তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -০৭

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৭.
-“মিসেস বেলা !

এই ডাকটা কানে আসতেই বেলা পুরো কেঁপে ওঠে। দ্রুত গতিতে তার শ্বাস প্রশ্বাস বেড়ে যায়। শুধুমাত্র এই একটাই ডাক তাকে পুরো এলোমেলো করে দেয়। নিজেকে স্বাভাবিক কঠিন করে রাখতে ও কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে কিছুক্ষণ এর জন্যে দুর্বল হয়ে পড়ে বেলা। আজ কত দিন, বছর পর আবারো সেই ডাক শুনলো। সাঁঝ একদম বেলার সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে তার উষ্ণ নিঃশ্বাস বেলার গায়ে আছড়ে পড়ছে সাথে এটাও অনুভব করছে বেলার এখনকার অবস্থাটা। বেলার দিকে কিছুটা ঝুঁকে যেতেই দেখে বেলা চোখ মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে। বেলার এমন অবস্থা দেখে সাঁঝ ঠোঁট টিপে হাসে। সাঁঝ এবার আরো একটু ঝুঁকে গিয়ে বেলার কানের পাশে ওষ্ঠ জোড়া বুলিয়ে দেয়। সাথে সাথে বেলা শিউরে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ হয়ে যাওয়ার পর বেলা আর নিজের কাছে অনুভব করতে না পেরেই চোখ খুলে তাকায়। দেখে সাঁঝ তার সামনে চেয়ারে বসে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেলার চোখ মুখ আবারো শক্ত হয়ে ওঠে। নিজের এতক্ষণের দূর্বলতা ঝট করে গায়েব করে আবারো কঠিন করে নেয় নিজেকে।

-“মিসেস বেলা তুমি কি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি এসে বসবে? সাঁঝ মোলায়েম কন্ঠে বলে ওঠে।

“মিসেস বেলা” সাঁঝের মুখ থেকে আবারও শুনে এবার আর দুর্বল না হয়ে এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর জোরে হাত মারে। চোখ থেকে রাগ ঠিকরে বের হচ্ছে। বেলার এই রাগ দেখেই সাঁঝ নিজের মনে হাসে।

-“হাতে লেগে যাবে সুইটহার্ট। তুমি আমার রাগ আমার উপরেই দেখাতে পারো। সাঁঝ আকর্ষণীয় কন্ঠে বলে ওঠে।

-“ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু কল দিস নেম। বেলা দাঁত খিঁচে কঠিন কন্ঠে বলে ওঠে।

-” যা বাবা মিসেস কে মিসেস বলা যাবেনা এটা আবার কেমন কথা শুনি সুইটহার্ট? সাঁঝ অবুঝ হওয়ার ভান করে বলে ওঠে।

সাঁঝের এই অবুঝপনা দেখে বেলা রেগে কিছু বলবে তার আগেই সাঁঝ বেলা কে চুপ করিয়ে দেয়।

-” আচ্ছা আমরা পরে এই টপিক নিয়ে ডিসকাশ করি আগে এই পেপার গুলো দেখে নেই। বসো আগে কাজ করে নাও আমি পালিয়ে যাচ্ছি না আর না তোমাকে পালিয়ে যেতে দিচ্ছি। সাঁঝ বেলার দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

বেলা এই মুহূর্তে কিছু বলতে না পেরে টেবিলের উপরে থাকা নাম প্লেট টা জোরে টেবিলের উপর ঠুকে দিয়ে বসে পড়ে। সাঁঝ চুপচাপ বেলার এই রাগ দেখতে থাকে। বেলা ফাইল হাতে নিয়ে চেক করছে। আর সাঁঝ চুপচাপ বেলাকে দেখছে। বেলার এই রূপ টা তাকে খুব করে পোড়ায় শুধু এই রূপ না বেলার প্রত্যেকটা রূপ তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ঘায়েল করে দেয়। সাঁঝ যে তাকে দেখছে এটা বুঝতে পারে বেলা সাঁঝের এইভাবে তাকানো তার সহ্য হচ্ছে ভিতরে ভিতরে সে কিছুটা দুর্বল আর রাগ ফুসে উঠছে এই লোকের সামনেই সে বেশিক্ষণ থাকতে চায়না তাই বেলা পুরো ফাইল না চেক করে সামনের কয়েকটা পেপার দেখে নিয়ে মাথা তুলে তাকায় দেখে সাঁঝ তার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেলা তার চোখ সরিয়ে নিয়ে টেবিলের উপরে থাকা পেন স্ট্যান্ড থেকে পেন নিয়ে পেপার গুলোতে সাইন করে দেয়।

-“সুইটহার্ট তুমি কি জানো তুমি আবারো আমার নামের বন্দি হয়ে গেলে? সাঁঝ ফাইল টা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে ওঠে।

-” মানে কি বলতে চাইছেন আপনি? বেলা ভ্রু উঁচু করে বলে ওঠে।

-“মানে এই যে তুমি এতদিন আমার পুরোনো বউ ছিলে আর এখন খাতায় কলমে আবারো আমার নতুন বউ হয়ে গেলে। সাঁঝ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলার মাথা যেনো ঘুরে যায় কি নতুন আর পুরোনোর কথা বলছে সাঁঝ সেটাই মাথায় আসেনা কিন্তু কিছু যে একটা গোলমাল করেছে সেটা বুঝতে পারে বেলা। সাঁঝ বেলার ভ্রু কুঁচকানো মৃদু হাসে।

-“বুঝতে পারলে নাতো সুইটহার্ট! থাক তোমার আর বুঝে কাজ নেই। সাঁঝ ফিচেল হেসে বলে ওঠে।

-” আপনি কি বলতে চাইলেন সেটা বলুন হেয়ালি না করে। বেলা তেজি কন্ঠে বলে ওঠে।

-“আচ্ছা একটা কথা বলো আমায় আমাদের বিয়ে টা কবে হয়েছিলো তোমার মনে আছে? সাঁঝ বেলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে।

সাঁঝের এই প্রশ্ন শুনে বেলা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সাথে কিছুটা কেঁপে ওঠে তাদের বিয়ে? হ্যাঁ হয়েছিলো কোনো এক সময়ে তবে বেলা ভিতরে ভিতরে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়লেও বাইরে থেকে এখনও সে কঠিন হয়েই কিছু সেকেন্ডের জন্যে নার্ভাস হয়ে গেলেও আবার নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।

-“না মনে নেই। আর মনে রাখতেও চাইনা। যেখানে ওটাকে বিয়ে বলেই মানিনা সেখানে মনে রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসেনা। আর ওই বিয়ে নামের খেলার কি কোনো দাম আছে? বেলা একদম শান্ত ভাবে বলে ওঠে।

সাঁঝ এতক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বেলার দিকে তাকিয়ে থেকে বেলার প্রত্যেকটা কথা শুনে যাচ্ছিলো। বেলার চোখে মুখে কোনো অস্থিরতার ছাপ নেই মনে হচ্ছে সে একদম নরমাল কথা বলেছে যেনো সত্যি এটাই। কিন্তু সাঁঝ বোঝে বেলার ভিতরের অস্থিরতা টা এই সামান্য কয়েকটা কথা বলতেই যে কতটা কষ্ট আর যন্ত্রণা যে বেলার হয়েছে সেটা বেলা দেখাতে না চাইলেও সাঁঝ বোঝে। বেলা নিজেকে কঠোর প্রমাণ করার জন্যে একদম শান্ত ভাবে কথা গুলো বলেছে চোখ মুখ ও একদম স্বাভাবিক রেখেছে কিন্তু টেবিলের উপরে থাকা হাতটাকে স্বাভাবিক রাখতে পারিনি হাতটাকে মুষ্ঠি বদ্ধ করে রেখেছে।

-“তোমার তো মনে নেই সেইজন্য আবারো তোমাকে আমার করে নিলাম তোমাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যে তখন তো খাতায় কলমে ভ্যালিড ছিলোনা সব কিছু তাই এখন ভ্যালিড করে নিলাম। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে একদম স্বাভাবিক ভাবেই বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা কিছু সেকেন্ড চমকে যায়। সাঁঝ যে কি কথা বলেছে আর কি বোঝাতে চেয়েছে সেটা বুঝতে বেশি সময় লাগেনা বেলার। বেলা কিছুটা কেঁপে ওঠে সাথে রাগে ফুসে ওঠে। তার ভিতরে রাগটা যেনো এবার দাউ দাউ করে আগুনের রূপ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিতে চাইছে। বেলা আর নিজের রাগটাকে আর দমিয়ে রাখতে পারেনা। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সাঁঝের দিকে এগিয়ে যায়। সাঁঝ চুপচাপ বসে বসে বেলার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ দেখছে। বেলা এগিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড আক্রোশের সাথে সাঁঝের কলার্ট শক্ত করে চেপে ধরে সাঁঝ এখনও চুপ করে শান্ত হয়ে বসে আছে।

-“তোমার সাহস হয় কি করে হ্যাঁ এইরকম জঘন্য একটা কাজ করতে? যখন যেটা মনে হয় তখন সেটা করো কেনো আমাকে কি তোমার খেলার পুতুল মনে হয় হ্যাঁ? আমি কি সবার হাতের পুতুল নাকি যে যখন যেভাবে ইচ্ছা আমাকে নাঁচাতে চাইবে?কিসের জন্যে কোন অধিকারে শুনি? আর এতদিন পর এসে কেনো বিয়ের নামের এই প্রহসনকে ভ্যালিড করতে চাইছ? যেখানে বিয়েটা একটা খেলা সেখানে এতদিন পর এসে এই নাটক করার মানে কি? উত্তর দাও চুপ করে থাকবে না। বেলা প্রচণ্ড রাগে চিৎকার করে বলে ওঠে।

বেলার এই চিৎকার এতক্ষণে রুমের বাইরে চলে যেতো যদি রুম টা সাউন্ডপ্রফ না হতো। সাঁঝ বেলার দিকে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নিয়ে হাত বাড়িয়ে হ্যাচকা টান মেরে বেলাকে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিয়ে কোমর ও ঘাড়ে হাত রেখে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখে। সাঁঝের হঠাৎ করে এমন করতে বেলা চমকে যায় সাথে সাঁঝের সাথে মিশে যাওয়াতে বেলা কিছুটা কেঁপে ওঠে। এতক্ষণ সে রেগে থাকলেও এখন সে শান্ত হয়ে গেছে তবে চুপ নেই সাঁঝের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্যে ছটফট করতে থাকে। সাঁঝ বেলাকে নিজের সাথে শক্ত করে ধরে রেখে বেলার কাঁধে থুতনি দিয়ে মুখটা বেলার কানের দিকে ঘুরিয়ে রাখে এতে করে বেলার কানে সাঁঝের ঠোঁট স্পর্শ করে। সাথে সাঁঝের উষ্ণ নিঃশ্বাস বেলার মুখে ঘাড়ে আছড়ে পড়ে। বেলা থেকে থেকে কেঁপে ওঠে সেটা সাঁঝও টের পায়।

-“সুইটহার্ট তোমাকে এতদিন ছাড় দিয়ে রেখেছি বলে কি তোমার সাহস বেড়ে গেছে?আমার মুখের উপরে তুমি চিৎকার করছো মানতেই হবে তোমার সাহসের উন্নতি হয়েছে। আর কি বললে এই বিয়েটা প্রহসন খেলা? কেনো তোমার এটা মনে হলো? যাইহোক তোমার মনের মধ্যে অনেক রাগ অভিমান সাথে হয়তো ঘৃণার ও স্তূপ জমেছে তাইনা? তবে যাই জমে থাকুক না কেনো তোমার মনের মধ্যে সেটা নিয়ে আমার কোনো অসুবিধা নেই। তুমি আমাদের বিয়েটা না মানলেও বিয়ে টা কে আমি মানি নিজের মন থেকে হৃদয় থেকে। এতদিন তোমাকে ছেড়ে রেখেছিলাম শুধু সঠিক সময়ের জন্যে তোমাকে তোমার মত করে চলতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এবার থেকে সেটা আর চলবে না। তারমানে এটা নয় আমি তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছি এটা মোটেও ভাববে না। তবে আজ থেকে মনে রাখবে তুমি এতদিন একা থাকলেও এখন আর একা নও তোমার সাথে এই সাঁঝ রওশন তোমার হাজব্যান্ডও আছে যে বিয়ে টাকে এতদিন না মানার চেষ্টা চালিয়ে গেছো সেটা এবার থেকে মনে প্রাণে মানবে তুমি বিবাহিত। তোমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপের উপর এই সাঁঝের নজর ছিল আর এখন তো আরো বেশি করে থাকবে। আর একটু আগে কি বললে যেনো তুমি সবার হাতের পুতুল? এটা ভুল করেও ভাবার চেষ্টা করবে না তুমি শুধুমাত্র আমার এই সাঁঝের বেলা তুমি তোমার উপরে শুধুমাত্র আমার অধিকার আছে তুমি পুরোটাই আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তোমার মন হৃদয়ে শরীরে শুধু আমার বসবাস থাকবে তোমার মুখে শুধু আমার নাম থাকবে আর কারোর নয় তুমি শুধু আমার মানে আমার তোমার স্বপ্নেও আসার অধিকার কারো নেই, এটা সব সময়ে মনে রাখবে তুমি। আর তুমি আমার হাতের পুতুল নয় তুমি আমার হৃদয়ের রানী আমার সুইটহার্ট আমার ওয়াইফি তাই তোমার উপরে আমি জোর করতেই পারি সেই অধিকার আমার আছে এটাকে পুতুলের মতো নাঁচানো বলেনা এটাকে ভালোবাসা অধিকার বোধ বলে। আর যদি বলো এতদিন পর কেনো তো এর উত্তর ও পেয়ে যাবে তবে তোমাকে নিজের থেকে খুঁজতে হবে আমাদের বিয়ের সময়ে আর এই সময়ে এর পার্থক্য। তবে চিন্তা নেই তুমি ভাবতে না চাইলেও আমি বলে দেবো। শুধু এটা মনে রাখবে এই সাঁঝের মনে হৃদয়ে শরীরে শুধু তোমার নাম তোমার অধিকার আছে তুমি ব্যাতিত আজ পর্যন্ত কোনও মেয়েই আমার এত কাছে পৌঁছাতে পারেনি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ছুয়ে ও দেখেনি তোমাকে ছাড়া আমার এই দুই চোখ অন্য কাউকে কোনদিনও ভালোবাসার নজরে দেখেনি। আর একটা কথা সম্পর্কের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রয়োজন বিশ্বাস, সব সময়ে চোখের দেখা সঠিক হয়না দেখার বাইরেও অনেক কিছু থাকে সেটাকে বুঝতে হয় অনুভব করতে হয়। একটা সম্পর্কের মূল ভীত হলো বিশ্বাস, বিশ্বাসের উপর গড়ে ওঠে একটা সম্পর্ক সেটা মজবুত হয় ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। জানি তোমার মনে অনেক অনেক অভিযোগ অভিমান রাগ জমে আছে হয়তো ঘৃণা ও জমা হয়েছে তবে এটা মনে রাখবে এই সাঁঝ কিন্তু শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবাসে আগেও ভালোবাসতো আর এখনও ভালোবাসে যতদিন এই দেহে প্রাণ থাকবে ভালোবেসে যাবে একটুও ভালোবাসার ক্ষয় হয়নি বরং আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আর ঠিক ততদিন পর্যন্ত তুমি এই সাঁঝের ভালোবাসায় বন্দি থাকবে সাঁঝেরবেলা হয়ে।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here