তোর শহরে রেখেছি পা পর্ব -১৯

#তোর_শহরে_রেখছি_পা
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরহাম,,আরুহি আর আফরিন সোফায় বসলো। ততক্ষনে আজিম আহমেদ ও তার স্ত্রী রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলো। তখন আজিম আহমেদ বললেন,,,

“আরহাম আরুহি আমরা আজকেই বাড়ি যেতে চাচ্ছি। তোমরা প্লিজ না করো না। আমরা দুজন মানুষ থাকি। সাতদিন ধরে বাড়িঘর একদম ফাঁকা। তার সাথে আমার ছোট স্কুলটাও কামাই হচ্ছে।”

তখন আরহাম বলল,,

“আর কয়েকটা দিন থাকো না ভালোবাবা দেখো না ভালো মা ভালোবাবা কি বলছে। আরে সবাই তো চলে গেছে এখন তোমরা চলে গেলে বাড়িটা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। ”

তখন আজিম আহমেদ এর স্ত্রী বলল,,,

“আমি কি বলবো আমার কিছুই বলার নেই। সত্যিই তো অনেক দিন হলো আমরা এসেছি বিড়িটা একদম ফাঁকা তাছাড়া আমার এইসব শহর ভালো লাগে না। গ্ৰামে থাকার অভ্যাস এসব শহর টহর আমাদের ভালো লাগে না।”

তখন আজিম আহমেদ বলল,,,

“আরহাম তোমাদের একটা কথা বলি এই পৃথিবীতে সবার-ই একটা আপন নীড় থাকে। ঐ আপন নীড় থেকে বেশিদিন দূরে থাকা যায় না। আর সম্ভব ও না। দিনশেষে পাখি যেমন তার নীড়ে ফেরে। তেমন মানুষ ও আত্মীয় স্বজন দের বাড়িতে যত আদরেই থাকুক না কেন সে যত তাড়াতাড়ি পারে তার নীড়ে ফিরতে চায়। তার নীড় তার আত্মার সাথে বাঁধা। তাই বলছি তুমি আর মানা করো না। ”

তখন আরুহি বলল,,

“ভাইয়া তুমি আর জোর করো না। ভালোবাবার অনেক কাজ আছে। সে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের পড়ায়। এখানে এসে আর তাদের পড়াশোনা হচ্ছে না। তাছাড়া তাদের ও যখন এখানে মন টিকছে না তাহলে তুমি আর কিছু বলো না।”

তখন আরহাম বলল,,

“ঠিক আছে!”

তখন আবরার বলল,,,

“আমি একটা কথা বলতে পারি। না মানে আসলে ,,”

“আরে শালা সাহেব কি মানে আসলে করছো বলে ফেলো কি বলবে !”

আরহামের এমন কথার জন্য আবরার প্রস্তুত ছিল না। শালা সাহেব বলবে ও ভাবতেই পারেনি। আবরার হেসে বলল,,,

“আংকেল আন্টি আপনারা আজ আমাদের বাড়িতে যাবেন। ওখান থেকে না হয় বাড়ি চলে যেয়েন।”

তখন আজিম আহমেদ বলল,,,

“না বাবা আজ আর না অন্য একদিন। এখন যেতেই হবে। এখন যদি রওনা দেই তাহলে রাতেই পৌঁছাতে পারবো। তোমাদের বাড়িতে গেলে আজ আর যেতে পারবো না।”

“প্লিজ আংকেল চলুন না। ”

আফরিন এর এরকম কথায় আজিম আহমেদ বললেন,,

“সরি বউমা আজ আর যেতে পারছি না। তোমরা বরং কয়েকদিন পর গ্ৰাম থেকে ঘুরে এসো। আর তুমি আংকেল বলছো কেন আরহাম আমাকে ভালোবাবা বলে ডাকে তুমি ও তাই থাকবে ঠিক আছে!”

“ঠিক আছে ভালোবাবা!”

তখন আরহাম বলল,,

“তোমরা যখন থাকবেই না। তখন চলো তোমাদের স্টেশন এ ছেড়ে দিয়ে আসি।”

“হুম চলো!”

তখন আরুহি বলল,,

“ভালোবাবা, ভালো মা আবার আসবে কিন্তু!”

‘হ্যা আসবো, নিজেদের খেয়াল রেখো। আর একে অপরের প্রতি দায়িত্ব পালন করো। আবরার আফরিন তোমরা কিন্তু আমাদের বাড়িতে যেও!’

“হ্যা আংকেল যাবো। আংকেল আমি আর আরহাম ভাইয়া আপনাদের নামিয়ে দিয়ে আসি। ততক্ষনে ওরা ভাবি ননদ মিলে আড্ডা দিক। আর রেডি হোক আমরা এসে ওদের নিয়ে একদম খান ভিলায় যাবো।”

তখন আরহাম বলল,,

“ঠিক আছে চলো।”

আবরার আর আরহাম আজিম আহমেদ দের নিয়ে বেরিয়ে পরলো। আফরিন আর আরুহি সোফায় গিয়ে বসলো। তখন আফরিন বলল,,,

“আচ্ছা আরু একটা কথা বলতো তোর ভাইয়া আর A.K এর সম্পর্ক কেমন?”

“তুই হঠাৎ তাদের সম্পর্ক নিয়ে পরলি কেন?”

“না ওদের সম্পর্ক কেমন সেটা জানতে চাইছি। না মানে A.K আমাদের হানিমুন প্যাকেজ গিফট করেছে। তেমন কোন সম্পর্ক না হলে কেউ কাউকে এরকম গিফট করে না।”

“কেন তোর কি গিফট পছন্দ হয় নি?”

“পছন্দ হবে না কেন খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এরকম গিফট।”

“আরে তুই এতো মাথা ঘামাচ্ছিস কেন? এখনকার যুগে এরকম গিফট অনেকেই দেয়। আসলে এরকম গিফট দিয়েছে কারন A.K জানতো তোর বর ছুটি নিয়ে তোকে নিয়ে কোথাও যাবে না। তাই এই প্ল্যান করেছে যাতে তোকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে।”

“ওহ আচ্ছা! ওরা কি বন্ধু।উনাকে তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে ছেলে না মেয়ে উনি বলল মেয়ে। তাই জানতে চাচ্ছিলাম আর কি?”

“হুম ওরা হচ্ছে বেস্ট ফ্রেন্ড সাথে ভাইবোনের সম্পর্ক। ওদে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একে অপরের সব কথা তারা একে অপরকে শেয়ার করে।”

এ কথা শুনে আফরিন একটু মন খারাপ করলো। মোট কথা জেলাসি। তা দেখে আরুহি মুচকি হেসে বলল,,,

“জেলাসি হচ্ছিস কেন? বললাম না তাদের ভাইবোনের সম্পর্ক। যেমন আমি আর সে কোন পার্থক্য নেই।”

একথা শুনে আফরিন একটু হাসলো আর বলল,,

“সেসব ঠিক আছে কিন্তু সে সবসময় আড়ালে থাকে কেন?”

“কারন সে আড়ালে থেকে সব করতে চায়। সে জনসমক্ষে প্রকাশ হতে চায় না। সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করতে চায়।”

“ওহ আচ্ছা। তার A.K এর ফুল মিনিং কি?”

এ কথা শুনে আরুহি বুঝতে পারল আফরিন এর A.K কে নিয়ে বেশ কৌতূহল। কিন্তু এ মুহূর্তে ওকে জানানো টা কি ঠিক হবে। আরুহি বলল,,

“তাকে নিয়ে তোর এতো কৌতুহল কেন রে।”

“নিষিদ্ধ জিনিস আর আড়ালের জিনিস এর প্রতি মানুষের বরাবরই কৌতুহল বেশি হয়ে থাকে। সে তো সবসময় আড়ালেই থাকে তাই কৌতুহল টা একটু বেশিই হচ্ছে। ”

“হুম বুঝতে পেরেছি। তবে আপাতত তাকে নিয়ে ভাবনা বাদ দে। আর গিয়ে রেডি হয়ে নে। ভাইয়ারা এলো বলে।”

“ঠিক আছে তবে তার সাথে একদিন দেখা করতে হবে।”

“কি করবি তার সাথে দেখা করে।”

“ধন্যবাদ জানাবো!”

“কেন?”

“বারে কয়েকদিন আগে আমার উনি কে বাঁচালো। বিয়েতে এই রকম একটা গিফট দিল।”

“আমার উনি বাহ দারুন তো! তোদের তো পরশুদিন কে ফ্লাইট তাই না। ”

“একদম ইয়ার্কি করবি না। আর হু পরশুদিনই ফ্লাইট। প্যাকেজ টা দেখে আমি একটু অবাক-ই হয়ে ছিলাম।”

“আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার গিয়ে রেডি হওয়া যাক।”

“হুম।”

আফরিন আর আরুহি রেডি হতে গেল। কিছুক্ষণ পর দুজনেই গ্ৰাউন আর হিজাব পরে বের হলো। আফরিন আরহাম এর জিনিস পত্র আগেই গুছিয়ে রেখেছিল। আবরার আর আরহাম কিছুক্ষন আগেই এসেছে। ওরা সবাই আবরার দের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হলো। আবরার গাড়ি চালাচ্ছে পাশে আরুহি। আর পেছনে আরহাম আর আফরিন। হুট করে আফরিন বলল,,

“ভাইয়া তুমি যে বড়বাবাদের বাড়িতে গিয়েছিলে সেটা কিন্তু আমাকে বলো নি। আজ ভালোবাবা না বললে জানতেই পারতাম না।”

তখন আবরার মুচকি হেসে বলল,,

“ভুলে গেছিলাম তোকে বলতে। তবে রিয়াদ ভাইয়া কে বলেছিলাম না আমার জীবনের বেস্ট খাবার খেয়েছি সেটা তোর ভালো মায়ের হাতের রান্না তারওপর তিনি আমাকে খায়িয়ে দিয়ে ছিলেন।”

“তারমানে তুমি সেদিন আরুর সাথে ও বাড়িতে গিয়েছিলে?”

“হুম তোর ননদের সাথে গিয়েছিলাম। তোর ননদ খোলা মাঠের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি গেলাম উনি বলল খেয়েছি কিনা আমি না বললাম উনি আমাকে নিয়ে তোর ভালোবাবার বাড়িতে নিয়ে গেল। এই হচ্ছে মুল কাহিনী।”

তখন আরহাম বলল,,

“আমি কিন্তু সব জানি আরু আমাকে সব বলেছে ।”

তখন আরুহি বলল,,

“মিস্টার নিশান গাড়ি থামান।

আরুহির কথা শুনে আবরার গাড়ি থামালো। আরহাম জিজ্ঞেস করল ,,

“কি হয়েছে?”

“ভাইয়া ও দেখো হাওয়ার মিঠাই নিয়ে এসো যাও!

“তোর হাওয়ার মিঠাই আর গেলো না। মানুষের হাওয়ার মিঠাই এতো পছন্দ কি করে থাকতে পারে বুঝিনা।”

“ও তুমি বুঝবে না। যাও নিয়ে এসো!”

“হুম একটু বোস নিয়ে আসছি!”

“সবার জন্য নিয়ে এসো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আরহাম গাড়ি থেকে নেমে গেল। তখন আবরার বলল,,

“মিস হাওয়ার মিঠাই আপনার কি অনেক পছন্দের।”

তখন আরুহি বলল,,

“মাঝে মাঝে ছোট ছোট জিনিসে যে আনন্দ পাওয়া যায়, কখনো কখনো বড় জিনিসেও সেরকম আনন্দ পাওয়া যায় না। বলতে পারেন হাওয়ার মিঠাই টা আমার আনন্দ। আর অনেক প্রিয় একটা জিনিস আর অনেক পছন্দের ও। হ্যা হাওয়ার মিঠাই তে পেট ভরার মতো কিছু থাকে না। কিন্তু মন ভরার জন্য আমার কাছে যথেষ্ট।”

আবরার মুচকি হেসে বলল,,

“বুঝতে পেরেছি মিস। আপনি ঠিক বলেছেন ছোট ছোট জিনিসে যে আনন্দ পাওয়া যায়। কখনো কখনো বড় জিনিসেও সেরকম আনন্দ পাওয়া যায় না।”

আবরার এর কথায় আরুহি হাসলো। পেছনে বসে আফরিন শুধু দেখেই গেলো। ততক্ষনে আরহাম চারটা হাওয়ার মিঠাই নিয়ে এলো। ওরা চারজন হাওয়ার মিঠাই খেল। তারপর আবারও ওদের গাড়ি খান ভিলার দিকে রওনা হলো আবরার রিয়াদ কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল ওরা বিকেলে না একটু পরেই আসছে। সেটা নিয়ে খান বাড়ির সব মহিলারা ব্যস্ত হয়ে পরেছে। ওরা খান বাড়িতে পৌঁছালো। আরহাম নামতেই দেখতে পেল নাহিয়ান খান ওনার ভাই আর রিয়াদ দাঁড়িয়ে আছে সাথে মিস্টিও আছে। আরহাম সকল কে সালাম দিল। মিস্টি দৌড়ে আফরিনের কাছে গিয়ে বলল,,

“ফুপি তুমি বাড়িতে ছিলে না তাই আমার একদম ভালো লাগছিল না। তুমি ছাড়া এ বাড়িতে কেউ আমার সাথে ঝগড়া করে না। মিস্টি তোমায় অনেক মিস করেছে।”

তখন আফরিন মিস্টিকে কোলে নিয়ে বলল,,

“এই তোর সাথে আমার কি ঝগড়ার সম্পর্ক নাকি।”

” হুম তাই তো। ও হ্যা মনে পরেছে সম্পর্কে তুমি তো আমার বাবার বোন ও হও।”

“এই নাম তো আমার কোল থেকে আসার পর থেকে পাঁয়তারা করছে আমার সাথে কিভাবে ঝগড়া করা যায়।”

“আচ্ছা সরি আর ঝগড়া করবো না। মিস ইউ ফুপি।”

“মিস ইউ টু। কিন্তু এই বয়সে তোকে ইংরেজি শেখালো কে? এখনো তো স্কুলে ভর্তি করে নি তোকে!”

“কেউ শেখায় নি আমি নিজেই শিখেছি। বাবা যখন অফিসে যায় তখন বাবা মাকে বলে যায় “বউ তোমায় খুব মিস করবো।” মা বাড়িতে থাকে আর একটু পর ফোন দিয়ে মা বলে “আই মিস ইউ জামাইজান। সেখান থেকেই মিস ইউ শিখেছি। পরে আমি চাচ্চুর কাছে আমি মিস ইউ মানে কি জিজ্ঞেস করেছিলাম পরে চাচ্চু বলেছে মিস ইউ মানে কি!”

মেয়ের পাকা পাকা কথা শুনে রিয়াদের কাশি উঠে গেল। ওর অবস্থা দেখে সবাই হাসলো।তখন নাহিয়ান খান বললেন,,

“তোমরা কি বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কথা বলবে। নতুন জামাই এসেছে বাড়িতে ভেতরে গিয়ে তাদের আপ্যায়ন করো তারপর কথা বলো।”

ওরা সকলে ভেতরে ঢুকলো। ওরা গিয়ে সোফায় বসলো। খান বাড়ির সকলে ওদের কথা জানে তাই ওর মা বাবার বিষয়ে কেউ কোন কথা বললো না। নাসরিন খান ড্রয়িংরুমে মেয়ের জামাই এর জন্য খাবার নিয়ে এলো। আর বলল,,

“আরহাম এখানে যা আছে সব তোমাকে আর তোমার বোনকে শেষ করতে হবে।””

তখন আরুহি বলল,,

“আরে মেয়ের জামাই তো ভাইয়া তাহলে আমাকে কেন? মেয়ের জামাই কে বেশি করে খাওয়ান।”

“তুমি হলে আমাদের বাড়ির স্পেশাল গেস্ট জামাই এর বোন বলে কথা। ”

“আরে আমরা খেয়েই এসেছি। এখন এতো খাবার খাওয়া যাবে না। আপনারা সকলে নিন মিস্টি তুমি ও খাও।”

তখন আফরিন বিরবির করে বলল,,

“বিয়ের পরে যে মেয়েরা পর হয়ে যায়। এখন আমার পরিবারের সকলকে দেখে বুঝলাম এমন কেন বলে । আমিও তো এসেছি কেউ আমার দিকে নজর-ই দিচ্ছে না। সবাই মেয়ের জামাই নিয়ে পরে আছে।”

আরহাম আফরিনের পাশেই বসে ছিল তাই আফরিনের বিরবির করে কথা গুলো শুনে হেসে ফিসফিস করে বলল,,

“এটা মেয়ের জামাই দের স্পেশাল পাওয়ার বুঝলে। তবে তুমি চিন্তা করো না। আমার বউ কে না দিয়ে আমি খাবো না।”

এ কথা শুনে আফরিন মুচকি হাসলো। ওরা সকলে মিলে খাবার খেল। তারপর রেস্ট নেওয়ার জন্য ওপরে গেল আরহাম আরুহি আর আফরিন। ওরা ওপরে যাওয়ার পর রিয়াদ বলল,,

“আফরিন আর আরহাম এর বন্ডিংটা মনে হয় ভালোই তাই না । না এখানে এসে দুজনের ফিসফিস করে কথা বলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসা। ”

তখন নাদিয়া বলল,,

“আমিও খেয়াল করেছি। নাহলে দেখো আজ এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল তবুও ওদের মুখে হাসি দেখলাম।আবার আরুহিও তাই।”

ওদের কথা শুনে আবরার হেসে বলল,,

” রিয়াদ ভাইয়া তোমাদের একটা জিনিস দেখায় তাহলে বুঝতে পারবে।”

আবরার সকালের খাওয়ার ভিডিও টা দেখালো। ওটা দেখে ওদের মুখে আপনাআপনি হাঁসি ফুটে উঠল। নাদিয়া আবরারের ফোনটা নিয়ে নাসরিন আর রুবিনা খানকে দেখালো। তারা খুব খুশি হলো ওনারা যে একটা ভালো ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছে এটা দেখেই তাদের মনে শান্তি।

___________________

আরুহি তিনটার দিকে একা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আরহাম রা সবাই নিচে তাই একাই এখন। কিছুক্ষণ পর আবরার ছাদে এসে দেখলো আরুহি একা দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে আবরার বলল,,

“আরে মিস আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

আরুহি আবরারের কথা শুনে পেছনে ঘুরে বলল,,

“ঐ একটু বাগান বিলাস করছিলাম।”

“কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছিল রোদবিলাস করছিলেন। বাগান বিলাস করছিলেন তো মনে হচ্ছিল না। আপনি তো বাগানের উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন”

“হ্যা ঐ রোদ বিলাস -ই করছিলাম।”

“তা এখানে একা কেন?”

“সবাই নিচে গল্প করছে তাই আমি ভাবলাম একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।”

“ওহ আচ্ছা।”

” তা মিস্টার নিশান আবরার আপনি এখানে কেন?”

“ঐ তো আপনার মতো ভাবলাম একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।”

“ওহ আচ্ছা। ”

“আপনার জন্য আমার কাছে একটা খবর আছে!”

“কি?”

“আরহাম ভাইয়া বলেছে তারা হানিমুনে গেলে ওরা না আসা পর্যন্ত আপনি আমাদের বাড়িতে থাকবেন।”

“আপনি জানলেন কিভাবে?”

“আমি আসার সময় শুনলাম ওরা এটা নিয়ে কথা বলছিল।”

“ওহ আচ্ছা।”

“ভালোই হলো ভাইয়ার আর আপনাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ”

“হুম তারা আমাকেও নিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছি। সেখানে গিয়ে কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। ”

“আচ্ছা মিস সেসব বাদ এখন বলুন তো আপনার পাহাড় পছন্দ না সমুদ্র?”

“আমি বুঝি না সবাই পাহাড় এর অপজিটে সমুদ্রকে রাখে কেন? একটা মানুষের তো দুটোই পছন্দ থাকতে পারে তাই না। আপনার পাহাড় পছন্দ না সমুদ্র এর থেকে ভালো যদি এটা বলে আপনি এখন কোথায় যেতে বেশি পছন্দ করবেন পাহাড়ে না সমুদ্রে। এই প্রশ্নটা মনে হয় বেশি ভালো লাগবে। তখন আর মনে হবে না দুটো অপজিটে আছে।”

“বাহ ভালো বললেন তো সত্যি এভাবে বললে দুটো অপজিটে মনে হবে না। আপনার চিন্তাধারার প্রশংসা না করে পারছি না। এই জন্যেই বোধহয় বলে মানুষ কেমন সেটা তার চিন্তাধারার ও চিন্তার মানের উপর নির্ভর করে ।”

আরুহি কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো। তখন আবরার বলল,,

“মাঝে মাঝে মনে হয় খুব করে চাওয়া কিছু জিনিস এক মুহুর্তের মধ্যেই যদি পেতাম। যদি একটা ভালো দিন পেতাম”

“হঠাৎ এরকম কেন মনে হলো। ”

“জানিনা তবে এরকম মনে হলো এখন।”

“এখনকার সময়ে একটা ভালো দিন পাওয়ার জন্য আপনাকে কে অনেকগুলো খারাপ দিনের সাথে লড়াই করতে হবে!!

“সেটা আপনি ঠিক বলেছেন। এখনকার সময়টাই কেমন যেনো বেশিরভাগ মানুষই এখন কেমন যেনো ডিপ্রেশনে থাকে। ”

“তবে হ্যা খুব করে চাওয়া হালাল জিনিসটা নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে দিবেন যদি আপনি,চাইতে গিয়ে ক্লান্ত আর পেতে গিয়ে ধৈর্য্যহীন হয়ে না পড়েন !ইনশাআল্লাহ্ শুধু মাত্র উত্তম সময়ের অপেক্ষা!” আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ বলেছেন,,

‘তোমরা সবরের পথ অবলম্বন করো,অবশ্যই আল্লাহ
সবরকারীদের সাথে রয়েছেন’
(সূরা-আনফাল -৪৬)
তবে এখনকার মানুষের ধৈর্য্যটাই নেই।”

“আপনি ঠিক বলেছেন এখনকার মানুষের মাঝে ধৈর্য্যটাই নেই। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ আরো বলেছেন,,

আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। কার্যনির্বাহীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট।
(সুরা-আল আহযাব-৩)

কিন্তু মানুষ মাঝে মাঝে এই জিনিস টা ভুলে যায়।”

আবরার আরো কিছু বলবে তার আগে মিষ্টি এসে বলল,,

“আন্টি তোমাকে আরহাম আংকেল ডাকছে।”

তখন আরুহি বলল,,

“আচ্ছা ঠিক আছে চলো যাই। আর মিস্টার নিশান আপনার সাথে কথাগুলো বলে ভালো লাগলো। আপনি এখন বাগান বিলাস নাহয় রোদবিলাশ করুন আমি দেখি আমার ভাই কি বলে!”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আরুহি মিস্টিকে নিয়ে চলে গেল। আবরার আরুহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,,

“ভালোলাগার কিছু অনুভুতি এমনও হয়,যা থেকে যায় অপ্রকাশিত।আবার কিছু কথা এমনো থাকে,
যা হয়ে ওঠেনা বলা। সেই সমস্ত অব্যক্ত অনুভুতিরা
ভিড় করে এই মনের ক্যানভাসে!”

_________________

নিচে আসতেই আরহাম জানালো এখন সবাই কে নিয়ে একটু হাঁটতে বের হবে আশেপাশে। ওরা সবাই বের হলো রিয়াদ গিয়ে আবরার কে ডেকে আনলো। সব ছোটরা এখন ঘুরতে যাবে। ওরা সারা বিকেল টা ঘুরাঘুরি করলো। সন্ধ্যার দিকে সবাই বাড়ি এসে নামাজ আদায় করে ড্রয়িংরুমে বসলো। মিস্টি আরুহির কোলে বসে আছে হুট করে মিষ্টি বলল,,

“জানো আন্টি কাল না আমি পার্কে গিয়েছিলাম দাদুর সাথে তখন আমার মতো দুইটা পিচ্চি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছিল। তা দেখে আমি বলেছিলাম তোমরা ঝগড়া করো না। সবাই মিলেমিশে থাকতে হয়‌। ঝগড়া করা ভালো কাজ না আমার চাচ্চু বলেছে।”

“তাই নাকি তা বাচ্চা দুটো তোমার কথা শুনলো।”

“হ্যা শুনেছে তো প্রথমে শুনছিল না পরে আমি আরো বললাম যে বাচ্চারা ঝগড়া করে তাদের সাথে কেউ খেলতে চায় না তাদের কেউ বন্ধু হতে চায় না।এই কথা বলতেই ওরা আর ঝগড়া করলো না। বললো তুমি আমাদের বন্ধু হলে আমরা ঝগড়া করবো না তারপর আমাকেও বন্ধু বানিয়ে নিল।

“মাশাআল্লাহ আমাদের মিস্টি অনেক বড় হয়ে গেছে দেখছি।”

তখন আফরিন বলল,,

“বাচ্চা দুটো ছেলে ছিল না মেয়ে ছিল?”

“ছেলে ছিল!”

“এইবার বুঝলাম তোর মতো পাকনাবুড়ির কথা ওরা কেন শুনলো। আসলে তুই তখন বলেছিস তাদের কেউ বন্ধু হতে চায় না। ওরা তোকে বন্ধু বানানোর জন্য ঝগড়া থামিয়েছিল তোর কথায় না। আমার ভাতিজি তো মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর দেখতে তাই এই সুন্দর মেয়েটাকে বন্ধু বানানো টা ওরা হাতছাড়া করতে চায় নি। এবার বুঝলি!”

আফরিন এর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। মিস্টি বোকা বনে গেলো। অদ্ভুত দৃষ্টিতে আফরিনের দিকে তাকিয়ে রইল তা দেখে আফরিন আরো হেসে উঠলো। মিস্টির মাথায় কিছুই ঢোকে নি। তখন আরুহি বলল,,

“আমাদের মিস্টি যেমন সুন্দর দেখতে তেমন ভালো মেয়েও কি সুন্দর তাদের ঝগড়া থামিয়েছে।”

তখন আবরার বলল,,

“হুম বাহবা দেওয়ার যোগ্য তো আমাদের মিস্টির এই ভালো কাজের জন্য সবাই হাত তালি দাও।”

সকলে হাততালি দিল মিস্টিকে আর পায় কে নিজেও খুশিতে হাত তালি দিল। আর আবরার কে গিয়ে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,

“চাচ্চু তুমিই তো শিখিয়েছো ভালো কাজ করতে। তাই তোমার জন্যে আমি হাততালি দিলাম।”

“থ্যাঙ্ক ইউ মামনি।”

তখন রিয়াদ বলল,,,

“থ্যাঙ্ক ইউ ভাই আমার মেয়েটাকে ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য। আমি তো বেশি সময় পাই না ওকে দেওয়ার জন্য তোর কাছে থেকেই সব ভালো কাজ শিখছে।তোর জন্যই মেয়েটা সৎপথে যাচ্ছে।

তখন আবরার মুচকি হেসে বলল,,,

“আমাদের উচিত সবাইকে ভালো শিক্ষা দেওয়া। ”

ওরা এভাবেই কথা বলতে লাগলো। ওদের সময়টা ভালোই কাটলো। পরের দিন বিকেলে আরহাম রা বাড়িতে চলে গেল। আফরিন এর পরিবার কে ছেড়ে আসতে খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু ও কাঁদেনি কারন ওর চোখের পানি ওর উনির সহ্য হয় না। তাই আগেই ওর উনি বলে দিয়েছিল ছিল সে যেনো না কাঁদে। ওরা বিকেলেই বাড়ি পৌঁছে যায়। আজ আরহাম আর A.K যাবে নেহমাত শেখ এর সাথে কথা বলতে। আরহাম আগেই ওদের নামিয়ে অফিসে চলে গেছে কিন্তু A.K কিভাবে যাবে। আফরিন আর আরুহি কথা বলছিল এমন সময় আরহাম ফোন দিয়ে জানালো আরুহিকে অফিসে আসতে হবে ওদের বাবা মায়ের কেস সম্পর্কে কিছু তথ্য লাগবে। এটা আরুহির প্ল্যান ও তখন বুঝতে পারলো আফরিনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন আরহাম কে মেসেজ করে জানায়। তাই আরহাম ফোন দেয়। আরুহি আফরিন কে সাবধানে থাকতে বলে বেরিয়ে যায়। আফরিন ও সাথে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আরুহি বলে তোমার এখন রেস্ট এর প্রয়োজন দু তিনদিন ধরে যা গেছে। আফরিন ও টায়ার্ড ছিল বলে আরুহির কথা মেনে নেয়। আরুহি অফিসে চলে যায়। নেহমাত শেখ একটা রুমের একটা চেয়ারে বসে আছে। তখন ঐ রুমে ঢুকলো A.K . আর আরহাম ঢুকলো আরহাম বলল,,

“গুড ইভিনিং নেহমাত শেখ!”

নেহমাত শেখ অসহায় চোখে ওর দিকে তাকালো কিন্তু কিছুই বললো না। তখন A.K বলল,,

“আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে এলাম। আপনার ছেলেকে রবিন এখন হাসপাতালে ভর্তি।”

তখন নেহমাত শেখ উত্তেজিত হয়ে বলল,,

“কি হয়েছে আমার ছেলের। তোমরা কি করেছো আমার ছেলের সাথে।”

“আরে আমরা কিছু করি নি। তার জ্বর হয়েছিল তাই হাসপাতালে।”

“সাধারণ জ্বরের জন্য কেউ হাসপাতালে যায় নাকি।”

“আসলে আপনার ছেলে নিয়মিত ড্রাগ সেবন করতো। আমাদের আন্ডারে আসার পর ড্রাগ পায় নি। তখন থেকেই ওর শরীর টা একটু খারাপ হতে থাকে। আপনিও দুনিয়াকে দেখানোর জন্য তার খোঁজ খবর নেন নি। সে হাসপাতালে অনেক দিন ধরেই আছে।”

নেহমাত শেখ এখনো আর কিছু বললো না। বলে লাভ ও নেই। নেহমাত শেখ রবিনের কথা পাল্টিয়ে বলল,,

“তোমরা জানো তাই না NS কে?”

“আপনার মাথায় এরকম কথা আসলো কেনো?”

“তোমরা এতদিন যাবত সব জেনেও চুপ করে ছিলে। তোমার মায়ের কাছে NS এর অপারেশন এর ডকুমেন্ট ছিল। এটা না বোঝার কারন নেই। তোমার মা বুদ্ধিমতি ছিল তাই সে হয়তো তোমাদের জানিয়েই গেছে!”

“যাক আপনার মাথায় তাও একটু বুদ্ধি আছে?”

A.K এর কথায় নেহমাত শেখ চমকে উঠলো। তখন A.K বলল,,

“আপনাকে সব বলবো সাথে তাকে দেখাবোও কিন্তু আপনি বোধহয় এসব সহ্য করতে পারবেন না। ”

“আমি তার ব্যাপারে জানতে চাই। আমার অন্ধকার এই অস্তিত্বের কারন সে। আমি এই অন্ধকার দুনিয়ায় আসতে চাই নি। সে জোর করে আমাকে ব্লাকমেইল করিয়ে এ কাজে যুক্ত করেছে । তারপর তার সাথে কাজ করতে করতে নিজের সত্তাকেই অন্ধকার করে ফেলেছি। আজ আমি এখানে তাও তার জন্য। আমার পরিবার আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে এটাও তার জন্য। আমার ছেলেকে আমি এসবে জরাতে চাই নি সে তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে এ কাজে এনেছে। আমি মানা করেছিলাম এসবে না আসতে। কিন্তু সে শোনেনি। আজ আমার পরিবারের এই পরিস্থিতির জন্য সে দায়ী। আমি আজও জানি না আমি কি ভুল করেছিলাম যার জন্য আমার আজ এই অবস্থা।

তখন A.K শান্ত স্বরে বলল,,

“আপনার একটাই ভুল সেটা হলো আনোয়ার খানের মেয়েকে ভালোবাসা আর তাদের সাথে সম্পর্ক গড়া।”

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here