তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -০২

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ০২

সকাল আট টা বেজে বিশ মিনিট ঘড়ির এলার্মের তীব্র শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আহি’র।চোখ মুখ কুচকে সে উঠে বসে।মাথাটা বড্ড ঝিম ঝিম করছে তার।কাল রাত অতিরিক্ত ড্রিংক করার কারনে মাথা ব্যাথাটা যেন একেবারে ঝেকে ধরেছে ওকে।
বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়।ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে দেখছে সে।আজ পাঁচ বছর হয়ে গেছে সে চলে গেছে।আর এই পাঁচ বছরে ও নিজেও বদলে গেছে।অনেক বদলে গেছে।এতোটাই বদলে গিয়েছে যে আগের আহি আর এখনকার আহিকে দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে নাহ।আগে যেই আহি সেলোয়ার-কামিজ পড়তো,কোথায় বের হলে মাথায় হিজাব করতো, শান্ত-শিষ্ঠ স্বভাবের ছিলো। আর এখনকার আহি?
সে তো পুরাই ভিন্ন জগতের। সে এখন ট্প্স,জিন্স, লং শার্ট পড়ে,হিজাব দূরে থাক চুল ব্রাউন কালার করা থ্রী স্টেপ কাট দেওয়া চুলে,ড্রিংক্স করে,সিগারেট খায়।মানে খারাপের শেষ পর্যায় যাকে বলে ও তার থেকেও বেশি খারাপ।
আহি আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।তারপর বলে,

–” হাহ্! আহি তুই আজ কতোট চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিস। যার জন্যে ভালো হয়েও আরো ভালো হওয়ার চেষ্টা করতি, সেই তো তোকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেছে।তো তুই কেন তাকে নিয়ে কষ্ট পাচ্ছিস?তুই তো আর আগের দূর্বল আহি না যে একটুতেই ভেঙে পড়তো! তুই বদলে গেছিস আর এখন তুই যেই আহি! সেই আহি ভেঙে পড়বে নাহ।”

কষ্টগুলো আবারো বুকে উথালপাতাল শুরু করে দিয়েছে।চোখ জ্বালাপোড়া করছে একটু কাদার জন্যে।কিন্তু আহি তো কাঁদবে না।কিছুতেই কাঁদবে নাহ।আহি দ্রুত ড্রয়ার খুলে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে মুখে পুরে নিলো।যেই লাইটার জ্বালাতে যাবে।তখনি দরজা খুলে প্রেবেশ করে নিহান।বোনকে এমন সাত সকাল বেলা সিগারেট খেতে দেখে দ্রুত পায়ে বোনের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো,

–” আহিইই! তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস?কাল রাতের হ্যাংওভার এখনো কাটেনি।আর তুই ঘুম থেকে উঠেই সিগারেট খাচ্ছিস?কেন এতোটা নিকৃষ্ট হতে চাচ্ছিস তুই। যেটা তুই না সেটা কেন সবাইকে প্রমান করে দেখাচ্ছিস?প্লিজ এমন করিস না আর।”

নিহানের কথায় আহি কিছুই বললো না।শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,

–” ভাইয়া সিগারেট টা দে।”

–” নাহ দিবো নাহ।”

–” ভাইয়া দে বলছি।”

–” বলেছি না দিবো না।”

এইবার আহিকে প্রচন্ড রেগে গিয়ে হাতের কাছে ফ্লাওয়ার ব্যাস ছিলো সেটা এক আছাড়ে ভেঙে ফেলে দিলো।তারপর চিৎকার করে বলে,

–” কি ভাবিস কি তোরা নিজেদের? হ্যা! আমাকে কি আগের মতো পেয়েছিস যে তোরা যা বলবি আমি তাই করবো?নো, নেভার।আমি আর আগের মতো নই।আগের আহি মারা গেছে সেই পাঁচ বছর আগেই মারা গেছে বুজেছিস।তোরা বুজেছিস।”

আহি আবারো কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে মাথা চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো।ব্যাথাতুর আওয়াজ করতে লাগলো।প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় মনে হয় তার কলিজা ছিড়ে বের হয়ে যাবে।নিহান দ্রুত বোনের কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

–” বোন বোন আমার।কষ্ট হচ্ছে।কেন এতোটা চিৎকার করিস।ডক্টর তোকে কতোবার বারন করেছে এতোটা হাইপার না হতে।তুই আমার কথা কেন শুনিস না।”

আহি একহাতে নিহানের বুকের কাছের শার্ট খামছে ধরলো আরেকহাতে নিজের চুল টেনে ধরে বলে,

–” আমি মরে কেন যাই না ভাইয়া।মরে কেন যাইয়া।আত্মহত্যা পাপ না হলে সেই কবেই মরে যেতাম।দুনিয়াতে তো কম পাপ করেনি।এই আত্মহত্যা নামক মহাপাপ আমি করতে চাই না।তুই কেন সেদিন আমাকে বাঁচালি আমাকে মরে যেতে দিতি সেদিন।এটলিস্ট তোরা ভালো থাকতি আর আমিও মরে শান্তি পেতাম।প্লিজ ভাইয়া।”

নিহানের গলা কাঁপছে। বহু কষ্টে সে বোনকে কোলে তুলে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে বললো,

–” তুই শান্ত হো! শান্ত হো তুই বোন।”

তারপর ওষুধের বক্স হতে একটা ওষুধ বের করে আহিকে খাইয়ে দিলো।এতো সহজে কি ও খেতে চায় জোড় করে খাইয়েছে।মাথা ব্যাথায় অস্থির হয়ে আহি জ্ঞান হারালো।আহিকে জ্ঞান হারাতে দেখে নিহান দ্রুত ডক্টর কে ফোন করলো।ডক্টরের সাথে কথা বলে নিহান বোনের দিকে অসহায় চোখে তাকালো।এই কারনেই ঠিক এই কারনেই সে আহিকে কিছুই বলতে পারে না।আটকাতে পারে না এসব খারাপ কাজ থেকে।কারন ও আটকাতে গেলেই আহি প্রচন্ড হাইপার হয়ে চিল্লাপাল্লা করে পরে ওর মাথায় চাপ পড়ে এতে আহি’র অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।
নিহানের ভাবনার মাজেই একজন সার্ভেন্ট ডক্টর নিয়ে আসলো।এদিকে বাড়িতে ডক্টর আসতে দেখে নিহানের দাদি,আর নিহানের মা দুজনেই ডক্টরের পিছে পিছে আহি’র রুমে আসে।নিহানের মা কিছু বলতে নিবেন তার আগেই নিহান তার মাকে থামিয়ে দেয়।

–” প্লিজ মা এখন আর প্লিজ তুমি শুরু হয়ে যেও না।আহি’র অবস্থা ভালো না।এখন চেঁচামেচি করো না প্লিজ।”

নিহানের মা আর কিছু বলার সাহস পেলো না।তবুও রাগে ফুসফুস করতে লাগলেন।দাদি গিয়ে আহি’র পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।চোখ দিয়ে তার কষ্টের অস্রু-ধারা বইয়ে।ছেলে আর ছেলের বউকে তো বাঁচাতে পারিনি।তাদের একমাত্র চিহ্ন এই নাতনিটা। ওর কিছু হয়ে গেলে! না কিছুই ভাবতে পারছে না দাদি।তাদের পরিবারটাই কেন এমন?কেন তারা একটা হাসিখুশি পরিবারের মতো থাকতে পারে না।কষ্ট গুলো কেন তাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।এই ‘কেন?’ এর উত্তর আজও তারা পায়নি। আর ভবিষ্যতে পাবে কি-না তাও জানে নাহ।

ডক্টর আহিকে চেক-আপ করে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে দিলো।আর নতুন কিছু মেডিসিন প্রেস্ক্রাইব করে দিলো।তার বলে,

–” আমিই আগেই বলেছিলাম আহিকে যেন কোন কিছুর জন্যে প্রেসার না দেওয়া হয়।এতে ওর মাথায় চাপ পড়বে।মাত্রারিক্ত চাপের কারনে ব্রেনে রক্ত জমাট বেধে যাবে আর এতে ওর মৃত্যুও হতে পারে।পাঁচ বছর আগে সেই ভয়াবহ এক্সিডেন্টে যে বেঁচে ফিরে এসেছে এটাই লাখ লাখ শুকরিয়া করুন।আর ওকে ওর মতো থাকতে দিন।”

থেমে আবারো বলেন,

–” আহি কি ড্রিংক্স এর পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছে?”

নিহান অসহায় চোখে ডক্টরের দিকে তাকালো।ডক্টর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

–” এমন চলতে থাকলে তো ওর ফুসফুস, কিডনি সব নষ্ট হয়ে যাবে।”

নিহান ধরা গলায় বলে,

–” সেইজন্যেই তো আটকিয়েছিলাম আর তার ফলাফল আপনার সামনে।”

–” হুম! বুজলাম এভাবে হবে নাহ।ওকে একটা ভালো সাইক্রাইটিস্ট দেখানো দরকার।আসলে ও একটা ট্রোমার মধ্যে আছে।ওর মস্তিষ্ক একটা কথাই ধারন করেছে যে ‘ যে করেই হোক ওকে সবার সামনে খারাপ হতে হবে।’। ”

ডক্টর আরো কিছু কথা বলে চলে গেলেন।নিহান ডক্টর কে এগিয়ে দিয়ে আসলো।আর দাদি বসে রইলেন আহি’র পাশে।

——————-
‘ আহমেদ ভিলা!’
——————-
আজ আহমেদ ভিলায় খুশির জোয়ার।বিভিন্ন কিছু আয়োজনের তোরজোড় চলছে।আজ তাদের এক মাত্র ছেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেশে ফিরবে।এর থেকে খুশির আর কিই বা হতে পারে।সিয়া তো রেডি হয়ে বসে আছে সেই তখন থেকে।সে যাবে তার ভাইকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে।
সিয়া ঘর থেকে জোড়ে বলে উঠে,

–” মাম্মাম! পাপা কোথায় এখনো আসছে না কেন?পাপা না আসলে ভাইয়াকে আনতে যাবো কিভাবে?আর মাত্র একঘন্টা বাকি ভাইয়ার ফ্লাইট ল্যান্ড করতে।পাপা’র এতোক্ষন লাগে।”

সিয়ার আম্মু রান্না ঘর থেকে জবাব দিলেন,

–” সিয়া এতো অধৈর্য কেন তুই?তোর পাপা আসছো তো না-কি?এখন আমি রান্না করছি আমার হাতে মার খাতে না চাইলে চিল্লা-পাল্লা কমা।”

মায়ের কথায় সিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
কেন তারা এমন করে?তারা কেন বুজে না ভাইয়া আসবে তার।তার ভাই তার কাছে কি তা ও কাউকে বলে বুজাতে পারবে না।এ ছাড়াও তার ভাইকে তার অনেককিছু বলার আছে।এই পাঁচবছরে কি কি হয়েছে অনেক কিছু বলার আছে।সিয়া নিজের টেবিলের পাশে রাখা একটা ফটোফ্রেমের দিকে তাকালো।সেখানে দেখা যাচ্ছে সোফায় মাঝখানে বসে আছে সিয়া তার দুপাশে ওর বাবা আর মা।আর ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সিয়ার ভাই আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একটা মিষ্টি চেহারার অধিকারি হাস্যজ্জল একটা মেয়ে।সিয়া ছবিটা হাতে নিয়ে সেই মেয়েটির মুখ স্পর্শ করে আস্তে করে বলে,

–” কেন চলে গেলে আহি আপু।তুমি জানো না আমি তোমাকে কতোটা মিস করছি।জানো আজ ভাইয়া আসছে।তুমি থাকলে এই আনন্দটা তো আরো দ্বিগুন হয়ে যেতো।কিন্তু তুমি চলে গেলে। কেন চলে গেলে আহি আপু?।”

সিয়া যখন আপনমনে কথা বলতে ব্যস্ত তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো।সিয়ার আম্মু রান্না ঘর থেকে বলেন,

–” সিয়া দেখ তো মনে হয় তোর বাবা এসেছে।”

সিয়া ছবিটা টেবিলে রেখে।দরজা খুলতে চলে যায়।দরজা খুলতে খুলতে সে বলছে,

–” পাপা তুমি এতো দেরি করলে কেন?জানো না ভাইয়াকে রিসিভ করতে যেতে হবে আমাদের।তুমি এতোটা…….”

আর বলতে পারলো না।মুখ উঠিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিকে দেখেই সিয়া স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।আর ওকে এমন তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সামনের ব্যাক্তিটি দুষ্টু হাসি দিয়ে ওকে সরিয়ে ভীতড়ে ডুকে গেলো।সিয়া এখনো হা করে তাকিয়ে আছে ব্যাক্তিটির দিকে।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here