ড দেখে আমি বেশ অবাক।কথা শুনালাম এরপরও উনি রাগ করছেন না।এটা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।আমাকে এভাবে দেখে উনি আমাকে বললেন,

“মেঘ স্মাইল।”

(চলবে)

(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে পড়ার জন্যে)

#তুমিময়_অনুভূতি
#আয়েশা_ইসলাম
পর্বঃ৫

সামনে আপুর বিয়ে।রিয়াদ ভাইয়ার বাবা-মা কাল এসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে গেছেন।পরের মাসে বিয়ে।শুনেছি থেকে তো আমি বার বার আপুর সামনে গিয়ে বলছি,”আপু আর এক মাস এরপর তুমি এই বাড়ি থেকে বিদায় নিবা।আহ কি শান্তি।আপু চোখ রাঙানি দিলে দৌড়ে পালাচ্ছি।আবার কিছুক্ষন পর গিয়ে বলছি।”

অভ্র ভাইয়ার সাথে ১৫ দিন থেকে কথা বলি না।ওনাকে ইগনোর করে চলছি।দেখা হলেও তার সাথে কথা বলছি না। কলেজে দেখা হলে সাইড দিয়ে চলে আসি একবার ঘুরেও তাকাই না।তবে এটা খেয়াল করি যে উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।মামা-বাসায় আজ আমাদের যেতে বলেছে। কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি যে আমি যাবো না।মা আর আপু বেশ বকাবকি করলো।কিন্তু আমি না ছাড়া হ্যাঁ বলি নি।সন্ধ্যার দিকে সবাই চলে গেছে আমাকে রেখে।বাসায় আমি একা।তাই দরজা বন্ধ করে ফোনে মুভি দেখছি।ঘন্টাখানেক পর কলিংবেল বেজে উঠলো।এতো তাড়াতাড়ি তো বাড়ির কেউ আসবে না।তাই একটু ভয় লাগতে শুরু করলো।দরজার সামনে গিয়ে আবার ফিরে এলাম।ভাইয়াকে ফোন দেয়ার জন্যে ফোন হাতে নিয়ে দেখি অভ্র ভাই মিসড কল দিয়েছেন।আমি ফোন হাতে নিতেই আবার তার নাম্বার থেকে কল এলো।তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম।ভয়ে এটা ভুলে গেলাম যে তার সাথে আমি কথা বলি না।

“মেঘ কি সমস্যা তোর?কতক্ষন থেকে বেল দিচ্ছি।কানে শুনিস না।ফোন ও রিসিভ করছিস না।তাড়াতাড়ি দরজা খোল।ইডিয়ট। ”

অভ্র ভাইয়ের কথা শুনে ভয় দূর হয়ে গেলো আমার।নিশ্চিন্ত হলাম যে উনি এসেছেন।ফোন কানে নিয়েই গেলাম দরজার কাছে।দরজা খুলে দেখি একহাতে ফোন কানে নিয়ে আরেক হাত পকেটে রেখে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।আমাকে দেখে মুচকি হেসে ফোন কেটে পকেটে রেখে বললেন,

“ঢুকতে দিবি না?বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবো?”

“আপনি এখানে কেনো অভ্র ভাই?ভাইয়া বাসায় নেই আপনাদের বাসায় গিয়েছে।আপনি এখন আসতে পারেন।”

“কে তোকে বললো যে আমিবাকাশ ভাইয়ের কাছে এসেছি।আমি আমার ফুপির বাসায় এসেছি তোর এতে কোনো সমস্যা আছে?”

“হ্যা আছে কারন এখন বাসায় কেউ নেই।”

“তাহলে তুই কি মেঘের ভুত?”

অভ্র ভাইয়ের রসিকতা শুনে আমার বেশ বিরক্ত লাগলো।আমি দরজা ছেড়ে দিয়ে ভিতরে চলে এলাম।এই মুহুর্তে এই অভ্র ভাইকে আমার বেশ বিরক্ত লাগছে কারন উনার জন্যে আমার মুভি অর্ধেক দেখা হয়েছে।আর আমার মুভি দেখার মাঝে কেউ বিরক্ত করলে তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।তাই আমি মুভি দেখি রাত ১১ টার পর।উনি ঢুকতে ঢুকতে আমাকে বললেন,

“মেঘ আমাকে এক গ্লাস শরবত বানিয়ে দে তো। ”

উনার কথা শুনে আমি চোখ বড়বড় করে তাকালাম।কারন উনি শরবত খান না।আর সেই মানুষ আমার কাছে শরবত খেতে চাচ্ছেন।

“অভ্র ভাই আপনি শরবত খাবেন?”

“হুম।যা যা তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়।”

আমি ওনার দিকে একবার সুক্ষ্মদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম। ফ্রিজ থেকে পানি নিয়ে শরবত করে নিয়ে গেলাম ওনার কাছে।আমাকে আসতে দেখে উনি ফোন পকেটে রাখলেন।আমি গ্লাস এগিয়ে দিতেই উনি ভ্রু কুচকে আমাকে বললেন,

“খেয়ে নে তাড়াতাড়ি। তোকে এখন আমি একটা কাজ করাবো যার জন্যে তোর এনার্জির দরকার আছে। তাই চট করে শরবত টা খেয়ে নে।”

উনার কথায় আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম।কি বলছেন উনি।আমাকে দিয়ে কি কাজ করাবেন উনি যে যার জন্যে আবার এনার্জির দরকার।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকিতে দেখে উনি বললেন,

“খাচ্ছিস না কেন মেঘ?শরবতে কি কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলি নাকি যাতে আমি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবো আর তুই আমাকে তুলে নিয়ে যেয়ে বিয়ে করবি।ভালোবাসি ভালোবাসি করিস যে সারাক্ষন।ওহ মাই গড মেঘ তুই এসব প্ল্যান করে রেখেছিস?ছিহ মেঘ ছিহ।তোর থেকে আমি এটা এক্সপেক্ট করি নি।একা আমাকে পেয়ে এসব প্ল্যান করছিস?”

উনার কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।কিসব বকে যাচ্ছেন উনি?এগুলো তো কল্পনাতেও আমার মাথায় আসে নি।আর উনি।

“অভ্র ভাই আপনার মেন্টালিটি এমন কেনো বলবেন আমাকে?আমি খারাপ আমি জানি।তাই বলে এতো টাও না যে কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে জোর করে বিয়ে করবো।দেখুন আপনাকে আমি ভালোবাসি ঠিক আছে।কিন্তু আমি আপনাকে জোর করেছি কখনো যে অভ্র ভাই আপনার আমাকে ভালোবাসতেই হবে।নাকি আমি ভালোবাসি ভালোবাসি বলে আপনার পিছনে দৌড়ে বেড়িয়েছি?করি নি তো এমন?তাহলে কেনো আপনার মনে হলো যে আমি এমন করবো।আমি সবসময় একটা কথায় বিশ্বাসী অভ্র ভাই ভালোবাসলে তাকে বেধে রাখতে নেই।পাখির মতো মুক্ত আকাশে উড়তে দিতে হয়।যদি সে দিনশেষে আমার কাছে ফিরে আসে তবে সে আমার সত্যিকারের ভালোবাসা।আর দিনশেষে যদি সে আমার কাছে ফিরে না আসে তাহলে সে আমার ভালোবাসা নয়।সে আমার ভালোলাগা।আর কথা শরবতের কিছু মেশাই নি আমি এই নিন প্রমান।”

বলে এক গ্লাস শরবত ঢকঢক করে পান করলাম এক চুমুকেই।এরপর ওনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

“দেখুন আমি ঠিক আছি একদম।আর হ্যা কি কাজ আছে বলুন আমি করে দিচ্ছি তাড়াতাড়ি এরপর আপনি বিদায় হোন।”

“তুই আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতে চাইছিস মেঘ।কিন্তু তোর আশা আমি পূরন করতে পারছি না সরি।এই বাড়িতে আমার অতি মুল্যবান এক সম্পদ আছে।সেটার জন্যে হলেও আমাকে এখানে আসতেই হবে।আর কাজ থাক।বাদ দে।যা রেডি হয়ে আয়।মা তোকে নিতে পাঠিয়েছে না যেতে চাইলে জোর করে নিয়ে যেতে বলেছে। তো তুই যদি ভালোয় ভালোয় আসিস আমার সাথে তো ভালো নাহলে আমি জোর করতে বাধ্য হবো।কিন্তু এটা তোর জন্যে মোটেও ভালো হবে না। সো যা রেডি হয়ে আয় ভালো মানুষের মতো।”

“অভ্র ভাই আমি যাবো না আপনাদের বাসায়।আপনি আসতে পারেন।”

“জোর করতে বাধ্য করিস না মেঘ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।”

এইবার কথাটা উনি বেশ রেগেই বললেন।রাগ দেখে ভয়ে আমি আমার রুমে চলে গেলাম।আমাকে রুমে যেতে দেখে উনি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকি বললেন ১০ মিনিট সময় দিলাম এর মাঝে বেড়িয়ে না এলে দরজা ভেঙে ফেলবো বলে দিলাম।উনার ভয়ে আর জেদ ধরে না থেকে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেড়িয়ে এলাম।আমাকে বেরোতে দেখে উনি উঠে দাড়ালেন।আমার পা থেকে মাথা অব্দি একবার দেখে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলেন।অনার পিছু পিছু আমিও দরজায় তালা দিয়ে বাইরে এলাম।বাইক স্টার্ট দিয়ে আমকে উঠতে বললে আমি ওনার পিছনে উঠে বসে চললাম মামা বাড়ির উদ্দেশ্যে।

মামি আমাকে দেখে আমার কাছে প্রায় দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,

“মেঘা তুই কি আমাদের উপর রেগে আছিস?আসতে চাইছিলি না কেনো?কেউ তোকে কিছু বলেছে মা?অভ্র শুভ্র কিছু বলেছে?কে বলেছে বল তো মা তার কানটা টেনে আজ ছিড়েই দিবো।”

মামির আদুরে কথা শুনে আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম।আর মামির গালে চুমু দিয়ে বললাম,

“না গো মামি কেউ কিছু বলে নি।এমনিতেই আসি নি।”

“ওহ।মামিকে তাহলে ভুলে গেছেন দেখছি।ঠিক আছে আসতে হবে না।যান আপনি চলে যান।অভ্র ওনাকে দিয়ে আয়। আমাদের বাসায় আসতে ওনার ভালো লাগে না।”

মামি অভিমানের সুরে কথাগুলো বললেন।আমি যে অভ্র ভাইয়ের জন্যে আসতে চাই নি সেটা এখানে বলা যাবে না।তাই এমনি বললাম কিন্তু এতে মামি হার্ট হবে সেটা ভাবি নি।মামিকে জড়িয়ে ধরে আদুরে স্বরে বললাম,

“মামি রাগ করছো কেনো। জানো আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে।বিকেলে তোমার ননদ কিছু খেতে দেয় নি।এখন তুমিও খেতে দিবা না।ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি।”

বলে মামিকে ছেড়ে দিতেই মামি হেসে দিয়ে বললেন,

“খুব ফাজিল হয়েছিস দেখছি মেঘা।তোকে দেখি বৃষ্টির আগে বিয়ে দিয়ে দিতে হয়।”

মামির কথার উত্তর না দিয়ে তাকে তাড়া দিলাম খাবার খেতে দেয়ার জন্যে কারন কথা বেশি বললে কথা বাড়বে।আর কথায় কথায় যদি আমার মুখ থেকে অভ্র ভাইয়ের কথা বেরিয়ে যায় তাহলে বিপদে পড়তে হবে।তাই কথা কাটিয়ে দিলাম।

(চলবে)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here