#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১২
অধরার ঘোমটা সরাতে গিয়েও সে হাত গুটিয়ে নিয়ে বললো,
~এক হাত ঘোমটা দিয়ে বসে থাকার কোনো মানে নেই সেই ছোটবেলা থেকেই তোমাকে দেখে আসছি। নিজ দায়িত্বে ঘোমটা সরিয়ে নেও
এতটুকু কথা বলে সে অধরার পাশে শুয়ে পরলো রক্তিমের চোখ এখন সিলিংফ্যানের ওপর।অধরা রক্তিমের কথা শুনে রেগে গিয়ে ঘোমট সরিয়ে পাশে শুয়ে থাকা রক্তিমের পাঞ্জাবির কলার ধরে তার উপর একটু ঝুঁকে বললো,
~তাহলে এতো পরিচিত মেয়েকে বিয়ে করেছেন কেন?আপনার শখ আহ্লাদ নেই বলে কী আমারও নেই ভেবেছিলাম বাসর ঘরে আমার বর ঘোমটা উঠিয়ে নিষ্পলক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।কিন্তু হলো কী? এক হাদারামের গলায় আমাকে ঝুলতে হলো।
অধরা এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে রক্তিমের কলার ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশে মুখ করে বসে রইলো।অধরার কথা শুনে রক্তিম মুখ টিপে কিছুক্ষণ হেসে বললো,
~আমি জানতাম না তোমার এতো শখ ছিল।আর আমাকে হাদারাম বলছো কেন?আমাকে বললেই হতো তুমি চাও আমি একটু রোমান্টিকতা দেখাই।
অধরা কিছুই বললো না সে বুঝতে পেরেছে নিজের কাজে সে নিজেই ফেসেছে।অধরা রক্তিমের কথা না শোনার ভান করে শাড়ি গুছিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বললো,
~আপনার এসব নাটকীয় আর অসভ্য কথা শোনার সময় নেই আমার যত্তসব।
অধরা কার্বাড খুলে একটা থ্রী পিজ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রক্তিম বিছানায় আবার গা এলিয়ে দিয়ে পাঞ্জাবীর পকেট হাতড়ে একটা ছোট্ট বক্স বের করলো সেটাকে সাইড টেবিলে রেখে সে উঠে দাড়ালো।
অধরা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো রক্তিম ঘরের কোথাও নেই সে চুল আছরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো রক্তিম খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।অধরা খেয়াল করলো রক্তিমের পরণে কালো টির্শাট আর টাউজার অধরা বললো,
~এখানে কী করছেন?
অধরার কথায় কোনো জবাব রক্তিম দিলো না অধরা আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,
~এতো রাতে আর এরকম শীতে বারান্দায় কেন দাড়িয়ে আছেন?
অধরার কথা শেষ হতেই রক্তিম অধরার হাত ধরে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।অধরা ঘাবড়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো তা দেখে রক্তিম মুচকি হেসে অধরার কপালের এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে তার ওষ্ঠজোড়া কপালে ছুঁইয়ে দিলো।অধরা রক্তিমের শার্ট খামচে ধরলো রক্তিম অধরার কানে ফিসফিস করে বললো,
~এখানো তোমার সাথে রোমান্স করবো তাই দাড়িয়ে আছি।
অধরা চোখ খুলে রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম বাঁকা হেসে অধরাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের ভিতরে চলে গেলো।অধরাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সাইড টেবিল থেকে বক্স টা নিয়ে তা খুলে সেখান থেকে একটা আংটি বের করে অধরার আঙ্গুলে পরিয়ে দিলো।
অধরা আংটির দিকে তাকাতেই রক্তিম বললো,
~কেমন হয়েছে আংটিটা?
অধরা বললো,
~অনেক সুন্দর।
রক্তিম অধরার গাল ধরে বললো,
~আমাকে অনুমতি দিবে তোমাকে নিয়ে ভালোবাসার জগতে পাড়ি দিতে?তোমাকে আমার সাথে মিশিয়ে নিতে চাই অধরাকে আমি নিজের করে পেতে চাই আমাকে কী দিবে সেই অনুমতি?বলো না প্রেয়সী নিবে কী আমাকে নিজের করে?
অধরা চোখ বন্ধ করে সবটি কথা শুনলো অধরা রক্তিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
~দিয়েছি আপনাকে অনুমতি।
রক্তিম আর একমুহূর্ত দেরি না করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো অধরাকে। ভালোবাসার জগতে পাড়ি দিলো তারা এই অন্ধকার রাত আজ তাদের ভালোবাসার সাক্ষী শীতের রাতে হিমেল হাওয়ায় তাদের ভালোবাসার হাওয়া বইছে।
____________♥_____________
রোদের রশ্নি রক্তিমের মুখে পরতেই সে চোখ কুচকে ফেললো ধীরে ধীরে চোখ খুলে উঠে বসলো।এদিক-সেদিক চোখ বুলিয়ে অধরাকে খোজার চেষ্টা করলো। তখনই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো অধরা হালকা কলাপাতা রঙ্গের শাড়ি পরেছে চুল টাওয়াল দিয়ে মোড়ানো।রক্তিম তাকিয়ে আছে অধরার সেই চেহারার দিকে অধরা আয়নার সামনে দাড়িয়ে টাওয়ালটা খুলে ফেললো ভেজা চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পরছে। অধরা চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো রক্তিমকে অধরা রক্তিমের চাহনি দেখে লজ্জা পেয়ে হালকা হেসে টাওয়ালটা দিয়ে মাথা মুছতে লাগলো।রক্তিম বিছানা থেকে উঠে ধীর পায়ে অধরার পিছে দাড়িয়ে পরলো অধরা রক্তিমের উপস্থিতি টের পেয়েও কিছু বললো না।রক্তিম অধরাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রক্তিমের স্পর্শ পেয়ে অধরা কেঁপে কেঁপে উঠলো রক্তিম অধরার ভেজা চুলে মুখ গুজে বললো,
~আমাকে কেন ডাকোনি?
অধরা বললো,
~আপনি নাক টেনে ঘুমাচ্ছিলেন তাই ডাকিনি।
বলেই সে নিজেকে রক্তিম থেকে ছাড়িয়ে বললো,
~আমি এখন রান্নাঘরে যাবো এভাবেই দেরি হয়ে গেছে।
রক্তিম আবারো অধরাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~এখন বাহিরে যেতে হবে না।
তখনই দরজায় টোকা পরলো ইরা উঁচু গলায় বললো,
~অধরা আপু,বড়চাচী ডাকছে তোমাকে।
অধরা রক্তিমকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো,
~অসভ্য কোথাকার
বলেই সে নিজেকে ঠিক করে দরজা খুলে ইরার সাথে চলে গেলো রক্তিম আবারো বিছানায় গিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পরলো।
অধরা রান্নাঘরে গিয়ে দাড়াতেই জোহোরা খাতুন বললেন,
~সবার জন্য আজ তুমি নাস্তা বানাবে।
অধরা বললো,
~ঠিক আছে বড়চাচী।
জোহোরা খাতুন চলে গেলেন সেখান থেকে অধরা শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে কাজে লেগে পরলো।নাস্তা তৈরি করে টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে সে নিজ হাতে নাস্তা সার্ভ করলো আইয়ুব হোসেন বললেন,
~রক্তিম কোথায়?
অধরা বললো,
~আসলে উনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন হয়তো বড় চাচা।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~বড়চাচা না বাবা বলবে বুঝতে পেরেছো।
অধরা হেসে বললো,
~ঠিক আছে বাবা।
সবার নাস্তা শেষে শাওন রক্তিমের ঘরে চলে গেলো শাওন রক্তিমকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।
শাওন রক্তিমের কাছে গিয়ে ঠেলে উঠিয়ে দিয়ে বললো,
~ভাইয়া ঘুমিয়ে আছো কেন এখন পর্যন্ত জানো অধরা কতো টেস্টি নাস্তা বানিয়েছে।
রক্তিম বললো,
~ভালো লাগছেনা আমার।
তখনই অধরা নাস্তার ট্রে নিয়ে হাজির হলো অধরা ট্রে টা টেবিলে রেখে বললো,
~আপনি কখন উঠবেন বলেন তো?আমি ঘর গুছাবো।
রক্তিম বললো,
~কার্বাড থেকে সব বের করে দেও।
শাওন বললো,
~তুমি আমার সামনে আমার বোনকে কাজের অর্ডার দিচ্ছো কতবড় সাহস?
রক্তিম বললো,
~দুটো থাপ্পড় পরলে সব ভাইগিরি বের হয়ে যাবে।
রক্তিম ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসের জন্য বের হয়ে গেলো।অধরা রক্তিমকে বিদায় দিয়ে নিজ পড়া নিয়ে বসে পরলো
______________♥_______________
দিনগুলো ভালো চলছিল জোহোরা খাতুনও অধরাকে আসতে আসতে মেনে নিচ্ছে। কিন্তু সুখের দিন বেশিদিন স্থায়ী হয়না অধরার জীবনে এমন একটা ঝড় আসতে যাচ্ছে যার খবর হয়তো কারো নেই।অধরা রক্তিমের সামনে বসে আছে বই নিয়ে ফাইনাল পরীক্ষা অধরার তাই রক্তিম নিজে ওকে পড়াতে বসেছে।অধরা বললো,
~কালকে লাস্ট পরীক্ষা আমি কিন্তু নানুদের কাছে যাবো থাকতে আপনি মানা করবেন না।
রক্তিম হাতের স্কেলটা ঠাস করে টেবিলে বারি দিয়ে বললো,
~পড়তে বসেছো নাকি ছুটি প্ল্যান করতে?
অধরা মুখ ফুলিয়ে বললো,
~আপনার কাছে পড়বো না আমি রাশেদ স্যারের সাহায্য নিয়ে নিবো।
রক্তিম বললো,
~রাশেদ স্যার আর আসবেনা ওই ব্যাটার স্বভাব ভালোনা।
অধরা চেয়ার থেকে উঠে ধপাস করে রক্তিমের কোলে বসে পরলো তার গলা জড়িয়ে বললো,
~প্লিজ আমাকে যেতে দিন বিয়ের ৩ মাস হয়ে গেছে একবারও নানুদের বাড়ি যাওয়া হয়নি।
রক্তিম অধরার কোমড় জড়িয়ে বললো,
~ঠিক আছে শুধুমাত্র ৩দিনের জন্য বুঝেছো।
অধরা খুশি হয়ে বললো,
~ঠিক আছে।
সকালবেলা রক্তিম অধরাকে কলেজ ড্রপ করে চলে গেলো।অধরা রক্তিমকে বিদায় জানিয়ে কলেজের ভিতরে চলে গেলো পরীক্ষা ভালোমতো দিয়ে ৩ঘন্টা পর কলেজের বাহিরে দাড়িয়ে পরলো শাওনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।তখনই তার বান্ধবীরা এসে জোর করে ফুচকার স্টলে নিয়ে গেলো তারা ফুচকে খেয়ে অনেকক্ষন আড্ডা দিলো শাওনের আসার কোনো খোজ না পেয়ে অধরা হাঁটা শুরু করলো।নির্জন রাস্তায় আসতেই একটা মাইক্রো এসে অধরার হাত ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে মুখে রোমাল চেপে ধরে অধরা চিৎকার করতে যাবে তার আগেই সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
সেই লোকগুলো কাকে যেন ফোন করে বললো,
~আমরা মেয়ে পেয়েগেছি এখন ওকে আপনার দেওয়া ঠিকানায় নিয়ে আসছি।
বলেই সে ফোন রেখে দিলো কিছুক্ষন পর অধরাকে নিয়ে তারা এক বন্ধ বাড়িতে নিয়ে আসে।অধরাকে চেয়ার সাথে বেঁধে বসিয়ে দিলো লোকগুলো অধরার মুখে পানি ছিটিয়ে দিতেই সে জ্ঞান ফিরে পেলো।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো 🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)