#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৩
আহিকে বাসায় ড্রোপ করে দিয়ে মাত্রই বাড়ি ফিরেছে আদিয়াত।তাও আহি কি এতো সহজে রাজি হয়?আদিয়াত ওকে দাঁতেদাঁত চেপে যখন বলেছিলো ‘ আমার সাথে এখন না গেলে এই ভরা ক্যাম্পাসে তোকে কোলে তুলে নিবো।’ আহি সেই ভয়ে আদিয়াতের সাথে যেতে রাজি হয়।
হয়েছে কি আদিয়াত ভার্সিটি গিয়েই আহিকে ফোন করে কিন্তু আহি রিসিভ করে না।পরে মেসেজে হুমকি ধামকি দেয় অনেক এরপর আদিয়াতের কাছে যায়।কারন সে চায় না তার ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ এই ব্যাপারে জানুক।সে সবাইকে বলেছে নিহান এসেছে তাকে নিতে তাই সে চলে যাচ্ছে।কি আর করার?আদিয়াত তো যেই একরোখা।আহিও আর আদিয়াতের সাথে না পেরে উঠে ওর সাথে চলে যায়।
এবং আহিকে বাড়িতে সেফলিভাবে পৌছে দিয়ে আদি বাড়িতে চলে আসে।
আদিয়াত বাড়িতে ডুকতেই সেহরা জাহান এর প্রশ্ন ” এতোক্ষন কোথায় ছিলি?”
আদিয়াত একপলক মা’কে দেখে নিলো।গম্ভীর গলায় বলে, ” যেখানে যাওয়ার গিয়েছি।”
সেহরা জাহান আদিয়াতের কথায় রেগে গেলেন।কিভাবে কথা বলছে মা’র সাথে।তিনি বলেন,”আদিয়াত ভুলে যেও না আমি তোমার মা।”
আদিয়াত তীক্ষ্ম চোখে তাকালো। কন্ঠে যথাসম্ভব শান্ত করে বলে,” সেই জন্যেই তো চুপ করে আছি মা।নাহলে এই বাড়ি ছেড়ে সেই কবেই চলে যেতাম।”
সেহরা জাহানের চোখে পানি এলো।এটাই স্বাভাবিক কোন ছেলে তার মা’র সাথে এইভাবে কথা বললে সে কষ্ট পাবেই।তিনি কান্নাজড়িত গলায় বলে, ” মা’কে কষ্ট দিতে তোর একটুও খারাপ লাগছে না?”
আদিয়াতের চোখ লালচে হয়ে আছে।সে স্বাভাবিক মুখভঙ্গি করে উত্তর দেয়, ” কষ্ট লাগে তো অনেক কষ্ট লাগে।জানো আমার না কান্না পাচ্ছে।কিন্তু আমি কাঁদতে পারি না।কারন আমি ছেলে তাই।
মা’কে কষ্ট দিয়ে মনে হচ্ছে আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।কিন্তু সেই মা যখন আমাকে কষ্ট দিলো এতোগুলো বছর তখন তার কষ্ট লাগে নি?একটা বার তার ছেলের কথা তো সেই মা ভাবেনি?”
সেহরা জাহান মাথা নিচু করে রাখলেন।আসলেই তো সে তো আদিয়াত কিসে খুশি তা চিন্তা করেননি।কিন্তু আদৌ কি তা ঠিক।সে তো আদিয়াতের সুখের কথা চিন্তা করেই আহিকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।সেহরা জাহান বলেন, ” আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্যেই করেছি আদি।”
আদি উঠে দাঁড়ায় পাশে রাখা টি-টেবিলে জোড়ে লাত্থি দিয়ে বলে, ” তুমি কি ঠিক করেছো মা?কিছুই ঠিক করোনি।তুমি সব ধ্বংশ করে দিলে মা।
তুমি জানো না তুমি কি করে ফেলেছো।তোমার কি আহিয়ানার প্রতি এতোটুকুও ভালোবাসা ছিলো না?কি করে পারলে এতো ভালো একটা মেয়েকে এইভাবে নরকের মতো দুনিয়ায় ঠেলে দিতে।কেন করলে মা কেন?”
সেহরা জাহান চেঁচিয়ে বললেন, ” আমি যা করেছি বেশ করেছি।আহিকে আমি ভালোবাসি।কিন্তু ওকে আমার পুত্রবধু হিসেবে আমি কখনই মেনে নিতে পারবো না।আর ও এই বাড়িতে থাকলে তুই ওকে ছাড়বি না।তাই আমি ওকে এই বাড়ি থেকেই দূরে পাঠিয়ে দিয়েছি।কিন্তু আমি তো খারাপ কারো কাছে দেয়নি।ও এখন ভালোই আছে ওর চাচা চাচির কাছে।”
আদিয়াত চিৎকার করে বলে, ” হ্যা তাইতো এতো ভালো জায়গায় পাঠিয়েছো যে আহিয়ানা এখন আর আগের আহিয়ানা নেই।যে বদলে গেছে পুরোপুরি বদলে গেছে।যে আহিয়ানা আগে নিজেকে শালিনভাবে রাখতো।এখন সেই আহিয়ানা জিন্স টপ্স পরে।গায়ে যার উড়না থাকে না ঠিকমতো।ড্রিংক্স করে, সিগারেট খায়,ক্লাবে গিয়ে একেরপর এক মাদকদ্রব্য সেবন করে।
দেখো মা ওকে তুমি কতো ভালো জায়গায় পাঠিয়েছো।”
সেহরা জাহান থমকে গেলেন।এইগুলো কি শুনছে সে।আহি এইসব করে।এটা তো তিনি কোনদিন কল্পনাও করেননি।সে তো শুধু আহিকে সবার আদিয়াতের কাছ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিলো।এইসব তিনি কোনকালেও চাইতেন না।এতোটা নিষ্ঠুর তিনি নন।যে একজন ভালো মেয়েকে এইভাবে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবেন।সেহরা জাহান কাপা গলায় বলে উঠেন, ” এইসব কি বলছিস তুই আদি?”
আদিয়াত থপ করে সোফায় বসে পড়ে। দুহাতে মাথা চেপে ধরে বললো, ” যা বলছি তাই মা।আহিয়ানা আর আগের আহিয়ানা নেই মা।তুমি ওকে মেরে দিয়েছো মা।নরকে পাঠিয়ে দিয়েছো।”
” আহি আপুকে তুই খুজে পেয়েছিস ভাইয়া!”
সিয়ার কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো শুনে আদিয়াত আর সেহরা জাহান অবাক হয়ে তাকায়।দেখে গেটের সামনে কলেজ ড্রেস পরিহিত সিয়া দাঁড়িয়ে আছে।সিয়া দৌড়ে গিয়ে আদিয়াতকে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করে,
” আহি আপু কোথায় ভাইয়া?আমাকে বল।আমি যাবো আহি আপুর কাছে।প্লিজ ভাইয়া।”
আদিয়াতকে সিয়াকে সোফায় বসায়।ওকে একগ্লাস পানি খাইয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
“তুই কাদিস না সিয়া।জলদি আহিয়ানা আমি নিয়ে আসবো।”
” আমাকে আহি আপুর সাথে দেখা করাতে নিয়ে যা ভাইয়া।”
” নিবো! তোকে আহিয়ানা’র কাছে নিবো।এখন কান্নাকাটি বন্ধ করে যা ফ্রেস হয়ে আয়।ক্ষুদা লেগেছে তোর সাথে খাবো।”
সিয়া চোখের জল মুছে নিজের রুমে চলে গেলো।তারপর আদিয়াত সেহরা জাহানকে দেখে তাচ্ছিল্যভরা হাসি দিয়ে চলে গেলো।সেহরা জাহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।আজ হয়তো তার করা কর্মকান্ডেরই তিনি শ্বাস্তি পাচ্ছেন।
—————-
সিয়া ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেস হয়ে সুয়ে আছে।সবাই ওকে অবাক চোখে দেখছে।আহি’কে কেউ কোনদিন এই সময়ে বাড়িতে দেখে না।আহি সেসবে পাত্তা দেয় না। যার যা ভাবার সে তা ভাবুক।মানুষ তো কতো কিছুই ভাবে।
আহি চোখ বুজলো।হঠাৎ দরজায় খট খট আওয়াজে চোখ মেলে তাকায়।আহি উঠে বসে।আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দেখে নিহান হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।হাতে তার খাবারের প্লেট।আহি ভ্রু-কুচকে বলে,
” এইগুলো নিয়ে এখানে কেন?”
নিহান হাসিমুখেই বললো,” আগে ভীতরে আসতে দে তারপর বলছি।”
আহি সরে দাড়ালো।নিহান ঘরে প্রবেশ করেই বিছানায় আয়েশ করে বসে।তারপর আহিকে উদ্দেশ্য করে বললো,” আয় এখানে বস।”
আহি বিনাবাক্যে নিহানের পাশে গিয়ে বসলো।আহি বসতেই নিহান ভাত মেখে এক লোকমা ভাত আহি’র সামনে ধরলো।তারপর বলে, ” নেহ হা কর।”
আহি ভাতটুকু মুখে পুরে নিলো।নিহান হাসি মুখেই বলে, ” জানিস লাঞ্চে বাড়িতে এসে দাদি থেকে শুনলাম তুই না-কি বাড়িতে। তাই দু ভাই বোনের খাবার একপ্লেটে নিয়ে আসলাম।অনেকদিন হলো একসাথে দুপুরে খাই না।”
আহি তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে।মানুষটা এতো ভালো না হলেও পারতো।আহি অন্যদিক বাদ কিন্তু এইদিক দিয়ে সে অনেক ভাগ্যবতী।আহি আবার খাওয়াতে নিলে আহি থামিয়ে দেয়।তারপর প্লেটের এককোণ থেকে নিজে ভাত মেখে নিহানের সামনে ধরে নিহানও হাসিমুখে বোনের হাতে খেয়ে নেয়।
খাওয়া দাওয়া শেষে।নিহান আহিকে বললো,
” আর কতো আহি?এইবার তো নিজের জীবনটাকে আর একটা সুযোগ দে।এইভাবে আর কতোদিন।সবারই তো জীবনে একটা লাইফ পার্টনার দরকার।যে তোর খেয়াল রাখবে,তোকে আগলে রাখবে।আদিয়াতকে ভুলে। নতুন করে সব কিছু শুরু করতে পারিস তো বোন।”
আহি’র বুকটা ধ্বক করে উঠলো।আবার? আবার সেই একই দ্বিধায় তাকে পড়তে হবে।কিন্তু কেন আহি আর চায় না এসব সয্য করতে। চায় না।
আহিকে এলোমেলো দৃষ্টিতে নিহানের দিক তাকাতে দেখে।নিহান দ্রুত বলে, ” দেখ হাইপার হবি না।আমি জাস্ট তোকে বললাম।কোন জোড় নেই তোর উপর।তুই মাথায় চাপ নিস না।আমি সরি বোন।”
আহি নিহানকে জড়িয়ে ধরে।ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে চোখ বুজে।ওর চোখ দিয়ে অস্রুধারা বইছে।নিহান আহি’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আহি কান্নাকন্ঠে বলে, ” ভাইয়া!! আমি চাইনা আর এসব সম্পর্কে জড়াতে।কেন ভাইয়া?আমি কি একা নিজেকে সাবলম্বি করে নিজের পায়ে দাড়াতে পারি না।”
নিহান বলে, ” পারিস বোন। পারবি না কেন?আমার আহি সব পারবে।তবুও বোন চলার পথে একজনের ভরশাযোগ্য হাত আমাদের চাই।যেন হোচট খেয়ে পরে যাওয়ার যময় এই হাতটিকে আঁকড়ে ধরত পারি।”
” একবার তো করেছোই ভাইয়া।নিজের ইচ্ছা,অনিচ্ছা,ভালোবাসা সব বিসর্জন দিয়ে। তোমাদের মতামত গ্রহন করেছিলাম ভাইয়া।কিন্তু কি হলো ভাইয়া?সেই সমাজের কাছে আমিই দোষী হলাম,আমি হলাম অলক্ষী,অপয়া।আমাদের সাথে জুড়ে গেলো বিধবা ট্যাগ। কেন ভাইয়া?কেন?আমি কি করেছি ভাইয়া?আমার কি দোষ ছিলো।”
নিহান চুপ করে রইলো।কি’বা আর বলবে?ওর আর বলার কোন ভাষা নেই।আজ পরিস্থিতির স্বিকার ওরা সবাই।আহি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।নিহান আহিকে সুইয়ে দিয়ে। নানান রকম চিন্তাভাবমা মস্তিষ্কে নিয়ে এলোমেলো পা ফেলে রুম থেকে চলে গেলো।
#চলবে_________