#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৬.
-“সাঁঝ তোমার সাথে দিশার বিয়ের ব্যাপারটা এবার সেরে ফেলতে চাইছি। সামাদ সাহেব সাঁঝের দিকে তাকিয়ে নম্র ভাবে বলে ওঠে।
বাড়িতে হঠাৎ করেই বোমা পড়ার মত বিস্ফোরণ করে গেছে সামাদ সাহেবের এই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে সারা সারিফ তাদের বাবার, তাদের বাবা যে এইরকম একটা কথা ভাবছে আর সেটা বলতেও পারে স্বয়ং সাঁঝকে ভেবেই অবাক লাগছে তাদের! তবে সাঁঝ একদম কুল অ্যাটিটিউড নিয়ে বসে আছে তাকে দেখে মনে হয়না সে এই মুহূর্তে তার বাবার বলা কোনো কথা শুনতে পেয়েছে বলে। সামাদ সাহেব নিজেও কিছুটা আতঙ্কে আছে সাঁঝের প্রতিক্রিয়া কি হবে এই নিয়ে তিনি যথেষ্ট সাহস যুগিয়ে সাঁঝকে কথাটা বলেছে, আর এখন এই সাঁঝের এমন চুপ করে থাকাটা আরো বেশি আতঙ্কজনক মাঝে মাঝে তিনি নিজেও ভেবে পাননা যাকে দেখলে সবাই আগে ভয় পেতো এখন সেই কিনা তার ছেলেকে ভয় ব্যাপারটা ভীষণ হাস্যকর হলেও একদম সত্যি কথা। ড্রইং রুমে সারা সারিফ সাঁঝ একদিকে বসে আছে আর তার সামনে সামাদ সাহেব তার পাশেই মিসেস দোলা মির্জা আর একদম সাঁঝের সোজাসুজি ভাবে বসে আছে দিশা যে এখন বেহায়ার মত করে তাকিয়ে আছে সাঁঝের দিকে। দিশার এই বেহায়ার মত নির্লজ্জ ভাব আচরণ দেখলেই সারা রেগে যায় এর এই কাজের জন্যে কত অপমানিত হয় তারপরে আচরণের কোনো পরিবর্তন আসেনা যেই কি সেই কথায় আছে না স্বভাব যায়না মলে দিশারও সেই অবস্থা। সারা সারিফ ভ্রু কুঁচকে তার বাবার দিকে একবার দেখেতো আরেকবার তেরছা নজরে দোলা মির্জার দিকে তাকিয়ে দেখছে। সামাদ সাহেবের পাশে বসে দোলা মির্জা খুশি খুশি হয়ে তাকিয়ে আছে।
-” অনেক আগের থেকেই তোমার আর দিশার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা হয়েছিল আর এখন যেহেতু তোমাদের বিয়ের বয়েস হয়ে গেছে তাই আর দেরি করে লাভ নেই বিয়ে নিয়ে। সামাদ সাহেব ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিয়ে বলে ওঠে তার ছেলে ও মেয়ের তাকানো দেখে।
-” অনেক আগের থেকে কথা হয়েছিলো! মানেটা কি ড্যাড! এটা কোনো কথা হলো তোমরা আগের থেকে ঠিক করে রেখেছ সেটা যে তাদের পছন্দ হবে তার তো কোনো মানে নেই তাইনা? সারা বলে ওঠে।
-” আর তাছাড়া তোমরা যখন ঠিকই করে রেখেছিলে তাহলে আগেই সেই কথা বলে দিতে হয় তাহলে তারা ছোটো থেকে এটা জেনেই তো বড় হতে পারে যে তাদের বিয়ের ঠিক হয়ে আছে তাহলে অন্য কাউকে পছন্দ করতে পারবেনা বা কারোর কথা ভাববেওনা না হলে হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক বললে তো হয়না। সারিফ বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ একদম, এটা তো আগেই তুমি ভাইকে বলে দিতে পারতে যে দিশার সাথে বিয়ের কথা হয়ে আছে, এখন যদি ভাই অন্য কাউকে পছন্দ করে থাকে বা ভালোবাসে তাহলে কি হবে? সারা রেগে বলে ওঠে।
-” আসলে বিয়ের কথা বলতে দোলা আমাকে বলেছিলো যাতে দিশার সাথে সাঁঝের বিয়ে হয় তাহলে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে তাই আমিও বলে রেখেছিলাম। সামাদ সাহেব নিজের উক্তি বলে ওঠেন।
-” তোমাকে কে বললো ওরা একে অপরকে পছন্দ করেনা আমার দিশা তো সাঁঝকে পাগলের মত ভালোবাসে। দোলা মির্জা মুখ বাঁকা করে সারার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” আপনার দিশা পাগলের মত ভালোবাসলেতো হবেনা আমার ভাইকেও আপনার দিশাকে পাগলের মত নাহলেও ভালো মানুষের মত এট্টু এট্টু ভালোবাসলে তবু কথা ছিল তাইনা! সারা বিদ্রুপ করে বলে ওঠে।
-” আরে সাঁঝ বাবা কি কখনো বলেছে দিশাকে ভালো লাগেনা? শুধু দিশাইতো একটু বেশি জ্বালাতন করে সাঁঝ বাবাকে তাই একটু বিরক্ত থাকে। দোলা মির্জা তাড়াতাড়ি করে নকল হাসি টেনে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ দেশলাই কাঠির কাজই তো জ্বলে ওঠে। সারা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
-“সাঁঝের যদি কোনো পছন্দ থাকে বা কাউকে ভালোবাসে তাহলে আমি কোনো জোর করবো না কারণ আমার কথার থেকেও বেশি জরুরি তোমাদের ভালো থাকা। সামাদ সাহেব শান্ত হয়ে বসে থাকা সাঁঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” ভাইয়ের কোনো পছন্দ না থাকলেও আমার আছে, আমি ভাইয়ের জন্যে মেয়ে দেখে রেখেছি যদি বিয়ে হয় তাহলে সেই মেয়ের সাথে হবে। সারা কঠিন চাহনি দিয়ে বলে ওঠে সাঁঝকে চুপ করে থাকতে দেখে।
-” এটা কেমন কথা সারা সাঁঝ বাবার পছন্দ থাকলে তবু কথা ছিল কিন্তু তোমার পছন্দ কেন যখন আগের থেকেই ওদের বিয়ের কথা ঠিক হয়ে আছে। দোলা মির্জা বলে ওঠে।
সাঁঝকে চুপ চাপ হয়ে বসে থাকতে দেখে সামাদ সাহেব কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন এতগুলো কথা হলো অথচ সাঁঝ কোনো কথাই বললো না আর না কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে একদম শান্ত হয়ে বসে আছে যেটা তার স্বভাব বিরুদ্ধে। এদিকে সারাও রাগে ফায়ার হয়ে যাচ্ছে সাঁঝকে কোনো কথা বলতে না দেখে।
-” সাঁঝ তোমার কি কোনো পছন্দ আছে? থাকলে আমাকে জানিয়ে দিও নাহলে দিশার সাথে বিয়ে নিয়ে তোমার কি রায় সেটাও জানিয়েও আমি শুধু আমার কথা বলেছি বাকি সিদ্ধান্ত তোমার হাতে। সাঁঝের কোটে বল ঠেলে দিয়ে বলে ওঠে।
সামাদ সাহেবের কথা শুনে সাঁঝের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, সামাদ সাহেবের কথার এই মানে দাঁড়ায় যে আমি আমার সিদ্ধান্ত আমার কথার দাম সব কিছুই তোমার হাতে দিয়ে দিয়েছি এবার তুমি ঠিক করবে তুমি কি করবে তবে এতে আমার কোনো বাধা নেই, তিনি ঠিক সরাসরি না বললেও ঘুরিয়ে ঠিক যা বলেছে সেই কথার এই মানে দাঁড়ায়।
-” আমার কোনো পছন্দ নেই, আপনার কোনো চিন্তা করতে হবেনা এই নিয়ে আমি কালকে পার্টিতে নিজেই বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবো। সাঁঝ একদম শান্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠে ফোন চাপতে চাপতে।
-” আমি বলেছিলাম না যে সাঁঝ বাবার কোনো পছন্দ থাকতেই পারেনা। দোলা মির্জা খুশিতে বলে ওঠে।
সাঁঝের বলা কথা শুনে সারা রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে তাকিয়ে আছে সাঁঝের দিকে তার মাথায় আসছে না তার ভাই কি করে বলতে পারলো যে তার কোনো পছন্দ নেই, বেলা যে তার বউ তার ভালোবাসার প্রেমিকা বউ সেটা কি তার ভুলেই মেরে দিয়েছে নাকি দিশার নাটকে মজে গেছে কি চলছে তার ভাইয়ের আর কি বলবে বিয়ের ব্যাপারে কালকে পার্টিতে? সারা নিজের মনে ভেবে যাচ্ছে।
-“কালকেই আমার একটা বড় প্রজেক্ট শেষ হতে চলেছে তাই বড় করে পার্টি হবে সেটাতো জানেন আপনারা তাছাড়াও আরো একটা বড় সারপ্রাইজ আপনাদের সবার জন্যে অপেক্ষা করছে আর আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা মানে বুঝতেই পারছেন কতটা গ্র্যান্ড হওয়া উচিৎ পার্টিটা আর কেমন হতে চলেছে তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই কালকেই আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবো। সাঁঝ বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।
সাঁঝের কথা শুনে সারা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আর সারিফ হতভম্ব হয়ে বসে আছে দোলা মির্জা আর দিশাতো পারেনা এই মুহূর্তে তাদের খুশির জাহির করতে লুঙ্গি ডান্স দিয়ে দেয়। আর সামাদ সাহেব তীক্ষ্ণ চোখে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা চালায় কি চলছে তার ছেলের মাথায় তাহলে কি তার ছেলে দিশাকে বিয়ে করতে রাজি আছে? তাহলে কি তার কথায় রাজি হয়ে গেছে সাঁঝ ভাবতে থাকে সামাদ সাহেব। সাঁঝ সবার মুখের দিকে একবার করে তাকিয়ে নিয়ে ফোন হাতে নিয়ে উঠে চলে যায় আর পিছনে ফেলে যায় সবাইকে রাগী আর হতভম্ব করে দিয়ে। কি হতে চলেছে তাহলে কালকে পার্টিতে? আর কি চলছে সাঁঝের মনে?
চলবে…?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।