তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-৭
________________
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আমজাদ হোসেনের বাসা থেকে তৎক্ষণাৎ বের হয়ে যায় রুদ্র! রুদ্রের এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা হাইস্কুলে নাও পড়তে পারে, সেটাও হয়ত মিথ্যা বলেছে। এসব যতই ভাবছে ততই দারুণ ক্রোধে ফেটে পড়ছে। কিভাবে পাবে এই মেয়ের খোঁজ?একটা মেয়ে এভাবে অপদস্থ করে ছাড়লো এই চিন্তা’টা রুদ্রের মেজাজ উত্তপ্ত করে দিচ্ছে। গরম মেজাজে ক্রোধাপূর্ণ অবস্থায় রুদ্র বাসার গেটের ভিতর ঢুকলো। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় রুদ্রের ক্ষিপ্তাবস্থার পদচারণায় ইট-সিমেন্টের তৈরি সিঁড়ি যেন কাঁপছে। রুমে ঢুকেই খাটের পায়ায় প্রচণ্ড জোরে একটা লাথি মেরে তীব্র রাগের বহিঃপ্রকাশ করলো। উঁচু গলায় ডাকল, “কিরণ, কিরণ।”
রুদ্র আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো কিরণ কোথায়ও নেই। রুদ্র আবারো ডাকলো। ক্রমাগত ডাকতেই থাকলো। কিরণের কাছে এসব না বলা পর্যন্ত রুদ্রের ভিতরের এমন হাঁসফাঁস ভাব বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। রুদ্রের ডাক শুনে মনে হচ্ছে খুব বিপদ পড়েছে যেন। টয়লেট থেকে কিরণের চাপা গলার আওয়াজ আসে, “আরে ব্যাটা আমি টয়লেটে।আসছি একটু সময় দে।”
চলমান একটা প্রথা আছে টয়লেটে বসে কারো ডাকে সাড়া দেওয়া যথারীতি লজ্জার ব্যাপার। সেই প্রথার অবমাননা করে কিরণও যেন খানিক লজ্জার ভুক্তভোগী হলো। কিরণের লজ্জা,ভয় একটু বেশিই। রুদ্র চেঁচিয়ে বলল, “ঘন্টার ভিতর দুই-তিন বার টয়লেটে যাওয়া লাগে তোর?বাইর হ তাড়াতাড়ি।”
রুদ্রের এই গলা ফাটা চিৎকার চেঁচামেচির ফলস্বরূপ কিরণের দ্রুত বের হতে হলো টয়লেট থেকে। রুদ্রের দিকে না তাকিয়েই বলল, “টয়লেটরত মানুষ’কে পুলিশও গ্রেফতার করে না আর তুই..।”
এসব বলার মাঝে কিরণের চোখ যায় রুদ্রের দিকে। অর্ধসমাপ্ত’ই থেকে যায় কথা’টা। রুদ্রের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই চিন্তিত হয়ে বলল, “দোস্ত কি হইছে?কোন সমস্যা?”
রুদ্র চোখ তুলে কিরণের দিকে তাকিয়ে বিতৃষ্ণাপূর্ণ গলায় বলল, “আজ আবার গিয়েছিলাম সেই বাসায়। গিয়ে দেখি…”
কিরণ রুদ্র’কে থামিয়ে গিয়ে অনাগ্রহী গলায় বলল, “দোস্ত অনেক হয়েছে বাদ দে এসব। টাকার আশা ছেড়ে দে।আর কখনো কোনো মেয়ে মানুষ’কে এভাবে টাকা ধার দিস না।ভুল থেকে শিক্ষা নে।”
রুদ্র হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “পুরো কথা তো শুনবি?”
– “পুরো কথা আর কি আজকেও তাড়া খেয়ে এসেছিস?”
রুদ্র চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলল, “তোর গার্লফ্রেন্ডের বেশি বোঝার স্বভাব’টা এখন তোকে পেয়ে বসেছে।”
গার্লফ্রেন্ডের প্রসঙ্গ তোলায় কিরণ দমে গেল যেন, “আচ্ছা বল,বল।কি হয়েছে আজ?”
রুদ্র বিলাপ জুড়ে দিলো যেন, “দোস্ত ওই মেয়ে ভুল ঠিকানা দিয়েছে রে। সব মিথ্যে বলেছে। আর যার বাসার ঠিকানা দিয়েছে উনার প্রাক্তনের নাম সাথি।ওই মেয়ে আমায় অপদস্থ করেছে,হেনস্থা করেছে মিথ্যা ঠিকানা দিয়ে।”
বিষয়’টা বুঝতে কিরণের মিনিক খানিক সময় লাগলো।পুরো বিষয়’টা বোঝার সাথে সাথে কিরণ পুরো শরীর কাঁপিয়ে হাসছে। বিষয়’টা কিরণের কাছে যত’টা না কষ্টের তার থেকে বেশি হাসির মনে হচ্ছে। রুদ্র বাক্রূদ্ধ হয়ে রোষারক্ত চোখে তাকিয়ে রইল। রুদ্রের চোখে চোখ পড়তেই কিরণ হাতের পৃষ্ঠদেশ মুখে চেপে হাসি থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, “দোস্ত মানতেই হবে মেয়েটা অসাধারণ ধীশক্তিসম্পন্ন মেয়ে। উপস্থিত বুদ্ধি কিংবা ফাজলামি’তে যদি কোন পুরষ্কারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আমি নিজে সুপারিশ করে ও’কে দিয়ে আসতাম।”
রুদ্র গর্জে ওঠে। কিরণ থেমে যায়। রুদ্র বলল, “তোর খুব মজা লেগেছে না?এতসব অপমানও তোর মজা লাগে?”
কিরণ স্বাভাবিক গলায় বলল, “বিশ্বাস কর দোস্ত শুধু আমার না এই কথা শুনলে যে কেউ আধা ঘন্টা হাসবে।জীবনে আরো অনেক মজা ঘটনা দেখেছি,শুনেছি। কিন্তু এমন মজার ব্যাপার..।”
আবার হেসে ওঠল কিরণ।হাসির ফলে কথা’টা অনবসিত রয়ে গেল। রুদ্রের তীব্র বিরক্ত লাগছে কিরণের রসিকতা। খাট ছেড়ে ওঠে রুম থেকে বের হতে উদ্যত হলে কিরণ জিজ্ঞাস করল, “কিরে কোথায় যাচ্ছিস?”
রুদ্র আম্ভরিক গলায় বলল, “বাইরে বের হচ্ছি। কাজ আছে।”
রুদ্র কয়েক পা সামনে এগিয়ে আবার খাটের কাছে আসে।ল্যাপটপ’টা খাটের উপর না দেখে রুমের চারদিকে চোখ বুলায়। টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ’টা নিয়ে মিনিট পাঁচেক কি যেন ঘাঁটাঘাঁটি করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিরণের কোন কথার উত্তর দিলো না।শুধু বের হওয়ার আগে কিরণের দিকে না তাকিয়েই বিড়বিড় করে বলল, “সব সময় অহেতুক হাসাহাসি স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে তোর।”
_____________________
অরূণীদের পাশের বিল্ডিং-এ আগে এক দম্পতি ভাড়া থাকতো। তাঁদের একটা বাচ্চা ছিলো বছর দুয়েক বয়স।রাফিয়াত নাম।পাশের বিল্ডিং-এর ভাবী হিসেবে সেলিনা আহমেদের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। তাঁরা কয়েক মাস আগে বাসা বদলে চলে গেছে কিন্তু মাঝে মাঝেই সুযোগ হলে ছুটে আসে অরূণীদের বাসায়। রাফিয়াতের জন্মদিন উপলক্ষ্যে অরূণীদের বাসার সবাই’কে দাওয়াত করেছে উনারা। অরূণী আর সেলিনা আহমেদ গিয়েছে রাফিয়াতের জন্মদিনে। সাহেদ আহমেদের এসব জন্মদিনের অনুষ্ঠান একদম পছন্দ না। তাই সে যায় নি। রাফিয়াত’দের বাসায় এসেও অরূণী মহা বিপদে পড়ল। কথা বলার কোনো মানুষ না পেয়ে এক কোণায় বসে আছে। অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত হলো বেশ। বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। এত হৈচৈয়ে মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে। হঠাৎ রুদ্রের কথা মনে পড়তেই সব ক্লান্তি যেন কর্পূরের ন্যায় উবে গেল।আজকেও কি আমজাদ স্যারের বাসায় গিয়েছে? নিশ্চয়ই গিয়েছে।তারপর কি হয়েছে?এসব জানার জন্য অরূণী টানটান উত্তেজনা অনুভব করলো। কিন্তু জানার কোনো উপায় নেই। অরূণীর মাথায় একটা বুদ্ধি চাপলো। রুদ্র’কে যে ফোন সিমের নম্বর দিয়েছে সেটা অন করে চট করে রুদ্রের নম্বরে একটা ম্যাসেজ পাঠালো, “যদি আমার সাথে প্রেম করেন তাহলে টাকা ফেরত দিবো।”
ম্যাসেজ’টা রুদ্রের নম্বরে সেন্ড করে উত্তর আসার জন্য জন্য অপেক্ষা করতো লাগলো অরূণী প্রচণ্ড ব্যাকুলতা নিয়ে।সময় যেন যাচ্ছেই না। কয়েক মিনিট যেতে কয়েক ঘন্টা লাগলো যেন। ম্যাসেজের কোন উত্তর আসলো না।
রুদ্র ছিলো গানের কনসার্টে অত শোরগোলের ভিতর ম্যাসেজের টিউন শুনতে পেলো না।এদিকে অরূণীর শ্বাস রুদ্ধকর অবস্থা। ক্ষণে ক্ষণে তীব্র ভাবে আশাহত হতে লাগলো। রুদ্র গানের কনসার্ট শেষে পকেট থেকে ফোন বের করে অরূণীর ফোন নম্বর থেকে এমন ম্যাসেজ দেখে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো।ভুল দেখছে নাকি? রুদ্র চোখ কচলিয়ে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে একটা একটা করে শব্দ উচ্চারণ করতে লাগলো, “যদি আমার সাথে প্রেম করেন তাহলে টাকা ফেরত দিবো।”
রুদ্র কয়েক বার পড়লো ম্যাসেজ’টা। বিস্ময় স্ট্রোক নামে যদি কোন রোগ থাকতো তাহলে এতক্ষণে রুদ্র বিস্ময় স্ট্রোক করতো।আবার পড়লো ম্যাসেজ’টা। কিছু সময় পর বিস্ময় ভাব কিছুটা কেটে গেলেও রুদ্র হতভম্ব হয়ে রইল। রুদ্রের অস্থি মজ্জায় একটা প্রশ্নই শুধু আন্দোলিত হচ্ছে, “কে এই মেয়ে?” ক্রমে ক্রমে রুদ্রের বিস্মিত ভাব’টা ফেটে পড়া রাগে পরিণত হচ্ছে।না,এই মেয়ে কোনো সাধারণ মেয়ে না। অসম্ভব বিপদজ্জনক মেয়ে।যার শিরা-উপশিরায় শুধু বিপদ সংকেত। এই বিষয়’টা প্রচণ্ড ভাবাচ্ছে এখন রুদ্র’কে। রুদ্র বুঝতে পারে নি এই সামান্য একটা বিষয় রুদ্রের অহরহ চিন্তার কারণ হয়ে ওঠবে। শুধু রুদ্র কেন অরুণীর কর্মকাণ্ডে যে কেউই নিদারূণ চিন্তান্বিত হয়ে পড়বে। আধা ঘন্টা ভেবেও খুঁজেও উপযুক্ত কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না রুদ্র। রুদ্রের ইচ্ছে করছে ম্যাসেজের ভিতরই কয়েকটা কষিয়ে চড় দিতে। রুদ্র বাসায় গিয়ে কিরণের দিকে মোবাইল’টা এগিয়ে দিয়ে বলল, “দেখ ওই মেয়ে ম্যাসেজ দিয়েছে। কি উত্তর দিবো?”
কিরণ কপাল কুঁচকে কয়েকবার ম্যাসেজ’টা পড়ে অস্ফুট স্বরে বলল, “হোয়াট ইজ দিস?” কিরণ বিস্ময় ভরা গলায় আবার বলল, “দোস্ত এটা কেমন মেয়েরে?কি ভয়াবহ সাহস! মজা নিচ্ছে,মজা নিচ্ছে।”
রুদ্র ভারি চিন্তিত মুখে অস্থির গলায় বলল, “কি উত্তর দিবো বল তো?ম্যাসেজে থাপড়ানোর কোনো ব্যবস্থা নাই?”
– “তুই থাপড়ানোর ব্যবস্থা খুঁজিস কেন? আমার কোন থাপ্পড় আসে না। কি কিউট,কি প্রাণবন্ত,চঞ্চল মেয়েটা!আমার তো আদর আসে।”
রুদ্র কিরণের দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে।কিরণ রুদ্রের ভয়ঙ্কর দৃষ্টি উপেক্ষা করে অকুণ্ঠিত চিত্তে বলল, “এমন চঞ্চল মেয়ে হাজার বছরের সাধনা।প্রেম যদি করতে চায় করে ফেল।আমার মনে হয় এই মেয়ে বাসায় আসা সেই মেয়ে।”
রুদ্রের সিরিয়াস মেজাজ সব সময় কিরণ হাসি ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিবে। রুদ্র তিক্ত হয়ে নাক মুখ ঘুচিয়ে রেখেছে। অসহায় গলায় বলল, “কিরণ একটু সিরিয়াস হ রে ভাই।এই মেয়ে আমার চিন্তা-চেতনা সব অবশ করে দিচ্ছে।মেয়ে’টা কে একটু খুঁজে বের করতে সাহায্য কর।”
কিরণ এসবের উত্তর না দিয়ে মরিয়া হয়ে ওঠে বলল, “দোস্ত ম্যাসেজের উত্তর দে। দেখা করতে বল।”
রুদ্র খাটে হেলান দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে বলল, “তো মত ফালতু সময় কিংবা ইচ্ছা কোনটা’ই আমার নেই।”
রুদ্র ম্যাসেজের উত্তর দিলো না। কিভাবে খুঁজে বের করবে অরূণী’কে সেই চিন্তা অস্থির হয়ে ওঠেছে। বিষয়’টা রুদ্রের মস্তিষ্কে ভীষণ ভাবে পীড়া দিচ্ছে। রুদ্র ভাবলো ফোন দিয়ে ভালো ভাবে কথা বলে দেখা করতে বলা যেতে পারে। একবার শুধু দেখা হোক, ফাজলামি শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে।মেয়েটা লুকোচুরি খেলছে,এত সহজে দেখা করবে বলে মনে হয় না রুদ্রের। বিগড়ানো মেজাজে রুদ্র অরূণীর ফোন নম্বরে ডায়েল করে।
রাত অনেক হয়ে গেলেও রুদ্রের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে অরুণী ছটফট করতে লাগলো।এক পর্যায়ে রুদ্রের নম্বর থেকে কল আসলো। অরূণীর বুক কাঁপিয়ে ধ্বক করে ওঠল। অদ্ভুত এক আবেগে অরূণী ডুবে যাচ্ছে। সংশয়,সংকোচ আর বিকট শব্দে ধমক শোনার প্রস্তুতি নিয়ে অরূণী ফোন রিসিভ করে। অরূণীর ধারণা মিথ্যা করে দিয়ে ওপাশ থেকে খুব শান্ত গলায় রুদ্র বলল, “এই মেয়ে কে তুমি?কি চাই তোমার?”
রুদ্রের গলায় স্বর শুনলেই কেমন মাদকাসক্ত মানুষের মত মাতাল মাতাল হয়ে যায় অরূণী।কেবল আস্তে করে অরূণী জবাব দিলো, “আপনাকে চাই।”
জড়তাহীন,সংকোচ কিংবা দ্বিধাহীন অরূণী অচিরেই সংকোচ আর জড়তায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। হৃৎপিণ্ড অস্বাভাবিক রকমে লাফাচ্ছে। এমন হতে থাকলে বিকল হয়ে যাবে হৃৎযন্ত্রটা। রুদ্রের উত্তরের অপেক্ষা আর না করে লাইন কেটে দিয়ে ফোন অফ করে রাখলো। রুদ্র অরূণীর উত্তর শুনে হাঁ হয়ে রইল। অরূণী ফোন কেটে দেওয়ার পর অনেক বার ট্রাই করলো। ফোন সুইচ অফ দেখাচ্ছে। কোনো এক অজ্ঞাত প্রখর অনুভূতি’তে অরূণী ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে যেন। উৎকণ্ঠা,উদ্বেগে সারারাত তেমন ঘুম হলো না অরূণীর।
_______________________
কয়েকদিন পর অরূণী বই কিনে লাইব্রেরী থেকে বের হতেই দেখে লাইব্রেরীর মুখোমুখি সেলুনে বসে আছে রুদ্র। রুদ্র’কে দেখার সাথে সাথেই অরূণীর শরীর-মন জুড়ে শিহরণ জাগে। অরূণী আড়াল থেকে তাকিয়ে থাকে।অরূণী নিশ্চিত রুদ্র ও’কে হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে।এখন রুদ্রের সামনে পড়লেই যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা ভেবে রুদ্রের সামনে পড়ার সাহস হারিয়ে ফেলে অরূণী। কিছুক্ষণ পর রুদ্র বের হয় সেলুন থেকে। রুদ্রের খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো কেটে ক্লিন শেভ করেছে। অরূণীর প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে কি দারুন লাগতো রুদ্র’কে। অরূণী ফোন হাতে নিয়ে দ্রুত ম্যাসেজ করে, “আপনার মায়ের দিব্যি কখনো দাঁড়ি কাটবেন না।”
ফোন’টা রুদ্রের হাতেই ছিলো।ম্যাসেজ’টা দেখার সাথে সাথে রুদ্রে চক্ষু চড়কগাছ। বড় বড় চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিক-ওদিক হন্য হয়ে খুঁজছে অরূণী’কে।মেয়েটা তাহলে আশেপাশেই কোথায়ও আছে,ফলো করছে রুদ্র’কে। অরূণীর এক বান্ধবীর বাসা কাছেই ছিলো। অরূণী দ্রুত সেই বাসায় ঢুকে পড়ল। রুদ্র প্রায় আধা ঘন্টা চারদিকে খুঁজলো। কোথায়ও পেলো না অরূণী’কে। কিরণ আর রুদ্রের আরো কয়েকজন বন্ধু বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। কিরণ ছাড়া এই ব্যাপার’টা কেউই জানে না। কিরণ’কেও কঠোর ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে এই ব্যাপার কারো কাছে বলতে। ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ একবার জানলে রুদ্রের কান ঝালাপালা করে দিবে। সারাদিন ইশারা ইঙ্গিতে রুদ্র’কে খোঁচা মেরে কথা বলবে। নিজের এমন অপমানের কথা কাউকে জানানোর প্রশ্নেই আসে না। রুদ্র সবার ভিতর থেকে কিরণ’কে ডেকে দূরে নিয়ে ম্যাসেজ’টা দেখিয়ে বলল, “দেখ অবস্থা! তুই তো জানিস আমি মা’কে কত ভালোবাসি।”
রুদ্র একটু থেমে রাগে ঠোঁট কামড়ে রাখলো। কিছুক্ষণ পর আবার বলল, “এই মেয়েকে আমি কি যে করবো।”
কিরণ বেশ ভাবুক ভঙ্গিতে বলল, “মেয়েটা তাহলে তোকে ফলো করছিলো? সিরিয়াস কেস তো।”
রুদ্র হতাশ গলায় বলল, “আমি আর দাঁড়ি কাটতে পারবো না?”
– “দোস্ত আমার মনে হয় মেয়েটা বলেছে তোকে খোঁচা খোঁচা দাড়ি রাখতে। এভাবে ক্লিন শেভ করতে না করেছে। দাঁড়ি একদম কাটতে পারবি না বিষয়’টা মনে হয় এমন নয়। তুই ম্যাসেজ করে জিজ্ঞেস কর তো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখতে বলেছে নাকি দাঁড়ি একদম কাটতে নিষেধ করেছে?”
(চলবে)
~নাইস,নেক্সট কিংবা স্টিকার কমেন্টের তাড়নায় গল্প লিখতে বিরক্ত লাগে খুব।