#তোমাতেই শুরু তোমাতেই শেষ
#পার্টঃ১১
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
ধূসর আকাশে সূর্য উঠেছে,পাখিরা কোলাহল করছে,ফুলের কুন্জন হাসছে। নিরব নগরীর আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে তাও আমার ঘুম থেকে উঠার নাম নেই। আম্মু এসে বার বার ডাকছে রৌদ্রানী উঠ। উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আহিরদের বাড়ি থেকে মানুষ আসলো বলে…
আহিরদের বাসা থেকে মানুষ আসলো বলে শুনে আমি দড়ফড় করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি। মনে পড়ে গেলো কাল রাতে আব্বু কি বলেছিলো।
রওশানী: আপু দেখোতো আমায় কেমন লাগছে? [ হঠাৎ রওশানী আমার রুমে আসলো আমি রওশানীকে গুটিয়ে দেখলাম ওহ অনেক সেজেছে ]
আমি: অনেক মিষ্টি লাগছে তোকে রওশানী।
রওশানী অবাক হয়ে বললো বাহ তুমি আমার প্রশংসা করলে!
সকাল ১০ঃ৩০ বাজে। দরজার কলিংবেল খুলতেই আম্মু দেখলো আমার সব বান্ধবীরা এসেছে। ওরা ভালো টালো আছে কিনা এইসব জিজ্ঞেস করেই আমার রুমে আসলো। আমার রুমে এসেই বললো আহারে রৌদ্রানী অবশেষে তোর বিয়েটাও হয়ে এলো।[ হাসতে হাসতে]
মিমি: শুধু এই আমারি বিয়ে হবেনা [ কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে]
ওর ফেইস দেখে আমরা সবাই হেসে দিলাম।
হঠাৎ দেখলাম তনয়ার ফোনে নীল ভাইয়ার কল আসছে। আমরা সবাই ভেঙু করে বললাম আমাদের জিজু কল দিয়েছে যা কথা বল। তনয়া লজ্জা পেয়ে ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। আর এইদিকে সুমাইয়া,মিমি আর নীলাশা আমাকে সাজাতে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পরোই রওশানী খবর নিয়ে আসলো আমাকে নিচে নিয়ে যেতে। আমার অনেক বিরক্ত লাগছে কেনোনা,আমি বিয়েটা এখন করতে চায়না।তনয়া ইতিমধ্যে কথা শেষ করে চলে আসলো এরপর ওরা সবাই আমাকে নিচে নিয়ে গেলো। সোফায় বসতেই শফিক আংকেল বললো,বাহ্ আজকেতো মামনিকে অনেক সুন্দর লাগছে। আব্বু তখন বললো, কার মেয়ে দেখতে হবেনা!
বিনিময়ে সবাই আলতো হাসলো। আমি বেশ বুঝতে পারছি আহির ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সকল কথোপকথন শেষে আব্বু আর শফিক আংকেল ঠিক করলেন আজকেই আমাকে রিং পড়াবে। আমি এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয় তবুও আব্বুর ভয়ে কিছু বলতেও পারছিনা। আমাকে যেই আংটি পড়াতে যাবে,,
মিস্টার আদনান হোসাইন আপনি কি করে ভাবলেন? আমার ভালোবাসাকে আপনি অন্যের করে ফেলবেন? “এই কথাটা শুনে আমার হাত থেকে আংটি টা পড়ে যায়। আর মাথা তুলে পিছনে তাকায়..আমি সহ সবাই অবাক হয়ে আছে..আর আব্বু ঘাবড়ে গেছে প্রায়। সবাই হা হয়ে পিছনে থাকা ব্যক্তি টাকে দেখে অবাকের শেষ সীমানায়। আমার মুখে মৃদুভাবেই বেরিয়ে এলো রোদ স্যার?!
#তোমাতেই শুরু তোমাতেই শেষ
#পার্টঃ অন্তীম পর্ব।
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
রোদ স্যার! আমার আব্বুকে নাম নিয়ে কথা বলছেন? আর স্যার আব্বুকে চিনলো কিভাবে? কিন্তু আমার ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার কথাটা কে বললো?
আব্বু :রোদ!
রোদ স্যার:অবাক হলেন আংকেল? অবাকতো হওয়ারী কথা হাজারহোক ৪বছর আগের অতীত আপনার সামনে।
আব্বু : তুমি কি বলতে চাচ্ছো রোদ? আর তুমি এইখানে কেনো? [ রেগে]
তারপর রোদ স্যার কেউ একজনকে বলছে ভেতরে আয় আদর।
আব্বু আদর নামটা শুনতেই ঘাবড়ে বলে আদর! ওহ এইখানে আসবে কিভাবে? পাগল হয়ে গেছো নাকি তুমি?
রোদ স্যার:তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,হুম ঠিকিতো আপনিতো আদরকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন তাহলে কিভাবে সে এইখানে আসবে তাইতো?
আমি এইবার অবাক হয়ে বললাম আব্বু!
আব্বু বললো,,মারে বিশ্বাস কর ওহ মিথ্যে বলছে।
নাহ আদনান হোসাইন রোদ ভাইয়া কোনো ভুল বলছেনা এবং মিথ্যেও বলেনি “এই কথা শুনে আমরা রোদ স্যারের পিছনে তাকালাম দেখলাম কালো শার্ট পড়ে আছে একটা ছেলে। বয়স বড়জোর ২৫/২৬ হবে। দেখতে বেশ সুদর্শন। কিন্তু এই ছেলেটাকে আমার বেশ চিনা চিনা লাগছে।
আব্বু : আদর! দেখো তুমি আমার মেয়েকে পাবেনা আমার মেয়েকে আমার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।
আদর: আপনি এতোটা জঘন্য সেইটা ওইদিন রোদ ভাইয়া আমাকে না বাঁচালে আমি তা হয়তো আজ কাউকে প্রকাশ করতে পারতাম না।
রোদ স্যার : বিয়েতো আদরের সাথেই হবে রৌদ্রানীর।
আমি এইবার আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। চিৎকার করে বললাম কি পেয়েছেন কি আপনারা? আমি খেলনা? আমাকে যে যেইভাবে পারছেন সেইভাবেই ভাগ করে ফেলছেন। আমি তো বুঝতেই পারছিনা রোদ স্যার আব্বুকে চিনলো কিভাবে? আর আদর কে আপনি?
আদর : আমি তোমাকে সব খুলে বলছি,,
মনে আছে রৌদ্রানী? আজ থেকে কয়েক বছর আগে আদ্রিশ নামে কেউ তোমাকে অনেক ভালোবাসতো! আর তুমি বার বার রিজেক্ট করতে?
আমি অবাক হয়ে বললাম তার মানে আপনি আদ্রিশ রায়হান আদর?
আদর: হুম ঠিক চিনতে পেরেছো। তুমি যখন আমাকে বার বার রিজেক্ট করছিলে তখন আমি এইখানে এসেছিলাম তোমাকে চাইতে তোমার বাবার কাছে। সেইদিন তোমরা কেউ ছিলেনা বাসায় আংকেল একা ছিলো৷ আংকেল রাজিও হয়ে যায় কিন্তু কে জানতো? তোমার বাবার এই রাজি হওয়া একটা নাটক ছিলো মাত্র। ওইদিন ওনি লোক পাঠায় আমাকে মেরে ফেলার। কিন্তু সৌভাগ্যবশতো আমি বেঁচে যায় আর আমাকে বাচিয়েছেন রোদ ভাইয়া।
রুমে বসা সবাই বাকরুদ্ধ। আমি হোট করেই পড়ে গেছি নিচে। আর মনে মনে ভাবছি আব্বু এতোটা জঘন্য কাজ করলো?
আমি:নিচের দিকে চেয়ে বললাম তাহলে আপনিই আমাকে মেসেজ দিতেন?
আদর: না আমি না দিতো রোদ ভাইয়া। আমিতো কোমায় ছিলাম। কি রোদ ভাইয়া তাইনা?
হঠাৎ আদরের এমন প্রশ্নে হচকিয়ে উঠে রোদ স্যার।
রোদ স্যারঃতুই কি বলছিস এইসব আদর? আমিতো রৌদ্রানী কে ভালোভাবে চিনিইনা।
আদর: না মিথ্যে বলছো তুমি আর এইটার প্রমান হলো এই ডায়েরী। [ হাতে একটা ডায়েরী দেখিয়ে বললো আদর]
আদরের হাতে এই ডায়েরী দেখে রোদ স্যার ঘাবড়ে যান। আমি উঠে এই ডায়েরীটা আদরের হাত থেকে নিয়ে পড়তে লাগলাম ”
“” মেয়েটার হাসিটা অনেক সুন্দর। আমাদের বাড়ি যেইখানে সেইখানে মেয়েটার নানু বাড়ি। আমি ক্রিকেট খেলছিলাম বলটা মেয়েটার গায়ে পড়াতে রেগে যায় মেয়েটা। রেগে এসে আমাকে অনেক কথা শুনাচ্ছে মেয়েটা আর আমি এক ধ্যানে মেয়েটাকে দেখছি। এতো সুন্দর কোনো মেয়ে হয় এই মেয়েটাকে না দেখলে হয়তো জানতামি না৷ পুরাই পুতুল। মেয়েটি রেগে গটগট করে চলে যায়। আর আমি চেয়ে থাকি তার যাওয়ার পানে।
হঠাৎ মেয়েটা পাশের বাড়ির চাচীর সাথে আমাদের বাড়ি আসে বিকেলে। মেয়েটাকে মা নাকি ছোটবেলা থেকেই অনেক আদর করতো যদিও মেয়েটা ছিলো খুবই মিশুক। মেয়েটার সাথে আমি আস্তে আস্তে মিশতে থাকি। মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করতেই সে জানায় তার নাম রোদ্রানী। আমার নাম যখন বললান সাদাফ হোসাইন রোদ তখন মেয়েটা জোরে দিলো রোদ রৌদ্রানী। এইভাবে মিশতে মিশতে মেয়েটার অনেক ভালো বন্ধু হয়ে যায় আমি। কিন্তু কখন থেকে আমার কিশোর মন রৌদ্রানীকে ভালোবাসতে শুরু করে তা বুঝতেই পারলাম না। কিন্তু একদিন রৌদ্রানীর বাবা আমাকে রৌদ্রানীর পাশে দেখে ফেলে আর বলে এরপর থেকে যেনো আমার মেয়ের পাশে তোকে না দেখি।কিন্তু তবুও রৌদ্রানীর সাথে কথা আর দেখা না করে থাকতে পারতাম না।
একদিন সকালে গিয়ে দেখি রৌদ্রানী কোথাও নেই৷ মায়ের কাছ থেকে শুনতে পায় তাকে নিয়ে শহরে চলে গেছে। ওইদিন আমি যতোটা কান্না করেছি তার এক পরিমান ও সারাজীবন কান্না করেনি।
#ভালোবাসি পুতুল#
এরপর ডায়েরীটা আমি আর পরতে পারলাম না
আমি ডায়েরীটা পড়তেই দৌড়ে গিয়ে রোদ স্যারকে জড়িয়ে ধরি আর বলি সাদাফ ভাইয়া!তুমি কেনো লোকালে? যে তুমি আমার সেই ছোটবেলার সাথী।কেনো বললেনা কেনো?আর কেনোইবা মিথ্যে নাম বললে ভার্সিটিতে?[ কান্না করতে করতে] রোদ স্যার আমাকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে ভেবেছিলাম এক্সাম শেষে বলে দিবো কিন্তু আদর যখন কোমা থেকে ফিরে দেখালো তুমি আমি কয়েকমিনিটের জন্য যেনো থমকে গেলাম কি করবো বুঝতে পারছিলাম না সরি পুতুল।
আদর ভাইয়াঃ রোদ ভাইয়া আমার থেকে বেশি তোমায় ভালোবাসে আর তাই আমি চাইনা রোদ ভাইয়ার ভালোবাসা আমি কেড়ে নেয়।
বাসার সবাই অবাক। তনয়া,সুমাইয়া, মিমি,নীলাশা হাততালি দিলো।
কইরে আমার পুতুল মা কই? ডাকটা শুনেই রোদ স্যারের বুক থেকে মাথাটা দেখলাম চিরচেনা সেই মুখ রোদের মা। আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।
আহির ভাইয়া বললো,অনেক আগে থেকেই ভাবছি আমি তোমাদেরকে বলবো যে আমি রৌদ্রানীকে বোনের চোখে দেখি আর কিছুইনা আমি ওকে বিয়ে করতে চায় [ মিমির দিকে ইশারা করে ]
আমরা সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছি।
বাবাও তার কাজের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
আজকে আমার সাথে রোদের বিয়ে,নীলাশার সাথে সাফওয়ান ভাইয়ার বিয়ে,সুমাইয়ার সাথে রণ ভাইয়ার বিয়ে তনয়ার সাথে নীল ভাইয়ার বিয়ে এবং মিমির সাাথে আহির ভাইয়ার বিয়ে। আমরা সব বান্ধবী একসাথে বিয়ে করবো বলে একই ডেইটে আমাদের বিয়ে ফিক্সড করা হয়েছে। আদর ভাইয়া লন্ডনে চলে গিয়েছে ওইখানে ওনার বাবা -মা ওনার বিয়ের আয়োজন করছেন।
ইশিতা আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো, ইশ আজকে যদি আমার বিয়েটাও হতো[ হেসে]
ওর কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। তনয়া আমার পাশেই বসে ছিলো আর বললো,অবশেষে স্যারের সাথে বিয়ে হিহিহি।
(সমাপ্ত)