#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২৩
– সাজি,এই সাজি উঠ মা!আর কত ঘুমাবি!দেখ বাড়ি ভর্তি কত মানুষ! সেই কখন থেকে এসে বসে আছে আর তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস!পরে তো বলবি আমাকে কেউ কিছু জানাও নি কেন?
জাকিয়া বেগম গোধূলিকে ডাকছে আর এইসব বলছে।
– বড় মা!কি হয়েছে?উফফ!
মাথা চেপে ধরে আস্তে আস্তে উঠে বসলো গোধূলি।জাকিয়া বেগম গোধূলির কাছে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললেন,
– কি হয়েছে সাজি?তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে নাকি?
– তেমন না!তবে বড়মা মাথাটা খুব যন্ত্রনা করছে!
মাথাটা চেপে ধরে কথাটা বলে গোধূলি।
– জানি রে মা তুই অসুস্থ।কি করবো বল!ওই দিকে আমার বাপের বাড়ির লোক রায়ানদের আত্মীয় স্বজন সবাই সকালে এসে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত!বলা নেই কওয়া নেই এইভাবে চলে আসলো।আমি আহানের মামাকে জিজ্ঞাস করায় ও বলল তোর বাবাই নাকি ওদের আসতে বলেছে!রনিত ভাইজানও বলল তার বন্ধুই নাকি তাদের আসতে বলেছে।তোর বাবাইকে জিজ্ঞাস করলাম হঠাৎ করে তার এমন কি জরুরি কাজ পড়ে গেলো যে সবাই ডেকে পাঠিয়েছে?সে কি উত্তর দিয়েছে জানিস?
– কি?
– তার মেয়ের এনগেজমেন্ট নাকি খুব ধুমধাম করে করবে তাই সবাইকে আসতে বলেছে।তাদের সবার সাথে আলোচনা করে তাদের মতামত নিতে।তোকে ছাড়া তো তোর বাবাই চোখে কিছু দেখেই না।মেয়েকে একেবারে চোখে হারায়!তাই আমাকে বলল তোকে যেন সে চোখের সামনে দেখতে পায়।আমি বলেছিলাম কি দরকার মেয়েটাকে শুধু শুধু উপর নিচ করানো?সবে এত বড় একটা দখল গেছে ওর উপর দিয়ে।কিন্তু কে শুনে কার কথা!তাই তোকে ডাকতে এলাম।তোর কাকিয়াও তো বাড়িতে নেই।ওর মায়ের নাকি শরীরটা আবার খুব খারাপ করেছে তাই সকাল সকালেই বেড়িয়ে গেছে।ওদের ছাড়াও তো কিছু করা সম্ভব নয়।অবশ্য তোর কাকাইয়ের সাথে তোর বাবাই কথা বলেছে।ওরা বলল সবাই যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই ওদেরো সিদ্ধান্ত।
– আম্মু আর তুমি সব কিছু সামলাতে পারবে?চল আমি তোমাদের হেল্প করে দেই?
– ওরে আমার লক্ষ্মীসোনা রে!নিজের যে হাল বাধিয়ে রেখেছেন সেটা আগে ভালো হোক তার পর না হয় আমাদের হেল্প করতে আসবেন। তোর ফুপি আসছে।ওকে নিয়েই সবটা সামলে নিবো।তুই বরং লাজুককে একটু আসতে বল।
– কেন?লাজুবু এসে কি করবে?
– রায়ানদের বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা আদিবাকে দেখতে চাচ্ছে। ওকে একটু রেডি করে দিতে হবে না!নতুন কুটুম বাড়ি এমনি এমনি তাদের সামনে যাওয়া যায়?একটু শাড়ি টাড়ি পড়িয়ে দিলে ভালো হবে না!তোর মা তো কাজ করতে করতে সময়ই পাচ্ছে না।তুইও তো পড়াতে পারতি কিন্তু তোরও তো শরীর ভালো না। তার চেয়ে বরং এইটা ভালো না লাজুক চলে আসুক।
– তাহলে আমি লাজুবুকে কল দেই।তুমি যাও আমি বুবুর ঘরে যাচ্ছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে।আর শুন মা তুই কিন্তু সাবধানে চলাফেরা করিস কেমন।
– ওকে।
– ও হে শুন না সাজি।তাড়াহুড়োয় একদম ভুলে গেছি। আহান আর ইহান বাজারে গেছে ওদেরও হয়তো মনে নেই।
– কি বড় মা?
– তুই একটু দীপ্তকে ফোন করে বলে দে তো ও যাতে তাড়াতাড়ি চলে আসে।
-চলে আসবে মানে!কতথেকে চলে আসবে?উনি কি আমাদের বাসায় না?
– আমাদের বাসায় থাকতে যাবে কেন।দীপ্ত তো কালকে রাতে রায়ানদের চলে যাওয়ার আগেই চলে গেছে।
– কি বলছ!
– হে তো।তুই জানিস না?
…..
– সাজি?এই সাজি কিছু কি হয়েছে?
…..
– আরে এই সাজি!কোথায় হারিয়ে গেলি!
– হুম!না মা মানে আসলে!না কিছু না বড় মা!তুমি বরং নিচে যাও বাবাইকে গিয়ে বলো আমি আসছি।
– হুম আয় তাড়াতাড়ি।
জাকিয়া বেগম চলে যেতেই গোধূলি ভাবতে লাগলো।ব্যাপারটা কি হলো?কালকে রাতে দীপ্ত ভাইয়া তো আমাদের বাড়িতেই ছিল!আর সেটা তো রায়ান ভাইয়ারা চলে যাওয়ার অনেক পরের কথা তখন হয়তো ঘড়ির কাঁটা ১টার উপর তাহলে বড়মা কি বলে গেল।দীপ্ত ভাইয়া নাকি চলে গিয়েছিল!তাহলে আমাকে যে দীপ্ত ভাইয়া দিব্যি কোলে করে ছাদে নিয়ে গেলো!আমার সাথে কথা বলল।সেটা কি সত্যি ছিল না?আর আমাকে ঘরে কে নিয়ে আসলো?আমি তো হেঁটে হেঁটে ঘরে আসি নি!তাহলে আমাকে কে নিয়ে এলো?দীপ্ত ভাইয়া!সেটাও তো সম্ভব না!সে তো এখানে ছিলই না!না ছিলই তো আমাকে ছাদে নিয়ে গেলো!আর ওটা যদি দীপ্ত ভাইয়া না হয় তাহলে কে ছিল?দীপ্ত ভাইয়ার রুপধরা সত্যি সত্যি কোনো আজরাইল নয় তো!তাই যদি হবে তবে আমাকে ঘরে নিয়ে এলো কে?ওই আজরাইলই নয় তো!তাহলে আজরাইল কি আমার উপর করুনা করে জান কবজ না করে আবার ঘরে রেখে গেছে!নাকি আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম!ধুর বাবা আমি আর ভাবতে পারছি না।উফফ!এখন আমি এই সব ভাবলে পাগল হয়ে যাব!
বুবুবু…..
আদিবাকে উদ্দেশ্য করে হাক ছাড়ে গোধূলি।
গোধূলি দীপ্তকে ওর ফোন থেকে কল বা মেসেজ কোনোটাই করে নি।আদিবাকে দিয়ে বলিয়েছে।আদিবা জিজ্ঞাস করলে বলে যে,বড়মা বলেছে!আদিবাও গোধূলির কথা বিশ্বাস করে দীপ্তকে ফোন করে বলে তাড়াতাড়ি চলে আসতে।
★
তাহলে সবাই ওই কথাতেই রইলাম!সামনে শুক্রবার মুননাইট রিসর্টে আদিবা আর রায়ানের এনগেজমেন্ট হচ্ছে।আহসান আমরা এখন উঠি কেমন।আমাদেরও তো ছেলের বিয়ে আমাদেরও তো অনেক কিছু এরেঞ্জ করতে হবে।আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।
– রনিত তুইও না। এখনও সেই আগের মতোই রয়ে গেলি!আচ্ছা ঠিক আছে যা।
রায়ানরা সবাই চলে যেতেই আহসান সাহেব সবাইকে বলেন,
– তোমরা সবাই এখানে থাক। তোমাদের সাথে আমার কিছু আলোচনা করার আছে।আমার মেয়ের বিয়ে আমি মহা ধুমধামে দেবো আর তার আগে এনগেজমেন্ট পার্টিও অনেক বড় করে থ্রো করবো।সাজি মা তুই তোর যত ফ্রেন্ডস আছে সবাইকেই ইনভাইট করে দে।আহান ইহান তোরাও।ও হে দীপ্ত তুইও।
– মামু আমার ফ্রেন্ডস দের বলাটাও কি খুব দরকার?
– কেন?
– না মানে “যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পরশির ঘুম নাই ” অনেকটা ঠিক এই প্রবাদ বাক্যের কথার মতো হয়ে যাচ্ছে না!
– মানে কি বলতে চাইছিস তুই?
– নাহ তেমন কিছু না!আসলে যার বিয়ে মানে আদিবাপু!তাকে কোনো কিছু না বলে সোজা তোমার সাজি মাকে বলছো মনে হচ্ছে বিয়েটা ওরই!
– কেন রে দীপ্ত?তোর কি খুব হিংসে হচ্ছে?
– আম্মু!কি বলো?আমার কেন হিংসে হতে যাবে!মামু দেখেছো আমি কি কিছু ভুল বললাম!
– আদিবা আর সাজি দুটোই আমার মেয়ে। আমি যেটা আদিবাকে বলবো সেটা সাজি মেনে নেবে আর যেটা সাজিকে বলবো সেটা আদিবা মেনে নেবে।আদিবা সাজি আমি কি ঠিক বললাম ?
– একদম ঠিক বলেছো বাবাই।আসলে আমাকে যে সবার আগে বলেছো এটা অনেকেরই সহ্য হয় নি!তারা হয়তো এটা জানে না যে,বুবুর ফ্রেন্ডরা আমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে অলরেডি রৌনা হয়ে গেছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো চলেও আসবে!
– মামু তুমি তো কথাটা অনেকটা ওই গুগলির মতো বললে!
– বাবাই তুমিও না!কি দরকার গোবর পোড়া মাথার অধিকারী মানুষের সামনে এইভাবে কথা বলার!
– গোধূলি তুই কিন্তু…….
দীপ্ত আঙ্গুল উচিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু ওর বাবাকে দেখে থেমে যায়।গোধূলি মুখ ভেঙচিয়ে ওর ঘরে চলে যায়।
#দীপ্ত_গোধূলি
#লিখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-২৪
– আম্মু তুমি দেখলে ও কি বলে গেল?
– আহ দীপ্ত তুইও না!কি দরকার ছিল ওকে খুঁচা মেরে কথা বলার।তুইয়েই তো আগে শুরু করিস!তারপর সাজিও তার সাথে তাল মেলায়!
– বাহ!ভালোই!কোথায় ছেলের পক্ষ নিবে!তা না করে ভাইঝির পক্ষ নিচ্ছো!দিস ইজ নট ফেয়ার আম্মু!
– হয়েছে হয়েছে!তোকে আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না!ওতে আমি গলছি না!আমার অনেক কাজ আছে আমি যাই।
– যাক বাবা!আমি আবার কখন তোমায় ব্ল্যাকমেইল করলাম আম্মু?চলে যাচ্ছ কেন বলে যাও?
দীপ্তি বেগম ছেলের কথার পাত্তা না দিয়ে চলে গেলেন।আর এই দিকে উপস্থিত সবাই দীপ্তের এই অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।একমাত্র গোধূলিই ওকে জব্দ করতে পারে।দীপ্তের সাথে আর কেউ কথায় পারুক বা না পারুক গোধূলি ঠিকই পারে।আদিবা ওর হাসি দমিয়ে রেখে বলে,
– দীপ্ত!আমার সাথে একটু আয় তো!
– কোথায় আদিবাপু?
– তুই আগে আয়।তাহলেই তো দেখতে পাবি!আমি আমার ঘরে গেলাম তুই আয় কেমন।
– ওকে।চল যাচ্ছি।
★
দীপ্ত সেই কখন থেকে আদিবার ঘরে বসে আছে কিন্তু আদিবার কোনো খবরই নাই।অপেক্ষা করতে করতে এক সময় দীপ্ত আদিবার বিছানায় শুয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।কালকে রাতে এ বাড়ি ও বাড়ি করে ঘুমটা হয় নি!আর সকালেও মায়ের ডাক আর আদিবার ফোন পেয়ে ঠিক মতো ঘুমাতে পারে নি।তাই এই ভর দুপুরে খুব ঘুম পাচ্ছে আর দীপ্ত ঘুমিয়েও গেছে।
– বুবু বুবু!ও বুবু….
আদিবার বিছানায় কাউকে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে গোধূলি ওর পুরো কথা না বলে দরেজার কাছেই থেকে যায়।কিচ্ছুক্ষণ বিছানার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে,
-ওমা!বুবু তুমি এই ভর দুপুরবেলা এইভাবে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছো কেন?তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? বুবু!আদিবার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে গোধূলি বিছানার কাছে গিয়ে বারকয়েক ডাকে। কিন্তু আদিবা তো কথাই বলছে না।
– আচ্ছা বুবু তুমি আমার সাথে মজা করছ তাই না!দশ মিনিটও হয় নি তুমি ঘরে এলে এর মধ্যেই তোমার ঘুম পেয়ে গেলো!বুঝি বুঝি আমি সব বুঝি!এই সব ভনিতা না করে উঠে বসে তো তোমার সাথে আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।বুবু!আরে এই বুবু উঠো না।
অনেকটা জোরেই আদিবাকে ডাকছে গোধূলি।কিন্তু আদিবার তো উঠার নামেই নেই বরং নড়েচড়ে আরো ভালো করে শুইয়ে পরলো।দীপ্তকে আদিবা ভেবে গোধূলিও এসে শুয়ে পড়ে দীপ্ত যেদিকে মুখ করে শুয়ে আছে সেই দিকে।শুয়ে শুয়ে গোধূলি ভাবছে,
– হয়তো রাত জেগে রায়ানের ভাইয়ার সাথে কথা বলায় বুবুর ঘুমটা হয় নি!আর সকালেও তো ঘুমাতে পারে নি।গোধূলির ভাবনার মাঝেই দীপ্ত গোধূলিকে অনেকটা পাশবালিশের ভঙ্গিমায় জড়িয়ে ধরে।যদিও সেটা অনিচ্ছুক ভাবেই ঘুমের ঘোরে।কম্বলসহই দীপ্ত গোধূলিকে জড়িয়ে ধরে আছে।গোধূলিকে এইভাবে জড়িয়ে ধরায় গোধূলি বেশ অবাক হয়।কেননা ও প্রায় সময়ই আদিবার সাথে ঘুমোয় কিন্তু এর আগে কখনো আদিবা ওকে এই ভাবে জড়িয়ে ধরে নি।তাই হঠাৎ করে দীপ্তের এমন জড়িয়ে ধরাটা গোধূলির কাছে কিছুটা অস্বস্তিকর লাগছিল।পর মুহূর্তেই গোধূলির মনটা বিষাদে রূপান্তরিত হয় এটা ভেবে যে,আর তো মাত্র কয়েকটাদিন!তারপর তো আদিবা আর এই বাড়িতে থাকবে না চলে যাবে শ্বশুর বাড়ি। যদিও কাউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো বা শুয়ার অভ্যাস গোধূলির নেই।কারণ এই অভ্যাসে গোধূলি অভ্যস্ত নয় আর ওর এইভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো ভালোও লাগে না।কেউ ওকে জড়িয়ে ধরলে ওর দম বন্ধ লাগে।তাও ও কোনো নড়াচড়া না করে ওই ভাবেই শুয়ে আছে শুধু এটা ভেবে যে ওর বোন ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।গোধূলিও এবার আদিবা ভাবা দীপ্তকে জড়িয়ে ধরে। কতক্ষণ ওইভাবে শুয়ে ছিল কে জানে!যখন ওর ঘুম ভাঙ্গে তখন ঘড়ির কাঁটা বলছে ৪টা বেজে ২৫ মিনিট।
ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে একটা লম্বা হাই তুলে ওর পেট থেকে দীপ্তের হাতটা সড়িয়ে পাশে তাকাতেই গোধূলির চোখ রেরিয়ে আসার উপক্রম।খাট থেকে এক লাফ দিয়ে নেমে চোখ বুজে দেয় এক গগনবিদায়ী চিৎকার।গোধূলির চিৎকারে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে দীপ্ত।দীপ্ত উঠে বসতেই গোধূলি আবার দেয় এক চিৎকার। ঘটনা কি ঘটলো দীপ্তের বুঝতে একটু সময় লাগলো।অবশ্য লাগারই কথা।কারো চিৎকারের ফলে ও ঘুম থেকে উঠে তারপর আবার চিৎকার করার ফলে পাশে তাকিয়ে দেখে এটা গোধূলি!এইবার যখন গোধূলি আবার চিৎকার করতে যাবে দীপ্ত তখন তড়িৎ গতিতে এসে গোধূলির মুখটা চেপে ধরে।
– কি হয়েছে এই ভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?
– উম্মম উম্মম…
– ওফস সরি!
গোধূলির মুখটা ছেড়ে দিয়ে বলল দীপ্ত।
– চিল্লাবো না তো কি করবো!আপনি বুবুর ঘরে কি করেন?
– আমি কি করি মানে?তুই দেখতে পাস নি আমি ঘুমোচ্ছিলাম?
– হুম।
– তো?
– তো?আপনি জানেন কি করেছেন?
– কি করেছি?
– আপনি আমাকে জড়ি….
গোধূলি থেকে যায়।মুখ চেপে ধরে বলে,
– এ আমি কি বলতে যাচ্ছিলাম!নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মতো কাজ করতে যাচ্ছিলাম!ইসস,এখন যদি আমি বলে দিতাম যে উনি এতক্ষণ আমার সাথেই ঘুমিয়ে ছিলেন।ইসস কি লজ্জাজনক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তাম তাহলে!লাখ লাখ শুকরিয়া আল্লাহ এই মহাবিপদ থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
– আমি তোকে কি?কি হলো বলছিস না কেন?
দীপ্তের ধমকে আঁতকে উঠল গোধূলি।
গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
– না মা মানে আ আসলে কিছু না।আমি টিকটিকি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম চিল্লালাম!
দীপ্ত গোধূলির দিকে একটু সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে যায়।আর অন্যদিকে বাড়ির সবাই এসে আদিবার ঘরে জমা হয়।গোধূলি এমনিতেই অসুস্থ তার উপর এমন চিল্লানী শুনে সবাই খুব চিন্তিত মুখে তাকিয়ে গোধূলির দিকে।সবাইকে একসাথে দেখে গোধূলির গলা শুকিয়ে গেছে। তাও ফোকলা হেসে বলে,
– আরে কিছু হয় নি আমার!আমি আসলে টিকটিকি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই চিৎকার করি যাতে টিকটিকিটা চলে যায়!
সবাই জানে গোধূলি টিকটিকি আর তেলাপোকা খুব ভয় পায়।তাই কেউ ওকে আর কিছু না বলে যায়।সবাই চলে যেতেই গোধূলিও আদিবার ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।ওর রুমের দিকে যাচ্ছে আর একা একা বিড়বিড় করছে,
– বেটা শয়তান!বজ্জাত লোক!এলিয়েন কোথাকার। সবাইকে আমার মিথ্যে বলতে হয়েছে।বাড়িতে কি ঘরের অভাব পড়েছে উনাকে কেন ওই ঘরেই ঘুমাতে হবে।
গোধূলি ঘরে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ফ্রেশ হবে বলে।
চলবে…..
#বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
.