#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৪তম_পর্ব
মেয়েটা হুট করে রুমে প্রবেশ করে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।চারুর ইচ্ছা করতেছে মেয়েটাকে কষে থাপ্পর মারতে।কিন্তু বড় হওয়ার খাতিরে থাপ্পরটা মারতে পারলো না।মেয়েটা আর কেউ না আদনাননের ফুফাতো বোন তিনা।চারু দৌড়ে গিয়ে আদনানকে তিনার কাছ থেকে টেনে নেয়।তারপর তিনাকে হাসি মুখে বলে,
—‘ আপু তুমি কেমন আছো? ‘
এভাবে আদনানকে ছাড়িয়ে নেওয়া মোটেও পছন্দ হয়নি তিনার,সেটা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তবুএ চারুর কথার উত্তর দেয় সে।এদিকে তিনা কি মনে করেছে আর কি মনে করেনি সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নাই চারুর।সে তিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ আপু তুমি বাহিরে অপেক্ষা করো আমরা সব গুছিয়ে নিয়ে একেবারে যাই ‘
চারুর এই কথাটায় প্রচন্ড রেগে যায় তিনা।জলন্ত চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি কে হে?আমাকে ঘর থেকে বের হতে বলছো ‘
তিনার কথার উত্তর চারু হাসি মুখেই দেয়।সে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—‘ ওনার বউ।তুমি বাহিরে বসো আমরা আসতেছি।আর যদি বাহিরে যেতে না চাও,তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব ‘এই কথাটা খানিকটা চিল্লিয়েই বলে চারু।
চারুর কথায় খানিকটা হলেও ভরকে যায় তিনা।আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা রুম থেকে বের হতে ধরে।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিমি।সে এতক্ষন সব কিছু দেখছিল আর হাসতেছিল।সেও চলে যায় সেখান থেকে।
সবাই বের হয়ে গেলে চারু খুব জোরে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।আদনান চুপ করে বসে পড়ে সোফায়।চারু রাগি চোখে তাকায় আদনানের দিকে সাথে এক পা-দু পা করে এগোতে থাকে তার দিকে।আদনান এখনো চুপ হয়ে বসে আছে।
চারু গিয়ে আদনানের পাশে বসে পড়ে।তারপর আদনানের মাথার চুলগুলো টেনে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,
—‘ খুব শখ,নিজের বউকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করার। ‘
চারুর কথায় আদনান কোনো উত্তর না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকায়।সে বুঝতে পারছে না তার দোষটা কোথায়।তিনা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো বলেই তো সেও জড়িয়ে ধরলো।আদনানের এরকম তাকানো দেখে চারুর প্রচন্ড হাসি পায়।কিন্তু সেই হাসিটাকে গোপন করে মুখে রাগি ভাবটা ধরে রেখে বলে,
—‘ এটাই লাষ্ট,আরেকবার যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকানো বা ঢলাঢলি করছো তাহলে সোজা নিত্তিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেব ‘
নিত্তিয়ার কথা শুনে ঝট করে আদনান চারুর দিকে তাকায়।তারপর তারাতারি বসা থেকে উঠে পড়ে সে।এক ছো দিয়ে টেবিলের উপর থেকে নীল ডায়েরীটা তুলে নেয়।তারপর রওনা হয় ব্যালকনির দিকে।হঠাৎ আদনানের এমন ব্যবহারে খানিকটা ভরকে যায় চারু।সেও আদনানের পিছন পিছন ব্যালকনিতে যায়।আদনান ইজি চেয়ারটায় বসে আছে।চারু কোনো কথা না বলে আদনানের কোলে বসে।সে আদনানের চোখে পানি দেখে খানিকটা চমকে ওঠে কিন্তু পরবর্তিতে আবার রেগেও যায়।
সে ছো মেরে আদনানের কাছ থেকে নীল ডায়েরীটা নিজের দখলে করে নেয়।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে পানি,মুখ দিয়ে কোনো কথা বলছে না।চারু আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে নিজের ঠোট দুটো মিশিয়ে দেয় আদনানের ঠোটের সাথে।আজকে আদনানও রেসপন্স করছে।চারু খুশিতে দুইহাত দিয়ে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।আদনান তার হাত দুটো এগিয়ে দিতে চেয়েও দেয় না।সে নিত্তিয়ার সবগুণই চারুর মাঝে খুঁজে পেয়েছে শুধু মাত্র একটা ছাড়া।কি সেটা..
২২.
‘ আদনান-চারু,তোমাদের দুজনের সাথে তিনাও ঢাকা যেতে চাচ্ছে।তোমাদের কি মত? ‘
হালিম সাহেবের এই কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় চারু।তবুও মুখে হাসি ভাব রেখে বলে,
—‘ খালু,তিনা আপুর কি কাজ ঢাকায় গিয়ে? ‘
হালিম সাহেবকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনা বলে ওঠে,
—‘ আমার খুব ইমপর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে ঢাকায়।কালকের মধ্যে যেতে না পারলে শেষ।প্লেনেরও টিকেট পাইনি। ‘
চারু এক এক করে রাহিনা বেগম,রিমি ও আদনানের দিকে তাকায়।আদনান বাদে সবার মুখেই অস্বস্তি।চারু তার মুখের হাসিটা মুখেই রেখে বলে,
—‘ কিন্তু আপু আমাদেরতো ঢাকা পৌছাতে সাতদিন লাগবে।ঢাকা যাওয়ার পথে আমরা অনেককিছু ঘুরে দেখবো।অনেক জায়গায় থাকবো।কি বলেন আপনি? ‘
এই বলে আদনানের দিকে তাকায় চারু।আদনান না বলার জন্য মুখ খুলতেই চারু পা দিয়ে আদনানের পায়ে খুব জোড়ে একটা পাড়া দেয়।আদনান না বলতে গিয়েও হা বলে দেয়।আদনানের হ্যা শুনে হালিম সাহেব তিনার দিকে তাকিয়ে বলেন,
—‘ ওদের সাথে তাহলে তোমার যাওয়া হবে না মা।আচ্ছা তুমি চিন্তা করিওনা আমি এখনি প্লেনের টিকেট ম্যানেজ করছি। ‘
তিনা আর কোনো কথা না বলে সাইট ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নেয়।তারপর রওনা দেয় গেটের উদ্দেশ্যে।যাওয়ার সময় পিছনে না তাকিয়ে বলে,
—‘ তোমরা সবাই অনেক স্বার্থপর ‘
তার কথায় মনে মনে হেসে ওঠে রিমি ও চারু।চারু এবার নিজের ল্যাগেজটা নিয়ে হালিম সাহেবকে সালাম করে তারপর রাহিনা বেগমকে সালাম করে।সবার শেষে সে রিমিকে জড়িয়ে ধরে।রিমিও চারুকে জড়িয়ে ধরে চারু গালে চুমু খায়।
বাসার সবাই তাদের এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত আসে।সবার অনুমতি নিয়ে গাড়িতে প্রবেশ করে আদনান আর চারু।আদনান গাড়ি চালাতে শুরু করে।চারু জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাহিরের দৃশ্য দেখতে শুরু করে।
২৩.
‘ সিটবেল্টটা বাধ না চারু,নাহলে সমস্যা হতে পারে। ‘
আদনানের কথা শুনে খানিকটা রেগে যায় চারু।চোখ রাঙ্গিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি জানো আমি সিটবেল্ট বাধতে পারিনা তারপরেও কেন বাধতে বলো।আমি পারবো না।দরকার হলে তুমি বেধে যায়! ‘
শেষ পর্যন্ত আদনান আর কোনো উপায় না পেয়ে চারু দিকে ঝুকে তার সিট বেল্টটা লাগাতে শুরু করে।চারু নিশ্চুপ হয়ে আদনানকে দেখছে।আদনান সামনের দিকে তাকিয়ে সিটবেল্টটা বাধতে থাকে।
সিটবেল্ট বাধা শেষ হওয়ার সাথে সাথে চারু আদনানকে নিজের দিকে করে নেয়।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।
আদনান চারুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।চারুও আদনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাহিরে প্রকৃতি দেখায় ব্যাস্ত হয়।গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে।আদনান মাঝে মাঝে চারুর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে ব্যাপারটা চারুর নজর এড়ায় না।আদনান যখনি তার দিকে তাকায় সে চোখ মেরে দেয়।
একপর্যায়ে চারু আদনানের কাধের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।আদনান চারুর মাথা সড়িয়ে না দিয়ে ওই অবস্থায় গাড়ি চালাতে থাকে।আদনান আড় চোখে চারুর দিকে তাকাচ্ছে ঘনঘন।কিছুক্ষনের জন্যে হলেও তার মনে হচ্ছে নিত্তিয়া যেন তার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে।চারু আর নিত্তিয়ার মধ্যে ৯৫℅ মিল খুজে পায় আদনান।কিন্তু বাকি ৫℅ খুজে পায়।কোনো একটা ঘাটতি আছে চারুর মাঝে যা নিত্তিয়ার ছিল না।আদনান গাড়িটা থামিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তার মনে হচ্ছে এটা নিত্তিয়াই।চারু নিত্তিয়ার মতো নীল শাড়ি লাল লিপষ্টিক পড়েছে।
হঠাৎ চোখ খুলে ফেলে চারু।আদনানকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড খুশি হয় সে।মুহুর্তের মধ্যে খুশিটা মিলিয়ে যায়।পিছন থেকে একটা লোক লাঠি দিয়ে আদনানের গাড়িটাতে একটা বারি মারে.
#তৃণশয্যা
#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৪তম_পর্ব
মেয়েটা হুট করে রুমে প্রবেশ করে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।চারুর ইচ্ছা করতেছে মেয়েটাকে কষে থাপ্পর মারতে।কিন্তু বড় হওয়ার খাতিরে থাপ্পরটা মারতে পারলো না।মেয়েটা আর কেউ না আদনাননের ফুফাতো বোন তিনা।চারু দৌড়ে গিয়ে আদনানকে তিনার কাছ থেকে টেনে নেয়।তারপর তিনাকে হাসি মুখে বলে,
—‘ আপু তুমি কেমন আছো? ‘
এভাবে আদনানকে ছাড়িয়ে নেওয়া মোটেও পছন্দ হয়নি তিনার,সেটা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তবুএ চারুর কথার উত্তর দেয় সে।এদিকে তিনা কি মনে করেছে আর কি মনে করেনি সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নাই চারুর।সে তিনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ আপু তুমি বাহিরে অপেক্ষা করো আমরা সব গুছিয়ে নিয়ে একেবারে যাই ‘
চারুর এই কথাটায় প্রচন্ড রেগে যায় তিনা।জলন্ত চোখে চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি কে হে?আমাকে ঘর থেকে বের হতে বলছো ‘
তিনার কথার উত্তর চারু হাসি মুখেই দেয়।সে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—‘ ওনার বউ।তুমি বাহিরে বসো আমরা আসতেছি।আর যদি বাহিরে যেতে না চাও,তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব ‘এই কথাটা খানিকটা চিল্লিয়েই বলে চারু।
চারুর কথায় খানিকটা হলেও ভরকে যায় তিনা।আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা রুম থেকে বের হতে ধরে।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিমি।সে এতক্ষন সব কিছু দেখছিল আর হাসতেছিল।সেও চলে যায় সেখান থেকে।
সবাই বের হয়ে গেলে চারু খুব জোরে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।আদনান চুপ করে বসে পড়ে সোফায়।চারু রাগি চোখে তাকায় আদনানের দিকে সাথে এক পা-দু পা করে এগোতে থাকে তার দিকে।আদনান এখনো চুপ হয়ে বসে আছে।
চারু গিয়ে আদনানের পাশে বসে পড়ে।তারপর আদনানের মাথার চুলগুলো টেনে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,
—‘ খুব শখ,নিজের বউকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করার। ‘
চারুর কথায় আদনান কোনো উত্তর না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকায়।সে বুঝতে পারছে না তার দোষটা কোথায়।তিনা এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো বলেই তো সেও জড়িয়ে ধরলো।আদনানের এরকম তাকানো দেখে চারুর প্রচন্ড হাসি পায়।কিন্তু সেই হাসিটাকে গোপন করে মুখে রাগি ভাবটা ধরে রেখে বলে,
—‘ এটাই লাষ্ট,আরেকবার যদি কোনো মেয়ের দিকে তাকানো বা ঢলাঢলি করছো তাহলে সোজা নিত্তিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেব ‘
নিত্তিয়ার কথা শুনে ঝট করে আদনান চারুর দিকে তাকায়।তারপর তারাতারি বসা থেকে উঠে পড়ে সে।এক ছো দিয়ে টেবিলের উপর থেকে নীল ডায়েরীটা তুলে নেয়।তারপর রওনা হয় ব্যালকনির দিকে।হঠাৎ আদনানের এমন ব্যবহারে খানিকটা ভরকে যায় চারু।সেও আদনানের পিছন পিছন ব্যালকনিতে যায়।আদনান ইজি চেয়ারটায় বসে আছে।চারু কোনো কথা না বলে আদনানের কোলে বসে।সে আদনানের চোখে পানি দেখে খানিকটা চমকে ওঠে কিন্তু পরবর্তিতে আবার রেগেও যায়।
সে ছো মেরে আদনানের কাছ থেকে নীল ডায়েরীটা নিজের দখলে করে নেয়।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আছে।চোখে পানি,মুখ দিয়ে কোনো কথা বলছে না।চারু আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে নিজের ঠোট দুটো মিশিয়ে দেয় আদনানের ঠোটের সাথে।আজকে আদনানও রেসপন্স করছে।চারু খুশিতে দুইহাত দিয়ে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।আদনান তার হাত দুটো এগিয়ে দিতে চেয়েও দেয় না।সে নিত্তিয়ার সবগুণই চারুর মাঝে খুঁজে পেয়েছে শুধু মাত্র একটা ছাড়া।কি সেটা..
২২.
‘ আদনান-চারু,তোমাদের দুজনের সাথে তিনাও ঢাকা যেতে চাচ্ছে।তোমাদের কি মত? ‘
হালিম সাহেবের এই কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় চারু।তবুও মুখে হাসি ভাব রেখে বলে,
—‘ খালু,তিনা আপুর কি কাজ ঢাকায় গিয়ে? ‘
হালিম সাহেবকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনা বলে ওঠে,
—‘ আমার খুব ইমপর্ট্যান্ট একটা কাজ আছে ঢাকায়।কালকের মধ্যে যেতে না পারলে শেষ।প্লেনেরও টিকেট পাইনি। ‘
চারু এক এক করে রাহিনা বেগম,রিমি ও আদনানের দিকে তাকায়।আদনান বাদে সবার মুখেই অস্বস্তি।চারু তার মুখের হাসিটা মুখেই রেখে বলে,
—‘ কিন্তু আপু আমাদেরতো ঢাকা পৌছাতে সাতদিন লাগবে।ঢাকা যাওয়ার পথে আমরা অনেককিছু ঘুরে দেখবো।অনেক জায়গায় থাকবো।কি বলেন আপনি? ‘
এই বলে আদনানের দিকে তাকায় চারু।আদনান না বলার জন্য মুখ খুলতেই চারু পা দিয়ে আদনানের পায়ে খুব জোড়ে একটা পাড়া দেয়।আদনান না বলতে গিয়েও হা বলে দেয়।আদনানের হ্যা শুনে হালিম সাহেব তিনার দিকে তাকিয়ে বলেন,
—‘ ওদের সাথে তাহলে তোমার যাওয়া হবে না মা।আচ্ছা তুমি চিন্তা করিওনা আমি এখনি প্লেনের টিকেট ম্যানেজ করছি। ‘
তিনা আর কোনো কথা না বলে সাইট ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নেয়।তারপর রওনা দেয় গেটের উদ্দেশ্যে।যাওয়ার সময় পিছনে না তাকিয়ে বলে,
—‘ তোমরা সবাই অনেক স্বার্থপর ‘
তার কথায় মনে মনে হেসে ওঠে রিমি ও চারু।চারু এবার নিজের ল্যাগেজটা নিয়ে হালিম সাহেবকে সালাম করে তারপর রাহিনা বেগমকে সালাম করে।সবার শেষে সে রিমিকে জড়িয়ে ধরে।রিমিও চারুকে জড়িয়ে ধরে চারু গালে চুমু খায়।
বাসার সবাই তাদের এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত আসে।সবার অনুমতি নিয়ে গাড়িতে প্রবেশ করে আদনান আর চারু।আদনান গাড়ি চালাতে শুরু করে।চারু জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাহিরের দৃশ্য দেখতে শুরু করে।
২৩.
‘ সিটবেল্টটা বাধ না চারু,নাহলে সমস্যা হতে পারে। ‘
আদনানের কথা শুনে খানিকটা রেগে যায় চারু।চোখ রাঙ্গিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি জানো আমি সিটবেল্ট বাধতে পারিনা তারপরেও কেন বাধতে বলো।আমি পারবো না।দরকার হলে তুমি বেধে যায়! ‘
শেষ পর্যন্ত আদনান আর কোনো উপায় না পেয়ে চারু দিকে ঝুকে তার সিট বেল্টটা লাগাতে শুরু করে।চারু নিশ্চুপ হয়ে আদনানকে দেখছে।আদনান সামনের দিকে তাকিয়ে সিটবেল্টটা বাধতে থাকে।
সিটবেল্ট বাধা শেষ হওয়ার সাথে সাথে চারু আদনানকে নিজের দিকে করে নেয়।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।
আদনান চারুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করে।চারুও আদনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বাহিরে প্রকৃতি দেখায় ব্যাস্ত হয়।গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে।আদনান মাঝে মাঝে চারুর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে ব্যাপারটা চারুর নজর এড়ায় না।আদনান যখনি তার দিকে তাকায় সে চোখ মেরে দেয়।
একপর্যায়ে চারু আদনানের কাধের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।আদনান চারুর মাথা সড়িয়ে না দিয়ে ওই অবস্থায় গাড়ি চালাতে থাকে।আদনান আড় চোখে চারুর দিকে তাকাচ্ছে ঘনঘন।কিছুক্ষনের জন্যে হলেও তার মনে হচ্ছে নিত্তিয়া যেন তার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে।চারু আর নিত্তিয়ার মধ্যে ৯৫℅ মিল খুজে পায় আদনান।কিন্তু বাকি ৫℅ খুজে পায়।কোনো একটা ঘাটতি আছে চারুর মাঝে যা নিত্তিয়ার ছিল না।আদনান গাড়িটা থামিয়ে চারুর দিকে তাকায়।তার মনে হচ্ছে এটা নিত্তিয়াই।চারু নিত্তিয়ার মতো নীল শাড়ি লাল লিপষ্টিক পড়েছে।
হঠাৎ চোখ খুলে ফেলে চারু।আদনানকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড খুশি হয় সে।মুহুর্তের মধ্যে খুশিটা মিলিয়ে যায়।পিছন থেকে একটা লোক লাঠি দিয়ে আদনানের গাড়িটাতে একটা বারি মারে.
এমন একটা হ্যাপি হ্যাপি মোমেন্টে কে গাড়িতে বাড়ি মারলো সেটা জানার জন্য আকুল হয়ে আছে চারু।এই সময় গাড়ির জানালায় দেখা দেয় বুড়ো একটা লোক।লোকটা রোদে লাল হয়ে গেছে।মুখে খানিকটা বিরক্তি নিয়ে লোকটা খানিকটা কড়া গলায় বলে,
—‘ এখানে মাঝরাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়েছেন কেন?একটু সামনে এগোন। ‘
লোকটার কথা শুনেই বোঝা যায় লোকটা ট্রাফিক পুলিশ।কিছুক্ষনের মধ্যে প্রমাণটাও পেয়ে যায় চারু।লোকটা তার ক্যাপটা মাথায় দিয়ে অন্য গাড়ি গুলোকে সড়িয়ে দিতে থাকে।আদনান গাড়ি চালানো শুরু করে আবার।চারু মুখ থম করে বসে থাকে।তার ইচ্ছা করতেছে লোকটাকে আচ্ছা করে বকে দিতে।আজকে প্রথম আদনান তার দিকে ওভাবে তাকালো,কি সুন্দর একটা হ্যাপি হ্যাপি মোমেন্ট তৈরি হয়েছিল।সেই সময় ঠাস করে বাড়ি মেরে সব তছনছ করে দেয় লোকটা।তারই বা কি দোষ?তার কাজই তো এসব করা।
সব ভেবে চারু মাথা নিচু করে বসে থাকে।
আদনান চারুর দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে।তবে হাসিটা স্বজোড়ে না লুকিয়ে লুকিয়ে।চারু মত মুখ করে নিত্তিয়াও বসে থাকতো যখন মন খারাপ হতো।আদনান চারুকে দেখতেছে আর নিত্তিয়ার সাথে কাটানো সময় গুলো মনে করে খানিকটা আনন্দ পাচ্ছে।
চারু হঠাৎ মাথা তুলে আদনানের দিকে তাকায়।আদনানের লুকিয়ে লুকিয়ে হাসা তার রাগকে সুধ-আসল ছাড়াই দ্বিগুন করে দেয়।সে ঘুড়ে আদনানের দিকে বসতে যায় কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সিটবেল্টটা।চারু মাথাটা আদনানের দিকে করে খানিকটা জোড়ে বলে,
—‘ আপনি হাসতেছেন!কত্তবড় খারাপ লোক আপনি।কখনো তো আমাকে দেখেন না।আজকে একটু দেখছিলেন।সেই সময় ওই লোকটা সব তছনছ করে দিল।আর আপনি হাসতেছেন। ‘
আদনান চারুর দিকে একবার তাকিয়ে হাসির পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দেয়।আদনানের এই হাসির পরিমাণটা চারুর রাগকে দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়।আদনান হাসতে হাসতে বলে,
—‘ হাসবো না তো কি করবো?তোর মুখটা তো দেখার মতো।হা হা ‘
আদনানের এমন বিটকেলে হাসি সহ্য করতে পারে না চারু।কিন্তু সিটবেল্টটার কারনে কিছু করতেও পারছে না।শেষ পর্যন্ত রাগে দুঃখে কাঁদতে শুরু করে চারু।চারুর কান্না দেখে অবাক হয়ে গাড়ি থামায় আদনান।নিজের সিটবেল্টটা খুলে চারুর দিকে ঘুরে বসে।চারু এখনও কান্না করেই যাচ্ছে।আদনান মুচকি হাসি দিয়ে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ আরে আরে কান্না করতেছিস কেন?এখানে কান্না করার কি হলো? ‘
আদনানের কথা শুনে চারুর কান্নার পরিমাণ আরো বেরে যায়।সে ইশারায় আদনানকে সিটবেল্টটা খুলে দিতে বলে।চারু এরকম ইশারা পেয়ে আদনান হো হো করে হেসে ওঠে।আদনানের হাসি দেখে চারুর কান্না উড়ে যায়।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে হাসিটা কিসের জন্য।আদনান নিজের হাসিটা বজায় রেখে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তুই যে রকম তিড়িং-বিড়িং করে লাফাস,তোকে আটকে রাখার জন্য এই সিটবেল্টটাই পারফেক্ট।তুই ঢাকা পৌছা পর্যন্ত ওই অবস্থায় থাকবি। ‘
এই বলে আদনান পুনরায় গাড়ি চালায় মনযোগ দেয়।এর মধ্যে ওরা অনেক জায়গায় থামলেও আদনান এক বারের জন্যেও চারু বেল্ট খুলে দেয় নি।চারু অনেকবার খোলানোর চেষ্টা করলেও প্রতিবারে ব্যার্থ হয় সে।
২৪.
অবশেষে সব বাধা-বিপত্তি পেড়িয়ে ঢাকায় নিজের বাসায় পৌছায় তারা।আদনান গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে সব মাল নামায়।সব কিছু ঘরের ভিতরে রেখে এসে সব শেষে চারুকে নামায় আদনান।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে ভো একটা দৌড় মারে ঘরের দিকে।আদনান গাড়িটা পার্ক করে ভিতরে যায়।সে মনে করেছে চারু নিশ্চয় এখন কান্না করবো।করারই তো কথা এতসুন্দর একটা জার্নি সে উপভোগ করতে পারলো না।
আদনান ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে চারুকে দেখে চমকে ওঠে।চারু অলরেডি কাজে লেগে পড়েছে।সে আদনানকে দেখে কাজে লেগে পড়তে বলে।রাত নেমেছে।আদনানও চারুর সাথে কাজে লেগে পড়ে।কাজের মধ্যেখানে দুজনের মধ্যে কোনো প্রকার কথা আদান-প্রদান হয় না।দুইজনে নিশ্চুপ হয়ে কাজে লেগে থাকে।
একপর্যায়ে দুইজনের পেটই জানান দেয় যে তারা ক্ষুধার্ত।দুজন কাজ রেখে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।সবকিছু গোছানো প্রায় শেষ।শুধুমাত্র বিছানাটা গুছিয়ে শুয়ে পড়া বাকি।
আদনান সোফায় বসে পড়লে চারু ব্যাগ থেকে খাবারের প্যাকেট গুলো বের করে।আসার পথে আদনান দুটো ডিনার প্যাকেট নিয়েছিল।চারু খাবারের প্যাকেট বের করে চমকে ওঠে।একটা প্যাকেটের সব খাবার প্যাকেট ছিড়ে ব্যাগে পড়ে আছে।চারু আস্তে করে ছেড়া প্যাকেট তুলে ডাষ্টবিনে ফেলে দেয়।অবশিষ্ট থাকে একটা প্যাকেট কিন্তু তারা মানুষ দুইজন।
চারু সেই অবশিষ্ট প্যাকেটটা আদনানকে দেয়।আদনান প্যাকেটটা নিতে ঘপঘপ করে খেতে শুরু করে।চারু পেটের ক্ষুধা নিয়ে এক দৃষ্টিতে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।এদিকে তার পেটের ক্ষুধা বাড়ছে তো বাড়ছে।সে ক্ষুধা একদমই সহ্য করতে পারে না।আদনানও চারুর দিকে না তাকিয়ে একাই মনে সুখে খেয়েই যাচ্ছে।
রাগে,দুঃখে,ক্ষিধায় চারু কান্না করা শুরু করে দেয়।হঠাৎ করে কান্না করে ওঠায় খানিকটা অবাক হয়ে খাওয়া থামিয়ে তার দিকে তাকায় আদনান।চারু আদনানকে দেখে কান্নার গতি আরো বাড়িয়ে দেয়।আদনান প্যাকেটটা নিজের কোলের উপর রেখে ভ্রু-নাচিয়ে চারুকে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ কান্না করতেছিস কেন?কি হইছে? ‘
চারু হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে,
—‘ আপনি কত্তবড় খারাপ,একাই সব খেয়ে যাচ্ছেন।এদিকে আমি ক্ষিধায় মরে যাচ্ছি সেটা একবারও দেখছেন না।কি প্যাকেট নিছেন ওটা সব ছিড়ে পড়ে গেছে?আর আপনি একাই খেয়ে যাচ্ছেন আমাকে একটু দিচ্ছেনও না 😭 ‘
এই বলে আবার কান্না করতে শুরু করে চারু।আদনান একবার চারুর দিকে আরেকবার নিজের পেটের দিকে তাকায়।শেষ পর্যন্ত কি মনে করে খাবারের প্যাকেটটা চারুকে দিয়ে দেয়।তারপর সে বেসিনের উদ্দেশ্য রওনা দেয় হাত ধোয়ার জন্য।
চারু কান্না থামিয়ে খেতে শুরু করে।খাওয়ার এক পর্যায়ে তার মনে হয় সে যেমন ক্ষুধা সহ্য করতে না পারে,আদনানও যদি সেরকম ক্ষুধা সহ্য করতে না পারে।তার চেয়ে এই প্যাকেটটা দুজনে ভাগাভাগি করে খাই।তাতে কিছুটা হলে আমারও পেট ভরবে ওনারও পেট ভরবে।
এই ভেবে চারু খাবারের প্যাকেট নিয়ে গিয়ে সোফায় আদনানের পাশে বসে।কিছুটা খাবার হাতে তুলে নিয়ে আদনানের মুখের সামনে ধরে।আদনান নিজের মুখের সামনে খাবার দেখে মোবাইল থেকে চোখ তুলে তাকায় সেই আগন্তুকের দিকে,যে তার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরেছে।
আদনান চারুর দিকে তাকায়।চারু আদনানের দিকে খাবার তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।আদনান তার দিকে তাকালে চোখাচোখি হয়ে যায় দুইজনের।চারু নিজের হাতের খাবার আদনানের মুখে তুলে দেয়।আদনান নিশ্চুপ হয়ে খাবার খাচ্ছে আর চোখের পানি ফেলছে।
চারু আদনানের কান্না দেখে তাকে হাসানোর জন্য বলে,
—‘ খাইছে,আবার শুরু হইলো ফ্যাচফ্যাচ কান্না।বুঝিনা বাপু,একটা ছেলে কেমনে এতটা ছ্যাচকাদুনে হতে পারে। ‘
চলবে..
{ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেউ ছোট ছোট করবেন না।এটা জাষ্ট বোনাস পার্ট দিলাম।সন্ধ্যার দিকে #১৫ পর্ব দিব।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।
চলবে..
{গল্পের রেসপন্স কমে গেছে।আমি কি ঠিক মতো লিখতে পারছি না।জানাবেন}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।