দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৩২
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
“কে?কে এত রাতে আমার বাবুকে ফোন করে ডিষ্টার্ব করছে?বন্ধনই বা এত রাগ করছে কেন?’
ভাবতে থাকে মিতু।
বন্ধনের ফোনে কথা বলা শেষ হলে মিতু বন্ধনের কাছে যায়।
“কি হয়েছে বাবু?কে ফোন করেছে?’
“আরে আর বলোনা?কত যে আজগুবি মানুষ থাকে,এই কাজ সেই কাজ করে দিতে বলে।’
“কিন্তু আপনি তো ঝাড়ি দিচ্ছিলেন?’
“এত রাতে এভাবে ফোন করলে তো ঝাড়ি দিবই তাই না?’
রাতে দুজনের খাবার রেষ্ট হাউজেই দেয়া থাকে।ভাত,মুরগী,ডাল চরচরী।
“খেয়ে নাও মিতু।’
“না আমি খাব না,খেলে বোধহয় বমী হয়ে যাবে।’
“ওমা সেকি?পানীয় জাতীয় কিছু খাবে?শরবত, লাসসি?’
“না খুব ক্লান্ত লাগছে আসেন ঘুমাই।’
“তুমি কাপড় ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ো লক্ষীটি।’
মিতু ওয়াশরুমে হাত মুখ ধুয়ে কাপড় চেইঞ্জ করে লক্ষী মেয়ের মতো বিছানায় চলে যায়।
বন্ধন মাথায় হাত বুলাতে থাকে পরম যত্নে।
কিন্তু মিতুর তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়,বারবার সেই একই কথা ভাবতে থাকে কে ফোন করেছিল বন্ধনকে?
সকালেই বন্ধনের কাজ পড়ে যায়।মিতুকে বলে,
“লক্ষীটি এখানে আমার একটা ইন্সপেকশন এর কাজ পড়ে গেছে,সারাদিন ব্যস্ত থাকবো।তোমার বাইরে যেতে ইচ্ছে করলে,তোমার সাথে একজন আর্মি অফিসার যাবে ঘুরে ঘুরে তোমাকে বিভিন্ন জায়গা দেখাবে।’
মিতু মাথা নাড়ে।
বন্ধন বের হয়ে যেতে নেয়,কিন্তু মিতু মুখ গোমড়া করে রাখে।
বন্ধন মিতুর মুখটা ধরে বলে,”জানি আমাকে ছাড়া ভালো লাগবে না, তাই এভাবে আনতে চাই নি।তুমি চিন্তা করোনা,তোমাকে নিয়ে আবার আমি বেড়িয়ে আসবো।সারাটাক্ষণ তোমাকে সময় দিব,লক্ষীটি এভাবে মন খারাপ করো না।আর আমি নেই তো কি হয়েছে?আমাদের বাবু তোমাকে সময় দিবে?’বলে মিতুর পেটে আদর বুলিয়ে দেয় বন্ধন।
মিতুর ভালো লাগে এবার।বন্ধনকে সুন্দর করে বিদায় দেয়।
নীলগিরি রিসোর্ট এর অন্যতম আকর্ষন এখানে রয়েছে বিশাল ডাইনিং কাঁচঘর।পুরোটা গ্লাস দিয়ে ছাওয়া।সকালে স্বামীর সাথে নাস্তা করে আসে ডাইনিং রুমে যেয়ে।দেয়াল গুলোতে ম্যাপ ও পাহাড়ী অধিবাসী ও নারীদের ছবি।
প্রত্যেকটা কটেজই মনোরোম পরিবেশে গড়ে উঠেছে।নামগুলোও অদ্ভুত,মালঞ্চ,মারমারিচা, আকাশনীলা,মেঘদূত,নীলাংগনা ইত্যাদি।
বন্ধন চলে যাবার পর মিতুর খুব বোর লাগে।যদিও টিভি আছে।সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা আছে এখানে। তবে পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে এখানে সাশ্রয়ী হতে হয়।
সাড়ে নয়টার দিকে বের হয় মিতু।আর্মি অফিসার ক্যাপ্টেন জামান।এখানে স্থানীয়।
বন্ধনের বেশ প্রিয়।তার এখানে ভর্তির সময় বন্ধন বিশেষ ভাবে সহায়তা করেছে।
বেশ হাসিখুশি,একটু রসিক প্রকৃতির মনে হলো ক্যাপ্টেন জামানকে।মিতুকে সার্বক্ষণিক যেন হাসাতে চাইছে নানা রকম কৌতুক বলে।
মিতু কথার ফাঁকে বলছিল,তোমরা আর্মি অফিসাররা কথার মাঝে,আগে, পরে কতবার স্যার বলো,বলো তো?এত হিসেব থাকে?’
“হ্যা ভাবী।ঠিক বলেছেন।যেমন কদিন আগে,আগের মেজর স্যার বেড়াতে এসেছিলেন।তো উনার ওয়াইফকে আনেন নি।তারপর স্যার আবার তার ফোনটা আমার হাতে দিয়েছিলেন।’
“হুম তারপর?’
“স্যার আবার পাহাড়ী ঝরনায় মেয়েদের গোসল দেখছিলেন আর স্মার্ট ফোনে সেগুলি তুলছিলেন হঠাৎ তার ফোনে স্যারের ওয়াইফ ফোন দিলেন।আর ঠিক তখনি….।’
মিতু আর জামান নীলগিরির পথ ধরে নামছিল আর গল্প করছিল।
“তখনই…কি তখনি?’
“আমি তো স্যারের ওয়াইফের কল রিসিভ করেছি,কারন স্যার তো তার আরেকটা ফোনে পাহাড়ি মেয়েদের ছবি তোলায় ব্যস্ত।তারপর হঠাৎ স্যার বল্লেন,
এই জামান
আমি বল্লাম,জ্বী স্যার।
উনি বল্লেন,আমার মোবাইলে আর ছবি তুলতে পারছিনা,জায়গা ফিল আপ হয়ে গেছে।তোমার মোবাইলটা দাও তো।
আমি বল্লাম,স্যার আমার মোবাইলের পিকচার রেজুলেশন ভালো না।
উনি বল্লেন,কি কর না কর এসব জায়গায় আসব ডিএস এল আর আনতে পারলা না?বাট এই সিনারী কি মিস করবো নাকি?যা আসে তাই তুলো পরে এডিট করে আমাকে অবশ্যই দিবা।
আমি আমার মোবাইলে ছবি তুলে দিতে দিতে বল্লাম,অফকোর্স স্যার
স্যারের ওয়াইফ জিজ্ঞেস করলেন,কিসের ছবি তুলতে বলে তোমার স্যার আবার এডিট করে দিতে বলে?
আমি আমতা আমতা করতে করতেই কিভাবে যেন স্যারের ওয়াইফ বুঝে ফেল্লেন।তারপর বল্লেন,দাও তো তোমার স্যারকে উনিনা কনফারেন্সে ব্যস্ত?আর এই তার নমুনা?
তারপর সেই যে স্যারকে রামধোলাই দিলেন ম্যাডাম।তা প্রায় আধাঘণ্টা। স্যারের মুখের দিকে তখন তাকানোই যাচ্ছিল না।আমরা যতই স্যারকে বলি জ্বী স্যার, জ্বী স্যার,বাট সেদিন মেজর স্যারই তার ওয়াইফকে ভয়ে জ্বী স্যার জ্বী স্যার করছিলেন।’
মিতু পুরো ঘটনা শুনে হেসে ফেলে।ফের বলে,
“তুমিই বা কম কিসে,স্যারের কথামতো তো ঠিকই মেয়েদের ছবি তুলে দিয়েছো?ঝাড়ি তো তোমারও খাওয়া দরকার ছিল?’
“ভাবি কি যে বলেন?আমি তো এখানে হুকুমের তামিলকারী আমার কি দোষ বলেন?আর পরে স্যার আমারে কি ছাড়সে?বউ এর সব ঝাড়ীগুলি আমাকে গুলে খাওইসে,কেন আমি ম্যাডামের ফোন ধরলাম।’
মিতু বেশ মজা পেল জামানের সহজ স্বীকারোক্তিতে।অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হাসলো মিতু।
নীলগিরির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুচোখ ভরে দেখে নিল।উঁচুনিচু ঢালু গিরিখাদ আছে মিতুকে সাবধান করে পথ এগিয়ে দিচ্ছিল জামান।তবে এখানে পাহাড়েই সব গাছগাছালী,সমতল ভূমিতে গাছ নেই বলে পুরো রোদটা সরাসরি লাগে।রিসোর্ট থেকে খানিকটা দূরে ঢালু পথ বেয়ে দেখা গেল দোলনা,সমতল ভূমিতে স্থাপিত আর্মিদের হ্যালিপেড।যেখানে গতরাতে মিতু নেমেছিল।
এই পর্যটনকেন্দ্রের দক্ষিনে মুরংদের দিয়ে বসতি গঠিত এর নাম কাপ্রুপাড়া।মিতু খানিকটা ঘুরে ঘুরে পল্লী মেয়েদের দেখে।কি অদ্ভুত তাদের সাজসজ্জা।নাক,কানের ছিদ্র বড় বড় কি বিশাল।মাঠির,কাঠের,শামুদ্রিক খোলস বা ঝিনুকের তৈরী তাদের সে অলংকার।জামান বল্ল,মুরংরা যতটা আদীম, তেমনই সাহসী।পাহাড়ী কোল ঘেষে ঝরনার পানি আর পাথর চুয়ে চুয়ে যে পানি আহরণ করে তা দিয়েই তাদের চলে,তৃষ্ণা নিবারণ করে।এরা বেশ বন্য ও বটে সহজে ছবি তুলতে দেয় না।অনেক ভ্রমনকারীকে নাকি ছবি তোলার সময় পাথর দেখিয়ে মাথা ফাটানোর ভয়ও দেখিয়েছে।
প্রায় দেড়ঘন্টার মতো মিতু ঘুরলো।তার কটেজ আকাশলীনাতে চলে এলো।একা একা আর ভালো লাগে না মিতুর।জামান অবশ্য বলছিল চাঁদনী রাতেই নীলগিরির আসল সৌন্দয্য।অদ্ভুত একটা গাড়ী দেখে মিতু জানতে চাইলো “কি গাড়ী এইটা?’
“চান্দের গাড়ী।এই গাড়ীতে ঘুরে ঘুরে রাতটাতে ঘুরতে আরো বেশী মজা।’
মিতুর খুব চড়তে ইচ্ছে করছিল।তার মোবাইলে চার্জ নেই যে বন্ধনের সাথে কথা বলবে।
হঠাৎ জামান রুমে এলো।
“ভাবী,স্যার ফোন দিয়েছেন।’
মিতু বন্ধনকে বল্ল ঘুরে এসেছে তবে একা খুব বোর লাগছে।
বন্ধন মিতুকে বিশ্রাম নিতে বল্ল,আর বল্ল কাজে বিশ্রীভাবে ফেসে গেছে।মিতুর একা খারাপ লাগলে আজ রাতেই জামান তাকে ঢাকায় পৌঁছে দিবে।কারন বন্ধনের ট্যুর আরও চারদিনের মতো মিতুকে সে কোনভাবেই সময় দিতে পারবে না।আর এই অবস্থায় মিতুকে একাও রাখতে চাচ্ছে না বন্ধন।বন্ধন ফোনে মিতুকে বল্ল,
“লক্ষীটি রাগ করো না,ঢাকায় বাসায় চলে যাও নাহলে আদাবর থেকে বাবার বাসায় চলে যাও কদিন ওখান থেকে ঘুরে আসলেও ভালো লাগবে।আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
উপায়ান্তর না দেখে মিতুও সম্মত প্রকাশ করে তার স্বামীর কথায়।কিন্তু বন্ধনকে ছেড়ে যেতেও তার একটুও মন চাচ্ছে না।তবুও যেতে হবে অগত্যা…… (চলবে)দ্বিতীয় বাসর,গল্প(পর্ব-৩৩)
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
সন্ধ্যা নামার কিছু আগে জামান মিতুকে নীলগিরির আর একটা অদ্ভুত সুন্দর জিনিস দেখার কথা বল্ল।
ডায়নিং কাঁচঘরে মিতু জামানকে নিয়ে খেতে বসেছে।
বন্ধন বারবার ফোন করে বলে দিয়েছে,
“জামান তোমার ভাবীর কিন্তু শরীর ভালো নেই,আমি নেই আরও মন খারাপ করছে মেয়েটা,ইশ কেন যে ওকে এইখানে আনলাম?আর বিশ্রীভাবে কাজে ফেঁসে গেছি… ‘
“ভাইয়া,আপনি চিন্তা করবেন না, আমি ভাবীর দিকে খেয়াল রাখবো।তবে ভাবী আসলেই আপনাকে মিস করছে।’
জামান বেশীরভাগই বন্ধনকে স্যার বলে তবে পরিচিত ও অন্তরংগ সম্পর্ক বিধায় ভাইয়াও ডাকে তবে খুব কম।
“জামান প্লিজ তুমি তোমার ভাবীর দিকে খেয়াল রাখো,ওর সাথে গল্প করো,ওর যেন মন খারাপ না হয় বুঝছো।’
“জ্বী অবশ্যই স্যার।’
দুপুরের খাবারের মেনুতে ভর্তা,লইট্যা ফ্রাই,করাল মাছ ভুনা,খাশির গোশত,ভাজি, ডাল।চমৎকার রান্না মনে হলো মিতুর কাছে।
মিতু খেতে খেতে বল্ল,”কি ব্যাপার বলোতো এই বল্লে ভাইয়া আবার এখনই স্যার বলে ডাকলে?’
“ভাবী অফিসিয়াল কার্টেসী, যতই আত্মীয় হই,ভাইয়া কেন,চাচা,খালু,মামা,ফুপা,শ্বশুর আব্বা কিচ্ছু বলার নিয়ম নাই।স্যার,স্যার বইলাই ডাকতে হবে।’
মিতু হাহাঃ করে হেসে ফেল্ল,ছেলেটা আসলেই রসিক।ভীষন মজা করে কথা বলে।মায়া মায়া বড় বড় চোখ,উজ্জ্বল শ্যামলা বরণ এমন একজন মানুষ, যার রসাত্মক কথায় সংগটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
মিতু অবশ্য মনে মনে পারুলের জন্য পছন্দ করে ফেলেছে জামানকে।
জামান ফের বলে,”ভাবী জানেন এখানে কিন্তু ফিস এভেইলেবল না।’
“তাই নাকি?তাহলে এখানে তো মাছের আইটেম এগুলো এল কোত্থেকে?’
“স্যার গত রাতেই ফোন করে বলে দিয়েছে,স্পেশাল গেষ্ট আসছে সো এই দুইটা ফিস আইটেম আপাতত আনিয়ে রাখা হয়েছে অনলি ফর হিস বিলাভবড।’
মিতুর কথাটা শুনে ভীষন ভালো লাগে,নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হতে থাকে।
আর লইট্যা ফ্রাই আর করাল মাছের ভুনা তো অসাধারন মনে হতে থাকে মিতুর কাছে।বন্ধনকে বলে কিছু লইট্যা মাছ ঢাকায় নেয়া যাবে কিনা সে ভাবনাও করে।
“সত্যি বাবু এমন করে আমার কথা ভাবেন?সত্যি এত ভালোবাসেন আমাকে,রিয়্যালি আই এম লাকি…’
মিতু লাজুক হাসে,হঠাৎ চোখ দুটো তার ছলছল হয়ে ওঠে।ভীষন মিস করছে তার প্রানপ্রিয় বন্ধনকে।
জামান যেন বুঝে ফেলে মিতুর উদাস দৃষ্টি।মিতুকে হাসানোর চেষ্টা করে আরও সিনিয়র স্যার বা কলিগদের নানা রকম মজার অভিজ্ঞতার কথা বলে।আর মিতুর প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে গল্প করে।
নিজের কথাও বলে বেশ রসিয়ে রসিয়ে।
“ভাবি জানেন একবার ইডেন কলেজ থেকে কতগুলি মেয়ে এসেছিল,কলেজ ইষ্কাশনে কি যে ফাজিল মেয়েগুলি!’
“কি ইডেনের মেয়েরা ফাজিল?’
“ফাজিল মানে সেই রকম মহা ফাজিল,আর্মি পোলাপাইন দেখলেই প্রেম করতে চায়।’
“তাই নাকি?’
“ও সরি,ভাবি কি ইডেন কলেজের? ‘
“না আমি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে পড়েছি,তবে ইডেনে আমার মা পড়তেন আর আমার কিছু বন্ধুও আছে বুঝছো।’
“ও তাইলে ঠিক আছে।’
“কি ঠিক আছে?আমার মা যে কলেজে পড়তেন তুমি সেই কলেজের মেয়েদের মহাফাজিল বলছো?’
“ওফ্হো ভাবি,আন্টিদের সময় তো বাতই কুুচ অর থা,আব বাত কুচ অর।’
“হুম হিন্দিও জানো দেখছি?’
“তো ভাবি একবার এক মেয়ে আমাকে দারুন পছন্দ করে ফেল্ল।বল্ল আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।’
“ইডেন কলেজের মেয়ে?সরাসরি বল্ল?’
“হ্যা ভাবি তা আর বলছি কি।আমার বন্ধুর কাছে আমার সেল নাম্বার, এফ বি আই ডি সব পেয়ে গেল।নাছোড়বান্দা মেয়েরে বাবা আমার পিছু ছাড়তেই চায়না।’
“হাহাঃ হাঃ ‘মিতু সশব্দে হেসে ওঠে।
“তো সমস্যা কি ছিল বিয়ে করে ফেলতা?’
“বহু সমস্যা ভাবি,প্রথমত মেয়েটা হিন্দু,দ্বিতীয়ত পলিটিক্স করে বেড়ায়, নেতাগিরি করে,ডেঞ্জারাস মেয়ে রে বাবা।’
“তাই বুঝি?দেখতে কেমন ছিল মেয়েটা?’
“সত্যি বলবো ভাবি,পুরা ঐশ্বরিয়া না হলেও ঐশ্বরিয়ার ছোট বোন।’
“তাই!তাহলে তো অনেক সুন্দর?’
“হ্যা ভাবি,সালমানখানের লাকি ছবিটা দেখছেন?কি জানি নাম নায়িকাটার?’
“স্নেহা উলা।’
“হ্যা হ্যা একদম ঐরকম।’
“তবে আমার কেন জানি মনে হয়,তুমিও ঐ মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলা,না হলে ওর কথা স্পেশালি মনে রাখতা না।’
“কি যে বলেন ভাবি?এরকম একটা আইটেম মনে রাখবো না?’
“আইটেম?তাহলে এখন আফসোস করছো কেন?বিয়ে করে ফেলতা,কলেমা পড়িয়ে মুসলমান বানায় নিতা?’
“মিথ্যা বলবো না ভাবি,ইচ্ছা ছিল,কিন্তু মা কোনদিন মানবে না,তাছাড়া মেয়েটা ইন্ডিয়ান,আম্মা ইন্ডিয়ান দুই চোক্ষে দেখতে পারেন না।’
এভাবে অনেক কথা হলো দুজনের খাওয়া শেষ হলো।মিতু খেয়াল করলো অদূরের আকাশে রসি টানিয়ে কার সিষ্টেমের ব্যবস্থা।মিতু জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা কি এখানে?’
“এখানে টুরিস্ট দের মনোরঞ্জনের জন্য ক্যাবলকারেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
“আছে ব্যবস্থা চড়া যাবে?’
“না ভাবি প্রজেক্ট এর কাজ চলছে।উপরের আকাশ থেকে নীচের সিনারী দেখা যাবে অন্যরকম মজা।’
বলতে বলতে সন্ধ্যা নেমে যাচ্ছে।জামান মিতুকে পশ্চিম আকাশে তাকাতে বলে,মিতু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখে অনন্য সাধারণ এক দৃশ্য।
ক্লান্ত সূর্য কখন যেন আস্তে আস্তে যেন ঢলে পড়ছে সবুজ পাহাড়ের গা ঘেষে, এভাবে ধীরে ধীরে নেমে যেতে থাকে আকাশের বুক থেকে।
জামান তাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায়,যেখানে মনের মাধুরী দিয়ে সূর্যাস্ত অবলোকন করার স্বাদ নেয়া যায়।নীলগিরি পাহাড়ি নৈসর্গিক রূপে রাতের আঁধার ফুটতে থাকে এ যেন অন্যরকম বিশুদ্ধতা। দুপাশে বেড়া দিয়ে ঘেরা তবে মিতু আনন্দ একটা কাজ করলো,সূর্য যখন অস্ত যাচ্ছিল দুহাত দিয়ে চোখের আকৃতি করে দূর থেকে লাল টুকটুকে সূর্যটাকে চোখের মনির মতো করলো।কখনো এক হাতে বলের মতো।জামান সাথে সাথে ক্যামেরাবন্দী করে নিল।
মিতু বেশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিল।পেটে হাত দিয়ে কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো।
আর বিড়বিড় করে বল্ল,
“দেখো তোমার বাবা আমাদের ফাঁকি দিল?এত সুন্দর একটা জিনিস তোমার মামনী দেখলো তোমার বাবাকে ছাড়া?এটা হলো বলো তো আমার ছোটবাবু?’
জামান দূর থেকে দেখে অবাক হয় মিতুর ছেলেমানুষী ভংগী।
ঠিক তখনই বন্ধনের ফোন আসে জামানের মোবাইলে।
“জামান তোমার ভাবী কি করছে?ওর মন ভালো আছে?ওর সাথে গল্প কর নাই?বমীটমী করেছিল তোমার ভাবী?’
“না স্যার, ভাবী আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছে,সকালে আপনি যাওয়ার পর বোধহয় বমী করেছিল তারপর আর দেখিনাই।’
“কি করছে এখন?’
“সূর্যাস্ত দেখে খুব শান্তি পেয়েছে,আর কথা বলছে….’হেসে বলে জামান
“তাই নাকি?কার সাথে কথা বলছে?’
জামান আর কোন উত্তর করে না,নিজেই যেন লজ্জা পেয়ে যায়।ভাবির দিকে ফোনটা দেয়
বন্ধন আদুরে কন্ঠে ওপাশ থেকে বলে,
“কি করছো জান?শরীর ভাল লাগছে?সকালে ওষুধ খেয়েছিলে সোনা…..’
মিতু যেন আহলাদে আটখানা হয়ে যায় বন্ধনের কথা শুনে,বাচ্চাদের মতো কাঁদো কাঁদো মুখ করে স্বামীর প্রশ্নের জবাব দিতে থাকে,আর বলে,
“আপনাকে ছাড়া এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখলাম এইটা হইলো বলেন?আর কবে এ সুযোগ পাবো….’
দূর থেকে জামান লক্ষ্য করে দুজন বিবাহিত দম্পতির মিষ্টি মান অভিমান।দুজন দুজনকে এত ভালোবাসে!এত এত চিন্তা দুজন দুজনাকে ঘিরে অথচ আল্লাহ তাদের এ ভ্রমনে আলাদা করে রেখেছে, তবু সেই সাময়িক বিচ্ছেদও কত মধুর!জামানের কাছে যেন তা মনে হতে থাকে,মিতুর ছেলেমানুষী ভংগী,আর আদুরে ফোন আলাপনে।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর,গল্প(পর্ব-৩৩)
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
সন্ধ্যা নামার কিছু আগে জামান মিতুকে নীলগিরির আর একটা অদ্ভুত সুন্দর জিনিস দেখার কথা বল্ল।
ডায়নিং কাঁচঘরে মিতু জামানকে নিয়ে খেতে বসেছে।
বন্ধন বারবার ফোন করে বলে দিয়েছে,
“জামান তোমার ভাবীর কিন্তু শরীর ভালো নেই,আমি নেই আরও মন খারাপ করছে মেয়েটা,ইশ কেন যে ওকে এইখানে আনলাম?আর বিশ্রীভাবে কাজে ফেঁসে গেছি… ‘
“ভাইয়া,আপনি চিন্তা করবেন না, আমি ভাবীর দিকে খেয়াল রাখবো।তবে ভাবী আসলেই আপনাকে মিস করছে।’
জামান বেশীরভাগই বন্ধনকে স্যার বলে তবে পরিচিত ও অন্তরংগ সম্পর্ক বিধায় ভাইয়াও ডাকে তবে খুব কম।
“জামান প্লিজ তুমি তোমার ভাবীর দিকে খেয়াল রাখো,ওর সাথে গল্প করো,ওর যেন মন খারাপ না হয় বুঝছো।’
“জ্বী অবশ্যই স্যার।’
দুপুরের খাবারের মেনুতে ভর্তা,লইট্যা ফ্রাই,করাল মাছ ভুনা,খাশির গোশত,ভাজি, ডাল।চমৎকার রান্না মনে হলো মিতুর কাছে।
মিতু খেতে খেতে বল্ল,”কি ব্যাপার বলোতো এই বল্লে ভাইয়া আবার এখনই স্যার বলে ডাকলে?’
“ভাবী অফিসিয়াল কার্টেসী, যতই আত্মীয় হই,ভাইয়া কেন,চাচা,খালু,মামা,ফুপা,শ্বশুর আব্বা কিচ্ছু বলার নিয়ম নাই।স্যার,স্যার বইলাই ডাকতে হবে।’
মিতু হাহাঃ করে হেসে ফেল্ল,ছেলেটা আসলেই রসিক।ভীষন মজা করে কথা বলে।মায়া মায়া বড় বড় চোখ,উজ্জ্বল শ্যামলা বরণ এমন একজন মানুষ, যার রসাত্মক কথায় সংগটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
মিতু অবশ্য মনে মনে পারুলের জন্য পছন্দ করে ফেলেছে জামানকে।
জামান ফের বলে,”ভাবী জানেন এখানে কিন্তু ফিস এভেইলেবল না।’
“তাই নাকি?তাহলে এখানে তো মাছের আইটেম এগুলো এল কোত্থেকে?’
“স্যার গত রাতেই ফোন করে বলে দিয়েছে,স্পেশাল গেষ্ট আসছে সো এই দুইটা ফিস আইটেম আপাতত আনিয়ে রাখা হয়েছে অনলি ফর হিস বিলাভবড।’
মিতুর কথাটা শুনে ভীষন ভালো লাগে,নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হতে থাকে।
আর লইট্যা ফ্রাই আর করাল মাছের ভুনা তো অসাধারন মনে হতে থাকে মিতুর কাছে।বন্ধনকে বলে কিছু লইট্যা মাছ ঢাকায় নেয়া যাবে কিনা সে ভাবনাও করে।
“সত্যি বাবু এমন করে আমার কথা ভাবেন?সত্যি এত ভালোবাসেন আমাকে,রিয়্যালি আই এম লাকি…’
মিতু লাজুক হাসে,হঠাৎ চোখ দুটো তার ছলছল হয়ে ওঠে।ভীষন মিস করছে তার প্রানপ্রিয় বন্ধনকে।
জামান যেন বুঝে ফেলে মিতুর উদাস দৃষ্টি।মিতুকে হাসানোর চেষ্টা করে আরও সিনিয়র স্যার বা কলিগদের নানা রকম মজার অভিজ্ঞতার কথা বলে।আর মিতুর প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে গল্প করে।
নিজের কথাও বলে বেশ রসিয়ে রসিয়ে।
“ভাবি জানেন একবার ইডেন কলেজ থেকে কতগুলি মেয়ে এসেছিল,কলেজ ইষ্কাশনে কি যে ফাজিল মেয়েগুলি!’
“কি ইডেনের মেয়েরা ফাজিল?’
“ফাজিল মানে সেই রকম মহা ফাজিল,আর্মি পোলাপাইন দেখলেই প্রেম করতে চায়।’
“তাই নাকি?’
“ও সরি,ভাবি কি ইডেন কলেজের? ‘
“না আমি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে পড়েছি,তবে ইডেনে আমার মা পড়তেন আর আমার কিছু বন্ধুও আছে বুঝছো।’
“ও তাইলে ঠিক আছে।’
“কি ঠিক আছে?আমার মা যে কলেজে পড়তেন তুমি সেই কলেজের মেয়েদের মহাফাজিল বলছো?’
“ওফ্হো ভাবি,আন্টিদের সময় তো বাতই কুুচ অর থা,আব বাত কুচ অর।’
“হুম হিন্দিও জানো দেখছি?’
“তো ভাবি একবার এক মেয়ে আমাকে দারুন পছন্দ করে ফেল্ল।বল্ল আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।’
“ইডেন কলেজের মেয়ে?সরাসরি বল্ল?’
“হ্যা ভাবি তা আর বলছি কি।আমার বন্ধুর কাছে আমার সেল নাম্বার, এফ বি আই ডি সব পেয়ে গেল।নাছোড়বান্দা মেয়েরে বাবা আমার পিছু ছাড়তেই চায়না।’
“হাহাঃ হাঃ ‘মিতু সশব্দে হেসে ওঠে।
“তো সমস্যা কি ছিল বিয়ে করে ফেলতা?’
“বহু সমস্যা ভাবি,প্রথমত মেয়েটা হিন্দু,দ্বিতীয়ত পলিটিক্স করে বেড়ায়, নেতাগিরি করে,ডেঞ্জারাস মেয়ে রে বাবা।’
“তাই বুঝি?দেখতে কেমন ছিল মেয়েটা?’
“সত্যি বলবো ভাবি,পুরা ঐশ্বরিয়া না হলেও ঐশ্বরিয়ার ছোট বোন।’
“তাই!তাহলে তো অনেক সুন্দর?’
“হ্যা ভাবি,সালমানখানের লাকি ছবিটা দেখছেন?কি জানি নাম নায়িকাটার?’
“স্নেহা উলা।’
“হ্যা হ্যা একদম ঐরকম।’
“তবে আমার কেন জানি মনে হয়,তুমিও ঐ মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলা,না হলে ওর কথা স্পেশালি মনে রাখতা না।’
“কি যে বলেন ভাবি?এরকম একটা আইটেম মনে রাখবো না?’
“আইটেম?তাহলে এখন আফসোস করছো কেন?বিয়ে করে ফেলতা,কলেমা পড়িয়ে মুসলমান বানায় নিতা?’
“মিথ্যা বলবো না ভাবি,ইচ্ছা ছিল,কিন্তু মা কোনদিন মানবে না,তাছাড়া মেয়েটা ইন্ডিয়ান,আম্মা ইন্ডিয়ান দুই চোক্ষে দেখতে পারেন না।’
এভাবে অনেক কথা হলো দুজনের খাওয়া শেষ হলো।মিতু খেয়াল করলো অদূরের আকাশে রসি টানিয়ে কার সিষ্টেমের ব্যবস্থা।মিতু জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা কি এখানে?’
“এখানে টুরিস্ট দের মনোরঞ্জনের জন্য ক্যাবলকারেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
“আছে ব্যবস্থা চড়া যাবে?’
“না ভাবি প্রজেক্ট এর কাজ চলছে।উপরের আকাশ থেকে নীচের সিনারী দেখা যাবে অন্যরকম মজা।’
বলতে বলতে সন্ধ্যা নেমে যাচ্ছে।জামান মিতুকে পশ্চিম আকাশে তাকাতে বলে,মিতু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখে অনন্য সাধারণ এক দৃশ্য।
ক্লান্ত সূর্য কখন যেন আস্তে আস্তে যেন ঢলে পড়ছে সবুজ পাহাড়ের গা ঘেষে, এভাবে ধীরে ধীরে নেমে যেতে থাকে আকাশের বুক থেকে।
জামান তাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যায়,যেখানে মনের মাধুরী দিয়ে সূর্যাস্ত অবলোকন করার স্বাদ নেয়া যায়।নীলগিরি পাহাড়ি নৈসর্গিক রূপে রাতের আঁধার ফুটতে থাকে এ যেন অন্যরকম বিশুদ্ধতা। দুপাশে বেড়া দিয়ে ঘেরা তবে মিতু আনন্দ একটা কাজ করলো,সূর্য যখন অস্ত যাচ্ছিল দুহাত দিয়ে চোখের আকৃতি করে দূর থেকে লাল টুকটুকে সূর্যটাকে চোখের মনির মতো করলো।কখনো এক হাতে বলের মতো।জামান সাথে সাথে ক্যামেরাবন্দী করে নিল।
মিতু বেশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিল।পেটে হাত দিয়ে কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো।
আর বিড়বিড় করে বল্ল,
“দেখো তোমার বাবা আমাদের ফাঁকি দিল?এত সুন্দর একটা জিনিস তোমার মামনী দেখলো তোমার বাবাকে ছাড়া?এটা হলো বলো তো আমার ছোটবাবু?’
জামান দূর থেকে দেখে অবাক হয় মিতুর ছেলেমানুষী ভংগী।
ঠিক তখনই বন্ধনের ফোন আসে জামানের মোবাইলে।
“জামান তোমার ভাবী কি করছে?ওর মন ভালো আছে?ওর সাথে গল্প কর নাই?বমীটমী করেছিল তোমার ভাবী?’
“না স্যার, ভাবী আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছে,সকালে আপনি যাওয়ার পর বোধহয় বমী করেছিল তারপর আর দেখিনাই।’
“কি করছে এখন?’
“সূর্যাস্ত দেখে খুব শান্তি পেয়েছে,আর কথা বলছে….’হেসে বলে জামান
“তাই নাকি?কার সাথে কথা বলছে?’
জামান আর কোন উত্তর করে না,নিজেই যেন লজ্জা পেয়ে যায়।ভাবির দিকে ফোনটা দেয়
বন্ধন আদুরে কন্ঠে ওপাশ থেকে বলে,
“কি করছো জান?শরীর ভাল লাগছে?সকালে ওষুধ খেয়েছিলে সোনা…..’
মিতু যেন আহলাদে আটখানা হয়ে যায় বন্ধনের কথা শুনে,বাচ্চাদের মতো কাঁদো কাঁদো মুখ করে স্বামীর প্রশ্নের জবাব দিতে থাকে,আর বলে,
“আপনাকে ছাড়া এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখলাম এইটা হইলো বলেন?আর কবে এ সুযোগ পাবো….’
দূর থেকে জামান লক্ষ্য করে দুজন বিবাহিত দম্পতির মিষ্টি মান অভিমান।দুজন দুজনকে এত ভালোবাসে!এত এত চিন্তা দুজন দুজনাকে ঘিরে অথচ আল্লাহ তাদের এ ভ্রমনে আলাদা করে রেখেছে, তবু সেই সাময়িক বিচ্ছেদও কত মধুর!জামানের কাছে যেন তা মনে হতে থাকে,মিতুর ছেলেমানুষী ভংগী,আর আদুরে ফোন আলাপনে।(চলবে)