তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব -০৫

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৫.
বেলা অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে নিজের ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে। বাড়ির মধ্যে ঢোকার সময়েও বেলা আরো বেশি অবাক হলো বাড়ির মেইন দরজা খোলা কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে কেউ আসছে না দেখে দরজায় আঘাত করতে গিয়ে দেখে দরজা খুলে রাখা আলতো করে ধাক্কা দিতে পুরো খুলে যায়। বেলা বেশ চিন্তিত হয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়।

-“আন্টি, আংকেল, মামনি! বেলা চিৎকার করে ডেকে ওঠে।

বেলার চিৎকার করে ডাকার পরেই হঠাৎ করেই বাড়ির সব লাইট এক সাথে জ্বলে ওঠে সাথে একসাথে ফেটে ওঠে কয়েকটা সেল। আর চারিদিকে থেকে চিৎকার ভেসে আসে। হটাৎ এমন কিছু হওয়াতে বেলা চমকে গিয়ে বিস্ময় নিয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখছে। তার গায়ে মাথায় চিকচিকে কুচি কাগজ ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভরে গেছে বলতে গেলে সব কিছুই তার মাথার উপর দিয়ে পড়েছে। বেলা চারিদিকে তাকিয়ে দেখে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রাণের অংশ গুলো । বেলা ওদের সবার দিকে তাকিয়ে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে আর সাথে সাথে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে বেলার উপরে।

-“কিউটিপাই । সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠে।

বেলা চোখ বুঝে তাদের আলিঙ্গন উপভোগ করছে। তার চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েকফোটা অশ্রুকনা। ওদের থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন মহিলা আর তিনজন ভদ্রলোক। সাথে বসে আছে হুইলচেয়ার একজন বয়স্ক মহিলা যার চোখের কোন দিয়ে ও পানি গড়িয়ে পড়ছে সাথে মুখে ফুটে আছে এক চিলতে খুশির হাসি। বেলাকে জড়িয়ে থাকা বাচ্চা গুলো একে একে বেলার দুই গালে তাদের আদরের স্পর্শ চুমু দিয়ে সরে আসে। আর বেলা হাসি মুখেই তার প্রাণের অংশ পুঁচকে গুলোর আদর গ্রহণ করছে। সবাই একে একে সরে গেলেও এখনও একটা ছোট্ট পুঁচকে বেলার গলা জড়িয়ে ঝুলে আছে। বেলা পিঠে হাত রাখতে বেলার গলায় থেকে মুখ থেকে বেলার মুখের দিকে তাকায়।

-“আই মিত ইউ তিউতিপাই । আধো আধো বুলিতে বলে ওঠে।

-” আই অ্যাম অলসো মিস ইউ রিয়া বেবি। বেলা বলে ওঠে।

বেলা বাচ্চা টাকে জড়িয়ে ধরেই এবার উঠে দাঁড়ায়। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে এখন ছোটো বড় সব বাচ্চারা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আর পিচ্চি রিয়া বেলার গলা জড়িয়ে রেখেই নিজের মত বকবক করে যাচ্ছে। বেলা তাকে সোফায় বসিয়ে রেখে এগিয়ে যায় হুইলচেয়ারে বসা বয়স্ক মহিলার দিকে। বেলা কাছে গিয়ে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে। তিনি আবেগে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। বেলার মুখ দিয়ে অস্ফুটে বলে ওঠে।

-“নানিমা।

-” আমার বাচ্চা কেমন আছিস তুই? কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে বয়স্ক মহিলা।

-“আমি ভালো আছি। আর দেখো এখন তো আমি ফিরে এসেছি এরপর থেকে আমি একদম বিন্দাস থাকবো। বেলা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে।

বয়স্ক মহিলা বেলার মাথা নিজের কাছে টেনে নিয়েই কপালে স্নেহের স্পর্শ বুলিয়ে দেয়।

-” আমি কিন্তু জানি আমার এখানে না থাকায় তুমি খুব অনিয়ম করেছ যেটা এখন আর চলবে না। এখন থেকে সম্পূর্ন রুটিন মেনেই তোমাকে চলতে হবে। বেলা কিছুটা আদেশের সুরে বলে ওঠেন।

-” কেমন আছো বেলা মা? পাশে দাঁড়ানো একজন মহিলা বলে ওঠে।

-“আমি ভালো আছি মামনি। তুমি কেমন আছো? বেলা উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরেই বলে ওঠে।

-“এই যে আমাদের সবার মা ফিরে এসেছে এবার আমরাও ভালো আছি। বেলার মামনি অর্থাৎ আসিয়া বেগম বলে ওঠে।

-” আংকেল কেমন আছেন? বেলা পাশে দাঁড়ানো ভদ্র লোককে বলে ওঠে।

-” আমিও ভালো আছি বেলা মা। হেসে বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

বেলা সবার সাথে কথা বলে নিয়ে একবার বাড়ির চারিদিকে তাকিয়ে নেয়। এই বাড়ি তার প্রাণ আর এই বাড়ির থেকে সে পাঁচ পাঁচটা বছর দূরে ছিলো এই এখানে উপস্থিত তার সব প্রাণের মানুষের থেকে দূরে ছিলো। এই মানুষ গুলোর জন্যে তো সে এখনও ঠিক আছে বেঁচে আছে তাকে ভালোবাসা আগলে রেখেছে তাকে। আর তার সামনে দাঁড়ানো বাচ্চা গুলোই তো তার মুখের হাসি ফুটিয়ে তোলার আরো এক কারণ এদের সবাইকে নিয়েই তো তার পরিবার।

-“আচ্ছা তোমরা সবাই তোমাদের গিফট পেয়েছ তো? বেলা সব বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ । সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“হ্যাঁ রে বেলা নিশান এসে সব দিয়ে গেছে তোর লাগেজ তোর রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর সবাই একসাথে খেতে বসবে। তোর জন্যে ওরাও না খেয়ে বসে আছে যে। আসিয়া বেগম বলে ওঠে।

-“আচ্ছা ঠিক আছে আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি তোমরা ততক্ষণ বসে পড়ো। বেলা হেসে উপরের দিকে দৌড় দেয়।

আর বেলার এই কান্ড দেখেই সবাই হেসে ফেলে। বেলা বড় হলেও সে এখনও বাচ্চা রয়ে গেছে তবে তার এই চরিত্র তখনই প্রকাশ পায় যখন সে এই সবার মাঝে থাকে তাছাড়া বাইরের সে কঠিন আর গুরু গম্ভীর হয়ে থাকে। পনেরো বছর বয়সে বেলা তার বাড়ি ছেড়ে ছিল আর তারপরই থেকে সে এখানেই বেড়ে উঠেছে প্রত্যেকটা মুহূর্ত নিজের সাথে লড়াই করে গেছে। এটা বেলার নিজের মায়ের বাবার বাড়ি। যেটা এখন বাড়ি কম অনাথ আশ্রমে পরিনত হয়েছে। আর বয়স্ক মহিলা মায়া চৌধুরী হলেন বেলার নিজের মায়ের মা তার নানিমা। যেই একমাত্র তার সম্বল হয়ে বেঁচে আছেন তার মাথার উপর ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে। বেলা খান বাড়ি ছেড়ে পনেরো বছর বয়সে এই চৌধুরী বাড়ি চলে আসে তারপর থেকে তার ইচ্ছে মত এই বাড়ির একপাশে বাড়ির সাথে জয়েন্ট করেই আরো একটা বিল্ডিং করা হয় যেটা মূলত বাচ্চাদের জন্যে। আর তারপর চৌধুরী বাড়ির নাম পাল্টে হয়ে যায় মায়ানীড় যেখানে অনাথ বাচ্চাদের বাসস্থান শুরু হয়। বেলা নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে অনাথ হয়েছে তাই সে নিজের উদ্যোগে অনাথ বাচ্চাদের দায়িত্ব নেয় কারণ সে চাইনি তার মত এমন বাচ্চারা কষ্টে অনাদরে বড় যাদের পরিবার থেকেও নেই সে হয়তো সবাই কে নিরাপত্তা দিতে পারিনি কিন্তু যতোটা পেরেছে করে গেছে। এখন বেলার কাছে এরাই তার সব কিছু।

রাতের অন্ধকার চারদিকে ঝিঁঝিঁপোকাদের ডাক শোনা যাচ্ছে। বাইরে শীতল হাওয়া বইছে। বেলা বারান্দার গ্লাস খুলে রেখেই কাউচের উপর বসে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে। বাইরের মৃদু হাওয়া বারান্দার পর্দা গুলো উড়ছে সাথে রুমের মধ্যে বসে থাকা বেলার শরীর ছুয়ে যাচ্ছে কপালের উপরে কিছু চুল গড়াগড়ি খাচ্ছে সেদিকে বেলার কোনো খেয়াল নেই সে তো তার মত করে ব্যস্ত হয়ে আছে কালকে যার তার অনেক বড় একটা কাজ যেটা তাকে যেকোনো ভাবে সম্পূর্ণ করতেই হবে।

————-

-“স্যার সব কিছু রেডি আছে। আর এই ফাইলে সমস্ত ডকুমেন্ট আছে ম্যাডামের আপনি যা চেয়েছিলেন। আকাশ বলে ওঠে।

বাইরের নিকষ কালো অন্ধকারের দিকে ek নমস্কার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাঁঝ তার চোখে মুখে খেলা করছে অদ্ভূত রহস্যের মায়া জাল মনের মধ্যে কষে চলেছে কিছু হিসেব। আকাশের কথা শুনে এই মুহূর্তে নিজের মধ্যে চলতে থাকা সমস্ত করতে থাকা হিসেব বন্ধ রেখেই পিছনে ফিরে দাড়ায়। আকাশের হাতের থেকে ফাইল নিয়ে খুলতে বেরিয়ে আসে একটা হাস্যউজ্জ্বল স্নিগ্ধ মুখের ছবি। যে মুখের দিকে তাকালেই সাঁঝের সমস্ত মনে প্রাণে অদ্ভূত প্রশান্তি বয়ে যায়। তাকে সেকেন্ডের মধ্যে শান্ত শীতল বানিয়ে দেয় অদ্ভূত ভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে যায় চোখের পলক পড়তে চায়না তখন এই মুখের দিকে থেকে। অদ্ভূত আসক্তিতে গ্রাস করে এই মুখ।

-“স্যার কালকে এগারোটায় মিটিং ফিক্সড করা হয়েছে। আকাশ কিছুটা মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-” ওকে । সাঁঝ কিছুটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

আকাশ তার স্যারের মুখের হাসি দেখে আর কোনো কথা না বলেই সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর সাঁঝ সে হাস্যউজ্জ্বল মুখের ছবিটির দিকে তাকিয়ে রহসময়ী হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

-“অনেক হয়েছে তোমার দূরে দূরে থাকা। তোমার দূরে থাকার সময় শেষ এতদিন যা ইচ্ছে করে গেছো নিজের মনের মত করে। তোমাকে এতদিন ছাড় দিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু এবার সময় হয়েছে কাছে আসার তোমাকে নিজের করে নেওয়ার। কাল থেকে শুরু হবে তোমাকে একটু একটু করে আমার মাঝে জড়িয়ে নেওয়া। যেখান থেকে তুমি চাইলেও আর মুক্ত হয়ে পালাতে পারবেনা। তোমাকে আমার মাঝে বাঁধা পড়তেই হবে। আমার ভালোবাসার আসক্তির মাঝে জড়িয়ে নেবো তোমায়।

চলবে….?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…। নিজেদের মতামত জানাবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here