#ধোয়াশা
৫ম এবং শেষ পর্ব
মাঝে কেটে গেছে কয়েকটা দিন। অদ্রি সজল আর মুনতারিনদের অর্নাস প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ , এইসব নিয়ে মুনতারিন খুব বিরক্ত। পরীক্ষা শেষে ওদের সিনিয়ররা সবাই মিলে একটা গেট-টুগেদারের আয়োজন করেছে যেখানে আগের যতো সিনিয়ররা আছে সবাইকে ইনভাইট করা হবে সাথে জুনিয়ররা এবং টিচাররাও থাকবে। মোটামুটি একটা বড়সড় আয়োজন করতে যাচ্ছে সবাই মিলে। অপর দিকে সজল আর অদ্রি খুব এক্সাইটেড অনেকদিন পর একটা ফাংশন হতে যাচ্ছে। কিন্তু মুনতারিন কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তিত তা দেখে অদ্রি ওর ঘাড় ধরে ঝাকায়, হুট করে চমকে ওঠে মুনতারিন।
”কিরে কি হয়েছে অদ্রি ? আমাকে এইভাবে ঝাকাচ্ছিস কেন তুই ?”
”অন্যমনস্ক কেন তুই মুন ?”বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো অদ্রি , পাশে সজল এর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মুন এর ওপর।
”আরেহ না তেমন কিছুই না আসলে এই ফাংশন নিয়ে ভাবছিলাম একটু , আচ্ছা সজল ফাংশন এ কে কে আসবে জানিস তুই ”?
হ্যাঁ সব না তবে কিছুটা জানি, যেমন ধর আমাদের সব স্যার-ম্যামরা আসবে সিনিয়র ভাইয়া আপুরা আগের ব্যাচে যারা ছিলেন ওনারা আসবে , আর হ্যাঁ স্পেশালি চেয়ারম্যান স্যার কে ইনভাইট করা হয়েছে।
সব থেকে অবাক করা বিষয় কি জানিস অদ্রি, অদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো সজল,
আমাদের ক্লাস এর প্রিতী, সুমনা আর ওই অহংকারি হায়া আছে না ,চেয়ারম্যান স্যার নাকি বলেছে ওদেরকে ফাংশন এর সব কাজে হেল্প করতে।
এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে সব কথা গুলো শুনছিলো মুনতারিন, সজল এর শেষের কথা টা শুনেই হুট্ করে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যেন চলে যায় মুন। সজল আর অদ্রি অবাক হয়ে সে দিকেই তাকিয়ে থাকে।
সজল আর অদ্রির সামনে থেকে সরে কিছুটা আড়ালে যেয়ে কাওকে ফোন করলো মুনতারিন।
-হ্যালো বাবা..সরি স্যার
-বলুন অফিসার শানায়া
স্যার আমাকে যে কাজের জন্য পাঠানো হয়েছে হয়তবা সেই কাজটি আমি পরশুদিনের মধ্যেই সমাধান করে ফেলতে পারবো, কারণ আমাদের কলেজের ফাংশন আছে। এইজন্য আমার কিছু এক্সটা ফোর্স লাগবে। সাহায্যকারি হিসেবে সোহাগ আর মনিরকে আগেই পাঠাতে হবে। আজকে আমার হোস্টেলে রাত ১২টার পরে ওদের আসতে বলবেন।
আরো কিছুক্ষন কথা বলার পরে ফোন কেটে বাসায় চলে যায় শায়ানা। মুনতারিনের আসল নাম শানায়া, সে একজন স্পাই অফিসার যাকে এখানে নারী পাচারকারীকে ধরতে পাঠানো হয়েছে, কারণ প্রতি বছর এই কলেজের পড়ুয়া মেয়েরা গাঁয়েব হচ্ছে তাদের বাবা মা পুলিশের কাছে যেয়ে রিপোর্ট করে কোনো লাভ হচ্ছেনা তাই স্পেশাল ফোর্স হিসেবে তার বাবা যে নিজেও একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা তার নিজের মেয়ে শানায়া কে পাঠিয়েছে ইনভেস্টিগেশনের জন্য।
রাত ১২ টা..
ম্যাম আপনার প্ল্যান অনুসারে আমরা সব ঠিকঠাক করে রাখবো। মনির যাবে ডেকরেটরের বেশে আর আমি থাকবো খাবার এর স্টলে।
ঠিক আছে এইবার তোমরা তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাও, পরশুদিন ঠিক সময়মতো চলে আসবে।
-ওকে ম্যাম…
অনুষ্ঠানের দিন….
ওয়াও মুন তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে । মুন একটা অফ-হোয়াইট কালারের শাড়ী পড়েছে আজ, মুনকে চেনা-ই যাচ্ছেনা, তাই সজল আর অদ্রী ওকে দেখে অবাক হয়ে গেছে । সজল আর অদ্রিকেও সুন্দর লাগছে। আজকে একসাথে দুইজনে ম্যাচিং করে ব্ল্যাক কালার পড়েছে । মুনতারিনের মনে হয় ওরা নিজেরাই বুঝেনা যে ওরা একে অপরকে ভালোবাসে, এইভেবে হাসি পায় ওর।
অপরদিকে অরণ্য একটা অফ-হোয়াইট শার্ট পড়ে এসেছে। ওকে দেখতে খুবই আকর্ষণীয় লাগছিল তবুও মুন নিজেকে সামলে কাজে ফোকাস দিচ্ছে, অবশেষে অনুষ্ঠান শুরু হলো।
একে একে সবাই নাচ গান করছে যে যার মতো। আজকে ক্লাস রুম সব বন্ধ, সবাই অডিটোরিয়াম আর মাঠে অয়োজন করেছে সব কিছু। ঐদিকে হায়া কে একটা ছেলে বললো তিন তলা থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে আসতে ভুল করে সেটা ক্লাসেই রয়ে গেছে এখনই স্যার কে দিতে হবে তাই জলদি যেয়ে আনতে।
হয়া ক্লাসের দিকে যাচ্ছে , বারবার মনে হচ্ছে ওর পিছনে কেও আছে , কিন্তু ওসব পাত্তা না দিয়ে সে ক্লাসে গেলো। চারদিকে নীরব , যেমনটা ক্লাস চলাকালিন থাকে অমন না , ক্লাসে ঢুকে সে আরো অবাক হলো যখন দেখলো এখানে কোনো ফুলের তোড়া নেই। হটাৎ পিছন থেকে কেও ওর মুখ চেপে ধরে অজ্ঞান করার একটা স্প্রে মুখে মেরে দেয়।
কলেজের পিছনের গেট দিয়ে খুব সাবধানে দুইজন মানুষ মুখ বেঁধে হায়া কে গাড়িতে উঠাচ্ছে , গাড়িতে উঠানোর পর কাকে যেন কল করলো ওরা। কল শেষে যেই গাড়িতে উঠতে যাবে সাথে সাথে মনির আর সোহাগ ওদের দুইজনের মাথায় পিস্তল ধরে। আরো বেশ কয়েকজন পুলিশ ছিল ওদের সাথে , দুইজনকেই পুলিশ স্টেশনে নেয়া হলো। এবং সবকিছু শানায়া কে ইনফর্ম করলো কারণ শানায়া দেখে ফেলেছিল হায়া কে ক্লাসের দিকে যেতে কিন্তু নিজের পরিচয় এখনো জানানোর সময় হয়নি তাই সোহাগ আর মনিরকে পুলিশ ফোর্সের সাথে পাঠায় ওদেরকে ধরতে।
পুলিশ স্টেশনে নেয়ার পর শানায়া ও সেখানে চলে আসে এবং বলে ,তোদের বসকে ফোন দে।
-কিন্তু ওরা কিছুতেই ফোন দিবেনা।
শানায়া চেঁচিয়ে উঠে, ফোন দিবি কিনা বল ?শেষ বারের মতো বলছি।
তবুও ওরা ফোন দিতে রাজি না হলে একটা প্লাস নিয়ে আসে শানায়া ,ওদের দুইজনের নখ তুলে ফেলে সেখানে মরিচ ঢেলে দেয়, সাথে সাথে ওরা হাউ মাও করে কাঁদতে শুরু করে। এরপর ওদের মধ্যে থেকে একজন ওদের বস কে ফোন দেয় এবং শানায়ার কথা মতো তাকে একটা ঠিকানায় আসতে বলে সাথে এটাও বলে যে ওই জায়গাতেই ওরা হায়াকে রেখেছে। এরপর ফোন কাটার পর শানায়া একটা মুচকি হাঁসি দেয় এবং মনে মনে বলতে থাকে তোর খেলা শেষ।
সেদিন রাত দুইটার দিকে ওদের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী সে লোক পৌঁছে যায় ওই ঠিকানায়। সেখানে একটা চেয়ার এ বেঁধে রাখা হয়েছে হায়াকে।
লোকটা হায়াকে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয় এবং তার সামনে যেয়ে বলতে থাকে ওহ বিউটিফুল গার্ল , হাউ আর ইউ? তুমি অবশেষে আমার কাছে এসেই পড়লে। তোমাকে আমি অনেক দামে বিক্রি করতে পারবো এই বলে হা হা করে হাসতে লাগলো লোকটা।
কিছুক্ষন পর সে ভাবলো ছেলে দুইটা কোথায় তাকে ডেকে এনে ওরা কোথায় চলে গেলো, তাই সে জোরে জোরে তুরাগ শিবলী বলে চিৎকার করে ওদেরকে ডাকতে লাগলো।
আর তখনই দরজা দিয়ে ঢুকে শানায়া। শানায়াকে দেখে সে ভুঁত দেখার মতো করে চমকে ওঠে।
শানায়া সজোরে একটা লাথি দিয়ে নিছে ফেলে দেয় লোক টিকে
এরপর হা হা করে হেসে বলতে থাকে , কেমন লাগছে চেয়ারম্যান ইবনান ?
সামনে থাকা লোকটি আর কেউ নয় ওদের কলেজের চেয়ারম্যান ইবনান।
ইবনান প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়, সাথে সাথে সেখানে হেড স্যার, অরণ্য সহ আরো কিছু স্টুডেন্টস, সজল, অদ্রি এবং পুলিশ এসে ভোরে যায়। সজল,অরণ্য, অদ্রি শুধু শানায়াকে দেখে অবাক হচ্ছে ,ওদেরকে এইখানে পুলিশ ধরে এনেছে , কেন এনেছে সেটা কেও জানতো না। এখনো ওরা অবাক হয়ে শানায়াকে দেখছে ,
শানায়া একটা টুলের ওপর বসে বলতে লাগলো, ওই মিয়া এইদিকে তাকা। তোরে যেদিন দেখসিলাম প্রথমদিন সেদিন ই তোর তাকানো দেখে বুঝসিলাম তুই কি জিনিস। তাই আমি তোর ওপর নজর রাখতে থাকি। তোর ওপর নজর রাখতে যেয়ে অনেক কিছুই আমার সামনে আসতে থাকে কিন্তু আমি যথেষ্ট প্রমান সহ তোরে ধরতে চেয়েছিলাম অনেক হয়েছে , তোর খেলা শেষ. এইবার শশুর বাড়ি যেয়ে আম খা।
অফিসার ওকে নিয়ে যাও, আর ইচ্ছা মতো খাতিরদারি করো। পুলিশ অফিসার ইবনানকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। হেড স্যার অনেক ধন্যবাদ দেয় শানায়াকে এবং হায়া ও তার ব্যাবহার এর জন্য অনেক ক্ষমা চায়।
এরপর শানায়া সজল আর অদ্রির কাছে যায়।
ওদেরকে বলে তোরা সবসমই আমার ভালো বন্ধু থাকবি। আমি এইখানে মিশনে এসেছিলাম সেটা শেষ তাই আমি চলে যাচ্ছি ভালো থাকিস তোরা। এই বলে ওদেরকে জড়িয়ে ধরে ওরাও ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে তোকে অনেক মিস করবো।
এরপর শানায়া গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলে তোদের বিয়েতে কিন্তু দাওয়াত দিবি আমায়। অদ্রি আর সজল একে ওপরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দেয়।
গাড়িতে উঠার সময় শানায়ার চোখ যায় অরণ্যর ওপর। এক দৃস্টিতে সে তার দিকেই তাকিয়ে আছে , তার চোখে পানি টলমল করছে। শানায়া মনে মনে বলে, কিছু চাওয়া-পাওয়া পূরণ না হওয়াই সবার জন্য ভালো এই বলে চোখের কোণের হালকা পানি মুছে গাড়ি নিয়ে চলে যায় শানায়া।
সমাপ্তঃ-
(