গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:১২
প্রায় একবছর পর আজ সেঁজুতি তার বাবার বাড়িতে যাচ্ছে। কিন্তু সাজিকে জোর করেও রাজি করাতে পারছেনা।
সেঁজুতি বুঝতে পারে না কেন সাজি তার নানুর বাড়ি এতোটা অপছন্দ করে।তবে অপছন্দ ব্যাপারটা ছোট বেলা থেকে নয়।
সাজি যে বছর নবম শ্রেনীতে নতুন ভর্তি হয়।সেই বছর সাজি নানুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। আচমকা রাতের বেলায় কান্না শুরু করে। সেঁজুতি মেয়ের কান্না দেখে পরের দিন বাড়িতে নিয়ে আসে। সাজির হঠাৎ এমন ব্যবহারে ঘা*বড়ে গেছিলো সেঁজুতি। মেয়েকে বারবার জিজ্ঞেস করেছে সমস্যার কথা। কিন্তু সাজি কিছুই বলেনি, উল্টো কিছু জিজ্ঞেস করলেই চি*ল্লা*নো শুরু করে। সাজির যেন নানু বাড়ি নিয়ে একটা ফো*বি*য়া হয়ে গেছে।
এরপর থেকে সাজি নানু বাড়ি যেতে চায় না। গেলেও ঘন্টা দুই থেকেই বাড়ি আসার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দেয়।
ব্যাপারটা এতোদিন সেঁজুতি ওবদি থাকলেও আজ অনিলা রহমান আর সাদ প্রথমবারের মতো জানলো।
সেঁজুতি বেড়াতে যাবে তাই অনিলা রহমান তার সাথে দেখা করতে এসেছে। ছুটির দিন হওয়াতে সাদ তার মায়ের সাথে এসেছে। ছুটির দিন তো বাহানা মাত্র। দীর্ঘ দিন সাজবাতির সাথে দেখা হবেনা ভেবেই শেষ বারের মত তাকে দেখতে এসেছে।
বাড়িতে ঢুকতেই সেঁজুতির চিল্লাচিল্লি শুনতে পায়। অনিলা রহমান একপ্রকার দৌড়ে ঘরে ডুকলো। নিশ্চয়ই সেঁজুতি মেয়েটাকে মা”রছে!
সাজি দাঁতে দাঁত চেপে ঝিম মে*রে বসে আছে। অনিলা রহমান সাজিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। বুঝতে পারছেনা কি চলছে। আর কেনইবা সেঁজুতি এতোটা রেগে আছে।
রেনু একপাশে দাড়িয়ে অসহায় দৃষ্টিতে সাজির দিকে তাকিয়ে আছে। সাজির জন্য বড্ডো খারাপ লাগছে।
এইদিকে সেঁজুতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, তোর মূলত সমস্যা কি? তোদের বাপ বেটির শুধু আমার বাপের বাড়ি নিয়েই এলার্জি কেন? তোর বাপ নেই এখন তুই বল তোর কি সমস্যা?
~কি হচ্ছে কি সেঁজুতি? মেয়েটাকে এইভাবে বকছিস কেন? কি করেছে কি?
~ আপা আপনি এই বে*য়া*দ*বকে জিজ্ঞেস করুন কেন যেতে চায় না ওই বাড়িতে?কি দোষ করেছে আমার বাপের বাড়ির মানুষ! এতো বছর হলো কিন্তু এই মেয়েকে একটা রাতের জন্য ও বাড়িতে নিতে পারিনি।
~ সেঁজুতি হাসানের কথা শুনে কপাল কুঁচকে ফেললো সাদ। এতো বছর!! কতো বছর ধরে সাজি ওর নানুর বাড়িতে যায় না! কেন যায় না!কই কখনোতো শুনিনি। সাদের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে সেঁজুতি হাসানের কথায়।
~সেই ক্লাস নাইনের বছর যে একরাত থেকে এসেছে আজ ওবদি একরাতের জন্যেও ওবাড়িতে যায়নি।তার জন্য আমাকেও বাবার বাড়ি ত্যা*গ দিতে হয়েছে। আপা আপনি জিজ্ঞেস করুন নয়তো এর পিঠের ছা*ল তুলবো।
ছোট মামুনীর কথায় সাজির দিকে তাকালো সাদ। সাজির পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে। বার বার হাত মুঠ করছে আর খুলছে। এইভাবে সাজিকে কখনো দেখেনি সাদ। মামুনী এর থেকেই বেশি বকা ঝকা করে। কই কখনোতো এতোটা ফুঁসতে দিখিনি।তাহলে আজ কি হলো?
অনিলা রহমান সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে বললো,, কি হয়েছে মা তোর কি শরীর খারাপ করছে? ঘামছিস কেন?
সেঁজুতি রেগে তেঁতে উঠে বললো,, দুই থা*প্পড় দিলে ঠিক হয়ে যাবে। যতোবার যাওয়ার কথা বলি ততবারই এমন নাটক শুরু করে। নাটক বন্ধ কর সাজি! আমার বাপের বাড়ির মানুষ তোর কি এমন ক্ষ*তি করেছে হ্যা?
হুট করে করেই সাজি উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর রাখা ফ্লাওয়াভাস আছাড় মে*রে ভে*ঙ্গে ফেললো।
সাজির এমন কাজে সেখানে থাকা সবাই চমকে উঠলো। সাদ নিজেও অবাক হয়ে গেছে। সাজিকে এতোটা এগ্ৰেসিভ হতে কখনো দেখেনি।
অনিলা রহমান আচম্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। মেয়েটা চঞ্চল সত্য কিন্তু বে*য়া*দব নয়। রেগে যায় ঠিক আছে কিন্তু কখনো বেয়া*দবি করেনি। তার রাগ ছোট বাচ্চাদের রাগের মতো। তাহলে আজ হঠাৎ কি এমন হলো??
সেঁজুতি হাসান নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে মনে হচ্ছে।
সাজি ফ্লাওয়ারভাস ভে*ঙ্গে চিৎ*কার করে বললো,, মা*রো থা*প্পড়! তুমি থা*প্পড় মা*রো বা গলা টি*পে মে*রে ফে*লো তাও আমি যাবো না ওবাড়িতে। তোমার বাপের বাড়িতে তুমি যাও আমার যাওয়ার দরকার নেই।
আর ক্ষতির কথা বলছো! কোনো ক্ষতি করেনি মা! শুধু তোমার একমাত্র ভাইয়ের বড় ছেলে রাতের বেলা আমার ঘরে এসেছিলো।
কোনো ক্ষতি করেনি! শুধু বাজে ভাবে গায়ে হাত দিতে চেয়েছিলো।
কোনো দোষ করেনি শুধু কু-প্রস্তাব দিয়ে ছিল।
সাজি ফুঁপিয়ে উঠে আবার বললো,,
আমি ভ*য় পাই তোমার বাবার বাড়ি। আমার নিঃশ্বাস নিতে ক*ষ্ট হয় ওবাড়িতে গেলে। ওই ভ’য়ং’ক’র রাতের কথা মনে পড়ে মা।তাইতো ওইবাড়িতে যেতে বললেই নাটক শুরু করি।
কথা শেষ হতেই শব্দ করে কেঁদে উঠলো সাজি। কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
সাজির প্রতিটা কথা যেন বার কয়েক প্রতিধ্বনি হতে লাগলো পুরো বাড়ি জুড়ে।
অনিলা রহমান স্তব্ধ হয়ে গেছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না। সাজির প্রতিটা কথায় হাজারটা না বলা অভিযোগ দেখা দিচ্ছে। মেয়েটা ঠিক কতোটা কষ্ট পাচ্ছে তা ভেবেই শিওরে উঠলো অনিলা।
সেঁজুতির বুকের ভেতরটা ধ*ক করে উঠলো। সাজির প্রতিটা কথা বুকের ভেতরটায় সু*চ ফু*টাচ্ছে যেন। মেয়েটা তার এতোটাই অসহায় হয়ে পড়েছিল? আর সে মা হয়ে বুঝলো না? মা হিসেবে আজ নিজেকে খুব বেশি অক্ষম মনে হচ্ছে। সেঁজুতি হাসান ঢুকরে কেঁদে উঠলো ।
অনিলা রহমান সেঁজুতিকে বুক জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
রেনু ওড়নায় মুখ চে*পে কাঁদছে।
সাদ হাত মুঠ করে নিজেকে সংবরণ করতে লাগলো।তার সাজবাতির সাথে এতো কিছু হয়ে গেলো আর সে জানলো না? দাঁতে দাঁত চেপে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দোতলার দিকে তাকিয়ে রেনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,, রেনু মামুনীকে পানি দে।
রেনু চোখ মুছে একছুটে কিচেনে চলে গেল।
সাদ ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে ক্রু*ল হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে মন্দ হবে না। হোক তাহলে পুনরাবৃত্তি! বাকি হিসেবটা নাহয় এইবার মিটিয়ে নিবো। সুদে আসলে সবটা বুঝিয়ে দিতে হবে।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। অসুস্থতার কারণে গল্প দিতে সমস্যা হচ্ছে 🥺।)
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:১৩
ফ্লোরে বসে ফুঁ*পিয়ে কাঁদছে সাজিঁ।সাদ দরজায় দাঁড়িয়ে টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে রুমের ভেতর ঢুকলো। বিনা বাক্যে সাজির পাশে বসে একটা টিস্যু এগিয়ে দেয়।
নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ মুছে তাকালো সাজি।
সাদ সাজির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টির বেড়াজাল ছি*ন্ন করার ক্ষমতা সাজির নেই। তাই কাঁপা হাতে টিস্যু নিয়ে চোখ মুছলো।
সাদ সাজির পাশ ঘেঁষে বসে চুল ঠিক করে দিলো। জামার কাঁধ ভেদ করে বি বেল্টের দেখা মিলছে। সাদ আলতো হাতে কাঁধ থেকে ওড়না নিয়ে পুরো পিঠ ঢেকে দেয়।
সাজি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ঝাঁ*পিয়ে পড়লো সাদের বুকে। সাজির এহেন কান্ডে আচম্বিত হলো সাদ। হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা হাতে সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে কোমলমতি গলায় সুধালো,, কি হয়েছে আমায় বল!আমি আছিতো কাঁদছিস কেন?
সাদের কথাটা যেন সাজির কান্নার বেগ দ্বিগুণ মাত্রায় বাড়িয়ে দিলো। মনে হচ্ছে এতক্ষণে কাউকে পেয়েছে যাকে সব বলে দিতে পারবে।
চিৎ*কার করে কাঁদতে লাগলো সাজি। সাদ স্ত*ব্ধ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিৎ তা ভেবে পাচ্ছে না।
সাদের বুকে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো’, নানু বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই নিশান ভাইয়া কেমন করে জানি কথা বলতে চাইতো। অস্বস্তি লাগায় বারবরই এড়িয়ে গেছি। কিন্তু রাতে হুট করেই কেউ রুমে ঢুকে পড়ে। ল্যাম্পশেড জ্বা*লাতেই নিশান ভাইয়াকে আমার বিছানার পাশে দেখে ঘাবড়ে গেলাম। উনি আমার হাত শ*ক্ত করে চে*পে ধরে, ভয় চিৎকার দিতে নেই। তার আগেই উনি বিছানার উপর ফেলে মুখ চেপে ধরে বাজে প্রস্তাব দেয়।
আমি খুব বেশি ভয় পেয়ে যাই সাদ ভাই। পা দিয়ে ধা*ক্কা মে*রে ল্যাম্পশেড ফেলে দেই। শব্দ পেয়ে মা আর নানু ছুটে আসে তখন নিশান ভাইয়া বারান্দা টপকে পালিয়ে যায়।
সাজির কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুঠ করে ফেললো সাদ। পারলে এখনই ওই জা*নো*য়া*রকে খু*ন করে ফেলে। কিন্তু আপাতত সাজিকে সামলাতে হবে। তা ভেবেই নিজেকে স্বভাবিক করলো।
সাদের টিশার্ট মুঠ করে ধরে কাঁদছে সাজি।
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে জড়িয়ে ধরলো সাদ। একহাতে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, সব কথা নিজের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিলি কেন? মামুনিকে বললি না কেন সাজি? তুই তো এমন ছিলি না। তোর মনে যা মুখেও তাই । কথা জমিয়ে রাখার মেয়ে তো তুই না! তাহলে কেন এতো বড় কথা এইভাবে নিজের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছিলি?
সাদের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,, মা শুনলে কষ্ট পেতো সাদ ভাই। মা কখনো আর ওবাড়িতে যেতো না। এমনিতেই দাদুর বাড়িতে যেতে পারে না। শেষে নানুর বাড়ি যাওয়াটা মায়ের জন্যে চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতো। কি করে বলতাম এইসব!
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো সাদ।একটা মেয়ে ওই পরিস্থিতিতে ঠিক কতটা অসহায় হয়ে পড়ে তা সাদ ভালো করেই জানে।
তবে এই ভেবে অবাক হলো, তার ছোট্ট সাজবাতি তখনও কতোটা বুঝের ছিল। নিজের মায়ের কথা ভেবে এতো বড় একটা ব্যাপার লুকিয়ে রেখে ছিলো ।সাজবাতি স্ট্রং বলেই এতো সব কিছু ফেইস করেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে।
সাদ আলগোছে চোখ মুছে দিয়ে দুগালে হাত রেখে বলল,, মামুনীকে নাহয় এই জন্য বলতে পারিসনি কিন্তু আমাকে বললি না কেন সাজবাতি? আমিতো তখন রোজ তোকে পড়াতাম।
সাদের চোখে চোখ রাখলো সাজি।
সেই ব্যাথাতুর চোখ জোড়ার ভাষা বুঝতে দেরী হলোনা সাদের।তাও কন্ঠ খা*দে নামিয়ে বললো,
~ভয়ে বলতি না তাইতো??
উত্তরে মাথা নাড়ালো সাজি।
সাদ সাজির কপালে কপাল ঠেকিয়ে আদুরে গলায় বলল,,আজ থেকে কখনো যেন ভয় পেতে না দেখি। আমি চাইনা আমার সাজবাতি ভয় পাক। আমি চাই সে নির্দ্বিধায় নির্ভয়ে আমাকে সব কিছু বলুন। হোক সেটা অবান্তর কথা কিংবা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধ চোখ জোড়ার কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল। বুকের ভেতরে তীব্র য*ন্ত্রনা হচ্ছে। সেই য*ন্ত্রনা কমাতে টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করলো সাজি,,
~ নিশান ভাই আর ইহান ভাই আপনার মতো নয় কেন সাদ ভাই? কেন তাদের উপস্থিতি পীড়াদায়ক মনে হয়? কেন তাদের স্পর্শ নোং*রা মনে হয়? কেন তাদের দৃষ্টিতে তীব্র অস্বস্তি হয়?
সাদ সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, সময় হলে বুঝতে পারবি। তবে তার আগে ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝতে হবে তোকে। নারীরা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয় সাজি। তারা পুরুষের নজরে, স্পর্শে, উদ্দেশ্যে মধ্যে কোনটা খারাপ কোনটা ভালো সব বুঝতে পারে। তোকেও বুঝতে হবে।
সাদ কিছুক্ষণ থেমে আবার বলল,, শুধু বুঝলেই হবে না। প্রতিবাদও করতে হবে। তোকে ছোঁয়ার অধিকার সবার নেই তা বুঝিয়ে দিতে হবে। কি পারবি তো!
সাজি সাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
সাদ মুচকি হেসে বলল,, সবার বেলায় প্রতিবাদ করতে হবে। সেটা যদি আমি হই তখনও প্রতিবাদ করতে হবে। সব কিছুর উর্ধ্বে আত্মসম্মান সাজি। একজন নারীকে অসম্মান করা কিংবা শ্লীলতাহানি করার অধিকার কারো নেই। আর যে এইসব করার চেষ্টা করে তার বেঁ*চে থাকার অধিকার নেই।
সাদের কথায় মুগ্ধ হলো সাজি। মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।
সাদ উঠে দাঁড়িয়ে সাজির চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,, উঠ পাগলী!! তৈরি হয়ে নে।
সাজি চোখ বড় বড় করে সাদের দিকে তাকালো। সাদ পকেটে দুহাত গুঁজে শিস বাজাতে বাজাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তার সব কিছু জানা শেষ।
এখন শুধু মামুনিকে ওই বাড়িতে পাঠানোর পালা।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,,গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:১৪
সেঁজুতি হাসান স্থির হয়ে বসে আছে। অনিলা তার ছেলের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে। তার ছেলে আসলে চাইছেটা কি।
~ মামুনী তুমি তৈরি হয়ে নাও। আমি তোমাকে পৌঁছে দিবো।
সাদের কথা শুনে সেঁজুতি কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো,, অসম্ভব! আমি ওই বাড়িতে আর কখনোই পা রাখবো না। আমার মেয়ের সাথে এমন ঘটনা ঘটে গেল তা শুনেও ওই বাড়িতে আমি যাবো?? কখনোই না।
সেঁজুতির সাথে অনিলা সায় জানিয়ে বললো,, সেঁজুতি ঠিক বলেছে। ওই বাড়িতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।
সাদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,,
~ মামুনী! তুমি তোমার বাবার বাড়িতে যাবে। অ*প*রাধ তোমার ভাইয়ের ছেলে করেছে। তোমার মা বাবা করেনি আর না করেছে তোমার ভাই কিংবা ভাইয়ের বউ। তাহলে তুমি কেন যাবে না! ওটা তোমারও বাড়ি। তোমার অধিকার আছে ওই বাড়িতে যাওয়ার। তাই তুমি যাবে!
রইলো নিশানের কথা! ওকে আমি দেখে নিবো। তবে তোমাকে ওয়াদা করতে হবে। তুমি নিশানের সাথে কোনো প্রকার রাগ দেখাবেনা। আর না তাকে বুঝতে দিবে সাজির ব্যাপারটা।
~ কিন্তু!
~কোনো কিন্তু নয় মামুনী। আমার উপর যদি বিশ্বাস থাকে তাহলে কোনো “কিন্তু” থাকার কথা নয়।
অনিলা রহমান ছেলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঝড়ের পূর্বাভাস লক্ষ্য করছে। তা না হলে এতো কিছু শোনার পর যেখানে তা*ন্ডব করার কথা, সেখানে দিব্যি শান্ত ভঙ্গিতে বসে সাবলীল ভাষায় কথা বলছে সাদ। অনিলা স্মিত হেসে মনে মনে বললো,, এইবার ঝড় দেখার পালা আর কতোটা ক্ষ*য়ক্ষ*তি হয় তা পরখ করার পালা।
সেঁজুতি জানে সাদ তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। কথার পেছনে কোনো না কোনো যুক্তি অবশ্যই আছে।সেঁজুতি পুরো ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখলো। সাদের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,, ঠিক আছে। কিন্তু সাজিঁ কি যেতে রাজি হবে?
~সাদ সোফায় হেলান দিয়ে বসে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,, কে বলেছে সাজি সেই বাড়িতে যাবে?
অনিলা রহমান ছেলের কথায় কপাল কুঁচকে ফেললো। সেঁজুতি হাসানের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।
~ তাহলে একা থাকবে কি করে?
~ একা থাকার কথা আসছে কেন? সাজি আমাদের বাড়িতে থাকবে। সাথে রেনুও যাবে। মা আছে ওর খেয়াল রাখার জন্য।
অনিলা রহমান ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
সেঁজুতি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, যাক টেনশন মুক্ত। আপা আর তুই আছিস মানেই টেনশন শেষ।
সেঁজুতির কথায় সাদ মুচকি হাসলো সাদ।
~কিছু কথা বলি মামুনী! প্লিজ মনোযোগ দিয়ে শুনে বুঝার চেষ্টা কোরো আমার কথা গুলো ।
সেঁজুতি মাথা নেড়ে বললো,, হ্যা বল বাবা।
~ শুনো তাহলে,কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলে মেয়েরা এমন অনেক জায়গায় কিংবা মানুষ আছে যেখানে তারা যেতে চায় না বা মিশতে চায় না। কমফোর্টেবল ফিল করে না। তাও তাদের মা-বাবা জোর করে, ধমক দিয়ে পাঠায়। তার সেই আনকফোর্টেবল ফিল করার পেছনে কারন জানতে চায় না। বুঝতে চায় না কি এমন কারন থাকতে পারে যার জন্য তাদের সন্তান এতোটা অস্বস্তি বোধ করছে।
এই ধরো যেমন সাজির ক্ষেত্রে! সাজি যেতে চাইতো না। জিজ্ঞেস করলেও বলতো না।
মা-বাবা সব সময় যেই জায়গা এবং মানুষ গুলোকে তাদের সন্তানদের জন্য সেইফ মনে করে তা সেইফ নাও হতে পারে।
কারন আমার মায়ের সাথে একজন ভালো ব্যাবহার করছে। তার মানে এই নয় আমার সাথেও তেমন ব্যাবহার করবে। তার উল্টোও ত হতে পারে!
তোমাকে এতো গুলো কথা বলার একটাই কারণ তা হচ্ছে। যেখানে দেখবে সাজি যেতে চাইছে না। সেখানে যাওয়ার জন্য জোর করো না।
যাদের সাথে মিশতে চাইবে না। তাদের সাথে মেশার জন্য জোর করো না। পারলে তাদের থেকে দুরে রাখবে।
সে মেয়ে! মেয়েদের ষষ্ট ইন্দ্রিয় সব সময় তাদের খারাপ ভালোর ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। তাদের অবচেতন মন টের পেয়ে যায়। কোন জায়গা গুলো তাদের জন্য নিরাপদ,আর কোনো জায়গা গুলো তাদের জন্য অনিরাপদ। সাজিও বুঝতে পারে মামুনী। তবে জড়তার কারনে হয়তো তোমাকে বলতে পারবে না। কিন্তু তোমাকে বুঝে নিতে হবে মামুনী।
সামনে থেকে খেয়াল রেখো প্লিজ। তুমি মা তুমি সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকবে। একজন মায়ের কাছেই কিন্তু তার সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ হয়। একজন মা তার সন্তানকে সব চেয়ে বেশি বুঝতে পারে।
অনিলা রহমান মুগ্ধ হয়ে তার ছেলের কথা শুনছিলেন। কতটা বুঝের হয়েছে তার ছেলেটা। একদম তার বাবার মতো। তবে বাবার চাইতে সাদ একটু বেশিই বুঝের। খারাপ ভালোর সংমিশ্রণ থেকে ভালোটা বেঁছে নিতে জানে। চেয়ে বড় কথা সাদ মানুষ চিনতে পারে, যা তার বাবা কখনোই পারতো না। চিনতো না বলেই তার শোক যাত্রায় তাকে খু*ব*লে খা*ওয়া মানুষ গুলো উপহাস করে গেছে। হৃদযন্ত্র তার কর্মক্ষমতা হারানোর সাথে সাথে আপন মানুষ গুলো পর হয়েছে।
পুরোনো কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনিলা।
সেঁজুতি হাসান সাদের কথা শুনে মুচকি হেসে বলল,, বুঝতে পেরেছি।তবে আমি খেয়াল না রাখতে পারলে তুই আছিস তুই রাখবি খেয়াল।
মামুনীর কথায় মুচকি হাসলো সাদ।
~ তুই আমার ছেলে হলে মন্দ হতো না সাদ।
সেঁজুতির আক্ষেপের সুরে বলা কথাটায় সাদ উঠে এসে সেঁজুতিকে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি তোমারও ছেলে মামুনী। আমারতো দুই দুইটা মা।
সেঁজুতি মুচকি হেঁসে পরম মমতায় সাদকে আগলে রেখে অনিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,, আমার ছেলে কিন্তু।
অনিলা প্রশস্ত হেসে মাথা নাড়ালো।
সাদের মোবাইল বেজে উঠতেই সরে এসে মোবাইল ফোন হাতে নিলো।
“ছোট মামু” নামটা দেখেই মোবাইল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।
_____
সেঁজুতি বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। এইদিকে সাদও বেরিয়ে পড়লো সবাইকে নিয়ে।
সাজি চাঁদকে কোলে নিয়ে সাদের পাশে বসলো। অনিলা রহমান আর রেনু পেছনের সিটে বসেছে।
চাঁদ আদো আদো বুলিতে সাজির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। সাজিও তাকে নিজের নাম শেখাতে উদ্যত।
সাদ কিছুক্ষণ পর পর আড় চোখে সাজির দিকে তাকিয়ে দেখছে। সকালের সেই ঘটনার পর থেকে লজ্জায় তাকালো না সাজি। বরাবরই নজর লুকাতে ব্যাস্ত।
অন্যদিকে চাঁদের সাথে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে সাদকে অবলোকন করছে সাজি।
সাদ ভাই নামক লোকটাকে জড়িয়ে ধরেছিলো ভেবেই লজ্জায় দুগাল গরম হয়ে যাচ্ছে।
ইস! কি লজ্জাজনক কাজটাই না করে ফেলেছে। নির্লজ্জের মতো কাজ করেছিস সাজি। তুই আসলেই নির্লজ্জ!
নিজেকে কটাক্ষ করে কয়েকটা গা*লি দিলো সাজি।
পরক্ষনেই চিন্তা করে দেখলো। সাদ ভাইয়ের প্রতিটা কথা প্রতিটা কাজে অদ্ভুত ভালো কাজ করছে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার।লাগাম ছাড়া অনূভুতি যাকে বলে। সেই লাগাম ছাড়া অনূভুতির আদলেই আজ সাদকে সবটা বলে দিয়েছে। সাজি বুঝতে পারে না সাদ নামক ব্যাক্তিটার উপস্থিতি কেন তার ছোট হৃৎপিণ্ড জুড়ে তো*লপাড় সৃষ্টি করে। কেন তাকে সবচেয়ে ভরসার মনে হয়। কই আগেতো এমন কিছুই মনে হয়নি! তাহলে এখন কেন?নিজেকে নিজে সুধালো সাজি।
উত্তরে একটা কথাই ভেসে এলো ” তুই তার প্রেমে পড়েছিস সাজি! সাদ ভাই নামক নরম গরম মানুষটার প্রেমে পড়েছিস।”
নিজের এহেন উত্তরে লাজুক হেসে জানালার কাচ ভেদ করে আসা রোদ্দুরে চোখ রাখলো সাজি।হুট করে চারপাশটা কেমন রঙিন লাগছে।মনে হচ্ছে এই ব্যাস্ত শহরে বসন্ত এসেছে। ইট পাথরের শহরে রঙিন বসন্ত হানা দিয়েছে।
———
সেঁজুতি হাসান আজ দুদিন হলো তার বাবার বাড়িতে আছে। নিশান তার ফুফির আগমনে বেজায় খুশি হয়েছিলো। কিন্তু সাজি আসেনি দেখে ঈষৎ রাগ দেখালো সেঁজুতিকে। সেঁজুতি দাঁতে দাঁত চেপে দম ধরে নিশানের কথা শুনেছিলো। সাদের কথায় চুপ করে আছে তা না হলে এতক্ষনে কিছু একটা করে বসতো। হোক সেটা নিজের ভাইয়ের ছেলে। তাতেও কিছু যায় আসতো না তার। আপাতত সবটা সাদের উপর ছেড়ে দিলো। তাইতো স্বাচ্ছন্দে দিন পার করছে।
এই দিকে বাবার সাথে অভিমান করেছে সাজি। অভিমান গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সকাল হতেই বাবার উপর অভিযোগে পাহাড় উঠিয়ে দিয়েছে। একটা অভিযোগ না বরং দুই বছরের জমিয়ে রাখা অভিযোগ।
জুবায়েরের মেয়ের করা অভিযোগে মুচকি হাসছে।তার মেয়ের প্রতিটা অভিযোগ সত্য। মেয়েটা তার বড় হলো না। ছোট্টটিই রয়ে গেলো। সেই ছোট্ট অভিমানী সাজি।
বাবা মেয়ের মান অভিমান দূর থেকে দাঁড়িয়ে শুনছে সাদ।কে বলবে মেয়েটা বড় হয়েছে! বাবার কাছে সে ছোট বাচ্চাই রয়ে গেছে। মুখ ফুলিয়ে অভিযোগের খাতা খুলে বসেছে। সেই অভিযোগ খাতায় দুই একটা অভিযোগ সাদকে নিয়েও আছে।
সাজির করা অভিযোগ শুনতেই ভ্রু কুঁচকালো সাদ।
নিজেকে কোনো ছবির ভিলেন থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না সাদের।ভিলেন বললে কম হবে! কোনো র*ক্ষস মনে হচ্ছে। ফেরিটেলে থাকা রা*ক্ষস! যে সব সময় রাজকুমারীকে ভয় দেখাতে আসে।