#ধর্ষিতা_বউ
#১৭তম_পর্ব/শেষ পর্ব
–
সায়ান আর রিয়াকে দেখে প্রাপ্তি অনেকটাই অবাক হলো।সায়ানও প্রাপ্তিকে দেখে অবাক হলো খুব।বলল
-তুই এখানে?কি অবস্থা এখন তোমার?
-ও আমার ছেলের বউ।আপনি কি করে চিনেন ওকে?(তূর্যর মা)
-আসলে আমি সায়ান চৌধুরী। মানে প্তাপ্তি…..(আমতা আমতা করে)
-বাকীটা না হয় আমি বলি!(প্রাপ্তি)
তারপর প্রাপ্তি উঠে দাঁড়ায়।যদিও ওর শ্বাশুড়ি বাধা দেয়।
“ইনি হচ্ছেন সায়ান চৌধুরী। যার সাথে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়েছিলো। জানেন মা আমি ওনার বউ না!আমি ওনার ধর্ষিতা বউ ছিলাম।রক্ষিতা ছিলাম ওর ঘরে।যে কিনা নিয়মিত আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার উপর ধর্ষণ চালাতো।শুধু মাত্র তার বিছানার সঙ্গী ছিলাম আমি।আমাকে দিয়ে হয়তো তার তৃপ্তি মিটতো না তাই অন্য মেয়েদেরকে বাসায় এনে তার যৌন তৃপ্তি মেটাতো।এইযে পাশের মেয়েটা দেখছেন মা,এটা সেই মেয়ে যার সাথে আমার স্বামী সায়ান চৌধুরী আমার সামনে রাত কাটিয়েছিলো।আসলে স্বামী না এখন তো সে আমার প্রাক্তন স্বামী।”
সায়ান বলে উঠলো
-প্রাপ্তি প্লিজ চুপ করো।এখানে অনে মানুষ আছে।
-ওহহহ সন্মানে লাগছে বুঝি?আপনার সন্মান আছে?
এর মধ্যে প্রাপ্তির শ্বাশুড়ি ওদেরকে থামতে বলল।তারপর তুসিকে ডাক দিলো। তুসি আসার পর বলল
-অন্য যে পেশেন্ট গুলো আছে ওদেরকে গিয়ে বল আগামীকাল আসার জন্য।আজকে কিছু সমস্যা আছে।
তারপর তুসি তাদেরকে বলে আবার ড্রইং রুমে আসলো।মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
প্রাপ্তির শ্বাশুড়ি মা বলছেন,
-মা রে আগে যা হয়েছে ভুলে যা।তুই তোর জীবনে এগিয়ে গেছিস আর তোর অনাগত বাচ্চাও তার বাবা পেয়ে গেছে। আর কি লাগবে তোর?এসব মানুষকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে নিজের জীবনের সুন্দর মুহুর্তগুলোকে নষ্ট হতে দিস না।
এরই মধ্যে তূর্য প্রাপ্তির বাবা মা আর ভাইকে নিয়ে বাসায় আসে। প্রাপ্তির বাবা মা সায়ানকে দেখেই রেগে যায়। প্রাপ্তির বাবা চিৎকার করে বলে উঠে
-তুই এখানে কি করছিস?একবার আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে স্বাধ মিটে নি তোর?এখন আবার এসেছিস কেনো ওর এখানে।
তূর্যর শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠছে।পারছে না এখানেই সায়ানকে মেরে ফেলতে।তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলো।
তারপর প্রাপ্তি কিছুটা তিরষ্কার স্বরে বলল,
“সেদিন তো খুব বলছিলেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন,রিয়া আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন।আমি বিয়ে করতে বললাম আপনাকে তখন কি বলেছিলেন মনে আছে?অথচ দেখুন আজ আপনি সেই রিয়াকেই বিয়ে করেছেন।শুধু তা-ই না আপনার স্ত্রী আজ প্রেগন্যান্ট। এতো নাটক এতো অভিনয় কিভাবে করতে পারেন??”
-আমার কথাটা তো শুনবে??আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও সবাই!
তারপর তূর্য প্রাপ্তিকে ধরে সোফায় বসালো।বাকীদেরকেও বসতে বলল তারপর সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল -ওকে বলুন কি বলবেন।
“প্রাপ্তিকে আমি ডিভোর্স দিতাম না কখনোই। আমি যখন আমার ভুল বুঝতে পারি তখন আমি বারবার প্রাপ্তির কাছে ফিরে এসেছি ওকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য।রিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।কিন্তু তার কিছুদিজ পরই জানতে পারলাম রিয়া প্রেগন্যান্ট।আম
ি বিশ্বাস করিনি প্রথমে।কারন রিয়ার সাথে বাসায় যেদিন আমার যৌনমিলন হয়েছিলো সেদিন আমার যথেষ্ঠ প্রোটেকশন ছিলো।তাই আমি কোনোভাবেই ওর কথা বিশ্বাস করিনি।তারপর রিয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ডিএনএ টেস্ট করাই।টেস্ট পজিটিভ ছিলো।আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে সম্ভব।তারপরে রিয়া আমাকে বলে যে ওর সাথে একদিন পার্টি তে গিয়েছিলাম।সেখানে অতিরিক্ত ড্রিঙ্ক করার কারনে হুশ ছিলো না।তারপর কি হয়েছিলো আমার কিচ্ছু মনে নেই।রিয়া আমাকে একটা ভিডিও ক্লিপ দেখায় সেটা দেখেই নিশ্চিত হই যে রিয়ার গর্ভে আমার সন্তান।এই অবস্থায় ওর ফ্যামিলি ওকে অনে বেশি প্রেসার দিচ্ছিলো। তাই আমি ওকে বয়ে করে ফেলি।আর না চাইতেও প্রাপ্তিকে ডিভোর্স দিয়ে দেই।প্রাপ্তি যেহেতু একজন ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছে তাই আমি আর ওর লাইফে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাইনি।কিন্তু বিশ্বাস করো আজো আমার রাতে ঘুম হয় না তোমার সাথে যা করেছি তা মনে হলে।”
-ব্যাস অনেক বলেছেন। সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্য করেন। আপনারা এখন আসতে পারেন। (প্রাপ্তি)
সবার সামনে এইভাবে বলার পর সায়ান আর কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো।তারপর রিয়া প্রাপ্তির কাছে এসে বলল
-পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিও।এইটুকুই বলবো।আর আমাদের উপরে কোনো দাবী রেখো না প্লিজ।
বলেই রিয়াও চলে গেলো।
তারপর তূর্য প্রাপ্তিকে রুমে নয়ে শুইয়ে দিলো।বলল
-তোমাকে না কতবার বারন করেছি বার হবে না রুম থেকে?কিছু লাগলে তুসি কে বলতে।
-আমার আর ভালো লাগে না এইভাবে রুমে বন্দী হয়ে থাকতে।তাই একটু রুমের বাইরে গেছিলাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তোমাকে নিয়ে কালকে সকালে লং ড্রাইভে যাবো।
-কি?????!মজা নিচ্ছো(মুখ বাকিয়ে)
কিছুক্ষন পরেই তুসি আর প্রাপ্তির ভাই আসলো রুমে।তুসির হাতে স্যুপ নুডলস ছিলো।এনে বলল
-ভাইয়া মা বলেছে ভাবীকে এটা খাইয়ে দিতে।আর তোকেও খেয়ে নিতে বলেছে।
-আচ্ছা খেয়ে নিবো।তুই যা।
-এমন করিস কেনো ভাইয়া?সারাদিন তো আমি-ই থাকি ভাবীর কাছে।
-হ্যাঁ যখন আমি থাকবো তখন থাকতে হবে না তোর!
-উফফ তুইও না।খুব খারাপ।
-যা আমি আর ভাবীর খেয়াল রাখবো না।দেখি তুই কতক্ষন থাকতে পারিস ভাবির কাছে।(মুখ বাকিয়ে)
কথাটা বলেই তুসি চলে যাচ্ছিলো।তখনই প্রাপ্তি ডাক দিলো
-তুসি প্রান্তকে(প্রাপ্তির ভাই) নিয়ে এখানে এসে বসো।
তারপর ওরা এসে দুইজন প্রাপ্তির পাশে বসলো।প্রাপ্তি ওর ভাইকে কাছে নিয়ে বসালো।বলল
-কিরে তুই তো আমায় ভুলেই গেছিস।একটু ফোন এ দিস না আমাকে।কই থাকিস সারাদিন?
-তুমি তো আম্মুর সাথে কথা বলেই ফোন রেখে দাও আমি কখন বলবো আর কথা।
-হু পাকনামী কথা এখনো বলিস!!তোর পড়ালেখার কি অবস্থা?
-এইতো ভালোই আছে।
-ঠিকমতো পড়াশুনো করিস কিন্তু।
-আচ্ছা আপু।
-হুম ম্যাডাম আপনার খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।খাবেন না?(তূর্য)
-হুম দাও খাইয়ে দাও।
তারপর তুসি আর প্রান্ত চলে গেলো বাইরে আর তূর্য প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিলো,সাথে নিজেও খাচ্ছিলো একই চামচ দিয়ে একই বাটিতে।প্রাপ্তি বলল
-তুমি আমাকে তোমার এঁটো খাওয়াচ্ছো কেনো?
-এঁটো কই খাওয়ালাম?
-এইযে একই বাটি থেকে তুমিও খাচ্ছো আমাকেও খাওয়াচ্ছো।
-আহা কি যে বলো না।স্বামী-স্ত্রী এক প্লেটে খাওয়া ভালো।
-এএহ এক প্লেটে খাওয়া ভালো।আমি খাবো না।তুমি-ই খাও।
-পাগলী বউ আমার স্বামী-স্ত্রী এক প্লেটে খাওয়া সুন্নত।আর এইভাবে খেলে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা গভীর হয়।
-বাব্বাহ সাহেব দেখি হাদিসও জানে খুব।
-না।হাদিস তেমন জানিনা।তবে এই কথাটা মায়ের থেকে শুনেছিলাম একবার।
-ওহহ আচ্ছা।আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে খাইয়ে দাও জলদি।বাবুর ক্ষুধা পেয়েছে খুব।সাথে বাবুর আম্মুরও।দাও দাও খাইয়ে দাও।
-হুম হা করো দিচ্ছি আমার বাবুর আম্মুটা!
ওরা খাওয়া শেষ করে নিলো।তার কিছুক্ষন পরেই প্রাপ্তির বাবা মা ওর রুমে আসলো।
-দেখো না মা,আমাকে এই বেড থেকে নামতেই দেয়না।ভালো লাগেনা সারাদিন এখানে বন্দী হয়ে পড়ে থাকতে।
-তোর আর তো বাচ্চার ভালোর জন্য-ই তো করে।
-হু সারাদিনে খালি মা সকালে আর বিকালে এসে একটু হাটতে দেয়।তাও নিজে ধরে রাখে।আমি কি হাটতে পারি না নাকি?
-থাক ন্যাকামো করিস না।তোর ভালোর জন্য করে সব কিছু।অঘটন ঘটতে সময় লাগেনা।
-তুই অনেক কষ্ট করেছিস তোর জীবনে।ভাগ্যক্রমে এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছিস এখন।আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্য করেন।(প্রাপ্তির বাবা ওর মাথায় হাত রেখে)
-আচ্ছা মা আমরা এখন আসি।খেয়াল রাখিস নিজের।
-আজকে থাকো না মা!!
-হ্যাঁ মা আজকে থাকুন।কালকে না হয় আমি ড্রপ করে দিবো।(তূর্য)
-না বাবা।আমরা গাড়ি নিয়েই এসেছি।আর তাছাড়াও প্রান্তর এক্সাম আছে কালকে।
-ওহ আচ্ছা।
তারপর তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
রাতে তূর্য খাবার নিয়ে আসলো প্রাপ্তির জন্য।তারপর প্রাপ্তির পাশে বসে প্লেটে খাবার নিলো।তারপর তূর্য নিজেও খেলো আবার প্রাপ্তিকেও খাইয়ে দিলো।
একদিন মাঝ রাতে প্রাপ্তি অনেক জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।ঘুম চোখে আড়মোড়া দিয়ে তূর্য লাফিয়ে উঠে
-কি হয়েছে প্রাপ্তি??কোনো সমস্যা??
-দেখো পেটে হাত দিয়ে।
এই বলে প্রাপ্তি তূর্যের হাত ওর পেটের উপরে নয়ে রাখলো।বলল
-কিছু ফিল করছো?
-হ্যাঁ।
-কি বলো তো?
-বাবু নড়ছে।
-হ্যাঁ।আজকে একটু বেশি নড়াচড়া করছে।
-কষ্ট হচ্ছে?
-একটু।বেশি না।বাবুর নখ গজিয়েছে।এমনভাবে খোঁচা দেয় মাঝে মাঝে খুব লাগে।
-চিন্তা করো না লক্ষীসোনা।আর কয়টা দিন বাকী আছে ডেলিভারি হতে।আল্লাহ্ ভরসা।
তূর্য কখনো প্রাপ্তিকে নিজ থেকে স্পর্শ করেনি।নরমালি প্রাপ্তিকে শোয়া থেকে উঠতে,বা বসা থেকে শুতে সাহায্য করতো।আর খাইয়ে দিতো।হাটাচলার সময় একটু ধরতো।এই পর্যন্তই।প্রাপ্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও কখনোই প্রাপ্তিকে স্পর্শ করবেনা এক বিছানায় ঘুমাও ও খুব গুটিসুটি হয়ে ঘুমায়। প্রাপ্তির যেনো কোনো প্রকার কষ্ট না হয়।
এইভাবেই বাকী কয়টা দিন কেটে যায়।
৯ মাস ১৯ দিন চলছে প্রাপ্তির ইদানিং ওর শরীরের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেছে। তাই ওকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।
মেডিকেল ভর্তির ৩ দিন পর অর্থাৎ ৯ মাস ২২ দিনের দিন প্রাপ্তি একটা ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।অসাধারন মায়ামাখা ছেলেটার চোখে মুখে।
দুইদিন পরেই প্রাপ্তিকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো।প্রাপ্তি এখন অনেকটাই সুস্থ।
–
অনেক বড় অনুষ্ঠান করে তূর্য আর প্রাপ্তির ছেলের নাম রাখা হলো “তাশফিন রহমান প্রিয়”।ডাকনাম প্রিয়।তাশফিন নামটা ওর দাদীর পছন্দ আর প্রিয় তূর্য আর প্রাপ্তির পছন্দ অনুযায়ী রেখেছে।
প্রাপ্তি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।নিয়মিত ভার্সিটি তে যায়।ক্লাস করে এক্সাম দেয়,আবার বাসায়ও শ্বাশুড়ি কে কাজে সাহায্য করে।ওর শ্বাশুড়ি ওকে কোনো কাজে হাত দিতে দেয়না।আর তূর্য নিয়মিত অফিস করে সময় হলে বাসায় ফিরে আসে।
তূর্য এখনো আগের মতোই নিজের হাতে প্রাপ্তিকে খাইয়ে দেয় আবার একই খাবার নিজেও খায়।এখন পর্যন্ত তূর্য প্রাপ্তিকে স্বামীর অধিকার খাটিয়ে স্পর্শ করে না।
তূর্য রোজ প্রাপ্তিকে ভার্সিটি তে ড্রপ করে দেয় আবার ভার্সিটি থেকে বাসায় ড্রপ করে দেয়।প্রাপ্তির কোনো কিছুর কমতি রাখেনি তূর্য। ও যেনো ওর অতীতকে কোনোভাবে মনে করে কষ্ট না পায় সে চেষ্টা সর্বক্ষণ করতে থাকে।
প্রাপ্তি মাঝে মাঝে ভয় পায়।মনে মনে ভাবে
“এতদিন তো আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম,তাই তূর্য কখনো আমাকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা কপ্রে নি।কখনো আমার আশেপাশে ঘেঁষে নি।দূরে থেকেই আমাকে সেবা করে গেছে।কিন্তু এখন আমি আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।ও যদি সায়ানের মতো আমার উপরে স্বামীর অধিকার খাটাতে চায়,জোর করে আমার থেকে নিজের চাহিদা মেটাতে চায় তাহলে কি কি করবো।”
এসব ভয়গুলো অনেকটাই প্রাপ্তিকে তাড়া করে বেড়ায়।কিন্তু প্রাপ্তি যা ভাবে তার সম্পূর্ণ বিপরীত হয়।তূর্য এখনো প্রাপ্তির উপরে অধিকার খাটায় না।স্পর্শ করে না।কারন ও আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাপ্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ও কখনো ওকে স্পর্শ করবে না স্বামীর অধিকার খাটিয়ে।
একদিন সন্ধ্যায় প্রাপ্তি প্রিয়কে ঘুম পাড়াচ্ছিলো।তখন হঠাৎ করেই তূর্য এসে প্রাপ্তির পাশে বসে ও প্রাপ্তিকে হঠাৎ করেই কিছু কথা বলে আশ্বাস দেয়,
-তুমি বিশ্বাস রাখতে পারো আমার প্রতি কখনো তোমার স্বামীর অধিকার খাটিয়ে জোর করবো না।আমি তোমার শরীরটাকে না তোমাকে ভালোবাসি।
-আমি যদি কখনোই তোমাকে কাছে আসতে না দেই??
-সেটা কি হয় নাকি।স্বামী স্ত্রী বেশিদিন দূরে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে দূরত্ব এতটাই বেড়ে যায় যে তাদের মধ্যে ভালোবাসার অপমৃত্যু ঘটে।সবারই কিছু চাহিদা থাকে।সেগুলো যদি না মেটাও তাহলে তো জোরাজুরি করে মেটাবে সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তুমি বিশ্বাস রাখতে পারো আমি তোমাকে জোর করবোনা কিছু নিয়ে।যেদিন তুমি নিজে এসে আমার কাছে ধরা দিবে সেদিনই তোমাকে আমি স্পর্শ করবো স্বামীর অধিকার নিয়ে।
-আর সে পর্যন্ত?
-সে পর্যন্ত না হয় দূর থেকেই ভালোবেসে গেলাম।
কথাগুলো বলেই তূর্য বারান্দায় চলে যায়।প্রিয় ঘুমোচ্ছিলো।প্রাপ্তি কিছুক্ষন পড়লো বসে বসে।কিন্তু ওর পড়ায় মন বসছে না।তাও কিছুক্ষন বই নেড়েচেড়ে উঠে গেলো।তূর্য তখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো।প্রাপ্তি তূর্যের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রাপ্তি বলল
-আজকে আকাশটা খুব সুন্দর তাইনা?
-হুমম
-আচ্ছা তুমি কখনো তারা গুনেছো?
-তারা আবার গোনা যায় নাকি?এতো বিশাল একাতা আকাশ।তার মধ্যে কতো কতো তারা।
-হুম ত ঠিক।কিন্তু আমি আগে তারা গুনতাম।আমার খুব ভালো লাগে।
-তাই নাকি?তো সর্বোচ্চ কয়টা তারা গুনেছো?
-ওই আর কি ১২০ টা।
কথাটা শুনেই তূর্য খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো পেটে হাত দিয়ে মুখ চেপে।এই প্রথম তূর্য এইভাবে হাসছে প্রাপ্তির সামনে।প্রাপ্তি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তূর্যর দিকে।
“একটা ছেলের হাসি এতোটা রহস্যজনক, এতোটা মায়ামাখা কিভাবে হতে পারে”
তূর্য হাসি বন্ধ করে প্রাপ্তির মাথায় হাতের স্পর্শ দিয়ে বলে,
-পাগলী বউ আমার।
-হুম আর তুমি আমার পাগল বর।
-হ্যাঁ হয়েছে হয়েছে।এবার খেতে চলো।ক্ষুধা পেয়েছে।একটু পরেই মা ডাক দিবে নাহয় তুসি এসে জ্বালাতন করবে।
-হুম চলো।
ওরা খেতে যাবে এমন সময় প্রিয় ঘুম থেকে উঠে কান্না করছিলো।তাই প্রাপ্তি বলল,
-তুমি খেয়ে আসো আমি পরে খাবো।
-হু এ আর নতুন কি।এই ছেলেটা আসার পর থেকে তো প্রতিদিন এমনই হয়।খেতে যাওয়ার সময়ই ওর ঘুম ভাঙতে হয় সবসময়।আর আমি সবসময় এখানে খাবার এনে ছেলের মাকেও খাইয়ে দিতে হয় নিজেও খাই।
-হু সব তো জানো।তাহলে আবার বলো কেনো।যাও নিয়ে আসো।
-হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি।
তারপর তুসি খাবার এনে দিয়ে গেলো।আর বলে গেলো
-কাল থেকে আমি আর পারবোনা তোমাদের খাবার এখানে নিয়ে আসতে।ভাইয়া তুই গিয়ে আনতে পারিস না খাবার?ভাবী ন। হয় প্রিয়কে নিয়ে বিজি থাকে।আমাকে একটু শান্তি দে ভাই!!
-হুম দিবো দিবো।বিয়ে দিয়ে দিবো একেবারে।
-ধ্যাত ভাইয়া।তোর সাথে কথা বলাটাই বোকামী হুহ।
বলেই তুসি চলে গেলো।
তারপর তূর্য প্লেটে খাবার নিয়ে নিজে খেলো,প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিলো।আর প্রাপ্তি প্রিয়কে খাওয়াচ্ছিলো।
এইভাবেই ওদের দিনকাল যেতে থাকে।
কিছুদিন পর……
তূর্য কি যেনো কাজে বাইরে গিয়েছে একটু সন্ধ্যার নাস্তা করেই।একটু পরেই চলে আসবে।প্রাপ্তি প্রিয়কে ঘুম পাড়িয়ে প্রাপ্তি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছিলো।খোপা করে নিল চুলে।এমন সময় তূর্য বাইরে থেকে এসেই ওর খোঁপায় বেলী ফুলের মালা গুঁজে দিলো।প্রাপ্তি অবাক হয়ে বলল
-কি ব্যাপার হুম??
-কি ব্যাপার আবার।রাস্তা দিয়ে আসার পথে একটা পিচ্চি খুব জোরাজুরি করছিলো ফুলগুলো নেওয়ার জন্য জানোই তো এরা কেমন।তাই নয়ে আসলাম।ভাবলাম বাসায় তো আমার একটা অস্পরী আছে।তার জন্য না হয় নিয়ে যাই।
-হ্যাঁ বুঝেছি অস্পরী না ছাই!!জোর করে না দিলে তো আনতে না।বিয়ের এতোদিন হয়ে গেলো কখনো আনো নি।আজ একেবারে প্রেম উথলে উঠেছে।(মুখ বাকিয়ে)
-কি যে বলো না তুমি!!
-কি আবার।আমাকে কতটা ভালোবাসো তা আমি খুব ভালো করেই জানি।
-কি বলতে চাও তুমি হুম??
-কি আবার!!আমাকে এক ফোটাও ভালোবাসো না তুমি।আনরোম্যান্টিক ছেলে একটা।আগে তো দেখতাম খুব রোম্যান্টিক ছিলে,কতোভাবে যে প্রোপস করতে,আমার পেছনে ঘুরতে আর এখন বিয়ে করে আনার পর আর কোনো ভালোবাসাই নাই!!
-সেদিন-ই বলেছিলাম তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তোমাকে স্পর্শ করবোনা।
-থাক আমাকে আর বুঝাতে হবে না।আমি সব বুঝি।
-কি বুঝো তুমি হুম??
-এইযে তুমি তো আমার প্রথম স্বামী না।আমাকে আগে অন্য কেউ ভোগ করেছে।আমার বাচ্চাটাও……
-প্রাপ্তি???
তূর্য নিজের রাগ সামলাতে না পেরে প্রাপ্তির গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।
তারপর তূর্য রাগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রুম থেকে বেরিয়েই তূর্য বাইরে চলে গেলো।
রাত ১০ টা বেজে গেলো এখনো তূর্য ফিরে এলো না।প্রাপ্তি এতবার কল দিলো কিন্তু ও রিসিভ করছেনা।এদিকে প্রিয়ও খুব জ্বালাচ্ছিলো।কিছুক্ষন পরে প্রাপ্তির শ্বাশুড়ি আর তুসি রুমে এলো।প্রাপ্তি প্রিয়র কান্না থামাচ্ছিলো ওর শ্বাশুড়ি ওকে জিজ্ঞেস করলো
-কি হয়েছে ও এতো কান্না করছে কেনো?তুসির কাছে দাও ওকে।তুসি ওকে নিয়ে একটু হেটে আয়।
তারপর তুসি প্রিয়কে নিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলো।তারপর প্রাপ্তির শ্বাশুড়ি ওকে জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে তোর গালে কি হয়েছে?
-কই মা কিছু না তো!
-কি হয়েছে বল তো।আমি জানি কিছু একটা হয়েছে।তোর চোখ মুখ বলছে এক কথা আর তুই বলছিস আরেক কথা!
-তেমন কিছু না মা।
-তূর্য কোথায়?ও কিছু বলেছে?
-না মা ও কিছু বলে নি।আসলে….
-ঝগড়া হয়েছে তাইনা।
প্রাপ্তি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে ড্যাব ড্যাব চোখে।
-ওভাবে তাকাতে হবেনা।মায়ের মন সব বোঝে।তোর চেহারাই বলে দিচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।কি হয়েছে বল আমাকে!
তারপর প্রাপ্তি সব বলল শ্বাশুড়ি মাকে।সব শুনে তিনি বললেন
-আমার ছেলে বলে বলছি না,ও তোকে অনেক ভালোবাসে।ও নিজেই আমাকে বলেছিলো একদিন ও কখনো চায়না তোমার অতীতকে মনে করিয়ে দিয়ে তোমাকে কষ্ট দিক,বা অন্য যেকোনোভাবে তুমি ওর দিক থেকে কষ্ট পাও।আমাদেরকেও সারাক্ষন এটা ওটা বলে যেনো তোমাকে কষ্ট না দেই কোনোভাবে।ওকে ফোন দাও দেখো কোথায় আছে।হয়তো আশেপাশেই আছে।ওকে তো আমি চিনি।ছোট বেলা থেকেই রাগ হলে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতো আর পারশের পার্ক এ গিয়ে বসে থাকে বটগাছতলায়।
-আমি এখন যাবো মা?
-পারবি এই রাতে যেতে?
-হ্যাঁ পারবো!!
-কিন্তু প্রিয়?
-ও তুসির কাছে আছে।আমি খেয়াল রাখবো ততক্ষন।এখানে তো পাশেই পার্ক টা।
তারপর প্রাপ্তি বের হবে এমন সময় তূর্য বাসায় আসছে।খুব রাগ।এসেই রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে প্রিয়র সাথে দুষ্টুমি করছে।প্রাপ্তি এসে বলল
-খাবে না?
কোনো উত্তর নেই।
-১১ টা বেজে গেলো তো খাবে না?
-না ক্ষুধা নেই।
-তুসি সেই কখন খাবার দিয়ে গেছে এসে।
-তুমি খেয়ে শুয়ে পড় আমার কাজ আছে।
এই বলে তূর্য ল্যাপটপে কাজ করতে বসে গেলো সোফায় গিয়ে।
-I’m sorry….
-সরি কিসের জন্য?
-আমি আসলে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।
-আমি কোনো কষ্ট পাইনি।
-তাহলে এমন করছো কেনো?
-নিজেকে নিয়ে এইভাবে বলতে পারলে তুমি?আমি তোমায় এতো ভালোবাসি আর আজ এটা তুমি কি বললে!!!ভাবতেই অবাক লাগে।আসলে আমার ভালোবাসায় হয়তো কমতি ছিলো।তোমার দোষ নেই।খেয়ে শুয়ে পড়ো
-খাবো না আমি।
-তুমি না খেলে বাবুর কষ্ট হবে।খেয়ে নাও।
-হ্যাঁ বাবুর চিন্তাই করবে খালি।আমার চিন্তা করবে কেনো!!
-আবার শুরু করছো!!আবার চলে যাবো??(রেগে গিয়ে)
তারপর প্রাপ্তি আর কিছু বলে নি।চুপ করে উঠে গেলো।কিছুক্ষন পর প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে এলো।তারপর তূর্যর পাশে বসলো সোফায় পা উঠিয়ে।
“ইশ দেখো বেগুন ভাজা কতো টেস্টি হয়েছে,মা করেছে।মায়ের রান্নার জবাব নেই আসলেই।উফফ ডাল-টা যা হয়েছে না!!ইচ্ছে করছে পুরো পাতিল কাত করে খেয়ে ফেলি,আর দেখো পটল ভাজা,ছোট মাছ ভাজা উফফ একেকটা কি যে মজা”
-আমাকে এতো লোভ দেখানোর কি আছে।ভালো করেই জানো এগুলা আমার ফেভারিট খাবার,তাই এগুলাই নিয়ে বসতে হলো আমার সামনে?
-তুমি কি খাবে নাকি?তোমার রাগটাই তো তোমার কাছে বেশি।
বলতে বলতে খাবার মুখে নিচ্ছিলো প্রাপ্তি।এমন সময় প্রাপ্তির হাত টেনে তূর্য খাবারটা নিজের মুখে নিয়ে নিলো।
-খাও খাও আরো খাও মজা করে লোভ দেখিয়ে।পাজি মেয়ে।(মুখে খাবার নিয়েই)
কিছুক্ষন পরেই ঝালে তূর্যের ঠোট লাল হয়ে গেছে,চোখে পানি এসে পড়েছে।
-ইশ এতো ঝাল আগে বলবা না?কিভাবে খাচ্ছ তুমি এতো ঝাল?
-আমি ঝাল খেতে পারি তোমার মতো নাকি!!নাও পানি খাও।
প্রাপ্তি তূর্যর দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিলো তূর্য পানি পান করলো তাও ঝালে অস্থির হয়ে পড়েছে।তারপর প্রাপ্তি বলল
-যা বাবা এখনো কমে নি ঝাল!দাড়াও ঔষধ দিচ্ছি।
এই বলে প্রাপ্তি তূর্যের কাছে গিয়ে ওর গলায় দুই হাত রেখে ঠোটে নিজের ঠোট চেপে ধরলো।তখনই ভাবী ভাবী বলে তুসি রুমে এসে ঢুকলো!!প্রাপ্তি আর তূর্যর এই অবস্থা দেখে তুসি লজ্জায় একাকার। আর তূর্য আর প্রাপ্তিও ভীষণ লজ্জা পেয়েছে।তূর্য রেগে গিয়ে বলল
-এই সময়ে এখানে কি তো???সময় পাস না আর আসার?
-ভাবীর মা ফোন দিলো।আমার কি দোষ।ভাবীকে সেই কখন থেকে কল দিচ্ছে।ধরে না।তাই ল্যান্ড লাইনে কল দিলো।সেটাই বলতে আসছি।
বলেই তুসি চলে গেলো।ও নিজেও খুব লজ্জা পেয়েছে।
তারপর তূর্য বিড়বিড়িয়ে বলছে,”যাও এতদিনে একটু কাছে পেলাম তাও এই তুসির বাচ্চার কারনে হলো না ভালো করে কাছে পাওয়া। তোমার মায়েরও আর ফোন দেওয়ার টাইম ছিলো না?”
প্রাপ্তি খাবার গুলো গোচ্ছিলো আর মুচকী মুচকী হাসছিলো।তূর্য আবার বলল
-আচ্ছা এখন তো আর কোনো বাধা নেই তাইনা?এখন স্বামীর অধিকার খাটাতে পারবো তো???
প্রাপ্তি কিছু না বলে ওর খোলা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে একটা মুচকী হাসি দিয়ে খাবারগুলো রাখতে চলে গেলো।
তূর্য ওর উত্তরটা পেয়ে গেছে।
৪ বছর পর…….
প্রাপ্তির পড়াশুনো শেষ।ও এখন উকিল হয়েছে।নিজের একটা নতুন পরিচয় হয়েছে ওর।
প্রিয়কে একটা কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়।আসা যাওয়া করে কিছু শিখার জন্য।এর মধ্যেই তুসির বিয়ে হয়ে গেছে।আর শ্বাশুড়ি মা সারাদিনে প্রিয়কে নিয়ে সময় কাটায়।ওকে গল্প শোনায়,কবিতা শোনায় মাঝে মাঝে পড়ায়।
একদিন বিকালে তূর্য প্রাপ্তির হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও এক জায়গায় যাবো আমরা।প্রাপ্তি ব্যাগটা খুলে দেখে একটা নীল রঙের গোল্ডেন পাড় শাড়ি,গোল্ডেন ব্লাউজ,ম্যাচিং করা নীল আর গোল্ডেন রঙের রেশমী চুড়ি,নীল স্টোনের গোল্ডেন ঝুমকো,আর এক পাতা ছোট্ট নীল টিপ,আর একটা নীল রঙের চিরকুট।চিরকুট টা খুলতেই দেখে “গাঢ় করে কাজল আর লাল খয়েরি রঙের লিপস্টিক লাগাবে।আর শাড়ির আচলটা ছেড়ে দিবে।চুলগুলো খোলা রাখবে”
তূর্যর কথামতো প্রাপ্তি রেডি হয়ে আয়নার সামনে নিজেকে এক অস্পরীর ন্যায় আবিষ্কার করলো।পেছন থেকে তূর্য এসে বলল-কিগো রেডি হলে তুমি?আর কতক্ষন লাগবে?
তূর্যর দিকে তাকিয়ে দেখে ও একটা অফ হোয়াইট কালারের শার্ট,আর নেভি ব্লু কালারের কোর্ট,প্যান্ট পরে আছে।
ওদের কারো চোখ সরছে না একজনের উপর থেকে অন্যজনের।প্রিয়র ডাকে ওদের ঘোর কাটলো।
-আম্মু আম্মু তোমাকে খুব কিউট লাগছে।
-আর
তোমার পাপা কে কেমন লাগছে বাবা?
-পাপাকে পচা লাগছে।তুমি বেশি কিউট।
-হুম আমাকে তো পচা লাগবেই।আমার সব সুন্দর প্রিয় কে দিয়ে দিয়েছি আমি তাই।(তূর্য)
-আচ্ছা আম্মু আমমরা কোথায় যাবো আজকে?
-তোমার পাপা জানে বাবা।আমি তো জানি না।
-হুম তোমাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে আজকে।
তারপর তারা একসাথে বের হলো।মাকে যেতে বলেছিলো কিন্তু তিনি যাবেন না।
তূর্য গাড়িতে থাকতেই প্রাপ্তির চোখ বেধে দিয়েছিলো রুমাল দিয়ে।প্রাপ্তি বলল
-চোখ বাধার কি আছে।গাড়ি থেকে নামলেই তো আমি পড়ে যাবো।
-আহা এতো চিন্তা করাও কেনো?আমি তো আছি।
তারপর তারা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছালো।কিছুটা পথ প্রাপ্তিকে নিয়ে যাওয়ার পর প্রাপ্তি বলল
-আর কতো তূর্য।এবার তো চোখ খুলো প্লিজ!!
কিছুক্ষন পরেই তূর্য প্রাপ্তির চোখ খুলে দিলো।বলল
-মনে পড়ে কিছু?
-Oh my god…our 5th marriage anniversary…
-Yes ma’am..
-তোমার মনে ছিলো??এতো সুন্দর আয়োজন।
-এবার চলো কেক কাটি।
তারপর দুইজনে মিলে কেক কাটলো।তূর্য একটা হোটেলের লেকের পাশে পার্টি অ্যারেঞ্জ করেছিলো।সেখানে মোটামুটি ওর সব বন্ধু,অফিসের কলিগরা ছিলো।
তূর্য সেখানে সবার সামনে হাটু গেড়ে আবারও প্রাপ্তিকে প্রোপস করে।একটা ডায়মন্ড রিং নিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে
“আমি তোমার গল্প হতে চাই।সারাজীবনের জন্য।তোমাকে ভালোবাসতে চাই ইহকাল ও পরকালে।Can I ??”
প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছিলো। বলল
-Yes you can…
তারপর তূর্য প্রাপ্তিকে রিংটা পরিয়ে দিলো।
পার্টি শেষে ক্লান্তি নিয়ে সবাই বাসায় ফিরলো।প্রাপ্তির খুশির সীমা ছিলোনা।বাসায় ঢুকেই ও মায়ের রুমে গেলো দেখে আসার জন্য তিনি খাওয়া দাওয়া করেছেন কিনা।।প্রিয় ঘুমিয়ে পড়েছিলো।তূর্য প্রিয়কে কোলে করে নিয়ে রুমে শুইয়ে দিলো।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে কোর্ট খুলছিলো।পেছন থেকে প্রাপ্তি দৌড়ে এসেই তূর্য কে শক্ত করে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল
-Thank you so much…thanks a lot for everything…you have made my life… I love you so much…
-hummm….I love you too paglita…
তারপর তূর্য প্রাপ্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।তারপর ওর বুকে প্রাপ্তির মাথা রেখে বলল,
-অনেক ভালোবাসি তোমাকে।অনেক বেশি!
-এই জন্য দূরে দূরে থাকো!!
-প্রাপ্তি!!!আবার এসব!!
-আচ্ছা তোমার কি মনে হয়না প্রিয়র একটা খেলার সাথী দরকার?(মুখ লাল হয়ে গেছে লজ্জায়)
-কি বললে??
-না কিছু না।
-এই বলো আবার!!
-ইশ ঢং হচ্ছে।শুনতে পাওনি বুঝি?
-না শুনতে পাইনি।আবার বলো।
-বলেছি প্রিয়র একটা খেলার সাথী দরকার।(দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছে)
-হুম প্রিয়র মা যদি রেডি থাকে আমার কোনো আপত্তি নেই।
-আমি তো এখন প্রিপেয়ারড।
-হু তাহলে আজকে থেকেই মিশন শুরু করা যাক!! কি বলো??
-উফফ তুমিও না এতো লজ্জা দিচ্ছো কেনো?
তারপর প্রাপ্তি আর তূর্য আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
………………..সমাপ্ত……………..