তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম পর্ব ২৬+শেষ

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৬ {Last Part 🥀}

প্রায় আধা ঘন্টা পর সিয়ার জ্ঞান ফিরে আসে৷ আলতো করে নিজের দুই চোখ মেলে তাকায়। নিজেকে বিছানাতে আবিষ্কার করে। মাথার পাশে হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখগুলো কুচকে উঠে বসে। খেয়াল করে দেখে গায়ে এখনো বিয়ের লেহেঙ্গা, সাজ সব আছে। শুধু মাথার ওপরে ওরনা টা নেই। সিয়া রুমের আশে পাশে খুঁজতে লাগে। তখনই দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায়। দেখে অর্নীল হাতে করে জুস নিয়ে এসেছে। অর্নীল কে দেখে সিয়া এমন ভাবে তার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকে যেন জ্বিন দেখেছে। অর্নীল সিয়ার রিয়েকশনের মানে বুঝতে পারে। সে বিছানার পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলের ওপর জুস টা রেখে সিয়ার পাশে বসে পরে। সিয়া এখনো অর্নীলের দিকে তাকিয়ে থাকলে সে সিয়ার সামনে তুরি বাজায়, সিয়ার হোস ফিরে আসে।

অর্নীল;; আর ইউ ওকে সিয়াজান?

সিয়া অর্নীলের দিকে তাকিয়ে আছে, নিজের ঠোঁট দুটো চেপে রেখেছে। অর্নীল খেয়াল করলো যে নিঃশব্দে সিয়ার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। অর্নীল কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সিয়া ঝাপিয়ে পরে অর্নীলের বুকে। এত্তো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যেনো ছেড়ে দিলেই দূরে চলে যাবে এমন। অর্নীল মুচকি হাসি দিয়ে সেও সিয়াকে জড়িয়ে ধরে। সিয়া বাচ্চা দের মতো জোরে শব্দ করে কেদে দেয়।

সিয়া;; তার মানে এই সবকিছুই আপনাদের প্ল্যান ছিলো তাই না। সব্বাই, সব্বাই জনতো যে আমার বিয়ে আপনার সাথেই হচ্ছে। এগুলো সব প্ল্যান করা ছিলো তাই না! কেউ কিছুই আমাকে বলে নি, কিচ্ছু না। জানেন আমি দুই দিন যাবত ঘুমাই নি, ঠিক ভাবে খাই নি, শুধু কেদেছি। কত্তো টা ভয়ে ছিলাম আমি। এগুলো করার কোন মানে হয়। আপনি জানেন সুইসাইড এর কথা পর্যন্ত আমার মাথায় এসেছিলো। আপনি জানেন না, আপনার ধারণাও নেই যে আমার ভেতরে ভেতরে কি ঝড় বইছিলো।

অর্নীল;; আরে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম আমরা সবাই তোমাকে। মানে আমরা চেয়েছিলাম তোমাকে একটা ঝটকা দিতে।

সিয়া;; আসলেই ঝটকা খেয়েছি, অনেক বড়ো ঝটকা।

অর্নীল;; আর জানো এইসব কিছু করার মূল প্ল্যান কার ছিলো?

সিয়া;; কার?

অর্নীল;; শাশুড়ী আম্মুর।

সিয়া;; কিহ, আম্মুর?

অর্নীল;; হ্যাঁ

সিয়া;; কীভাবে কি?

অর্নীল;; Let me explain…


ফ্ল্যাশবেক~~

.
.
.

সেইদিন দোলা সিয়ার কাছ থেকে অর্নীলের নাম্বার নিয়ে আসে। তারপর সবার থেকে লুকিয়ে অর্নীল কে ফোন করে।

অর্নীল;; হ্যালো।

দোলা;; হ্যালো অর্নীল, আমি সিয়ার মা।

অর্নীল;; জ্বি জ্বি আন্টি বলুন। এতো রাতে সব ঠিক আছে তো?

দোলা;; না কিছুই ঠিক নেই।

অর্নীল;; মানে কি? আপনি ঠিই আছেন তো, নানু আপু? সিয়া, সিয়ার কি কিছু হয়েছে?

দোলা;; এদের কারোরই কিছুই হয় নি।

অর্নীল;; তাহলে?

দোলা;; ঠিক তো তুমি নেই বাবা। আমি জানি সিয়া আর তুমি দুইজন দুইজনকে কতোটা ভালোবাসো। তোমার মা নেই, বাবা গত হয়েছেন। পুরো পুরি একা তুমি। সত্যি বলতে সিয়া না থাকলে আমি ভাবতেও পারি না যে তোমার কি হতো। আমি বুঝি সবই। দেখো বাবা প্রব্লেম তো আছেই। সাগর আমার হাসবেন্ড কে মেরেছিলো যার শাস্তি আইন তাকে না দিলেও আল্লাহ তাকে ঠিকই দিয়েছেন। তিলে তিলে মরেছেন তিনি। হয়তো তোমার বাবা দোষ করেছিলো কিন্তু তুমি তো আর কিছু করো নি। আর হ্যাঁ, আমি তেমন না যে একজনের শাস্তি আমি আরেকজন কে দিবো। আর সাগর যখন এগুলো করেছে তখন হয়তো তুমি এইসব খুন-খারাবা কি জিনিস তাও জানো না। আমি বাবার কর্মের ফল ছেলের কে ভোগ করতে কেনো দেবো বলো। আর হ্যাঁ আল্লাহ”র কথা ছাড়া এই দুনিয়ার একটা পাতা অব্দি নড়ে না আর সেখানে তো ভাগ্য। ভাগ্য অনেক অদ্ভুত জিনিস, যে কোন সময় পল্টি খেয়ে যায়। তার জন্যই তো সিয়ার ভাগ্য তোমার সাথে পরেছে। নয়তো এমন হতো! কখনোই না।

অর্নীল;; আন্টি আমি আজ পর্যন্ত মায়ের আদর কি বুঝি না। কাউকে মা বলে ডাকতে পারি নি। বাবা থেকেও ছিলো না। তবে সিয়াকে আমি দেখেছি। আসলে সিয়া আমাকে ছাড়তে পারে কিন্তু আপনাকে না। না ছাড়ারই কথা। আর আমি এতে অনেক অনেক খুশি। আপনার খুশি টা সবার আগে। এখন আপনি যদি বলেন যে সিয়া আর আমি আলাদা হয়ে যাবো তাহলে তাই হবে। আর বিশ্বাস করুন এতে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস থাকবে না, একটুও না।

দোলা;; আলাদা না তবে জোড়া অবশ্যই লাগতে হবে।

অর্নীল;; আমি, আমি কিছু বুঝলাম না আন্টি।

দোলা;; আবরার চৌধুরী অর্নীল, আমার মেয়ে সিয়াকে বিয়ে করবে কি?

অর্নীল হেসে দেয়। তার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।

অর্নীল;; আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না।

দোলা;; করে নাও।

অর্নীল;; মানে সত্যি, আমি বুঝিতে পারছি না আসলে এখন আমার কি বলা উচিত। কোন ইস্যু নেই আপনার?

দোলা;; একদম না।

অর্নীল;; শাশুড়ী মা আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।

দোলা;; 😅😅

অর্নীল;; দুনিয়ার এমন প্রথম শাশুড়ী হবে যে কিনা এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।

দোলা;; হাহাহাহাহা,, আচ্ছা তো আমার একটা শর্ত আছে।

অর্নীল;; সব শর্ত মাঞ্জুর।

দোলা;; শুনো বাবা তোমাদের যে বিয়ে হবে এটা সিয়া কে বলবে না। আমি সিয়াকে বলবো যে অন্য কারো সাথে বিয়ে ঠিক ওর।

অর্নীল;; হুমম বুঝে গেছি পুরো ব্যাপার। একদম চিন্তা করবেন না। সারপ্রাইজ নামক এমন ঝটকা দিবো ওকে। জীবনেএ ভুলবে না।

দোলা;; আচ্ছা শুনো আগামীকাল আমাদের বাসায় এসো। তারপর আমরা সম্পূর্ণ কথা পাকাপাকি করবো ওকে। আর হ্যাঁ সিয়া কলেজে চলে গেলে বাসায় এসো। সিয়া যেনো ভূল করেও টের না পায়।

অর্নীল;; ও যেনো আবার পাগল না হয়ে যায় 😅।



অর্নীল;; বুঝলে?

সিয়া;; 🙂

অর্নীল;; কেমন দিলাম?

সিয়া;; নিজের জামাই আর মা ই যদি এমন করে তাহলে আর বাকিদের কথা না হয় বাদই দিলাম। মানে বিয়ে বাড়ির সবাই জানতো যে আপনি আমার হবু জামাই শুধুমাত্র আমি বাদে।

অর্নীল;; তোমাকে আমি কমপক্ষে ২-৩ বার হিন্ট দিয়েছিলাম তাও তুমি বুঝো নি। কফি শপে হবু বউ বলে ডেকেছি, ভয়েস নোটে নতুন দিনের আগমের কথা বলেছি আরো বেশ কিছু কথা বলেছি তাও বুঝ নি, মাথা মোটা কি আর স্বাধে ডাকি।

সিয়া;; ওই হারামি চুপ থাক।

এই বলেই সিয়া অর্নীলের গলাতে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে। কিন্তু এতে অর্নীলের কিছুই হচ্ছে না। চুপ করে বসেই আছে। সিয়াকে দেখছে।

সিয়া;; তুই জানোস না আমি কত্তো কান্না করছি। আল্লাহ আমার জীবন টা অল্পের জন্য যায় নাই। আমি মরলে বউ পাইতি কই। তুই এত্তো বড়ো গেইম খেললি আমার সাথে। তোর এত্তো সাহস।

অর্নীল;; আরো কিছু?

সিয়া;; হায় হায় আদিবা আমাকে আমার হবু জামাই এর ছবি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো তবুও আমি জেদের বসে দেখি নাই। ধুর ছাতা

অর্নীল;; আচ্ছা হয়েছে বাদ দাও। যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন তো আমাদের বাসর তাই না। আহা, কত্তো দিন অপেক্ষার পর আজকের এই দিন টা এসেছে বলতো। শুনো আমি না আমাদের এই রাত টা মোটেও স্পয়েল করতে চাচ্ছি না সো প্লিজ মুডের বারো টা বাজার আগে কাছে আসো। মাথা খারাপ হয়ে গেলে বা মুড নষ্ট হয়ে গেলে কিন্তু তোমার দশা বেশি একটা ভালো রাখবো না আমি।

সিয়া;; এমনিতেও আমার দশা বেশি একটা ভালো না। কাদতে কাদতে এই দেখেন চোখের কি হাল করেছি। শুধু আপনার জন্য।

অর্নীল;; আহারে, আসো কান্না গুলো ভালোবাসা দিয়ে মিটিয়ে দেই।

সিয়া;; দরকার নেই, থাক।

অর্নীল;; আমার আছে।

সিয়া;; সরেন আমি চলে যাবো এখান থেকে, থাকবো না আমি। আর এটা, এটা আপনার কোন বাসা? এখানে তো আগে আসে নি।

অর্নীল;; সিয়া আসলে আমি না দূরে ভাগতে চাই। হ্যাঁ অর্থাৎ আমার সব পুরোনো স্মৃতি থেকে। যেই স্মৃতি গুলো আমার জীবন কে জাস্ট বিষিয়ে তুলেছে বা তুলছে সেই সবকিছু থেকেই। আমি ওই বাড়ি টা ছেড়ে এখন থেকে এখানেই থাকবো। এটাও আমার বাসা। সম্ভবত ওই বাড়ি টা আমি বিক্রি করে দিবো। তাই আর সেখানে যাচ্ছি না। পছন্দ হয়েছে তোমার?

সিয়া;; পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে তাই এনাফ।

অর্নীল;; হুমমম।

সিয়া;; আচ্ছা কি হতো যদি সত্যি সত্যি আরকজনের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যেতো তো?

অর্নীল;; কেনো এইযে এই আমাকে পছন্দ হয় না?

সিয়া হেসে দেয়।

অর্নীল;; আচ্ছা অনেক ধকল গিয়েছে এখন এইসব ভারি জিনিসপত্র খুলে হালকা কিছু একটা পরে আসো।

সিয়া;; আগে এই হার টা খুলবো, প্রচুর কুটকুট করছে।

অর্নীল;; এদিকে আসো।

অর্নীল সিয়াকে এইসব চুড়ি, কানের দুল, গলার হার খুলে দিতে সাহায্য করে। সিয়া এখন শুধু একটা লাল লেহেঙ্গা পরে দাঁড়িয়ে আছে, দুইহাত ভর্তি মেহেদী লাগানো, কোন অলংকার নেই গায়ে, মাথার ওপর ওরনা টাও নেই, চুল গুলো খোপার মতো করে পেছনে বাধা আর সামনে তার এলোমেলো কিছু চুল। বেশ আবেদনময়ী লাগছে তাকে। সিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুলের পেছনে থাকা পিন গুলো খুলছিলো তখনই তার চোখ পরে আয়নাতে, অর্নীল তার দিকে ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে।

সিয়া;; কি, এভাবে কি দেখছেন?

অর্নীল;; তোমাকে।

সিয়া;; আরে আমাকে দেখার কি আছে?

অর্নীল উঠে গিয়ে সিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে পরে। সিয়ার হাত গুলো সরিয়ে নিজেই পিন গুলো খুলে দিতে লাগে।

অর্নীল;; আচ্ছা বিয়েতে মেয়েদের এতোকিছু পড়তে হয় কেনো? মানে এত্তো কিছু কেনো?

সিয়া;; এর জন্যই তারা বউ, বুঝলেন।

অর্নীল;; হুমমম।

অর্নীল সিয়া কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে নিজের থুতনি রেখে দেয়। দুইহাতে সিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।

অর্নীল;; সিয়াজান!

সিয়া;; হুমম

অর্নীল;; আমি তোমাকে ভালোবাসি।

সিয়া;; আমিও

অর্নীল;; তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই, কেউ না। প্লিজ কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না। আর যদি যাওয়ারই হয় তাহলে প্লিজ আমাকে আগে খুন করে তারপর যেও।

সিয়ার অর্নীলের কথায় এত্তো মায়া লাগে যে সিয়ার নিজেরই চোখ ভিজে ওঠে। সে অর্নীলের দিকে তাকায়। তার গালে নিজের দুইহাত রেখে বলে ওঠে…..

সিয়া;; “আপনার কাছ থেকে আলাদা হওয়ার আগে যেনো আমার মরণ হয়”

অর্নীল সিয়াকে জড়িয়ে ধরে।

সিয়া;; আচ্ছা সরুন এবার। (হেসে)

এই বলেই সিয়া চলে আসতে নিলে অর্নীল তার হাত খামছে ধরে।

অর্নীল;; আরে এতো তাড়াতাড়ির কি আছে আর এতো সহজে কি করে যেতে দেই বলো বউ। এতো সাধনার পর বউকে পেয়েছি।

সিয়া;; ঘোড়ার আন্ডা। নিজেরা তো ভালোই ছিলেন আমাকে একা একটা অসহায় মেয়ে পেয়ে যা ইচ্ছা তাই বলে কাদিয়েছেন। এগুলো শোধ পই পই করে তুলবো আমি। পই পই করে হিসেব রেখেছি সবকিছুর।

অর্নীল;; আচ্ছা হিসেব তুলো মানা করি নি এখন এদিকে আসো তো আগে।

অর্নীল সিয়াকে এক টানে নিজের ওপর এনে ফেলে দেয়। সিয়ার কোমড়ে নিজের এক হাত রেখে আরেক হাত দিয়ে তার গালের মাঝামাঝি অংশে বুলিয়ে যাচ্ছে৷ অর্নীল সিয়ার দিকে তাকিয়েই ছিলো আর সিয়া এবার চোখ তুলে অর্নীলের দিকে তাকালে অর্নীল এক নিমিষেই তার ঠোঁট দুটো আকড়ে ধরে। সিয়া অর্নীলের শেরওয়ানির কলার নিজের দুই হাতে খামছে ধরে। একটা সময় অর্নীল সিয়াকে ছেড়ে দাঁড়ায়, সিয়ার কপালে গভীর চুমু এঁকে দেয়। সিয়া এবার আবার চলে আসতে নিলে অর্নীল ফট করেই সিয়াকে নিজের কোলে তুলে নেয়। বিছানার ওপর শুইয়ে দেয়। তবে সিয়া যেনো লজ্জায় অর্নীলের দিকে তাকাতেও পারছে না। আর অর্নীলের কাছে সিয়ার এই লজ্জা মাখা মুখখানা অত্যাধিক প্রিয়।

অর্নীল;; সিয়াজান, আমি তোমাকে চাই।

চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ। অর্নীল ইচ্ছে করেই সিয়ার চুল গুলো খুলে কিছুটা এলোমেলো করে দেয়। সিয়ার ঘাড়ে নিজের মুখ ডোবায়। সিয়ার মুখে যেনো তালা লেগে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে এক শীতল স্রোত বয়ে গেলো মূহুর্তেই। অর্নীল সিয়ার ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবিয়ে এক হাতে তার কোমড় খামছে ধরে। সিয়ার ঠোঁট গুলো নিজের করে নেয়। অর্নীল সিয়ার জামার পেছনের ফিতায় টান দিবে তখনই সিয়া অর্নীলের হাত খামছে ধরে। অর্নীল বুঝলো যে সিয়া কাপছে। সে শেরওয়ানি টা খুলে ফেলে। অর্নীলের হাতের রগগুলো, মাসাল”স গুলো ফুলে ওঠেছে। অর্নীল লাইটের সুইচ টা অফ করে দেয়। রুমে মৃদু আলোর ছায়া পরেছে। অর্নীল সিয়ার কাছে এগিয়ে এসে। এক টানে তার জামার ফিতা খুলে ফেলে। অর্নীলের হাত যেনো এবার শুধু সিয়ার কোমড়ে আর সর্বাংশে বিচরণ করে চলেছে। অর্নীল সিয়ার হাত গুলো বালিশের সাথে চেপে ধরে। অর্নীল ডুব দেয় সিয়াতে। এই রাত টা যেনো অর্নীল-সিয়ার। এ রাত টা তাদের ভালোবাসার। এত্তো বাধা-বিপত্তি সব পেরিয়ে আজকের এই দিন টা এসেছে তাদের কাছে। হাজারো ভালোবাসায় তাদের নতুন জীবন টাকে ভরিয়ে দিতে এসেছে। দুটো ভালোবাসার মানুষ এক হলো তাদের ভালোবাসায়।


পরেরদিন সিয়ার আগে ঘুম ভেঙে যায়। মাথা টা বেশ ভারি লাগছে। নিজের দিকে চোখ পরতেই দেখে অর্নীল তাকে বুকে, তাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আর তাদের দুইজনের ওপর একটা সাদা চাদর। সিয়ার কাল রাতের সব কথা মনে পরে গেলো। আর সাথে সাথেই সিয়ার গাল দুটো লজ্জায় টমেটোর মতো টকটকে লাল হয়ে গেলো। সিয়া অর্নীল কে একটু ধাক্কা দেয়। কিন্তু সরছে না কোনমতেই।

অর্নীল;; সিয়াজান প্লিজ নড়াচড়া করো না আমায় ঘুমাতে দাও,, সারারাত ঘুমায় নি।

সিয়া;; ইশশশশ, লজ্জা-শরমের বালাই নাই। এই উঠেন। নয়তো আমাকে উঠতে দিন।

অর্নীল;; না আমি নিজে উঠবো আর না ই তোমাকে উঠতে দিবো।

সিয়া;; অর্নীল আমার ওয়াসরুমে যেতে হবে, পেটে কিছুটা ব্যাথা করছে।

অর্নীল এবার মাথা তুলে তাকায়।

অর্নীল;; তো আগে বলবা না। চলো দেখি।

সিয়া;; আরে না না মানে আমি যেতে পারবো তো।

অর্নীল;; চুপ, আমার সাথে যাবা।

সিয়া কোন রকমে বুকের কাছে চাদর টা মেলে ধরে। অর্নীল সিয়াকে কোলে তুলে নেয় তারপর ওয়াসরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দেয়। সিয়া তার এক হাত দিয়ে অর্নীলের গলা জড়িয়ে ধরে। অর্নীলের গা বেয়ে বেয়ে পানি পরছে, আর সিয়ার চাদর টা যেনো ভিজে তার গায়ের সাথে লেগে ধরেছে। অর্নীল তার মাথা টা সিয়ার মাথার সাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এভাবেই দুইজনে কতোক্ষন ভিজে ফ্রেশ হয়ে তারপর এসে পরে। অর্নীল সাদা পাঞ্জাবি পরেছে আর সিয়া সাদা সালোয়ার সুট। অর্নীল নিজের হাতা ঠিক করছিলো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখনই সিয়া আসে। সে আসলে একটু নিচে গিয়েছিলো।

সিয়া;; আরে আপনি পাঞ্জাবি পরেছেন?

অর্নীল;; কেনো ভালো লাগছে না?

সিয়া;; অনেক হ্যান্ডু লাগছে।

অর্নীল;; মানে?

সিয়া;; হ্যান্ডসাম।

অর্নীল;; হুমম।

সিয়া;; আচ্ছা এতো বড়ো বাড়িতে শুধু আমরা দুজন আর কতোগুলো স্টাফ!?

অর্নীল;; হ্যাঁ।

সিয়া;; আপনি তো অফিসে চলে যাবেন, থেকে যাবো আমি একা হয়ে।

অর্নীল;; কে বলেছে? আমি যাবো অফিসে আর বউ আপনি যাবেন কলেজে বুঝেছেন।

সিয়া;; কলেজে মানে?

অর্নীল;; কলেজে মানে কলেজে। ও হ্যালো মিসেস. বিয়ে হয়েছে পড়াশোনা শেষ হয় নি। পড়াশোনা শেষ করতে হবে না। কলেজ লাইফ শেষ হয়ে ভার্সিটি লাইফের শুরু হবে আপনার। আমার পিচ্চি বউ।

সিয়া;; না মানে এটা কোন কথা। পুরাই আবুল হইয়া গেলাম। কই ভাবলাম বিয়ে করছি জামাই নিয়ে থাকব তা না এখন নাকি আবার পড়াশোনা করতে হবে। ধুর ছাই ভালো লাগে না।

অর্নীল;; লিসেন আমি চাই না আমার ফিউচার বাচ্চাকাচ্চা বলুক যে তার মা একটা পড়াচোর ছিলো ওকে। সো পড়তে হবে জান।

সিয়া;; আর আমাকে পড়াবে কে?

অর্নীল;; কেনো, আমি আছি কি করতে?

সিয়া;; কিইইইইই না না, আমি আপনার কাছে পড়বো না। আপনি অনেক কড়া, আমি পড়বো না আপনার কাছে। আপনি মারবেন!

অর্নীল;; অবশ্যই মাইর খাবা পড়া না পারলে।

সিয়া;; জামাই হয়ে বউকে মারবেন লজ্জা করবে না?

অর্নীল;; বউ ওয়ালা ছাত্রী কে মারবো, লজ্জা কিসের এতে? আর তোমার সামনে আমার লজ্জা-শরম একটু কমই জান।

সিয়া;; এহহহহহহ, হাহ।

অর্নীল;; আচ্ছা শুনো রুমে শুধু বসে না থেকে বাইরে বের হয়ে দেখো। মানে পুরো বাড়ি টা ঘুরো। ভালো লাগবে।

সিয়া;; পুরো বাড়ি দেখতে আর চিনতে আমার কমপক্ষে দুইদিন লাগবে।

অর্নীল;; হুমম।

সিয়া;; আচ্ছা অফিসে যাবেন আপনি?

অর্নীল;; পাগল নাকি, বিয়ের পরেরদিনই কেউ অফিসে যায়। আমি তো পুরো এক মাস যাবো না।

সিয়া;; হাহা, এক মাস না ২-৩ দিন যেতে দিন তারপর নিজেই চলে যাবেন। এমন জ্বালাতন করবো না হুমম।

অর্নীল;; আচ্ছা সিয়াজান আমার না অনলাইনে একটা মিটিং আছে বুঝলে তো আমি ভাবলাম আরেক টা রুমে গিয়ে তারপর ল্যাপটপের সামনে বসি। আমি যাচ্ছি তুমি কি প্লিজ একটু ল্যাপটপ টা নিয়ে আসবে।

সিয়া;; সিওর।

অর্নীল চলে যায়, আর সিয়ার মুখে ঝুলছে শয়তানি হাসি।

সিয়া;; দাড়াও না চান্দু জন্মের মিটিং তোমাকে করাচ্ছি।

অর্নীল এই যে অন্য রুমে গিয়েছে তো গিয়েছেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে আর এদিকে সিয়ার আসার কোন নাম-গন্ধ নেই। অর্নীল সিয়ার নাম ধরে কয়েক বার ডাক দেয় গম্ভীর গলায়। তবে সিয়া আসে না। এক সময় অর্নীল নিজেই তাদের রুমে যায়। দেখে সিয়া সেখানে নেই, অর্নীল কপাল কুচকায়। বাথরুম থেকে পানির শব্দ ভেসে এলে অর্নীল সেদিকে যায়। আর যা দেখে তাতেই চোখ চড়কগাছ। সিয়া অর্নীলের ল্যাপটপ টা বাথ টাবের ওপরে ধরে রেখেছে অর্থাৎ ঝুলাচ্ছে। যেনো বাথটাবের মাঝে ল্যাপটপ টা এই পরে পরে এমন। আর বাথটাব টা পানিতে চুবুচুবু করছে, কানায় কানায় ভরা। সিয়া ল্যাপটপ টা শূন্যে তুলে আবার কেচ ধরে। পরতে পরতে বেঁচেছে। আর অর্নীল ওমনি একটা চিল্লানি দেয়।

অর্নীল;; সিয়া, নো নো ডোন্ট ডু দিস। সিয়া নো।

সিয়া;; ওহহ হাই আমার জামাই। এসেছেন আপনি। দাড়ান আপনার মিনিং করাচ্ছি। আপনি কি ভেবেছেন এতো জলদি আমি সব ভূলে যাব কখনোই না। বলেছি না পই পিই হিসেব রেখেছি।

অর্নীল;; তাই তুমি আমার ল্যাপটপ বাথটাবে ফেলে দিবে, এটা ঠিক না। আমার ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে ইয়ার। (সিয়ার দিকে এগিয়ে এসে)

সিয়া;; এই না না আর এক পা এগোবেন না তাহলেই এইটা যাবে পানিতে।

অর্নীল;; ওকে ওকে যাবো না।

সিয়া;; কিন্তু এটা তো যাবে। বা”বায় মিটিং।

এই বলেই সিয়া ল্যাপটপ টা সত্যি সত্যি বাথটাবে ফেলে দেয়। ঠাস করে ভেতরে পরে। আর অর্নীলের মাথায় হাত। সিয়া ঢ্যাং ঢ্যাং করে বাইরে বের হয়ে পরে। আর অর্নীল ল্যাপটপ তুলে আনে। পানি পরছে বেয়ে বেয়ে। এখন আর এটার কি কাজ, অর্নীল ল্যাপটপ টা সামনে রেখে বসে আছে। সিয়া এসে ধিরিম করে অর্নীলের পাশে বসে।

সিয়া;; কেমন দিলাম?

অর্নীল সিয়ার দিকে তাকায়।

সিয়া;; গতকাল রাতে এটাই তো বলেছিলেন আমাকে তাই না।

অর্নীল;; আরে ধুর।

সিয়া;; হিহিহিহিহি।

সেইদিন টা এভাবেই চলে যায়। সিয়া যেনো অর্নীলকে জ্বালিয়ে মেরেই দিচ্ছে। পরেরদিন প্রায় দুপুরের কথা অর্নীল গিয়েছে ওয়াসরুম শাওয়ার নিতে। আর সিয়া খুব কষ্টে ইউ টিউব দেখে দেখে পায়েস বানানো শিখেছে। এতোক্ষন তাই বানাচ্ছিলো, বানানো শেষে একটা বাটিতে পায়েস নিয়ে রুমে আসে। ভেবেছে সবার আগে অর্নীল কে খাওয়াবে। তবে রুমে এসেই দেখে অর্নীল শাওয়ারে। ব্যাস, সিয়ার মাথায় শয়তানি বুদ্ধির উদয় হয়। সিয়া সোজা বাড়ির পেছনের দিকে গিয়ে পানির লাইনের মেইন সুইচ অফ করে দেয়। সাথে সাথে পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। সিয়া তো হেসেই শেষ। সিয়া আবার দৌড়ে রুমে চলে যায়। গিয়েই ওয়াসরুমের লাইট অফ করে দেয়। এবার আর অর্নীল থাকতে না পেরে বাইরে বের হয়ে পরে মানে দরজা মেলে দাঁড়ায়। সিয়া দেখে হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বিছানার ওপর বসে পরে। অর্নীল ওয়াসরুমের দরজা খোলে তার কোমড়ে দুইহাত রেখে চোখ দুটো সরু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার সারা গায়ে সাবানের ফেনা। মাথায় শ্যাম্পুর ফেনা। মানে কি যে একটা অবস্থা। অর্নীল বেশ বুঝতে পারে যে এই আকাম গুলা তার বউ ছাড়া আর কেউই করে নি। সিয়া হাসতে হাসতে অর্নীলের কাছে চলে যায়।

সিয়া;; এগুলো আপনার ছোটখাটো শাস্তি।

অর্নীল;; আরে সিয়া প্লিজ পানির সুইচ অন করো।

সিয়া;; একটুও না থাকুন এভাবে। দাড়ান আমি একটা পিক তুলি।

অর্নীল;; এই না, একদম না।

সিয়া;; হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা…..

অর্নীল;; আহহ, সিয়া আমার চোখে সাবান গিয়েছে। প্রচুর জ্বালা করছে।

সিয়া;; কি কোথায় আরে দেখি দেখি।

সিয়া ব্যাস্ত হয়ে পরে অর্নীল কে নিয়ে।
সিয়া দ্রুত একজন স্টাফ কে ডাক দিয়ে পানির মেইন সুইচ অন করে দিয়ে আসতে বলে। আর সিয়া অর্নীলের কাছে গিয়ে তার চোখ দেখছে। ওয়াসরুমে যেই না পানি এলো ওমনি অর্নীল সিয়াকে এক হেচকা টান দিয়ে ওয়াসরুমের ভেতরে নিয়ে চলে যায়। সিয়া কে কোলে তুলে নিয়ে বাথটাবে ফেলে দেয়। সিয়া তো দেয় এক চিৎকার।

সিয়া;; এটা কি হলাও?

অর্নীল;; যা হওয়ার তাই হলো। আমাকে এমন ভাবে ফাসাবে আর নিজে বেঁচে যাবে তা ভাবলে কি করে সিয়াজান।

সিয়া অর্নীলের দিকে পানি ছিটিয়ে দেয়। আর অর্নীলও দেয়। এভাবেই দুইজন বেশ খুনশুটি করতে থাকে।

রাতের দিকে অর্নীল বসে বসে বই পড়ছিলো আর সিয়া অর্নীলের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। তখনই হঠাৎ সিয়া বলে ওঠে….

সিয়া;; আচ্ছা অর্নীল আমি না একটা কথা ভাবছিলাম!

অর্নীল;; কি?

সিয়া উঠে বসে।

সিয়া;; দেখুন, এখানে আপনি আর আমি। আপনি অফিসে আর আমি কলেজে। পুরো বাসা ফাকা জানি গার্ডরা স্টাফরা আছে কিন্তু তবুও।

অর্নীল;; আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।

সিয়া;; কি?

অর্নীল;; সিয়া আগেও বলেছি এখনো বলি। আমার তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আর আমি জানি যে তুমি আমার শাশুড়ী মায়ের একমাত্র মেয়ে। মা আর নানুআপুরও আপন বলতে শুধু তুমিই আছো। তাই আমি ভাবছি যে আমরা এখন থেকে একসাথেই থাকবো।

সিয়া;; মা.. মানে?

অর্নীল;; মানে আমরা আগামীকাল গিয়ে মা আর নানুআপু কে এখানে নিয়ে এসে পরবো।

সিয়া;; কি, সত্যি? 😃

অর্নীল;; Obviously…

সিয়া;; কিন্তু মা আর নানু কি এখানে আমাদের সাথে থাকার জন্য রাজি হবে?

অর্নীল;; কেনো হবে না, আমি রাজি করাবো।

সিয়া;; যদি না হয় তো?

অর্নীল;; আর যদি হয় তো!

সিয়া;; তাহলে আপনি যা বলবেন তাই করবো।

অর্নীল;; এইসব আজাইরা আকাম গুলা করা অফ করবা। আমাকে কম জ্বালাবা।

সিয়া;; ওকে আমি রাজি।

অর্নীল;; হুম রাত অনেক হয়েছে এবার ঘুমাও।

সিয়া শুয়ে থাকতে থাকতে অর্নীলের বুকেই ঘুমিয়ে পরে। আর অর্নীলও হাত থেকে বই টা রেখে দিয়ে সিয়া কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।


পরেরদিন সকালে সিয়া ঘুম থেকে ওঠেই দোলা কে ফোন করে, তারা যে আসছে তাকে বলে দেয়। আর তা শুনে দোলা & শিউলির সে কি খুশি। তার ঘন্টা খানিক পর সিয়া আর অর্নীল গাড়ি নিয়ে সিয়ার মায়ের বাড়ি এসেও পরে। সিয়া গিয়েই তার মা কে জড়িয়ে ধরে। দোলা অর্নীলের গালে ধরে কপালে চুমু একে দেয়। কেউ বলবে না মেয়ের জামাই, বলবে নিজের ছেলে। সবাই ভেতরে আসে। অনেক কুশল বিনিময় করে। সিয়া তার নানুর গা ঘেষে বসে পরে। শিউলি সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

অর্নীল;; মা, আজ আমি আপনার কাছে একটা জিনিস চাইবো আর আমার এটা চাই যে কোন ভাবেই।

দোলা;; বাবা আমি আমার জীবনেও সব থেকে মূল্যবান জিনিস টাই তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। আর তো কিছুই রইলো না আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার জন্য। তবুও যা চাও তাই দিবো বলো।

অর্নীল দোলার হাত দুটো ধরে বলে…

অর্নীল;; মা, আমি চাই আপনি আর নানু আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে থাকেন। আসলে আমার না আপনারই বাড়ি। আমি চাই আমাদের চারজনের একটা ছোট হাসি খুশি পরিবার হোক। এ হ্যাপ ফ্যামিলি। যার মর্ম আমি কখনোই বুঝি নি। তা এখন আমি বুঝতে চাই। আমি আমার পরিবার কে পূর্ন করতে চাই। মা বলুন না, আমাদের সাথে যাবেন তো!!

দোলা তার শাড়ির আচল দিয়ে চোখের কার্নিশ গুলো মুছে নেয়। সিয়া শুধু তাকিয়ে আছে সেও চাইছে যেনো হ্যাঁ করে দেয়। দোলা কিছুটা কেদে দিয়েছে তবে সে কাদার মাঝেই মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ করে দেয়। আর সিয়া খুশিতে এক লাফ দিয়ে ওঠে৷ তবে আবার চুপসে যায় কেননা অর্নীল তাকে কন্ডিশন দিয়েছিলো যে আর তাকে জ্বালাবে না। সিয়া অর্নীলের দিকে তাকিয়ে দেখে সে সিয়ার দিকেই তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সিয়া তাকে ভেংচি কেটে দেয়। অতঃপর সিয়া-অর্নীল দোলা আর শিউলি কে সেই বাসা থেকে নিজেদের সাথে নিয়ে এসে পরে। আর সিয়াদের আগের বাসা টা খালি করে দেয়। বাড়ির যে মেইন ওনার ছিলো তার কাছে চাবিটা দিয়ে দেয়।


এখন যেনো সবকিছুই ঠিক। জীবন টা পূর্ণ। অর্নীল-সিয়ার ভালোবাসা ময় একটা হ্যাপ্পি লাইফ। এখন থেকে অর্নীল আর সিয়া একসাথেই বাইরে বের হয়। অর্নীল সিয়াকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে এসে নিজে অফিসে চলে যায়। আবার সিয়াকে নিজেই পিক করে আনে। অর্নীল অফিসে বেশি লং টাইম থাকে না। তার নাকি সিয়াকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না। বেশি দরকারি হলে অনলাইনে সব হ্যান্ডেল করে নেয়। সিয়াকে পড়ায়৷ হাতে একটা ব্যাত নিয়ে বসে। কান ধরে উঠ-বোস অব্দি করায়। এগুলো দেখে দোলা আর শিউলি হাসতে হাসতে নাজেহাল। আর সিয়ার সারাদিন কোন কাজ নেই টইটই করে সারাবাড়ি ঘুড়ে। আর শুধু শয়তানি করে স্পেশালি অর্নীলের সাথে বাদরামি। অর্নীলের তো মনে হয় এক পিচ্চি কে বিয়ে করেছে যার এখনো দুধের দাঁতও পরেনি। অর্নীল এখন একজন মা পেয়েছে শুধু তাই না মায়ের মা কেও পেয়েছে। আদিবা তার হাদবেন্ড আসে মাঝে মাঝে ঘুড়তে। বিল্লালের অর্নীলের থেকে কোন শিকায়াত নেই। যেখানে তার ভাবি, খালা, আর মেয়ে নামক নিজের বড়ো ভাইয়ের মেয়ে এত্তো খুশি থাকছে তার থেকে আর কি শিকায়াত থাকবে। সায়ন আর অর্নীল এখন অনেক ভালো ফ্রেন্ড৷ সিয়ার ফ্রেন্ড গুলো জিজু জিজু বলে অর্নীলের মাথা খায়। মাঝে মাঝে অর্নীল আর সিয়া এই সবকিছুই খেয়াল করে। আসলে কে যেনো ঠিকই বলেছে যে “দুঃখ সবসময় থাকে না। দিন শেষে খুশির ঝলক টা এসেই পরে জীবনে”। আর অর্নীল-সিয়ার খুশি তাদের একে ওপরের কাছ থেকে আসে।

এখন রাত, সিয়া আর অর্নীল ছাদের এক কিণারে বসে আছে। ছাদের ওপর চাঁদের আলো পরেছে। ছাদের সবদিকেই ছোট ছোট ফুলের টব রয়েছে। তা থেকে মিষ্টি সুগন্ধ ছড়িয়ে পরছে। সিয়া আর অর্নীল একসাথে বসে আছে। বসে বসে একসাথে আকাশের তারাগুলো দেখছে। সিয়া অর্নীলের দিকে তাকায়।

সিয়া;; অর্নীল!

অর্নীল;; হুমমম

সিয়া;; জীবন সুন্দর, তাইনা!

অর্নীল;; অনেক বেশি।

সিয়া;; আমার জীবন আপনাকে দিয়ে পূর্ণ।

অর্নীল;; আর আমার সকল সুখের মূল উৎস তুমি। আমার সবকিছু তোমাতে বাধা, সবকিছুই।

অর্নীল-সিয়া;; ভালোবাসি ❤️

..
..
..
..

____________________সমাপ্ত_____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here