দ্বিতীয় বাসর পর্ব ৩৬+৩৭+৩৮

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৩৬
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

ভোরে বরাবরের মতো ফজরের আযানের সময় ঘুম ভাঙল মিতুর।আল্লাহর রহমতে আর বমী হয় নি।বিয়ের পর থেকে মিতু দেখে আসছে,বন্ধন এই সময়ই উঠে ফজরের নামাজের সময়।স্বামীর দেখদেখি এখন তারও অভ্যেস হয়ে গেছে।
যদিও অনেক রাতে ঘুমিয়েছে সে,ঢুলঢুলু নয়নে ওয়াশরুমে যায়।বুয়া টের পেয়ে ধরতে চায়।লাগবেনা বলে মিতু বাঁধা দেয়।
নামাজটা পরে,সকালের কিছু আমল গুলি পড়ে মিতু।জানালাটা খুলে দেয়।
“আহ্ বাইরে প্রাণ জুড়ানো বাতাস,আলহামদুলিল্লাহ্‌। ‘
সকালের বাতাসটা গায়ে মাখাতে চায় মিতালী।তরতাজা অক্সিজেন।এসময় ভোরে পাখির কিচিরমিচির কলতান ভীষন মিষ্টি লাগে মিতুর।প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে বাইরে গিয়ে হাঁটতেও মন চায় তার।
ফের বিছানায় যায়,এখনো দুচোখে রাজ্যের ঘুম।গতকাল তো অনেক ধকল গিয়েছে।মোবাইলটা অন করে মিতু।বন্ধনের ফিরতি এস এম এস আসে নি।
মনটা ফের খারাপ হয়।
ক্ষুধা লাগে তার।দু,তিন ঘন্টা আগেও তো খেল।
কিন্তু কিচেনে বা ডায়নিং এ যেতে ইচ্ছে করছে না।
স্বামীর ছবিটা মোবাইল স্ক্রীনে বড় করে দেখে আর বলে,
“কই আপনি?আমার ভালো লাগছে না… ‘
বন্ধন অবশ্য বলেছিল বাসায় ভালো না লাগলে আদাবরের বাসা থেকে ঘুরে আসতে।সকালে মুহিনকে ফোন করতে হবে ভাবে মিতু,ফের ঘুমিয়ে যায়।
বেলা প্রায় এগারোটায় ফোন দিয়ে খবর দেয় ছোট ভাই মুহিনকে।
মুহিন সব গোছগাছ করে রাখতে বলে,সেও বেশ খুশি।
কিন্তু,সে যে মামা হতে যাচ্ছে এখনো তা জানেনা।জানলে তো আনন্দে ফেটে পড়বে।
আজ শনিবার বাবাই এরও স্কুল নেই।মিতুকে দেখে খুব খুশী।কিন্তু লাগেজ ফের গুছাচ্ছে দেখে বেচারা মন খারাপ করে।
মিতুকে দেখেই জড়িয়ে ধরে ছেলেটা,ফের আলগা করে বলে
” আন্টি কোথাও যাচ্ছো?’
“হ্যা বাবাই।আব্বুর বাসায় যাচ্ছি, তুমি যাবে?’
“আমার তো স্কুল?’
“দুদিন থাকবো তো,দুদিনে স্কুল বাদ দিলে কি হয়?’
“না আন্টি তুমি জানোনা ফাইনাল পরীক্ষা সামনে?’
“আচ্ছা বেশ।ওখান থেকে স্কুলে যাবে,অসুবিধা কি?’
“না তুমি যাও…।’
বাবাই এর কপালের চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে মাথা বুলিয়ে দেয়।ছেলেটা তাকে অনেক পছন্দ করে,যদিও মা বলে এখনো ডাকেনি।তবে মিতু চায় ও নিজে থেকে বলুক।
আরও কিছুদিন সময় গেলে যাক,না হলে নিজেই আদায় করে নিবে মিতু বন্ধনের ছেলের কাছ থেকে মা ডাকটা।
“ও তো আমারও ছেলে…।’ভাবে মিতু।
দুপুরে চলে আসে মুহিন।মিতু তো প্রথম ওকে দেখে ভড়কে যায়।
“কি রে মুখের একি দশা করে রেখেছিস?দাঁড়ি কেন?জঙ্গী বাহিনীতে নাম দিয়েছিস নাকি?’
“আরে আপু তুমি দেখি কিছুই জানো না,দাঁড়ি রাখলেই জংগী হয় কে বল্ল?এইটা এখন হালের ক্রেজ।ইন্টার পাশ করে ফেলসি দুদিন পর ভার্সিটি যাব ম্যানলি লুক না হলে হয়?’
“হুম, তাই না?মুখটা গরিলা বানায় ফেল তোমরা আর এটারে বলো ম্যানলি লুক?’টিপন্নী কাঁটে মিতু।
“তাই আপু আমি গরিলা?আর দুলাভাই এরও তো দাঁড়ি আছে উনি তো গরিলা কিং!’মুহিনও পাল্টা ভেংচি কেটে বোনকে ক্ষেপায়।
“কি?কি বল্লি তুই? কে গরিলা কিং?ওটা তো তুই আর তোদের মতো নিউ জেনারেশন…. ‘বলে খবরের কাগজ পেঁচিয়ে ভাই এর গায়ে দেয় কয়টা ঘা।
মুহিন বাঁধা দেয়,
“আস্তে আপু আস্তে তোর লাগবে তো!’
মুহিনের কথায় ভড়কে যায় মিতু।ও কি তবে খবরটা পেয়ে গেছে?
দুপুরে ভাইকে ভালো মতো খাওয়ায় মিতু।সব কিছু গুছিয়ে বাবাই এর কাছ থেকে বিদায় নেয়।নীবিড় এসেছে বাসায় তবে তখন ঘরে ছিল না।আর থাকলেই বা কি?ওর তো মতিগতির কিছু বোঝা যাচ্ছেনা।আজকাল সারাক্ষন মোবাইলে কথা বলে,বের হয়ে যায়।রাজনীতি করছে নাকি কে জানে,মোবাইলে কথা আর ফেইসবুকের স্ট্যাটাস এ মনে হয় কোথাও যোগ দিয়েছে।কানাডায় কবে যাবে নাকি আর যাবে না তাও ঠিক করে বলে না।
নানু বাসায় ছিল না।রানু তো তার এসিসট্যান্ট তাকে নিয়ে সকালেই কোন আত্মীয়ের বাসায় গেছে।কিন্তু বাবাই কে এভাবে একা ফেলে যেতেও মন চাইছে না।
মোবাইলে দেখে বন্ধন এর ফিরতি এস এম এস।
“আমি জানি গো সোনা,কিন্তু কাজে বিশ্রীভাবে ফেঁসে গেছি,বাসায় এসেও তোমাকে সময় দিতে পারবো না।পরীক্ষা আছে সামনে।পদবীর জন্য এসব পরীক্ষা দিতে হয়।লক্ষীটি রাগ করো না,আমি মুহিনকে ফোন করে দিচ্ছি ও তোমাকে নিয়ে যাবে তোমার বাসায়।’
“আমার বাসা তো এটা?’দীর্ঘশ্বাস নেয় মিতু গাড়ীতে
বসে।জিপ গাড়ীটা পূর্বেই ম্যাডামের জন্য বরাদ্দ বন্ধনের কথা অনুযায়ী।
প্রায় অনেকদিন পর বাবার বাসায় আসলো মিতালী।আসার পথে মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনে মুহিন।বোনের পছন্দের মিষ্টি মালাইচপ, লাড্ডুও কিনে মহানন্দে।
মিতু টাকা দিতে চায়।মুহিন গম্ভীর একটা ভাব করে বলে,
“তুমি টাকা দিবা মানে?মামা হবো আমি আর আমি খরচা করবো না?আমার একটা দায়িত্ব আছে না?’
মিতু লাজুক হাসে ভাই এর কথা শুনে।আদরের ছোট ভাইটা তার কত বড় হয়ে গেছে?আজকাল টিউশনি করে ভাল পয়সা রোজগার করছে।
সুসংবাদটা বন্ধনই জানিয়ে দিয়েছে তাহলে। ওর বাবার বাড়ীর সকলে মোটামুটি জেনে গেছে।সেতারা জানতে পারে হয়তো পারুলও জানিয়ে দিতে পারে।
বাবার বাসায় এসে বেশ একটা স্বস্তি লাগছে মিতুর।বাবা তো “মামনী ‘বলেই জড়িয়ে ধরছেন তিনিও মহাখুশী।বাবাকে জড়িয়ে ধরে কি যে এক শীতল প্রশান্তি মিতুর।এত বড় মেয়েটা তবু মা মরা মেয়ের কপালে স্নেহের আদর বুলাতে ভুলেন না প্রিয় বাবা।মেয়ে আসবে জেনে সকালে নাকি নিজে বাজার করতে গেছেন।বাসার রহিমা বুয়া বল্লেন।অনেক দিন থেকেই কাজ করে রহিমা বুয়া।মিতুর দেশের বাড়ী জামালপুরের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। মিতু খালা বলে ডাকে।তাদের তিনতলা বাসার নিচে ছোট দুই কামরা ঘরে স্বামীকে নিয়ে থাকেন খালা।স্বামী রশিদ জোয়ার্দার সরকারি পিয়নের চাকরী করতেন। এখন বাবার বাসা দেখাশোনা ও বাবাকে সময় দেয়া উনার কাজ।কেয়ারটেকার হিসেবে স্বামী, স্ত্রী দুজনে ভালই দায়িত্ব পালন করছেন।বাসার চারিপাশে মোটামুটি বিশাল জায়গায় নানা পদের গাছ মিতুর বাবার বাসায়।জবা,রংগন,গন্ধঁরাজ,আমগাছ,সুপারি ও নারিকেল গাছে আবৃত।সেতারা বিয়ের আগে এসব যত্ন নিতো।এখন মুহিন ও রশিদ চাচা নেন।পূর্বে তো হলুূদ গাদা ফুলে ছেয়ে যেত উঠানের দিকটা,একুশে ফেব্রুয়ারীর আগের দিন সব ফুল চুরি হয়ে যেত।তাছাড়া রজনীগন্ধা আর গোলাপ গাছও ছিল।রজনীগন্ধা গাছে একবার বর্ষায় সাপ জড়িয়ে ছিল।সে কি ভয় মিতুর।
আর মিতুর প্রিয় গোলাপ গাছটাতো ওর সামনে প্রতিবেশীর ছাগল এসে খেয়ে ফেলেছিল।কী ভীষন জিদ হয়েছিল মিতুর আর সেকি কান্না জুড়ে দিয়েছিল ছোট্ট মিতু,এখন এসব ভেবে কত না হাসি পায়!বাবার বাড়ীর দোলনায় হালকা দোল খেয়ে পুরনো স্মৃতিচারন করে মিতু।
মুহিন অবশ্য কবুতর পালে,সেগুলিও ছাদে খোপ করে দেয়া, রহিমা খালা ও রশিদ চাচা এসবের যত্নে অনেক সাহায্য করেন।
“নাহলে যে কি হতো?’ভাবে মিতু।
বহু পুরনো মানুষ তারা মিতু, সেতারা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে তাই ভরসা করতে পারছে তাদের উপর।তাদের ছেলেমেয়েরা সব জামালপুরে থাকে।কিছুটা স্বার্থপর প্রকৃতির মধ্যবয়স্ক বাবা মায়ের খোঁজ নিতে চায় না।এটা নিয়ে রহিমা খালার মনোকষ্টের শেষ নেই।
সকালে রশিদ চাচাকে নিয়েই বাজার করেছে বাবা ফজলুল রহমান।মিতু,মুহিন,সেতারা সবাই রহিমা খালার স্বামীকে চাচা বলে ডাকে।
মিতুর জন্য মুরগী,চিতল মাছ,খাশির গোশত,কচুশাখ,লাউ,বড় বড় চিংড়ি।মেয়ে যা যা খেতে ভালোবাসে সবি এনেছেন।সন্ধ্যায় সেতারা ফোন করে তাকে।
“কি রে মিতু কেমন আছিস বোন?’
“ভালো আলহামদুলিল্লাহ্‌। ‘
“খবর পেলাম আলহামদুলিল্লাহ্‌, জামাই কই?মিষ্টি মুখ করাবি কবে?’
“হাহাঃ হাঃ কার সাথে যে বিয়ে দিলা,উনি যে ব্যস্ত মানুষ এখানে উনারে কই পাবা?আর মালয়শিয়ার টিকিট পাঠাও একবারে ওখানে গিয়ে মিষ্টি খাওয়াবো….’
” এখন আমাদের দোষ বুঝি?যাই হোক আমার এ মিষ্টি বোনটা যে বাসায় পড়াতে যেত তারাই তো তড়িঘড়ি করে নিয়ে গেল?হ্যা রে তোর নানী শ্বাশুড়ী কেমন আছেন?’
“ভালোই আছেন।ঐযে রানুর কথা বলেছিলাম না তাকে নিয়ে যা হচ্ছে বাসায়?’
“কি বলিস এখনো হতচ্ছাড়ি ঐ মেয়েটা আছে?ওকে তাড়াচ্ছিস না কেন মিতু?’
“আমি কি করে তাড়াবো?নানুই তো খবর দিয়ে আনিয়েছেন?’
“বোকার মতো কথা বলবি না,সংসারে অশান্তি হচ্ছে আর তুই চুপ করে থাকবি কেন?এটা এখন তোর সংসার,তৃতীয় পক্ষ মধ্যস্থতা করছে আর তুই এখনো ওকে তাড়াতে পারছিস না?’সেতারার দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই বোনের জন্য।
“বাবু আসুক আগে দেখি কি করা যায়।’
“দেখি না মিতু।আমি ছোটবেলা থেকেই তোকে দেখে এসেছি তোকে সরল সোজা পেয়ে মানুষগুলি তোকে ঠকাতো,তোর বান্ধবী গুলিও কখনো তোর বই আর পুতুল চুরি করে নিয়ে যেত আর তুই কিছুই বলতে পারতি না বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুধু কাঁদতি।এখনো দেখছি তেমনই আছিস?’
“ঠিক আছে বাবা বুঝেছি তো….’
দুবোনের অনেক কথা হলো।সেতারা তাকে সাবধানে নড়াচড়া যেমন ধানমন্ডির ডুপ্লেক্স বাসায় সাবধানে ওঠানামা করতে বল্ল।মিষ্টি বেশী খেতে বল্ল,তাতে নাকি বাচ্চার ব্রেইন ভালো হয়।আর বেশী বেশী কোরআন তেলাওয়াত ও তসবিহ পাঠ,খাবার ও ঘুমের জন্য নিজের যত্ন সহ অনেক কিছু বল্ল একেবারে তার মায়ের মতো করে।
আজকের সারাদিনটা অনেক ভালো কেটেছে মিতুর।যদিও বন্ধনের সাথে কথা হয়নি।রাতে রহিমা খালা তার বিছানার পাশে শুয়ে মাথা বিলি কেটে দিল।খুব আদর করে মিতুকে খালা।করবেই বা না কেন মিতুর মা যখন বেঁচে ছিলেন তিনি নাকি রহিমা খালাকে আশ্রয় দেন।মিতুর মা বাবা মিলে রহিমার বিয়ে দেন।তাই মিতু ও তার পরিবারের প্রতি খালার দরদও অন্যরকম।
মিতুও অনেকদিনপর খালার অনেক যত্ন আত্তি পেয়ে খুশী হয়।
আরামে মিতুর ঘুম এসে যেতে থাকে।তবে যাই হোক, বাসায় যেয়ে রানু মহারাণীর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে তাকে।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৩৭
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

সকালে বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে মিতালী।
“ওফহো আজ ফজরের নামাজটা কাযা হয়ে গেল!’
মিতু আফসোস করে।
ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথে বন্ধনের ফোন পায় সে
ঘুম কাতুরে গলায় বলে,
“বাবু…’
“বলো সোনা।’
“কই আপনি?কবে আসবেন?’
স্বামীর ফোন পেয়ে আহ্লাদে আটখানা মিতু।
“আসবো সোনা আমার একটা পরীক্ষা আছে।’
“আবার পরীক্ষা?’উতলা মিতু।
“হুম পদবীর জন্য নানা ধরনের পরীক্ষা আর মিশন থাকে।’
“আমি এসব বুঝি না।’
“শরীর কেমন?আর বমী হয়েছে?’
“শরীর ভালো, আলহামদুলিল্লাহ্‌, তবে আপনাকে ছাড়া একদম ভালো লাগছে না।’কাঁদো কাঁদো মিতু।
“বাবু এমন করে না,ভালো করে খাওয়াদাওয়া করো, বাবা কই?’
“ঘরে বোধহয় আমি তো মাত্র উঠলাম।’
“ঠিক আছে,আর একটু ঘুমাতে চাও?’
“না,উঠে যাব এখন।আচ্ছা শুনেন।’
“কি সোনা?’আদুরে জিজ্ঞাসা বন্ধনের।
“রানুকে বিদেয় করতে হবে।’
“হঠাৎ একথা কেন? কি হয়েছে?’
” ওর হাবভাব সুবিধের নয়।’
“কি বলছো?ও আবার কি করেছে?’
“সে অনেক কথা,আপনি তো বাসায় থাকেন না,সারাক্ষন নানুর কাছে পড়ে থাকে,নানুর মাথাটা খাচ্ছে একেবারে।যেভাবে হোক ওকে বিদেয় করতে হবে।’
“আহা বাবু, নানুই তো ওকে খবর দিয়ে আনিয়েছে,চাইলেই কি আমরা ওকে বিদেয় করতে পারি?ও চলে গেলে নানুর সেবা যত্ন কে করবে বলো?’
বন্ধনের কথা শুনে মিতুর যেন কান্না পেয়ে বসে উদ্বিগ্নতায়।
“কেন বাবু?যখন রানু ছিল না,তখন কি নানুর সেবা যত্ন হয়নি?আপনি জানেন,নানু ওকে পেয়ে আমাকে সহ্যই করতে পারছেন না,অযথা ভুল বুঝছেন,সংসারে অশান্তি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছেন না?’এক নিশ্বাসে মিতু পেরেশানি জানিয়ে দেয় তার।
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে,তুমি অযথাই দুশ্চিন্তা করছো।শোন কদিন থাকবে এখানে?’
“আপনি না আসলে আমি যেয়ে কি করবো?কে আছে আমার ঐ বাসায় বলেন?’ফের আহলাদিপনা মিতুর।
“কেন বাবাই?’
“হুম।’
“ঠিক আছে যখন মন চায় বাসায় চলে যেও।গাড়ী লাগলে আমাকে বলো।’
“কিন্তু রানুকে বিদেয় করার কথা তো কিছু বল্লেন না?’
ফের উদ্বিগ্নতা মিতালীর।
“আহা কি শুরু করেছো বলোতো মিতালী?’এবার গম্ভীর হয়ে যায় বন্ধন,ফের বলে,
“শুনো বাবু এত চিন্তা করোনা,রানুর বিষয় নিয়ে পরেরটা পরে হবে এখন বাবার বাসায় এসেছো খাওদাও,ঘুরো ফিরো,সবাইকে সময় দাও ভালো লাগবে।’
অনেকটা আদেশ করা কন্ঠেই বলে বন্ধন।
“ঠিক আছে।’
“ওষুধ খাচ্ছো ঠিকমতো?আর কয়টা বাজে এতক্ষন না খেয়ে আছো কেন?আমার বাবুটাকে না খাইয়ে রেখেছো?’অনুযোগের সুর বন্ধন।
“তাই না?বাবুর জন্য খুব দরদ আর বাবুর মা বুঝি কিছু নয়?’
“ঐটাতো আরও বেশী বাবু?এখনো এত অবুঝ হলে চলে?’
“কি? আমি অবুঝ?’ক্ষেপে যায় মিতু।
“আচ্ছা যাও যাও নাস্তা খেয়ে নাও পরে কথা হবে।’
“হুম।’
কথা সেড়ে আড়মোড়া দেয় মিতু।সাড়ে দশটার মতো বেজে গেছে।টের পায় মিতু ক্ষুধাও লেগেছে তার বেশ জোরে সরে।
রহিমা খালা টেবিলে নাস্তা রেডী করে রেখেছে।
পরোটা,ডিম,সুজি হালুয়া,কিছু ফলমুল টেবিলে সাজানো।
বেশ তৃপ্তি সহকারে খায় মিতু।
বাবা ও মুহিনের কথা জিজ্ঞেস করে।
বাবা ঘরে খবরের কাগজ পড়ছেন।মুহিন এখন খুব ব্যস্ত,সেই সকালে বেড়িয়েছে,ভার্সিটি ভর্তি দৌড় এখন তার।
কোচিং করেছে আবার নিজেও কোচিং করায়,টিউশনি তো আছেই।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম সংগ্রহ করছে,ঢাকার বাইরেও যেতে হবে কাল বলছিল বোনকে।
এসব নিয়ে খুব ব্যস্ত,অনলাইন নিউজ খুলতে চায় তারা কজন বন্ধু মিলে।ভালো কলামিষ্টও হয়েছে তার আদরের ভাইটি।বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তার লেখাও বের হয়েছে বেশ কিছু।মায়ের স্বভাব পেয়েছে ভাইটা।
মা ডায়রী লিখতেন,মায়ের লেখা কিছু গল্প ও কবিতাও আছে।মুহিন সেগুলো যত্ন করে রেখেছে।
মায়ের অনেকগুনও ছিল ভালো নাচও জানতেন প্রিয় মা।
বিয়ের পর ধর্মপরায়ন বাবা এসব আর করতে দেন নি।মিতুর মতো মাও স্কুলের ইংরেজী শিক্ষক ছিলেন।
অনেক সুন্দরী ছিলেন সেতারা,মিতু ও মুহিনের মমতাময়ী মা সব বন্ধ হয়ে যায় মায়ের শ্বশুরবাড়ীর কিছুটা কড়া শাসনে।
“মুহিন তো ঘরেই থাকে না আর যেদিন থাকে অনেক বেলা কইরা ঘুম থেকে উঠে।’রহিমা খালা বলে।
“তাই তো দেখছি।বেলা করে উঠলে আব্বু কিছু বলে না খালা? ‘
“না কি কইবো মুহিন তো আজাইরা থাকে না।ব্যাটা হইতাসে টিউশনী করে নিজের টাকায় নিজে চলে…।’
বাবার রুম থেকে ঘুরে আসে মিতু এবার।
বাবা খবরের কাগজ পড়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন।বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি।
মিতু মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেয়।
বাবার বুকে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে শ্বাসকষ্টটা আছে কিনা।বাবাকে কাঁথা গায় দিয়ে বের হয়ে আসে।
ঘরে বসে কি করবে,মুহিনটাও নেই।বাসা থেকে খানিকটা দূরে নতুন একটা শপিংমল হয়েছে।ওর বিয়ের কিছুদিন আগে।ওখানে বেড়িয়ে আসা যায় কি না ভাবে।
মিতু পেটে হাত দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে ফের মৃদু হাসে।
সুন্দর একটা শাড়ী পড়ে মিতু হালকা লাল, ছোটছোট ফ্লাওয়ার, আর লতাপাতা শেডের জর্জেটের শাড়ী।
আলমারী থেকে বের করে মার শাড়ী পড়েছে সে।
“আম্মুর কত প্রিয় শাড়ী এইটা!’অভিভূত মিতু।
বরাবরের মতো কাজল টানে চোখে,কপালে ছোট্ট টিপ।
রহিমা খালা তার আঁচলে রশুন ও ম্যাচ বাক্সে ম্যাচের কাঠি আর লহা বেঁধে দেয়।মিতুর ঘাড়ে কাজলের কালি লাগিয়ে দেয় নজরকাটার জন্যে।
আজ খালা মিতুকে চা ও খেতে দেয়নি।যে চা না খেলে ওর সকালের নাস্তাই ঠিকমতো হয় না,আর মেজাজ যায় চড়ে।
এসময় কোন চা খাওয়া যাবেনা রহিমা খালার বারণ।মিতুকে সাবধানে যেতে বলে।
মিতু বন্ধনকে টেক্সট পাঠায়,
“বাবু ঘরে বসে থেকে বোর লাগছে তাই বাসার কাছ থেকে শপিংমলটা থেকে একটু ঘুরে আসছি।’
মিতু মাথাটা আচড়ে,একটা ওড়না নিয়ে সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে বের হয়।আয়াতুল কুরসী পড়ে রহিমা খালা ফু দিয়ে দেয় মিতুর শরীরে।মিতুও নিজে নিজে পড়ে নেয়।
আয়নায় নিজেকে একটু দেখে নেয়।নীলগিরি ভ্রমনের কারনে খানিকটা কালো হয়ে এসেছে,তবে মন্দ লাগছে না তাকে।
বাসা থেকে কাছে রিক্সাতেই যাওয়া যায়।রিক্সায় খুব সাবধানে আসে শপিংমলে।
“ভাইয়া আস্তে চালায়েন।’সতর্ক করে মিতু।
একাই ঘোরাঘুরি করে, বাচ্চাদের দোকানে যায় বেশ একটা আগ্রহ নিয়ে।বাবাই এর জন্যে কি কিনবে তাই ভাবে মিতু।হঠাৎ হঠাৎ অজান্তেই যেন পেটে হাত চলে যায় তার।বাবু ঠিক আছে কিনা দেখাটাই যেন তার কাজ।
“ভাইয়ার জন্যে কি কিনবো বলতো ছোটবাবু,তারপর তোমার জন্যেও কিনবো সোনা…’মনে মনে যেন কত ভাবনা মিতালীর।
এক ভদ্রমহিলা সুন্দর কয়েকটা বাবুর জামা দেখছিলেন।ফুল তোলা,প্রজাপতি আঁকা নানা ডিজাইনের হাতের কাজ করা।বেশ আনন্দ লাগে মিতুর কাছে ছোট ছোট রংবেরং এর জামাকাপড় গুলো দেখে!নিউ বোরন বেবীদের নিমা টাইপ,ছেলে বা মেয়ে যেকোন বাচ্চাকে পড়ানো যাবে।মহিলা দুটা জামা নিয়ে চলে যাবার পর মিতুও আগ্রহ করে দেখতে থাকে।ছোট ছোট রুমাল,হাত মুজা,পা মুজা,টুপিও আছে দোকানে।আসছে শীতে নানারকম পসরা বসিয়ে সাজিয়ে রেখেছে বাচ্চাদের পোশাকে।
হঠাৎ ফেনের বাতাসে নিমাগুলি উড়ে পড়ে যায় নীচে।পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোক এবার আগ বাড়িয়ে,মিতুর দিকে এগিয়ে দেয় ছোট ছোট বাবুর জামাগুলি।
চমকে যায় মিতু তৎক্ষনাত।
কারন পাশে যে ভদ্রলোকটি দাঁড়ানো সে আর কেউ নয়।
“হীমেল ভাই….?’অস্ফুট জিজ্ঞাসা মিতালীর।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৩৮
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

মিতু পুরোই তাজ্জব বনে যায় হীমেলকে দেখে।এই অবেলায় এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারে না সে।আর হীমেল সাহেবের চেহারা দেখে তো আরও চমকে গিয়েছে মিতালী।
এমন ফরসা রংচঙা লোকটা তো তাম্র বর্ন হয়ে গেছে চেহারায়, আর মুখ ভর্তি দাঁড়ি।
যে লোকের বি.সি. এস ইঞ্জিনিয়ারিং হয়ে যাবার পর ভাবই আলাদা! গায়ের রং,রূপ আর আভিজাত্যের এত বড়াই সেই হীমেল আর সামনে দাঁড়ানো হীমেলের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফাঁড়াক।
দোকানীকে জামা কাপড়গুলি দিয়ে দেয় মিতু।কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে হীমেলের সামনে এভাবে নতুন বাবুর জামাকাপড় দেখতে।
বড় মামার ছেলে হীমেল।মামা মারা গেছেন তাও বছর পাঁচেক হয়ে গেছে।আরও একবোন ও ভাই আছে হীমেলের।জুঁই ও রুমেল।ছোট বোন জুঁই নাকি পালিয়ে বিয়ে করেছে।যদিও মিতুর বিয়েতে যখন এসেছিল তখন কিছু বোঝা যায় নি।রুমেলও খুব ভালো ছাত্র।
হীমেল বিয়ে করেছে তাও তিন বছর হয়ে গেছে।ছেলে হয়েছে তার, দেখতেও যেন অবিকল হীমেল।
মিতুর বিয়ে ঠিক হবার কিছুদিন পূর্বেও এক আত্মীয়ের বাগদান অনুষ্ঠানে দেখা হয়ে গিয়েছিল মিতুর সাবেক এই ভালোবাসার মানুষটির সাথে।
কিন্তু ততোদিনে মিতালীর কাছে হীমেলের উপস্থিতি তার অন্তরে কোনরূপ আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি।
তবে নির্লজ্জ হীমেল, সেদিন মিতুকে বলেছিল,
“তোমাকে তো অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে মিতু…আমার বউ কিন্তু তোমার মতো সুন্দরী নয়…’
কি নির্লজ্জের মতো কথা হীমেলের?
অথচ নিজের ক্লাসমেট,রূপাকেই সে বিয়ে করেছে।
যে রূপা মিতালীকে একবার মুঠোফোনে যা খুশি তাই বলে অপমান করেছিল।
কারন মিতু সেদিন তার মামার বাসায় ছিল,হীমেলের ফোন সে ধরেছিল।
হীমেলের সামনে ধনীর দুলালী মেয়ে রূপা,মিতালীকে সেদিন যা নয় তাই বলে অপমান করেছিল,কিন্তু হীমেল রূপাকে কিছুই বলেনি উলটো মিতুকে সরি বলতে বলেছিল এই হীমেল।
অথচ আজ এটা কোন ধরনের বেহায়াপনা?
“শত হলেও নিজের স্ত্রী তাকে কি করে রূপ নিয়ে অন্য রমনীর সাথেতুলনা দেয়া হয়?আসলে হীমেলের মতো মানুষই পারে কখনো আমাকে ছোট করেছে,এখন নিজের স্ত্রীকে।’
অথচ বিয়ের আগে এই রূপার কারনে তাকে ছোট করা হয়েছিল?
“কি অদ্ভুত মানুষের আচরন?নাকি মন ভরে গেছে রূপার রূপ এখন আর হীমেল সাহেবের মনে ধরছে না?তার কাড়ি কাড়ি টাকাও নয়?’যে টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল তার এই মামাতো ভাই।
একথা গুলো বিয়ের কিছুদিন আগেও ভেবে হতাশ হতো মিতু।প্রথম প্রেম বলে কথা অথচ কতই না ভালোবেসেছিল হীমেলকে।সেটা কী হীমেলের সৌন্দর্য্য না বয়সের তাড়না? সেটা যাই হোক হীমেলই তাকে প্রথম ভালবাসার আহবান জানিয়েছিল।তাতো মিথ্যে নয়?সেদিন গুলিও অনেক মধুর ছিল,যদিবা তা খুব অল্প সময়েই।কিন্তু কি এমন হয়েছিল হীমেলের পাশ করে বের হবার পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করলো?
মিতুকে করলো চরম অবহেলা,ভালোবাসার চূড়ান্ত অবমাননা।কিন্তু এসব এখন মিতুর কাছে বন্ধ চ্যাপ্টারের মতো।তাছাড়া সেদিনের ঐ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মিতু প্রচণ্ড রকম অপমানিত বোধ করে,হীমেলের বাসা থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আসে।পিছন ফিরে একবার তাকিয়েও ছিল মিতু।কই হীমেল তো আসেনি তার মান ভাঙাতে?তার উপর মামী আর হীমেলদের সাথে সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতা।তাই বলে কী এতদিনের সম্পর্কটা কি ঠুনকো ছিল ঐ অহংকারীর কাছে?
বিয়ের পূর্বে কিছুদিন হাহুতাশ করলেও মিতালী পিছনে ফিরে তাকায়নি।আর তাকাবেই বা কেন বন্ধনের মতো স্বপ্নের রাজকুমার সে পেয়ে গেছে।আর কী চাই।

“কেমন আছো মিতালী?’
“ভালো আলহামদুলিল্লাহ্‌। ‘
মিতু খানিকটা বিরক্ত মিতালী বলে ওকে হীমেল ডাকবেই বা কেন?এটা ওর আসল নাম আর এটা একান্ত তার প্রিয় মানুষরা তাকে ডাকবে।
“তাতো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আগের চেয়ে সুন্দর হয়ে গেছো….’মুগ্ধতা সেই আগেরই মতো যেন হীমেলের চোখে মুখে বরং আগের চাইতে আরও বেশী।
“তাই নাকি?’মৃদু হাসে মিতু
“পুরনো প্রেমিকাকে দেখলে সব প্রেমিকদেরই ওমন সুন্দর লাগে এটা তো একটা বাহানা,না জানি আর কত ছলনা তোমাদের পুরুষ মানুষদের….!’মনে মনে বিড়বিড় করে মিতু।
“তোমার কি সময় হবে মিতালী?’
“উফহ্ আবার মিতালী? মতলবটা কি হীমেল সাহেবের?’
ফের মনে মনে বিরক্তি মিতুর।
“কেন?’
“তাহলে কোথাও বসা যেত…।’
“কোথায় বসবো?’
“এখানেই পাশে ফুড কর্নার আছে।’
মিতু হাতের ঘড়ীটাতে সময় দেখে পৌনে একটার মতো বাজে।একটু পর যোহরের আযান দিয়ে দিবে।তাছাড়া বাসায় যাওয়া দরকার।
“না না বাসায় যাবো…। ‘
“বাসা তো কাছেই তোমার?এত তারার কি আছে?আমি তোমাকে বাসায় দিয়াসবো,দুমিনিট সময় যদি দিতে?’
সত্যি পুরো অবাক বনে যায় মিতু,যে লোক তাকে সরি,প্লিজ ইত্যাদি সৌজনতার ধার, ধারতো না,সবসময় যে নাক উঁচু করা ছাড়া কথাই বলতো না,দেখা করার কথা বল্লে মিতুকে কত কথা শোনাতো,আজ তার কি হলো?আবার মিতুকে বাসাও দিয়ে আসতে চায়?এত বিনয়?মনে মনে হাসি পায় মিতুর।
দুজনে ফুড কর্নারে ঢুকল।টেবিলের দুপ্রান্তে বসলো দুজন।
মিতু বারবার ঘড়ী দেখছে।বল্ল,
“বলুন,কী বলবেন?’
“তেমন কিছুনা,আসলে তুমি কেমন আছো তাই জানতে চাচ্ছিলাম।’
“আমি তো ভাল আছি, সেকথা তো বলেছি একবার।’
বেশ একটা ভাব নেয় মিতু।
“আচ্ছা বেশ কি খাবে বলো।’
ফের ঘড়ী দেখে মিতু।তারও এখন একটু ক্ষুধা লেগেছে দুঘন্টা হয়েছে যদিও নাস্তা করেছে।
“কিছুনা,আপনি খান,আমি বাসায় যেয়ে খাবো।’
“তা কি করে হয়?কিছু একটা খাও?লাঞ্চ আওয়ার প্রায় হয়ে গেছে বিরিয়ানি খাবে?তোমার তো ফেভারিট…। ‘
“আপনার মনে আছে?’মৃদু হাসে ফের মিতু।
“তা কেন থাকবে না?’
মিতু কথা না বাড়িয়ে চিকেন কর্ন স্যুপের অর্ডার দিতে বলে।
কিন্তু বারবার ঘড়ীর দিকে তাকাতেই থাকে সে।
হীমেল দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মিতুর দিকে।মিতু ভীষন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
ফের বলে,
“আপনার পোষ্টিং কোথায় হয়েছে?’
“কুমিল্লাতে।’
“ও আচ্ছা।জুঁই,রুমেল ওদের কি খবর?’
“জুঁই এর খবর জানিনা,রুমেল তো স্কলারশিপ পেয়ে গেছে।’
“কোথায়?’
“লন্ডন ইউনিভারসিটি। ‘
“ভালো,মামী কেমন আছেন।’
“আম্মা ভালো নেই,সংসারে নানা অশান্তি,জুঁইটা এমন করলো,মা চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’
“কি করেছে জুঁই?’
“কেন তুমি জানোনা?’
মিতু হেসে দেয় ফের,
“কি করে জানবো?’
স্যুপ এসে যায় মিতু আস্তে আস্তে খেতে থাকে ঠিক আগের মতোই যেন লাগে হীমেলের কাছে।
“তাও তো ঠিক?তুমি তো আমাদের বাসায় যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছো।’
“আমি বন্ধ করেছি নাকি আপনারা?’খানিকটা রেগে যায় মিতু।
“ঠিক আছে মিতু সব ভুল না হয় আমার?তাই বলে আম্মাকে একটু দেখে আসতে পারতে না?মা কি কম আদর করতেন তোমাকে বলো?’
এটা অবশ্য ঠিক কথা বড় মামী আসলেই অনেক ভালো,মিতুকে ভীষন পছন্দ করতেন,আদরও করতেন মামী।
“আমাকে কি এখন এসব বলবেন?’
“না তুমি বলো,তোমার বর কই?কেমন উনি?’
“উনি কক্সবাজারে।ইন্সপেকশন এ আছেন।’
“উনি তো আর্মি অফিসার।’
“হুম এয়ার মার্শাল এবং অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার। ‘
“কেমন মানুষ তাতো বল্লে না?’বেশ উৎসুক শোনালো হীমেলের কথাটাতে।
হঠাৎ মিতুর মোবাইলে ম্যাসেজ টোন আসে।ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে সে,দেখে বন্ধন এস এম এস পাঠিয়েছে।
“সোনা কই আছো?কে আছে সাথে?আমি খুব ব্যস্ত,এখানে সিনিয়র,জুনিয়র অনেক অফিসার তাই ফোন করতে পারছি না।আর শোন বাইরে বেশীক্ষন থেকো না,খাবার ঠিক মতো খাবে….।’
বন্ধন কেমন মানুষ প্রশ্নের জবাবটা দেয়ার ইচ্ছে নেই মিতুর। কারন মিতুর হাসি এস এম এস পাবার পর মিতুর দ্যুতিময় চেহারাই যেন হীমেলকে বুঝিয়ে দিল,যা বোঝানোর।
“কী হ্যাসবেন্ডের টেক্সট?’
“হুম।’
“লাকি হ্যাসবেন্ড তোমার।’
“আমিও…. ‘কিছুক্ষণ চুপ করে ফের মিতু বলে,
“কেন আপনিও তো লাকি,ধনীর দুলালীকে পেয়েছেন?’
টিপন্নী দেয় মিতু কিছুটা অভিমানে।
“পেলাম আর কই?’
“মানে?’মিতুর জিজ্ঞাসা
“ধনীর দুলালী, এখন ধনীর কাছে।’
“বুঝলাম না।’
“মানে সে এখন তার বাসায় আমি আমার বাসায়।’
“কই তার বাসা?’
“গুলসানে তার বাপের বাসায়।’
“আপনার ছেলে?কি জানি নাম ওর সে কই?’
“কাব্য। ওর মার কাছে।’
নামটা শুনে অবাক হয় মিতু।কারন এ নামটা মিতু একবার ঠিক করে ছিল সে অনেক আগে।’
এবার কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে মিতু,
” কী হয়েছে বলুন তো?আপনারা আলাদা আছেন কেন?’
মিতালীর কথায় যেন প্রাণ ফিরে পায় হীমেল।এতক্ষন পরে মেয়েটা যেন সহজ হয়েছে তার সাথে।
“সে অনেক কথা মিতু।’
“তো বলবেন না?সংক্ষেপেই বলেন।’
“রূপার একটা কাজিন আছে মুসা নামের,তার সাথে জুঁই ভেগে গেছে।এটা নিয়ে সংসারে অশান্তি,আমাদের কোনভাবেই বনিবনা হচ্ছে না।আমি ঠিক মতো অফিস করতে পারছি না।প্রায়ই ছুটি নেই,আম্মা দুশ্চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন।আম্মাকে নিয়ে হসপিটালে এদিক ওদিক দৌড়াই,আমিও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে চাকরীও থাকবে না।’
“কি বলেন?এখানে রূপার কি দোষ?’
“আছে দোষ আছে।তাছাড়া মুসা ছেলেটা ভালো না ড্রাগ এডিক্ট,একটা হেরোইনচার সাথে পালিয়ে,মুখে চুনকালি মাখিয়ে ভেগেছে জুঁই,আব্বা তো নাই,আম্মাও শেষ হয়ে যাচ্ছে।রুমেলও কদিন পর চলে যাবে।পুরো সংসারটা তছনছ হয়ে যাচ্ছে।’
কথা গুলো খুব খারাপ লাগে মিতুর।কিন্তু কি বলবে ভেবে পায় না।
“ঠিক আছে আমি মামীকে গিয়ে দেখে আসবো।নানুর বাড়ীর খবর কী?ভাড়াটিয়ারা ঠিক মতো নাকি ভাড়া দিচ্ছে না।তাছাড়া বাড়ীটা পুরাতন হয়ে গেছে,ভালো ডেপলপারকে দিয়ে সাড়িয়ে ফেলেন।ভালো ভাড়া পাওয়া যাবে।’
“ঐ বাসা নিয়ে এখন এত সব ভাবার সময় পাই না মিতু।আজিজ চাচা দেখছেন,দেখুক।তোমরা তো সবাই আমাদের ভুল বুঝে আছো।মাঝে মাঝে মুহিনও তো এসে এসব দেখাশোনা করতে পারে?’
মিতু একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।ওর আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।প্রায় দুটা বেজে গেছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে চায় এবার।
রাস্তায় নামে এবার যেখান থেকে রিক্সা নিবে সেখানে বিরাট খাদের মতে।
মিতুকে হাত দিয়ে ঠেক দেয় হীমেল।
“আস্তে মিতু তুমি এখানে দাঁড়াও।আমি রিক্সা দেখছি।’
হীমেল একটা রিক্সা ঠিক করে দেয়
রাস্তার খাদ পাড় হতে হলে,খুব সাবধানে যেতে হবে।
বড় একটা খাম্বা ধরে পাড় হতে নেয় মিতু।
“আরে আরে কি করছো,পারবে না তুমি পড়ে যাবে তো?’
হাতটা বাড়ায় মিতুর দিকে হীমেল।
মিতু আমতা আমতা করে,
হীমেলের হাত ধরার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার।আবার এমন ভয়ানক রাস্তা।
“শপিং মলের পেছনের দিক দিয়ে বের হওয়াটা মোটেই ঠিক হয়নি।এদিক দিয়ে কেন বের হলো হীমেল ভাই?’
বিড়বিড় করে মিতু।
হীমেলের বাড়ানো হাতের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে।রিক্সাচালক বেল চাপাচ্ছে সেও অপেক্ষমান দর্শনার্থী।
কি বিপদ মিতালীর!
হাত ধরবে কি ধরবে না ভেবে পায় না সে…..(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here