ধূসর রঙের প্রজাপতি পর্ব ৬+৭+৮

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_6_7

রাত আট টা । ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন এ দাঁড়িয়ে আছে ঝিল।
ওর ই পাশে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে মৌনতা।
ঝিল আড়চোখে মৌনতা কে দেখে যাচ্ছে।
মৌনতার মুখ টা দেখে মনে হচ্ছে কেঁদেই দিবে। ঝিল ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করে বলল
_ মৌন তুই যদি এমন করে থাকিস তাহলে আমি কি করে যাই বল তো ?

_ তুই একা একা এতো দূর যাবি। আমার ভয় হচ্ছে ঝিলি , যাস না প্লিজ।

ঝিল আলতো হেসে মৌনতার দু বাহু তে হাত রেখে বলল
_ এমন টা করে না মৌন। আমি একা একা চলতে পারি। ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। আর সাথে অনেকেই তো যাচ্ছে।

_ তাই বলে তুই

_ উহু আর একটা ও কথা না। বাজে কয়টা খেয়াল আছে তোর।
ত্রিশ মিনিটের ও বেশি সময় লাগবে তোর পৌছাতে।
সাড়ে আট টার সময় ই তো ট্রেন চলে আসবে তুই বাসায় ফিরে যাহহ।
বেশি রাত করা একদম ই ভালো হবে না।

_ কিন্তু ঝিল , এখনো তো ট্রেন আসে নি। তুই ট্রেনে উঠলেই না হয় যাবো।

_ উহু মৌন , রাস্তা ঘাট ভালো না। এখনি যাহহ তুই , আর দাদু ও রাগ করবেন।

_ ঝিল তুই

_ প্লিজ মৌন।

মৌনতা কেঁদেই দিলো। ঝিল আলতো হাতে মৌনতা কে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলো। মেয়েটা বড্ড বেশি ভালোবাসে ওকে।

মৌনতার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে ঝিল বলল
_ যাহহ এবার।

মৌনতা মুখ চেপে ধরে চলে গেল। ঝিল মলিন হাসলো, মেয়েটা পুরো রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে যাবে।

ঝিল একটা শপ থেকে এক বোতল পানি কিনে নিলো। পানি টা ভালো করে চেক করলো ইনটেক কিনা।
আজকাল পানির সাথে ও দুনীর্তি করে মানুষ। নোংরা পানি কে ইনটেক বলে চালিয়ে দেয়।
সাধারন মানুষ রা সেই দিকে খেয়াল ও করে না।
বোতল এর ক্যাপ খুলে একটু পানি খেয়ে নিলো ঝিল।
8’15 বাজে , তাই একটা বেঞ্চ এ বসলো। ভাইয়াদের কল করে বলতে হবে বিষয়টা।
আহনাফ আর রোহন কে কনফারেন্স কল করে বলে দিলো ঝিল।
আহনাফ আর রোহন দুজনেই দ্বিমত করলো। কিন্তু ঝিল নাছোড়বান্দা সে যাবেই। বহু কষ্টে ভাই দের বুঝিয়ে ফোন রাখলো ঝিল।

ফোনে ফেসবুক লগ ইন করে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো ঝিল।
চারপাশে চিৎকার চেঁচামিচি তে ঝিলের মাথা ধরে গেছে।
ঝিল কানে ইয়ারফোন গুঁজে ওর ফেবরেট সং অনিকেত প্রান্তর গান টা প্লে করে দিলো।
চোখ বন্ধ করে গানের লাইন গুলো ফিল করতে লাগলো।

মিনিট পাঁচেক পর ফোন রেখে উঠে দাঁড়ালো। আট টা পঁয়চিত্র বাজে এখনো ট্রেন আসে নি কেন ?
ঝিলের ভ্রু দুটো আপনা আপনিই কুঁচকে গেল। হয়তো টেকনিক্যালি সমস্যার জন্য কিছু মিনিট লেট হচ্ছে।
ব্ল্যাক কালারের একটা কুর্তি পরেছে তার উপরে ব্লু রঙের জিন্স এর পাতলা সোয়েটার। সাথে ব্লু জিন্স আর ব্লু স্কাফ।
মুখে মাস্ক লাগানো, চোখে ব্লু ফ্রেম এর স্টাইলিশ গোল চশমা।
চুল গুলো উঁচু করে ঝুঁটি করা।
যেহেতু নদীপথে ভ্রমন এ যাচ্ছে তাই কমফার্টেবল আর ঝামেলা বিহীন ড্রেস পরাই ভালো।

মিনিট বিশেক গেতেই লোক জনের সমাগম বেড়ে গেল। দুটো ট্রেনের লোক জন জড়ো হলে যা হয়।
ঝিল ভ্রু কুঁচকালো, এতো দেরি কেন হচ্ছে।
কিছু দূর পর পর মানুষের চেঁচামেচি ও শোনা যাচ্ছে।
ফোন পকেটে পুরে কাউন্টারে গেল ঝিল।
কাউন্টারের লোক টা ফোনে কথা বলছেন। ফোন রাখতেই ঝিল বলল
_ এক্সকিউজ মি ।
_ ইয়েস ম্যাম।
_ রাত নয়টায় ঢাকা টু খুলনা যাওয়ার জন্য যে ট্রেন টা সেটা এখনো আসে নি কেন ?
অলরেডি নয়টা বেজে গেছে।

লোক টা মলিন মুখ করে বললেন
_ উই আর সরি ম্যাম। ট্রেন টা রাস্তায় আটকে পরেছে।

ঝিল ভ্রু কুঁচকালো। ট্রেনের রাস্তা তে কি জ্যাম লাগে নাকি ?

লোকটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন
_ এক্সচেলি ম্যাম ট্রেন টা লেট করে ছেড়ে ছিলো। তার উপর মাঝ রাস্তাতে ট্রেন টা একটু সমস্যা দেখা দেয় যার জন্য এক ঘন্টা লেট হবে।

ঝিল ভ্রু কুঁচকে থেকে চলে আসলো। কিছু মানুষ চেঁচামেচি করছে। আসলে এখানে চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই।

ঝিল মুড অফ করে একটা বেঞ্চ এ বসে পরলো।
কয়েক মিনিটে পরিবেশ খানিকটা শান্ত হয়ে গেল।
সবাই বেঞ্চ গুলো ফুল করে ফেলেছে।
কোনো বেঞ্চ ই খালি নেই। ঝিল তার ব্যাগ টা বেঞ্চে তুলে রেখেছে।
যাতে কেউ পাশের সিটে বসতে না পারে।
মৌনতার ফোন আসতেই ঝিল রিসিপ করলো।
_ ট্রেন ছেড়ে ছে ঝিল?
_ টেকনিক্যালি প্রবলেম এর জন্য ট্রেন টা আসতে 1 ঘন্টা লেট হবে।
_ হোয়াট। তুই কি একা একা বসে থাকবি নাকি। তুই বাসাতে চলে আয় এখনি।
_ আমি কি একা বসে আছি নাকি ? এখানে সবাই ওয়েট করছে মৌন।
_ ঝিল দেখ তুই কিন্তু আমার কথার কোনো মূল্য ই দিচ্ছিস না।
_ প্লিজ মৌন , ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করিস না।
শোন এখন আমি রাখছি , ট্রেনে উঠে প্রতি ঘন্টায় আপডেট দিবো।
তুই প্লিজ রিলাক্স কর।

মৌনতা কে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দিলো ঝিল।
সত্যি এক ঘন্টা বসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর। তবে ওহ ফিরে যাবে না। কিছুতেই না , ওহ সুন্দরবন ট্যুর করেই ছাড়বে তাহ ও এই সময়েই।

_ হ্যালো মিস। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ক্যান আই সিট নেক্সট টু ইউ ?

একটি ছেলের কন্ঠে ফোন থেকে মুখ তুললো ঝিল।
ছেলে টা কে মাথা থেকে পা অব্দি একপলক দেখে নিলো।
অফ হোয়াইট রঙের ডেনিম জ্যাকেট সাথে ব্ল্যাক জিন্স আর পায়ে ট্রেন্ডি হোয়াইট ক্যাজুয়াল সু।
মুখ টা দেখা যাচ্ছে না কারন মাস্ক পরা। হয়তো পলিয়োশন এর জন্য পরেছে তবে কপাল টা দেখে বোঝা যাচ্ছে অতিরিক্ত ফর্সা এই ছেলেটা।
ঝিল তেমন কিছু ই বলল না। খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ই ব্যাগ টা সরিয়ে নিলো।

ছেলেটা প্রশস্ত হেসে সিটে বসতে বসতে বলল
_ থ্যাংকস আ লট। আশে পাশের কোন সিট ই খালি নেই তাই আপনার এখানে আসতে হলো।

ঝিল ভদ্রতার খাতিরে একবার তাকিয়ে হাসলো।
ছেলেটা বুকে হাত গুঁজে প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকিয়ে আছে। ট্রেন লেট হওয়া তে বড় ঝামেলা হয়ে গেল।
দশ টা বেজে গেলে ও ট্রেন আসলো না।
চারিদিকে গন্ডগোল পাকিয়ে গেল। নগর চলাচলে এই রখম ভোগান্তি কারোই কাম্য নয়। কাউন্টারের লোক গুলো সবাই কে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
ঝিল কাউন্টারের কাছে গিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলো।
এতো এতো মানুষের জন্য তার ধারের কাছে ও যেতে পারছে না।
প্রায় বিশ মিনিট পর পরিবেশ ঠান্ডা হলো।
ঝিল কাউন্টারে গিয়ে বলল
_ এটা কি হচ্ছে কি ? এভাবে মানুষ কে হ্যারাসমেন্ট করার মানে টা কি ?
কি পেয়েছেন কি আপনারা? আমাদের মানুষ বলে মনে হয় না।
এতো রাতে এখন কোথায় যাবো?

_ ম্যাম আপনি শান্ত হোন।আমরা ট্রেন এর ব্যবস্থা করেছিলাম তবে সেটা আসতে একটু লেট হতো।
মাঝ রাস্তাতে আবার প্রবলেম হয়েছে তার জন্য আমরা দুঃখিত।

_ হোয়াট আ জোঁক। ইউ নো হোয়াট কাল সকাল আট টার মধ্যে আমাকে খুলনা যেতে হবে। আমার ট্যুর রয়েছে আর আপনারা

_ উই আর রিয়ালি রিয়ালি সরি ম্যাম।

ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে আর ও কড়া করে কিছু কথা বলতে কিন্তু এদের সাথে ফালতু বক বক করাই ঠিক না।
এতে শুধু টাইম লস হবে। ঝিল মাথা চেঁপে ধরলো। মৌনতা বার বার কল করছে।
ঝিল ফোন টা সুইচঅফ করে পেছনে তাকাতেই অবাক হলো।
সেই লম্বা করে ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ঝিলের ভ্রু দুটো কুঁচকে গেল।
কাউন্টারের লোকের সাথে কথা বলার সময় মাস্ক খুলে রেখেছিলো ওহ।

ছেলেটা সানগ্লাস টা খুলে নিয়ে বলল
_ আমি যদি ভুল না হই আপনি মিস ঝিল তাই না ?

ছেলেটার কথা তে ঝিলের চিত্ত কেঁপে উঠলো। ছেলেটা ওকে চিনে কিরে ?
ঝিল ফাঁকা ঢোঁক গিললো, নিশ্চয় এটা ওর পাপাদের লোক।
ঝিল ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে থেকে ঝিলের দিকে খানিক টা দৌড়ে এলো।
ঝিল ভয়ে চুপসে গেছে। ছেলেটা দম ফেলে বলল
_ আপনি ভয় পাবেন না। আপনি কি আমাকে চিনতে পারেন নি ?
আমি অভিনব

অভিনব নাম টা শুনে ঝিল খানিকটা ভাবুক হলো। পরক্ষণেই ওর চিত্ত কেঁপে উঠলো। তবে এটাই কি সেই অভিনব?

অভিনব দারুন এক হাসি দিয়ে মাস্ক টা খুলে ফেললো।
ঝিল চমকালো, কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগলো।
অভিনব কিঞ্চিত হেসে বলল
_ আর ইউ ওকে ?
ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব ঝরা হেসে বলল
_ আসলে আমি দেখছিলাম আপনি কাউন্টারে চেঁচামেচি করছেন।
তখন আপনার ফেস না দেখে চিনতে পারি নি।

ঝিল বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলল
_ ওহহ
_ কোথাও যাচ্ছেন বোধহয় । আই মিন কোন ট্যুর এ ?
_ হ্যাঁ আপনি কি করে জানলেন ?
_ আপনি ই তো চেঁচিয়ে বলছিলেন কাল আপনার ট্যুর আছে।

অভিনবর কথাতে ঝিল খানিকটা লজ্জা পেল। একে তো অস্বস্তি তার উপর এমন এক বাজে পরিস্থিতি।

অভিনব আশে পাশে তাকিয়ে বলল
_ ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড। আমরা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি?
এক্সচেলি কিছু লোক তাকিয়ে আছে।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব আর ঝিল এক ফিটের দুরুত্ব রেখে হাঁটতে লাগলো।
ঝিল গলা ঝেরে বলল
_ আপনি বিডি তে ?
_ মামা বাড়ি তে এসেছি। আপাতত ট্যুর এ যাচ্ছি। আপনি ও তো খুলনায় যাচ্ছেন, কিসের ট্যুর এ ?
_ সুন্দরবন ট্যুর এ আপনি ?
_ রিয়ালি ? আমি ও তো সুন্দরবন ট্যুর এ যাচ্ছি। বাট ট্রেন টা তো মিস হয়ে গেল।

ঝিল মলিন হাসলো । ওর অনেক বেশি ই অস্বস্তি হচ্ছে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেড় বছর আগের সেই মানুষ টা যার সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলো ওহ।

অভিনব ঘড়িতে টাইম দেখে বলল
_ আজ আর ট্রেন মনে হয় না আসবে। কি সব ঝামেলা হয়েছে বলছে না ও সঠিক করে।

_ আপনি কোন ট্যুর এজেন্সির সাথে যাচ্ছেন ?

_ রেড লাইট ( কাল্পনিক এজেন্সির নাম )

_ আমি ও তো সেটাই যাচ্ছি। আমার ইমার্জেন্সি ছিলো আর তাই এটাকেই বেঁছে নিলাম।

_ সেম । কিন্তু মনে হচ্ছে না আর যাওয়া হবে।

ঝিলের কথাতে আফসোসের রেখা। অভিনব কিছুক্ষন ভেবে বলল
_ আপনি যদি কিছু না মনে করেন তাহলে আমার সাথে যেতে পারেন।
যেহেতু একি এজেন্সির সাথে যাচ্ছি আমরা।

#Part_7

ঝিল খানিকটা অপ্রস্তুতে পরে গেল। ওর কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারলো না।
এমন না যে অভিনব কে অবিশ্বাস করছে ওহ। যেহেতু ওকে বাঁচিয়ে ছিলো তাই বিশ্বাস আছে ওর উপর।
তারপর ও যদি বাজে কিছু থাকে তাহলে তো সেফটির জন্য আছেই ইনজেকশন।
কিন্তু ঝিল ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

_ আমি আপনাকে জোড় করছি না। আমাকে বিশ্বাস নাই হতে পারে তবে প্ল্যাটফর্মে একা বসে থাকার থেকে আই থিংক আমার সাথে গেলে আপনি নিজেকে সেফ রাখতে পারবেন।

অভিনবর কথা তে ঝিল লজ্জা পেল। ছেলেটা ভাবছে ঝিল ওকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
ঝিল মৃদু স্বরে বলল
_ ট্রেন তো আসবে না। তাহলে কি করে যাবো ?

_ ডোন্ট ওরি বাসে করে যেতে পারবো। সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে 11 টায় একটা বাস খুলনায় যাবে।
আমি অলরেডি ব্ল্যাক এ একটা টিকেট নিয়ে নিয়েছি আরেক টা টিকেট ও ম্যানেজ করে নিবো।

ঝিল হালকা হাসলো। অভিনব প্রশ্ন করলো
_ যাবেন ?
ঝিল মাথা ঝাঁকালো । অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ চলুন তাহলে।

ঝিল অভিনবর সাথে চলতে লাগলো। শীত বাড়ছে, একটু আগে পর্যন্ত ও তেমন শীত ছিলো না।
তবে এখন কুয়াশা এসে শীত গভীর করে দিচ্ছে।
এখান থেকে কিছুদূরের পথ ও দেখা যাচ্ছে না।
অভিনব আর ঝিল স্টেশন থেকে বের হয়ে একটা সি এন জি তে উঠলো।
ঢাকা বিমান বন্দর রেল স্টেশন থেকে সায়েদাবাদ বাস স্টেশন 19 কিলোমিটার।
ফ্রি রোড থাকলে 30 মিনিটেই পৌছে যাবে ওরা।
সি এন জি চলছে ফুল স্প্রিডে। শীতের মাঝে ঠান্ডা হাওয়া ঠিক যেন সুচের মতো এসে গাঁয়ে বিধছে।
ঝিলের পাতলা সোয়েটার টা হাওয়া তে উড়ছে। ঝিল ব্যাগ থেকে একটা মাফলার বের করে গলায় পেঁচিয়ে নিলো।
অভিনব ফোনে লোকেশন দেখে যাচ্ছে। এগারোটার মধ্যে সায়েদাবাদ পৌঁছাতেই হবে।
রাস্তা ঘাটে তেমন যানজট না থাকাতে এগারো টা বাজার দশ মিনিট আগেই ওরা সায়েদাবাদ পৌছে গেল।
অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে ড্রাইভারের ভারা মিটিয়ে বলল
_ ধন্যবাদ মামা। আপনি যেভাবে গাড়ি চালিয়েছেন, আপনার কাছে আমরা কৃতঙ্গ।

সি এন জি চালক মৃদু হেসে চলে গেলেন।
অভিনব ঝিল কে নিয়ে কাউন্টারের দিকে যেতে লাগলো।
ঝিল একটু পেছনে থাকায় অভিনব বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে।
ভাগ্যের পরিহাসে মেয়েটার দায়িত্ব আবার ওর কাছে চলে এসেছে।
কাউন্টারে গিয়ে ব্ল্যাক এ আরেক টা টিকিট কালেক্ট করে নিলো অভিনব।
ঝিল মনোযোগ দিয়ে সমস্ত টা দেখে যাচ্ছে। অভিনবর ব্যবহার খুবি ধারালো, সকলে তার কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।

অভিনব ঝিলের মনোযোগ পেতে খেক করে কেশে বলল
_ আমাদের বাসে উঠতে হবে। আর সবার শেষের সিট পেয়েছি।

ঝিল তেমন কোনো কিছু না বলাতে অভিনব বলল
_ মিস ঝিল আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।
আর বাসের লিস্ট আমি চেক করেছি সবাই খুলনাতেই যাচ্ছে।
আর আপনার জন্য লাকী পয়েন্ট বাসের বেশির ভাগ মহিলা সদস্য।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব ঝিলের ব্যবহারে তুষ্ট না হলে তেমন কিছু মনে করে নি । কারন আজকের যুগে এসে আপন কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না। আর ওহ তো এক অচেনা মানুষ।
ঝিল কে নিয়ে অভিনব বাসের একদম শেষের সিটে গিয়ে বসলো।
মোটা মুটি সব সিট ই ফুল , তবে বাসের লাস্ট সিট ফাঁকা।
অবশ্য অভিনব এতে খুশি ই হলো। কারন তিনটে সিট ফাঁকা থাকাতে ঝিল কে নিয়ে সেফ ওহ।
যদি পাশে কোনো বাজে লোক বসতো।
এগারো টা বাজতেই গাড়ি ছেড়ে দিলো। ঝিল এখনো অস্বস্তি তে ভুগছে। বিষয় টা অভিনব বুঝতে পেরে বলল
_ মিস ঝিল আপনি কি অস্বস্তি বোধ করছেন?

ঝিল থতমত খেয়ে মাথা ঝাঁকালো। অভিনব ক্লান্তির শ্বাস ফেলে বলল
_ আপনি প্লিজ একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করুন । একটা এক্সিডেন ছিলো ঐটা , আপনি শান্ত থাকতে পারেন।
আর আপনি আর আমি সহযাত্রী অর্থাৎ ফ্রেন্ড ই বলা যায়।
আপনি আমার অনেক ছোট হলে ও আমি আপনাকে বন্ধু মনে করছি।
আপনি ক্লাইন্ডলি একটু সহজ হোন।

ঝিল কৃতঙ্গতার হাসি দিলো। পরক্ষণেই মনে পরলো মৌনতার কথা । দ্রুত ফোন টা অন করলো।
মৌনতার 48 টা মিস কল। ঝিল অপরাধীর মতো তাকিয়ে থেকে মৌনতার সাথে কথা বলে নিলো।
মৌনতা কে বলে নি ট্রেনের কথা। না হলে মেয়েটা পাগল ই হয়ে যাবে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ঝিল ফোন রাখলো।অভিনব ফোন হাতে ব্যস্ত। মনে হচ্ছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে।
ঝিল ফোনে কিছুক্ষণ গেমস খেলতেই রোহনের ম্যাসেজ আসলো।
রোহন কে লোকেশন কনফার্ম করে আবার গেমস খেলতে লাগলো।
অনলাইনে লডু খেলছিলো ঝিল। কয়েক বার খেলার পর ই দেখলো অভিনব ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ঝিল মেকি হাসি দিলো , অভিনব ঝিলের সাথে সহজ হতে বলল
_ চলুন আপনার সাথে আমার একটা ম্যাচ হয়ে যাক।
তবে অবশ্যই আমরা বাজি খেলবো।

ঝিল ভ্রু কুঁচকালো। অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ ডোন্ট ওরি। আমি যদি গেম এ উইন হই তাহলে আপনি আমাকে এক টা নাহ দুটো নাহ নাহ মোট চার টে চকলেট গিফট করবেন।

অভিনবর কথাতে খিল খিল করে হেসে উঠলো ঝিল।
অভিনব ও হাসলো, ঝিল আর অভিনব অনলাইনে লডু খেলতে লাগলো।
হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হচ্ছে, দুজনেই একের পর এক গুটি খেয়ে চলেছে।
মিনিট আঠারো পর গেম ওভার হলো।
ঝিল মুখ টা ছোট করে ফেললো। কারন ওহ হেরে গেছে। অভিনব প্রানখোলা হেসে বলল
_ তাহলে চার টে চকলেট পাওনা রইলো ?

ঝিল এক গাল হেসে মাথা ঝাঁকালো। বাসের লাইট অফ করে দেওয়া হয়েছে।
এখান থেকে খুলনা রেলেস্টশনের কাছে যেতে সাত ঘন্টার মতো সময় লাগবে।
অভিনব আর ঝিল রেল স্টেশনের কাছেই নামবে। দুজনের কেউ ই অন্য লোকেশন নিয়ে জানে না।
ঝিল ফোন টা রেখে হাই তুলতে লাগলো। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে ওর।

*

ভোরের আলো ফুটতেই চোখ পিট পিট করে তাকালো ঝিল।
অভিনব জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঝিল অভিনব কে দেখে ভ্রু কুঁচকালো তারপর ই দূরে সরে গেল।
অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ পুরো ছয় ঘন্টা তো কাঁধেই মাথা রেখে ঘুমিয়েছেন।
এখন আর দূরে গেলেই বা কি হবে?
আমার কাঁধের বারো টা তো বাজিয়ে দিয়েছেন ই।

অভিনবর কথাতে ঝিল লজ্জা পেল সাথে অস্বস্তি ওহ।
অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ ডোন্ট ওরি । প্লিজ রিলাক্স, আপনি আগের মতো ছটফটে নেই দেখছি।
কেমন যেন ভয় পাচ্ছেন আমাকে দেখে।

_ নাহ তেমন কিছু না। আসলে

_ ইটস ওকে। বাস সামনের রেসট্রন ( আমরা রেস্টুরেন্ট বলি আসলে এটার উচ্চারন রেসট্রন ) এই থামবে।
সবার ফ্রেস হওয়ার জন্য আর চা খাওয়ার জন্য জাস্ট 10 মিনিট দিবে।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব সারা রাত চোখের পাতা এক করে নি। প্রথমত ঝিল ওর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো। আর দ্বিতীয়ত ঝিলের নিরাপত্তার জন্য।

কিছুদূর যেতেই বাস দার করালো। ঝিল কে নিয়ে অভিনব নেমে গেল।
যেহেতু ট্যুর প্যাকেজ এই নাস্তার ব্যবস্থা আছে তাই ওরা নাস্তা করবে না এখন।
ফ্রেস হয়ে আসতে আসতেই প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেল।
অভিনব ঝিল কে দাঁড়াতে বলে ওয়ান টাইম কাঁপে দুটো চা নিয়ে আসলো।
ঝিল চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ এটা কি চা ?

অভিনব এক গাল হাসলো। তারপর বলল
_ এটা ফুলের চা মিস ঝিল।

_ কিহহ ফুলের চা।

_ হ্যাঁ। ফুল দিয়ে ও এখন এক রকমের চা বানানো হচ্ছে।
এটা স্বাস্থ্যকর আর ভালো ওহহ।

ঝিল ঠোঁট উল্টিয়ে দাড়িয়ে রইলো। অভিনব বিডি সম্পর্কে ও এতো কিছু জানে যার এক বিন্দুও ওহ জানে না।

_ মিস ঝিল তাড়াতাড়ি আসুন। বাস ছেড়ে দিবে।

ঝিল মুখ টা ছোট করে চলে আসলো। বাসে বসে দুজনে চা খেতে লাগলো।
ফুলের চা কখনো খায় নি ঝিল। চা টা খানিক টা পানসে লাগলে ও বেশ সতেজতা দিচ্ছে।
ঝিল চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে বলল
_ আচ্ছা এটা কি ফুলের চা ?
_ এটা জবা ফুলের চা।
_ রিয়ালি আমরা জবা ফুল খাচ্ছি ?

অভিনব মুচকি হাসলো। ঝিল আবার প্রশ্ন করলো
_ এটা কোন সুপারশপ এ পাওয়া যায় ?
_ অনেক সুপারশপেই পাওয়া যায়। তবে চাইলে আপনি নিজে ও বানাতে পারবেন। খুব কঠিন না এটা , আমি প্রায় বানাই।

ঝিল নাক মুখ কুঁচকে নিলো। এই বিদেশী দের মতো দেখতে ছেলেটা চা ও বানায় ?

চা খাওয়া শেষ করে অভিনব বলল
_ আসলে যারা চা ছাড়া থাকতে পারে না তাদের জন্য ফুলের চা বেস্ট।
কারন ফুলের চা ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা ফুড ব্লগার তাদের এটা খাওয়া উচিত।
সব থেকে ভালো নিজেরা তৈরি করে খেলে। কারন এতে আপনি প্রকৃতির আসল স্বাধ টা নিতে পারবেন।

ঝিল খুব মনোযোগ দিয়ে অভিনবর কথা শুনলো। অভিনবর চোখের পাপড়ি গুলো নড়ছে। তাতে ঝিল বেশ আকর্ষিত হচ্ছে।

_ মিস ঝিল। কোথায় হারিয়ে গেলেন ?

ঝিল চমকে চোখ সরিয়ে নিলো। অভিনব গলা ঝেরে বলল
_ ফুলের চা বানানোর জন্য আপনাকে ফুলের পাপড়ি সংগ্রহ করতে হবে।
অবশ্যই ফুল টা পরিপূর্ণ ফোঁটার পর।তারপর ভালো করে ধুয়ে ফুটন্ত পানিতে দিয়ে দিলেই আপনার চা রেডি।

ঝিল হালকা হেসে বলল
_ আপনি অনেক কিছু জানেন দেখছি।
_ তেমন কিছু না। তবে ভ্রমন প্রেমি হলে একটু আধটু জানতেই হয়।

ঝিল ঝরা হাসলো। সাত টার দিকে বাস খুলনা রেল স্টেশনের কাছে থামলো।

অভিনব আর ঝিল বাস থেকে নেমে গেল।
এখন তাঁদের গন্তব্য খুলনা জেল খানা ঘাট।
রেল স্টেশন থেকে জেল খানা ঘাট অটো করে চলে আসলো ওরা। ভাড়া পার পার্সোন 20 টাকা করে।

তবে জেল খানা ঘাটে এসে বাধলো এক বিপত্তি। এখানে অনেক ট্রাভেলার কোম্পানী থাকলে ও রেড লাইট ট্যুর এজেন্সি দেখা যাচ্ছে না।
অভিনব ভ্রু কুঁচকে ফোন লাগালো। কিহহ আশ্চর্য ফোন লাগছে না।

ঝিল অভিনবর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো। অভিনবর কপালে দুটো ভাঁজ স্পষ্ট।
অভিনব আশে পাশের কিছু মানুষের সাথে কথা বলল।
তারা ও এসেছে রেড লাইট ট্যুর কোম্পানির সাথে।
এখানের দায়িত্ব প্রাপ্ত অধিদপ্তর এর একজনের সাথে কথা বলে জানতে পারলো রেড লাইট ট্যুর কোম্পানি নামে তাঁদের কাছে কোনো এজেন্সির নাম নেই।
অভিনবর ধারালো মস্তিষ্ক খুব সহজেই বুঝে গেল বিষয় টা।
মূলত মানুষ কে ঠকিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে এরা।

ঝিল বেশ কিছুক্ষণ ধরে অভিনব কে দেখে যাচ্ছিলো।
কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ আমাদের ফিরে যেতে হবে ঝিল।
_ হোয়াট । কেন ফিরে যাবো আমরা ?
_ রেড লাইট ট্যুর কোম্পানি বলে আসলে কিছু ই নেই।
টাকা খেয়ে পালিয়েছে রাসকেল রা।

ঝিলের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। ঝিল কপালে হাত দিয়ে বলল
_ কাল থেকেই বাঁধা পরছিলো। ঐ বেটারে তো কাঁচা ভাঁজা দরকার।

_ এখন কিছু করার নেই চলুন।

_ নো ওয়ে। আমি আজ সুন্দরবন গিয়েই ছাড়বো।

_ এটা সম্ভব নয় ঝিল। আপনি একা একা সেখানে যেতে পারবেন না।

ঝিল কাঁদো কাঁদো ফেস করে ফেলল। অভিনব ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার মুখ টা দেখে বেশ খারাপ লাগলো ওর।
কিন্তু এখন কি আর করার। ঝিল রেড লাইট ট্যুর কোম্পানির পেজ এ ইচ্ছে মতো গালি দিয়ে ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে।
অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে ফোন ঘাটতে লাগলো।
মিনিট দশেক পর ঝিল কে বলল
_ আমার উপর বিশ্বাস আছে ?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব প্রশস্ত হেসে ঝিলের হাত ধরে বলল
_ তাহলে আসুন।

ঝিল শিউরে উঠলো। অভিনবর হাতের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো। কেমন কেমন অনুভূতি হচ্ছে ওর। অস্বস্তি ভালো লাগা সব কিছু গড়মিল পাকিয়ে গেছে।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_8

অভিনব ঝিলের হাত ধরে কিছুদূরে একটা বাসের সামনে চলে আসলো।
ঝিলের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বললো দেখি কিছু করতে পারি কি না।
ঝিল অধরে হাসি রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
বাস থেকে প্রায় 40 জনের মতো নেমে হৈ হুল্লর করছে। ঝিল ভ্রু কুঁচকে রইলো।
অভিনব ঝিল কে বলল
_ আপনি আমার পেছনেই থাকুন। আর হ্যাঁ অন্যদিকে যাবেন না।

ঝিল বিনা শব্দে মাথা ঝাঁকালো । অভিনব বাসের কিছু ছেলের সামনে গেল।
মনোযোগ পেতে বলল
_ হ্যালো ডিউট। ক্যান আই টক টু ইউ ?

ছেলে গুলো ঘুরে তাকালো। অভিনবর মাথা থেকে পা অব্দি দেখে নিলো ।
অভিনব আদৌ কি বাজ্ঞালি নাকি বিদেশি তা নিয়ে বেশ কনফিউশনে ও পরে গেল।
অভিনব কোনো উত্তর না পেয়ে অনুনয়ের স্বরে বলল
_ কিছু কথা ছিলো।

ছেলে গুলো চমকালো , তার ই সাথে প্রশস্ত হাসলো । অভিনব বাজ্ঞালি হওয়াতে তারা বোধহয় খুশি ই হলো।

একটা ছেলে হাত বাড়িয়ে বলল
_ আম মাহের আহমেদ ।

অভিনব আলতো হেসে হাত মিলিয়ে বলল
_ অভিনব সরকার ইহান।

শাকীল আর অমিত ও হাত বাড়িয়ে কুশল বিনিময় করলো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আপনারা ট্যুর এ এসেছেন ?
_ হুমম
_ সবাই কি বন্ধু ?
_ হ্যাঁ , বন্ধু , বন্ধু দের বউ / হাসবেন্ড, ভাই , বোন কিংবা লাভ কাপল সবাই আছি।

অভিনব ঝরা হাসলো। ছেলে তিনটে চকচকে চোখে তাকিয়ে রইলো।
অভিনবর সাথে কথা বলতে পেরে যেন ওরা গর্বিত।

অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ আমরা ও ট্যুর এই এসেছি।কিন্তু ট্যুর কোম্পানি ফ্রর্ট, টাকা নিয়ে লাপাত্তা।
এখন আমরা ফিরে যেতে চাচ্ছিলাম না। যদি আপনারা হেল্প করতেন , যদি আপানদের সমস্যা না হয় তো।

ছেলে তিনটে বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো। শাকীল বলল
_ আপনারা কয়জন ?

_ দুজন।

_ আচ্ছা তাহলে তো যেতে পারবেন। আমাদের একটা কেবিন খালি আছে।

অভিনব প্রশস্ত হাসলো। পরক্ষণেই মুখ টা খানিক টা চুপসে গেল। এখানে যেহেতু সবাই কাপল তাই ঝিলের জন্য আলাদা ব্যবস্থা চাইতে ও পারবে না।
কিন্তু ঝিল কি ওর সাথে এক কেবিনে থাকতে রাজি হবে ?

মাহেত অভিনব কে উদ্দেশ্যে করে বলল
_ অভিনব আপনি কি কিছু ভাবছেন ?

_ নাহহ এক্সচেলি আমার সাথে একটা মেয়ে যাচ্ছে তো তাই আর কি।

মাহেত লম্বা করে হাসলো। তারপর বলল
_ চিল ব্রো , শেয়ার তো নিশ্চয়ই শুধু কেবিন ই হবে বেড তো নয়।

অভিনব ভদ্রতার খাতিরে হালকা হাসলো। এরা তো আর জানে না ঝিল ওর জি এফ নয়।

অভিনব ঝিলের কাছে গিয়ে বলল
_ ম্যানেজ করতে পেরেছি।

ঝিল চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল
_ রিয়ালি ? তার মানে আমরা সুন্দরবন যাচ্ছি।

_ ঝিল একটা সমস্যা আছে ?

ঝিল ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ কি ? আমরা কি যেতে পারবো না আজ ?

_ নাহহ নাহ যেতে পারবো। তবে

অভিনবর অস্বস্তি হচ্ছে কি করে বলবে এটা তাছাড়া ঝিল ই বা কি রিয়েক্ট করবে?

_ কোনো সমস্যা। আচ্ছা আপনি ব্যস্ত হবেন না সমস্যা নেই আমরা ফিরে যাই চলুন।

_ আমাদের কেবিন শেয়ার করে থাকতে হবে।

ঝিল ভ্রু কুঁচকালো। অভিনব ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ কেবিনে দুটো বেড আছে হয়তো তবে আপনি কি

_ ইটস ওকে। আমার কোনো অসুবিধা নেই।

অভিনব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মেয়েটা যেভাবে সন্দেহ করে সেই দিক থেকে এক কথাতেই রাজি হয়ে যাবে তা ওহ ভাবতে পারে নি।
ইমপ্রেসিব

_ হে ব্রো । হারি আপ , কিছু ফরমালিটিস আছে।

অভিনব পেছন ঘুরে বলল
_ আসছি জাস্ট আ মিনিট।
ঝিল চলুন আমাদের যেতে হবে । না হলে লেট হয়ে যাবে।
বাই দ্যা ওয়ে আমাদের তিন রাত পাঁচ দিনের ট্যুর এটা।

ঝিল খোঁস মেজাজে বলল
_ তাহলে তো ভালোই হয়েছে ঐ টা তে তিন দিনের ছিলো।

অভিনব মৃদু হেসে আগাতে লাগলো। ঝিল বেশ খুশি আজ । অবশেষে সুন্দরবন যেতে পারবে ওহহ।

অভিনব সবার সাথে কথা বলছে। ঝিলের সাথে দুটো মেয়ে লেপ্টে আছে।
ঝিল কে বেশ ভালো লেগেছে ওদের। ঝিল একটু পর পর ই খিল খিল করে হাঁসছে। অভিনব এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। অভিনব ঝিল আর ওর পরিচয় সহ টাকা সব কিছু জমা দিয়ে দিলো।
ওরা সবাই যেহেতু ফ্রেন্ড সার্কেল তাই ট্যুর টা একটু বেশি ই মজার হবে।
অভিনব সবার সাথে সহজ হয়ে গেল।
ওরা তিনজন ই অভিনবর থেকে ছোট তাই তুমি করেই বলা শুরু করলো।
অভিনব কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ অমিত দুটো আস্ত খাসি নিয়ে নাও।

_ আস্ত খাসি দিয়ে কি হবে ?

_ এটা দিয়ে বারবিকিউ করবো। যেহেতু কসাই মামা আমাদের সাথেই যাচ্ছে তাই তাজা খাসি ই নিয়ে নাও।
তড়তাজা বারবিকিউ খাবো।

শাকীল প্রশস্ত হেসে বলল
_ কি আইডিয়া ব্রো। আমাদের ট্যুর তোমার জন্য ই স্পেশাল হতে চলেছে।

অভিনব হালকা হেসে সবাই কে সাহায্য করতে লাগলো। ওহহ একজন খাঁটি ভ্রমনপ্রেমিক হওয়াতে ট্যুর সম্পর্কে ইউনিক আইডিয়া আছে।

ঝিল কথার ফাঁকে ফাঁকে আসে পাশে তাকাচ্ছে।
অভিনব কে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।
সকাল নয়টা বেজে গেছে কারো ই নাস্তা করা হয় নি।
ঝিলের বেশ খিদে পেয়েছে তাই ব্যাগ থেকে সফট কেক বের করে খেতে লাগলো।
আর্ধেক টা খাওয়া হতেই অভিনব এসে বলল
_ আরে আপনি দেখি এখনি খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ঝিল আরেক টা পিস কেকে কামড় বসিয়ে বলল
_ আর এক পিস আছে এটা আপনি খেয়ে নিন।

অভিনব কিছু বলতে গিয়ে ও বলল না। কেক টা নিয়ে খেতে খেতে বলল
_ এই দু ইঞ্চি ওয়ালা কেক কোথায় পেলেন। এই রকম কুড়ি পিস খেলে ও তো পেট ভরবে না।

_ আমি ঢাকা থেকে চকলেট হাবি জাবি প্যাক করে এনেছি। আমার ছোট ছোট খিদে পায় তাই।

অভিনব থতমত খেয়ে বলল
_ ছোট ছোট খিদে মানে?

_ মানে হয় না দু ঘন্টা ধরে লাঞ্চ করেছি। কিন্তু কিছু খেতে ইচ্ছে করছে ঐ রকম খিদের জন্য আর কি।

অভিনব উচ্চশব্দে হেসে উঠলো। ঝিল লোলুপ দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
অভিনবর হাসি টা অসাধারন। অভিনব যখন হাসে ওর ভ্রু দুটো সামান্য বেঁকে যায়।
আর তখন ওর মুখে আলাদা একটা ভাব চলে আসে।
হঠাৎ ই ঝিলের মনে হলো অভিনব এতো ফর্সা না হয়ে উজ্জ্বল শ্যাম বর্ন হলে ভালো হতো।
কেন মনে হলো ওহ সেটা জানে না।অভিনব ঝিলের হাতে তিনটে দু লিটারের মিনারেল ওয়াটার বোতল ধরিয়ে দিলো।
ঝিল বোতল গুলো ধরে বলল
_ এতো ভারী কেন ?
_ 6000 মি:লি ওয়াটার একটু ভারী তো হবেই।
_ এই এতো পানি দিয়ে কি হবে ?
_ খাবেন। আমি আর ও পাঁচ টা বোতল নিয়ে নিয়েছি।

_ কেন এরা খাওয়ার জন্য পানি দেয় না নাকি ?

ঝিলের কথাতে অভিনব হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না। ঝিলের এই বাচ্চামো কথা তে অভিনবর মাথা খোলসা হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ পানির ব্যবস্থা অবশ্যই আছে। তবে আমি সবাই কে পার্সোনালি এক্সট্রা পানি নিতে বলেছি। যেহেতু আমরা সাধারনের থেকে বেশি সময়ের জন্য যাচ্ছি তাই আমাদের বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে।

_ ওহহহ। আচ্ছা আমরা বাঘ দেখতে পাবো ?

_ সেটা তো বনে গেলেই বুঝতে পারবো।তাড়াতাড়ি আসুন

ঝিল আর অভিনব ঘাটে চলে আসলো। ঘাট থেকে সড়াসড়ি লঞ্চে উঠা যায় না।
তাই সবাই ঘাট থেকে বোর্ট এ চড়ে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা বিশাল ট্রাভেল লঞ্চের সামনে বোর্ট এসে থামলো।
সবাই একে একে বোর্ট থেকে লঞ্চে যেতে লাগলো।
অভিনব লঞ্চে উঠে দেখলো ঝিল লঞ্চে আসতে ভয় পাচ্ছে।
অভিনব হাত বাড়িয়ে ঝিল কে লঞ্চে তুলে নিলো।
ঝিল মৃদু হেসে কৃতজ্ঞতার সুরে বলল
_ থ্যাংকস।

প্রতি উত্তরে অভিনব অধরে হাসি ফোটালো।
সবাই কে নাম অনুযায়ী কেবিনের চাবি দেওয়া হলো।
তার আগে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হলো।
ট্রাভেলার নির্দেশক মাইক হাতে দাড়িয়ে বলা শুরু করলেন

” ধন্যবাদ সবাই কে। আমরা সবাই জানি আমরা কোথায় যাচ্ছি। তবে প্রায় ই জেনে ও না জানার মতো অনেক কান্ড করে বসি।
মনে রাখবেন আপনি পানি পথে ভ্রমন করছেন।
আর যেহেতু আমরা তিন রাত পাঁচ দিনের ট্যুর এ যাচ্ছি তাই আমাদের সবাই কে একে অপরের সহযোগিতা করতে হবে।
কেউ লঞ্চের কর্নারে গিয়ে দাঁড়াবেন না।
যারা সাঁতার জানেন না তারা তো একদম ই নয়। আর হ্যাঁ আপনারা সবাই বন্ধু তাই সদআচারনের কথা মনে করিয়ে দেওয়া লাগবে না নিশ্চয়ই।
সবাই আমাদের নির্দেশনা মেনে চলবেন। পরিশেষে আমরা এক সুন্দর সময় কাঁটাতে চাচ্ছি
হ্যাপি জার্নি টু অল ( অলসো অল রিডার্স )
আশা করি আমরা এক সুন্দর ভ্রমনের সাক্ষী হবো।

লঞ্চ টা বেশ বিলাসবহুল। অভিনব আর ঝিল নিজেদের কেবিনে চলে আসলো।
কিন্তু কেবিনে এসে দেখলো দুটো সিঙ্গেল বেড নেই।
ডাবল সিটের এক টা বেড। অভিনব মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে রইলো।
ঝিল কিছুক্ষণ ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ ইটস ওকে। আমার বেড শেয়ার করতে অসুবিধা নেই।

অভিনব ও আর কিছু বলল না। কেবিন টা মোটামুটি আকারের। একটা বেড আর কাবাডের মতো করে এটার্চ করা রেক।
আর সামনে খানিক টা খোলা জায়গা আর একটা জানালা।
যেটা দিয়ে সুন্দর করে খোলা পৃথিবী তে যাবে।
সাথে ছোট একটা ওয়াসরুম। অভিনব আর ঝিল যে যার জিনিসপত্র রেকে রেখে দিলো।
অভিনব টাইম দেখে বলল
_ নাস্তা করতে যাবো আসুন।

ঝিল আর অভিনব নাস্তা করতে চলে গেল। নাস্তা তে রুটি, মাংস ভাজি আর জুস দেওয়া হলো।
খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে যে যার কেবিনে চলে গেল।
অভিনব ফোনে চার্জ দিতে দিতে বলল
_ ফোনের চার্জ ফুল করে রাখুন।
আর যাদের যাদের সাথে কথা বলার কথা বলুন।
আপনি কিন্তু নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে যাচ্ছেন।
কমপক্ষে 24 ঘন্টা সম্পূর্ন নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে।

ঝিলের মসৃন কপাল টাতে ছোট ছোট ভাঁজ পরলো।
অভিনব ফোন হাতে ব্যস্ত। ঝিল ফোঁস করে দম ফেলে আহনাফ কে আর রোহন কে কল করলো।
তারপর মৌনতার সাথে বেশ অনেকক্ষণ কথা বলল।
মৌনতা বেশ এক্সাইটেড এখন। ঝিলের কাছে যাত্রার এই টুকু শুনেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরছে।
অবশ্য অভিনবর বিষয় টি স্ক্রিপ্ট করে নিল । ঝিল বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখলো। অভিনব ফোন স্ক্রল করতে করতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here