দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৬২
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
পাঁপিয়াকে পার্লামেন্ট এর সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।তার বিরূদ্ধে মামলা করা হয়েছে,এটেমট টু মার্ডার থানায় কেইস ফাইল করা হয়েছে।যাকে বলা হয় এফ আই আর(ফাইল ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট)।
কাজলের তৎপরতায় বেসরকারি চ্যানেলে পাঁপিয়ার বিরূদ্ধে তাৎক্ষনিক কার্যকলাপ,মিতালীর প্রতি হামলা,বাচ্চাটি পড়ে যাওয়া যা পরবর্তীতে খুনের সামিল
ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।
বন্ধু বন্ধনের বাসায় ক্যামেরা সহ ভিডিও চিত্রায়িত করা হয়েছে।যেখানে কার্পেটে মিতুর শরীর থেকে যেভাবে রক্ত ঝরেছিল, অনেকখানি সে রক্তের দাগ ইত্যাদি সব দৃশ্যাবলী,এরপর একে একে নানু,রানু,বাবাই,বুয়া সবার মুখ থেকে পাঁপিয়ার অশোভন আচরন সমন্ধে অভিযোগ ও ঘটনা ইত্যাদি ধারাভাষ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
শুধু তাই নয়,কাজলের সহযোগীতায় ঢাকা সি এম এই এইচে চ্যানেলের ইউনিট পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
এই খবরটা পুরো শহরটাকে হেলে দিয়েছে।
একজন আর্মি ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার অর্থাৎ এয়ারমার্শাল অফিসারের বাসায় দিনে দুপুরে একজন এমপি মহিলার আক্রমন!
মিতুকে হসপিটালে নেয়ার পর থেকেই কাজল চুপ করে বসে থাকেনি।
ছোটবেলার সহপাঠী তারা,মিজান ও কাজল বন্ধনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।ভার্সিটিতেও ছিল কাজল বন্ধনের সাথে।পাঁপিয়ার উশৃঙখল জীবনযাপন বন্ধনকে জ্বালাতন সবই মোটামুটি সে জানতো।
যদিও বন্ধনের তখন একটাই উদ্দেশ্য ছিল,মিতুর জন্য দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করা।
বন্ধন তার শ্বশুরের দাফন থেকে শুরু করে মিতুর জন্য রক্ত যোগাড়ে পাগলের মতো এখানে ওখানে ছুটেছিল ঠিকই,কিন্তু বুকে তার জ্বলছিল বাচ্চা হারানোর অনল।
প্রতিশোধের আগুনে কয়েকবার হ্যান্ডগান বের করে,পাঁপিয়াকে শুট করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বন্ধন।বারবার কার্পেটে লেগে থাকা রক্ত, মিতুর আর্তনাদ তারপর যখন শেষবারের মতো শুনলো বাচ্চাটাও নেই,সাথে সাথে পাঁপিয়ার বাসায় যাওয়ার জন্যে তাকে জিন্দা দাফন করার জন্যে উদ্যত হয় বন্ধন।
কিন্তু কাজল এগিয়ে এসে বন্ধুর মতোই কাজটি করে।
“দোস্ত এভাবে ওকে খুন করলে তুই সব দিক দিয়ে বিপদে পড়বি।’
“আমার আর কি বিপদ হবে কাজল,ঐ ডাইনী আমার সব শেষ করে দিয়েছে আর তোরা আমাকে বলছিস ওকে ছেড়ে দিবো?’
“নো, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে।আমি আমার চ্যানেলের ইউনিট পাঠিয়ে দিয়েছি তোর বাসায়, তারপর দেখো বন্ধু পাঁপিয়া কিভাবে ফিনিশ হয়।’
অনেক কষ্টে নিজেকে সামাল দেয় বাবু,তার পছন্দের পিপি এইট হ্যান্ডগানটা আবার জায়গামতো রাখে ফের।
তবু মনে মনে ভাবে,
“এইবার আমার হাত থেকে বাঁচলেও পরেরবার কেউ বাঁচাতে পারবেনা ইউ বিচ্…।’
একটি চ্যানেলে প্রচারের পর অন্য সমস্ত চ্যানেল,মিডিয়া এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ব্যাপক আলোচনা,সমালোচনার ঝড় তোলে পাঁপিয়ার এই হামলা করার নেপথ্য কাহিনী।
সামাজিক যোগাযোগ থেকে প্রচুর প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে,সবার একই জিজ্ঞাসা,মিতুর জন্যে রক্তের কি ব্যবস্থা হয়েছে,ও কি বেঁচে আছে কি না?বাচ্চাটার কি অবস্থা হলো?বাচ্চাটা যখন নেই,বিশেষ করে রক্তাক্ত কার্পেট দেখে মানুষের মনে আরও প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব তৈরী হয়েছে মিতুর জন্যে।
“বাচ্চাটার কি দোষ?’
“এইভাবে দিনে দুপুরে একটা প্রেগন্যান্ট মেয়ের উপর হামলা?তাও আবার এমপি এই কাজ করলেন?’
“এ আমরা কোথায় বাস করছি?’
তাছাড়া মিতুর বাবাও মারা গেছেন ইত্যাদি বিষয় গুলো সাধারন জনতার মনে সফট কর্নার জাগিয়ে তোলে,আস্তে আস্তে পুরো দেশে হৈ চৈ পড়ে যায় মিতু ও তার পরিবারের জন্যে।
বাচ্চাটা দুর্ঘটনায় বের হয়ে গেছে শুনে,সাধারন মানুষ একে খুন বলে দোষারোপ করে পাঁপিয়ার দ্রুত বিচারের অভিযোগ করে তীব্র নিন্দা জানায়।
এসবই বন্ধন অনুধাবন করছিল,শশরীরে ক্যামেরাম্যানদের সাথে কথা বলতে পারছিল না,তবে কাজল তাকে বারবার ফোন করে আশ্বস্ত করছিল।এবং সে নিজেই এ ব্যাপার গুলি হ্যান্ডল করতে উদ্যত হলো।
ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এখন অনেক তৎপর এসব স্পর্শকাতর ঘটনায়।
যত দ্রুত মানুষের কাছে এ সমস্ত খবর পৌঁছে দিতে পারবে সে বিষয়েই তাদের সার্বক্ষনিক চেষ্টা।
আর এখন তো সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমেও এসব খবর দ্রুত সাইবার টপ নিউজ হতেও দেরী লাগায় না।
সারাদেশ থেকে বন্ধন ও মুহিনের কাছে প্রচুর ফোন আসতে থাকে।
এক পর্যায়ে প্রায় মধ্যরাতে ক্যামেরার সামনে বন্ধন ও মুহিন কিছু কথা বলে।
তবে মানসিক অবস্থা কারোরই ছিল না,মিতুর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া ও দোষী ব্যক্তির দ্রুত শাস্তির কথাই বললো বন্ধন ও মুহিন।
মিতুর ভালোভাবে জ্ঞান ফিরতে তাও প্রায় দুদিন লেগে গেল।
জ্ঞান ফেরার পর থেকে ওর কেমন যেন শুন্য শুন্য লাগতে থাকে।ওর মনে হচ্ছিল ওর শরীরে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারেরে মতো কোন নল ঢোকানো হয়েছিল,
“আচ্ছা নলটা ঢুকিয়ে ওরা আমার মেয়ের কোন ক্ষতি করলো না তো?সোনা মানিক মেয়ে আমার?’
শুধু তাই নয় মিতু যখন একটু হাটতে পারলো তখন হসপিটালের এখানে সেখানে চোখ বড়বড় করে কি যেন খুঁজতে লাগলো।
মুহিন,চাচী,পারুল কাউকেও যেন চিনতে পারছিল না।
“মিতু মা কেমন আছিস রে মা?এখন কেমন লাগছে তোর?’
চাচী জানতে চাইলেন।
সেদিকে খেয়াল না করে মিতু কি যেনো ভাবতে লাগলো,
“আমার আবার কেমন লাগবে?আচ্ছা আমার বাবুকে দেখেছো?ও কোথায় বলোতো?’
পারুল,মুহিন, চাচী প্রথমে ভাবলো বন্ধনের কথা বলছে মিতু।
এরপর জামান এগিয়ে এসে বলে,
“ভাবী স্যার ডকটরের সাথে কথা বলছেন,কথা শেষ হলেই চলে আসবে।’
ফের মৃদু হেসে ওঠে মিতালী,
“দূর কি যে বলো না,আমি কি উনার কথা জিজ্ঞেস করেছি নাকি?’
মিতুর সম্মুখে অপেক্ষমান সবাই যেন চমকে উঠল মিতুর কথায়।
“কার কথা বলছো মিতু আপু?’পারুলের জিজ্ঞাসা।
“আরে আমার মেয়ে,,,আমার মামনীটার কথা বলছি,,,ছোট্ট মেয়ে আমার এখানে কোথাও কিছু চেনে না ও কোথায় গেলো বলো তো,যাও ওকে আমার কাছে নিয়ে আসো,,, নাহলে হারিয়ে যাবে আমার মেয়ে,,।’
মিতালীর কথায় সবাই একেবারে নিস্তব্ধ।
চাচী,পারুল,মুহিন,জামান সবাই অসহায়ভাবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
“মিতু আপু কি বলছে এসব?’ কোন জবাব খুঁজে পায় না পারুল।(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান
দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৬৩
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
আর্মি অফিসারের বাসায় দিনে দুপুরে একজন সংসদ সদস্য বা এমপি(মেম্বার অফ পার্লামেন্ট) মহিলার আক্রমন খবরটা পুরো শহরে তোলপাড় লাগিয়ে দিল।
সবার একটাই জিজ্ঞাসা ছিল,আর্মি অফিসারের বাসায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়িয়ে কিভাবে এটা ঘটলো বা সম্ভব।
কাজল তার ইলেকট্রনিক মিডিয়া চ্যানেলে খবরটা যখন ব্রেকিং দেয় অজান্তে সে কিছু ভুল করে বসেছিল।
একজন উড়োজাহাজ প্রকৌশলী,যখন সামরিক বাহিনী পদে নিযুক্ত হোন তখন তিনি স্বাভাবিক ভাবেই সামরিক বাহিনী কতৃর্ক নানা ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
গনমাধ্যম গুলোতে এ নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক দেখা যায়।
পরবর্তীতে কাজলের সহায়তায় বন্ধন আবারও ক্যামেরার সামনে হাজির হয়ে ব্রিফিং দেয়,মিডিয়া ও প্রেস কনফারেন্সে।
আমি বন্ধন আহমেদ বাবু, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা।
“কিন্তু আপনি তো বৈমানিক? আপনি কিভাবে সেনা কর্মকর্তা?’ সাংবাদিকের প্রশ্ন।
“সে ব্যাপারে আমি আসছি।পরিচয়ের নেপথ্যে কিছু বলে নেয়া এজন্যই জরুরী।বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বা বাংলাদেশ এয়ারফোর্সে(বি এ এফ) তে দুটো পদবী থাকে,একটি হচ্ছে অফিসার বা কর্মকর্তাদের পদবী,অপরটি হচ্ছে বিমানসেনাদের পদবী।
যারা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তারা এ দুটোর মধ্যে অর্থাৎ জেনারেল অফিসার অথবা বিমানসেনা অফিসারের মধ্যে পার্থক্য বুঝে নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আবেদন করতে পারেন।
একজন বিমানসেনা বলতে শুধু বৈমানিক বোঝায় না,যেমন আমার ক্ষেত্রে,আমি একজন বিমানসেনা,ইংরেজিতে যাকে বলা হয় এয়ারম্যান
পাশাপাশি আমি ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার অর্থাৎ উড়োজাহাজ প্রকৌশলী।
এক্ষেত্রে প্রত্যেক বিমানসেনাই উপযুক্ত অফিসার।’
“আপনাদের র্যাংকিং গুলো আসলে কি বলা হয়?সেনা অফিসার বা বিমানসেনাদের মধ্যে পার্থক্যটা কি একটু খুলে বলবেন?সাধারন মানুষ অনেকসময় এ দুটোর পার্থক্য বোঝে না ‘
“শুনুন বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী তিনটি বাহিনীর সমন্ধয়ে গঠিত,এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ আর্মি,বিমান ও নৌবাহিনী।
আর্মি বা সৈন্য পদে যেসমস্ত পদবী বা র্যাংকিং আছে সেটা মেরীন বা বিমান বাহিনীতেও আছে।
যেমন উদাহরণ স্বরূপ সৈন্যবাহিনীতে যাদের পদবী জেনারেল সেক্ষেত্রে আমাদের পদবী হচ্ছে এয়ার মার্শাল।
তাছাড়া এয়ার অফিসারদের আর যেসব পদবী থাকে সেগুলো হচ্ছে,এয়ারচিফ মার্শাল,এয়ার মার্শাল,এয়ার ভাইস মার্শাল,এয়ার কমোডোর,গ্রূপ ক্যাপ্টেন ইত্যাদি পর্যায়ক্রমিক ধাপ।এর ভেতর সর্বোচ্চ পদবী হচ্ছে এয়ার চিফ মার্শাল বা বিমান বাহিনী প্রধান যার পদবী কেবলমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়ে থাকেন।’
“তাহলে বন্ধন স্যার আপনার র্যাংকিং বা পদ মর্যাদা কি?আপনি কি বৈমানিক জেনারেল অফিসার না বিমানসেনা?’
“আমার পদবী হচ্ছে এয়ার মার্শাল অফিসার।জ্বী আমি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একজন গর্বিত বিমানসেনা।’
“তাহলে আপনাকে ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার আর্মি অফিসার কেন বলা হয় স্যার?’
“আমি যখন বি এ এফে জয়েন করবার উদ্দেশ্যে আবেদন করি তখন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অর্থাৎ উড়োজাহাজ প্রকৌশলীতে পড়াশোনা শেষ করি,এভাবে আমি কম্পিউটেশনাল ফ্লাইট ডায়নামিক ইঞ্জিনিয়ার পদে নিযুক্ত হই।তবে ফ্লাইট ল্যাফটেনট অফিসার বলা হলে আর্মি অফিসার আর বলার নিয়ম নেই।এক্ষেত্রে যারা বিমান চালায় এবং আকাশে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরনের আগে এয়ারক্রাফটের বিভিন্ন ইঞ্জিন পরীক্ষার জন্য যারা কাজ করেন অর্থাৎ পাইলট এবং ইঞ্জিনিয়ারকে অনেকসময় সবাই এক করে ফেলেন।’
“তাহলে স্যার পাইলট এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কি এক নয়?’
“সেটা নির্ভর করে যিনি বিমান চালাবেন তিনি একইসাথে দুটো কাজেই পারদর্শী কিনা,পাইলট এবং ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার যদি একই ব্যক্তি হোন তাহলে তিনি একই সাথে দুটো কাজ করতে পারবেন তবে অনেক ক্ষেত্রে দুজন বা তারও অধিক অফিসার নিযুক্ত থাকেন তবে তা বিমান বা ফ্লাইট বুঝে?’
“বন্ধন স্যার আপনি অ্যারোমেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোথা থেকে কমপ্লিট করেছেন?’
“মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট।’
“স্যার আপনি যেহেতু বিমানসেনা তাহলে আপনি কি বিমানও চালান না ইঞ্জিনের পরীক্ষাগুলি দেখেন।’
“দুটো কাজই করেছি আল্লাহর রহমতে তবে ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয় গুলো এখন বেশী দেখে থাকি।’
“স্যার আর একটা গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন?’
“বলুন।’
“আপনি যেহেতু বিমান সেনা তাহলে ক্যান্টনম্যান্টে কেন থাকছেন না?সেনারা তো অত্যন্ত স্ট্রিক এন্ড ডিসিপ্লিন লাইফ লিড করে? আপনি কেন বা কিভাবে আর্মি সিকিউরিটি সিস্টেমের বাইরে?’
“দেখুন আমি মোটেও সিকিউরিটি সিস্টেমের বাইরে নই।
আমার বাবা শরাফাত আহমেদ ছিলেন বিগ্রেডেয়ার জেনারেল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা।যুদ্ধের পরপরই আমরা নানা সময়ে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট এ থেকেছি।বাবা তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থেকে ধানমন্ডিতে এই বাসাটা উপহার হিসেবে পান।শেষবারের মতো বাসাটি রেজিষ্ট্রিশেনের সময় তিনি মারা যান এবং আমার মায়ের নামে রেজিস্ট্রি হয়।বাবার চাকরী থেকে অবসরের পর আমরা সবাই এ বাসাতে উঠি।
এই বাসাটিতে থাকার ইচ্ছা তখন থেকে পোষন করি।আমার মা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আবেদন করি যেহেতু আমি নিজেও এতদিনে বিমানসেনা কর্মকর্তা তাই আমাকে কখনো কুর্মিটোলা ক্যান্টন মেন্ট,কখনো মিরপুরে থাকতে হয়েছে।’
“তাহলে সেখান থেকে এখানে কিভাবে এলেন?’
“এখানে আসার পেছনে অনেক ব্যাখ্যা আছে এম আই এস টি থেকে ভালোভাবে পাশ করতে পারলে কেউ বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ ভালো জবের চেষ্টা করেন কেউবা আমার মতো বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সে।ভাগ্য ভালো হলে বিমান বাহিনীতে গড়ে স্বপ্নের ক্যারিয়ার। আমিও তাই গড়েছিলাম। এম আই এস টি তে থেকে যেই পাশ করুক চাকরীসহ নানা ধরনের সুবিধা সে পাবে।তার মধ্যে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্লট বা এ এইচ এস অথবা মিরপুর ডি ও এইচ এসে ফ্লাট সুবিধা তো আছেই।সেক্ষেত্রে আমারও সুযোগ হয় এই সুবিধাটা শুধু আমি অন্যভাবে নিয়েছি।বাবা,মায়ের শেষ স্মৃতি হিসেবে মাননীয় সরকারের দেয়া বাবাকে ধানমন্ডির ঐ বাসাতে থাকার অনুমতি পেয়ে যাই।তবে এখানে আর্মিদের মতো সিকিউরিটি সুবিধাটা সেভাবে নিতে পারিনি, যেটা আমাকে নেয়ার জন্যেও বলা হয়েছিল, যার খেসারত এখন আমাকে দিতে হচ্ছে।’
“মিতু ম্যাডামের ব্যাপারে কিছু বলুন,কেন আক্রমন করা হলো,পাঁপিয়া ম্যাডাম কিভাবে সেটা করলেন?’
“দেখুন এ ব্যাপারে আপনাদের কারো মনে কোনো সংশয় ছিল না,কারন গতকালই বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সহ নিউজ করা হয়েছে।আর যার কথা বল্লেন তিনি কিভাবে করলেন ঐ মুহুর্তে তো আমি বাসায় ছিলাম না তাছাড়া বাসার সদস্যরা যা দেখেছে সেটার বর্ননা তো সবাই দিয়েছে তাই না?শুধু মিতু ম্যাডামের জন্যে দোয়া করবেন সবাই।’
“বন্ধন স্যার আরেকটা কোয়েশ্চেন ?’
“বলুন?’
“পাঁপিয়া কি হয় আপনার? তিনি তো অভিযোগ করেছেন আপনার বিরুদ্ধে?এ বিষয়ে কি কিছু বলবেন?আর বাচ্চাটাকে কি সত্যি বাঁচানো গেল না?’
অনেক পেছন থেকে স্মার্ট অল্প বয়সী তরুনী রিপোর্টার বেশ উৎসুক ভঙ্গীমায় জিজ্ঞেস করলো বন্ধনকে এটা।
বন্ধন এবার লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো,প্রশ্নের ধরনটা মনে হলো তীরের মতো বেঁধেছে তার বুকে।
শত শত ক্যামেরা,লাইট আর সাংবাদিকের চোখ এখন একযোগে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে,জবাবের অপেক্ষায় বন্ধনের।
কিন্তু বন্ধনের মুখে এর কোন জবাব নেই আর।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৬৪
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
সেতারা এসেছে মালয়েশিয়া থেকে।বাবা মারা যাবার প্রায় চার পাঁচদিন পর এসেছে।ছুটি পাচ্ছিল না মিতালীর দুলাভাই আরিফ হোসেন। যিনি ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এবং মালয়শিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।সেতারাও তাই,সেও শিক্ষিকা সেখানকার একটি স্কুলের তবে পাশাপাশি তারা রেস্টুরেন্টও চালায়।
বাচ্চাদের স্কুল ও সবকিছু ম্যানেজ করে তারা এসেছে।
দুটো বাচ্চা তাদের।
সেতারা, মিতুকে দেখে আরও ভেঙ্গে পড়ে।
জ্ঞান ফিরে পাবার পর অস্বাভাবিক আচরন করছে মিতু।
সবার সাথে স্বাভাবিক কথা বলছে,যেন কিছুই হয়নি।
কখনো খুব বেশী চুপ,কখনো একাই বিড়বিড় করে।
হীমেল খেয়াল করে দেখলো,মিতু এখনও পেটে হাত দিয়েই কিন্তু কথা বলছে।শেষবারের মতো শপিং মলে যখন তার সাথে দেখা হয়েছিল তখনও কিন্তু মিতুকে সে পেটে হাত দিতে দেখেছিল।
“তাহলে কি ভাবছে মিতালী?বাচ্চাটা ওর পেটে আছে এখনও এমনটাই কি ভাবছে মেয়েটা?’
“হীমেল ভাই তুমি?’
চমকে ওঠে মিতু।
“আচ্ছা শুনো মামার দাফনটা কোথায় করেছো?বাইরে যে বৃষ্টি?’
হীমেল কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না।
শুধু মাথাটা নাড়িয়ে বল্ল,”সবই ভালোভাবে হয়েছে মিতু?তুমি কেমন আছো? ‘
“আমি ভালো আছি,আমাকে নিয়ে ভেবো নাতো,,,আচ্ছা শুনো আজ আমি তোমাদের বাসায় খাবার নিয়ে পাঠাবো,মামী,জুঁই, তুমি নিশ্চুই কিছু খাওয়া হয়নি তোমাদের?’
হীমেলের বুকটায় শীতল স্রোতধারা বয়ে যায়।
মিতালীর মামা অর্থাৎ হীমেলের বাবা মারা গিয়েছে তাও বছর পাঁচ ছাড়িয়ে গেছে।
“মিতু কি সেই স্মৃতিতে ফিরে গেছে?’
“কি হলো কথা বলছো না কেন?আর আবারও আমাকে মিতু বলে ডাকছো?তুমি আমাকে মিতালী বলে ডাকতে পারবে বলেছি তো,,,আর আমার ফোনটা তখন এভাবে কেটে দিলে কেন হ্যা?’
“মিতু তুমি শান্ত হও,,,সব হবে,,,আমার ভুল হয়ে গেছে তোমার ফোন রেখে দিয়েছি,,,আর এমন হবে না।’
বন্ধন প্রায় সাথে সাথে উপস্থিত হলো।
সাথে সেতারা।মিতুকে আই সি ইউ থেকে এখন হসপিটালের কেবিনে দেয়া হয়েছে।
সেতারার গা যেন জ্বলে উঠল, “এমনি মিতুটার এ অবস্থা,অস্থির ওকে তো তুই করছিস,বন্ধন না জানি কি ভাবছে,,, এত দরদ এখন কে দেখাতে বলেছে তোকে?’
মুহিনকে ইশারা করে সেতারা।
হীমেলকে নিয়ে রূমের বাইরে সরে যায় মুহিন।
মিতু বন্ধনকে এখন মোটেও সহ্য করতে পারছেনা।
যতবার বন্ধনকে দেখছে,ততোবারই দোষারোপ করছে তাকে এই বলে যে সে তার বাবুকে লুকিয়ে রেখেছে।
“আপনি?আপনি আবার কেন এসেছেন?’
প্রচন্ড ক্ষোভ মিতুর।
“আহা কি হচ্ছে মিতু?উনি আসবে না মানে?কি বলছিস?’
“তাহলে বলো তাকে,,,আমার মেয়েকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে?বারবার কেন একা আসে আমার মেয়েকে আনে না কেন সাথে?’
“আনবে,, আনবে মিতু একটু শান্ত হো। ‘
মিতু কোনভাবেই শান্ত হতে চায় না। ডকটর অবশ্য বলেছেন, ” মিসেস মিতালী আহমেদ প্রচণ্ড শোক পেয়েছেন।
মানসিকভাবে আঘাতটা খুব বেশী পেয়েছে সে।
মস্তিষ্কের সাবকনশাস মাইন্ড থেকে তার স্নায়ুতে কিছু সময়ের জন্য তথ্যগুলো সঠিক ভাবে আদান প্রদান করতে পারছে না।অর্থাৎ সময়ের সাথে রোগীর চিন্তাভাবনা সঠিকভাবে সমন্ধিত হতে পারছে না,বা ভারসাম্য রাখতে পারছে না।এসময় রোগী চোখের সামনে যা দেখে তা নিজের মতোন।নিজের মতো করে ভাবে ও কথা বলে এবং সেটাই বিশ্বাস করে।
যেটাকে চিকিৎসক বিজ্ঞানীর ভাষায় বলা হয় হেলুসিনেশন বা দৃষ্টিভ্রম।
এধরনের বিভ্রান্তি বা মিথ্যা বিশ্বাস জনিত কারনে রোগী, সাইকোসিস রোগে বা বিষাদগ্রস্থ মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।মিসেস মিতালী আহমেদ এর ও তাই হয়েছে।’
কথা গুলো বলেন,সাইক্রিয়াটিষ্ট ডাঃ তারেক ইসলাম খান।
তিনি বন্ধনের আরেক বন্ধু ডাঃ মিজানেরও বন্ধু হোন।
সি এম এইচে মিতুকে তার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সেতারা ও বন্ধন বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ডাঃ তারেক এর কথায়।
“ডকটর মিতু কি তাহলে মেন্টাল প্যাশেন্ট এ পরিণত হলো?’সেতারা আশংকা প্রকাশ করে।
“দেখুন তিনি এখন ম্যান্টালি আনকনশাস, কিন্তু তার মানে এই নয় তিনি পাগল বা উন্মাদ।আর তাছাড়া আর একটা ব্যাপার প্রচুর রক্ত গেছে উনার। উনার শরীরে একসাথে অনেকগুলো ব্যাগের রক্ত ঢুকেছে।যেটা মানসিকভাবে এর একটা ইফেকট থাকে ব্লাড গুলোর সাথে এডজাষ্ট করতে।উনাকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সাইকোথেরাপী দেয়া হবে।সপ্তাহে অন্তত দুথেকে তিনবার কাউনসিলিং করা হবে।এছাড়া সাইকোসিস জনিত রোগের ওষুধ তো আছেই।আর আপনারা যারা পরিবারে তার আপনজন তারাও কিন্তু তাকে কাউন্সিলিং করতে পারেন।দেটস এনাফ টু মেডিকেয়ার হার।’
“কিন্তু সাইকোসিস রোগীর ওষুধ তো শুধু ঘুমের ওষুধ,মিতুর শরীরের যে অবস্থা তাতে তো সে আরও দূর্বল হয়ে পড়বে ডকটর?’বন্ধনের জিজ্ঞাসা।
“না না বন্ধন এটা ভাবা ভুল।সিডেটিভ ওষুধ দেয়া হবে বিকজ অফ কিপিং হার মাইন্ড কাম এন্ড কুল,কিন্তু তার সাথে ডিপ্রেশন রিমুভ করার ওষুধও থাকবে,শরীর দূর্বল বলেই তাকে হাই প্রোফাইলড ভিটামিন দেয়া হবে।’
“কতদিন চলতে পারে এই মেডিকেশন? ‘
“সেটা তো এখনই সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।তবে ছয়মাস পর্যন্ত টানা ওষুধ চলবে, কোনভাবে বন্ধ করা যাবে না,আর এ সময়ে প্রেগন্যান্ট হওয়ার কোন চান্স থাকবে না।সাইকোসিস রোগীদের কড়া ডোজের ওষুধ সো বি কেয়ারফুল।’
“ডকটর আর একটা কথা?’
“বলুন।’
“এত সিডেটিভ বা এংজাইটি রিমুভের ওষুধে কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা হার্টের কোন অসুবিধা হবে না তো?’
“ডোন্ট ওয়ারি বন্ধন।দিস মেডিকেশন সিষ্টেম হ্যাজ টু টেকেন বিসাইড পেশেন্ট।পেশেন্ট এর ধারন ক্ষমতার ভেতরেই প্রতিটি ডোজ দেয়া হবে।আর একটা কথা আপনারাও রোগীর সাথে কাউনসিলিং করবেন।কথা বলবেন,গল্প করবেন,তার পুরনো প্রিয় স্মৃতির গল্প,গান শোনানো,শপিং করা,কোথাও ঘুরে আসা ইত্যাদি। পেশেন্টকে মোটিভেট করবেন।ইটস উড বি গুড হেল্প ফর পেশেন্ট টু গেট ওয়েল হার সুন।থ্যাংক ইউ।’
ডকটরের সাথে প্রয়োজনীয় কথা সেরে নিউজ কনফারেন্সে এটেন্ড করে।কাজল থাকে তার সাথে।কনফারেন্সে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর স্বাভাবিকভাবেই দেয়ার চেষ্টা করে ।প্রায় সতেরো বছর ধরে বন্ধন একজন বিমানসেনা,এখন প্রতিরক্ষা বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।এর আগেও কনফারেন্সে এসেছে তবে তা ছিল তার কাজের তাগিদে,দেশের সেবার খাতিরে মাত্র কিছু সময়ের জন্যে সাক্ষাতকার।
অথচ কনফারেন্সে কিছু প্রশ্নের উত্তর তো দিতে গিয়ে তাকে খানিকটা হলেও হিমশিম খেতে হয়েছে।
এত কিছুর পরও এই প্রতিকূল পরিবেশে মাথা ঠান্ডা রেখে জবাব দেয়া এত সহজ তো নয়?
চশমা পরিহীতা স্মার্ট মেয়েটির প্রশ্ন শুনে বন্ধন কিছু সময়ের জন্যে চুপ হয়ে যায়।
সব ক্যামেরা, লাইট, জিজ্ঞাসু দৃষ্টির মুখগুলো দেখে নিজেকে ফের সচল করে বন্ধন।
“দেখুন তিনি কি অভিযোগ করেছেন, সেটা তিনি অর্থা পাঁপিয়াই বলতে পারবেন।আমার পক্ষে সেটা কি করে বলা সম্ভব?আমি আগেও বলেছি ঐসময়টা আমি উপস্থিত ছিলাম না।’
“তাহলে কখন উপস্থিত ছিলেন স্যার?আপনি নাকি তার মাথায় পিস্তল ঠুকে ছিলেন?প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা হয়ে আইন কেন তুলে নিতে চেয়েছেন স্যার?’
বন্ধনের কথাটা শুনে যেন এবার সত্যি তার কাছে হাস্যকর মনে হতে লাগলো।
বন্ধু কাজল বন্ধনের হাতে হাত লাগিয়ে ইশারা করে সাবধানে প্রত্ত্যুতর করার জন্যে।
“এরকরম প্রমান কি আছে আপনাদের কাছে?’
“না তা নেই তবে উনি এই অভিযোগটি করেছেন।’
“তাহলে তার জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই,যিনি অভিযোগ করেছেন সেটার প্রমান আগে হাজির করুক,তারপর এর উত্তর হবে, অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।’সাবলীল জবাব বন্ধন আহমেদের।
“কিন্তু স্যার এটা যদি সত্যি হয়?’
“আপনারা সম্মানিত সাংবাদিক কর্মীরা কি আজকাল যদির উপরও আস্থা স্থাপন করেন নাকি?সাংবাদিক তো লইয়ারদের কাছাকাছি নিটোল সত্য বা প্রমাণ ছাড়া তো আপনারা সংবাদ তৈরী করেন না?তাহলে যদি কথাটার উপর প্রশ্ন কেন করছেন?’
বন্ধনের ক্রুদ্ধসভাব পাল্টা জবাবে সবাই বেশ হতচকিত হয়ে ওঠে।
শেষবারের মতো পাঁপিয়ার সাথে তার কি সম্পর্ক এটা জানতে চাইলে বন্ধন এরও জবাব দেয়।
“পাঁপিয়া এম পি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার একজন সহপাঠী ছাড়া আর কিছু নয়।বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই এ সম্পর্ক চুকে গেছে সেও বিশ বছর পেরিয়েগেছে।’
“তাহলে বিশ বছর পর কি কারনে তিনি আবারও উপস্থিত হতে চেয়েছেন? যদি আপনার থেকে কোনরূপ সাড়া নাও পেতেন তাহলে তার অনুপ্রবেশ এর পথে জিজ্ঞাসা কিন্তু থেকেই যায়।’
“সেক্ষেত্রে আমার জবাবও সেটাই হবে যা ইতিপূর্বে আমি বলেছি,প্রমান ছাড়া কোন প্রশ্নের বিশেষ করে এ ধরনের অ্যাবসার্ড কথার কোন জবাব আমার কাছে নেই।শুধু আপনাদের আরও একটিবার মনে করিয়ে দিতে চাই,তার এ ধরনের হিংসাত্মক আক্রমনে আজ আমার স্ত্রী হসপিটালে। বাচ্চাটি হারিয়ে আমরা কেউই স্বাভাবিক ও সুস্থ নেই।আর তাছাড়া সে এখন অন্যায়কারী,সেটা সবাই দেখেছে,পুরো দেশবাসী জেনেছে ভিডিও ফুটেজ দেখে,,,তাহলে একজন অন্যায়কারী বা গর্হিত অপরাধের অভিযুক্ত কারীর অভিযোগ নিয়ে আপনাদের সবার এত মাথা ব্যাথা কেন?প্রশ্ন করলে দোয়া করে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে করুন।অহেতুক বিষয় টেনে আনবেন না।’
কাজলও প্রায় একই ধরনের কথা বলে সবার কাছ থেকে সুন্দরভাবে বিদায় নিল।
কনফারেন্স শেষ হবার পর প্রচণ্ড বিরক্ত বন্ধনের,
“তুই শালা কিভাবে এ পেশায় আছিস?মিতু কেমন আছে, বাচ্চার কি অবস্থা এসব না জানতে চেয়ে কি আউল ফাউল কোশ্চেন করছিলো, যতসব ফালতু।’
“দোস্ত এসব প্রশ্নের উত্তর তুমি আগেই দিয়ে দিয়েছো ভুলে গেছো,আর শুনো কিছু ফাউ আজগুবি সাংবাদিক থাকবে, চটকদার নিউজ বানানোর জন্যে এরা এসব ছাইপাশ নিয়ে এখন তোমার পিছে পড়বে,তোমাকে জ্বালাতন করবে,তারপর শুরু হবে ব্লেক মেলিং খুব সাবধান দোস্ত।ভাগ্য ভালো পাঁপিয়াকে তুমি শ্যুট করো নাই।’
মনে মনে কি যেন ভেবে নেয় এবার বন্ধন।গাড়ীতে বসে এবার নিজেই ড্রাইভ করে গন্ত্যেবে ফেরার তাগিদে।আজ সারাদিনের কথাগুলো মনে হতে থাকে একের পর এক।মিতুকে ফিরে পেয়েও তার কাছে সে এখন অপরাধী।
মিতুকে তখন সেভাবে দেখে প্রচণ্ড রকম বিক্ষিপ্ত বন্ধন।
“তাছাড়া হীমেল আজকাল বেশী হসপিটালে ঘোড়াঘুরি করছে কিন্তু কেন?ডকটর এটাও বলেছে তার সাথে এক্সাইটেড হয়া যাবে না এখন।সাইকোসিস পেশেন্ট কতদিন লাগবে সারতে কে জানে?খুব ধীরস্থিরভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে হবে।
“মিতু ফিরে এসেছে এটাই আমার কাছে অনেক,ওর জন্যে ছয়মাস কেন প্রয়োজনে ছয় বছরও আমি ধৈর্য্য ধরতে রাজী।'(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান