#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৮.
পানিতে চুপ চুপে হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শান্তা ও নিশান। দুজনেই দুজনের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই দুজন দুজনকে ভষ্ম করে দেবে যদি এই প্রসেস চালু থাকতো তাহলে হয়তো এতক্ষণ দুজন দুজনকে পুড়িয়ে দিত। মাথায় থেকে টুপ টুপ করে পানি গড়িয়ে মুখ সংলগ্ন জায়গায়। বেবি চুল গুলো ভিজে হয়ে চোখে মুখে লেপ্টে আছে চোখের পাপড়ি গুলো ভিজে একে অপরের সাথে জুড়ে আছে। তবে দুজনের মধ্যে যদি দেখা যায় তাহলে সব থেকে বেশি রেগে আছে শান্তা। আর নিশান সেতো মুখে রাগ চোখে রাগের আভাস রেখে ভিতর ভিতর শান্তাকে দেখছে।
শান্তা আর নিশান এখন মায়ানীড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগেই এখানে আসা হয়েছে তাদের মূলত বেলার সাথে দেখা করতে এসেছে তারা প্রতিদিনই আগে চলে আসতো এখানে আর পাঁচ বছর তো তারা একসাথে গোয়াতে ছিল আর এখানেও চলে এসেছে তারা একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারেনা তারা একে অপরের পরিপূরক রাত টুকু ছাড়া তারা একসাথে থাকে। শুধু নিশান শান্তা নয় এখানে বেদ ওম রুহি সারাও চলে এসেছে তবে এই মুহূর্তে এখানে নেই তারা ভিতরে আছে।
আসলেই একটু আগেই যখন শান্তা গার্ডেনে বাচ্চাদের সাথে খেলছিলো সাথে গাছে পানি দিচ্ছিলো আর তখনই আগমন ঘটে নিশানের শান্তা বাচ্চাদের সাথে খেলতে খেলতে গাছে পানি দিচ্ছিল তাই খেয়াল করেনি নিশানকে তার মধ্যেই একটা বাচ্চা পিছন থেকে এসে শান্তা কে কাতুকুতু দিতেই পিছনে ঘুরে যায়। সাথে হাতে থাকা পানির পাইপও ঘুরে গিয়ে তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো নিশানের উপর পড়ে ফলাফল ভিজে চুপচুপে হয়ে যায়। শান্তা সামনে দাঁড়ানো নিশানকে দেখেই তাড়াতাড়ি হাতে থেকে পানির পাইপ ফেলে দেয় কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে নিশান ভিজে গেছে। নিশান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে সামনে দাঁড়ানো শান্তা কে দেখে যে চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারপাশে বাচ্চারাও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। নিশান রাগে এগিয়ে নিচে থেকে পাইপ তুলে নিয়ে শান্তাকেও ভিজিয়ে দেয় ফলাফল দুজনেই এখন ভিজে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-“এবার ঠিক আছে একদম হিসাব বরাবর। নিশান শান্তা কে দেখে নিয়ে এক পা এগিয়ে এসে কিছুটা ঝুঁকে বলে ওঠে।
-” ইউ! তোমাকে! তোমাকে আমি মেরে ফেলবো পঁচা পুকুরে চুবিয়ে মারবো। বজ্জাতের হাড্ডি, শয়তানের নানা, ব্যাঙের দাদু, পঁচা টম্যাটো নিশানের বাচ্চা নিশান। শান্তা রেগে গিয়ে চিৎকার করে তেড়ে বলে ওঠে।
শান্তা নিশানের দিকে কিছুটা তেড়ে যেতেই নিশান কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। নাহলে এতক্ষণ হয়তো শান্তার হাতের গলা বন্দি হতে হতো। নিশান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে শান্তার মুখের থেকে এমন গালি শুনে। পাশে তাকিয়ে দেখে বাচ্চারা তাদের দিকে উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে আর তাদের মধ্যে যারা একটু বড় তারা ঠোঁট চেপে হাসছে।
-“আমাকে একটা কথা বলো, আমি বিয়ে কবে করলাম? আর বাচ্চা কোথায় থেকে এলো? আমার যতদূর মনে পড়ে আমি এখনও পিউর সিঙ্গেল বিয়েই হয়নি সেখানে বাসরও হয়নি তাহলে বাচ্চা কোথায় থেকে আসলো? আচ্ছা অনলাইনে বাচ্চা অর্ডার করা যায় বুঝি নাকি কোনো বাচ্চা ইন্সটল করার অ্যাপ আছে যে সেখান থেকে আমার বাচ্চা নামিয়ে নিয়ে? নাহলে আমার বাচ্চা কোথায় পেলে? নিশান ভ্রু কুঁচকে ফিচেল কন্ঠে বলে ওঠে।
-“অসভ্য, বজ্জাত, বাঁদর, গেছো ইঁদুর। জীবনেও কপালে বউ জুটবে না বাসর তো দূরে থাক। আর বাচ্চাও অনলাইনে অর্ডার করে নিতে হবে দেখে নিও। শান্তা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
-” আচ্ছা তাই নাকি! সমস্যা নেই তুমিতো আছো তোমাকেই বউ বানিয়ে নেবো সাথে বাসর ও হবে আর বাচ্চা অনলাইন অর্ডার করতে হবেনা ওটা তোমার থেকেই ইন্সটল হবে কোন অ্যাপ থেকে নয়। নিশান বাঁকা হেসে চোখ টিপে বলে ওঠে।
-” অসভ্য! বেশরম! বেলাজা! নির্লজ্জ বেহায়া, লজ্জা শরম বিক্রি করে কি ঝাল মুড়ি খেয়েছ নাকি সিগারেট? শান্তা রাগে নিসপিস করতে করতে বলে ওঠে।
-” এই তোমমা এট্টু থামমে ঝড়গা কিনো কয়ো। ছোট্ট রিয়া ওদের দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে আঙুল উঠিয়ে বলে ওঠে।
রিয়ার কথায় শান্তা ও নিশান একে অপরের দিকে তাকিয়ে রিয়ার দিকে তাকায় দেখে তাদের দিকে কেমন রাগী রাগী ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে।
-” ভাব কয়ো এখুনি তোমমা আর ঝড়গা কলবেনা কয়ো ভাব। রিয়া চোখ দেখিয়ে রাগী ভাবে বলে ওঠে।
রিয়ার কথা শুনে দুজন দুজনের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে দুজনেই দু দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
-” কিরে তোরা আবার ঝগড়া লেগেছিস? পিছন থেকে বেলা বলে ওঠে।
বেলার আওয়াজ পেয়ে রিয়া ছুটে গিয়ে বেলার দিকে দুহাত বাড়িয়ে দেয় কোলে ওঠার জন্যে বেলা মাত্র ফিরেছে বাইরে থেকে। গার্ডেনে এইভাবে দুজনকে দুই দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝে গেছে দুজনে আবারো ঝগড়া করেছে। বেলা নিচু হয়ে রিয়াকে কোলে তুলে নেয়। রিয়া বেলার গালে চুমু দিয়ে একে একে শান্তা ও নিশানের নামের নালিশ করতে থাকে হাত নেড়ে নেড়ে নিজের মত করে। বেলা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দুইজনের দিকে তাকায়।
-“দুজনে এখনই চেঞ্জ করে স্টাডি রুমে আয় আমি রুমে ঢোকার আগেই যেনো তোদেরকে রুমের ভিতরে দেখতে পাই। কথাটা মাথায় থাকে যেনো। বেলা কঠিন চোখে বলে রিয়াকে নিয়ে চলে যায়।
বেলার চলে যেতেই শান্তা ও নিশান একে অপরের দিকে আগুন ঝরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ভিতরের দিকে চলে যায়।
————-
স্টাডি রুমে সবাই গোল হয়ে বসে আছে। রুমের চারিদিকে বইয়ের ছড়াছড়ি অপেক্ষা শুধু বেলার আসার তারপরেই শুরু হবে তাদের মিটিং। ওম বেদ রুহি সারা একে অপরের সাথে কথা বললেও এদের মধ্যে একদম চুপ হয়ে বসে আছে শান্তা ও নিশান। একে অপরের দিকে চোখ গেলেই আগুন চোখে দেখছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেলা হাতে কয়েকটা ফাইল নিয়ে রুমে আসে। চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে সবার সামনে গিয়ে বসে পড়ে। হাতে থাকা ফাইল সামনে এগিয়ে দিয়ে ইশারা করে দেখার জন্যে। সবাই একে একে ফাইলে দেখতে থাকে সাথে সব অবাক হয়ে বেলার মুখের দিকে তাকায়।
-“এস.আর ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে পার্টনারশিপ! রুহি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ওঠে।
-” হ্যাঁ ভাইয়ের কোম্পানী মানে আমাদের কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপের ডিল সাইন। ওহ মাই গড তারমানে এবারের প্রজেক্ট তুই পেয়েছিস? সারা আনন্দে চিৎকার করে বলে ওঠে।
বেলা সারার দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে দেয়। সাথে রুহি আর সারার খুশি দেখে কে।
-” ইউ নো ভাই আমাকেও এই প্রজেক্টে রেখেছে উফ সেই মজা হবে। সারা খুশিতে বলে ওঠে।
বেলা কোনো কথা না বলে আরো একটা ফাইল এগিয়ে দেয়। এটা পড়ে এবার ওম বেদ নিশান রুহি শান্তা সব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বেলার দিকে।
-” তোর এই প্রজেক্টে আমরাও আছি। মানে তুই তোর কোম্পানিতে আমাদের কেও ইনভলব করছিস? অবাক হয়ে বলে ওঠে ওম।
-“কেনো তোদের কোনো অসুবিধা আছে আমার কোম্পানিতে জয়েন করতে? বেলা সবার দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে।
বেলার কথা শুনেই সবাই দ্রুত মাথা নাড়ে যার মানে তাদের কোনো অসুবিধা নেই বেলার সাথে কাজ করতে।
-” আমরা এত বছর একসাথে থেকেছি একে অপরের পরিপূরক হয়ে আর আজ এসেতো আমরা আলাদা হয়ে যেতে পারিনা তাই আমি আমার কোম্পানীতে অ্যাজ আ এমপ্লয়িজ নয় কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হিসাবে দেখতে চাই। ওই কোম্পানিতে আমার যতোটা অধিকার থাকবে ঠিক ততটাই তোদেরও থাকবে ছোটো থেকে তোরা আমার সাথে আছিস আমার পাশে আছিস আজ আমি যা হয়েছি এতে তোদের অবদান কোনো কম কিছু নয় ওহ হ্যাঁ চাইলে তোদের কোম্পানী ও এই কোম্পানীর সাথে পার্টনারশিপ করা হবে। কিন্তু তোদের কে আমার পাশে চাই আমি আমার এই অ্যাচিভমেন্ট একা নয় তোদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। সব সময়ে এর জন্যে একসাথে থাকতে চাই। বেলা সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
বেলার কথা শুনে সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেলার উপর। সাতজন এক সাথে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে তারাও চাইনি বেলার থেকে আলাদা হতে তারা সব সময়ে একসাথে থেকে এসেছে আর তো নিজের সাফল্যের পথে এসে কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা সবাই একসাথে আগের মত একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকতে চায়। সারাজীবন এইভাবে তাদের বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন বজায় রাখতে চায়।
চলবে….?
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।