#ধোয়ার-নেশা
#রোকসানা-রাহমান
পর্ব (৩)
এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা যার জন্য দরজা আটকিয়ে নিতে হবে? অন্ত্রীশা কিছুটা বিরক্ত নিয়ে আপুকে টেনে বাইরে বের করে দরজা আটকিয়ে নিলো।
“” আটকিয়েছি বলুন!””
“” একটু লাইনে থাকো তো…””
যেখানে পালকের কন্ঠস্বর শুনার জন্য অন্ত্রীশা আকুল সেখানে ইম্পর্ট্যান্ট কথা মানে তো মহাআকুলতা। ফোনটা কানে নিয়েই বেশ মনোযোগী ভঙ্গিমায় বসে রয়েছে অন্ত্রীশা। এদিকে এক,দুই,তিন,পাঁচ,দশ,বিশ,চল্লিশ মিনিট পার হতে চলেছে কিন্তু ওপাশ থেকে কারো কন্ঠস্বর আর ভেসে আসছেনা। অন্ত্রীশা খুবি সুক্ষমনো সংযোগ করে বুঝার চেষ্টা করছে ফোনের ওপাশে আদৌ কেউ আছে নাকি নেই। কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার ছিল যার জন্য তাকে খালি রুমে দরজা আটকে নিতে হলো অথচ যে বলবে সে লাইনে দাড় করিয়ে বেপাত্তা হয়ে গেছে।
লাইনে থাকতে থাকতে অন্ত্রীশার ঘুম ঘুম পাচ্ছে। বার বার ফোন চেক করে যাচ্ছে ওপাশ থেকে লাইনটাও কাটা হয়নি, এক এক করে সেকেন্ড বেড়ে গিয়ে মিনিটও বেড়ে যাচ্ছে। অন্ত্রীশা কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতেই বলে উঠলো,
“” আমি কি কলটা কেটে দিবো?””
কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনি দেখে অন্ত্রীশা এবার বেশ হতাশ হলো। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইলো তার জীবনে যেন এমন লাইনে থাকা ইম্পর্ট্যান্ট মুহুর্ত আর কখনো না আসে!
অন্ত্রীশা কল কাটবে কি কাটবেনা ভেবেই পাচ্ছেনা। ফোনটা কানে নিয়ে বসা থেকে শুয়ে পড়লো। এক সময়ে তার চোখদুটো বন্ধও হয়ে আসলো।
“” তোমাকে বলেছিলাম লাইনে থাকতে,আমার জন্য তুমি সামান্য লাইনেও থাকতে পারোনা? কেমন মেয়ে তুমি? আবার আমাকে বিয়ে করার জন্য ধেই ধেই করে নাচছো? তোমাকে বিয়ে তো দুরে থাক তোমার সাথে কথা বলতেও আমার গা গুলাচ্ছে। ইডিয়েট কোথাকার! খবরদার কারো কাছ থেকে যদি আমার নাম্বার নিয়েছো আর আমাকে কল দিয়েছো! তাহলে ফোনের ভেতর থেকেই তোমাকে আমি গুলি করে মেরে ফেলবো! যত্তসব!””
অন্ত্রীশা লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে পড়লো। শরীর ঘেমে গেছে। ওড়না দিয়ে গলা মুছতে মুছতে ভাবলো,এ আমি কেমন স্বপ্ন দেখলাম??
অন্ত্রীশার পাশেই পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিতেই দরজায় অনর্গল নক করার শব্দ পেলো। দৌড়ে দরজা খুলতেই অনিকশা ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
“”দু ঘন্টা যাবত কি এতো কথা বলছিস শুনি? যার জন্য আমাকে রুম থেকে বের করে দিলি??””
“” আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম আপু,কথাতো হয়নি!””
“” কথা হয়নি মানে? তুই তো কানে ফোন লাগিয়েই আমাকে বের করে দিলি!””
অন্ত্রীশার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওর হাত থেকে নিজের ফোনটা ছিনিয়ে নিলো অনিকশা! ফোনের লাইটটা অন করেই দেখতো পেলো পালক এখনো কলে কানেক্ট আছে। নামের নিচটাতেই কল টাইমে ২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড উঠে আছে। যদিও বা সেকেন্ডটা এখনো চলছে!
অনিকশা বেশ করুন নয়নেই অন্ত্রীশার দিকে তাকিয়ে বললো,
“” বিয়ে হওয়ার আগেই আপুকে মিথ্যে বলা শিখে গেলি?””
“” কি মিথ্যে বললাম?””
অন্ত্রীশার কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলোনা অনিকশা। পালকের কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা অফ করে ফেললো৷ নিজের রুমে এসে ফোনটা ঢিল মেরে ফেলে দিতেই অরিদ বলে উঠলো,
“” আমার রাগ ফোনের উপর ঝাড়ছো কেন, অনি? তুমি চাইলে আমাকে বকতে পারো! এখন তো তোমার বকা না খেলে আমার পেটের ভাত হজমই হয়না। দেখো আজকের নাস্তাটা এখনো হজম হয়নি,পেটটা কেমন ফুলে আছে!””
“”সুঁই দিয়ে ফুটো করে ফেলো দেখবে পেটটা তরতর করে কমে যাচ্ছে,যত্তসব হেয়ালিপনা করার আর সময় পায়না।””
অরিদ নিজের ল্যাপটপটা ফেলে উঠে অনিকশার কাছে এগিয়ে আসে।
“” তোমার রাগের ক্ষেতের সবজি বুনা কবে শেষ করবে বলোতো? এতো সবজি বুনছো অথচ মাটির উর্বরতা কমার নামই নাই। কোন মাটি দিয়ে ক্ষেত বানিয়েছো বলোতো!””
অনিকশা রক্তরাঙা চোখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অরিদ ওর হাতটা আকড়ে ধরে।
“” আজকের এই দিনটাই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম অনি,বুকের ভেতরে প্রথম মোচড়টাও আজকেই দিয়েছিলো। আজকের দিনটা কি আমাকে দিবে? একটু তোমাকে মন ভরে দেখার জন্য? লাস্ট কবে তুমি আমার চোখে চোখ রেখে হাসি দিয়েছিলে তোমার কি মনে পড়ে?””
অরিদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকলেও এখন আর ইচ্ছে করছেনা। অরিদ তাকে কতটা ভালোবাসে সেটা হয়তো সে অরিদের থেকেও ভালো করে জানে। যে ছেলে শুধু একপলক দেখার জন্য রোজ ভার্সিটির গেটে দাড়িয়ে থেকে তিনটা বছর পাড়ি দিয়ে দিয়েছে সে ছেলের হৃদয়ের অনিকশা কতটা জায়গা জুরে ছিলো তাও অনিকশার অজানা না। আর সেই জানা থেকেই হয়তো এতটুকু বুঝতে পেরেছিলো অরিদ তাকে ফিরাবেনা। আর সেই বিশ্বাসেই সে হুট করেই অরিদকে বিয়ের কথা বলে ফেলে। বিয়েটাও হয়ে যায়,কোনো সাজসজ্জা ছাড়াই!
অরিদ চাইলেই সেদিন অন্ত্রীশাকে ফিরিয়ে দিতে পারতো। যেখানে আজকালকার ছেলেরা চার/পাঁচ বছরের রিলেশনে গিয়েও বিয়ের কথায় পিছিয়ে যায় সেখানে তো অরিদের সাথে ভালোবাসার কোনো আদান-প্রদানও হয়নি,তবুও মানুষটা একটা টু শব্দ করেনি,একটাবার নিজের ফ্যামিলির কথা,ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি। অনিকশার জাস্ট এক কথায় বিয়ে করে ফেললো। কতটা ভালোবাসলে এমন কাজ করতে পারে ভাবলেই অনিকশার বুকটা কেঁপে উঠে। অরিদের ভালোবাসার বিনিময়ে এই চারটা বছরে সে অরিদকে কি দিয়েছে? শুধু অবহেলা আর অবহেলা! কিন্তু কেন? কেন সে অরিদের বুক ভরা ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে পারেনা?? অনিকশার লালচে চোখটা আরো লাল হয়ে আসলো তবে রাগে নয়,না পারার ব্যর্থতায়!
“”আমি মনে করতেও চাইনা। আজ অন্ত্রীশার গায়ে হলুদ,একটু পরেই মেহমানে বাড়িভর্তি হয়ে যাবে। আর এমন পরিস্থিতিতে তোমার এসব মাথায় আসে কি করে অরিদ?””
“” বেশি সময় নিবোনা,অনি। এক ঘন্টা দিলেও চলবে! তোমার তাতেও সমস্যা হলে ৩০ মিনিট দিও? তোমার সাথে এক রিকশায় ঘুরতে ইচ্ছে করছে খুব,প্লিজ অনি!””
অরিদের এই আবেগ মেশানো কথাগুলো অনিকশার বুকে তীরের মতো গিয়ে বিধে। এতো আবেগ মেশানো কথা এই মানুষটা কোথা থেকে পাই? শুনলেই চোখটা ভিজে আসে। আর নিজের প্রতি ঘৃনা আসে। কিন্তু কোনো মানুষি চায়না সে নিজেকে ঘৃনা করুক অনিকশাও তাই! তাইতো সে যতটা পারে অরিদের থেকে দুরত্ব বজায় রেখে থাকে। আর সামনাসামনি হলেই কোনো ইস্যু দেখিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয় তবুও যেন মানুষটা তার আবেগ থেকে কিছুটাও নিজেকে সরাতে পারেনা। এতো কেন ভালোবাসে সে আমাকে? আমি কি আসলেই এগুলো পাওয়ার যোগ্য??
অনিকশা জোর করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তির্যক কন্ঠে বললো,
“” আমি আমার একটা মিনিটও তোমার এইসব ফালতু কাজে ব্যবহার করতে চাইনা!””
অনিকশা দ্রুত পদে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। পেছনে ফিরে তাকানোর সাহস নেই। সে জানে তার এই কথাটাই কতটা কষ্ট পেয়েছে অরিদ। কষ্টে মুখটা মলিন হয়ে এসেছে যা সে দেখতে পারবেনা।
বাড়িভর্তি মেহমানের কদরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনিকশা। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার অরিদ ওর পিছু পিছু ঘুরঘুর করেছে কিন্তু সেদিক থেকে নিজেকে আড়াল করাটাই শ্রেয় মনে করলো অনিকশা। মানুষটাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলবে জানলে সে কখনোই বিয়ে করতে চাইতোনা। সেদিনের সেই ছোট্ট ভুল আজ এত বড় ইস্যু হয়ে দাড়াবে কখনোই ভাবতে পারেনি সে।
অন্ত্রীশাকে হলুদ শাড়ীতে বেশ লাগছে। শুনেছে এই সবি নাকি পালক নিজে কিনেছে। সাথে ফুলের গয়নাগুলোও সে নিজের হাতে বানিয়েছে ভাবতেই মনের ভেতর আনন্দরা দোল খেয়ে যাচ্ছে অন্ত্রীশার! বার বার ফুলগুলোকে ছুয়ে দেখছে মাঝে মাঝেতো নাকে নিয়ে গন্ধও শুকছে। অন্ত্রীশার মনে হচ্ছে ফুলের মধ্যে সে পালকের গন্ধ পাচ্ছে,কি আবেগী সেই সুবাস।
অন্ত্রীশার এমন কান্ডে বেশ বিরক্ত হচ্ছে পার্লার থেকে আগত মেয়েগুলো। ঠিকমতো সাজাতেও পারছেনা। এতো নাড়াচাড়া করলেকি সাজানো যায়? কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছেনা!
“” উফ! আল কতক্ষন তোমাল সাজুগুজু দেখবো খালামনি? তুমি এমন কললে সাজানো কিভাবে শেষ হবে? বাল বাল ফুলগুলো খুলে নিয়ে নাকে শুকছো কেন? ফুলগুলোও তো নষ্ট কলে দিচ্ছো! আমি কখন সাজবো?””
অরিদ্রার কথায় হেসে ফেলে অন্ত্রীশা।
“” কি করবো মামনি? এইগুলোর গন্ধটা এতো বেশিই ভালো যে আমার তো নাক থেকে সরাতেই ইচ্ছে করছেনা। কি করি বলো তো?””
অন্ত্রীশার কথায় বেশ বিরক্ত হচ্ছে অরিদ্রা তা বুঝতে পারলো অন্ত্রীশা। অরিদ্রার গাল টিপে দিয়ে বললো,
“” আচ্ছা আর দুষ্টুমী করবোনা। এই যে চুপটি করে বসছি। তুমি উনাদের বলো আমাকে ঠিকঠাক মতো সাজিয়ে দিতে। এই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।””
অনিকশা শাড়ীর কুচি ঠিক করায় ব্যস্ত! কিছুতেই কুচিটা মনের মতো হচ্ছেনা। বিয়ের এতো বছর পরও শাড়ী পড়া শিখতে না পারায় সেদিন আম্মু হালকা করে ঝেড়ে দিয়েছিলো। আর আজকেও একি ঝাড়ি খাওয়ার সাহস পেলোনা অনিকশা। তাই নিজে নিজেই শাড়ী পড়ার চেষ্টা করছে। যদিও বা কুচিগুলো তার হাতের অবাধ্য হচ্ছে। কিছুতেই সমান মাপে কুচি নিতে পারছেনা। হঠাৎই অরিদ এসে অনিকশার হাত থেকে কুচিগুলো কেড়ে নিয়ে বললো,
“” আমাকে ডাকলেও পারতে। তোমার কাছাকাছি থাকার একটা বাহানা তো পেতাম!””
অরিদ নিজের হাত দিয়ে ছোট ছোট করে কুচি আংগুলে গেথে নিচ্ছে। কুচি থেকে নজরটা অরিদের দিকে পড়তেই সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেললো অনিকশা। মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে। একদিনেই এতো শুকিয়ে গেছে? সারাদিন কি কিছু খাইনি? নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে গিয়ে তো ওর খাবারের দিকে খেয়াল রাখাও হয়নি।
অরিদ কুচি গুছিয়ে অনিকশার কোমড়ে গুজে দিয়ে বললো,
“” তোমার চুলটা একটু বেনি করে দিবো?””
“” না,আমি খোপা করবো।””
“” অহ!””
অরিদের মলিন মুখ নিয়ে চলে যেতে নিলেই অনিকশা বলে উঠলো,
“” খোপা করলেতো ফুলও লাগাতে হবে। আমি তো ফুল কিনতেই ভুলে গেছি। বেনিই করে ফেলি,কি বলো অরিদ?””
অরিদ উৎসাহী কন্ঠে বললো,
“” আমি করে দেই?””
“” পারবে তো?””
“” আগেও তো করে দিয়েছিলাম,অনি!””
বেনি করা শেষে অনিকশাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে অরিদ বললো,
“” তোমার এই বেনুনিটাই যথেষ্ট আমাকে ঘায়েল করার জন্য!””
অনিকশা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি নিজের ফোনটা বেজে উঠে। ফোনটা হাতে নিতেই বুঝতে পারে পালক কল করেছে।
“” হ্যালো?””
“” আপু,অন্ত্রীশার সাজ কি শেষ হয়েছে? সবার আগে ওকে আমি দেখতে চাই। আপনি কি ওর রুমে গিয়ে একটু ভিডিও কল দিবেন? আমি অপেক্ষায় আছি।””
পালকের মুখে আপু শব্দটা এতো বেনান লাগছে কেন?
“” আপু,কিছু বলছেন না যে?””
“” দিচ্ছি!””
“” ও যেন জানতে না পারে আমি ভিডিও কলে আছি। একটু খেয়াল রাখবেন!””
অনিকশা অন্ত্রীশার রুমে ঢুকে বেশ অবাক হলো। গায়ে হলুদ একজনের হলেও কনে দুজনকে দেখতে পাচ্ছে। হালকা মুচকি হেসে নিজের মেয়ের কাছে গিয়ে বললো,
“” আজকে কি আমার মা’টারও গায়ে হলুদ নাকি? খালামনির মতো সেজেছো যে?””
“” খালামনিল সাজটা আমাল খুব পছন্দ হলে আমাল কি দোষ?””
অনিকশা অরিদ্রাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
“” না,আপনার তো দোষের কিছু নাই। সব দোষ আপনার খালামনির।””
অরিদ্রার গালে দুটো চুমু খেয়ে অন্ত্রীশাকে বললো,
“” দেখি এদিকে ঘুরে বস তো!””
অন্ত্রীশা ঘুরে বসতেই পালককে ভিডিও কল দিলো অনিকশা!
“” ওয়াও,ভাবীকে কি সুন্দর লাগছে রে,ভাইয়া। কিন্তু তুই ভাবীকে না দেখে জানালা দিয়ে কি দেখছিস?””
হঠাৎ পাপড়ির ডাকে জানালা থেকে সরে এসে পালক বললো,
“” কিছুনা। তুই এখানে কি করছিস?””
“” তুই তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করতে দিলিনা। একটু হলুদ ও লাগাবিনা বলে দিয়েছিস। হলুদ ছাড়া বিয়েটা কেমন পানসে পানসে লাগছেনা? তাই তোর গালে একটু হলুদ লাগাতে আসলাম।””
বলেই পালকের গালে হলুদ লেপে দিলো পাপড়ি।
“” আরে কি করছিস? বলেছিনা হলুদে আমার এলার্জি?””
“” বিয়ের হলুদে এলার্জি হয়না ভাইয়া। হলেও কি সমস্যা? ভাবী এসে ভালো করে দিবে।””
পালকের গালে হলুদ লাগিয়ে পাপড়ি আবার ল্যাপটপে তাকিয়ে বললো,
“” ইশ! ভাবীরা কি মজা করছে। আর তুই? তোর গায়ে হলুদ নিয়ে আমার কত প্লেন ছিলো জানিস? তুই সব ভেস্তে দিলি। তুই না আসলেই একটা তুই।””
পালক টিস্যু দিয়ে গালটা মুছতে মুছতে বললো,
“” তোরটা তো পড়েই আছে। তোর বিয়েতে পুরো বাড়ি হলুদ দিয়ে সাজিয়ে নিবো। তখন তুই খুশিতে হাত-পা ছড়িয়ে নাচিস!””
“” ধ্যাত,নিজেরটাতে কি মজা করা যায় নাকি?””
গায়েহলুদের পালা শেষ করতে করতে মাঝরাত্রি হয়ে এসেছে প্রায়। অন্ত্রীশাকে গোসল করিয়ে ওর রুমের দিকেই এগুচ্ছে অনিকশা। এতক্ষনে বাড়িটা মনে হয় একটু শান্ত হলো। অন্ত্রীশাকে রুমে দিয়ে এসে নিজেও আরেকবার শাওয়ার নিবে ভাবতে ভাবতেই দরজা খুললো অনিকশা। রুমটা অন্ধকার দেখে একটু বিরক্তই হলো সে। এতো ব্যস্ততাই রুমের লাইটটাও দেওয়া হয়নি। সে দেইনি বলে কি অন্য কেউ দিতে পারলোনা? এই রুমে কি সন্ধ্যের আলোটাও জ্বালানো হয়নি? মা তো এমন ভুল করবেনা। যদি ভুল না করেই থাকে তাহলে লাইটটা বন্ধ করলো কে?
অনিকশা ভাবনায় ডুবে লাইট জ্বালাতেই ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
“” এতো লেট করলে কেন অন্ত্রীশা? তোমার অপেক্ষা করতে করতে তো আমি শুকিয়ে গেছি।””
ছেলে কন্ঠ পেয়ে অন্ত্রীশা আর অনিকশা দুজনেই অবাক। সামনে তাকাতেই দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো। পালক বসে আছে সামনে,মেঝেতে পাগুলো ভাজ করে। আর পালকের সামনে তিন চারটে বোতল দেখা যাচ্ছে। দেখে তো মনে হচ্ছে মদের বোতল!
পালক বসা থেকে উঠে এসে অন্ত্রীশার হাত ধরে টেনে নিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো। অন্ত্রীশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুনরায় হাতটা ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে। বা হাতটা দিয়ে অন্ত্রীশার পেটের দিকটা জড়িয়ে নিয়ে অন্ত্রীশার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
“” নেশা করেছো কখনো??””
চলবে