#তোমাতে-আসক্ত
নীলচুড়ি (রোকসানা)
পর্ব (১২)
সবার সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে বের হতেই ক্যান্টিনে চিল্লাচিল্লির শব্দ পেলো। দ্রুত ক্যান্টিনের দিকে এগুলো। চারপাশে তাকিয়ে কোথাও আরমানকে না পেয়ে মাহিরের বুক কেপে উঠলো। কয়েকটা ছেলেমেয়ে গোল হয়ে কাকে মারধোর করছে?? আরমান নাতো????
আরমান দ্রুত ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলো। আহত অবস্থায় আরমানকে নিচে পড়ে থাকতে দেখলো। সবাইকে ঠেলে আরমানকে উদ্ধার করা বেশ কষ্ট সাধ্য হলেও অসম্ভব কিছুর ছিলোনা। যেহেতু সে এই ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে যোগ দিয়েছে কিছু স্টুডেন্ট তাকে চিনতে পেরে সরে এলো। চারপাশে সবার শোরগোল শুনতে পেলো যাচ্ছে। আরমানের দিকে তাকিয়ে বেশ অনুশোচনা অনুভব করলো।
আরমান মাহিরকে জড়িয়ে ধরলো।
“”ভাইয়া আমাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলে? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। দেখো আমার ঠোট ফুলে গেছে অথৈমনি তো আমাকে দেখলে আর ভালোবাসবেনা।””
মাহির আরমানের ঠোটের দিকে তাকালো। ফুলে গিয়েছে,খানিকটা রক্ত জমাট বেধে নীল রং ধারন করেছে। মাহির বেশ রাগ নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে উঠলো,,,
“”তোমরা ওকে কেন মেরেছো? কি করেছে ও???””
একটা ছেলে এগিয়ে এসে বললো,
“”স্যার ও আমার ফোন চুড়ি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। ওকে পুলিশে দেওয়া দরকার। রাস্তার টোকায় একটা। কলেজে ঢুকার সাহস কি করে পেলো?””
মাহির এবার বেশ রাগ নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো,
“”তেমাকে কে বলেছে ও টোকাই? মুখ সামলে কথা বলবে।””
“”টোকায় নাহলে সারাদিন এমন ছেড়া শার্ট পড়ে ঘুরে বেড়াবে কেন? আমারি তখনি সন্দেহ হয়েছিলো। আর তাছাড়া এখানের সবাই দেখেছে ও আমার ফোন চুড়ি করে পালাচ্ছিলো।””
সবাই ওই ছেলেটির কথায় সায় দিতে দেখে মাহির আরমানের দিকে তাকালো,,
“”আরমান তুমি ফোন চুড়ি করে পালাচ্ছিলে?””
“”না ভাইয়া,আমি চুড়ি করিনি।””
“”তাহলে ওরা যে বলছে? তোমার কি মনে হয় ওরা সবাই মিথ্যে বলছে?? একেই তো চুড়ি করে ধরা খাইছো আবার মিথ্যাও বলছো?””
মাহির রাগে আরমানের গালে চড় বসিয়ে দিলো। আমারি ভুল হয়েছে। কালকের পরিচয়ে একটা ছেলেকে আমি কিভাবে এখানে নিয়ে আসলাম? নিজের সম্মান বলতে আর কিছু থাকলোনা। মাহিরের প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো। এরকম একটা কাজ কি করে করলো সে??
মাহির আরমানের পকেট চেক করতে লাগলো। প্যান্টের পকেটে হাত দিতেই একটা ফোন বেরিয়ে এলো। মাহির ফোনটা বের করতেই আরমান খপ করে ফোনটা নিয়ে নিলো। মাহিরের পায়ের কাছে বসে পা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,
“”ভাইয়া আমি শুধু অথৈকে একটা কল দিয়েই ফোন দিয়ে দিবো। তুমি ফোনটা নিয়ে নিওনা। আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। অথৈর সাথে কথা বলতে না পারলে মরেই যাবো। প্লিজ ভাইয়া একটা কল করতে দাও।””
তারমানে অথৈকে কল করার জন্য ও ফোন নিয়েছিলো?? ভাবতেই মাহিরের চোখ ভিজে গেলো।
আরমানকে মাহির নিজের ফোনটা দিয়ে গাড়ীর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো। একটা মানুষ অন্য একটা মানুষকে কতটা ভালোবাসতে পারে আরমানকে না দেখলে হয় তো বুঝতে পারতোনা মাহির। এতটা পাগল ও অথৈর জন্য। কি নিষ্পাপ ভালোবাসা,সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চার মতো নিষ্পাপ ভালোবাসা আরমানের যার মধ্যে নাই কোনো নোংরামী,নেই কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই কোনো কামকতা। অথৈও কি আরমানকে এতটাই ভালোবাসে?? হয় তো বাসে। আমি এদের মাঝখানে কিভাবে আসলাম??? আল্লাহ কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবেন?? গভীর ভাবনায় ঢুবতেই চোখে ভেসে উঠলো সেই ছয় পৃষ্ঠার চিঠি যা বিয়ের রাতে অথৈ ওকে দিয়েছিলো। কি ছিলো সেই চিঠিতে? আরমান আর অথৈর নিষ্পাপ ভালোবাসার পরিপুর্নতা চাওয়া নাতো??????
“”হ্যালো,অথৈ? তুমি ঠিক আছো? সকালে দুপুরে খেয়েছো?? আমাকে ছাড়া তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না গো?? তুমি একটুও চিন্তা করোনা আমি এখনি চলে আসবো।””
ফোনের অপরপাশে অথৈর জায়গায় অন্য কারো কন্ঠ পেয়ে রেগে গেলো আরমান। রাগ দেখিয়ে বললো,
“”আপনি কে? আমার অথৈমনিকে দিন। কি হলো দিচ্ছেননা কেন???””
আরমানের চিল্লানো আর রাগ দেখে মাহির আরামনের দিকে তাকালো। হয় তো খালামনি ফোন রিসিভ করেছে ভেবে মাহির আরমানের কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো। কিন্তু অপরপাশে খালামনির জায়গায় অন্য কারো ঝাঝালো কন্ঠ পেয়ে থতমত খেয়ে গেলো মাহির। ফোনটা চেক করতেই আননোন নাম্বার দেখতে পেলো। অথৈর নাম্বারতো আমার ফোনে সেভ করা তাহলে এটা কার নাম্বার??
“”আরমান অথৈ কি নতুন নাম্বার নিছে??””
“”জানিনা। তুমি বলোনা অথৈকে ফোন দিতে।””
মাহির ডায়াল লিস্ট চেক করতেই পুরে লিস্টে আননোন নাম্বার দেখতে পেলো। কোনো জায়গায় ১০ টা,কোনো জায়গায় ১২ টা আবার কোনো জায়গায় ৫ টা ডিজিট। মাহিরের বুঝতে বাকি রইলোনা যে আরমানের অথৈর নাম্বার জানা নাই। মাহির বেশ অবাকই হলো যার জন্য এত পাগলামি অথচ তার নাম্বারটাও জানা নেই? এটা কেমন পাগলামী????
বাসার গেটের সামনে এসে মাহির দাড়িয়ে রইলো। ভেতরে ঢুকার সাহস পেলোনা। আরমানের দিকে চায়তেই বুকটা আবার কেপে উঠলো। কি জবাব দিবে সে অথৈকে???
মাহির গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকলেও আরমান থাকতে পারলোনা। দৌড়ে ভিতরে ঢুকে গেলো। দরজার সামনে গিয়ে লাগাতার কলিংবেল বাজাতে লাগলো যতক্ষণনা কেউ দরজা খুলছে।
মিসেস ইরানী আর অথৈ দুজনেই খোশগল্পে মগ্ন। হঠাৎ এমন বিরক্তিকর বেলের শব্দে চটে গেলেন মিসেস ইরানী। প্রচন্ড রাগ নিয়ে দরজা খুলতেই আরমানকে দেখতে পেলো।
আরমান ভেবেছিলো অথৈ দরজা খুলবে কিন্তু খালাম্মাকে দেখে হতাশ হলো। কিছুটা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকেই উপরে উঠে গেলো।অথৈকে রুমে না পেয়ে আরমানের সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। অস্থির হয়ে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেললো। চিৎকার করে অথৈকে ডাকতে লাগলো।
আরমানের এমন চিল্লানি শুনে অথে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো।অথৈকে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেই আরমান দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে নিলো।
“”মাহির,তোর কি হয়েছে এমন মুখ করে রেখেছিস কেন? তোর কি বউ মরে গেছে? আর আরমানের এ অবস্থা কেন?””
“”খালামনি বিয়ের ব্যবস্থা করো আরেকটা বিয়ে পড়াতে হবে।””
“”আরেকটা বিয়ে মানে? তুই কি আবার বিয়ে করবি? সুন্দরী বউ পেয়ে কি তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে??”””
চলবে