#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৮.
-“কি চুপ করে আছিস কেনো বল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিলিস? শান্তা আবারো জিজ্ঞেস করে ওঠে।
বেলা শান্তার কথা শুনে শান্তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় দেখে শান্তা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আসায়। শান্তা বেলার হাতের দিকে তাকাতেই দেখে তার হাতে ডায়েরি।
-” আরে এটাতো সেই ডায়েরিটা না যেটাতে তোর সব সিক্রেট কথা লেখা আছে। শান্তা বেলার হাতের দিকে উদ্দেশ্যে বলে ওঠে।
-” হুম এটাই সেটা। বেলা শান্ত ভাবে বলে ওঠে।
-“তারমানে তুই এই ডায়েরি নিয়ে পুরোনো স্মৃতি ঘেঁটে যাচ্ছিলিস! আর আমি ভাবলাম তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্চছিলিস। শান্তা মুখ চেপে হেসে বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ আমিতো ঘোড়া তাইনা যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাবো। বেলা মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ লম্বা বডি ফিজিক্স দেখে তেমনই মনে হচ্ছে ঘোড়া ঘোড়া। শান্তা টিজ করে বলে ওঠে।
-“টুসুনের বাচ্চা আজকের তোর একদিন কি আমার একদিন। বলেই বেলা নিজের হাতের ডায়েরি বিছানায় ফেলে শান্তার পিছে পিছে ছুটতে থাকে।
শান্তা বেলার থেকে বাঁচার জন্যে দৌড়াচ্ছে আর বেলাকে খেপাচ্ছে আর বেলাও ছুটে চলেছে শান্তাকে ধরার জন্যে। বেলার আর শান্তার চিৎকার চেঁচামেচিতে নিশান বেদ ওম সারা রুহি জাকিয়া রুমের ভিতর ঢুকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কারন ততক্ষণে রুমের মধ্যে তারা দৌড়ের মাঠ বানিয়ে ফেলেছে তারা।
-“আরে কি হচ্ছে এইসব? তোরা এমন দৌড় ছুট কেনো করছিস? রুহি বলে ওঠে।
-” আরে রু বেলা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ খুলে রেখেই ঘুমাচ্চছিলো ঠিক যেমন করে ঘোড়া ঘুমায়। শান্তা বেলার থেকে বাঁচার জন্যে ছুটতে ছুটতে বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ! ঘোড়া!! জাকিয়া অবাক বিস্ময় হয়ে বলে ওঠে।
-“দাঁড়া টুসুনের বাচ্চা ঘোড়া না আজকে আমি তোকে দেখাবো ঘোড়া দৌড় কাকে বলে দাড়া তুই। বেলা ছুটতে ছুটতে হাতের কাছে কুশন তুলে নিয়ে ছুড়ে মারছে।
-“বেলা ইয়ার শান্তার বেবি কোথায় থেকে আসবে এখনও বিয়ে হয়নি তাহলে বেবি কি ডাউনলোড হয়ে আসবে? নিশান বলে ওঠে।
-“বেবি তো তুই অর্ডার করবি নিশান এবার কোথায় থেকে করবি তুই ভালো জানিস, আরেকটা কথা বললে এবার কোথায় থেকে কিভাবে বেবি আসবে পুরো ডেফিনেশন দিয়ে দেবো। বেলা নিশানকে বলে ওঠে।
বেলার কথা শুনে নিশান একদম চুপ হয়ে যাবে আর কোনো কথা বলেনা ঠিক জোঁকের মুখে নুন পড়ার মত কুকড়ে গেছে, বেলার কথা শুনে বাকিরা কিছুটা অবাক হলেও এখন অন্য দিকে মন দেওয়ার মতো তারা এখনও দৌড় ছুট দেখছে বেলা শান্তার।
-“এই তোরা এবার তোদের ছুট দৌড় থামিয়ে দিবি নাকি আমরা কিছু করবো? বেদ বলে ওঠে।
-” ইয়ার এই বেলাকে থামা নাহলে আমাকে দৌড় করিয়ে করিয়ে আমাকে শহীদ করে ফেলবে। শান্তা হাফাতে হাফাতে বলে ওঠে।
-“আচ্ছা যা তোকে ছেড়ে দিলাম। বলে বেলা বিছানায় বসে পড়ে।
বেলা বসে পড়তে শান্তা এসে বেলার কোলে এসে শুয়ে পড়ে শান্তা বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে হেসে ওঠে ওদের দেখে বাকিরাও বেলার পাশে গিয়ে বসে পড়ে, কেউ কি বলবে এক্ষুনি তারা একে অপরের পিছনে ছুটে যাচ্ছিলো আর এখন দেখো কেমন গলায় গলায় হয়ে হেসে যাচ্ছে।
-“আরে বাহ এটা সেই ডায়েরি না বেলা বেবি! এতেই তোর জিন্দেগিকে তোর সব কথা লেখা আছে। ওম ডায়েরি হাতে নিয়েই বলে ওঠে।
-” হুম এই ডায়েরি হাতে নিয়েই তো ম্যাডাম ভাবনার জগতে হারিয়ে গেছিলো। শান্তা বেলার কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে শুয়ে থেকে বলে ওঠে।
-” জিন্দেগি মানে ভাইয়া তাইনা! এতে ভাইয়াকে নিয়ে লেখা আছে ওয়াও। জাকিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ ম্যাডাম আপনার ভাই আমাদের বেলা রানীর জিন্দেগি যেটা আমরাও কেউ জানতাম না। বেদ বলে ওঠে।
-“হু যেখানে আমিও প্রথমে জানতাম না যে ওই বান্দা ওই খাড়ুশ অ্যাটিটিউডের দোকান সাঁঝ রওশন বেরোবে। বেলা মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে।
-“ওহ হোও ভাই তাহলে খাড়ুশ অ্যাটিটিউডের দোকান? কিন্তু এটাও ভুলে যাস না সেই কিন্তু তোর বর। সারা টিজ করে বলে ওঠে।
-“হু সেই বর । বেলা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে ওঠে।
– “জানো জাকিয়া তোমার এই ভাবি কিন্তু তোমার ভাইকে নিয়ে দিনরাত জেগে জেগে স্বপ্ন দেখত আর যখনই দেখবে তখনই কথা বলছে। রুহি বলে ওঠে।
-“তবে একটা কথা না বললেই নয় তখন তোমার ভাই আমাদের বেলার জীবনে এসে আমাদের বেলার মধ্যে আবারো প্রাণ সঞ্চার করেছিলো। শান্তা আবেগী হয়ে বলে ওঠে।
-” মানে? জাকিয়া কিছুটা অবাক হয়ে বলে ওঠে।
-“আরে মানে হলো বেলার মুখে সারাক্ষণ হাসি ফুটে থাকতো সারাক্ষণ জিন্দেগি জিন্দেগি করতো। সারা তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।
সারার কথা শুনে জাকিয়া হাসে, আর এদিকে সব কয়জন চোখ বড় বড় করে তাকায় শান্তার দিকে এখুনি কি না কি বলে ফেলতো এই মেয়ে। এরই মধ্যে কর্কশ আওয়াজে ফোনের রিং বেজে উঠতে সবাই নড়েচড়ে বসে।
-“জিকু বেবি দেখোতো কে ফোন করেছে? কার দরকার পড়লো আবার আমাকে? শান্তা বেলার কোলে ভালো করে শুয়ে বলে ওঠে।
-” মিসেস খান নাম সেভ করা আছে। জাকিয়া পাশে টেবিলে হাত বাড়িয়ে ফোন দেখে বলে ওঠে।
জাকিয়ার কথা শুনেই সবাই নড়েচড়ে বসে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই গম্ভীর হয়ে যায় শান্তা তো বেলাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বেলা শান্তার মাথায় আলতো হাতে বুলিয়ে দেয়।
-” কথা বল দেখ কি বলছে। বেলা মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে ।
-” বলুন কি দরকার। শান্তা বেলার কথা শুনে জাকিয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে বলে ওঠে ।
-” শান্তা কোথায় আছো তুমি? শান্তার মা বলে ওঠে।
-” সেটা জেনে আপনি কি করবেন? আর আজকে হঠাৎ এত কেয়ার কেনো? শান্তা রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে।
-” শান্তা আমি তোমার মা তোমার জন্যে আমার চিন্তা হয়। মিসেস খান বলে ওঠে।
-” ওমা তাই নাকি জানতাম না তো! যাইহোক কেনো ফোন করেছেন সেটা বলুন। শান্তা বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।
-” শান্তা কাল থেকে তুমি বাড়িতে ফিরছো না কোথায় আছো এটাও জানাওনি আমাদের কি চিন্তা হয়না? মিসেস খান বলে ওঠে।
-“আজ হঠাৎ এত বছর পর আমি কোথায় যাই কোথায় আছি বাড়ি কেনো ফিরছিনা এটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে কথা গুলো হাস্যকর শুনতে লাগছে তাইনা? শান্তা তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।
-” শান্তা শোনো আমার কথা.. ।
-“আমাকে যে কেনো ফোন করেছেন আর কার কথায় ফোন করেছেন বা কি জানতে ফোন করছেন সেটা আমার বোঝার বাকি নেই তাই একদম আলগা দরদ দেখাতে আসবেন না আমার ইচ্ছা হলে তখন দেখা যাবে বাড়ি যাবো কিনা, এখন ফোন রাখুন আলগা দরদ দেখিয়ে ফোন করার কোনো দরকার নেই আমাকে। বলেই শান্তা ফোন কেটে পাশে ছুড়ে ফেলে দেয়।
বেলা শান্তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, শান্তা বেলার উদরে মুখ গুঁজে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বেলাকে ওম বেদ নিশান সারা রুহি সবাই একদম চুপচাপ হয়ে গেছে আর জাকিয়া সেতো একদম অবাক বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ করে সবার মন খারাপ এসে জেকে বসেছে।
-“এইযে আধি ঘরওয়ালি বউটা কিন্তু আমার হ্যাঁ আর এদিকে তুমি পুরো দখল করে নিয়েছ তাকে সাথে আমার না হওয়া এখনও পর্যন্ত কোল টাও।
হঠাৎ করে এমন কথা শুনতেই সবাই মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে সাঁঝ কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। সাঁঝের মুখে এমন কথা শুনে বেলা চোখ কটমট করে তাকায় সাঁঝের দিকে, আর বাকি গুলো সব সাঁঝের কথার মানে বুঝে মিট মিট করে হাসছে তাদের মধ্যে এতক্ষণ এর গুমোট মন খারাপ ভাবটা উধাও হয়ে গেছে, আর সাঁঝ বেলার তাকানো দেখে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চলবে…?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।