#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (২১)
রশিদ মিয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে আশপাশটা ভালো করে দেখলেন। মেয়ের ছায়াও না পেয়ে উৎকণ্ঠায় পাশের বাড়িগুলোতে খোঁজ নিতে শুরু করলেন। খোঁজ নিতে নিতে কল দিলেন ইশাদের নাম্বারে। অস্থির হয়ে বললেন,
” তিহিকে খুঁজে পাচ্ছি না! ”
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
” তিহি আমার সামনে আছে, বাবা। বরই খাচ্ছে। ”
রশিদ মিয়া থমকে গেলেন। সামনের লোকটির থেকে সরে এসে বললেন,
” তিহি তোমার কাছে? ”
” না, আমি তিহির কাছে। ”
রশিদ মিয়া প্রথমে বুঝতে পারলেন না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
” তুমি শেরপুরে? ”
” হ্যাঁ। ”
” কখন এলে? বাসায় আসনি কেন? ”
” কিছুক্ষণ আগেই এসে পৌঁছালাম। আপনাদের বাড়ির মোড়টাতে আসতে দেখি তিহি একটা মেয়ের সাথে কোথাও যাচ্ছে। আমি তো ও কে-ই দেখতে এসেছিলাম তাই আর ভেতরে যাইনি। ওর পিছু পিছু অন্য বাসায় চলে আসছি। বাবা, মেয়েটা কি আপনাদের পরিচিত? ”
” হ্যাঁ, আমার ভাইয়ের মেয়ে। নাম তৃপ্তি। ওদের বাড়ি বাজারের দিকে। মেয়েটা এতদূর চলে গেল! তুমি থাকো, আমি আসছি। ”
রশিদ মিয়া ফোন কেটে রিকশা ধরলেন। দেরি করা ঠিক হবে না। এ গাঁয়ের অনেকেই জানে না তিহি ফেরত এসেছে। হঠাৎ দেখে কে কী বলে ফেলবে!
___________
ইশাদ লুকিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকেছিল। সুযোগ বুঝে বাঁশের ঝোপের আড়ালে চলে যায়। এই মুহূর্তে, এভাবে তিহির সামনে পড়তে চাচ্ছে না। তাকে দেখে কী ভেবে বসবে কে জানে!
তৃপ্তিদের বারান্দায় বসে লবণমরিচ দিয়ে বরই খাচ্ছে তিহি। চোখ, মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে দীর্ঘ সময় পর পরিচিত স্বাদ পাচ্ছে। ঠোঁটে ফুটছে সে তৃপ্ততার ছাপ! ইশাদ চট করে ফোন বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিল। ইনাকে দেখাতে হবে ছবিগুলো। তার জন্যই তো আসা। অসুখ হয়েছে শুনে মাকে দেখবে বলে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছিল। পরে যখন শুনেছে তাকে দেখলে মায়ের অসুখ বাড়বে তখন থেমেছে। অনুরোধ করে বলেছে, বাবাই যখন দেখতে যাবে তখন যেন ছবি তুলে আনে।
ছবি তোলা শেষে ফোন পকেটে ভরে দেখে তিহি উঠোনে নেমে এসেছে। তৃপ্তি নামের মেয়েটি সাথে নেই। তিহি পেছনে না তাকিয়ে সোজা রাস্তায় চলে গেল। ইশাদ ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসে দ্রুত। তিহির পেছন নিতে নিতে রশিদ মিয়ার নাম্বারে কল দেয়। জানতে পারে তিনি রিকশায় আছেন। প্রায় চলে এসেছেন। এদিকে তিহি বাড়ির দিকের পথ না ধরে অন্য পথে হাঁটছে। ইশাদ ভারি দুশ্চিন্তায় পড়ল। লুকিয়ে পিছু নিবে নাকি ডেকে থামাবে দ্বিধায় পড়ে গেল। সেসময় অপরিচিত কেউ বলে উঠল,
” আপনাকে তো চিনতে পারলাম না। এ গাঁয়ে নতুন? কোন বাড়ির মেহমান? ”
ইশাদ উত্তর দিতে পারল না। তার আগেই তিহি বলে উঠল,
” আপনি এখানে? ”
ইশাদ চমকে তাকাল তিহির দিকে। ভয়ে থমকে গেল তার কণ্ঠস্বর। তিহি দূর থেকেই বলল,
” আমার পিছু নিয়েছেন? তাজের মতো? আমাকে জোর করে বিয়ে করবেন? তুলে নিয়ে যাবেন? অন্ধকারের ঘরে বন্দী করবেন? ”
ইশাদ পাথরের মতো থমকে যাওয়া শরীরটা নিয়ে স্পষ্ট দেখল তিহি ভয় পাচ্ছে। আতঙ্কে কন্ঠস্বর কাঁপছে। ঘন ঘন নিশ্বাস টানছে। জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা! দৌড়ে গিয়ে তিহিকে সামলাবে সে সুযোগও পেল না। তিহির চিৎকারে বলা কথাগুলোতে গাঁয়ের লোক একসাথে জড়ো হয়ে গেছে। তাকে ঘিরে ধরে নানা প্রশ্ন করছে। গণধোলাই শুরু হলে কেউ একজন বলল,
” মরে যাবে তো, ছেড়ে দেও। এবার পুলিশের হাতে তুলে দেই, বাকিটা উনারাই দেখবেন। ”
____________
রশিদ মিয়ার জরুরি তলবে ইমদাদ আর সোবহান শাইখ এসে পৌঁছায় থানায়। তার মুখ থেকে সবটা শোনার পর জামিনের জন্য উকিলের সাথে কথা বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন সোবহান শাইখ। তাকে শান্ত করতে রশিদ মিয়া বলেন,
” অস্থির হবেন না, ভাইসাব। উনাদের সব বলেছি। তিহি আর ইশাদের বিয়ের প্রমাণপত্র দেখালেই ছেড়ে দেবে জানিয়েছে। ”
ইমদাদের দিকে ঘুরে বললেন,
” কাবিননামা এনেছ? ”
ইমদাদ তড়িঘড়িতে একটা কাগজ বের করে দিল। রশিদ মিয়া কাগজ হাতে ওসির সাথে কথা বলতে ভেতরে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর ইশাদকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। সোবহান শাইখ ছেলের বেহাল দেখে দৌড়ে আসেন। কাঁধ চেপে ধরে বললেন,
” তুই ঠিক আছিস তো, বাবা? ”
ইশাদ ম্লান হেসে মাথা নাড়ে। ইমদাদ পাথরের মতো শক্ত হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। বন্ধুর এই হাল তার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে। ইশাদ কাছে আসলে রশিদ মিয়ার জায়গা দখল করে সে। বন্ধুকে কাছে পেয়ে ইশাদ জানতে চায় তিহির কথা। সে উত্তরে বলল,
” অচেতন হওয়ার পর হাসপাতালে নিয়েছিল গ্রামের লোকেরা। জ্ঞান ফেরার পর বাসায় নেওয়া হয়েছে। ”
কথার মাঝে ঘড়ি দেখে বলল,
” এখন মনে হয় ঘুমাচ্ছে। ”
ইশাদ কিছু বলল না। কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে হেসে ফেলল। ইমদাদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” পাগলের মতো হাসছিস কেন? ”
ইশাদ সহাস্যে বলল,
” পাগলের মতো না পাগলই। তা না হলে বউয়ের পিছ ধরে থানায় আসি? রামধোলাই খাই? ”
ইশাদ আবার হেসে ফেলল। হাসি থামিয়ে বলল,
” তিহির কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে আয় তো। ইনা দেখবে। দুপুরে যে ছবিগুলো তুলেছি, ওগুলোতে অসুস্থ মনে হচ্ছে না। ইনামা আমাকে ভুল বুঝবে। ”
________
নতুন বাসায় আসবাবপত্র গুছিয়ে মিহিকে এনেছে সন্ধ্যা নাগাদ। দু-কামরার ফ্ল্যাটটা ঘুরিয়ে দেখানো শেষে ইমদাদ বলল,
” পছন্দ হয়েছে? ”
মিহি মুখে জবাব দিল না। মুগ্ধ চোখে চারপাশে তাকিয়ে মাথা একপাশে কাত করল। ইমদাদ মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল,
” একা থাকতে পারবে? ”
মিহি মুগ্ধ দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল ইমদাদের দিকে। বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারল না। মাথা নিচু করে বলল,
” হ্যাঁ। ”
মিহির থুতনির নিচে আঙুল রাখল ইমদাদ। উপরে হালকা ধাক্কা দিতে মিহির মুখ সোজা হয়ে গেল। ইমদাদের চোখে চোখ পড়লে সে বলল,
” ভয় পাবে না তো? ভেবে বলো। সেরকম হলে রাধুনিকে পার্মামেন্ট রেখে দেব। ”
মিহি উত্তর দিল না। চোখের পলক ফেলল না। কিছুক্ষণ নীরব থেকে মোহগ্রস্ত হয়ে বলল,
” আপনি এমন আদর করে কথা বলছেন কেন? ”
ইমদাদের হাসি চওড়া হলো। মিহির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল,
” তোমার ভালো লাগছে না? ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে এখন থেকে আদর করেই কথা বলব। ”
” কেন? ”
ইমদাদ মিহির থুতনির নিচ থেকে হাত সরিয়ে ফেলল। এককদম পিছিয়ে বলল,
” তোমার ভালো লাগছে তাই। ”
ইমদাদ রুম থেকে চলে যেতে গিয়ে থামল। ঘাড় ফিরিয়ে বলল,
” আমারও ভালো লাগছে তাই। ”
ইমদাদ রাতের খাবার আনল বাহির থেকে। দুজনে একসাথে খেয়ে উঠার পর মিহি বিছানা ঝাড় দিল। বালিশ নিয়ে শুয়ে বলল,
” আপনি ঘুমাবেন না? এভাবে বসে আছেন কেন?
ইমদাদ চমকে কেঁপে উঠলে মিহি বলল,
” ভয় পেলেন নাকি? ”
ইমদাদ উত্তর দিল না। ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকল মিহির মুখটায়। রাতে খাওয়া শেষ করা পর্যন্তও সে ঠিক ছিল। বিছানায় বসার পর থেকে কেমন জানি হয়ে গেল। মিহির পাশে শোয়ার সাহস পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে পাশাপাশি শুলেই কিছু একটা হয়ে যাবে অথচ কয়েকদিন আগেও এই মেয়েটাকে তার বাচ্চা মনে হয়েছে। বাচ্চা শরীরের গন্ধে তার কিছুই হবে না এমন গর্বে কত রাত পাশাপাশি শুয়েছে। কিন্তু আজ? ইমদাদ নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দিল। মিহির থেকে দূরে সরে বসে বলল,
” হ্যাঁ, তুমি ঘুমাও। আমি একটু পর ঘুমাব। ”
মিহি কথা বাড়াল না। বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়ল। ইমদাদ আলো নিভিয়ে রুমের ভেতর পায়চারি করছে আর অস্থিরমনে বিড়বিড় করছে, ‘ এই মেয়েটা তো আমার। মেয়ে কেন বলছি? মিহি তো আমার বউ। তাহলে পাশে শুতে এত ভয় কেন পাচ্ছি? শুলেই কি ছুঁয়ে ফেলব? ছুঁয়ে ফেললেই কী হবে? বউই তো হয়। আইনেও বৈধ, ধর্মেও বৈধ। তবুও এত ভয় কেন পাচ্ছি? বয়স কম বলে? কত কম? খুব বেশি তো না। ‘ ইমদাদ আবছা আলোয় মিহির দিকে তাকাল। সাথে সাথে কান্নার মতো মুখ করে বলল, ‘ তুমি আমার বউ না, আমার পাপের শাস্তি। নাহলে আমার জিনিসকে আমারমতো করে ছুঁতে এত ভয় করি? যেখানে আমার জানা তুমি একটুও বাঁধা দিবে না। ‘
ইমদাদ আরও কিছুক্ষণ নীরব দর্শন করল মিহিকে। দীর্ঘ নিশ্বাস টানল কয়েকবার। মাঝরাতের দিকে আলগোছে মিহির পাশে শুয়ে এপাশ-ওপাশ করে মিহির দিকে স্থির হয়ে শুয়ে পড়ল। চুপচাপ ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে চেয়ে থেকে মাথা তুলে আনল নিজের বুকে। আলতো জড়িয়ে বলল, ‘ তুমি শাস্তিরূপে কেন মৃত্যুরূপে আসলেও আমি গ্রহণ করে নিব। ‘
_________
সকালে ইমদাদ চোখ মেলে দেখল মিহি রুমে নেই। লাফিয়ে উঠে চিৎকার করল,
” মিহি? এই মিহি? ”
মিহি বারান্দায় কাপড় মেলছিল। ইমদাদের ডাকে দৌড়ে এসে বলল,
” কী হয়েছে? ”
ইমদাদ চোখ বড় বড় করে মিহির শরীরের শাড়ি দেখল। চুলে জড়ানো তোয়ালের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি গোসল করেছ কেন? ”
মিহি উত্তর দেওয়ার সুযোগ পেল না। ইমদাদ পাগলের মতো বলতে থাকল,
” ও মাই গড! আমি সত্যি সত্যি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি? কিভাবে হারালাম? নিশ্চয় ঘুমের মধ্যে। এজন্যই কিছু মনে পড়ছে না! ”
ইমদাদ মিহিকে টেনে বিছানায় বসাল। শরীরের এখানে-ওখানে দেখতে দেখতে আপনমনে বিড়বিড় করছে,
‘ কী করে পারলাম? ছোট্ট একটা মেয়ে! যদি বাচ্চা-কাচ্চা হয়ে যায়? কী করে সামলাবে? ও আল্লাহ! ‘ ইমদাদ মিহিকে ফেলে ওভাবেই বাইরে বেরিয়ে গেল। মিনিট কয়েকের মধ্যে ফিরে আসল ঝড়ের গতিতে। গ্লাসে পানি নিয়ে মিহির মুখে একটা ট্যাবলেট দিয়ে বলল,
” একদম গিলে ফেলবে। ”
ইমদাদ নিজেই মুখে পানি ঢেলে দিল। ট্যাবলেট খাওয়ার পর বলল,
” পুরো পানিটা খাও। ”
মিহি পানি খেলে তাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে বলল,
” একদম বিছানা থেকে নামবে না। শুয়ে থাকো। ”
মিহি চুপচাপ শুয়ে থাকলে ইমদাদ এমনভাবে নিশ্বাস ছাড়ল যেন ভয়ঙ্কর কিছু থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করেছে। মন ও শরীর একটু শান্ত হলে গোসল করে আসল। পরার জন্য শার্ট নিতে নিতে বলল,
” কেমন একটা গন্ধ আসছে নাকে। তুমি চুলায় কিছু বসিয়েছ? ”
মিহি শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,
” না। ”
” তাহলে গন্ধ কিসের? ”
” আপনার পারফিউমের। ”
” পারফিউম? ”
” হ্যাঁ, সকালে আমার হাত লেগে পড়ে গেছিল। ওটা সরাতে গিয়ে আমার হাতে লাগছে। আমি অনেক ধোয়ার পরও গন্ধ যাচ্ছিল না, তাই গোসল করেছি। নাহলে তো খাবারে লেগেও গন্ধ করত। দেখুন তো এখনও গন্ধ করছে নাকি। ”
মিহি হাতদুটো সামনে মেলে ধরে আছে। ইমদাদ শার্ট ফেলে বিস্ময় নিয়ে বলল,
” এই গন্ধের জন্য তুমি গোসল করেছ? ”
” হ্যাঁ। নাহলে এত সকালে গোসল করব কেন? পানি কী ঠাণ্ডা! ”
মিহি এমনভাব করল যেন ওর শরীরে কেউ ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিছে। ইমদাদ ওর নাকের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
” তারমানে আমাদের মধ্যে কিছু হয়নি? ”
” কী হয়নি? ”
ইমদাদ বোকার মতো চেয়ে আছে মিহির দিকে। ঠিক তখনই মনে পড়ল, রাতে শোয়ার সময় যে পাতলা গেঞ্জি পরেছিল সকালে সেটা গায়েই ছিল। তাহলে এমন সন্দেহ মনে জাগল কিভাবে? ইমদাদ খানিকটা শক্ত স্বরে বলল,
” যদি কিছু না হয়েই থাকে তাহলে ট্যাবলেট খেলে কেন? ”
মিহি সরল গলায় উত্তর দিল,
” আপনি খায়িয়ে দিলেন তাই। ”
” তুমি জানো ওটা কিসের ট্যাবলেট ছিল? ”
” কিসের? ”
ইমদাদ বলতে পারল না। নিজের বোকামির জন্য হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে মিহির মাথা চেপে ধরল বুকের মধ্যে। সে অবস্থায় বলল,
” আমি চেয়েছিলাম আমার সংসারে এমন কেউ থাকুক যে ভালোবেসে আমার খেয়াল রাখবে, যত্ন নিবে, আগলে রাখবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম আমি ভুল ছিলাম। আমি আসলে চেয়েছিলাম আমার সংসারে এমন কেউ থাকুক যাকে ভালোবেসে আমি খেয়াল রাখব, যত্ন নেব, আগলে রাখব। আর সেই মানুষটা আমি পেয়ে গেছি। ”
ইমদাদ মিহির চুলে চুমু খেয়ে মাথাটা সরাতে চাইল। মিহি সরল না। ইমদাদকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মোহিত কণ্ঠে বলল,
” আপনার শরীরের গন্ধটা ভালো লাগছে। ”
#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি
#সিজন_৩
পর্ব (২২)
” আপনার শরীরের গন্ধটা ভালো লাগছে। ”
মিহির সরল অনুভূতি প্রকাশে ইমদাদ থমতম খেল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্থির হয়ে থাকল। মিহির হাতের বাঁধন আরেকটু গাঢ় হয়ে আসতে ইমদাদ অস্বস্থিতে পড়ে যায়। ধীরে ও নরম গলায় ডাকল,
” মিহি? ”
মিহি উত্তর দিল না। ইমদাদের বুকে ল্যাপ্টে আছে। উষ্ণ নিশ্বাস ছাড়ছে ঘন ঘন। ইমদাদের অভ্যস্ত শরীরখানা আসন্ন বিপদ টের পেল। মিহিকে নিজের থেকে আলগা করল জোর করে। এক পলকের জন্য তার মুখটায় না তাকিয়ে ফেলে দেওয়া শার্ট তুলে নিয়ে বলল,
” রাধুনী একটু পরেই চলে আসবে। ”
মিহির দিক থেকে কোনো উত্তর এলো না। ইমদাদ বোধ হয় উত্তরের আশাও করেনি। চটপট মানিব্যাগ আর ঘড়িটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ডাইনিং পার হয়ে মূল দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ধপ করে নিশ্বাস ফেলে ডাকল,
” মিহি? ”
মিহি ডাক শুনেও চুপ থাকল। বিছানা থেকে উঠল না। ইমদাদ জুতাসহ ভেতরে উঁকি দিয়ে বলল,
” আমাকে খেয়ে যেতে বলবে না? ”
মিহি চোখ তুলে তাকাল। নরচ চাহনিতে অন্যকিছুর আকুলতা! ইমদাদ শুকনো ঢোক গিলল। চোখ নামিয়ে বলল,
” তুমি খেয়ে নিও। আমি যাচ্ছি। ”
কথাটুকু বলে ইমদাদ দরজার দিকে এগুল না, দাঁড়িয়ে রইল। মিহি নামিয়ে রাখা চোখদুটোতে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে উঠল। ইমদাদের পাশ দিয়ে খাবার রুমে গিয়ে বলল,
” খাবার দিয়েছি। ”
ইমদাদ চুপচাপ নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে গেল।
___________
রাতের খাবার সাজিয়ে ছেলেকে ডাকতে এলেন শাহিনা শাইখা। অন্ধকার রুমে আলো জ্বালিয়ে দেখেন ইশাদ এলোমেলো হয়ে ঘুমাচ্ছে। শরীরে কম্বলখানি তুলে দিতে গিয়ে থমকে গেলেন। ইশাদের শরীরের ক্ষতগুলো শুকিয়ে আসলেও দাগগুলো এখনও স্পষ্ট। সেখানে আদুরে মর্দন করতে করতে চোখে জল চলে আসল। টলটলে অশ্রু নিয়ে কম্বল জড়িয়ে দিলেন শরীরে। খাবারের জন্য ডাকলেন না। অনেকগুলো রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছে, এবার বুঝি শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। খাবারের চেয়েও ঘুমের প্রয়োজন বেশি। শাহিনা শাইখা সাবধানে হেঁটে এসে আলো নেভাতে গিয়ে দেয়ালে সবচেয়ে বড় ছবির ফ্রেমে চোখ রাখলেন। বেনারশী জড়ানো স্নিগ্ধ ও লাবণ্য ভরা গালে ছুঁয়ে বিড়বিড় করলেন, ‘ ফিরে আয় না, মা। আমার ছেলেটা যে খুব কষ্ট পাচ্ছে! ‘ চোখের পানি গালে গড়িয়ে পড়লে আলো নিভিয়ে দিলেন। আঁচল মুখে চেপে নিজের রুমে ছুটে গেলেন।
সোবহান শাইখ বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। স্ত্রীর চঞ্চল পায়ের শব্দে চোখ মেলে চাইলেন। উঠে বসে জিজ্ঞেস করলেন,
” কী হয়েছে, শাহিনা? ”
শাহিনা শাইখা উত্তর দিতে পারলেন না। নীঃশব্দে কাঁদছেন অবিরত। সোবহান শাইখ আর বসে থাকতে পারলেন না। স্ত্রীর নিকট এসে উদ্বিগ্ন গলায় সুধালেন,
” কাঁদছ কেন? ”
শাহিনা শাইখা অশ্রুসিক্ত চোখে স্বামীর দিকে তাকালেন। তার প্রতি গভীর উদ্বেগটুকু ধরে ফেলতেই নীরব কান্না শব্দে পরিণতি হলো। ভীষণ আহ্লাদে স্বামীর কাঁধে মাথা ফেলে দুঃখ প্রকাশ করলেন,
” আমার ছেলেটা ভালো নেই। একটুও ভালো নেই। ওর কষ্ট দেখলেই আমার বুকটা ছিঁড়ে যায়। আপনি একটা কিছু করেন। আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। ”
সোবহান শাইখ সহানুভূতি চোখে তাকালেন। স্ত্রীকে একহাতে হালকাভাবে জড়িয়ে ধরলেন। স্বামীর এই প্রবোধভরা স্পর্শটুকুতে আরও গলে পড়লেন শাহিনা শাইখা। ডানহাতে তার পাঞ্জাবিতে ঢাকা বুকটা খামচে ধরে বললেন,
” তিহিকে ফিরিয়ে আনো। ও কে সুস্থ করতে গিয়ে আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ”
সোবহান শাইখের চাহনি বদলে গেল। ভীষণ রকমের স্বার্থপর হয়ে পড়লেন। ছেলেকে নিয়ে একটুও চিন্তা করতে ইচ্ছে হলো না। তাকে ফেলে স্ত্রীর রোদন মুখটাতে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে হলো। সোহাগ করতে ইচ্ছে হলো। যৌবনে বেঁধে রাখা দু-একটা মধুর বাক্য বলতে ইচ্ছে হলো।
শাহিনা শাইখা ছেলের চিন্তায় স্বামীর মনের ইচ্ছে, চোখের ভাষা, স্পর্শের প্রকাশটুকু বুঝতে পারলেন না। বুঝতে পারলে হয়তো কান্নার গতি এখনকার চেয়েও হাজারগুণ বেড়ে যেত! কখনও মুখ ফুটে কিছু চায়নি বলে কি চাওয়া থাকতে নেই?
সোবহান শাইখ খুব সাবধানে স্ত্রীকে গভীরভাবে স্পর্শ করলেন। গভীর চোখে আরও কিছুক্ষণ নীরব প্রেম নিবেদন করে বললেন,
” এভাবে কেউ কাঁদে? ইশাদ দেখলে ভাববে আমি বকেছি। আবার যদি তোমাকে নিয়ে চলে যায়? ”
শাহিনা শাইখা স্বামীর দিকে তাকালেন। অবুঝের মতো চেয়ে থেকে স্বামীর পায়ে পা মিলিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলেন। সোবহান শাইখ একটা বালিশ ঠিক করে তাকে শুয়িয়ে দিয়ে বললেন,
” চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। একজনের চিন্তায় সকলে অসুস্থ হয়ে পড়লে কীভাবে হবে? ছেলের দেখাদেখি তো নিজেও খাচ্ছ না, ঘুমাচ্ছ না। সন্ধ্যায় দেখলাম মাথা ব্যথার ওষুধ খেয়েছ। শুধু ওষুধ খেলে হবে? বিশ্রাম নিতে হবে না? ”
স্বামীর এই যত্নটুকু গ্রহণ করতেই শাহিনা শাইখার ভেজা চোখ শুকিয়ে আসল। এক মুহূর্তের জন্য সকল দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। শুকনো চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলেন পঞ্চাশের কোটায় থাকা মানুষটির দিকে। সোবহান শাইখ স্ত্রীর পাশে আধশোয়া হলেন। নরম ধমক দিয়ে বললেন,
” বোকার মতো তাকিয়ে আছ কেন? চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক। ”
শাহিনা শাইখা হালকা ছিটকে উঠলেও ঘাবড়ালেন না, ভয় পেলেন না। বিস্ময়ভরা চোখ দুটোর পাতা বন্ধ করলে সোবহান শাইখ স্ত্রীর মাথায় হাত রাখলেন। মিনিটের মধ্যে তন্দ্রায় ডুবে ভারী নিশ্বাস ফেললে সোবহান শাইখ অবাক হলেন। এত অল্প সময়ে কেউ ঘুমাতে পারে ব্যাপারটি বিশ্বাসই করতে পারছেন না যেন!
___________
ইমদাদ রাতের খাবার খেতে বসে বলল,
” তুমি খাবে না? ”
মিহি একটু ফাঁকে দাঁড়িয়ে ছিল। সেখান থেকে মৃদু গলায় বলল,
” খেয়েছি। ”
ইমদাদ সন্দেহ চোখে তাকাল। মিহির উদাস মুখে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” সত্যি খেয়েছ? ”
মিহি মুখে উত্তর না দিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝাল। ইমদাদ তবুও বিশ্বাস করতে পারল না। এদিকে জেরা করার মতো পরিস্থিতিও নেই। মেয়েটা হঠাৎ করে এমন এলোমেলো হয়ে গেল কেন? অদ্ভুত আচরণ করছে। এই এতদূরে জড়সড় হয়ে দাঁড়ানোর কী দরকার? ইমদাদ তো এত দূরত্ব চায়নি। ইমদাদ ভাবনায় জর্জরিত হয়ে খাবারটা শেষ করল।
ঘড়ির কাঁটা এগারোটায় পৌঁছাতেও যখন মিহি ঘুমাতে এলো না তখন ইমদাদ ডাকল। প্রথম ডাকে এলো না, দ্বিতীয় ডাকেও না। তৃতীয় ডাকে গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢুকে বলল,
” কিছু লাগবে? ”
ইমদাদ ভ্রূ কুঞ্চিত করে চেয়ে থাকল কিছুক্ষণ। বলল,
” কী করছিলে? ”
” কিছু না। ”
ইমদাদ একটু চুপ থেকে বলল,
” কথা আছে, এখানে এসে বসো। ”
মিহি জায়গা থেকে নড়ল না। ইমদাদ ধমকে উঠল,
” কী হলো? বললাম না এখানে এসে বসতে? ”
মিহি খানিকটা ভয় পেল। একপলক ইমদাদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। ধীরপায়ে হেঁটে এসে খাটের একপাশে বসল। ইমদাদ পা তুলে বসে বলল,
” আমি তোমার অচেনা? এত দূরে বসছ কেন? এদিকে বসো। ”
ইমদাদ হাত দিয়ে জায়গা দেখিয়ে দিল। মিহি দেখানো জায়গায় বসল আড়ষ্টভাবে। ইমদাদ খাট ছেড়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসল। মিহির দুই হাত ধরে বলল,
” এমন করছ কেন, মিহু? আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি? ”
মিহি চুপ মেরে থাকলে ইমদাদ কাতর স্বরে বলল,
” চুপ করে থেকো না, প্লিজ। ”
মিহি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে ইমদাদ ছেড়ে দিল। সরে যেতে চাইলে বলল,
” একদম নড়বে না। বসো চুপ করে। আমার কথার উত্তর দেও। কী করেছি আমি? ”
মিহি উঠতে গিয়েও আবার বসে পড়ল। হাত দিয়ে শাড়ির এক অংশ খামচে ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকল। ইমদাদ অসহায়বোধ করছে আবার রাগও উঠছে। মিহির মতো সেও নিশ্চুপ থাকল অনেক্ষণ। হঠাৎ বলল,
” আমার দিকে তাকাও। ”
মিহি তাকাল না। ইমদাদ থুতনি চেপে ধরে মুখ উঁচু করে শক্ত গলায় বলল,
” আমি তাকাতে বলেছি, মিহি। ”
এ পর্যায়ে মিহি তাকাল। কিন্তু দৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। পাতা নেমে যেতে ইমদাদ অসহায় কণ্ঠে বলল,
” কী হয়েছে বলবে? নাকি ইশাদকে বলে দেব? ”
মিহি চোখ বড় বড় করে বলল,
” ইশাদ ভাইয়াকে কী বলবেন? ”
মিহির প্রশ্নে ইমদাদ বোকা বনে গেল। রাগের মাথায় ইশাদের নাম বলে ফেলেছে। সত্যিই তো কী বলবে সে? মিহি তখনও উত্তরের আশায় চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। ইমদাদ মিনমিন করে বলল,
” বলব, তুমি আমাকে রাগাচ্ছ, কষ্ট দিচ্ছ। বোনকে যেন বকে দেয়। বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য এইটুকু তো করতেই পারে। ”
মিহি দুঃখী মুখ করে বলল,
” সরি। ”
” এসব সরি দিয়ে কিছু হবে না। কী হয়েছে তাই বলো। ”
মিহি আবার চুপ হয়ে গেলে ইমদাদ অধৈর্য্য হয়ে বলল,
” বলবে নাকি বাসা থেকে বের হয়ে যাব? ”
মিহি তখনও চুপ থাকলে ইমদাদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। বাইরে যাওয়ার জন্য এককদম ফেলতে মিহি দ্রুত বলল,
” না, যাবেন না। ”
ইমদাদ দূরে দাঁড়িয়েই বলল,
” তাহলে বলো, কী হয়েছে? ”
” আমি জানি না। ”
” কী জানো না? ”
” আমার কী হয়েছে তাই জানি না। ”
” এটা আবার কেমন কথা? মিথ্যে বলছ? ”
ইমদাদ মিহির পাশে বসলে সে একটু সরে গেল। বলল,
” আপনাকে দেখলেই আমার লজ্জা লাগে। কাছে আসলে আরও বেশি। ”
” এইটুকুই? ”
” না, আরও কেমন জানি লাগে। মনে হয়…”
মিহি মাঝপথে চুপ হয়ে গেলে ইমদাদ প্রশ্ন করল,
” মনে হয়? ”
মিহি অনুরোধের সুরে বলল,
” ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাই? ”
ইমদাদের অনুমতির অপেক্ষা না করেই মিহি শুয়ে পড়ল। গায়ে কম্বল জড়িয়ে বলল,
” আপনিও শুয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়েছে। ”
ইমদাদ শুলো না। ঠাঁই বসে রইল। সেদিনের সকালের মুহূর্তটা মনে পড়ল। মিহির মোহভরা কণ্ঠ কানে বাজল। নিজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার পরও কেমন কাঁপছিল মেয়েটা! ঐ মুহূর্তে ওর ভেতরে কী চলছিল মিহি বুঝতে না পারলেও ইমদাদ ঠিক বুঝেছে। তাহলে কি মিহি এখনও ঐ মুহূর্তেই আটকে আছে?
ইমদাদ ভাবনায় মগ্ন থাকল অনেকটা সময়। মিহির কণ্ঠেই ভাবনাচ্ছেদ ঘটল,
” ঘুমাবেন না? ”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে বসে আছেন কেন? ”
” এমনি। ”
মিহি শোয়া থেকে উঠল। একটা চাদর এনে ইমদাদের বাহুতে প্যাঁচিয়ে দিয়ে বলল,
” এবার বসে থাকুন। ”
মিহি শোয়ার জন্য খাটের এপাশে আসতে নিলে ইমদাদ হাত ধরল। নিজের হাঁটুর উপর বসাল। কানের নিচ দিয়ে আঙুল ফেলে গাল চেপে বলল,
” আগে তো তুমি এমন লজ্জা পেয়ে দূরে থাকতে না, মিহি। ”
মিহি চোখ বুজে ছটফট করতে করতে বলল,
” আগে তো আপনি আমাকে এমন নরমভাবে ছুঁতেন না। আদুরে গলায় কথা বলতেন না। ”
” তুমি আমাকে বিগড়ে দিচ্ছ। এটা কিন্তু ঠিক না। তুমি এখনও আঠারোতে পড়োনি। ”
” তাহলে ঐদিন চুমু খেলেন কেন? ”
ইমদাদ বিস্ময় নিয়ে বলল,
” তুমি ওটা এখনও মনে রেখেছ? ”
” তো রাখব না? আমার স্বামীর প্রথম চুমু! ”
ইমদাদ হেসে ফেলল। সহাস্যে বলল,
” পাকা বুড়ি একটা। দাঁড়াও কালই মাকে ডেকে আনছি। তোমার এসব পাকনামি দেখাতে হবে। ”
মিহি মুখ শুকনো করে বলল,
” আর করব না। ”
ইমদাদ মিহির গালে চুমু খেয়ে বলল,
” মনখারাপ করতে হবে না। মজা করছিলাম। যাও শুয়ে পড়ো। ”
মিহির মনখারাপ কাটল না। নিজের জায়গায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকল। ইমদাদ পাশে শুতেই মিহি বলল,
” আপনি বউয়ের প্রথম চুমু নিবেন না? ”
” না। ”
” কেন? ”
” তোমাকে আমার সুবিধার লাগছে না। একটু আগেও লজ্জায় তাকাতে পারছিলে না আর এখন সরাসরি চুমুর প্রস্তাব দিচ্ছ। ”
মিহি চুপ হয়ে গেল। একটু পর আবার বলল,
” সত্যিই নিবেন না? ”
ইমদাদ চোখ বন্ধ করে বলল,
” না। ”
মিহি নিজের জায়গা থেকে সরে ইমদাদের বুকের উপর উঠে আসল। রাগ নিয়ে বলল,
” নিবেন, অবশ্যই নিবেন। আমি জোর করে দেব। ”
বলতে বলতে ইমদাদের ঠোঁটে ঘন ঘন কয়েকটা চুমু খেয়ে বলল,
” আমার না আপনাকে অনেক ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, খুব কাছে থাকতে ইচ্ছে করে। লজ্জা কাটিয়ে দেন না! ”
চলবে
চলবে