তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -২৯

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
২৯.

-“সাঁঝ তুমি দিশা কে কেনো কোম্পানী থেকে বের করে দিয়েছ? সাঁঝের বাবা বলে ওঠেন।

মাত্রই বাড়িতে পা রেখেছিলো সাঁঝ, সারিফ,সারা তারা দুইদিন মায়ানীড়ে কাটিয়ে আজকে অফিসে থেকে বাড়িতে ফিরে এসেছে আর বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে গেলো। সাঁঝের পাশে সারিফ সারাও দাঁড়িয়ে পড়ে। এখনও বাড়ির ভিতরেই ঢুকতে পারিনি দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সামাদ রওশন তাদের বাবা আর ঠিক তাদের থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে দোলা মির্জা আর দিশা। পুরো রুমের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় তারপর সাঁঝ নিজের চোখ মুখের ভাব কঠিন করে নেয় একভাবে তার বাবার দিকে তাকায়, ছেলেকে এইভাবে তাকাতে নিজে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও সেটা মুখে ফুটে উঠতে দেয়না নিজেকে বাইরে থেকে স্বাভাবিক রাখে।

-“আমাদের কি বাড়িতে ঢুকতে দেওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি যে দরজায় পা দিতে না দিয়েই প্রশ্নবান শুরু করেছ? সারা কিছুটা বিরক্তি হয়ে বলে ওঠে।

-” তোমাদের কি আমি ভিতরে ঢুকতে বাধা দিয়েছি আমি শুধু কিছু প্রশ্ন করেছি। সামাদ সাহেব বলে ওঠেন।

-“প্রশ্নটা একটু পরেও করা যেতো আমরা এখনও বাড়িতে ঢুকতে পারিনি তার আগেই প্রশ্ন তারমানে এটাকি নয় যে প্রশ্নের উত্তর না দিলে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। সাঁঝ তীক্ষ্ণ ঝাঝালো কন্ঠে বলে ওঠে।

-” সাঁঝ তুমি আমার কথায় ভুল বুঝছো! সামাদ সাহেব বলে ওঠে।

-“আপনি কি বলতে চেয়েছেন আর কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা আপনার কথার ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে। সাঁঝ সেই একই ভাবে বলে ওঠে ।

-” সাঁঝ বাবা তুমি ভুল বুঝছো তোমার বাবাকে তোমার বাবা সেটা বলতে চায়নি। দোলা মির্জা পিছন থেকে তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে।

-“প্লিজ আন্টি আপনি একটু চুপ করে থাকুন আমরা আমাদের বাবার সাথে কথা বলছি সেখানে আপনি বাইরের লোক হয়ে আমাদের মাঝে কথা বলতে আসবেন না। সারা রুক্ষ কন্ঠে বলে ওঠে।

-” সারা কিভাবে কথা বলছো তুমি এটা! সামাদ সাহেব বলে ওঠে।

-“যার সাথে যেভাবে কথা উচিত সেই ভাবে কথা বলছি, আর তুমি কি এখন সরে দাঁড়িয়ে আমাদের ভিতরে ঢুকতে দেবেন নাকি আমরা বেরিয়ে যাবো? সারা বলে ওঠে।

সামাদ সাহেব কোনো কথা না সামনের থেকে সরে দাঁড়ায় সাথে সাথে সাঁঝ সারিফ সারা বাড়ির ভিতরে ঢোকে। সাঁঝ এক মুহূর্ত তার বাবা, দিশা, আর দোলা মির্জা কে দেখে নেয়।

-” যার জন্যে আমাকে এত প্রশ্ন করে যাচ্ছেন তাকেই আগেই জিজ্ঞেস করুন সে কি করেছে আর তাকে কি কারণে কোম্পানী থেকে ফায়ার করা হয়েছে তার সাথে সমস্ত ডিল ক্যান্সেল করা হয়েছে। সাঁঝ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে সামাদ সাহেবের ভ্রু কুঁচকে যায় তিনিও জানেন সাঁঝ বিনা কারণ ছাড়া কারোরই সাথে খারাপ ব্যবহার করেনা কিন্তু দিশা আর তার মা বললো তার নাকি কোনো দোষ নেই শুধু কিছু মিসটেক এর জন্যে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাহলে তিনি কি ওদের কথা শুনে সাঁঝকে এইভাবে চার্জ করাটা ঠিক করেছেন! নিজের মনে ভাবতে থাকে সামাদ সাহেব।

-“আমি আমার কাজের ব্যাপারে কাউকে কৈফিয়েত দেওয়া পছন্দ করিনা আর দিতেও বাধ্য নই তারপরেও যদি আপনি কিছু জানতে চান তাহলে সেটা বাকিদের থেকে জেনে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ প্লিজ এরপর থেকে আর কারোর হয়ে সাল্লিস্যি করতে আসবেন না এতে আপনার খারাপ নাও লাগতে পারে তবে বাকিদের খারাপ লাগে। সাঁঝ কঠিন কন্ঠে বলে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে উপরে তার রুমের দিকে পা বাড়ায়।

সাঁঝের বলা কথা গুলো শুনেই সামাদ সাহেব বুঝতে পারেন তাকে নিয়ে তার ছেলের মনে থাকা চাপা ক্ষোভ আরো কিছুটা বেড়ে গেছে সাঁঝের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি নিজেও রুমের দিকে চলে যায়। সারা সারিফও একবার দিশাকে দেখে নিয়ে রুমে চলে যায়।

-“মাম্মা দেখলে ওই সারাটা কিভাবে কথা শুনিয়ে গেলো। দিশা বলে ওঠে।

-” হুম সব কিছুই দেখলাম সারার মুখে খুব কথা ফুটেছে কেমন ট্যাক ট্যাক করে কথা গুলো বলে আমাকে বাইরের লোক বলে অপমান করলো, ঠিক আছে আমিও এই অপমানের বদলা ঠিক নেবো। দোলা মির্জা হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।

-“আর তোকেও বলি এত চিপকানোর কি আছে একটু কি তর সয়না সময় পেলেই সাঁঝের উপর ঝাঁপিয়ে পড়িস কয়েকদিন আগেই তো একই কারণে থাপ্পড় খেলি তোকে এত এত অপমান করলো তবুও কি পেট ভরেনি যে আবারো চলে গেছিলি, একটু তো সবুর করতে হয় নাকি তা না খালি ফেবিকলের মতো চিপকে রয়েছে তোকে বের করবেনা তো আমাকে বের করবে! দোলা মির্জা মেয়ের উপরে রাগ ঝেড়ে বলে ওঠে।

দিশাকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে তিনিও রুমের দিকে হনহনিয়ে চলে যায় আর এদিকে দিশা দাঁত মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে এত অপমান সহ্য করতে হচ্ছে তার হিসেব করে রাখছে পরে সে পাই টু পাই সব শোধ বোধ করে নেবে।

————

খান বাড়ির সামনে এসে নিশান বাইক দাঁড় করায় পিছনে বসা শান্তা নেমে দাঁড়ায় বাইক থেকে একবার নিশান তো একবার বাড়ির গেটের দিকে তাকায়।

-“বাড়ি যাও আর মাথা ঠান্ডা রাখবে নামের মতো একদম শান্ত, একদম হট হতে যাবেনা হট শুধু আমার সামনে হলেই চলবে ঠিক আছে। নিশান বলে ওঠে।

-” হু !!! শান্তা ভ্রু কুঁচকে নিশানের দিকে তাকায়।

-“বললাম একদম মাথা গরম করবে না বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়বে না ঠান্ডা মাথায় থাকবে কেমন। নিশান কথা এড়িয়ে বলে ওঠে।

-“তোমার সামনে আমাকে হট হলেই চলবে এই কথার মানে কি হুম? ভ্রু নাঁচিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে।

-” মানে মানকচু খেলে গাল চুলকায় তাই মানে জানার দরকার নেই পারলে নিজেই মানে বের করে নিও এই কথার ঠিক আছে। নিশান বলে ওঠে।

শান্তা শীতল চোখে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিশান অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।

-” আচ্ছা তুমি ভিতরে যাও আমিও বাড়িতে যাই ঠিক আছে আর কালকে সকালেও আমি নিতে আসবো তোমাকে বাইক নিতে হবে না। বলেই বাইক স্টার্ট করে বেরিয়ে যায় নিশান।

শান্তা নিশানের যাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে এক সময়ে চোখের আড়াল হয় যেতে শান্তা বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায়। ড্রইং রুমে সবাই বসে আছেন তবে শান্তার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই সে তার মত করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়, তবে সে যেতে পারেনা তার আগেই পিছন থেকে তাকে ডেকে ওঠে। শান্তা এক মুহূর্ত চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্থির করে নিয়ে পিছনের ঘুরে দাঁড়ায়।

-“কোথায় ছিলে তুমি এই দুইদিন? আর এখন কোথায় থেকে বাড়িতে ফিরছো? তুমি যে এই বাড়ির মেয়ে সেটা কি তুমি ভুলে গেছো সবাই যে তোমার জন্যে চিন্তা করছে সেটা তোমার মনে নেই? বুরহান খান অর্থাৎ বেলার বাবা বলে ওঠে ।

শান্তা এক পলক তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে নেয়, তার কাছে এই মানুষটা কে মেরুদন্ড হীন মনে হয়,কথা গুলো শুনেই শান্তার মুখে ফুটে ওঠে তাচ্ছিল্যের হাসি।

-“আমি কোথায় ছিলাম, কেনো বাড়িতে ফিরিনি, আমি এই বাড়ির মেয়ে আমার জন্যে সবাই চিন্তা করছে মানে তাহলে আপনিও চিন্তা করছেন রাইট! তা মিস্টার খান আপনি কখনো নিজের মেয়ের জনে চিন্তা করেছেন এইভাবে বা কখনো তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ভালো আছে কিনা সে কি খায় কোথায় থাকে কি করে করেছেন কখনো এই প্রশ্ন? আমি এখনকার কথা বলছিনা সাত বছর আগের কথা বলছি কখনো কি জিজ্ঞেস করেছিলেন? না করেননি বরং আপনার তখন আরো বেশি করে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল কারণ সে আপনার খুন আপনার মেয়ে ছিল কিন্তু তখন তো আপনাকে দেখে মনে হয়নি যে আপনার একটা মেয়ে আছে বলে তা আজকে হঠাৎ আমার জন্যে এত দরদ কেনো হচ্ছে কেনো এতো চিন্তা হচ্ছে যে নিজের মেয়ের জন্যে কখনো চিন্তিত হয়না সে কিনা তার ভাইয়ের মেয়ের জন্যে চিন্তিত হাস্যকর না। আমার কাছে বেকার এই চিন্তা দেখাতে আসবেন না আমি কি করি কোথায় থাকি কার সাথে থাকি সেইটা জানার কোনো প্রয়োজন নেই। শান্তা বলে ওঠে।

-“দেখেছ কি বেয়াদব মেয়ে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাই জানে না আসলেই সঙ্গ দোষ কার সাথে থাকে দেখতে হবে না ওই নোংরা মেয়েটার সাথে মিশে মিশে এই অবস্থা। রিসা বলে ওঠে।

-” আচ্ছা মিসেস খান পাঁচ বছর আগে আপনি মুখের বেহাল দষায় বেহুস অবস্থায় খান বাড়ির গেটের সামনে পড়েছিলেন তাইনা তা এর কারণটা কি সবাই জানে বলেছেন কাউকে যে কেনো আপনার ওই অবস্থা হয়েছিলো আর কেনো বা বাড়ির বাইরে ওই ভাবে পড়েছিলেন? শান্তা বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

শান্তার কথা শুনে রিসার মুখ ফ্যাকাশে হতে শুরু করে আর বাকিরা অবাক হয়ে শান্তা আর রিসার মুখের দিকে তাকাতে থাকে।

-“নিশ্চয়ই মনে আছে ওই দিনের ঘটনা আর ঠিক কী হয়েছিল কি কারণে আপনার মুখের ওই অবস্থা হয়েছিলো রাইট? ভুলে যাবেন না তাই কার সম্পর্কে কথা বলছেন সেটা ভেবে বলবেন যার সম্পর্কে এত খারাপ কথা বলছেন সে চাইলে আপনার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের কেস কোর্টে পারে ঠিক আছে। শান্তা বলে ওঠে।

-“আরেকটা কথা মিস্টার খান পয়সার দুই পিঠ পিঠ তাই কখনই এক পিঠ দেখ কোন কিছু বিচার করতে যাবেন না। বলেই শান্তা উপরে চলে যায় নিজের রুমে ।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here