তোর শহরে রেখেছি পা পর্ব -০৫

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আবারারের পুরো পরিবার আরুহিকে পর্যবেক্ষণ করছে। কে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আফরিনের বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে কিন্তু কেন? সেটা বুঝতে পারছে না। আরুহি মেয়েটার কাছে গিয়ে বলল,,

“ভাবি তুমি দু মিনিট দাড়াও আমি উনাদের বিদায় দিয়ে আসছি।”

“উনারা কারা আর কোথায় যাবে?’

“খান ভিলায় যাবে তুমি দাড়াও আসছি আমি।’

আরুহি গাড়ির সামনে গিয়ে বলল,,

“আপনারা যান উনারা আপনাদের সেইফলি খান ভিলায় পৌঁছে দেবে। ”

তখন নাহিয়ান খান বললেন,,,

“অনেক ধন্যবাদ মা! তুমি না থাকলে হয়তো আমাদের আরো দেরি হতো। ”

“আরে স্যার এটা আমার কর্তব্য! আপনারা যান ! মাসুম ভাই উনাদের সেইফলি বাড়িতে পৌছে দিও আস্তে আস্তে সাবধানে চালিও।”

তখন গাড়ির ড্রাইভার মাসুম বলল,,

“ঠিক আছে আরুহি তুমি কোন টেনশন নিও না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আল্লাহ হাফেজ!”

তখন আবরার বলল,,,

“তা মিস আপনি কোথায় যাবেন সেটা তো বললেন না?”

“গেলেই দেখতে পাবেন সাবধানে যাবেন আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ!”

আবরারদের গাড়ি ছেড়ে দিল! আবরাররা আর আরুহি একি ট্রেনে এসেছে শুধু বগি আলাদা। আরুহি ওখান থেকে মেয়েটার কাছে গেল। আর বলল,,,

“ভাবি খুব খুদা পেয়েছে আর এখন তো দুপুর ও হয়ে গেছে। এখান থেকে কিছু খেয়ে তারপর যাবো!”

“তোর ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে কথা শোনাবে।”

“ধুর ভাইয়া কি করে জানবে। আর ভাইয়া না এসে তোমাকে পাঠালো কেন?

“তোর ভাইয়া বিয়েবাড়ির জন্য কাজে গেছে তাই আসে নি আমাকে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে। আমি যদি কিছু কথার এদিক ওদিক করি তাহলে বলবে রুপ তুমি এটা কেন করলে ওটা করলে ভালো হতো।”

“আহ হা কি ভালোবাসা তোমাদের রুপা কে কেটে কি সুন্দর ভালোবেসে রুপ বলে ডাকে শিহাব ভাইয়া।”

“সব ঢং বুঝলি! এখন চল বাড়ি গিয়ে খেয়ে নিবি ! তোর দাদিজান নিজ হাতে তোর জন্য বিড়িয়ানি রান্না করেছে!”

“সত্যি!”

“হ্যা সত্যি! এখন তাড়াতাড়ি ওঠ ওরাই তোর আগে চলে যাবে!”

“ওদের আগে যাওয়ার জন্যেই তো তোমার সাথে গল্প করছি। ”

“মানে?

“কিছু না এখন তুমি বলো ভালোবাবা কেমন আছে?

আরুহি স্কুটিতে চড়ে বসলো। রুপা স্কুটি নিয়ে চলতে শুরু করল। আর বলল,,,

“বাবা খারাপ থাকে কবে ভালোই আছে!”

“তুমি কখনো সোজা কথার উত্তর সোজা ভাবে দিতে পারো না।”

“না পারি না তোরা কখনো সোজা কথার উত্তর সোজা ভাবে দিস। যে আমি দেব।”

“আচ্ছা ভাবি তোমার কি মনে হয় ওনারা খান বাড়ির কে হয়?”

“আমি কি করে জানবো ওনাদের কথার আর তোর কথার ধরনে মনে হলো তোরা আগে থেকেই একে অপরকে চিনিস।’

“হুম চিনি তো যাকে স্যার বললাম তিনি হচ্ছে আমার কলেজের টিচার । নাহিয়ান খান।”

“কি নাহিয়ান খান ও হ্যা মনে পরেছে দাদু সকালে বলছিল তার ভাটিজা আজকে তার পরিবার নিয়ে আসবে নাম নাহিয়ান খান। তার মানে,,

“তার মানে স্যার দাদুভাই এর ভাইয়ের ছেলে। আর নিশান আবরার দাদুভাই এর নাতি। ”

“নিশান আবরার কে?”

“আরে যে ছেলেটা আমার সাথে দাড়িয়ে ছিল।”

“দেখতে শুনতে তো ভালোই লাগলো।”

ওরা আরো কিছু কথা বলতে লাগলো। আসলে রুপা হচ্ছে ভালোবাবার মেয়ে যার কাছ থেকে আরহাম সব শিখেছে। ওকে ভাবি বলার কারণ আরেকটু পর বলি।

__________________

খান ভিলায় রমরমা পরিবেশ। নামকরা আনোয়ার খান এর বড় নাতনির বিয়ে হচ্ছে। গ্ৰামে ওনাদের বেশ নাম ডাক আছে। কাল গায়ে হলুদ আজকেই সকল মেহমান কে আসতে বলেছেন আনোয়ার খান। নাহিয়ান রা সকলে বাড়িতে ঢুকে অবাক হয়ে গেল। আনোয়ার খান নাহিয়ান খান আর তার ভাইকে কে জরিয়ে ধরলো। নাহিয়ান খান একে একে সবাই কে পরিচয় করিয়ে দিল। সবাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। ওরা চলে গেলেও খান বাড়ির সকলে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা সকলেই লক্ষ্য করলো। তখন নাহিয়ান খান বললেন,,,

“কাকা আমরা সবাই এসে পরেছি আর কেউ বাকি নেই। তাহলে তোমরা সবাই দরজার দিকে বারবার তাকাচ্ছো কেন?”

তখন আনোয়ার খান বললেন,,

“আজ আমার নাতনি আসছে ঢাকা থেকে আর এই ট্রেনেই আসার কথা! কিন্তু এখনো এলো না কেন?”

“তোমার নাতনি!”

তখনি দরজা দিয়ে বোরকা আর হিজাব পরিহিতা একটা মেয়ে আস্তে আস্তে প্রবেশ করলো রুপার সাথে। মেয়েটা আরুহি ছিল। বাড়ির কিছু মানুষ ওর দিকে এগিয়ে গেল। আরুহি এসে সালাম দিল,,,

“আসসালামু আলাইকুম!

আনোয়ার খানের গিন্নি বললেন,,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! আরুহি কেমন আছিস তুই? ”

“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি কেমন আছেন?”

“আমি ভালো না থাকলেও তোকে দেখে ভালো হয়ে গেছি। আমি তোর দাদি হই আর তুই কিনা আপনি আপনি করছিস!”

আরুহি কিছু না বলে গুটি গুটি পায়ে আনোয়ার খান এর সামনে এসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম দাদুভাই!কেমন আছেন আপনি?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তা কেমন আছো তুমি আমাদের তো ভুলেই গেছো তোমরা।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি! আপনাদের ভুলবো কি করে হাজার হোক একি রক্ত তো!”

“আর কিছু পারো আর না পারো বাবার মতো যুক্তি দিয়ে কথা বলতে শিখেছো। আমরা যে তোমাদের খবর পাওয়ার জন্য সারাদিন বসে থাকি একটা কল ও তো দিতে পারো। নাকি তোমরা অনেক ব্যস্ত থাকো?”

“ব্যাপার টা তেমন না দাদুভাই!”

“কতোবার বললাম আমাদের সাথে থাকো কিন্তু তোমরা দু ভাই-বোন আমাদের কোন ও কথায় শুনলেনা। বাবার মতো রাগ করে চলে গেলে। ”

তখন আনোয়ার খান এর বড় পুত্র বধু এক গ্লাস শরবত এনে বলল,,,

“বাবা পুরোনো কথা বাদ দিন তো! মেয়েটা এতোদূর থেকে এসেছে। আরুহি তুমি শরবত টুকু খেয়ে নাও।”

আরুহি বসে শরবতটা খেয়ে বলল,,

“বাড়ির বাকি সবাই কোথায় চাচি?”

“তোমার চাচা আর তোমার ভাই শিহাব বিয়ের কাজের কথা বলতে গেছে।”

“বিয়ের কনে কোথায়?”

“কোথায় আবার নিজের রুমে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।

তখন রুপা বলল,,,

“দাদি আরুর খিদে পেয়েছে স্টেশনে বলছিল। ও ফ্রেশ হয়ে আসুক তুমি খাবার বাড়ো।”

“ঠিক আছে। ও ফ্রেশ হয়ে আসুক।”

আরুহি কারো দিকে না তাকিয়ে ওপরে ওর জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল।আগে যেহেতু এ বাড়িতে ছিল তাই ওদের রুম আলাদা। কিন্তু ও এমন ব্যবহার করলো যেন আবরার বা ওর পরিবার কে ও চেনে না।রুপা আরুহিকে দেখে সব থেকে বেশি অবাক হলো। এতক্ষন মেয়েটা প্রানবন্ত ছিল কিন্তু এখন পুরো নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে।

এতক্ষন সবাই অবাক চোখে ওদের দেখছিল।। এই বাড়ির মানুষ যে আরুহিকে খুব ভালোবাসে সেটা স্পষ্ট কিন্তু কেউ বুঝতে পারছে না আরুহিদের সাথে এদের কি সম্পর্ক। তখন নাহিয়ান খান আনোয়ার খান কে জিজ্ঞেস করল,,,

“কাকা এই মেয়েটা কে?”

তখন আনোয়ার খান বললেন,,,

“মাহমুদ এর মেয়ে আরুহি ?”

এ কথা শুনে যেনো দুজন মানুষের মনে বিস্ফোরণ হলো। নাহিয়ান খান বললেন,,,

“মাহমুদ ভাইয়ের ছেলেমেয়ে ছিল! উনি তো পাঁচবছর আগে মারা গেছে। আর তোমরা এ খবর পেলে কোথা থেকে!”

“মাহমুদের সাথে আমার সম্পর্ক না থাকায় ব্যাপারটা আমরাও জানতাম না । । ওরা কোন কারনে ওদের কথা লুকিয়ে রাখতো তাই আমরাও বুঝতে পারিনি মাহমুদ এর ছেলে মেয়ে আছে। কিন্তু যেদিন আমার ছেলে আর বউমা মারা গেল সেদিন আমি আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। শুনেই ছুটে গেলাম ওদের বাড়িতে কিন্তু ততক্ষণে আমার ছেলে বউমার দাফন হয়ে গেছে। তখন মাহমুদ এর বন্ধু আজিম এর থেকে ওদের কথা জানতে পারলাম। সব শুনে আমি ওদের আমার কাছে এনে রাখতে চাইলাম। কিন্তু ওরা এলো না। মাহমুদ এর বন্ধু আজিম কে তো তুই চিনিসই যেদিন মাহমুদ মারা গেল তখন আরুহিরা ওর সাথেই ছিল। আজিম বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওদের গ্ৰামে নিয়ে আসে। কারন ওখানে থাকলে ওদের রিস্ক ছিল। ওরা আজিমের সাথে থাকতে শুরু করে এর পরে আমি তোর কাকি বাড়ির সকলে গিয়ে ওদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসি। কিন্তু ওরা এখানে থাকতে নারাজ। তাই তিন বছর আগে ওরা ঢাকায় ফিরে যায়। বাকি একবছর এর মতো ওরা আমাদের এখানে ছিল আরেক বছর আজিমের বাড়িতে। ”

সব শুনে আবরারের খুব খারাপ লাগলো। বাকিরা অন্য কিছু ভাবতে লাগলো। আনোয়ার খান সকলকে ওদের জন্য রাখা বরাদ্দকৃত রুমে পাঠিয়ে দিলেন। আনোয়ার খান এর বাড়িটা অনেক বড়। আনোয়ার খানের দুই ছেলে এক মেয়ে বড় ছেলে আহমদ খান ছোট ছেলে মাহমুদ খান। মেয়ে আঁখি খান। আহমদ খানের স্ত্রী শায়লা খান তাদের এক ছেলে এক মেয়ে ছেলে শিহাব খান তার বউ রুপা। তার জন্য আরুহি রুপাকে ভাবি বলে। যার বিয়ে হবে ও হলো আহমদ খানের মেয়ে আরশি খান! আরুহি সোজা ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আরশির রুমে গেল! ও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,

“ভেতরে আসবো বিয়ের কনে?”

আরশি ওর হবু বরের সাথে কথা বলছিল কারো আওয়াজ পেয়ে ও দরজার দিকে তাকালো আরুহি কে দেখে তো আরশি ফোনটা কেটে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,,

“আরু তুই এমন কেন রে? আর আমার রুমে আসার জন্য তোর পারমিশন নিতে হবে না। ”

“কারো রুমে পারমিশন না নিয়ে ঢোকা উচিৎ নয় বুঝলে বিয়ের কনে!”

“কখন এলি ?”

“একটু আগেই ওপরে এসে ফ্রেশ হয়ে তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।”

“ওহ আচ্ছা নিশ্চয়ই তোর খিদে পেয়েছে চল নিচে যাই। আর হ্যা আরহাম ভাইয়া আসে নি?”

“ভাইয়া রাতে আসবে কিছু কাজ আছে!”

“ওহ আচ্ছা! ”

আরুহি আর আরশি নিচে চলে এলো। আরুহি একটা সাদা রঙের থ্রি পিস পরেছে মাথায় ঘোমটা দেওয়া নিচে অনেক লোক তো তাই। আরশি আর আরুহি কথা বলতে বলতে নিচে এলো। তখন আনোয়ার খান ওদের ডাক দিল। ততক্ষনে আবরার রাও নিচে চলে এসেছে। আনোয়ার খান আবরার দের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল। তখন আরুহি বলল,,,

“দাদাভাই আমি ওনাদের আগে থেকেই চিনি । তবে এটা জানতাম না উনারা আপনার আত্মীয়!”

আনোয়ার খান বললেন,,

“ঠিক আছে এখন তোমরা সবাই খেয়ে নাও। কি আরুহি তোমার ভাই কখন আসবে?”

“রাতে আসবে!”

“আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা সবাই বসো খেয়ে নাও।”

আরুহিরা সকলে গিয়ে ড্রাইনিং টেবিলে বসলো। তখন আরুহি দাদি জান বলল,,,

“আরুহি আমি তোকে খায়িয়ে দিই। তোকে খাওয়াতে পারলে মনে হবে আমি আমার ছেলে মাহমুদ কে খাওয়াচ্ছি তুই তো তারই অংশ!”

আরুহি কিছু বলবে তার আগেই,,তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,,

“তোমার ছেলের অংশ হলে কি হবে তোমার ছেলের মতো তো এত ফর্সা না। আমার ভাই ছিল কতো সুন্দর ফর্সা। কিন্তু তার ছেলে মেয়ে কি হলো কালো। কালো হবে নাই বা কেন? ওর মা রেহানা ও তো ছিল কালো।”

এ কথা শুনে সকলে পেছনে তাকালো তখন আরুহির দাদি জান বলল,,,

“আঁখি এসব হচ্ছে কি? তোকে আগেও বলেছি আর এখনো বলছি মাহমুদের ছেলেমেয়েদের সাথে ভালোভাবে কথা বলবি নাহলে কিন্তু ভুলে যাব তুই আমার মেয়ে!”

“উচিৎ কথা বললেই দোষ হয়ে যায় তাই না মা।”

আরুহি কিছু বলছে না মাথা নিচু করে আছে কিন্তু আবরারের খুব রাগ হচ্ছে। কিন্তু নতুন জায়গায় ও ওর রাগটা দেখাতে চায় না। সবারই উনার কথা শুনে খারাপ লাগছে। তখন আরুহি চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল,,,

“দাদি জান আমি ভালোবাবার বাড়িতে যাচ্ছি সন্ধ্যার আগে ফিরে আসবো! আপনারা চিন্তা করবেন না।”

আরুহি কোন দিকে না তাকিয়ে হাঁটা ধরলো। সবাই পেছন থেকে ডাক দিল কিন্তু ও কারো কথা শুনলো না।বাড়ির বাইরে এসে কাউকে দেখে আরুহির মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। আরুহি কোন রকম নিজেকে সামলিয়ে খান ভিলার ডান দিকের রাস্তায় হাঁটা ধরলো। তখন আরশি টেবিল ছেড়ে বলল,,,

“ফুপি তোমাকে আগেও বলেছি আর এখনো বলছি আরুহি আমাদের খান বাড়ির মেয়ে ভুলেও তাকে অসম্মান করে কোন কথা বলবে না। ওকে তুমি কালো কোথায় দেখলে ওতো শ্যামলা তাও উজ্জ্বল শ্যামলা। আর ওর মায়াভরা মুখের দিকে কখনো তাকিয়েছো। আসলে কি বলো তো ফুপি যাদের মন কালো তাদের চেহারা ফর্সা হলে কি হবে। সবকিছু তাদের কালোই লাগবে তার জলজ্যন্ত প্রমান তুমি। দেখতে তো তুমি ফর্সা কিন্তু মন তো তোমার কালো। এর আগেও তুমি আরুহির সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলে তখন আরুহি কিছু বলে নি ভেবে এটা ভেবোনা কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। আমরা বোনের নামে কিছু বললে আমি কিন্তু চুপ করে থাকবো না।”

তখন শায়লা খান মেয়েকে বলল,,,

“আরশি এগুলো কি হচ্ছে আজ বাদে কাল তোমার বিয়ে এসব কি ব্যবহার করছো।”

“মা তুমি আমাকে কেন বলছো। মেয়েটা কতোদূর থেকে জার্নি করে এসেছে উনার জন্য আরু না খেয়ে চলে গেল। ”

তখন আখি খান বলল,,,

“এখন দেখছি সত্যি কথাও বলা যাবে না। কালো কে কালো বলবো নাতো কি বলবো। আর আরশি তুই ঐ উরে এসে জুড়ে বসা মেয়েটার জন্য আমাকে কথা শোনাচ্ছিস।”

“ও উরে এসে জুড়ে বসা মেয়ে নয়। ও এই বাড়ির মেয়ে হ্যা এটা ঠিক কাকাই কোন কারনে এই বাড়িতে ছিল না তারমানে এটা না এই বাড়িতে তার কোন অধিকার নেই। তোমার ভাগ্য ভালো আরহাম ভাইয়া এখানে নেই নাহলে দেখতে তার বোন কে কথা শোনানোর জন্য তোমার কি হাল করতো। ”

তখন আনোয়ার খান বললেন,,,

“কি হচ্ছে টা কি এখানে। এখানে অনেক লোকজন আছে তার মধ্যে তোমরা কি শুরু করেছো। আর আঁখি তোমাকে এর পর থেকে এরকম আচরণ যেনো না করতে দেখি। আরুহি আসলে তুমি ওর কাছে মাফ চাইবে।আর আরশি তুমি শান্ত হও।

“কি বললে বাবা আমি ওর কাছে!”

“আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না। এখন বলো নেহমাত কখন আসবে সে তো আজকেই আসার কথা বিদেশ থেকে কতো বছর পর আজ আসছে আর তার সাথে দেখা হবে। ”

“হ্যা বাবা ঐ পাঁচ বছর হলো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল তারপরেই তো গেল আর আজ ফিরলো। তাকে রিসিভ করে একেবারে এখানে এসেছি।”

“তা কোথায় সে ?”

তখনি পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,,

“এই তো বাবা আমি এখানে আসসালামু আলাইকুম বাবা!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। তোমাকে তো চেনায় যাচ্ছে না। অনেক টা বদলে গেছো। তা তোমাদের শেখ ইন্ডাস্ট্রিজ এর কি অবস্থা!”

“সব ভালোই চলে বাবা। আপনারা সবাই কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ আমরা সকলে ভালো আছি। তোমার খবর বলো।”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা বাবা ঢোকার সময় একটা মেয়েকে দেখলাম বেরুতে তাকে তো ঠিক চিনলাম না।”

“ও হচ্ছে মাহমুদের মেয়ে আরুহি !”

একথা শুনে নেহমাত নামক মানুষ টি মনে হয় একটু হকচকিয়ে গেল। কোনরকম নিজেকে সামলিয়ে বলল,,,

“মাহমুদ ভাইয়ার মেয়ে কিন্তু তারা এখানে কিভাবে এলো! আর মাহমুদ ভাইয়া শুনেছিলাম তো মারা গেছে।

“তুমি তো বিদেশে ছিলে তাই হয়তো জানো না। । ওরা মারা যাওয়ার পরে ওদের ছেলে মেয়ের কথা জানতে পারি। ওরা এতদিন ঢাকায় থাকতো আরশির বিয়ের জন্য এখানে এসেছে।”

“ছেলেও আছে অথচ আমি জানিনা আঁখি তুমি আমাকে বলো নি তো?”

তখন আঁখি খান বলল,,,

“আমিই তো জানতাম না আমিও তো তোমার সাথে তিন বছর বিদেশ ছিলাম। গত বছর বাড়িতে এসে জানতে পারি ওদের কথা। কিন্তু ওরা তো এখানে ছিল না। আর থাকেও না। আমার সাথে একবার দেখা হয়েছিল। তুমি ও কখনো মাহমুদ ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করো নি তাই আমিও বলিনি।”

“ওহ আচ্ছা তা বাবা এনারা কারা? (আবরার দের তাকিয়ে বলল নেহমাত শেখ)

আনোয়ার খান বললেন,,

“ওরা হচ্ছে আমার ভাতিজা আর ভাটিজার পরিবার। আর নাহিয়ান ও হচ্ছে আঁখির স্বামী নেহমাত শেখ তুই তো চিনিসই।”

“হ্যা কাকা আমি চিনি ওনাকে!”

“এখন অনেক হয়েছে তোমরা খাওয়া শুরু করো। তারপর তোমরা সবাই রেস্ট নাও। “নেহমাত তুমিও যাও।”

আবরারের আরশির কথা গুলো ভালো লাগলেও আখি খান আর নেহমাত শেখ এর কথা কেমন যেনো লাগলো। আবরার ও না খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। তখন রিয়াদ বলল,,

“এই আবরার তুই কেন উঠছিস!”

“আমার খিদে নেই। আমি আসছি তোমরা খাও।”

আবরার কোনো কথা না বলে ওখান থেকে চলে গেল। ওরা কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু নতুন জায়গায় আর কিছু বললো না। নাসরিন খান আরুহির কথা শুনে চুপ করে আছে। আবরার এর জার্নি করে একটু রেস্ট নিতে চেয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতি সেটা হতে দিল না। আরুহির জন্য কেমন যেনো লাগছে আবরারের। ও বাড়ির বাইরে গিয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল আরুহি কোন দিকে গেছে উনি বলল ডান দিকে আবরার কিছু চেনেনা তবুও ডান দিকের রাস্তা ধরে চলতে লাগলো। কিছু দূর যেতেই আরুহিকে দেখলো নদীর ধারে আরুহি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে আশেপাশে কেউ নেই। আবরার পেছন থেকে বলল,,,

“সবাই তোমাকে ভালোবাসবে, সবাই তোমাকে পজিটিভ ভাবে নিবে এমনটা কখনো হবেনা সম্ভবও না! তাই ঘৃণা; সমালোচনা বহন করার পর্যাপ্ত ক্ষমতাও রাখতে হবে।”

আরুহি চোখ খুলে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“আপনার কেন এমন মনে হলো আমি মন খারাপ করে এখানে দাঁড়িয়ে আছি।’

“না বাড়িতে যা হলো তাই ভাবলাম আপনি ঐ ব্যাপারটা নিয়ে মন খারাপ করে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন।”

“তাই ও রকম মোটিভেশনাল কথা বললেন!”

“হুম ওরকমি !”

“আমি মন খারাপ করে নেই। আমাকে আমার রব খুব যত্ন সহকারে বানিয়েছেন আর আমার রব যা তৈরি করেন তা কখনো অসুন্দর হয় না। তিনি সব সময় বেস্টটাই বানান। আমি আমাকে নিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট এতে কে কি বললো না বললো তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আমার কাছে সন্তুষ্ট। নিজের কাছে সহজ আর সৎ থাকলে অন্যজন আপনাকে নিয়ে কি ভাবলো কি বললো সেটাতে আপনার কখনো যাবে আসবে না।”

“আপনি ঠিক বলেছেন!”

“আপনি এখানে কেন? খাওয়া ছেড়েই উঠে এসেছেন নিশ্চয়ই!”

“না ঐ খেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই চলে এলাম । কিন্তু আপনি এখানে কেন? আপনি তো কার বাড়িতে যাবেন বলেছিলেন।”

“এই জায়গাটা আমার খুব পছন্দের। এখান দিয়ে আমি যখনই যাই তখনি এখানে দাঁড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ আর আজকে দাড়ানোর আরো একটা কারন ছিল।”

“কি কারন?”

“আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল আপনি আমার পেছনে আসবেন।”

“আপনার কেন এমন টা মনে হলো ?”

“জানিনা তবে মনে হলো। এখন চলুন যাই আমার ক্ষুদা পেয়েছে?”

“কোথায়?”

“কোথায় আবার আমার ভালোবাবার বাড়ি।”

“এভাবে না জানিয়ে কারো বাড়িতে যাওয়া ঠিক হবে!”

“আমি জানি আরশি আপু অথবা ভাবি ও বাড়িতে ফোন করে বলেছে আমি যাবো।”

“আচ্ছা তাহলে চলুন ! তবে?”

“আমি জানি আপনি কি ভাবছেন। সমস্যা নেই আমার ওপর ভরসা রাখুন পরে সব আপনাকে বলবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আবরার আর আরুহি দুজনে আজিম আহমেদ এর বাড়িতে গেল। খান ভিলা থেকে আজিম আহমেদ বাড়ি হেঁটে পনেরো মিনিট লাগে। ওরা কিছুক্ষণ পর ও বাড়িতে পৌছে গেল। আবরার দেখলো একতলা বাড়ি।ওরা ভেতরে গিয়েই দেখতে পেল আজিম খান আর উনার স্ত্রী খাবার সাজিয়ে বসে আছে। আরুহি গিয়ে বলল,,,

“আসসালামু আলাইকুম ভালোবাবা! কেমন আছো তোমরা?”

তখন আজিম আহমেদ বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম আরু। আমরা আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।রুপা আমাকে ফোন করে সব জানিয়েছে । আমি আর তোর ভালো মা সেই কখন থেকে তোর জন্য খাবার বেড়ে বসে আছি।”

তখনি আজিম খানের চোখ পরলো আবরারের দিকে উনি আবরার কে দেখে বলল,,

“আরু ও কে?’

“উনি হলো নিশান আবরার। নাহিয়ান খানের ছেলে। নাহিয়ান খান কে চেনো তো?”

“হ্যা চিনি মাহমুদের চাচাতো ভাই নাহিয়ান ।”

“আসসালামু আলাইকুম আংকেল!” কেমন আছেন আপনি?”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি!” তুমি কেমন আছো ?

“জি আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

তখন আরুহি বলল,,

” আসলে আমি বের হবার পর উনিও বের হয়ে আসে তাই আমার সাথে নিয়ে এলাম। ভালো মা কি রান্না করেছো আজ!”

তখন আজিম খানের স্ত্রী বলল,,

“আরহাম কাল ফোন দিয়ে যখন বলল তুই আসছিস। আমি জানতাম তুই একবার হলেও আমাদের বাড়িতে আসবি। তাই আমি আগেই তোর ফেভারিট খাবার রান্না করে রেখেছি। ভালোই হলো আরেকজন অতিথি এসেছে আমাদের বাড়িতে।বসো বাবা তোমরা।”

আবরার ওনাদের ব্যবহারে মুগ্ধ। আজিম খানের স্ত্রী সবাইকে খাওয়ার বেড়ে দিল। আর আরুহি কে খায়িয়ে দিতে লাগলো। আবরার এক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। তা দেখে আজিম আহমেদ এর স্ত্রী বলল,,

“কি দেখছো বাবা?”

“না আপনি কি সুন্দর করে উনাকে খায়িয়ে দিচ্ছেন আমার খুব ভালো লাগছে।”

“খালি ওকে না তোমাকেও দিচ্ছি দারাও!”

বলেই উনি আবরারের সামনে এক লুকমা ধরলো। হুট করে আবদারের চোখ দুটো ভরে উঠলো। ওকে কোনোদিন কেউ এভাবে আদর খায়িয়ে দেয় নি। রুবিনা খান ওর দেখা শোনা করলেও ও সব সময় নিজ হাতেই খেয়েছে। আজিম আহমেদ আবরারের কাঁধে হাত রাখলো আবরার খাবার টা খেয়ে নিল। আরুহি আবরার কে খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিল। তখন আজিম আহমেদের স্ত্রী বলল,,,

“তুমি জানো আরহাম আর আরুহি সবসময় আমার হাতে খাওয়ার জন্য ঝগড়া করতো। এখন আরহামের বদলে তোমাকে খাওয়ালাম।”

“আপনারা খুব ভালো জানেন?”

এ কথা শুনে সকলে হাসলো। ওরা সবাই একসাথে খাবার খেল। তারপর চারজন মিলে কিছুক্ষণ কথা বললো। তখন আবরার এর ফোনে রিয়াদের কল এলো।ও ফোন ধরে বলল,,,

“হ্যা ভাইয়া বলল!”

“আবরার তুই কোথায় কিছু খেয়েছিস তুই? কোথায় তুই সবাই টেনশন করছে তো। এখানে তো তুই তেমন কিছু চিনিস না।”

“ভাইয়া চিন্তা করো না আমি আমার লাইফের বেস্ট খাবার খেয়েছি। আর আমি সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে যাবো।”

“বেস্ট খাবার কি ?”

“ভাইয়া রাখো তোমাকে পরে সব জানাবো। শুধু জেনে রাখো আমি যেখানে আছি সেখানে সেফ আছি। তোমরা টেনশন করো না আমি ঠিক সময় পৌছে যাবো।”

” তুই কোথায় আমরাও যেতাম বাড়িতে তো তেমন কাউকে চিনি না। একটু এদিক সেদিক ঘুরতাম আর কি।”

“আচ্ছা তাহলে তোমরা রেস্ট নিয়ে তারপর বাড়ির ডানদিকের রাস্তা ধরে এসো কিছুক্ষণ হেঁটে একটা মাঠ পাবে ওখানে নদীর পার আছে ওখানে এসো।”

“আচ্ছা ঠিক আমরা রেস্ট নিয়ে আসবো। কিন্তু তুই কোথায়?”

“সেটা এখন বলতে পারছি না রাখছি।”

আবরার রিয়াদ কে কথা বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দিল। এতক্ষন খান বাড়ির সকলে একটা রুমে বসে ছিল। রিয়াদের ফোনটা স্পিকারে ছিল। সবাই সব শুনেছে আর আবরারের কন্ঠ শুনে মনে হলো ও খুব খুশিও। তবে আবরারের কথা শুনে সবাই নিশ্চিত হলো।

___________________

আবরার আর আরুহি কিছুক্ষন পর আজিম আহমেদ এর থেকে বিদায় জানিয়ে বের হলো। উনারা আবারো আসতে বলেছে। আবরার বলেছে আসবে। ওরা হাঁটতে হাঁটতে ঐ মাঠে গেল। আবরার আর আরুহির মাঝখানে পাঁচ হাত জায়গা বাকি। দুজনে প্রকৃতিকে অনুভব করছে। হুট করে আরুহি বলল,,,

“আপনার জীবনে কি কোন দুঃখ আছে মিস্টার। না মানে যখন ভালো মা আপনাকে খায়িয়ে দিচ্ছিল তখন আপনার মুখে খুশির সাথে এক অদ্ভুত যন্ত্রনা ও দেখতে পেয়েছিলাম।”

“কেউ গুরুত্ব না দিলে, আমিও ক্রমশ দূরে সরে যাই। কেউ আমার সাথে অন্যায় কিছু করলে, তাকে ক্ষমা করি এবং এড়িয়ে চলি। কাউকে বিরক্ত করা, মনে ক্ষোভ পুষে রেখে প্রতিশোধের সুযোগ খোঁজা- এসব আমার পছন্দ না। আমি হয় মানুষকে মূল্য দিই, অথবা তার অস্তিত্বটাই ইগ্নোর করি। তাদেরকে তাদের মতো বাঁচতে দিই, আর আমি আমার মতো বাঁচি!”

“মানে বুঝতে পারলাম না?”

“কখনো আমার হয়ে আমার শহরে আসুন সব বিষন্নতার গল্প শুনাবো আপনাকে কিন্তু আপনি শুনবেন তো!”

“আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“শুধু আপনাকে এটুকু বলি,

“আমার দুঃখ ছিলো; আমার দুঃখ আছে, হয়তো বা আমার দুঃখ থাকবে!কিন্ত আমি বাঁচবো, আমি খুশি থাকবো!”

“কি হয়েছে আপনার নিশান?”

আবরার নিশান শুনে থমকে গেল কারন এই নামটা ওর মা আর বাবা ডাকতো। আবরার আজ খুব আবেগী হয়ে পরছে । পুরোনো সব কথা মনে পরছে ও কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু আরুহির নিশান ওর মনে শান্তি এনে দিয়েছে। এদিকে আরুহি ভাবছে আবরার এর কিসের এতো কষ্ট। না ওর আবরারের প্রতি কিউরিসিটি বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতে আফরিন বলেছিল উনি হাসেন না। তখন গুরুত্ব না দিলেও আজ বুঝতে পারছে আবরার ভালো নেই ওর ভেতরে চাপা কষ্ট রয়েছে। আরুহি জিজ্ঞেস করলো আবার ও,,

“কি হয়েছে মিস্টার আপনার?”

আবরার মৌনতা ভেঙে বলল,,

“মিস আমাকে মিস্টার না বলে নিশান বলেই ডাকবেন ঠিক আছে!”

“সেটা নাহয় ঠিক আছে কিন্তু আপনি এরকম অদ্ভুত ব্যবহার করছেন কেন?”

“অন্য কোনদিন বলবো আপনাকে। আমার কথা বাদ দিন। তবে জানেন কি মানুষ যেমনটা চায় তা কখনো হয় না।

“জীবনে ভাল সময় আসে খারাপ সময়ও আসে।
চাইলেই কেউ পুরোটা জীবন সুখে থাকতে পারেনা। হয়তো সম্ভব ও না।আমি নিজের খারাপ সময় গুলোকে ভুলে কেবল ভাল সময় নিয়ে বাঁচতেই ভালবাসি।
আমার মনে হয় ভাল থাকার কেবল এই উপায়টাই পৃথিবীতে আছে। যে ভাল সময়গুলো আগলে রেখে খারাপ সময়কে ভুলে যাওয়া।কাল কি হয়েছিলো, পরশু কি হবে এটাই জীবনে অশান্তির প্রথম ও প্রধান কারন হয়তো।বর্তমান নিয়ে বাঁচুন।

“চাইলেই কি খারাপ সময়গুলো ভুলে যাওয়া যায় মিস।”

“চাইলেই যায় দেখুন না আমাকে আর আমার ভাইয়াকে আমার মা বাবাকে খুন করা হয়েছে তবুও আমরা হাসি খুশী ভাবেই লাইফ লিড করি।”

“সবাই আপনার আর আপনার ভাইয়ার মতো এতো স্ট্রং নয়।”কিন্তু আপনার বাবা মাকে মারলো কে বা কারা?”

“আমার কথা বাদ দিন পরে একদিন বলবো। হাজার হোক আপনি একজন স্পাই অফিসার। তবে স্ট্রং এর কথা যদি বলি একজন স্পাই অফিসার এগুলো বলছে। যাই হোক যখন এখন আপনার বিষন্নতার গল্প বললেন না। তাহলে আমিও বলছি কোন একদিন আপনার শহরে যাবো আপনার বিষন্নতার গল্প শুনতে। সেদিন কিন্তু মানা করতে পারবেন না।”

“এসেই দেখুন না। তার পর শুধু বিষন্নতার গল্প না অনেক গল্পই শোনাবো।”

আরুহি কিছু বললো না মুচকি হাসলো। সেটা দেখে আবরারের মুখেও হাসি ফুটলো। আবরার আবারও বলল,,

“ধন্যবাদ মিস আমাকে এমন একটা মুহুর্ত দেওয়ার জন্য। আজ আপনার জন্য জীবনের কিছু বেস্ট মুহূর্ত পেয়েছি।”

“চলুন আপনাকে আরো কিছু বেস্ট মোমেন্ট দিই। এই সজীব এদিকে আয় আমরা এখন ক্রিকেট খেলবো।”

আবরার পেছনে তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন বারো বছরের বয়সী বাচ্চা রা বল আর ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছে । আরুহির ডাক শুনে ছেলেগুলো হাসি মুখে দৌড়ে এলো আরুহির কাছে। আরুহি ওদের কাছ থেকে ব্যাট নিয়ে আবরারের দিকে বল ছুঁড়ে বলল,,

“মিস্টার নিশান এবার আমরা ক্রিকেট খেলবো। আপনি বল করবেন আর আমি ব্যাট বাকি সবাই ফিল্ডে থাকবে।”

“আপনি সবাই কে চিনেন?”

“এখানে দু বছর ছিলাম সবাইকে চিনি এই গ্ৰামের আর পরের তিন বছরে পাঁচবার এসেছি। শুধু আমি চিনি না ওরাও আমাকে চেনে!”

তখন একটা বাচ্চা বলল,,

“আরুহি আপা উনি কে?”

“উনি তোদের এক ভাইয়া নিশান আবরার ওনার নাম।তোরা সবাই ভাই বলিস।”

“ঠিক আছে।”

“তাহলে খেলা শুরু করা যাক।”

আবরার মুচকি হেসে বলল,,,

“একদম!”

আবরার আর আরুহি বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলতে লাগলো । কিছুক্ষণ পর রিয়াদ নাদিয়া আফরিন আর মিস্টি এলো ওখানে! ওরা এসে দেখতে পেল আবরার আর আরুহি বাচ্চাদের সাথে খেলছে। আবরার এর মুখে রয়েছে হাসি। আবরার বাচ্চাদের সাথে বাচ্চা হয়ে গেছে। দৌড়াদৌড়ি করছে চিৎকার করে বলছে আউট মোটকথা শৈশবে ফিরে গেছে। আফরিন কিছু না ভেবে ফোন বের করে ভিডিও করতে লাগলো। ওরা খেলাটাকে ইনজয় করছে। একসময় রিয়াদ নিজেকে সামলাতে না পেরে আবরার আর আরুহির কাছে গিয়ে বলল,,সেও খেলবে ওরাও সবাই মিলে খেলতে লাগলো।সবাই খুব খুশি সন্ধ্যার আগে কথা মতো ওরা বাড়িতে ফিরে এলো। ওরা বাড়ি আসতেই আনোয়ার খান আরুহিকে ডেকে বলল,,,

‘আরুহি এদিকে আসো তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। ইনি হলো নেহমাত শেখ তোমার ফুপা।”

আরুষি মুচকি হেসে বলল নেহমাত শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“গুড ইভিনিং নেহমাত শেখ উপস সরি ফুপা!”

আরুহির ব্যবহারে সকলে অবাক হলো। যারা আরুহিকে চেনে তারা জানে আরুহি সবাইকে সালাম দেয়। কিন্তু নেহমাত শেখ কে দিল না। আবার কেমন যেনো ব্যবহার করলো। আরুহি বলল,,,

“ফুপা একদম মাইন্ড করবেন না আসলে আসার পর থেকে এখনো রেস্ট নেওয়া হয় নি। তাই এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নেব আসছি!”

আরুহি কারো দিকে না তাকিয়ে ওপরে চলে গেল। নেহমাত শেখ অবাক চোখে আরুহিকে দেখছে উনার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। বাকি সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আবরার কিছু একটা আন্দাজ করলো।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। কিছু টুইস্ট ও ছিল। সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here