#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
#Part_7
ভালোবাসা মাপার বৃহদায়ন থেকে ক্ষুদ্র বা নগন্য থেকে তুচ্ছ কোন যন্ত্রকাঠি এখনো অব্দি তৈরি হয়নি। যা দিয়ে ভালোবাসা পরিমাপ করবে অনিন্দা। তাই অনিন্দা মাপতে পারছে না আফাকের ভালোবাসা। তবে অনুভব করার যন্ত্র আছে সাথে। সেটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত হৃদয়। অনিন্দা সেই হৃহৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারছে আফাকের ভালোবাসা। এই ভালোবাসা হেয় করার শক্তি নেই অনিন্দার। আফাক আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছে অনিন্দাকে। ঝড়ের কবলে পড়ে আশ্রয় নেওয়ার মতোই যেন আশ্রয় চাইছে অনিন্দার কাছে সে। অনিন্দাও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে না। নিজের সম্পুর্ণ দখল দিয়ে দেয় আফাক কে।
সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভাঙে আফাকের। ঝিরিঝিরি বাতাস এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে তার চোখ মুখ। তবু সব কিছুর থেকে বেশি ভালো লাগছে অনিন্দা তার পাশে। তার বুকে শুয়ে আছে সে। নিজের অনুভূতি জাহির করতে পেরে যেন বেশ ভালো লাগছে তার। ভালোবাসা সত্যিই সুন্দর শুধু যোগ্য মানুষ এর অভাবে তার নামে কলঙ্ক লেগে যায়। লাগিয়ে দেয় মানুষ। নিয়মবহির্ভূত হয়ে যায় সেই অবিন্যস্ত ভালোবাসার সহজ সরল ব্যাখ্যা৷
অনিন্দার ঘুম ভেঙে গিয়েছে অনেক আগেই। তবে তার এতো সুন্দর মুহুর্ত ভেঙে উঠতে মন চাচ্ছে না। আফাক কি সুন্দর করে তার দিকে তাকিয়ে আছে অনিন্দার দিকে, অনুভব করতে পারছে সে। দেখুক আজ ইচ্ছে মতো বাধা নেই কোন। অনিন্দাও চাইছে আফাক তাকে দেখুক শুধু তাই অনিন্দাও উঠছে না। হঠাৎ অনিন্দার ফোন বেজে উঠে। অনিন্দা বুঝতে পারছে আফাক এক হাতে তার ফোন কাছে আনতে চেষ্টা করছে। অনিন্দার এই বার উঠতে হবেই ভেবে ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতো ভান করে তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে৷
অনিন্দা ফোন হাতে নিয়ে ঘুমঘুম ভাব নিয়ে রিসিভ কররে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে
‘ মাম্মাম মাম্মাম।
অনিন্দা আয়ুশির কন্ঠ শুনতেই ভান রেখে
‘ আয়ুশি। বাবু কি করছো তুমি? মাম্মাম এর কাছে আসবে? নাকি মাম্মাম আসবো?
আয়ুশি কাদোঁ কাদোঁ কন্ঠে
‘ মাম্মাম আমাকে এসে নিয়ে যাও। তুমি না আসলে আমি যাবো না। আমার ভালো লাগছে না এখানে আর। তুমি জলদি আসো।
অনিন্দা চিন্তাযুক্ত কন্ঠ নিয়ে
‘ মাম্মাম এখনি আসছে বাবু। তুমি একটু অপেক্ষা করো। দাদিমার কাছে আরেকটু থাকো।
অনিন্দা ফোন কাটতেই আফাক অনিন্দার দিকে তাকিয়ে
‘ আম্মু শিখিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই না হয় আয়ু এসব বলতো না, ও দাদিমা বলতেই অজ্ঞান। আর আয়ু না হয় তুমি গিয়ে নিয়ে আসতে বলতে পারতো না। একদম আম্মুর কথাই উঠে বসে মেয়েটা। যেন আম্মুর বানানো সৈনিক।
অনিন্দা ভ্রু কুঁচকে
‘ এই ভাবে বলছেন কেন? আয়ুশি তার মাম্মাকে বলবে না গিয়ে নিয়ে আসতে তো আর কাকে বলবে? আমি যাবো। আপনি নিয়ে যাবেন না আমায়?
আফাক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জড়িয়ে ধরে অনিন্দাকে। তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে
‘ নিয়ে যাবো। তার আগে আমার বাসায় যেতে হবে। ওখান থেকে রেডি হয়ে আমি আম্মুর বাসায় তোমায় নামিয়ে দিয়ে অফিস চলে যাবো। তারপর তুমি আর আয়ু বাসায় চলে যেও বাসায়। আমি ওই বাড়িতে যেতে চাইনা।
নাস্তার টেবিলে বসে আছে আফাক, অনিন্দা, অতসী আর তাদের বাবা। অনিন্দার মা খাবার দিচ্ছে সবাইকে। আজকে অনিন্দার সাথে বেশ ভালো ব্যবহার করছে অনিন্দার বাবা। যেন কোন কালেই মেয়ের সাথে তিনি রাগ করেননি। অনিন্দাকে আর আফাককে দেখে দেখে খাবার দিতে বলছে। আবার নিজের হাতেও দিচ্ছে। অনিন্দার কেন যেন বেশ ভালো লাগছে তার বাবাকে আগের মতো দেখে। কোন অভিযোগ আর বাবার প্রতি নেই মনে হচ্ছে। এই ভালোবাসাটা পাওয়ার জন্যই যেন সে ছটফট করছিলো। বাবার আদর থেকে বঞ্চিত সন্তানরা বুঝে বাবার ভালোবাসা কি হয়। ভিতরে ভিতরে যেন কুঁড়ে খাচ্ছিলো অনিন্দাকে৷
অনিন্দা আর আফাক বের হওয়ার আগে অনিন্দার বাবা অনিন্দাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে
‘ মা রে আমি তোর খারাপ চাইনি। জেদের বশে বিয়ে হলেও আফাক খুব ভালো ছেলে। পারলে বাবাকে ক্ষমা করে দিস। তুই সব কিছু সামলে নিস। আমি জানি তুই পারবি। আমার মেয়ে তুই। অনেক বড় দায়িত্ব এখন তোর কাধে।
অনিন্দাও কান্না করছে তখন রাগ হলেও আজ বাবার প্রতি একটুও ক্ষোভ নেই। হয়তো এটাই লেখা ছিলো কপালে আর তাই এই ভাবে সম্পুর্ণ হয়েছে। যা হয়ছে ভালোই হয়েছে এতে একবিন্দুও আফসোস নেই অনিন্দার।
আফাকের বাসায় অনিন্দা আর আফাক পৌঁছে মরিয়মের সাথে কথা বলে রুমে যায়। আফাক অনিন্দাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে
‘ তুমি অপেক্ষা করো আমি চেঞ্জ করে ফরমাল পড়ে আসছি। তারপর বের হবো।
অনিন্দা সামনে ঘুরে
‘ সব কিছু ভালো লাগছে আমার আফাক। মনে হচ্ছে এসব কিছু না হলে আমি অনেক কিছু মিস করে দিতাম।
আফাক অনিন্দার গালে নিজের গাল ঘষে
‘ হুম আমিও।
আফাক চেঞ্জ করতে গিয়েছে। অনিন্দা সোফায় বসে ছবি দেখছে আয়ুশির আর আফাকের। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। বেশ কয়েকবার বেজে উঠেছে কলিং বেল। অনিন্দা বের হয় মরিয়ম দরজা না খোলায়। দরজা খোলার জন্য এগিয়ে যেতেই মরিয়ম বাধা দেয় দরজা খুলতে অনিন্দাকে।
এমন ব্যবহার দেখে অনিন্দা চমকে যায়! দরজা খুলতে কেন বাধা দিচ্ছে উনি? মরিয়মের বাধা না মেনে অনিন্দা দরজা খুলতেই দেখে বাহিরে পুলিশ সাথে কয়েকজন লোক। পুলিশ ভিতরে আসতে নিলেই অনিন্দা পথ আটকে
‘ আপনারা! এখানে কেন?
একজন মেয়ে পুলিশ
‘ দেখুন আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন। এই দেখুন সার্চ ওয়ারেন্ট।
অনিন্দার হাতে একটা পেপার ধরিয়ে দিয়ে সব গুলো পুলিশ ভিতরে চলে আসে আরো লোকজন সহ। অনিন্দা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হচ্ছে কি এসব! আর পুলিশ কেনই বা আসবে বাসায়? অনিন্দা সব কিছু বুঝার জন্য কয়েক সেকেন্ডে চুপ থেকে
‘ আপনারা কেন এসেছেন? বলেন কিছু? এই ভাবে আপনারা বাসায় আসতে পারেন না। আর ঠিকঠাক কিছু বলছেনও না
মরিয়ম অনিন্দার হাত ধরে কাঁপতে কাঁপতে
‘ মানা করেছিলাম দরজা খুলতে, কেন গেলে দরজাটা খুলতে?
বাহিরে সবার চিৎকার চেচামেচি শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে আফাক। হঠাৎ পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যায় সে। কিন্তু পুলিশের সাথে আসা মানুষকে দেখে আফাকের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়……..
চলবে…………
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কোন প্রকার ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিয়ে উপকৃত করবেন। আর দেরি হবার জন্য দুঃখিত।