বিয়ে সম্পন্ন করে বাসর ঘরে নতুন বউকে উপহার হিসাবে নববধূর পায়ে নুপুর পড়াতে গিয়ে যখন দেখলো নববধূর এক পা নেই, ওই পায়ের জায়গায় স্টিলের পা বসানো! তখন বিস্ময়ে নববধূর দিকে পাশ ফিরে অনেক্ষন যাবত বসে রইলো রিহান ! ইনসিয়া এভাবে রিহানকে বসে থাকতে দেখে কৌতুহল বশত জিগেস করবে এর আগেই রিহান বলে ওঠলো,
–“তোমার এক পা নেই! এই কথাটি তুমি আগে বলোনি কেনো আমাদের? কেনো প্রতারনা করলে তুমি? প্রতারনা করে নতুন জীবন শুরু করতে চাইছিলে? এতো বড়ো একটা কথা কীভাবে সবার থেকে লুকোলে?”
ইনসিয়ার এখন এই সময়েই এই কথাগুলোর উওর দিতে হবে এটা কখনোই কল্পনাতীত করে নি! তাও আবার তাদের বিয়ের প্রথম রাএেই! এই রাত নিয়ে সব মেয়েরই কতো স্বপ্ন থাকে সেরকম ভাবে ইনসিয়ার ও ছিলো। অথচ এই স্বরনীয় রাএেই ইনসিয়াকে এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে! যেটা তার জন্য এটু পীড়াদায়ক হয়ে পড়েছে! ইনসিয়া এবার বেশ ভালো করেই বুঝে গেলো রিহান হয়তো তাকে তার এই পঙ্গুত্বের কারনে মেনে নিতে পারবে না! রিহানের প্রশ্নের উওর দিতে ইনসিয়া বলতে লাগলো,
–“আমি কোনো প্রতারনা করিনি। আপনারা সবাই মিলেই আমাকে পছন্দ করে এ বাড়ির বউ হিসাবে নিয়ে এনেছেন। এখানে আমি বা আমার পরিবার কোনো কিছু করেনি। তাহলে এখন এসব কথা বলার কারন ?”
রিহানের ও মনে পড়লো বাবা তাকে মেয়ের ছবি দেখানো মাএই সে নিজের মত প্রকাশ করতে দ্বিমত করেনি। রিহান বললো,
–“হ্যাঁ অস্বীকার করবো না আমিই তোমাকে পছন্দ করেছিলাম কারন আব্বু যখন আমাকে তোমার ছবি দেখিয়েছিলো তখন তোমার ওই মায়াবী, সুন্দর মুখশ্রী দেখে আমার তোমাকে অপছন্দ করার কোনো কারন ছিলো না। যেখানে আমি রাজি ছিলাম সেখানে আমার পরিবার আর কোনো দ্বিমত পোষন করেনি। কিন্তু তাই বলে যে তুমি পঙ্গু তোমার এক পা নেই সেই কথা কি জানতাম!”
–” এটা আপনার ভূল! আপনারই উচিত ছিলো সবটা জেনেশুনে সবকিছু করার! আমি বা আমার পরিবার কোনো কিছু আপনাদের কাছ থেকে লুকোয়নি। এতে আমার কোনো দোষ নেই। এখন তো জানলেন এখন কি করবেন তাহলে আপনি?”
–“তাহলে কেনো আমি বা আমার পরিবার কেউই তো জানে না তোমার পঙ্গুত্বের কথা। অথচ তুমি বলছো সবাই জানে! তুমি বা তোমার পরিবার কিছু লুকোওনি। আর এদিকে আমার পরিবারের কেউই কিছু জানে না। মিথ্যা কেনো বলছো তুমি?”
–“দেখুন আমি মিথ্যে কোনো কিছু বলিনি। আপনার কথা বিশ্বাস না হলে আপনার বাবাকে গিয়ে জিগেস করুন। আর কেউ জানে কি জানে না সেটা বলতে পারবো না উনি সব জানে এটা শতভাগ নিশ্চিত আমি।”
ইনসিয়ার কথা শুনে মাথা গরম করে রিহান তার বাবার রুমের দিকে পা বাড়ালো তার বাবার কাছে জবাবদিহিতা চাইতে! এমনিতেই ইনসিয়ার পঙ্গুত্বের কথা জেনে মাথা গরম হয়ে গেছে, এর ভিতরে ইনসিয়ার এই খাপছাড়া কথা বার্তা শুনে যেনো মাথা আরো গরম হয়ে গেছে! সারাদিনে বিয়ে বাড়ির কাজকর্ম সেড়ে মিজানুর সাহেব মাএ বিছানায় গা এলিয়ে দিতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনি ছেলের চিৎকারের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখতে পেলো তার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে! তার ছেলে কেনো দাড়িয়ে আছে সেটা সে নিজেও কিঞ্চিৎ আন্দাজ করতে পারছে তবে তার ছেলে যে এতো রাএেই এসব করবে সেটা মোটেও ধারনা ছিলো না তার ! দরজা খুলতেই তার ছেলে রিহান তরিঘরি করে ঘরে ঢুকেই মিজানুর সাহেবের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো!
–“বাবা তুমি জানতে সবটা? সবটা জেনে শুনেও তুমি এরকম টা করতে পারলে আমার সাথে! কেনো নষ্ট করলে আমার জীবনটা কেনো করলে এমন আমার সাথে? একটিবার আমাকে জানাতে পারতে সবকিছু? কেনো জানালে না কোনো কিছু?”
–“দেখ রিহান বাবা তুই ভূল বুঝছিস আমাকে আগে আমার সব কথা শোন। ঠান্ডা মাথায় আমি যা করেছি সবটা তোর ভালোর জন্যই করেছি। তুই আমাকে ভূল বুজচ্ছিস।”
–” এটা ভালো করেছো তুমি আমার জন্য! কি ভূল বুঝছি আমি? নিজের চোখে একটু আগে যেটা দেখলাম সেটা ভূল! সেটা নিশ্চয়ই ভূল হতে পারে না! তুমি কি করে আমার সাথে ওরকম একটা পঙ্গু মেয়ের বিয়ে দিতে পারলে বাবা? আমি কি এতটাই ফেলনা হয়ে গেছি তোমার কাছে যে শেষমেষ একটা পঙ্গু মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলে সবটা আড়াল করে!”
ছেলের চিৎকারে মিসেস মিতালী রহমান ঘুম থেকে ধড়ফড় করে ওঠে গেলেন! বিয়ে বাড়ির ঝামেলা শেষে একটু ঘুমাচ্ছিলো তিনি! কিন্তু রিহান চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়! ঘুম থেকে ওঠেই দেখলেন তার ছেলে কীরকম অবস্থায় রয়েছে! চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ ফুটে ওঠেছে! কি হয়েছে জানতে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন রিহানের দিকে!
–“রিহান তুই তোর রুম ছেড়ে এতো রাএে আমাদের রুমে এসে এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেনো? বাড়ি ভর্তি যে লোক আছে সেটা কি তুই ভূলে গেছিস? এভাবে চিৎকার বন্ধ কর। লোকজন শুনলে কি ভাববে বলতো? মান সম্মান কি কিছু রাখবি না নাকি? কি হয়েছে সেটা বরং তুই ঠান্ডা মাথায় আমাকে বল?”
–“মা বাবা যা করেছে আমার সাথে তারপরেও মাথা ঠান্ডা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়! কি হয়েছে আমার সাথে সেটা শুনলে তুমিও অবাক হয়ে যাবে। আমার এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে বাবা আমার সাথে এরকম একটা কাজ করতে পারলো মা! আমার জীবনটা পুরো শেষ করে দিয়েছে বাবা!”
ছেলের এহেনো কথা শুনে মিজানুর রহমান আগে ঘরের দরজা দুটো বন্ধ করে দিলো! সে বুঝতে পারছে তার ছেলে সহসা থামবে না। তাই কেউ যাতে শুনতে না পায় এই বন্ধ ঘরে কি কথা হচ্ছে দরজা দু’টো বন্ধ করে দিয়ে তিনি খাটের উপর বসে রইলো! তরতর করে ঘাম ঝড়ছে কপাল থেকে মিজানুর রহমান এর। তার প্রচন্ড চিন্তু হচ্ছে ইনসিয়া কে নিয়ে!
ওদিকে ইনসিয়া তখন রিহানের যাওয়ার পর মিজানুর রহমান এর রুমে এসেছিলো কি হয় দেখতে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে, সে রিহানের রুমে গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রয়েছে! না চাইতেও চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে তার দু-চোখ বেয়ে। বিয়ের প্রথম রাএেই এরকম ঘটনার সম্মুখীন হতে হলো তাকে। হাজার হোক বিয়ে নিয়ে তারও তো বাকি মেয়ের মতন স্বপ্ন ছিলো স্বামীর সাথে সুখে সংসার করার। কিন্তু বিয়ের প্রথম রাএেই তার দিকে প্রতারণার অভিযোগ উঠছে!
ওদিকে মিতালী রহমান সবটা ছেলের মুখ থেকে শুনে ধপ করে খাটের কোনে বসে পড়লো!
–“তুমি কি করে পারলে আমার ছেলের জীবনটা নিয়ে এরকম করতে? বাড়ি ভর্তি লোকজন কেউই কিছু জানে না একবারো ভেবে দেখেছো সবটা জানলে সবাই কি ভাববে? এমনকি মা বা নিজের পরিবারের কেউই জানে না কিছু! বাইরের লোকতো ছাড়ে ঘরের লোকই কি প্রতিক্রিয়া করবে সেটা আদৌ কি বুঝতে পারছো তুমি?”
মিজানুর রহমান এবার ঘাবড়ে গেলেন। তিনি এখন এই মা ছেলেকে কি বুঝ দিবেন নিজেও মিলাতে পারছে না! এখনতো এরা দু’জন সকালে তো তাকে পুরো পরিবার সবার সামনে জবাবদিহিতা করতে হবে। তখন কীভাবে সবটা সামলাবে তিনি ভেবেই ঘাবরিয়ে যাচ্ছেন এখনি। এখনতো কিছু বলতে হবে তাঁদের দু’জনকে। তাই তিনি বলতে লাগলেন,
–“ইনসিয়ার থেকে যোগ্য বউ রিহান কোনো দিনও পেতো না। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। বরং রিহানই কম ইনসিয়ার গুনের কাছে। সবটা জেনেশুনেই আমি ওকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি কোনো অহেতুক সিদ্ধান্ত নিই নি আমি সময় হলে তোমরা সবটা বুঝতে পারবে এখন কথা না বাড়িয়ে যে যার ঘরে যাও।”
–“তোমার কথা যাইই হোক না কেনো আমার সিদ্ধান্তই শুনতে হবে বলে দিলাম।”
#নতুন_ভোরের_আগমন।
#পর্ব১
#অর্ষা_আওরাত
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#চলবে