#দূরে নয় কাছেই আছি!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্বঃষষ্ট পর্ব
–” আ্যাহহ, বললেই হলো! তুই আমার সাথে যাবি। আমি আর তুই মিলে বরশি দিয়ে মাছ ধরবো। ওতে তোর জামাইয়ের কি?”
শায়োরী কোনভাবেই বুঝাতে পারছেনা সেখানে আবির থাকবে। রাস্তার পাশে বলে আবির প্রায় সময় ওখানে বসে থাকে। দেখা হলেই তো তাকে আবার জ্বালাতে শুরু করবে। আর এখন তো আরাফ ও আছে তাকে কিভাবে বুঝাবে?” আরাফ এমনিতেই রেগে আছে ওকে দেখলে তো আরও রেগে যাবে।
______________________________________
বিকেল বেলায় পুকুর পাড়ে বসে আছে শায়োরী, সিমার জোরাজুরির পর সে শর্ত দিয়েছে কেউ না থাকলে সে পুকুর পাড়ে যাবে, থাকা অবস্থায় সে যাবে না। সিমা তাই একবার পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখে এসেছে কেউ আছে কিনা। কেউ নেই বিধায় দুজনে মিলে পুকুরের পাড়ে গিয়েছে মাছ ধরতে। বরশিতে টোপ দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর একটা মাছ পেলো শায়োরী। সিমা ও তার মত করে আরেকটা মাছ ধরে ফেলল। দুজন বোন যেন প্রতিযোগিতা শুরু করেছে কে কতগুলো মাছ ধরবে,
শায়োরীর মনে পরেগেল। মা যখন তাকে কিছুই খেতে দিত না রাগারাগি করতো। তখন সে পুকুর পাড়ে এরকম করে বরশি দিয়ে মাছ ধরতো, সারাবেলা সে বরশি দিয়ে মাছ ধরে যেত। সন্ধ্যে বেলায় বাবা বাড়িতে ফিরলে, সে বাড়িতে চলে যেত, তখন ও ছোট্ট সিমা দৌড়ে চলে আসতো তার কাছে। সৎ বোন হলেও সিমা বরাবরই তাকে নিজের বোনই ভেবেছে, শায়োরী ও তাকে বুকে আগলে রেখেছে, মা আলাদা হলেও রক্ত তো একই বন্ধন ও এক তাদের। সিমা আর শায়োরী মাছ ধরতে ধরতে কত অব্যক্ত কথা যে বলছে দুজনের মধ্যে হুশই যেন নেই কে আসছে, আর দেখছে।
আবির ঢাকা থাকা অবস্থায় কেউ একজন বলেছে শায়োরী তার স্বামীকে নিয়ে গ্রামে এসেছে বেড়াতে।
শুনেই সে কাল রাতেই এসেছে গ্রামে, শায়োরীকে একবার দেখতে সে শায়োরীর বাড়ির সামনে এসেছে কয়েকবার। কিন্তু শায়োরী আসেনি, পুকুর পাড়ে এসে দেখল শায়োরী পুকুরের পাড়ে বসে মাছ ধরছে।
কি আনন্দ তার চোখে আর মুখ, একটা উজ্জ্বলতা যেন পুরো মুখ জুড়ে রয়েছে। স্বামীর বাড়িতে গিয়েই মেয়েটার সুখ ধরা দিয়েছে? আবির সামনে এগিয়ে যেতেই দেখল
একটা ছেলে শায়োরীর পাশে বসে পরল। আবির ও দিধায় পরেগেল সামনে এগুবে না ওখানেই দাড়াবে।
ঘুম থেকে উঠে শায়োরীকে না পেয়ে খুজতে গেলেই শাশুড়ি মায়ের কাছে প্রশ্ন করতেই তিনি বলে উঠলেন –
বরশি দিয়ে তার দুই মেয়ের মাছ ধরার শখ হয়েছে।
আরাফ ও চলে গেলো সেখানে। শায়োরীর পাশে ধপ করে বসে পরল সে।
—” দুজন একা একা মাছ ধরতে চলে এলেন, আমাকে না জানিয়ে এই কাজটা কি ঠিক?”
–” আপনি ঘুমাচ্ছিলেন, শুধু,শুধু জাগিয়ে দিয়ে কি লাভ?”
–“আজ সারারাত যদি জাগিয়ে রাখি আপনাকে?” কথাটা সিমার অগোচরে শায়োরীর কানে কানে বলল আরাফ, চমকে উঠলো শায়োরী আড়চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে বরশিটা আবার ঠিক করে ধরল। আরাফ আরেকটু ঘেষে বসল শায়োরীর তারপর বলল-
–” আমি ও মাছ ধরবো দিন,” শায়োরী বিনা বাক্যে তার হাতে বরশিটা ধরিয়ে দিতে হাতে নিয়ে নিল।
আবির এরমধ্যেই বন্ধু বান্ধব নিয়ে হাজির।
–” কি ব্যাপার শায়োরী নাকি?কতদিন পর দেখলাম তোকে, সঙ্গে কে জামাই নাকি?”.
–” জ্বী সেলিম ভাই,”
–” আসসালামু আলাইকুম ভাই ভালো আছেন?”
–” ওলাইকুম আসসালাম, ভাই শায়োরীর একটা বিচার করুন তো ও বিয়ে করেছে আমাদের একটু জানায়নি।”
আবির সেলিমের কথার পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলো –
–” ভাই সামলে মাছ কিন্তু টোপের জিনিস নিয়ে পালিয়ে যায়, যায় কি যেকোন সময় চলেযেতে পারে।”
আরাফ এই কথাটা শুনে পিছন ফিরে দেখল আবির ও এখানে দাড়িয়ে আছে। আরাফ শায়োরীর দিকে একবার তাকিয়ে আবিরের দিকে ফিরে হেসে বলে উঠলো –
–” আমি মাছ ধরিনি বলে যে টোপের মাছ হাত ছাড়া করবো তেমন না, একবার না পারলে বারবার চেষ্টা করবো। মাছ শিকার করতে শিকারি আমাকে হতে হবে না।” আবির এই কথার মানে কিছু না বুঝলেও শায়োরী ঠিকই বুঝেছে আরাফ কেন এই কথা বলল।
–” ভাই মাছটা কিন্তু চলে,..
আরাফ বরশি ধরে উচু করতেই একটা কৈ মাছ উঠে এসেছে বরশিতে। আরাফ আবিরের দিকে ফিরে বলল-
–“চলে যায়নি, টোপেই আটকে গেছে, আমার মাছ আমি পেয়েগেছি।”
শায়োরী সিমাকে নিয়ে উঠে দাড়ালো, আর বলল-
–” মাছ ধরা হলে চল, বাড়িতে অনেক কাজ আছে।”
বলেই আরাফকে ও সঙ্গে করে নিয়ে চলেগেল।
আর আবির চেয়ে আছে দুজনের দিকে, আরাফের জায়গায় সে থাকলে কি খুব সমস্যা হতো?
সে ও তো শায়োরীকে ভালোবাসত, কেন সে তৃতীয় পক্ষ হয়েই শায়োরীর জীবনে রয়েগেল? আবির না দাড়িয়ে চলেগেল সেখান থেকে।
___________________________________
রাত ১০ টা বাজছে, আরাফ বিছানায় বসে বসে মোবাইলে গেম খেলছে। শায়োরীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে তার অবস্থা খারাপ। কিন্তু মেয়েটার কোন দেখাই নেই, নড়েচড়ে বসার পরই দেখল দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করেছে শায়োরী। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে লাগল। আরাফ উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। শায়োরী একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার চুল ঠিক করতে লাগল। চুলগুলোকে ঠিক করে বেধে, উঠবে তার মধ্যেই আরাফ তার চোখ দুটো হাত দিয়ে বন্ধ করে ফেলল।
–” কি করছেন?”
–” উমম, কথা নয় চুপ করে বসুন,” বলেই বিছানায় বসিয়ে দিল তাকে।”
–” হুম তারপর বলুন,”
–” এত অস্থির হচ্ছেন কেন? বসুন চোখ খুলবেন না!”
শায়োরী চোখ বন্ধ রাখতেই, স্পষ্ট অনুভব করতে পারল গলায় শীতল কিছুর পরশ, কানে দূল, হাতে চুড়ি, পায়ে হাত দিতে গেলে শায়োরী গুটিয়ে ফেলল।
–” আরে পা দুটো এগিয়ে দিন,”
–” কেন?”
–” এগিয়ে দিন তো,”
পা এগিয়ে দিতেই এক জোড়া নুপুর পরিয়ে দিল আরাফ।
–” এবার চোখ খুলুন,”
শায়োরী চোখ মেলেই দেখল তার গলায়,হাত-পায়ে, কানে গহনায় মুড়িয়ে দিয়েছে আরাফ। হাত দুটো ধরে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় শায়োরীকে নিয়ে দাড় করিয়ে দিল সে। শায়োরী নিজেকে আয়নায় দেখে পিছনে দাড়ানো আরাফের দিকে তাকালো। হঠাৎ কি হলো কে জানে সে আরাফের দিকে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
আরাফের বুকে মাথা রেখে চোখের পানিগুলো প্রবল বেগে ছেড়ে দিল। বুকের কাছটায় ভিজেগেছে আরাফের। শায়োরীর মুখটা উঠিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল –
–” কাদছেন কেন? আমি কি আপনাকে বকেছি?না আমার দেওয়া উপহার পছন্দ হয়নি আপনার?”
–” আপনি বুঝবেন না,” বলেই আবার জড়িয়ে ধরলো।
–” এগুলো কেন দিলাম জানেন? বাসর তো হলো না আমাদের, আপনাকে কিছুই দেওয়া হয়নি আমার, তাই আজ এগুলো আপনাকে দিলাম।” শায়োরীর কানে কানে বলতে লাগল আরাফ। কান দুটো ও যেন আজ লজ্জায় মরি মরি করছে। আরাফ যেন আরও লজ্জা বাড়িয়ে দিতে বলে উঠলো–” আজ কি বলেছি মনে আছে?”
শায়োরী চুপ করে আছে। আরাফ তার কানের কাছে গিয়ে বলল –” পাবো কি সেই অনুমতি?”
–” শ্যামাঙ্গিনী!”
–” উমম,”
–” কিছু বলুন,”
শায়োরী সব ভুলে, মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে দিল।
আরাফ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। খুব শান্তি লাগছে তার, কখনোই এই নিষ্পাপ মুখটাকে সে অবিশ্বাস করতে পারবে না। এই মুখের মানবীকে সে মন প্রাণ দিয়ে আগলে রাখবে।
শায়োরীর মুখটাকে উপরে উঠেই কপালে বেশ গাঢ় করে একটা চুমু দিয়ে দিল।
চলবে।