নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩৫
সকাল সকাল অনিলা রহমান ভাইয়ের বাড়ি এসে পৌঁছায়। সেঁজুতি অনিলাকে দেখে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে উঠে। অনিলা রহমান বুঝলো না কি এমন হয়েছে যে সেঁজুতি কাঁদছে। কালকেই তো সেঁজুতিকে কেমন উৎফুল্ল শুনাচ্ছিলো। তাহলে আজ কি হলো? সেঁজুতিকে শান্ত করে অনিলা সব কিছু হাতে হাতে গোছগাছ করতে শুরু করলো। অনিলার এমন ব্যাবহারে ফুঁসে উঠলো রেনু। রেনু জানে সাদ ভাইয়ের পছন্দ সম্পর্কে অনিলা অবগত। তবে কেন আজ তাকে এতো শান্ত দেখাচ্ছে? পুরো বাড়ির টেনশন যেন রেনু নিজের মাথায় নিয়ে রেখেছে। অনিলার ব্যবহার দেখে রেনু না চাওয়ার সত্বেও সব কাজ করছে।
এইদিকে সাজি মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। সেই কখন থেকে সাদের নাম্বারে কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি যেন কোনো প্রকার গুরুত্ব-ই দিচ্ছে না। সাজি চোখ মুছে পুনরায় ডায়েল করলো। কল বাজলো ঠিকই কিন্তু রিসিভ হলো না। লতা পাশে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল থেকে সাজিকে লুকিয়ে চুরিয়ে কাঁদতে দেখছে। তার পর থেকেই লতার মন খারাপ।যার কারনে স্কুলেও যায়নি। লতা সাজির চোখ মুছে দিয়ে দুগালে হাত রেখে বলল,, আপু তুমি একদম কাঁদবে না। ভাইয়া কোনো কাজে ব্যাস্ত তাই হয়তো কল রিসিভ করছে না। দেখবে সাদ ভাই ঠিক সময় মতো চলে আসবে। লতার কথা শুনে সাজি মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে বললো,, আসবে না লতা! সাদ ভাই আসবেনা। বাবাকে সাদ ভাই খুব সম্মান করে। বাবার কথা সাদ ভাই কখনো ফেলবে না। সেই জন্য আমার কল ধরছে না। আমি কি করবো এখন? বলনা লতা?বল!
সাজির কান্না দেখে লতা নিজেও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। লতা জানে না সাজিকে কি বলে শান্তনা দিবে। তাই মনে মনে একটাই প্রার্থনা সাদ ভাই যেন এসে সব ঠিক করে দেয়।
সাজি বুঝতে পারছে না কি করবে। সাদের কথা কাউকে বলাও যাবে না। যদি সবাই সাদকে আরো বেশি ভুল বুঝে? সাজি ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর এখনো ওবদি সাজি সাদের কোনো খোঁজ পায়নি। ফুপ্পিকেও কিছু জিজ্ঞেস করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে সাজির অবস্থা শো*চনীয়। শেষ বারের মত সাদের নম্বরে কল দেয় সাজি। এখনো কল বেজে চলছে।একটা সময় পর আপনা আপনি কল কেটে গেলো। বুক ভারী হয়ে হয়ে এলো সাজির, চিৎকার করে কাঁদতে না পারায় গলার দিকটা প্রচন্ড ব্যা*থা শুরু হলো। চোখের জল যেন আবারো গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়।সাজি আলতো হাতে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো । মোবাইল বন্ধ করে আলমিরাতে রেখে দিলো।রেখে লাভ কি! যাকে প্রয়োজন সেই তো এড়িয়ে যাচ্ছে। পেছনে ফিরে দেখার সময় নেই। যা ভাগ্যে আছে তাই হবে।অযথা চোখের জল কেন ফেলবো? সাজি লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে সংযত করলো।
আলমিরা থেকে খুঁজে ফুপ্পির দেওয়া সেই লাল রং-এর শাড়িটা বের করে রাখলো সাজি। সাথে সাদের দেওয়া চুড়ি, ঝুমকা,কাজল আর লিপস্টিক বের করে নিলো। লতা কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই সাজি বাথরুমে ঢুকে পড়লো। লতা বুঝতে পারছে না সাজি ঠিক কি করতে চাইছে!
রায়হান সাদের কেবিনের সামনে অনবরত পায়চারি করছে। টেনশনে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর পর পেট চেপে ধরছে রায়হান। অতিমাত্রায় টেনশনের ফলে পেট ব্যাথ্যা শুরু হয়ে গেছে। বাথরুমে গিয়েছে এই নিয়ে চারবার তাও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।রায়হান কাঁচের দরজা ঠেলে কেবিনের ভেতর উঁকি দেয়। সাদ কখনো ফাইল চেক করছে তো কখনো ল্যাপটপে টাইপ করছে। চেহারায় না অসুস্থতার ছাপ, না কোনো টেনশন। কি সুন্দর সুট বুট পরে তৈরি হয়ে এসেছে। কাল ওবদি যে ছেলেটা জ্বর মাথায় করে না হওয়া শ্বশুর বাড়িতে পা*গ*লে*র মতো ছুটে গেছে,আজ সে দিব্যি বসে আয়েস করে কাজ করছে। যেন কাজ তার প্রেমিকার থেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। রেগে লাল হয়ে গেছে রায়হান। দরজা থেকে মাথা সরিয়ে হিস হিস করে বলে উঠলো,, লোকে সত্যি বলে ,যার বিয়ে তার খবর নেই।পাড়া পড়সির ঘুম নেই। ওনার টেনশনে রাতে আমার ঘুম হয়নি।আর উনি?? লোকে দেখলে আমাকেই ছ্যা*কা খাওয়া বলবে। ধুর!!
সাদ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। দরজায় চিন্তিত মানব ছায়া স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । সাদ জানে এইটা কার ছায়া। সাদ সব গুলো ফাইল গুছিয়ে গলা ছেড়ে রায়হানকে ডেকে উঠলো। সাদের গলার আওয়াজ শুনে হন্তদন্ত হয়ে দরজা ঠেলে রায়হান প্রবেশ করলো। রায়হান যেন এতক্ষন এই অপেক্ষাতেই ছিলো। সাদের কেবিনে ঢুকে হড়বড়িয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সাদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললো,, অলরেডি লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে। আজ ভুনা খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে সাথে গুরুর মাংসের কালা ভুনা । তোমার জন্য সহ অর্ডার করে দাও। দুজন একসাথে লাঞ্চ করবো।
সাদের কথা শুনে রায়হান দাঁত মুখ খিচে হনহন করে রুমের বাইরে চলে গেল। রায়হানের হাতে দৈবিক কোনো ক্ষমতা থাকলে এক্ষুনি সাদের এই সমস্যা ওয়ালা মস্তিষ্ক ঠিক করে দিতো। তার প্রেমিকাকে প্রভাষক নিয়ে যাচ্ছে আর সে এখন কালা ভুনা খাওয়ার কথা বলছে? ওই প্রভাষকের সাথে একবার সাজি ম্যামের বিয়ে হয়ে যাক তখন বুঝবে। কলিজার কালা ভুনা কাকে বলে।
জুবায়ের বাড়ির দরজা খুলে বার বার মোবাইলে সময় দেখছে। পাত্র পক্ষের লোকেরা বলেছে আর মাত্র পাঁচ মিনিট লাগবে। কিন্তু পাঁচ মিনিট গিয়ে পনেরো মিনিট হলো তাদের কোনো খোঁজ নেই। জুবায়ের পায়চারি করছে। সেঁজুতি দূর থেকে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, পনেরো মিনিট কেন! প্রয়োজনে পনেরো বছর পর আসুক। ততদিনে সাজিকে সাদের সাথে ভাগিয়ে দিবো। একেবারে নাতিনাতনি সহ ঘরে তুলবো।
রেনু কান পেতে সেঁজুতির কথা গুলো শুনে নিয়ে বললো,, আগে বললে আমি একটা ব্যাবস্থা করে দিতাম। বস্তিতে আমার অনেক পরিচিত আছে।যারা গাড়ির চাকা পাংচার করে মানুষের টাকা পয়সা লুট করে। আমি বললে লুট করার পাশাপাশি ধরে বেঁধে দুইদিন আটকেও রাখতো।
রেনুর কৌতুহলী, উদ্বিগ্ন গলায় এমন কথা শুনে সেঁজুতি বললো,, আগে বলার জন্য সু্যোগ পেয়েছি? এক রাতেই তো পাশা উল্টে গেলো। তোর এতো ক্ষমতা আগে জানলে জুবায়েরকে কি*ড*ন্যাপ করিয়ে ছেলে মেয়ে দুটোর বিয়ে পড়িয়ে দিতাম।
রেনু হা হুতাশ করে বললো,, আমারই ভুল।এইবার থেকে আমার সব দোষ, গুন, ক্ষমতার কথা বলে রাখবো। কোনো না কোনো দিনতো কাজে আসবেই।
খানিকটা দূরে দাড়িয়ে অনিলা রহমান ভাইয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকছে জুবায়েরকে। কেন জুবায়ের সবটা দেখেও না দেখার ভান করছে? কেন বুঝেও না বোঝার ভান ধরছে? জুবায়ের ভালো করেই জানে সাদ-সাজি একজন আরেকজনকে পছন্দ করে। তাহলে কি জন্য এতোটা ডেস্পারেট সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? এইসব প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না অনিলা। শুধু দৃষ্টি স্থির করে ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে রইল।
লতা সাজির শাড়ির কুচি ঠিক করে দিচ্ছে। সাজি খুব মনোযোগ দিয়ে সেই দিকে তাকিয়ে আছে। মনে পড়ে গেল নিরার জন্মদিনের সেই রোমাঞ্চকর রাত্রির কথা। সাজির জীবনের সুন্দরতম রাত্রি। প্রথম শাড়ি পরা আর প্রথম ভালোবাসা ব্যাক্ত করার মতো ভ’য়ং’ক’র সুন্দরতম রাত্রি। নরম গরম মানুষটার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে অনূভুতি ব্যাক্ত করার রাত্রি।
লতা শাড়ির কুচি ঠিক করে উঠে দাড়ালো। শাড়ির আঁচলে হাত রাখতেই চমকে উঠলো সাজি।সাদ ভাই নামক মানুষটার জগতে বিভোর সাজি লতার স্পর্শে বাস্তবে ফিরে এলো।
লতা সাজির হাত ধরে বললো,, তুমি ঠিক আছো আপু? সাজি মুচকি হেসে লতার দিকে তাকিয়ে বলল,, হ্যা ঠিক আছি। তুই বরং শাড়ির আঁচলে সেফটিপিন আটকে দে।
সাজির কথা অনুযায়ী লতা শাড়ির আঁচলে সেফটিপিন আটকে দিলো। সাজি আয়নার সামনে বসে চোখে গাড় কাজল দিয়ে নিলো। কানে সাদের দেওয়া লাল ঝুমকা জোড়া পরে নিলো। হাতে তার দেওয়া সেই লাল কাঁচের চুড়ি। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়ে একপাশে সিঁথি কেটে চুল ছেড়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো সাজি।
লতা মুগ্ধ নয়নে সাজির দিকে তাকিয়ে বলল, মাশাআল্লাহ আপু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। যে দেখবে সে আর চোখ ফেরাতে পারবে না।
সাজির কাজল কালো চোখ জোড়া নোনা জলে ভিজে উঠলো। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে হাসলো সাজি। টিস্যু দিয়ে খুব সাবধানে চোখের পানি মুছে মুচকি হেসে বলল,, সুন্দর তো লাগবেই। এই সাজ সাদ ভাইয়ের খুব পছন্দ। তাছাড়া চুড়ি, ঝুমকো,কাজল, লিপস্টিক সব কিছুই তার দেওয়া। সুন্দর তো লাগবেই।
লতা অবাক চোখে সাজির দিকে তাকিয়ে আছে। বয়স তার সাজি আপু থেকে কম হলেও ভালোবাসা শব্দটার সাথে অনেক আগ থেকেই পরিচিত। স্কুলের গন্ডিতে এই ভালোবাসা শব্দটা লক্ষ-কোটি বার শুনেছে লতা। বান্ধবীদের দেখেছে ভালোবাসায় পড়তে। বিচ্ছেদের কারনে কাঁদতেও দেখেছে। আবার সেই ভালোবাসার টানে পরিবার পরিজনদের ছেড়ে পালাতেও দেখেছে। কিন্তু আজকের মতো এমন ভ’য়ং’ক’র পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেনি লতা। লতার পুরো শরীর শিউরে উঠছে। সাজির কষ্টটা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে না পারলেও খানিকটা ঠিকই বুঝছে।
সাদা রঙের গাড়িটা গেইটের সামনে এসে হর্ন বাজানোর সাথে সাথে দারোয়ান গেইট খুলে দিলো।
জুবায়ের মুচকি হেসে স্থির হয়ে দাঁড়ায়।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত)😁নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৩৬
গাড়ি দরজার সামনে থামতেই নেমে পড়ে রিসাদ। মা বাবার জন্য দরজা খুলে দাড়ায় সে। জুবায়ের তাদেরকে এনে বাড়ির ভেতরে বসতে দেয়।
রিসাদের মা-বাবা বিনয়ের সাথে জুবায়ের আর সেঁজুতির সাথে কুশলাদি বিনিময় করছেন। সেঁজুতির মনে খোব থাকায় তাদের ভালো ব্যাবহারও যেন সুচের মতো ফু*টছে।তাদের এমন ব্যাবহার দেখে সেঁজুতি মনে মনে হিস হিসিয়ে বলে উঠলো,, মুখে মধু দিয়ে কথা বললেও মেয়ে দিবো না। সেঁজুতি তার সিদ্ধান্তে অটল, শুধু সুযোগের অপেক্ষায়।সুযোগ পেলে পাত্র পক্ষকে বিতাড়িত করতে দেরি করবে না।
জুবায়ের অনিলা রহমানকে ডেকে বড় বোন বলে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। এই ব্যাপরটা রিসাদের মা -বাবার খুব পছন্দ হয়।
রিসাদ তার মা বাবার পাশে বসে তাদের কথা শুনছে। মাঝে মধ্যে জুবায়ের রিসাদকে প্রশ্ন করছে যার উত্তর রিসাদ খুব ভদ্রতার সাথে দিচ্ছে। অনিলা একপলক রিসাদের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।এই জায়গায় তার ছেলে হলে কি খুব বেশি খারাপ হতো? ভেবে পায়না অনিলা। আক্ষেপের কারনে অনিলার মুখায়ব বিষাদ ফুটে উঠেছে। এইদিকে সাদও কল ধরছে না।
লতা আর রেনু কিচেন থেকে উঁকি দিয়ে দেখছে। রেনু রিসাদকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বললো,, দেখ লতা দেখ! এই বেটাও কম কিসে? কি সুন্দর দেখতে!একদম হিরোর মত। জানি খানিকটা অন্ধ তাই চশমা দিয়েছে। কিন্তু দেখ চশমাতেই হেব্বি লাগছে।
লতা রেনুর কথায় সহমত পোষণ করে বললো, ঠিক বলেছো আপু। সাজি আপাকে যারা পছন্দ করে তারা সুন্দরই হয়।
রেনু চোখ মুখ কুঁচকে বললো,, ছেহ্!! এইটা তেমন-ও সুন্দর না। যাই বলিস এর চাইতে আমাদের সাদ ভাই বেশি বেশি সুন্দর,লম্বা ,চওড়া,শিক্ষিত, সুন্দর ব্যবহার । এই বেটাও ঠিকঠাক আছে। তারপরেও সাজি আপাকে ভালো তো আর বাসে না। শুধু পছন্দ করে। সাদ ভাই সাজি আপার জন্য একদম ঠিক। একশোতে একশো। লতা মাথা নেড়ে বললো,, হ্যা ঠিক! সাজি আপাও সাদ ভাইকে খুব বেশি ভালোবাসে। ওদের বিয়ে হওয়া উচিৎ।
লতার কথা শুনে রেনু চিন্তার সাগরে ডুব দিলো। কি করে বিয়ে ভাঙা যায় সেই ছপকষছে।
অনিলা ইশারায় সেঁজুতিকে নাস্তার কথা বলায়, সেঁজুতি বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। সেঁজুতির মুখের অবস্থা দেখে অনিলার বুঝতে বাকি নেই,সেঁজুতি এদের সয্য করতে পারছে না । সেঁজুতির বিশ্বাস নেই, নাস্তার মধ্যে কোনো না কোনো গন্ডোগোল ঠিকই পাকাবে। তাই অনিলা নিজেও উঠে পড়ে।
নাস্তা দেওয়া শেষ হতেই জুবায়ের সেঁজুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, যাও সাজিকে নিয়ে এসো।
জুবায়েরের কথা শেষ হওয়ার আগে লতা আর রেনু সাজিকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো। সেঁজুতি সেই দিকে ইশারা করতে জুবায়ের মুচকি হেসে রিসাদের মা-বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,, ওই তো আমার মেয়ে।
রিসাদ মুগ্ধ হয়ে সাজির দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম সাজিকে শাড়ি পরা দেখছে। রিসাদের কল্পনার চাইতেও বেশী সুন্দর লাগছে সাজিকে।এতো সৌন্দর্যের মাঝেও কিছু একটা নেই নেই ভাব।তাও রিসাদ যেন চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। রিসাদের মা-বাবা সাজির দিকে তাকানোর আগে নিজের ছেলের দিকে তাকায়। রিসাদের পলকহীন মুগ্ধ দৃষ্টি, ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাঁসি দেখে রিসাদের মা-বাবা সাজির দিকে তাকায়। রিসাদের মা রিসাদের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ছেলের তো খুব পছন্দ দেখছি। অবশ্য মেয়েটা দেখতেই এমন পছন্দ না হয়ে উপায় নেই। রিসাদের বাবা মুচকি হেসে বলল,, একদম ঠিক বলেছো। তাহলে আজকে কথা পাকা করে যাবো।
অনিলা রহমান সাজির পরনে লাল শাড়িটা দেখে চমকে উঠলো। অবাকতার নজরে সাজিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। দু দিন আগেই সাদ জ্বরের ঘোরে বলেছিলো। ওইদিন তার কথা অনুযায়ী সাজঁবাতিকে শাড়ির সাথে ম্যাচ করে চুড়ি,ঝুমকো দিয়েছিলো। তাহলে কি সাজি আজ সেই গুলোই পরেছে? পরক্ষনেই অনিলা সাজির মুখের দিকে তাকিয়ে মিইয়ে গেল। সাজির দৃষ্টি স্থির,না ঠোঁটে হাসি ,না চেহারায় কোনো ভাবাবেগ। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা ঠিক কতটা কষ্ট বুকে চে*পে নিজেকে সাজিয়েছে। অনিলার বুকের ভেতরটা হুঁ হুঁ করে উঠলো। ছেলের উপর রাগ অভিমান বাড়তে শুরু করলো।
সেঁজুতি সাজির দিকে তাকিয়ে ফুঁসে উঠে। এতো সেজে গুজে আসার কি আছে? এইবার যদি এই বাঁদরের দলের পছন্দ হয়ে যায়? ঘরে কি পুরোনো কাপড় চোপড় ছিলো না?এই মেয়ে এতো সুন্দর করে সেজেছে কেন? সেঁজুতি মেয়ের সাজ দেখলো ঠিকই। কিন্তু একটু ভালো করে খেয়াল করলে মেয়ের মলিন মুখটা দেখতে পেতো। সেঁজুতির সেইসব দিকে খেয়াল থাকবেই বা কি করে ? সেতো বিয়ে ভাংতে উঠে পড়ে লেগেছে।
রেনু আর লতা সাজিকে নিয়ে নিচে নামে। অনিলা সাজিকে রিসাদের পাশে বসাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাত ধরে। সাজি থেমে অনিলার হাত শক্ত করে চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় সুধালো,, ফুপ্পি সাদ ভাই কোথায়? উত্তরে অনিলা রহমান মলিন হেসে ধীর গলায় বলল,, যে নিজ থেকেই নিখোঁজ হয়,তার খোঁজ করতে নেই মা।
অনিলার কথার মাঝে রাগ অভিমান দুটোই স্পষ্ট। সাজি যা বুঝার বুঝে গেছে।টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে আরেক কদম রিসাদের দিকে বাড়ালো সাজি। হয়তো আজ সত্যি সম্পর্কের ইতি টানতে হবে।ইতি মধ্যে গলা ধরে এসেছে সাজির। চোখের জল ভীড় জমানোর আগে ঘন ঘন পলক ফেলে নিজেকে সামলে নিলো।
অনিলা রহমান সাজিকে রিসাদের পাশে বসাতে যাবে এমন সময় পর পর তিনটা গাড়ি এসে থামলো বাড়ির দরজায়। এসে খান্ত হয়নি একসাথে তিনটা গাড়ি হর্ণ বেজে চলছে। জুবায়েরের ছাড়া সবাই কানে হাত চেপে দরজার দিকে তাকায়। জুবায়ের বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, Responsible Man!
দরজা হাট করে খোলা থাকায় বাইরের পরিস্থিতি দৃশ্যমান। সাজি দরজার সামনে দাঁড়ানো গাড়িটা দেখে পুলোকিত হলো। এই গাড়িযে তার বড্ডো বেশি চেনা। মূহুর্তে সকল রাগ অভিমান ভুলে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো সাজি। রিসাদ সাজির মুখের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে। একটু আগেও মেয়েটার চোখ মুখ স্থির ছিল। চাঞ্চল্যতা যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখন? রিসাদ ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে দরজার দিকে তাকায়। হয়তো আজও ভুল সময়ে ভুল মানুষের কাছে এসেছে।
অনিলা রহমান অবাক হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলে তার সেজে গুজে পুরো বারাত নিয়ে আসবে কল্পনাতেও ছিলো না। সেঁজুতি মুচকি হেসে রেনুকে ইশারা করে সাদের গাড়ি দেখায়। রেনু খুশিতে লতার গলায় ঝুলে যাওয়ার জোগাড়। জুবায়ের সবার মুখের অবস্থা দেখে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে। বুঝতে বাকি নেই সবাই জামাই হিসেবে সাদকে পছন্দ করে রেখেছে।
সাদ গাড়ি থেকে নেমে কোটের বোতাম আটকে অন্য দুটো গাড়ির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে। পরের গাড়িটা থেকে রায়হান নেমে সাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। সাদ রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ড্রাইভারদের বলো, জিনিসপত্র সব গুলো যেন ভেতরে নিয়ে আসে।
রায়হান হাত দিয়ে ইশারা করে বের হতে বলে সাদের সাথে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো। সাদ মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে এটেটিউডের সাথে দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। রায়হানো একটা ফাইল বুকে জড়িয়ে সাদের পেছন পেছন ছুটলো।
সাদ সবাইকে সালাম দিয়ে সাজির দিকে তাকায়। পা থেকে মাথা ওবদি একবার স্ক্যান করে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলে উঠলো,, তোকে তো আমি পরে দেখছি। সেজে গুজে এই ব*দ*কে দেখানো তোর ছুটাচ্চি।
সাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে সাজি যা বুঝার বুঝে গেছে।আজ লোকটা ভীষণ ক্ষেপেছে।তাতে আমার কি!দোষ আমার নয় তাই ভয়ের প্রশ্নই আসে না। সাজি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ভ্রু কুঁচকে সাদের দিকে তাকালো।
সাদ রেনুর দিকে তাকিয়ে বলল,, মেয়ে দেখা শেষ হলে কি করতে হয় রেনু?
রেনু ঝটপট উত্তর,, মেয়েকে রুমে রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ছেলের সাথে একা কথা বলতে দিতে হয়।
সাদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,, তাহলে এখন কি করতে হবে? রেনু দাঁত কেলিয়ে বললো, রুমে নিয়ে যেতে হবে।
সাদ চোখ ছোট ছোট করে সাজির দিকে তাকিয়ে রেনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,, তাহলে এতক্ষণ কিসের অপেক্ষায় আছিস?মেয়ে দেখা হয়ে গেছে।
রেনু মাথা নেড়ে সাজির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। সাদ ভাই বলেছে মানে সেই কথা শুনতেই হবে।
একেতো সাদের এমন আচরন দ্বিতীয়ত রেনুর টানাহেঁচড়া দুইয়ে মিলে সাজির মাথা গরম হয়ে গেল। সাজি রেনুর হাত ঝাড়া দিয়ে নিজে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।
সাদ সাজির দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে জুবায়েরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,, এইবার মনে হয় আর আপত্তি থাকবে না। থাকার কথাও না। ঘটা করে এসেছি দায়িত্ব নিতে। অবশ্য আমার দায়িত্ব জ্ঞান সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট ধারণা আছে। এখন মানা করার প্রশ্নই আসে না। যদি আরো দায়িত্বশীলতার আশা করে থাকেন তাহলে আপনার মেয়েকে তু*লে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় দেখছি না।
সেঁজুতি ঠোঁট এলিয়ে হেসে অনিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,তুলে নিয়ে যাক। অনিলা সেঁজুতির এহেন কথায় হকচকিয়ে গেল। পাশ থেকে রেনু অনিলাকে খোঁচা দিয়ে বললো,, আরে খালাম্মা বুঝেন না কেন! পছন্দের মেয়ে জামাই পেয়ে এই দশা। অনিলা এতটুকু জানে সেঁজুতি সাদকে ছেলে হিসেবে খুব বেশি পছন্দ করে। কিন্তু মেয়ে জামাই ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠলো না।
জুবায়ের নিরেট স্বরে বলল,, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছ নাকি গু*ন্ডা*মি করছো? জুবায়েরের কথায় সাদ মাথা কাত করে বাঁকা হেসে বলল,,কি করবো বলুন! ভালো কথা ,ভদ্রতা দুটোই আপনার পছন্দ হয়নি। আপনি নিজেই চেয়েছিলেন আমার এন্ট্রি এই ভাবে হোক। ঠিক যেমনটা আপনার শ্বশুর বাড়িতে আপনার হয়েছিলো! তাও শুধু মাত্র আপনার শ্বশুরের সামনে।
সাদের কথায় হকচকিয়ে গেল জুবায়ের।এতো বছরের লুকিয়ে রাখা কথা সাদ নিমেষেই ফাঁস করে দিচ্ছে। সেঁজুতি আর অনিলা বুঝতে না পেরে দুজন দুজনের দিকে তাকালো।
সাদ পুনরায় বলে উঠলো,তাইতো কাল রাতে আমার সাথে এমন ব্যাবহার করেছেন। irresponsible ছেলে আমি নই তা আপনি ভালো করেই জানেন।কাল রাতের প্রত্যেকটা কথার মর্মার্থ আমি বুঝতে পেরেছি বলে বিনাবাক্যে প্রস্থান করেছি। তা না হলে মূর্খের মতো আপনার সব কথার উত্তর ঠিক ততটাই কঠিন করে দিতাম যতটা কঠিন করে দিলে আপনার গায়ে লাগতো। আমি বুঝিতে পেরেছি আপনি চেয়েছেন আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আপনার সামনে আসি। আবার এও চেয়েছেন আমি যেন সহজে আপনার মেয়েকে না পাই। আপনি বিশ্বাস করেন যা মানুষ সহজে পায় তার মূল্য দেয় কম। তাইতো এতো কিছু করছেন।কি তাইতো?
~ হারানোর ভয় হয়েছে তোমার?
জুবায়েরের করা প্রশ্নে সাদ মলিন হেসে বললো,, ক্ষানিকের জন্য হলেও পরক্ষনে সামলে নিয়েছি। এইটাকে হারানোর ভয় বলে না। যা বিগত একবছর ধরে ফিল করেছি তাকে হারানোর ভয় বলে। আজীবনের জন্য দেখতে না পাওয়ার ভয় এই ক্ষানিকের ভয়ের কাছে কিছুই না।
জুবায়ের মুচকি হেসে বলে,,আজিবন কেউ কাউকে সুখে রাখতে পারে না সাদ। না পারে মানুষের মুখে হাঁসি ফোটাতে। জিবন কোনো ফেন্টাসি কিংবা ফেরিটেল নয়। বাস্তবতায় সুখ-দুঃখ বিধ্যমান। আমি চাই তুমি ইকুয়েলি সেই সুখ দুঃখের দায়িত্ব নাও। কখনো হাসির কারন হও,কখনো কষ্টের কারন হয়েও আগলে নাও। কখনো জিতে যাও, কখনো নিজে হেরে গিয়ে তাকে জিতিয়ে দাও। প্রয়োজন নেই তাকে সুখি রাখতে গিয়ে নিজেকে বিলিন করার। দরকার হলে নিজের ঘাড়ের বোঝা তাকেও কিছুটা বইতে দাও। আমি চাইনা শুধু তুমি তাকে সুখি করার দায়িত্ব নাও আমি চাই যেন সেও তোমার সুখের দায়িত্ব নেয়। তোমাকে হারানোর ভয় যেন তাকেও কাবু করে। দুজন দুজনকে সুখি রাখার প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত ডেস্পারেটলি নাও। তবেই-না সংসার হবে। কি পারবে তো ?
জুবায়েরের কথা শুনে সেঁজুতি অবাক নয়নে তাকায়। অনিলা যেন নিজে চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। রেনু আর লতা দুইজনের মুখে হাসি।
সাদ মাথা নেড়ে বললো, ইনশাআল্লাহ পারবো। দায়িত্ব দিয়ে দেখুন।
রিসাদ সাদ আর জুবায়েরের মধ্যকার কথার কিছুই বুঝলো না। সাদের কথা শুনে রিসাদের বাবা দাঁড়িয়ে বললো,, মিষ্টার জুবায়ের কি হচ্ছে এইখানে?
জুবায়ের সাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো।যার মানে, উত্তর দাও।
জুবায়েরের ইশারা বুঝতে পেরে সাদ মুচকি হেসে রিসাদের মা-বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,, এইভাবে এইখানে আসার জন্য আমি খুবই দুঃখিত! আসলে এইখানে আপনারা যাকে দেখতে এসেছেন সে অন্য কাউকে পছন্দ করে।
রিসাদ পকেটে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বললো,, হোয়াট ডু ইউ মিন?
সাদ মুচকি হেসে বলল,, আই মিন টু সে, মেয়ে অলরেডি কমিটেড। এইখানে শুধু শুধু টাইম ওয়েষ্ট হচ্ছে।
রিসাদের মা জুবায়েরকে উদ্দেশ্য করে বলল,, আগে বলে দিতেন ভাই।
সাদ বললো,, উনি নিজেও জানতো না।
রিসাদের বাবা জুবায়েরের কাঁধে হাত রেখে বলল,, আমার মনে হয় আমাদের মা-বাবাদের উচিত সন্তানের খুশির ব্যাপার গুলোকে প্রধান্য দেওয়া। আমি চাই আপনার মেয়ে যাকে পছন্দ করে তার সাথেই বিয়ে হোক। তাদের অধিকার আছে জীবনের সকল সুখ কুড়িয়ে নেওয়ার। আজ তাহলে চলি।
জুবায়ের রিসাদের বাবার হাত ধরে মলিন হেসে বলল,, আমি দুঃখিত ভাই।
রিসাদের মা এগিয়ে এসে বলল,, ইটস্ ওকে। একটা কথা বলি,, কখনো ছেলে মেয়ের সম্মতি ছাড়া তাদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিবেন না। এমন করে আমি আমার একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছি।
রিসাদ সাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,, উনি জানতো সবটা।তাইতো অবাক হয়নি। শুধু তোমাকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছে। তুমি ওনার এক্সপেক্টেশন ফুলফিল করেছো।বাইদা ওয়ে নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা।
সাদ মুচকি হেসে বলল,, ধন্যবাদ সবটা এতোটা স্বভাবিক ভাবে নেওয়ার জন্য।আর স্যরি কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বি ভেবেছিলাম তাই।
রিসাদ মুচকি হেসে বলল,, আমি হয়তো দেরিতে এসেছি । তা না হলে ঠিকই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতাম। এখন পুরো জিবন আফসোস করতে হবে কেন দেরী করলাম।
রিসাদ তার মা বাবাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। অনিলা ছেলের সামনে এসে কান মুলে ধরে বললো,, বড় হয়ে গেছিস না? সকাল থেকে যে আমার জান যায় যায় অবস্থা তার বেলায়? তোর বিয়ে করা ছুটাচ্চি আমি।তোর কান আজ আমি ছিড়ে ফেলবো!
সাদ ব্যাথ্যায় চোখ মুখ কুঁচকে বললো,, কি করছো মা ছাড়ো। এইটা তোমার ভাইয়ের বাড়ি না। সবাই দেখছে তুমি তোমার ছেলের না হওয়া শ্বশুর বাড়িতে এসে ছেলের কান মুলছো।
সেঁজুতি দৌড়ে এসে অনিলা থেকে সাদকে ছাড়িয়ে নিলো। কি করছেন কি আপা?কান ছিড়ে গেলে আপনার ভাই আরেক দোষ ধরে বসবে।
জুবায়ের সেঁজুতির কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রেনু আর লতা সাদের দুইপাশে দাঁড়িয়ে বললো,, মেয়ের সাথে ছেলেকে আলাদা কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না কেন?
রায়হান হাতের ফাইলটা জুবায়েরের হাতে দিয়ে বলল, দেখুন ছেলে যোগ্য কিনা? সব কাজ পত্র নিয়ে এসেছি। এখন ছেলেকে যেতে দিন। ছেলে মেয়ে দুইজন দুইজনকে পছন্দ করুক । পছন্দ হলে এই সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
জুবায়ের রায়হানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, একটু বেশি বেশি হচ্ছে না রায়হান?
রায়হান বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,, আপনার বেশি তাড়া। তাইতো দেশের সংসারের পাট চুকিয়ে বিদেশীনির কাছে যেতে চাইছেন। এখন মনে হচ্ছে আমরা বেশি বেশি করছি।
জুবায়ের এতক্ষণ সেঁজুতির দিকে নজর না দিলেও এখন ঠিকই তাকালো। সেঁজুতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বলল, তার মানে এতোদিন আমি যা ভেবেছিলাম সব সত্যি?
জুবায়ের পড়েছে মহা বিপদে।সাদ জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,, মামুনীকে একবার জানানো উচিৎ ছিল মামা। আফটার অল সে প্রথম বউ।
রায়হান সাদের কথা শুনে চাঁপা হেসে ফাইলপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। অনিলা ছেলের বাহুতে চা*টি মে*রে বললো,, কি হচ্ছে সাদ?কেন শুধু শুধু তোর মামুনীকে ক্ষেপাচ্ছিস?
সাদ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো,, তোমার ভাইয়ের সাথে হিসেব বাকি ছিল মা। এখন বরাবর হয়েছে।
অনিলা ভাই-ভাইয়ের বউয়ের ঝগড়া এড়াতে রেনু -লতা দুটোকে নিয়ে কিচেনের দিকে ছুটলো। এইখানে বেশিক্ষণ থাকলে দুটোতে মিলে বিচার শালা বসাবে। যেখানে অনিলাকে বিচারপতি, উকিল ও সাক্ষী তিনজনের চরিত্রে থাকতে হবে। তার চাইতে ঘটনা স্থল থেকে পালানোই মঙ্গল বলে মনে করেন অনিলা।
সাজির রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদ।
ভিড়ানো দরজায় নক করলো অনেকক্ষণ হয়েছে। কিন্তু যার রুম সে পারমিশন দিচ্ছে না। তাই পারমিশনের অপেক্ষা আছে সাদ।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
(আজকের পর্বটা ভীষণ খাপছাড়া হয়েছে। ঠিক যে ভাবে সাজাতে চেয়েছি সে ভাবে হয়ে ওঠেনি😥।আর যারা হাতের সমস্যার কথা জানতে চেয়েছেন তাদের জন্য বলছি, বেশিক্ষণ টাইপ করতে পারিনা। কোনোদিন বেশিক্ষণ টাইপ করলে পরের দুদিন হাতে ব্যাথ্যার জন্য মোবাইল হাতে নিতে পারি না। তাই অনেক সময় গল্প দেওয়া হয়ে ওঠে না। দুঃখিত অপেক্ষা করানোর জন্য। )