তোমাতে_বিভোর২ পর্ব ৯

#তোমাতে_বিভোর
#Season_2
#পর্ব_৯
#Sapna_Farin

–তার চোখের সামনে ভেসে উঠে রুদ্রের সাথে কাটানো কিছুক্ষণ আগের ঘনিষ্ঠ মূহুর্ত গুলো।তখন সে দু’হাতে নিজের মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।আজকে তার মন খুলে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আজকে তার মনের মধ্যে আকাশ সমান কষ্ট।যে কষ্ট গুলো তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।নিজের মধ্যে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে।মনের আঘাত গুলো সব থেকে বড় আঘাত।যে আঘাত গুলো ইচ্ছে করলে মুছে ফেলা যায়না।তেমন আজকে রুদ্র তার মনের মধ্যে যে দাগ লাগিয়ে দিলো।অধরা শতো চেষ্টা করে সে দাগ গুলো মুছে ফেলতে পারবেনা।আজকে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হচ্ছে তার।দিব্যি ভালো ছিলো নিজের জীবনে।কিন্তু ঝড়ের মতো রুদ্র তার জীবনে এসে তার জীবন উল্টো পাল্টা করে দিলো।মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু শেষ করে দিলো রুদ্র।

–এভাবে তার জীবন অন্য কোনো মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে যাবে।এসব অধরার ভাবনার বাহিরে ছিলো।সে এসব কিছু সহ্য করতে পারছেনা।মূহুর্তের মাঝখানে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।সে নিজেকে সামলে নিয়ে ছলছল নয়নে তার প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে আছে।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেড় করতে পারছেনা।নীরবে চোখের অশ্রু ফেলছে।তার এমন অবস্থা দেখে তার প্রতিবিম্ব তাকে দেখে অট্টহাসি দিয়ে বলে।

–“অধরা অন্যকে পোড়াতে খুব ভালো লাগে!যখন নিজে পুড়ছো তখন কেমন লাগে?তোমার কাছে সামান্য মিথ্যা কিন্তু রুদ্রের কাছে অনেক কিছু।তোমার সামান্য মিথ্যা রুদ্রের পুরো জীবন উল্টো পাল্টা করে দিলো।সে কথা ভুলে গিয়েছিলে।এখন বুঝো কেমন লাগে।তুমি যে কষ্ট গুলো সামান্য সময় ধরে সহ্য করতে পারছোনা।সে কষ্ট গুলো রুদ্র দু’বছর ধরে সহ্য করেছে।তাহলে তার কেমন লাগছে?”

–অধরা নিজের প্রতিবিম্বর দিকে কিছু ছুড়ে মেরে।রক্ত বর্ন চোখে চিৎকার করে বলে।

–“শেষ পর্যন্ত তুমি রুদ্রের দিকে কথা বলছো ছিঃ!আমার ভাবতে ঘেন্না লাগছে তুমি রুদ্রের দিকে।তুমি সবকিছু ভুলে যাচ্ছো ঐ অমানুষ ঐ রুদ্র আমার জীবন নষ্ট করে দিলো।সেখানে তুমি তার হয়ে কথা বলো।তোমার সাহস হয় কি করো?তুমি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাবে এক্ষুনি।”

–ভেঙে যাওয়া আয়নার মধ্যে দিয়ে তার প্রতিবিম্ব মুচকি হেসে বলে।

–“আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো অধরা।তুমি ভুলে যাচ্ছো? যাকে তুমি তাড়িয়ে দিচ্ছো সে তোমার মনের মধ্যে থাকে।তোমার ভুল গুলো দেখিয়ে দেয়া আমার দ্বায়িত্ব।এখনো সময় আছে অধরা নিজের ভুল গুলো শুধরে নিতে পারো।সময় গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।তুমি ভুলে যাচ্ছো ভুল এবং প্রতিশোধ মানুষের জীবন কে ধ্বংস করে দেয়।যে ভুল এবং প্রতিশোধের আগুনে নিজে জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছো।অন্যদিকে
রুদ্র সে ভুল এবং প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছে।”

–অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।সে এখন নিজের প্রতিবিম্বর দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।নিজের প্রতি নিজের ঘেন্না হচ্ছে তার।দু’বছর আগের কোন মিথ্যা কথা তার পুরো জীবন উল্টো পাল্টা করে দিলো।তার নিজের ভুল গুলোর জন্য নিজের মধ্যে অনুতপ্ত হচ্ছে সে।অধরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।তখন দড়জায় খট করে শব্দ করে রুদ্র রুমে আসে।রুদ্র কে দেখে অধরা নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের অশ্রু আড়াল করে।নিজেকে গোছাতে ব্যস্ত হয়ে যায়।তখন রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়নার মধ্যে দিয়ে অধরার দিকে তাকাতে। অধরা আয়নার মধ্যে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে।রুদ্র অধরার চোখমুখ এবং ভাঙা আয়না দেখে সবকিছু বুঝতে পাড়ে।অধরার এমন অবস্থা দেখে তার বুকের ভেতর কেঁপে উঠে।তখন সে নিজের অজান্তে গুটিগুটি পায়ে অধরার দিকে যেতে।অধরা উঠে চলে যাচ্ছিলো।তখন রুদ্র হেঁচকা টানে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে।তার কোমড় আঁকড়ে ধরে।তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।

–“খুব কষ্ট হচ্ছে অধরা তোমার?তুমি খুব ঘেন্না করো রুদ্র কে!তারজন্য সবকিছু মেনে নিতে পারছোনা।কিন্তু বাস্তবতা কে তোমার মেনে নিতে হবে।এখানে আমার এবং তোমার কি করার আছে বলো।তুমি সবকিছুর জন্য দ্বায়ী।এখানে আমার কোন দোষ দিতে পারবে না।”

–অধরা মুখতুলে রুদ্রের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে বলে।

–“এখন ছাড়ো আমাকে রুদ্র।তোমার সব ইচ্ছে এবং সব প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেছে।এখন কিসের জন্য পড়ে আছো এখানে।তুমি আমার জীবনে দাগ লাগিয়ে দিয়ে।এখন কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছো।”

–রুদ্র অধরা কে হেঁচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে।রক্ত বর্ন চোখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–“তাহলে বুঝতে পারছো?তুমি যখন তোমার মিথ্যা কথা দিয়ে,আমার জীবনে দাগ লাগিয়ে দিয়েছিলে। তখন আমার কি অবস্থা হয়েছিল।তারপর তুমি ভাবলে কি করে রুদ্র তোমাকে এতো অল্পতে ছেড়ে দিবে।তুমি আমাকে প্রতিটি মুহূর্ত দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দিয়ে।এতো সহজে আমার কাছে থেকে মুক্তি পাবেনা।”

–অধরা চোয়াল শক্ত করে ফিসফিস করে বলে।

–“রুদ্রের মতো অমানুষের কাছে থেকে অধরা কি আশা করবে?তুমি তোমার আসল রূপ এবং চেহারা খুব ভালো করে দেখিয়ে দিলে।তোমার কাছে থেকে আমার মুক্তি পেতে হবেনা রুদ্র।কিন্তু তুমি কখনো অধরার কাছে থেকে মুক্তি পাবেনা মনে রেখো হিসাবে বরাবর।”

–রুদ্র মুচকি হেসে চোখ মেরে বলে।

–“তারজন্য তোমাকে নিজের যোগ্য মনে হয় অধরা।তোমার সাথে আমার খুব মিল।দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু নিজেকে কখনো লুজার মনে করবেনা।”

–অধরা রেগেমেগে আগুন হয়ে বলে।

–“তোমার আদিখ্যেতা শেষ হয়েছে ছাড়ো আমাকে?”

–রুদ্র নিজের মনের মধ্যে বলে।

–“আমার আদিখ্যেতার দেখছো কি?আমাকে পোড়াতে খুব ভালো লাগে এখন নিজে পুড়ো কেমন।”

–রুদ্রের মুখে বাকা হাসির রেখা ফুটে উঠে।সে নীরবতা কাটিয়ে বলে।

–“এতো তাড়া কিসের তোমার হ্যাঁ,এখানে বসো। নিজের কি অবস্থা করে রেখেছো।”

–রুদ্র অধরা কে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিতে।অধরা হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।রুদ্র অধরার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাকে টেনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিয়ে বলে।

–“তুমি সব সময় এমন কেন করো?এখনে বসো ভালো মেয়ের মতো।কোন কথা বলবে না!”

–অধরা রুদ্রের ব্যবহার দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়।সে বুঝতে পারছেনা রুদ্র কি চাচ্ছে।রুদ্র অধরার ভেজা এবং খোলা চুল গুলো হেয়ার ড্রাইভ দিয়ে শুকিয়ে।চুল গুলো আঁচড়িয়ে দিচ্ছে।অধরা আয়নার মধ্যে দিয়ে ফেলফেল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।রুদ্র সামনে তাকাতে সে নিজের চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।মুহূর্তের মাঝখানে তারা সবকিছু ভুলে নিজেদের মধ্যে বিভোর হয়ে যাচ্ছে।রুদ্রের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে দুষ্ট মিষ্টি হাসির রেখা এবং অধরা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।তখন রুদ্র অধরার কাধের ডান পাশে তার খোলা চুল গুলো রেখে।তার নগ্ন পিঠে আলতো করে চুম্মো খেতে।অধরার মনে শীতল অনুভূতি ভয়ে যায়।সে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে
নিজেকে সামলে নিয়ে।চোখ বন্ধ করে আছে।রুদ্র তখন তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।তার খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে।তার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে।

–“তোমার খোলা চুলের ঘ্রাণে রুদ্র তোমাতে বিভোর হয়ে যায় শ্যাম কন্যা।তবে আমাদের মাঝখানে কেন এতো দূরত্ব?তুমি কি কখনো বুঝতে পারবে না আমার মনের কথা।”

–অধরা রুদ্রের হাতদুটো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলে।

–“অধরা যে তোমাতে বিভোর রুদ্র।তুমি কি বুঝতে পারোনা তার মনের কথা।”

–সবকিছু ভুলে তারা নিজেদের মধ্যে বিভোর হচ্ছিলো।এমন সময় রুদ্রের ফোন বেজে উঠলো।তখন ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এসে।অধরা কে ছেড়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে।

–“নিজের লিমিটের মধ্যে থাকবে অধরা।আমার সুযোগ নেবার চেষ্টা করবেনা।খুব খারাপ হবে কিন্তু?”

–অধরা বোকার মতো তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে।

–“এখন সব দোষ আমার?তুমি নিজের ইচ্ছায় আমার কাছে আসবে এবং আমাকে কথা শুনাবে।তুমি ভুলে যাচ্ছো সবকিছু?কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে ব্যক্তিগত ভাবে কাটানো মুহূর্ত গুলো।”

–“অধরা?”

–“রুদ্র চিৎকার করবে না?শুনতে খারাপ লাগে!তুমি আমার সাথে ব্যক্তিগত মূহুর্ত কাটাতে পারবে।সেখানে অধরা বললে দোষ হবে।আচ্ছা আভা জানে এসব কিছু।আভার সাথে দেখা হলে সবকিছু বলো কেমন।”

–রুদ্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অধরা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ঝাপটা মেরে রুদ্রের মুখের মধ্যে।মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় এবং যাবার আগে বলে যায়।

–“দেখো এখন কেমন লাগে?আমার কাটা গায়ে তুমি নুনের ছিটা দিবে।তোমার কাটা গায়ে অধরা ছিটে দিতে পারবে না।”

–রুদ্র ধপাস করে বিছানার মধ্যে বসে পড়ে।তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।সে নিজের মাথার চুল গুলো খাঁমছে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।এখানে অধরা অন্যদিকে আভা?এখানে প্রতিশোধ এবং দ্বায়িত্ব অন্যদিকে ভালোবাসা।রুদ্র সবকিছুর মাঝখানে ডুবে যাচ্ছে।তখন তার ফোন দ্বিতীয় বারের মতো ভেজে উঠে।সে চোখের অশ্রু মুছে।ফোনের স্ক্রিনে তাকাতে দেখে অচেনা কোন নম্বার।তখন সে ফোন রিসিভ করতে কোন অচেনা পুরুষ কন্ঠ বলে।

–“হ্যালো রুদ্র।”

#চলবে…

(সবার রেসপন্স দেখে মনে হচ্ছে।লেখাটি দ্রুত শেষ করে দিতে হবে।সত্যি রেসপন্স কম থাকলে শেষ করে দিবো।কারণ এতো সময় নিয়ে লিখে তারপর এমন রেসপন্স সত্যি হতাশাজনক।হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here