#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২৯
– এই দাঁড়ান দাঁড়ান!আপনি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
…….
– এটা তো শপিংমলের রাস্তা না!গাড়ি থামান বলছি।আমাদেরকে এইদিকে কোথায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন?থামুন বলছি।
……..
– আরে!আমার কথা কি আপনার কানে যাচ্ছে না।কথা কেন বলছেন না?
……..
– আজব তো!
……..
গোধূলির কথার উত্তরে দীপ্ত কিছুই বলছে না।সে নিজের মতো করে ড্রাইভ করছে।দীপ্তের নীরবতা যেন গোধূলির গায়ে ধরা আগুনে ঘি ঢালছে।গোধূলি গলায় স্বর উঁচু করে বললো,
– এবার কিন্তু আমরা চিৎকার করবো বলে দিলাম!
……..
– এই নন্টে-ফন্টে তোরাও আমার সাথে চিল্লা তো!
– ঠিক আছে সাজুবু।
– হুম আমার সাথে সাথে তোরা চিল্লাবি ঠিক আছে!রেডি ওয়ান টু থ্রি…
– বাচাও বাচাও বাচাও বাচাও!
গোধূলি আর আলিফ আলবীর চিৎকারে বিরক্ত হয়ে দীপ্ত গাড়ির স্পীড আরো বাড়িয়ে দেয়।দীপ্ত গাড়ির স্পীড বাড়াতেই ভয়ে গোধূলিদের চিৎকার আরো বেড়ে যায়।এক সময় জোরে ব্রেক কষে দীপ্ত।গোধূলির উপর রেগে গিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে,
– তোদের কি মনে হচ্ছে?আমি তোদের কিডন্যাপ করছি!
দীপ্তের কথা শুনে থতমত খেয়ে যায় গোধূলি।গলা ঝেড়ে একটু টেনে টেনে বলে,
– তা নয় তো কি!তাহলে আপনি আমাদের এইদিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন!
– সো ফানি গোধূলি!তোর কাছ থেকে আমি এটা অন্তত এক্সপেক্ট করি নি।আচ্ছা যা মানলাম আমি অন্য রাস্তা দিয়ে তোদের নিয়ে এসেছি।তাই বলে কিডন্যাপ! সিরিয়াসলি!আর এই বিচ্ছু বাহিনী তোরাও ওর সাথে তালে তাল মিলালি?
আলিফ আলবীর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে দীপ্ত।আলিফ আলবী মাথা নত করে নিয়েছে।আলিফ মাথা নিচু করে রেখেই চোখ উল্টে তাকিয়ে মুখ গোমড়া করে বলে,
– তো কি করবো বলো দীপ্ত ভাইয়া!সাজবু বলল বলেই তো আমারাও চিল্লালাম।আর আমরা মুভিতে দেখেছি ছোট বাচ্ছাদের কিডন্যাপ করলে ওরা যখন চিৎকার করে।আর তখন চিৎকার শুনে হিরো ওদের বাঁচাতে আসে!
– আর হিরোকে কোনোদিন কিডন্যাপ করতে দেখেছিস?
– না!
– তাহলে তোরা কেন চিল্লালি?
গোধূলি আশ্চর্য হয়ে দীপ্তের দিকে তাকায়।অবাক কন্ঠে বললো,
– এক্সকিউজ মি!আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?মানে এখানে আপনি হিরো রাইট?
– ওভিয়াসলি আই এম!তোর কোনো সন্দেহ আছে তাতে?
দীপ্ত ওর চোখের সানগ্লাসটা খুলে তাতে ফু দিয়ে আবার চোখে পড়তে পড়তে কথাটা বলে গোধূলির দিকে তাকায়।গোধূলি হা করে দীপ্তের দিকে তাকিয়ে আছে।দীপ্ত আবার বললো,
– আর শুন তুই একদম চুপ থাক।দেখতে পাচ্ছিস না আমি ওদের সাথে কথা বলছি।সো,জাস্ট সাট আপ ইউর মাউথ,ওকে!আর এই যে বিচ্ছুর দল তোরা যেন কি বলছিলি!তোরা বাচ্চা?
– শুধু আমরা কেন হতে যাব!
দীপ্ত অবাক চোখে আলিফ আলবীর দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,
– তাহলে?
– সাজিবুও তো এখনও বাচ্চাই।বাসার সবাই বলে সাজিবুও এখনো বাচ্চা।তাই তো মেঝো বাবা এখনো সাজিবুকে একা একা কোথাও যেতে দেয় না!
আলিফ আলবীর কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় দীপ্ত।আস্তে আস্তে হাসির মাত্রা বেড়ে গিয়ে এক সময় তা অট্টহাসিতে পরিণত হয়।দীপ্ত কোনোমতে হাসি কন্ট্রোল করে পেটে হাত দিয়ে বলে,
– উফ বাবা গো হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেলো।
দীপ্তের প্রতি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে গোধূলি।সামান্য একটা কথা শুনে এই ভাবে হাসার কারণটা ও বুঝতে পারছে না।গোধূলি কর্কশভাবে বললো,
– আজব তো আপনি এইভাবে হাসছেন কেন?
– হাসবো না তো কি করবো বল।তুই নাকি এখনও বাচ্চা!
– তো?ওরা তো ঠিকই বলেছে!
– ঠিক সময়ে বিয়ে দিলে কবেই তিন সন্তানের বাপ হয়ে যেতাম।আর বলছে এখনো নাকি বাচ্চা!
বিড়বিড় করে কথাটা বলে দীপ্ত।গোধূলি সন্দিহান চোখ তাকিয়ে বলে,
– মানে!
– কিছু না!এই যা তো তোরা নাম এবার গাড়ি থেকে।আমার মাথাটা আর খাস না তো। তোদের চিৎকারে এখন আমার মাথাটা বনবন করছে।
– নামবো মানে?আমাদের জায়গা মতো দিয়ে আসেন।
গোধূলির কথায় দীপ্ত চোখ রাঙিয়ে বলে,
– চোখ খুলে দেখ!অনেকক্ষণ আগেই চলে এসেছি!তাও আবার সবার আগেই!
দীপ্তের কথায় গোধূলি বাহিরে তাকিয়ে দেখে।সত্যিই তো চলে এসেছে।এতক্ষণ তো খেয়ালই করে নি ও।গোধূলিকে বসে থাকতে দেখে দীপ্ত উঁচু গলায় বললো,
– কি হলো নাম।
– থুথু..বাবা!এতো জোরে ধমক দেওয়ার কি আছে নামছি তো।
– এতেই এতো ভয় পেয়ে গেলি?আর আমি ধমক কোথায় দিলাম?
– এই নন্টে-ফন্টে তোরা নাম তো।
দীপ্তকে মুখ ভেংচি দিয়ে গোধূলিও গাড়ি থেকে নেমে যায়।তারপর দীপ্তও গাড়ি থেকে নেমে আসে।দীপ্ত ওর গাড়ির চাবিটা গোধূলির হাতে দিয়ে ওদের এইখানে অপেক্ষা করতে বলে কোথায় যেন চলে যায়।মিনিট পাঁচেক পরেই বাকি সবাইও চলে আসে।
– সাজি তোরা একা কেন দীপ্ত কোথায়?
– জানি না বুবু।আমার হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে!
– বুবু আমি একটু আসছি।তোরা সবাই ভিতরে যা।
– এই আহান তুই আবার কোথায় চলে যাচ্ছিস?
– জাস্ট পাঁচ মিনিট বুবু।আসছি আমি।
– আরে শুন এই আহান…….
আদিবার কথা না শুনেই আহান চলে গেল।এর মধ্যেই ইহানও বাকিদের নিয়ে চলে এসেছে। তারপর সবাই শপিংমলের ভেতরে চলে যায়।প্রথমেই রায়ান আর আদিবার এনগেজমেন্ট এর জন্য ড্রেস কেনা হয়।তারপর বাকি সবার ড্রেস কিনার জন্য সবাই আলাদা আলাদা করে ভাগ হয়ে যায়।তবে আদিবা আর রায়ানের এনগেজমেন্ট এর ড্রেস থিম হলো বর কনে ছাড়া বাকি সবার ড্রেস এক কালারই হবে।তবে যার যে ড্রেসে কমফোর্টেবল সেই ড্রেসই কিনুক তাতে প্রবলেম নাই শুধু কালার ম্যাচিং হলেই হবে।তাই সবাই যার যার পছন্দের কাপড় কিনতেই ব্যস্ত।
গোধূলি ওর দাদুকে আগে একটা শাড়ি পছন্দ করে দেয়।তারপর আলিফ – আলবী বায়না ধরে ওদের ড্রেসটাও গোধূলি কিনে দিক।তাই গোধূলি ওদের নিয়ে যায় যেখানে বাচ্চাদের ড্রেস পাওয়া যায় সেইখানে।
এখন মোটামুটি সবার ড্রেসই কিনা কমপ্লিট শুধু লাজুক আর সাজির ড্রেস কিনা বাকি।স্টকে মেয়েদের একই কালারের যত ড্রেস ছিল সব শেষ হয়ে গেছে।একটু আশ্চর্যজনক হলেও এটাই সত্যি!এত বড় শপিং কমপ্লেক্সে আর কোথায় ওই এক কালার এর ড্রেস নেই।আর মাত্র একটা ড্রেসই আছে ওইটা আবার গোধূলির সাইজের হবে না।একটু বড় সাইজ তাই লাজুকের জন্য ওইটা নেওয়া হয়েছে।
রায়ানরা এতক্ষণ আদিবাদের সাথে থাকলেও এখন চলে গেছে কারণ এখন সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি কিনবে যেটা ছাড়া এনগেজমেন্টই হবে না!বর-কনে একে অপরকে সারপ্রাইজ দিবে বলে এনগেজমেন্ট রিং টা আলাদা আলাদা কিনবে।তাই রায়ানরা শপিং শেষ করে রিং কিনতে চলে যায়।
আর এইদিকে সবাই চিন্তা মগ্ন হয়ে বসে আছে এখন গোধূলির ড্রেস কোথায় পাবে!অর্ডার দিলেও এত তাড়াতাড়ি একটা করে ড্রেস তো আর আনা যাবে না। সবার মন খারাপ থাকলেও গোধূলির কোনো হেলদোল নেই।ও আপন মনে গুনগুন করে গান গাইছে আর পা নাড়াচ্ছে!
– তোমাদের শপিং কমপ্লিট হলো?
দীপ্তের কন্ঠ পেয়ে সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখে দীপ্ত আর আহান চলে এসেছে।দীপ্ত আর আহানকে দেখে আদিবা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে,
– দীপ্ত এই তোর আসার সময় হলো?আর আহান!
আদিবা এগিয়ে গিয়ে আহানের কান ধরে বলে,
– এই বুঝি তোর পাঁচ মিনিট!
– আহ!বুবু ছাড় আমার লাগছে।ছাড় না সবাই দেখছে তো!আব্বু তোমার মেয়েকে বলো আমার কান ছাড়তে!
– বুবু আমার বড়দাভাইয়ের কান ছাড়ো।দেখতে পাচ্ছো না আমার ভাই ব্যাথা পাচ্ছে!
– আরে আমার ভাই অন্ত প্রান রে!তা বোনের যে এখনো ড্রেস কিনা হয় নি সেই খবর কি ভাই রেখেছে?
– কি সাজির ড্রেস কিনা হয় নি এখনো?
– নাহ রে আহান।দেখ না আমার মেয়েটার ড্রেস কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
– মানে! কি বলছো আব্বু?
– আরে বড়দাভাই ছাড়ো তো ওইসব কথা! সবাই তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল এনগেজমেন্ট রিং কিনবে বলে চলো !
– কিন্তু সাজি তোর তো এখনো ড্রেস কিনা হয় নি!
– তো?তোমাদেরও তো কিনা হয় নি!আমি না হয় তোমাদের সাথে এসে কিছু একটা কিনে নেব।
– না না না গোধূলি কিছু একটা কিনলে তো হবে না আমাদের সাথেই মেচ করে কিনতে হবে।
– রুহি আপু তুমিও না।আচ্ছা ঠিক আছে যাও তোমাদের সাথে ম্যাচিং করেই কিনবো!এবার ঠিক আছে?
– হুম।
রুহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
– তাহলে চলো এবার যাওয়া যাক।
আদিবার এনগেজমেন্ট রিং টা কিনা হয়ে গেলেই সবাই চলে যায়।শুধু আহান দীপ্ত আর গোধূলি বাদে।ওরা ওদের ড্রেসগুলো কিনে তারপর ফিরবে!আহানের আর দীপ্তের ড্রেসগুলো দোকানে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ছিল এখন শুধু সাইজটা দেখে নিয়েছে।দীপ্ত আর আহান যখন ট্রায়াল রুমে ছিল তখন গোধূলি গিয়ে ওর জন্য একটা কিছু কিনে নিয়ে আসে।আহান কত করে জিজ্ঞাস করলো ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে ও কি কিনলো কিন্তু গোধূলি কিছু বলে নি!শুধু বলেছে সারপ্রাইজ!
#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-৩০
শপিংমল থেকে বেড়িয়ে গোধূলি আর আহান বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। দীপ্ত এখনো আসে নি।আহানকে বলল,তোরা যা আমি আসছি!সেই যে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্তের আসার নামই নেই।অপেক্ষা করতে করতে শেষে আহান দীপ্তকে কল করে।
– এই দীপ্ত কোথায় তুই?
…….
– ওহ!আচ্ছা ঠিক আছে আমরা তাহলে চলে যাই।
…….
– ওকে বাই।
– কি হলো দাভাই?
– না তেমন কিছু না।দীপ্ত বলল ও নাকি কি কাজে আটকে গেছে!
– এইখানে আবার কি কাজ?
– হতে পারে ওর কোনো পারসোনাল কাজ!
– ঠিক আছে বাসায় চলো।
আপন মনে ড্রাইভ করছে আহান।আর গোধূলি ভাইয়ের পাশে কানে হেডফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে।হঠাৎই তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।
– দাভাই তোমাকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।
– কি কথা!
– মিহির আজকে আসতে পারবে না!
– তো?
– লাজুবু কিভাবে আসবে?
– কেন?গাড়ি দিয়ে!
– মামা অফিসের কাজে চিটাগং গেছে। মিহির আর আমার কমন ফ্রেন্ড আছে না ইনান ওর বোনের বার্থডে পার্টি আছে সন্ধ্যায়। ওদের বাসাটা একটু দূরে তো তাই মিহির একটু আগে আগেই চলে গেছে।এখন লাজুবু কার সাথে আসবে?আমি লাজুবুকে ছাড়া তো কালকের ইভেন্টের কোনো প্ল্যানিংই করতে পারবো না!
– তা লাজুকলতাকে ছাড়া তার ড্রেস কিভাবে কিনলি?
– লাজুকলতা!
আহানের সাবলীল কথায় গোধূলি বেশ অবাক হয়। আহানও একটু থতমত খেয়ে যায়।ইসস কি বলে দিলাম!জিভ কেটে মনে মনে কথাটা বলে।গলা ঝেড়ে বলে,
– না!আই মি’ন তোর লাজুবু!
– বড়দাভাই কি ব্যাপার হুম?নট বেড!
– কি?
– লাজুকলতা!
– মানে?
– নামটা খারাপ না ভালোই!লাজুবুর মাপ আমি ফোন করে জেনে নিয়েছিলাম।এবার তাড়াতাড়ি আমাকে ড্রপ করে দিয়ে তোমার লাজুকলতাকে আনতে যাও।
গোধূলির কথা শুনে আহান একটু অবাক চোখে গোধূলির দিকে তাকাতেই গোধূলি বেবি ফেইস করে বলে,সরি দাভাই মুখ ফসকে বলে ফেলেছি!বিনিময়ে আহান শুধু মুচকি হাসি দিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মন দেয়।
★
আম্মু কিছু খেতে দাও অনেক ক্ষুধা…..
লাজুক ওর পুরো কথা শেষ করতে পারলো না।কথা বলতে বলতে ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসতে যাবে ঠিক তখনই দেখতে পায় এক জোড়া চোখ তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে!সামনে থাকা ব্যক্তিটির উপর থেকে নজর সড়িয়ে নিজের উপর দিতেই আঁতকে উঠে লাজুক।এক চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে যায়!
আহান আহাম্মকের মতো বসে আছে।ঘটনাটা কি হলো কিছুও বুঝতে পারছে না।সোফায় বসে ফোন টিপছিল আহান।লাজুকের গলা শুনে ওর দিকে তাকায়।আহান লাজুককে বরাবরই থ্রিপিস বা চুড়িদারে দেখেই অভ্যস্থ।কারণ ওদের বাসায় গেলে ও সবসময় ওইসব পরেই যায়।কিন্তু আজকে লাজুকের পড়নে টিশার্ট আর স্কার্ট ছিল যেটা আহান আজই প্রথম দেখছে!ভেজা খোলা চুলে লাজুককে খুবই আবেদনময়ী লাগছিল!আহান একটু অবাকের সাথে মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে ছিল!
– আজব!ও কি আমাকে আর কোনোদিন দেখে নি নাকি!আমাকে দেখে এমন ভূত দেখার মতো চেচানোর কি আছে। আমি কি দেখতে এতটাই খারাপ যে আমাকে দেখে….
বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছিল আহান।কিন্তু কথা শেষ করার আগেই লাজুকের মা চলে আসে।আহানের হাতে কফির মগ দিতে দিতে জিজ্ঞাস করেন,
– আহান লাজুক এইভাবে চিৎকার করে উঠল কেন?
– কি জানি মামী!
– ভয় পেয়েছে?
লাজুকের মায়ের প্রশ্ন আর আহানের কফির মগে চুমুক দেওয়া একসাথে!আর লাজুকের মায়ের কথা শুনে বিষম খেয়ে যায় আহান।
লাজুকের মা ব্যাতিব্যস্ত হয়ে আহানের মাথায় ফু দিতে দিতে জিজ্ঞাস করেন,
– আহা রে!বাবা তুমি আবার বিষম খেলে কি করে?
– কি করে আবার!আপনার কথা শুনে!
দাঁতে দাঁত চেপে মিনমিনে স্বরে কথাটা বলে আহান।
– কিছু বললে বাবা?
আহান মেকি হেসে বলে,
– না না মামী!কিছু বলি নি তো!আসলে কফিটা একটু বেশিই গরম ছিল তো তাই মনে হয় বিষম খেয়েছি!
– ওহ!হবে হয়তো। আচ্ছা তুমি সাবধানে খাও আমি বরং একটু গিয়ে দেখে আসি লাজুক হঠাৎ কেন এইভাবে চিৎকার করে উঠলো।
– ওকে,ওহ মামী শুনন।
– কিছু বলবে?
– লাজুককে বলবেন একটু তাড়াতাড়ি করে আসতে। বুঝতেই পারছেন বাড়িতে এখনো অনেক কাজ করার বাকি! আর লাজুককে বাসায় ড্রপ করে আমাকে আবার একটু রিসর্টে যেতে হবে।
– ঠিক আছে তুমি বস।আমি বলে আসছি।
______________
তা লাজুকলতা তখন ওইভাবে চিৎকার করে উঠেছিলে কেন?
ড্রাইভিং এর মধ্যেই হঠাৎ করে আহানের প্রশ্ন শুনে থমকে যায় লাজুক।ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না।তখন লাজুকের কি হয়েছিল ও নিজেই জানে না! আহানের সামনে টিশার্ট আর স্কার্ট পড়ে গিয়েছিল।আহানের দিক থেকে দৃষ্টি অনুসরণ করে লাজুক যখন ওর দিকে তাকায় তখন ওর নাভীর বেশ ক্ষানিকটা অংশ দেখা যাচ্ছিল বলে হয়তো লজ্জা পেয়ে চিৎকার করে দেয়।কিন্তু সেই কথা কি আর এখন বলা যাবে!অনেকক্ষণ হয়ে গেছে লাজুকের কোনো উত্তর না পেয়ে আহান আবার জিজ্ঞাস করে,
– কি হলো বললে না তো?
আমি এখন কি বলব উনাকে!ধুর একটা কিছু বলে দেই না!
– আমি টিকটিকি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
লাজুকের কথা শুনে একটু না অনেকটাই অবাক হয় আহান।গাড়ির ব্রেক কষায় লাজুক কিছুটা ভড়কে গিয়ে জিজ্ঞাস করে,
– কি হলো ভাইয়া গাড়ি কেন থামালেন?
– এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড!ইউ মিন আমি টিকটিকি?
– কি!মানে?
– এইমাত্রই তো তুমি বললে আমি টিকটিকি!
– এমা না ছি ছি।আপনি কেন টিকটিকি হতে যাবেন!
– তখন তো তুমি আমাকে দেখেই চিৎকার করলে!তাহলে তো তুমি আমাকেই টিকটিকি ডাকলে।
– আমি আপনাকে টিকটিকি বলি নি ভাইয়া।
– না তুমি আমাকে বলেছ!
– না ভাইয়া!
– না তুমি আমাকেই বলেছি।
– বিশ্বাস করুন ভাইয়া আমি আপনাকে দেখে চিৎকার করি নি। আমি আসলে আমার নাভ……
– কি কি?তুমি আসলে তুমার?
…..
– চুপ করে গেলে যে?বলো কি বলতে চাচ্ছিলে!
ভয়মিশ্রিত লজ্জায় লাজুক কিছু বলতেই পারছে না।আহান লাজুকের অবস্থা বুঝতে পেরে আর কোনো কথা না বলে আবার ড্রাইভ করতে শুরু করে।মাথা নিচু করে বসে আছে লাজুক আর ক্ষণে ক্ষণে আড় চোখে আহানের দিকে তাকাচ্ছে।একপর্যায়ে চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয় লাজুক।লাজুকের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে আহান।লাজুককে স্বাভাবিক করতে আহান গাড়িতে থাকা কিছু ফাইল লাজুককে দেখিয়ে বলে,
– লাজুক এই ফাইলগুলো একটু আমাকে পড়ে শুনাও তো!
এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাকে বলে আরকি!আহানেরও কাজ হয়ে যাবে আর লাজুকেরও লজ্জা গুছবে!
আহানের কথা মতো লাজুক সব ফাইল একে একে পড়ে শুনালো।
– কি বুঝলে?
– এটা দেখে তো মনে হচ্ছে কালকের ইভেন্টের সব হিসাব নিকাশ!গেস্ট থেকে শুধু করে ডেকোরেশন সবই এখানে উল্লেখ করা।
– হুম!
.