#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৮
তৈয়ব হোসেন অনেক বিব্রতবোধ করছেন তাই তিনি বললেন,
~রক্তিম,তুমি এভাবে কেন বলছো?
সামনে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় রক্তিম সে তৈয়ব হোসেনের কথা শুনে বললো,
~চাচা,আমার যা বলার আমি বলেছি আর আপনি কী আমার মতামত ছাড়াই অধরার বিয়ে দিয়ে দিবেন?
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~এমন কিছু না।শাওন রক্তিমকে ঘরে নিয়ে যাও
শাওন রক্তিমের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে রক্তিম রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাতেই শাওন দুকদম পিছিয়ে গেলো।রক্তিম জোহোরা খাতুনের সামনে দাড়িয়ে বললো,
~এর জন্যই কী আমাকে বাসা থেকে বাহিরে পাঠানো হয়েছে?
জোহোরা খাতুন আমতা আমতা করে বললেন,
~মেহমানদের সামনে এরকম কেন করছিস?
রক্তিম বললো,
~তাহলে তাদের যেতে বলো বসিয়ে কেন রেখেছো?
ইকবাল রহমান বললেন,
~আমরা আজ আসি পরে কথা বলবো এ বিষয়ে।
বলেই তারা চলে গেলো যাওয়ার আগে ইফতি একবার অধরার দিকে তাকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।রক্তিমের চোখে তা এড়ায়নি রক্তিম অধরাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আরো রেগে গেলো চরম ভাবে একটা ধমকে উঠলো সে,
~এই মেয়ে এখানে বসে আছিস কেন?ভিতরে যাবি এখনই
রক্তিমের ধমক শুনে অধরা কেঁপে উঠে তৈয়ব হোসেন বললেন,
~এভাবে কথা বলছো কেন রক্তিম?মেয়ে আমার সিদ্ধান্ত আমার হবে।
রক্তিম বললো,
~আপনার মেয়ে মানলাম কিন্তু এতগুলো বছর যে আমি আগলিয়ে রাখলাম।
তৈয়ব হোসেন বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলো রক্তিমের দিকে তারপর বললো,
~বড়ভাবি,আপনার ছেলেকে নিয়ে যান এখান থেকে আমার হাত উঠে যাবে।
জোহোরা খাতুন রক্তিমের হাত ধরে বললো,
~চল বাবা ভিতরে আমার কথাটা রাখ।
রক্তিম দ্বিগুন রেগে গিয়ে বললো,
~আমি কেন তোমার কথা রাখবো তুমি রেখেছো আমার কথা?তুমি জানতেনা সব তবুও তুমি এমন একটা কাজ করলে।
অধরা তাদের কথোপকথন শুনতে পারলো না সে ধীরপায়ে সেখান থেকে নিজ রুমে চলে আসলো ইরা তার পিছন পিছন চলে গেলো।
রক্তিম বললো,
~আজ সন্ধ্যায় বাবা বাসায় আসার আমরা কথা বলবো।এর একটা বিহিত আমি করেই ছাড়বো।
রক্তিম নিজ কথা শেষ করে গটগট করে অধরার রুমের দিকে চলে গেলো তা দেখে তৈয়ব হোসেন বললেন,
~খবরদার আমার মেয়ের কাছে তুমি যাবে না।আমি আর এই বাসায় থাকবোনা তাহিদা তুমি অধরাকে নিয়ে এখনি তোমার মায়ের বাসায় চলে যাবে।
তাহিদা ইসলাম কেঁদে কেঁদে বললেন,
~এসব আপনি কী বলছেন?
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~দ্রুত কাজ করো আমি অধরাকে দেখে আসছি।
রক্তিম অধরার ঘরে এসে দেখলো অধরা চুপচাপ বসে আছে আর হাতের চুড়ি খুলছে ইরা তার পাশে বসে আছে।রক্তিম বললো,
~ইরা,বাহিরে যা।
ইরা একবার অধরার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে বললো,
~তুই কেন ওদের সামনে গিয়েছিলি?
অধরা কিছু বললো না সে চুপ করে বসে রইলো
________________♥________________
অধরাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে রক্তিমের রাগটা আরো বেড়ে গেলো সে এবার নিজের হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেললো অধরার হাত ধরে নিজের একদম কাছে দাড় করিয়ে বললো,
~মুখে কুলুপ এঁটেছিস?কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি মুখ খুলে কিছু বল।
অধরা নির্বাক হয়ে বললো,
~আমার পথ থেকে সরে যান আপনি জানেন না কতো বড় ঝড় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অতীতের পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখেন বাবা আজ কতোটা অপদস্ত হয়। একমাত্র কারণ হচ্ছে সে নিজের মনকে প্রাধান্য দিয়েছে তাই আজও সে কথা শুনছে শুধু সে না আমিও শুনছি।চলে যান এ ঘর থেকে আপনার মা আপনাকে রাজকুমারী দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে।আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না নাহলে এমন জায়গায় গিয়ে লুকালো আর দেখা পাবেন না।
অধরার বলা প্রতিটও শব্দ রক্তিমের কানে বাজছে সে ধীরে ধীরে অধরার হাত ছেড়ে দিলো অধরা চুড়ি গুলো হাতে নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলো। রক্তিম এখনো চুপ করে দাড়িয়ে আছে তখনই ঘরে প্রবেশ করলো তৈয়ব হোসেন সে এসে রক্তিমের সামনে দাড়িয়ে বললেন
~আমার মেয়ের ঘর থেকে বের হয়ে যাও এতোদিন সব সহ্য করেছি আর না বের হও।অধরা ব্যাগ গুছিয়ে নে তুই আর তোর মা নানু বাসায় যাবি।
অধরা মাথাদুলিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পরলো রক্তিম বললো,
~আপনারা কোথাও যেতে পারবেন না।আমি সেই ব্যবস্থা করবো আমাকে দূর্বল ভাববেন না চাচা।আমি যেকোনো কিছু করে ফেলবো তারপর চোখের পানি ফেললোও লাভ হবে না।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~তোমার বাবার সাথে কথা বলতেই হবে বড় ভাইজান কিছুক্ষন পরই চলে আসবে সে পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।
রক্তিম অধরার ঘর থেকে চলে গেলো তৈয়ব হোসেন বিছানায় বসে আজকের ঘটনা বিশ্লেষণ করতে লাগলেন।
বাসায় পৌছে আইয়ুব হোসেন বুঝতে পারলেন বাসার পরিবেশ বেশি একটা শোচনীয় না তাই সে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসে পরলেন।জোহোরা খাতুন স্বামীর খাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছেন তখনই রক্তিম এসে পাশের চেয়ারে বসে পরলো আর বললো,
~বাবা,তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~খাবার শেষ করে কথা বলছি।
রক্তিম বললো,
~ঠিক আছে আমি তোমার রুমে চলে আসবো।
কিছছুক্ষন পর রক্তিম আইয়ুব হোসেনের রুমে চলে আসলো আইয়ুব হোসেন বললেন,
~কী কথা দ্রুত বলো।
রক্তিম বললো,
~আমি অধরাকে বিয়ে করবো।
আইয়ুব হোসেন ছেলের কথা শুনে হালকা হেসে বললেন,
~এইসব বাচ্চামি করে না বাবা তুমি তো এতোটাও ছোট নও।
রক্তিম বললো,
~সব জেনে শুনে এমন কথা বলছো কেন?আমার মনের কথা তোমরা জানতে বাবা।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~হয়না বাবা এইটা তোমার জন্য পৃথুলা পারফেক্ট।
রক্তিম চোয়াল শক্ত করে বললো,
~পৃথুলা?ওকে আমি কোনোদিন বিয়ে করবোনা বাবা।ফুপির সম্পত্তি তুমি নিয়েছো আমি না আর শোন তোমার বোন যে কতোটুকু নিচ তা তুমি জানো না।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তুমি সব জানো?
রক্তিম বাঁকা হেসে বললো,
~তোমরা কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটো তাও আমি জানি।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তাহলে আর অমত করো না।
_________________♥_________________
রক্তিম বললো,
~তুমি আবারও সেই একই কাজ করছো কিন্তু আমি এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় না অধরার সাথে আমার বিয়ে না হলে আমি তোমার সব তাসেরঘর ভেঙ্গে গুড়িগুড়ি করে দিবো।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~আমাকে ধমকি দিচ্ছো?
রক্তিম বললো,
~উহু সাবধান করছি।
আইয়ুব হোসেন আর কিছু বললেন না সে গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেলো রক্তিম তার রুম থেকে বের হয়ে আসলো।অধরা, তাহিদা ইসলাম আর তৈয়ব হোসেন আইয়ুব হোসেন থেকে বিদায় নিতে এসেছেন আইয়ুব হোসেন বললেন,
~তৈয়ব,যা হয়েছে ভুলে যা আমি তোকে আশ্বাস দিচ্ছি সব ঠিক হয়ে যাবে।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~মাফ করবেন আমি আর থাকছিনা এখানে।
রক্তিম দেওয়ালে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুজে অধরার দিকে তাকিয়প আছে।অধরা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ইরা অধরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~প্লিজ আপু যেও না আমাকে ছেড়ে।
শাওন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে সব দেখছে অধরা ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~আমাদের নতুন বাসায় তুই আসবি কিন্তু।
ইরা ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে রক্তিমকে ঠান্ডা দেখে আইয়ুব হোসেনের বুক কাঁপছে না জানি এই ছেলে কী করে ফেলে?ইলিনা চৌধুরী বললেন,
~তোমরা আবার এ বাড়ি ভুলে যেও না আসা যাওয়া করো।
তখনই রক্তিম বললো,
~অবশ্যই আসবে তারা মেয়েকে দেখতে তো আসতে হবেই।
পৃথুলা বললো,
~এসব কী বলছো অধরাও তাদের সাথে যাবে।
রক্তিম বললো,
~আমার বউকে আমি অনুমতি দেইনি এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার।
সবাই রক্তিমের কথা শুনে অবাক হয়ে পরলো এসব কী বলছে?অধরা রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম বললো,
~এই মুর্হুতে আমার আর অধরার বিয়ে হবে।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~তুমি কী বলছো এসব?
রক্তিম তৈয়ব হোসেনের হাত ধরে বললো,
~চাচা,আমি কী ছেলে হিসেবে খারাপ যে আপনি আপনার মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দিতে চাইছেন না?
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~এমন কোনো কথা না বাবা তোমার মা কোনোদিন আমার বউকে মেনে নেইনি সে কীভাবে আমার মেয়েকে ছেলেরবউ হিসেবে মেনে নিবে?
রক্তিম বললো,
________________♥_________________
~সমস্যা এতটুকু তাই তো?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~আমি কোনোদিন অধরাকে মেনে নিবো না।
রক্তিম বললো,
~মা যদি মনে করে থাকো আমি তোমায় রিকোয়েস্ট করবো তা ভেবে না।তোমার নীতি এবাসায় চলতে পারে আমার উপর না ছোট থেকে তোমার অবিচার দেখেছি আর না।
জোহোরা খাতুন বললেন,
~তুই আমার অমতে বিয়ে করবি?
রক্তিমের কিছু বলার আগে তার অধরা বললো,
~বাবা,আমাদের দেরি হচ্ছে চলো।
রক্তিম বললো,
~তুই কী শুনতে পাসনি আমি কী বলেছি?
অধরা বললো,
~আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। আপনার প্রতি আমার কোনো অনুভূতি নেই তাহলে সংসার করবো কী করে?
রক্তিম বললো,
~মিথ্যা খুব গুছিয়ে বলতে শিখেছিস তুই।
অধরা বললো,
~এটা আপনার ব্যাপার এখন আমাদের যেতে দিন নাহলে খুব খারাপ হবে আমি নিজের ক্ষতি করে ফেলবো।
অধরার কথা শুনে জোহোরা খাতুন আর পৃথুলা বাঁকা হাসে কারণ তাদের প্ল্যান একদম সঠিক কাজ করছে।
কিছুক্ষন আগে জোহোরা খাতুন অধরার ঘরে গিয়ে তাকে বলছিল,
~অধরা,আমি তোকে জানাতে চাই তোর বাবা আমার স্বামীর থেকে ৫লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে।এখন যদি তোর বাবার কাছে সেই টাকা আমরা চেয়ে বসি তাহলে কোথা থেকে দিবে তোর বাবা তখন তো দোকানটাও হাত থেকে চলে যাবে তখন কী হবে?
অধরা বললো,
~আপনি কী চান?
জোহোরা খাতুন বললেন,
~এখন চুপচাপ তুই এ বাসা থেকে চলে যাবি।তারপর আমি সব সামলে নিবো।
অধরা বললো,
~তাই হবে।
জোহোরা খাতুন বাঁকা হেসে বললেন,
~তাহলে সেই কথাই থাকলো।
বর্তমান
অধরা দরজা পেরিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো রক্তিম সেই দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)