ধূসর প্রেমের অনুভূতি পর্ব -৪০

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৪০
.
.
মেঘ ড্রাইভিং সিটে বসে ব্যাক মিররে তাকাতে দুরে একটা গাড়ি দাড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারে তার ফারুপাখির এভাবে চলে যাওয়ার কারণ; মেঘ দাঁত কিড়মিড় গাড়িটার দিকে তাকিয়ে নিজের গাড়ি স্টার্ট দেয়৷

মেঘ ড্রাইভ করার সাথে সাথে ব্যাক মিররে সেই গাড়িটাকে ফলো করতে দেখতে পেয়ে মেঘ তার গাড়ির স্পিড কমিয়ে দেয়৷ একটু বেশি সময় নিয়ে ড্রাইভ করে হেডকোয়াটার্সে চলে যায়৷ এদিকে অন্য গাড়িতে ফলো করা লোকটি হেডকোয়াটার্সে কিছুটা দুরে গাড়ি থামিয়ে মেঘের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো৷

মেঘ নিজের কেবিনে গিয়ে বসতে জ্যাক এসে হাজির হয়৷ জ্যাককে দেখে মেঘ বলে উঠলো,” জ্যাক তুমি এখন এখানে? তুমি তো লন্ডনে গিয়েছিলে?”

” জ্বি স্যার লন্ডনে গিয়েছিলাম ৷ আর যে জন্য লন্ডনে গিয়েছিলাম স্যার সেই কাজটা হয়েছে ৷”

” গুড, পুরো ডিটেইলস আমাকে জানতে হবে জ্যাক৷”

” ইয়েস স্যার তবে একটা সমস্যা হয়েছে৷ এই মিশনটা এবার আপনার জন্য ভীষণ টাফ হবে স্যার৷”

” কেন?”

” সেটা খুব শীগ্রই আপনি জানতে পারবেন৷ তবে এখন আপনার এবং ম্যামের পরিবারের উপর এট্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ ”

” জ্যাক আমি সবটা জানতে চাই৷”

মেঘের কথা শুনে জ্যাক কেবিনের দরজা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো………..

(৭২)

চারিদিকে সূর্যের নরম সিগ্ধ আলো ছড়িয়ে পড়তে পাখিরা তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে খাদ্যের সন্ধানে; তার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল যান্ত্রিক জীবন৷
সকাল থেকে বাড়ির প্রত্যেকটা লোক তনুকে একের পর এক প্রশ্ন করে করে অতিষ্ট করে তুলছে তনুর এই অবস্থা কি করে হলো সেটা জানার জন্য; আর দুরে দাড়িয়ে ফারিহা এই সব এর মজা নিচ্ছে৷ রোজা ফারিহার পাশে দাড়িয়ে ফারিহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ফারিহার এই হাসির কারণটা রোজা বুঝতে পারছে না৷ হঠাৎ আদিল রাফির কন্ঠ শুনে রোজা কেমন যেন চঞ্চল হয়ে উঠলো৷ এদিক-ওদিক তাকিয়ে রোজার চোখ দুটো রাফিকে খুজতে লাগলো৷ ফারিহার ভাব ভঙ্গি দেখে ঠোঁট টিপে হেসে বলে,” কি রোজা ম্যাম কাউকে খোজা হচ্ছি বুঝি? তা কে সে ভাগ্যবান শুনি?” ফারিহার কথা শুনে রোজা লজ্জায় লাল নীল হয়ে দ্রুত ফারিহার পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে যেতে নিলে রোজার হাত কেউ হ্যাচকা টান দিয়ে ফারিহার রুমে নিয়ে যায়৷ রোজা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ হঠাৎ কানের কাছে কেউ বলে উঠলো,” কি ম্যাম আমাকে খুজছো বুঝি? আমায় খুব মিস করছিলে?”
কথা গুলো শুনে রোজা চোখ মেলে তাকিয়ে বা দিকে ঘুড়তেই রাফির ঠোঁটের সাথে রোজার ঠোঁট জোড়া স্পর্শ লাগে; শিউরে ওঠে রোজা৷ হঠাৎ এমন আংশিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রাফি মটেও আশা করেনি৷ লজ্জা পেয়ে রোজা চলে যেতে নিলে রাফির হাতের শক্ত বাধণে আটকা পড়ে যায় রোজা৷ রাফি রোজার হাত দুটো পেছনে মুরে বুকের সাথে চেপে ধরে রোজার কানের লতিতে চুমু দিয়ে বলে, ” আমার নিজস্ব মানুষটার শরীরে সীল মেরে দিলাম৷ খবরদার এই মানুষটা যদি অন্য কারোর হওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে তাহলে সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিবো৷ ”

রোজা রাফির কান্ড দেখে হতবিহ্বল হতভম্ব হয়ে ফ্রিজড হয়ে দাড়িয়ে রইল৷ রাফি রোজার অবস্থা দেখে মৃদু হেসে রোজার কপালে ছড়ানো বাতাসে উড়তে থাকা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলে,” আজ থেকে তুমি শুধু আমার রোজাবেবি৷ ভালোবাসি তোমায়৷ ভুলেও ভুলে যাবে এই কথা টা , তাহলে বুঝতেই পারছো!”

আর কিছু না বলে রাফি রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ রোজা ওখানে হতভম্ব হয়ে দারিয়ে আছে৷ একটু আগে কি থেকে কি হলো সবটাই যেন রোজার মাথার উপর দিয়ে গেল৷ রাফি দরজার বাইরে দারিয়ে রোজার অবস্থা দেখে মনে মনে বলতে লাগলো,” ডোজ টা আজ একটু বেশি হয়ে গেল মনে হচ্ছে ৷ বেপার না আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে৷” বলে রাফি তনুর রুমের দিকে যেতে লাগলো৷

____________

একশ গোলাপ নিয়ে হাটু মুড়ে বসে আছে শ্রাবণ তার প্রেমিকা সামিরার সামনে; দীর্ঘ দু’বছর পর দেশে ফিরে শ্রাবণকে এয়ারপোর্টে দেখতে না পেয়ে অভিমানে সিক্ত হয়ে দু’চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে৷ তখনি হুট করে শ্রাবণ একশ গোলাপ হাতে নিয়ে সামিরার সামনে এসে হাজির হয়৷ শ্রাবণকে দেখে অভিমানে মুখ ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকায় সামিরা৷ শ্রাবণ একহাতে ফুল ধরে অন্য হাত দিয়ে ধরে বলে,” আই এম স্যরি সামুপাখি৷ ট্রাস্ট মি আমি ইচ্ছে করে দেরি করি নি৷ ট্রাফিকের কারণে দেরি হয়ে গেছে ৷ এবারের মতো আমাকে মাফ করে দেও জান৷ আই প্রমিস ইউ নেক্সট টাইম আর এমন দেরি হবে না৷ যদিও এমন পরিস্তিতি আসে তাহলে আমি রকেট না হেলিকপ্টার নিয়ে তোমার কাছে আসবো৷ ” শত শত লোকের মাঝে শ্রাবণ এভাবে কান ধরে আছে সেটা সবাই দেখছে৷ সামিরা শ্রাবণের দিকে তাকাতে শ্রাবণের আকুলতা দেখে সামিরা নিজের অভিমান ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মুচকি হেসে শ্রাবণের হাত থেকে ফুলটা নিতে শ্রাবণের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো৷

শ্রাবণ উঠে দাড়াতে সামিরা শ্রাবণকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে৷ সামিরা শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” আই লাভ ইউ শ্রাবণ৷ আই লাভ ইউ সো ম্যাচ শ্রাবণ৷ ”

” আই লাভ ইউ টু সামুপাখি৷ লাভ ইউ সো ম্যাচ৷”

সামিরা শ্রাবণকে ছেড়ে দিয়ে বলে, ” আমরা কি এখানে দাড়িয়ে থাকবো শ্রাবণ? বাড়ি ফিরবো না?”

” উপস স্যরি জান আমি তো ভুলেই গেছিলাম৷ ” শ্রাবণ সামিরাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে৷

_______________

ফারহা ল্যাপটপ নিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে কিছু একটা দেখতে লাগলো৷ ফারিহার পাশে বসে আগন্তক মন দিয়ে ল্যাপটপ দেখছে৷ ফারহার চোখে মুখে আস্তে আস্তে রাগের আভাস ফুটে উঠতে লাগলো৷ হঠাৎ আগন্তক ল্যাপটপ অফ করে দিয়ে ফারহাকে বলে উঠলো,” আরুপাখি নিজের রাগকে কন্ট্রোল করো নাহলে তাকে আমরা শেষ করতে পারবো না৷ ”
ফারহা সেন্টার টেবিলে লাথি মেরে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে উঠলো, ” ও আমার কাছের লোকদের টার্গেট করেছে ভাই৷ কি করে আমি শান্ত থাকবো বলতে পারো তুমি?”

” আমি বুঝতে পারছি তোমার রাগের কারণ কিন্তু এখন আমাদের শান্ত থাকতে হবে আরুপাখি নাহলে তোমার রাগের কারণে আমার সব প্লান নষ্ট হয়ে যাবে৷ ”

ফারহা নিজের মাথার চুল টেনে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,” ওকে আমি ছাড়বো না ভাই৷ ওকে আমি ছাড়বো না৷ ওর টার্গেট এখন আমাকে ধ্বংস করা৷ ”

” ধ্বংস তোমাকে নয় তুমি করবে আরুপাখি ৷ কারণ তুমি পারবে পুরো টেরোরিস্ট দলটাকে একে বারে উপরে ফেলতে৷ ”

” হা ভাই আমি নিজের হাতে ধ্বংস করবো ৷”

ফারহা অন্য একটা ফোনে সিম সেট করে কারোর নাম্বারে কল করে৷ তিনবার রিং হতে ফোনের ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে৷ ফারহা কোন ভনিতা ছাড়াই বলতে লাগলো৷

” আগামিকাল পঞ্চাশ পিস আরডিএক্স এড্রেস অনুযায়ি পাঠিয়ে দিবে৷ আমি এড্রেস মেসেজ করে জানিয়ে দিচ্ছি৷ ”

ফোনের ওপাশ থেকে ব্যক্তি আরুকে কি বললো জানা নেই আগন্তকের , আরুর কথা শেষ হতে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো৷

ফারহা ফোন রেখে রহস্যময় হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,” এবার হবে আসল খেলা ৷ নতুন নতুন ধামাকার জন্য এবার তৈরি হও ৷ এবার সামনা সামনি লড়াই করার জন্য আমি আসছি৷

_______________

মেঘের চোখে মুখে গম্ভিরতা বিরাজমান৷ চৌধুরী ম্যানশনে প্রবেশ করতে সারভেন্টদের গুঞ্জনে মেঘ শুনতে পায়৷

” কি দিন কাল আসলো রে ভাই৷ বাড়ির ছোট বউ মরার দুদিন হলো না বড় ছেলের বিয়ে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে গেল৷” প্রথম সারভেন্টের কথা শুনে দ্বিতীয় সারভেন্ট বলে উঠলো,” আরেহ এরা বড়লোক৷ এদের ব্যাপার স্যাপার হলো আলাদা৷ আমরা হলাম কাজের লোক তাই চুপ থাক নয়তো কেউ শুনতে পেলে আমাদের চাকরি থাকবে না৷”

মেঘের আর কিছু শুনতে ইচ্ছে হলো না গটগট হেটে নিজের রুমে চলে গেলো৷

শ্রাবণ সামিরার ফ্লাটে এসে নিজের হাতে সামিরার জন্য কিচেনে গিয়ে রান্না করতে লাগলো৷ সামিরা শ্রাবণের পাশে দাড়িয়ে শ্রাবণকে জ্বালাতে লাগলো৷ দুজনের চলতে লাগলো খুনসুটি ৷

এদিকে রুমে বসে তনু রাগে ফুসছে৷ ফারিহা এক মুহূর্তের জন্যও তনুকে একা ছাড়ছে না৷ আর রোজা ফারিহার পিছু ছাড়ছে না৷

তনু দাঁত কটমট করতে করতে মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,” এই মারুটা কাঠালের আঠার মতো আমার পেছনে লেগেই আছে৷ এক মুহূর্তের জন্যও আমাকে একা ছাড়ছে না৷ আমাকে একা না ছাড়লে আমি এই বাড়ি থেকে বের হবো কি করে? কি করে হ্যারি লিওয়ের ডেড বডি সরিয়ে ফেলবো? কোন ভাবে যদি পুলিশ জেনে যায় তাহলে আমার পর্দা ফাঁস হয়ে যাবে৷ মেঘ ফারিহা আদিল রাফি কেউ আমাকে ছাড়বে না৷ নাহ ওদের কিছু করার পূর্বে আমাকে কিছু একটা করতে হবে৷ আর এই বাড়ি থেকেও আমাকে বের হতে হবে৷”

তনু ফারিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বসা থেকে শুয়ে পড়লো৷ এদিকে ফারিহা তনুর অবস্থা দেখে মনে মনে বলতে লাগলো,” আমি জানি তনু তুই আমাদের থেকে কিছু একটা লুকিয়ে যাচ্ছিস৷ বাট ডোন্ট ওয়ারি এই ফারিহাকে তো তুই ভালো করেই চিনিস৷ তোর মাথায় কি চলছে? তোর কি প্লান সবটাই আমি জেনে ছাড়বো৷ বাট আই সোয়ার তনু তুই যদি আপুর সাথে বৈইমানি করিস বা করে থাকিস৷ তাহলে আপু তোকে কি করবে আমি জানি না কিন্তু আমি তোকে ছাড়বো না৷ ফারিহা হয়ে নয় মারু তোর কাল হয়ে দাড়াবে৷ ”

ফারিহা তনুর রুমে হাটতে হাটতে তনুর বালিশের পাশে রাখা তনুর ফোনটা সাবধানে তুলে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল৷ তনু চোখ মেলে রুমে ফারিহাকে দেখতে না পেয়ে ভেবে বসে ফারিহা চলে গেছে৷ আর রোজা কানে হেডফোন দিয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনছে৷ তনু খুব সাবধানে বেড থেকে উঠে ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷ এদিকে ফারিহা তনুর ফোন চেক করে স্তম্ভিত কিংকতব্যবিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইল৷ তনু যে সত্যি ওদের এভাবে ঠকাবে ৷ বৈইমানি করবে এটা ফারিহা ভাবতেও পারে নি৷ রাগে ফারিহার পুরো শরীর রি রি করছে৷ ফারিহা আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে তনুকে তার প্রাপ্য শাস্তি দেওয়ার জন্য অগ্রসর হয়৷ রুমে এসে তনুকে না দেখতে পেয়ে ফারিহা বুঝতে পারে তনু পালিয়েছে৷ ফারিহা রোজার দিকে এক নজর তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হেটে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ ফারিহা দোতলায় দাড়িয়ে তনুকে দেখতে পায়৷ তনু খুব সাবধানে পা টিপে টিপে হেটে বেরিয়ে গেল৷ ফারিহাও দেরি না করে তনুর পেছন পেছন যেতে লাগলো৷

(৭৩)

শাওয়ার নিয়ে চেন্জ করে ওয়াশরুম থেকে মেঘ বের হয়ে দেখে ফোন বাজছে৷ মেঘ ভিজে তোয়ালে ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে ফোন হাতে নিলে কল রিসিভ করে কানে ধরতে , ফোনের ওপাশ থেকে মেঘের সিনিয়র অফিসার তারেক শেখ বলতে লাগলো,” মেঘ ইমেডিয়েন্টলি হেডকোয়াটার্সে এসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি৷” তারেক শেখের কন্ঠ বেশ গম্ভির লাগলো মেঘের কাছে, মেঘ কোন প্রশ্ন না করে বলে,” ওকে স্যার আমি আসছি৷”

ওপাশ থেকে খট করে কল ডিসকানেক্ট করার শব্দ পেয়ে মেঘ ফোন নামিয়ে ফর্মাল ড্রেস পড়ে বেরিয়ে পড়ে৷ আদঘন্টার মধ্যে মেঘ পৌছে যায় হেডকোয়ার্টাসে৷

অন্যদিকে ফারিহা তনুর পিছু নিতে নিতে এক সময় সেই ফ্লাটে চলে আসে৷ তনুর অজান্তে ফারিহা তনুর পিছু নিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হলো ফ্লাটের দিকে……….
.
.
.
#চলবে…….!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here