তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -০৬

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৬.
বেলা সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক প্রস্থ সব পুঁচকে গুলোর সাথে খেলা করে নিয়েছে। তবে আজ তার খুব ব্যস্ততা সকালে উঠেই আগেই নিজেকে ফ্রেশ করার জন্যে বাচ্চাদের সাথে সময়ে কাটিয়ে নিয়েছে আবারো লেগে পড়েছে তার কাজের মধ্যে।

-“বেলা মা তুমি রেডি হয়ে গেছো? সুরাজ বাবু বলে ওঠেন।

-” হ্যাঁ আংকেল আমি রেডি হয়ে গেছি ব্যস কয়েকটা ফাইল একটু চেক করে নিচ্ছি, এরপরে বেরিয়ে পড়ব। বেলা ফাইল চেক করতে করতে বলে ওঠে।

-“আচ্ছা মা তুমি ঠিক আছে। বলেই সুরাজ বাবু রুম থেকে চলে যান।

বেলা বেশ কিছুক্ষণপর ফাইল চেক করে নিয়ে গুছিয়ে নেয়। একবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে নিয়ে পাশের সোফায় থেকে ব্লেজারটা তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিচে ড্রইং স্পেসে মায়া চৌধুরী বসে আছে সাথে বাচ্চারাও আছে। বেলা এগিয়ে গিয়ে তার নানিমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে কোলে মাথা রেখে। মায়া বেগম বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে মাথা নিচু করে বেলার কপালে স্নেহের স্পর্শ বুলিয়ে দেয়।

-“বেলা মা আজ তোমার প্রথম সাফল্যের দিন দোয়া করি তুমি সফল হয়ে এসো। মায়া বেগম বলে ওঠেন।

-” তোমার ভালোবাসা আর দোয়া আছে দেখো ঠিক আমি সাফল্য লাভ করবো। বেলা মুখে হাসি টেনে বলে ওঠে।

-“আজকের পর থেকে সমস্ত দায়িত্ব তোমার। এতদিন সেই সব অন্য কেউ সামলে এসেছে। এখন তুমি ফিরে এসেছ এরপর তোমার দায়িত্ব তুমি বুঝে নাও। মায়া বেগম বলে ওঠে।

-“জি নানিমা। বেলা আলতো হেসে উত্তর দেয়।

এদিকে বেলার পুচকে চারিদিকে থেকে ঘিরে ধরে জড়িয়ে নেয় বেলা কে সবাই এক এক করে বেস্ট অফ লাক জানায়। বেলা সবাই কে জড়িয়ে রেখেই সবার থেকে উষ্ণ স্পর্শ নিয়ে নেয়।

-“তিউতিপাই আমাল জন্যে তককেট আনবে। রিয়া গুটি গুটি পায়ে বেলার কাছে এসে বেলার গলা জড়িয়ে ধরেই বলে ওঠে।

-“আচ্ছা আমার রিয়া পাখিটা। বেলা গালে চুমু দিয়ে বলে ওঠে।

-“আচ্ছা বেলা টাইম হয়ে যাচ্ছে এবার তোমাকে বের হতে হবে। সুরাজ আংকেল বলে ওঠে।

-” জি আংকেল আসছি। বেলা উঠে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।

-” বেলা মা সাবধানে যাবি। আশা বেগম বলে ওঠে।

-“জি মামনি আমি সাবধানে যাবো। তুমি এদের সবাইএর খেয়াল রেখো। বেলা বলে ওঠে ।

বেলা ব্লেজারটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায়। বাইরে পার্কিং থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।

————-

-“স্যার মিটিং রুমে সবাই এসে গেছে। তবে শুধু ম্যাডাম এখনও আসেনি। আকাশ বলে ওঠে।

-“টাইম কি ওভার হয়ে গেছে আকাশ? সাঁঝ মাথা না তুলে বলে ওঠে ।

-“না স্যার এখনও পনেরো মিনিট বাকি আছে। আকাশ হাতের ঘড়িতে টাইম দেখে বলে ওঠে।

-“এর মধ্যেই তোমার ম্যাডাম চলে আসবে চিন্তা করতে হবে না। তুমি ওদিকে দেখো সব ঠিক আছে কিনা। ওহ হ্যাঁ তোমাকে যা যা বলেছিলাম তুমি রেডি করে রেখেছতো? সাঁঝ মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।

-” ইয়েস স্যার সব রেডি আছে আপনি যেমন যেমন বলেছিলাম ঠিক সেই মতো। আকাশ বলে ওঠে।

-” ঠিক আছে তোমার ম্যাডাম চলে আসলে আমাকে ইনফর্ম করো। সাঁঝ বলে ওঠে।

-“ওকে স্যার। বলেই আকাশ বাইরে চলে যায়।

আকাশ বেরিয়ে যেতে সাঁঝ হাতে থাকা ফাইল টা টেবিলের উপরে রেখে দিয়ে এক হাতে নিজের কপালে ট্যাপ করতে থাকে ঠোঁটের কোণে ফুটে আছে সেই রহসময় হাসি।

-“অ্যাম এগারলি ওয়েটিং সুইটহার্ট। আজ থেকে তোমার আমার মাঝের বাঁধা পড়ার শুরু। এবার থেকে আমিও দেখব তুমি কেমন করে আমার থেকে দূরে দূরে থাকো। আজ থেকে শুরু হবে তোমার উপর আমার লাভ টর্চার। সাঁঝ নিজের মনে বলে ওঠে ।

এরই মাঝে ফোন বেজে উঠতে সাঁঝ সোজা হয়ে বসে স্ক্রিনের দিকে তাকাতে দেখে আকাশ কল করছে। সাঁঝ ফোন রিসিভ করতে অপার থেকে আকাশের গলা ভেসে আসে।

-” স্যার ম্যাডাম এসে পড়েছে।

-” ওকে তুমি সব রেডি করো আমি আসছি। সাঁঝ বলে ওঠে।

সাঁঝ ফোন কেটে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে কোট গায়ে দিয়ে নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। উদ্দেশ্য এখন মিটিং রুমের দিকে। সাঁঝ দ্রুত পা চালিয়ে রুমের সামনে পৌঁছে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমের দরজা খুলে সামনের দিকে একবার তাকায়। হ্যাঁ এখানে তার কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখতে পাচ্ছে। একবার সেই মুখের দিকে তাকিয়ে নিয়ে নিজের মত করো ভিতরে ঢুকে যায়। এদিকে মিটিং রুমে সাঁঝকে ঢুকতে দেখে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে যায় সাঁঝ ওদের সবাইকে বসার উদ্দেশ্যে বলে নিজেও বসে পড়ে। কোনা চোখে একবার তার থেকে কিছু দূরে বসা সেই কাঙ্খিত মুখটা দেখে নিয়ে মিটিং শুরু করে।

একে একে সব কোম্পানি তাদের নিজের নিজের প্রেজেন্টেশন দেখাতে থাকে। এস.আর ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে কাজ করা মানে সৌভাগ্যের ব্যাপার। ব্যাঙ্গালোর গভর্নমেন্ট লিডার সাথে টপ ওয়ান বিজনেসম্যানের সাথে কে না কাজ করতে চায়। এস.আর কোম্পানি থেকে একটা নিউ প্রজেক্ট শুরু হবে আর এই প্রজেক্টে অন্য কোম্পানী কেও পার্টনারশিপে নেওয়া হবে। এমনটা প্রতি বছরই হয় বিভিন্ন কোম্পানী কে নিজেদের সাথে কাজ করার সুযোগ দেয়। এই প্রজেক্টের জন্যে বিভিন্ন কোম্পানী থেকে তাদের টেন্ডার জমা হয়েছিলো তবে তার মধ্যে পাঁচটা কোম্পানীকে সিলেক্ট করা হয়েছে। তাই এখানে আজ পাঁচটা কোম্পানী এসেছে যাদের মধ্যে যে কোনও একজন কোম্পানী পাবে এই ডিলটা। একে একে সব কোম্পানী প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পর এবার আসে শেষ একটা কোম্পানী আকাশ ডেকে ওঠে কোম্পানির নাম।

-“চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ।

কোম্পানির নাম শুনেই এবার সবাই তাকায় তাদের মধ্যে বসে থাকা একটা মেয়ের দিকে যে এখনও চুপ করে বসে আছে। তবে আকাশের মুখে নিজের কোম্পানির নাম শুনেই মেয়েটা এবার নড়ে বসে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই উঠে দাঁড়িয়ে নিজের মত করে প্রেজেন্টেশন দিতে থাকে। আর সাঁঝ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে পুরোপুরি ভাবেই পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। সব কোম্পানী থেকে তাদের প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পর। সাঁঝ ফাইল গুলো একবার করে চেক করতে থাকে। সবার মধ্যেই একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে আজ কে পাবে এই ডিল সেটা নিয়েই। সবাই সবার বেস্ট দিয়ে প্রেজেন্টেশন তৈরী করেছে তবে তাদের থেকেও ভালো প্রেজেন্টেশন দিয়েছে সেটা তারাও মানে হয়তো ডিলটা ওই কোম্পানী পাবে।

কিছুক্ষণ পরেই সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাঁঝ সবার মধ্যে অ্যানাউন্সমেন্ট করে দেয় সেই কোম্পানির নাম যে কোম্পানী এইবার তাদের সাথে পার্টনারশিপে কাজ করতে চলেছে।

-“চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ। আকাশ সবার সামনে কোম্পানির নাম অ্যানাউন্সমেন্ট করে দেয়।

-” কংগ্রাচুলেশন মিস-বেলা খান চৌধুরী আপনারাই এই ডিলটা পাচ্ছেন। এস.আর গ্রুপের সাথে জুড়ে যাওয়ার অভিনন্দন। সাঁঝ রহস্যময়ী হেসে বলে ওঠে।

বাকি সবাইও বেলাকে অভিনন্দন জানায়। বেলাও মুখে হাসি টেনে সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে। সাঁঝ একবার সবার দিকে তাকিয়ে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আকাশ বেলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন।

-“ম্যাডাম আপনি স্যারের কেবিনে যান ওখানেই ডিল সাইন হবে।

বেলা একবার আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আকাশ বেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বেলা সাঁঝের কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে নক করে। তবে আশ্চর্য ভাবেই নক করতে দরজা খুলে যায়। বেলা কিছু সেকেন্ড থমকে দাঁড়িয়ে ভিতরের দিকে পা বাড়ায়। তবে ভিতরে গিয়েও বেলা কাউকে দেখতে পায়না কেবিন খালি তাহলে সাঁঝ গেলো কোথায়।

বেলা চারিদিকে তাকিয়ে নিজের মনে ভাবতে থাকে। হটাৎ করেই নিজের পিছনে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে বেলা সাথে নিজের কাঁধের উপর উষ্ণ নিঃশ্বাসের আছড়ে পড়া অনুভব করে। সাথে সাথে বেলার পুরো শরীর কেঁপে ওঠে বেলা কিছুটা ঘাবড়ে যায়, কানে আসে পিছন থেকে আসা ফিসফিসয়ে বলা কিছু কথা সাথে সাথে বেলার শিরডাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।

-“ওয়েলকাম মিসেস বেলা ..!

চলবে…. ।

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here